আ’লামু বিত্ ত্বিব, আ’লামু বিল ফারায়িদ্ব, আ’লামু বিসুনানি রসূলিল্লাহ, হুল্লাতুল ইসলাম, আশাদ্দু হিজাবান, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবুল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম-
আল্লামা মুফতী মুহম্মদ কাওছার আহমদ
* মেয়েরা যতক্ষণ পর্যন্ত পর্দায় থাকতে অভ্যস্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে অলঙ্কার পড়ানো উচিত নয়। কারণ, এতে তাদের জান-মালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া ছোট কাল থেকে অলঙ্কারের প্রতি আকর্ষণ হওয়াও ভাল নয়।
* সন্তানদের হাত দিয়ে গরীব-দুঃখীদেরকে দান করার অভ্যাস করার এবং নিজের ভাই-বোন ও অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের মধ্যে খাবার জিনিষ বণ্টন করার অভ্যাস করাবে। এতে বাচ্চাদের হাদিয়া দেয়া ও দান-ছদকা করার এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
* যারা খুব বেশি খাবার খায়, সন্তানদের সামনে তাদের বদনাম করবে। কিন্তু কারো নাম নিয়ে বদনাম করা উচিত হবে না। বরং বলতে হবে, যারা বেশি খায় তাদের পেট খারাপ হয়। লোকজন তাদেরকে অপছন্দ করে ইত্যাদি ইত্যাদি। এতে সন্তানদের পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
* কখনো তাদের সাথে মিথ্যা, ছলনা বা চাতুরতাপূর্ণ কোন কথা-বার্তা, আচার-আচরণ করবে না। অন্যথায় তাদের মিথ্যা, ছলনা বা চাতুরতাপূর্ণ স্বভাব গড়ে উঠবে। যা দূর করা কঠিন হয়ে পড়বে। কাজেই, তাদের সাথে সবসময় সত্যকথা বলবে। আর যদি তারা কখনো মিথ্যা কথা বলে কিংবা ধোকা বা প্রতারণামূলক আচরণ করে সাথে সাথে তা পরিহার করার শিক্ষা দিবে। অনেক বাবা-মা এরূপ কথা-বার্তা বা আচার-আচরণ করাকে সন্তানের বুদ্ধিমত্তা মনে করে তাদেরকে এরূপ কাজে আরো উৎসাহিত করে। নাউযুবিল্লাহ। যা অত্যন্ত ঘৃণিত।
* সন্তানদের সব আবদার পূরণ করা উচিত নয়। কারণ, এতে তাদের স্বভাব খারাপ হয়ে যায। একমাত্র মুনাসিব অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ মুতাবেক আবদার পূরণ করবে।
* সন্তানদেরকে চিৎকার করে কথা বলতে দেয়া ভাল নয়। খাছ করে মেয়েদের জন্য ইহা খুবই মন্দ স্বভাব। কাজেই, এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করবে। অন্যথায় বড় হয়েও ঐ কুস্বভাব থেকে যাবে। যা সাধারণতঃ পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত কঠিন।
* পাড়া বা মহল্লার যে সব ছেলে-মেয়েদের স্বভাব খারাপ কিংবা পড়া লিখায় অমনোযোগী, বড়দের সম্মান করেনা, নামায-কালাম পড়ে না, যিকির-ফিকির করেনা, অশ্লীল-অশালীন ভাষায় কথা বলে, খেলা-ধুলা করে, গান বাজনা করে ও শুনে তাদের সাথে কিছুতেই সন্তানদেরকে মিশতে দিবে না।
* মাদরাসা, মক্তবে কিংবা বিদ্যালয়ে যেতে না চাইলে এ বিষয়ে কখনো তাদেরকে কোনরূপ প্রশ্রয় দিবে না। বরং তাদেরকে শাসনে রেখে লিখাপড়া করার অভ্যাস করাবে।
* সন্তানদেরকে প্রতিদিন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, ইমাম, মুজতাহিদ এবং আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক শুনাবে। আর সে রকম মহৎগুণ অর্জনের জন্য তারগীব বা উৎসাহ দিবে।
* সন্তানদেরকে কখনো বাঁশি, বাদ্যযন্ত্র, খেলা-ধুলা করার সামগ্রী কিনতে দিবে না। আর নিজেও কখনো তা কিনে দিবে না। তারা কিনতে চাইলে বলতে হবে এগুলো কিনা কিংবা খেলাধুলা করা জায়িয নেই। এজন্য পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে। পরকালে আগুনে পোড়া দিবেন, সাপে কামড় দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
* সন্তানদেরকে হাতের এমন কাজ বা টেকনিক্যাল বিদ্যা শিক্ষা দিবে যা দ্বারা তারা প্রয়োজন বশত হালাল রুজী উপার্জন করে স্বাবলম্বি হতে পারে। ফলে পর মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে।
* সন্তানদেরকে নিজের হাতে সব কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যাতে তারা অকর্মা বা অলস হয়ে না যায়। শোয়ার সময় তারা নিজ হাতে বিছানা বিছাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার নিজ হাতে বিছানা গুছিয়ে রাখবে। নিজেদের বই-পুস্তক, খাতা-কলম, কাপড়-চোপড় নিজেরাই হিফাযত করবে। কাপড়ের সেলাই খুলে গেলে বা ছিড়ে গেলে নিজ হাতে সেলাই করে নিবে। নিজেদের মালপত্রের যতœ ও দরদ যাতে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় এবং সাবধানতার অভ্যাস জন্মে তার প্রতি সচেষ্ট হবে। কখনো তাদেরকে অকর্মন্য-অলস বা অসাবধান হতে দিবে না।
সন্তানদেরকে অসময়ে ঘুমাতে দিবে না। তারা যেন সময়মত ঘুমায় এবং সময়মত জাগে তার দিকে বিশেষ নজর দিবে।
* সন্তানদেরকে ভোরে, ফজরের ওয়াক্তে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করাবে। নামায-কালাম, যিকির-ফিকির ঠিকমত করে কিনা প্রতিদিন তার খোঁজ-খবর নিবে।
* স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও অধিনস্থ অন্যান্য লোকদের নিয়ে প্রতিদিন পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়বে এবং তাদেরকে তা’লীম দিবে। যে ঘরে প্রতিদিন তা’লীম ও পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় সে ঘরে কিংবা বাড়ীতে রহমত নাযিল হয়। ঐ ঘর কিংবা বাড়ী কখনো বরকত শুন্য হয় না। সুবহানাল্লাহ! আর ঐ ঘরের অধিবাসীগণ সর্বদা রহমত, বরকত, সাকীনা তথা সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।