আল্লামা মুফতী মুহম্মদ কাওছার আহমদ
পৃর্ব প্রকাশিতের পর
দুনিয়াদার পিতা-মাতা তারা তাদের সন্তানদেরকে দুনিয়া হাছিলের শিক্ষা দেয়। দুনিয়া হাছিলের তারগীব দেয় বা উৎসাহিত করে, দুনিয়াদার হওয়ার জন্য তাদের পিছনে অর্থ-সম্পদ, সময়, শ্রম সবকিছু ব্যয় করে। তারা তাদের সন্তানদেরকে বলে, দুনিয়া হাছিলের জন্য তোমাকে বড় ডাক্তার হতে হবে। বড় ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। উকিল হতে হবে, ব্যারিস্টার হতে হবে, আমীর-উমারা, রাজা-বাদশা ইত্যাদি হতে হবে। কিন্তু একটিবারও বলে না যে, তোমাকে আল্লাহওয়ালা হতে হবে। দুনিয়া তালাশকারীগণ কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের গোলামে পরিণত হয়। আর আল্লাহওয়ালাগণ সারা দুনিয়ার মালিক হয়ে যান। মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেমন সারা কায়িনাতের সবকিছুর মালিক, তেমনি আল্লাহওয়ালাগণ, মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু হওয়ার সুবাদে সারা কায়িনাতের সবকিছুর মালিক হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ! কিতাবে এসেছে-
من له الـمولى فله الكل
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক যার হয়ে যান সবকিছুই তার হয়ে যায়।”
সেজন্য ওলীআল্লাহগণ বলেছেন, রাজা-বাদশা, আমীর-উমারাগণ আল্লাহওয়ালা উনাদের হাক্বীক্বত বা প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে যদি জানতো তাহলে তারা তাদের বাদশাহী ছেড়ে দিয়ে আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের দরবার শরীফের ধুলা হয়ে যেতো। সুবহানাল্লাহ!
যামানার মহান ইমাম ও মুজতাহিদ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, প্রত্যেক পিতা-মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে শৈশবকালেই স্বীয় সন্তানকে বিশেষভাবে তিনটি বিষয় শিক্ষা দেয়া।
১। সন্তানকে জানাতে হবে, নছীহত করতে হবে, বৎস! তোমাকে আল্লাহওয়ালা বা ওলীআল্লাহ হতে হবে। তুমি কখনো দুনিয়াদার হবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে আল্লাহওয়ালা হওয়ার জন্যই তথা মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিলের জন্যই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
২। তোমাকে প্রতিদিন আল্লাহওয়ালা তথা ওলীআল্লাহগণ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে। তুমি যেখানেই থাক না কেন প্রতিদিন উনাদের ছোহবত মুবারকে যাবে। আর পিতা-মাতাকে এটা আমল করে দেখিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ মাতা-পিতা নিজেরাই সন্তানকে ওলীআল্লাহগণের ছোহবত মুবারকে আনা নেয়া করবেন। সুলত্বানুল আরিফীন সাইয়্যিদুশ শুয়ারা, সাইয়্যিদুনা হযরত মুসলিহুদ্দীন- শায়েখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তোমাদের সন্তানগণ হাঁটা চলার বয়সে পৌঁছলে তাদেরক আল্লাহওয়ালা বা ওলীআল্লাহগণ উনাদের ছোহবত মুবারকে পাঠিয়ে দাও। তাহলে সে অনেক উঁচু স্তরের, মর্যাদা সম্পন্ন ওলীআল্লাহ হবে। সুবহানাল্লাহ! আর যদি অতি উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন ওলীআল্লাহ নাও হয় তবে কখনোই গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে না। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا ايُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللّـهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আর ওলীআল্লাহগণ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করো।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ. وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا.
অর্থ: “আপনি উম্মতদেরকে বলে দিন তারা যেন ঐ সকল ব্যক্তিদের ছোহবতকে লাযিম (আবশ্যক) করে নেয়, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিলের জন্য সকাল-সন্ধ্যা (দায়িমীভাবে) উনাদের মহান রব আল্লাহ পাক উনার যিকির করেন। দুনিয়ার চাকচিক্য বা সৌন্দর্যে বা মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে উনাদের ছোহবত মুবারক থেকে কখনোই দৃষ্টি ফিরিয়ে না নেয়।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
عليك بمجالس اهل الذكر
অর্থ: “আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের ছোহবত তোমার জন্য লাযিম (আবশ্যক)। (শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী)