আল্লামা মুফতী মুহম্মদ কাওছার আহমদ
** সন্তানদেরকে এরূপ বিষয় শিক্ষা দিবে যাতে তাদের দ্বীনী ইলম, নৈতিক উপদেশ লাভ হয়। পাশাপাশি দুনিয়াবী আবশ্যকীয় জ্ঞানও হাছিল হয়। ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যারা দুনিয়া ভাল বুঝে তারা সম্মানিত দ্বীনও ভালো বুঝে।”
** সন্তানরা মক্তব, মাদরাসা কিংবা বিদ্যালয় থেকে আসলে তাদেরকে কিছুক্ষণ সময় অবকাশ দিবে। সবসময় লিখা পড়ার মধ্যে মশগুল রাখলে জেহেন কমজোড় হয়ে যেতে পারে। তবে তাদেরকে কখনো নাজায়িয খেলা-ধুলায় লিপ্ত হতে দিবে না।
** সন্তাদেরকে নভেল, নাটক, অশ্লীল-অশালীন গল্প পড়তে দিবে না। সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ কোন অনুষ্ঠান বা সভায় যেতে দিবে না। কোন প্রাণীর ছবি দেখতে দিবে না। গান-বাজনা, সিনেমা, টিভি, ভিসিআর ইত্যাদিকে বিষতুল্য জ্ঞান করবে। কাজেই, এসবের কাছেও যেতে দিবে না।
** সন্তানদেরকে শিশুকাল থেকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক পড়তে দিবে। উনাদের জীবনী মুবারকের সুন্দর সুন্দর ঘটনাবলী শুনিয়ে ইবরত-নছীহত গ্রহণ করার তারগীব উৎসাহ প্রদান করবে।
** পথ চলার সময় ছেলে-মেয়েরা যেন উপরের দিকে কিংবা এদিকে সেদিকে তাকিয়ে না হাঁটে বরং পথের দিকে চেয়ে ধীরভাবে হাঁটে তার জন্য তাকীদ করবে। একইভাবে খাওয়া-দাওয়ার সময়ও যেন ডানে-বামে না তাকায় বরং খাবারের দিকে চেয়ে ধীরে সুস্থে খায়, ভালভাবে খাবার চিবিয়ে খায় তার অভ্যাস করাবে।
** সন্তানদেরকে ন¤্রতা-ভদ্রতা শিক্ষা দিবে। গর্ব, অহঙ্কার, ফখর করতে দিবে না। নিজের বাড়ী-ঘর, বংশ, নিজের জামা-কাপড়, নিজের বই-পুস্তক ইত্যাদির উপর গর্ব বা অহঙ্কার করতে দেখলে সাথে সাথে নিষেধ করবে।
** সন্তানদেরকে শিশুকাল থেকেই নেক খাছলতগুলো নিজের স্বভাবের মধ্যে বদ্ধমূল করার চেষ্টা করবে।
উল্লেখ্য যে, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, শাইখুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত আম্মাজান সন্তান প্রতিপালনের যে উজ্জল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা আগত অনাগত সকলের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। উনার সম্মানিত আম্মাজান তিনিও ছিলেন একজন উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ। সন্তান প্রতিপালন তথা সন্তানকে ওলীআল্লাহ বানানোর জন্য এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
তিনি প্রিয় সন্তান বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি সবসময় গভীর নজর রাখতেন। খাওয়া, পরা, চলা-ফেরা, উঠা-বসা, ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির ইত্যাদি কোন কাজেই যেন সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ না হয় তার প্রতি বিশেষ যতœবান ছিলেন। তিনি সবকাজই সঠিকভাবে করেন। কিন্তু সম্মানিত নামায উনার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ও গুরুত্ব দেখতে পেলেন না। একদিন তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মিষ্টি খাওয়ার প্রতি বিশেষ আকর্ষন অনুভব করলেন। তাই কাছে ডেকে আদর করে বললেন, “বাবা! আপনি যদি প্রতিদিন গুরুত্বসহকারে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন তাহলে প্রতিদিনই জায়নামাযের নিচে চিনি পাবেন।” একথা শুনে হযরত বাবা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি খুশি হলেন। আর বললেন, আমি তাহলে প্রতিদিনই সম্মানিত নামায আদায় করবো।
মসজিদে আযান হলেই উনার আম্মা অযুর পানি এনে দেন। জায়নামায বিছিয়ে দেন। আর জায়নামাযের নীচে এক পোটলা চিনি রেখে দেন। তিনি প্রতিদিনই এরূপ করেন। নামায শেষ করে সাইয়্যিদুনা হযরত বাবা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি জায়নামাযের নীচ থেকে চিনির পোটলা পেয়ে অত্যন্ত খুশি হন। আনন্দচিত্তে তা খান। এভাবে তিনি সম্মানিত নামায উনার প্রতি আগ্রহী ও বিশেষ যতœবান হয়ে উঠেন। একদিন উনার আম্মা কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে অযুর পানি দিতে পারেননি। জায়নামাযও বিছিয়ে দেননি। সাইয়্যিদুনা হযরত বাবা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই অযুর পানি সংগ্রহ করে অযু করতঃ জায়নামায বিছিয়ে নামায আদায় করেন।
নামায শেষে সম্মানিত আম্মা উনার সামনে গেলেন। তিনি প্রিয় সন্তানকে দরদমাখা কণ্ঠে বললেন, নামায আদায় করেছেন? তিনি বললেন, জি, আম্মাজান। অযু করে নামায আদায় করেছি।
আম্মা বললেন, চিনি পেয়েছেন? তিনি বললেন, জি! আম্মাজান, অন্যান্য দিনের মতো চিনিও পেয়েছি এবং তা খেয়েছি। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকের চিনিটা বেশি মিষ্টি ও সুস্বাদু। একথা শুনে উনার আম্মাজান তিনি সিজদায় পড়ে গেলেন। বললেন, হে বারে ইলাহী! আজকে তো আমি কোন চিনি দেইনি। আপনি কুদরতীভাবে তা দিয়েছেন। আপনার লক্ষকোটি শুকরিয়া।
সেদিন থেকে উনার আম্মাকে আর চিনি দিতে হয়নি। নামাযান্তে নিয়মিত কুদরতীভাবে চিনি পেতেন। তিনি তা গ্রহন করতেন। এভাবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত জায়নামাযে নিচ থেকে চিনি পেতেন বলে উনাকে গঞ্জে শকর বা চিনির গুদাম লক্ববে আখ্যায়িত করা হয়। সুবহানাল্লাহ!