কনে দেখা খাছ সুন্নত (২)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ امْرَأَةً جَاءَتْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِئْتُ لأَهَبَ لَكَ نَفْسِي فَنَظَرَ إِلَيْهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَعَّدَ النَّظَرَ إِلَيْهَا وَصَوَّبَهُ ثُمَّ طَأْطَأَ رَأْسَهٗ
অর্থ: হযরত সাহল ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। একদিন একজন নারী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাজির হলেন। বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি নিজেকে আপনার কাছে হিবা (বিবাহের উদ্দেশ্যে সমর্পন) করতে এসেছি। এরপর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার দিকে তাকালেন। আর অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দৃষ্টি মুবারক দিলেন। আপদমস্তক দেখে নূরুল হুদা (মাথা মুবারক) নিচু করলেন। (বুখারী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)
উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সেই নারীর আবেদনে সম্মতি জ্ঞাপন করলেন না তখন একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেই নারীকে দেখলেন। উনার পছন্দ হলো। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ঐ নারীকে বিবাহ করতে চাই। উনার সাথে আমাকে বিবাহ দিয়ে দিন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার যতটুকু মুখস্থ আছে তা শিক্ষা দেয়ার শর্তে বিবাহ দিয়ে দিলেন। (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
فَخَطَبْتُ جَارِيَةً فَكُنْتُ أَتَـخَبَّأُ لَـهَا حَتّٰى رَأَيْتُ مِنْهَا مَا دَعَانـِيْ إِلٰى نِكَاحِهَا وَتَزَوُّجِهَا فَتَزَوَّجْتُهَا
অর্থ: আমি জনৈকা কুমারী মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেই এবং গোপনে তা দেখি, এমনকি উনার চেহারা মুবারকও দেখি যা আমাকে উনার সাথে বিবাহে উৎসাহিত করে। অতঃপর উনাকে আমি বিবাহ করি। (আবূ দাউদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাকে হাকিম)
বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার পর কনে দেখা পূর্বে নয়
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন-
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِذَا أَلْقَى اللهُ فِيْ قَلْبِ اِمْرِئٍ خِطْبَةَ امْرَأَةٍ فَلَا بَأْسَ أَنْ يَّنْظُرَ إِلَيْهَا.
অর্থ: “আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি। যখন তোমাদের কারো অন্তরে মহান আল্লাহ পাক বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার অনুপ্রেরণা দান করেন, তখন সে সেই মেয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়াতে কোন দোষ নেই।”
উল্লেখ্য যে, কনে দেখার বিষয়টি প্রস্তাব আদান-প্রদানের সব শেষ কাজ। দেখে পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের। কাজেই আনুষঙ্গিক কথা-বার্তা, দেখা-শুনা, খবরা-খবর নেয়ার পর যখন পছন্দ হবে তখন সবশেষে বর- কনে দেখার বিষয়টি আসবে। আর পছন্দ হলেই বিবাহের কাজ সুসম্পন্ন হবে। উপরোন্ত হাদীছ শরীফ দ্বারাই বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। আগে কনে দেখে তারপরে কথা-বার্তা বলা, খবরা-খবর নেয়া ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কাজ করা শুদ্ধ নয়।
কেননা কনে দেখার পর কথা-বার্তা বলা, পারিবারিক খোঁজ-খবর নেয়া ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কাজগুলোর মধ্যে যদি অমিল পাওয়া যায় আর তার কারণে যদি বিবাহ সুসম্পন্ন না হয় তাহলে একজন পর্দানশীন মেয়ের আত্মসম্মানে আঘাত লাগতে পারে। আর কথা বার্তা বলার পর দেখার প্রসঙ্গ আসলে সে অবস্থা হতে মুক্ত থাকা সহজ ও সম্ভব।
তাছাড়া কিছু কিছু বদ আক্বীদা ও বদ মাযহাবের লোক রয়েছে যারা বিবাহ করবে বলে মেয়েদের বাড়ী বাড়ী দেখে বেড়ায়। কেউ কেউ আবার রাস্তা-ঘাটে, হোটেল-রোস্তারায়, বাজারে-বন্দরে মেয়েদের দেখে বেড়ায়। নাউযুবিল্লাহ! তারা মনে করে তারা তো বিবাহের উদ্দেশ্যে মেয়েদের দেখছে তাতে দোষ হবে কেন? নাউযুবিল্লাহ! তাদের এসব কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা যে শয়তানীমূলক, অজ্ঞতাসূচক, সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ তা তাদের আক্বল সমঝের বাইরে।
স্মর্তব্য যে, যে সকল মেয়ে বা মহিলাদেরকে হোটেল-রেস্তোরায়, হাটে-বাজারে বেপর্দায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে সুখের চেয়ে দুঃখই বেশী পাওয়া হয়। পরবর্তী জীবনে চরম মূল্য দিতে হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالَّذِيْ خَبُثَ لَا يَـخْرُجُ إِلَّا نَكِدًا
অর্থ: খারাপ থেকে খারাপ ছাড়া অন্য কিছুর আশা করা যায় না। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)