সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে তেত্রিশ বছরে ৪৬২ কোটি ৪২ লাখ ৭২ হাজার ২০ টাকা অতিরিক্ত বেতন-ভাতা নিয়েছে ৪৮,১৩০ জন শিক্ষক। কেউ কেউ ৬ বছরের স্থলে টাইম স্কেল নিয়েছে ৮ বছরের, কেউবা স্কেল বেশি দেখিয়ে, কেউবা স্টাফিং বেতন দেখিয়ে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত করে বিশাল এ অনিয়ম উদঘাটন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোনো কোনো কলেজে সহকারী অধ্যাপক রয়েছে ৭ জন। অথচ তারা ৮ জন সহকারী অধ্যাপক দেখিয়ে অতিরিক্ত বেতন-ভাতা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেছে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠান টাইম স্কেল নিয়েছে ৬ বছরের স্থলে ৮ বছর। শিক্ষকরা প্রাপ্যতার অতিরিক্ত এ টাকা লুটপাট করেছে মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে।
অপরদিকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষকের সামনে ঝুলছে বদলির নির্দেশ। কোচিং বাণিজ্যের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া এবং শিক্ষক সঙ্কটে নিপতিত বিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষক দেয়ার লক্ষ্যে সরকার এদের বদলির জন্য চিহ্নিত করেছে। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এসব শিক্ষক একই প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর ধরে নিয়োজিত আছে; অনেকেই আবার নির্লজ্জভাবে কোচিং বাণিজ্য এবং ছাত্রীদের হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত। শিক্ষার্থীদের এক প্রকার জিম্মি করেই তারা নিজেদের কাছে কোচিং ও প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করে আসছে। চিহ্নিত এসব শিক্ষককে এখন সরকার বদলি করে দিচ্ছে। কারও হচ্ছে শাস্তিমূলক আর কারও স্বাভাবিক বদলি। বিশেষ করে কোচিং বাণিজ্যে জড়িতদের বদলিটা হবে শাস্তিমূলকভাবে এবং তাদের পাঠানো হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায়। আর কাউকে পাঠানো হচ্ছে উপজেলা পর্যায়ের বিদ্যালয়ে।
দেশে ৩২১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠান দেখভাল করে থাকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সংস্থাটির মহাপরিচালক বলেছে, সারা দেশে তারা ৫ শতাধিক শিক্ষক পেয়েছে যারা কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরেজমিন অনুসন্ধান শেষে ওই রিপোর্ট প্রণয়ন করেছে।
উল্লেখ্য, সমাজের বিবেক হিসেবে পরিচিত শিক্ষকদের মর্যাদা কোনোকালেই কম ছিল না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা যে অনেক উঁচু স্তরের, এটাও সর্বজনবিদিত। কিন্তু দুঃখজনক হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুসংখ্যক শিক্ষকের নিয়মবহির্ভূত কর্মকা-ে তাদের সেই মর্যাদা মøান হতে চলেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র এক প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে। এতে দেশবাসী এই ভেবে উৎকণ্ঠিত হবে, এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত কেউ যদি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তাহলে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে কী করে? হাজার হাজার শিক্ষক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
মূলত, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে মেধাশূন্য, আওয়ামীপন্থী ভিসি, শিক্ষকদের দুর্নীতি ও দলবাজির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক নিয়োগে মেধাবীদের আর কোনো জায়গা নেই। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু দলীয় বিবেচনায় অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এমনকি পদ না থাকলেও ছাত্রলীগ কর্মীদের চাকরি দেয়ার উৎসাহে দ্বিগুণ শিক্ষক নিয়োগ দিতেও সরকারের বাধছে না। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০টি বিভাগের বিজ্ঞাপিত ১১৭টি পদের বিপরীতে সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় ২০৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ-রসায়ন বিভাগে ৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে যোগ্যতায় সর্বনিম্ন দুটি স্থান অধিকারী অর্থাৎ ৪১ ও ৪২ নম্বরের আবদুর রাকিব ও রওশানুল হাবিবকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফার্মেসি বিভাগে ১৪ জন আবেদনকারীর মধ্যে ১১তম অবস্থানে থাকা আবদুল মুহিত চাকরি পেয়েছে। ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যায় চাকরি পেয়েছে একই বিভাগের আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী শিক্ষক জহুরুল ইসলামের প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী জেবুননেছা ইসলাম। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা প্রদানে তার অযোগ্যতার গল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসির খোরাক যোগাচ্ছে। এটা চিত্র শুধু রাবি’র নয়- এ চিত্র সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই।
প্রতিভাত হচ্ছে- ক্ষমতাসীন রাজনীতি এবং দুর্নীতি পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এবং রাজনৈতিক কলুষে শিক্ষকতার মতো মহান পেশাও কলুষিত। প্রাইমারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষা পাঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সর্বক্ষেত্রেই একই অবস্থা। শিক্ষকতা মহান পেশা- এ চেতনা এখানে অনুপস্থিত। শিক্ষকতা এখানে ব্যবসা। শিক্ষকতা এখানে ক্ষমতা, শিক্ষা এখানে পণ্য। মূলত এটা হারাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার কুফল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সব কিছুই পুঁজি। কাজেই শিক্ষা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জ্ঞানের আলো নয়, বরং ক্ষমতা ও অর্থের উৎস।
একারণে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রাইমারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আদর্শবাদী শিক্ষক চরিত্র এখানে অনুপস্থিত। যে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শিক্ষকের মতো মহান পেশাও কলুষিত, সে রাজনৈতিক ব্যবস্থা মূলত দেশ জাতির জন্য অভিশাপ ছাড়া কিছুই নয়। তাই তো বর্তমানে এদেশের প্রশাসন থেকে বিচারব্যবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থাসহ জনজীবনের সর্বক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সীমাহীন দুর্নীতি ও দুর্গতি এবং বৈষম্য ও ভোগান্তি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা এ ভোগান্তির শেষ চাই না। চাইলেও কাঙ্খিত পথে এগুতে চাই না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ করতে চাই না। সম্মানিত ইসলামী আদর্শহীনতাই যে সমাজকে আদর্শহীন করে তুলছে; শিক্ষককে পর্যন্ত কলঙ্কিত করছে- এ সত্য স্বীকার করতে চাই না। আমাদের এ গুমরাহী ও জিহালতি ছাড়তে হবে। নচেৎ শিক্ষকসহ সব শিক্ষার্থীরাও যে ঢালাওভাবে বিপথগামী হবে সে পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। জেনে শুনে বিষ পান করতে হবে। চোখের সামনে দেশ-জাতির ধ্বংস দেখতে হবে। কিন্তু এটা কখনো কাম্য হতে পারে না। সঙ্গতকারণেই সব ক্ষেত্রেই সম্মানিত ইসলামী শিক্ষার ও আদর্শের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে। আর শিক্ষাঙ্গনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সর্বাগ্রে।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০