বাঙালি সংস্কৃতি লালন পহেলা বৈশাখ পালনকারীদের প্রধান পণ। বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে নানা কথা আছে। ‘হুজুগে মাতা বাঙালি’ও কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতির অনবদ্য অনুষঙ্গ। পহেলা বৈশাখও যদি ‘হুজুগে মাতা বাঙালি’ সংস্কৃতি হয়; তবে কী বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহকদের উচিত না- একে বিসর্জন দেয়া।
পহেলা বৈশাখের প্রবর্তক বাদশাহ আকবর কী বাঙালি ছিল? বাদশাহ আকবর মঙ্গোলিয়ান শাসক ছিল। শাসকের স্বার্থ রক্ষার জন্যই কি ফসলী সনের উদ্ভব হয়নি? তাহলে শাসিত বাঙালি এতে বাঙালিপানার চেতনা খুঁজে পায় কি করে?
পহেলা বৈশাখে জমিদারদের উঠোনে প্রজাদের না খেয়ে থাকা জমানো অর্থে উপহারের পাহাড় জমতো। পহেলা বৈশাখে প্রজা স্বার্থ কোথায় রক্ষিত হতো?
পহেলা বৈশাখে কৃষক পাট শাক দিয়েও ভাত খেতে পারতো না। কৃষক কি ইলিশ খেতে পারতো? যে ইলিশ খেত সে কি গরম ভাত খেতে পারতো না? তবে সে পান্তা খাবে কেন? আর যে পান্তা খায়; সে ইলিশ পায় কি করে? তাহলে পান্তা-ইলিশ কী একটা স্ব-বিরোধী শব্দ নয়? বাঙালি সংস্কৃতির নামে এটা কি মিথ্যা প্রচারণা নয়?
মূলত, পান্তা ইলিশের প্রবর্তন হয়েছে ১৯৮৪ সালে। বোরহান গং মাটির সানকীতে করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এর প্রচলন করে।
পহেলা বৈশাখ কি প্রতিপন্ন করতে চায়- মাটির সানকীই বাঙালির একমাত্র তৈজসপত্র? বাঙালি কৃষক মানেই কি গরিব প্রতিভু? বাঙালি মানেই গরিব?
বাঙালি সংস্কৃতি কি তাহলে গরিব সংস্কৃতি?
বিগত বিংশ শতাব্দীর ৬০-এর দশকে রবি ঠগ প্রেমিকরা রবি ঠগ উদযাপনে পহেলা বৈশাখকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু রবি ঠগ কি বাঙালি দরদী ছিল? সে কি বাংলা ভাষা প্রেমিক ছিল? রবি ঠগ যতটা বাঙালি ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি হিন্দু ছিল। এ কারণে সে বাংলাভাষার পক্ষে বলে নাই। তার ভারত মাতার জন্য সে হিন্দু ভাষার পক্ষে ওকালতি করেছিল।
গুজরাটী ভাষী রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ- ÔUrdu and urdu shall be the state language’ মন্তব্য করে যে অন্যায় করেছিলো এর চেয়ে শতগুণ অপরাধ করেছিলো বাংলা ভাষী নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্র ঠগ- “The only possible national language for inter provincial inter-course is Hindi in India” মন্তব্য করে।
জিন্নাহ সাহেব এই অপরাধের জন্য মৃত্যুর আগে অনুতপ্ত হয়ে অনুশোচনা করেও অপরাধ থেকে রেহাই পায়নি। কিন্তু রবীন্দ্র ঠগ এই মন্তব্যের জন্য কোনো অনুশোচনা না করেও অপরাধী হিসেবে গণ্য হয়নি। বরং সে নন্দিত শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি হিসেবে আখ্যায়িত। সুতরাং এ দেশীয় তথাকথিত কতিপয় বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতারা রবীন্দ্র ঠগকে রাজনৈতিক হীন স্বার্থ প্রণোদিতভাবে ব্যবহার করছে- তা সুস্পষ্ট।
বিশেষ করে এই রবি ঠগকে ছায়ানটীরা তাদের ঈশ্বর মানে। নাঊযুবিল্লাহ! রবি ঠগের সঙ্গীতকে তারা ইবাদত মনে করে। নাঊযুবিল্লাহ! হালে তারা মুসলমান মুর্দার পাশে দোয়া-দুরূদ শরীফ পাঠের পরিবর্তে রবি ঠগের সঙ্গীত উচ্চারণ করছে। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখের প্রবর্তক ছায়ানটীরা এদেশের মুসলমানদের তাহলে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? সে প্রশ্ন এখন জ্বলন্ত। ছায়ানটীদের হাতে মুসলমান ও সম্মানিত ইসলামী আচার কতটুকু নিরাপদ? এ প্রশ্নের উত্তর আজ দেশের ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের ভেবে দেখতে হবে।
ছায়ানটীরা আজ রাষ্ট্রের ভিতরে আরেক রাষ্ট্র। সরকারের ভিতরে আরেক সরকার। পহেলা বৈশাখ তাদের হাতিয়ার। পহেলা বৈশাখে ‘হুজুগে মাতা বাঙালি’ রাষ্ট্র ও সরকারের দিকে নিবদ্ধ থাকে না। নিবদ্ধ ও নিবেদিত থাকে ছায়ানটের দিকে।
ছায়ানটীরা বাঙালি সংস্কৃতির তল্পীবাহক দাবিদার। কিন্তু সে দাবিতে আজ তারা পরাভূত। পহেলা বৈশাখের বর্তমান কাঠামোয় বাঙালি সংস্কৃতি এখন পশ্চাত্যের সাথে মিশেল সংস্কৃতিতে রূপ পরিগ্রহ করছে- একথা আজ তারাও স্বীকার করছে।
পহেলা বৈশাখের নামে আজ প্রকাশ্যে পাশ্চাত্য কায়দায় নারী দেহের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলিতে উল্কি আকার প্রবণতা চলছে। একি বাঙালি সংস্কৃতি?
পহেলা বৈশাখ আজ বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখানে বাণিজ্য ঢুকেছে। এটা এখন উচ্চবিত্তদের কব্জায়। এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এখন ৩২ হাজার টাকায়। অথচ এখনো দেশের ৩ কোটি লোকের দৈনিক আয় ৭০ টাকারও নিচে। পহেলা বৈশাখ কী তাহলে গ্রাম বাংলার মানুষের সাথে উপহাস বা পরিহাস করা নয়?
পহেলা বৈশাখকে সার্বজনীন বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে কি তাই? পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মুসলমানের ঘরে রান্না করা গরুর গোশত কি হিন্দুরা খায়? সে তো পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রান্না করা। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষেও রান্না করা গরুর গোশতে যদি হিন্দুর না পছন্দ হয়, তাহলে সে হিন্দু পহেলা বৈশাখ পালনকারী হয় কি করে? আসলে পহেলা বৈশাখ পালনকারী প্রকৃত অর্থে পহেলা বৈশাখ পালনকারী নয়। তারা আসলে ছলনাকারী। এ ছলনা তারা করছে নিজেদের সাথে, জাতির সাথে, সংস্কৃতির সাথে।
কিন্তু ছলনা আর মুসলমান এক সাথে থাকতে পারে না। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যে ধোঁকা দেয় সে উম্মতে হাবীবী নয়। যে পহেলা বৈশাখ পালন করে সে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালন করে না। কারণ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যেও পবিত্র দ্বীন ইসলাম আসার আগে পহেলা বৈশাখের মতো মিহির রোজ উৎসব চলতো।
কিন্তু আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নববর্ষ উদযাপনকে হারাম ঘোষণা করে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আদ্বহা শরীফ হাদিয়া দেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আদ্বহা শরীফ উনাদের পালন করার অর্থই পহেলা বৈশাখ বাতিল ঘোষণা করা। প্রকৃত অর্থে মুসলমান তাই। তারা ‘হুজুগে মাতা বাঙালি’ হিসেবে পহেলা বৈশাখ পালন করছে। কিন্তু মুসলমান হিসেবে তারা পহেলা বৈশাখ থেকে তওবা করবে। পহেলা বৈশাখ থেকে ফিরে আসবে।
ছায়ানটীরাসহ সার্বজনীনতার ধুয়া তুলনেওয়ালারা পরাজিত হবে। পহেলা বৈশাখ উদযাপনকারীরা অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। তারা বিলুপ্ত হবে। কারণ পহেলা বৈশাখ আসলে বাঙালি সংস্কৃতিও নয়। মঙ্গোলিয়ান সংস্কৃতি। মোঘলদের মৃত্যুর সাথেই যার মৃত্যু হয়েছে।
-আল্লামা মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান।
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১