রবীন্দ্র ঠগের নামে শাহজাদপুরে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এখানে মূল ক্যাম্পাস থাকলেও পতিসর এবং শিলাইদহে পৃথক দুটি ক্যাম্পাস তৈরি করা হবে। দেশের ৩৫তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথভাবে অর্থায়ন করবে বলে জানা গেছে।
গত ৫ ডিসেম্বর (২০১৩ঈ.) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পত্র দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (্ইউজিসি) রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
রবি ঠগের জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারে বাংলাদেশে একটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। চলতি ২০১৪ সালের মার্চ মাসে এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অগ্রগতি জানতে চেয়ে ভারত সরকার তাগাদাও দিয়েছে বলে জানা গেছে। শান্তিনিকেতনের তথা বিশ্ব ভারতীর আদলে প্রতিষ্ঠা পেতে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয় শিল্প-সাহিত্য বিষয়ে একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
২৯ ডিসেম্বর ২০১১ ঈসায়ী তারিখে তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে যে, “রবীন্দ্র চিন্তা ও আদর্শের বিকাশে বর্তমান বাংলাদেশে একটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আমাদের জন্য বিশাল আনন্দের বিষয়, আমরা এখন মুক্ত পরিবেশে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন এবং রবীন্দ্র সাহিত্যকর্ম চর্চা করতে পারি। বাঙালি জাতিকে এ জন্য দীর্ঘ সময় সংগ্রাম করতে হয়েছে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘রবি ঠগের চিন্তা ও আদর্শ’ এবং শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতী’র আদর্শ বাস্তবায়নে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এদেশের ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়ার এ আত্মঘাতী ও ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভেবে দেখা উচিত ছিল ‘রবি ঠগের চিন্তা ও আদর্শ’ এবং শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতী’র আদর্শ আসলে কি? এদেশের ৯৭ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী উনারা সেটা মেনে নিবেন কিনা? মূলত, কখনোই মেনে নিবে না।
কারণ ‘রবি ঠগের চিন্তা ও আদর্শ’ এবং শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতী’র আদর্শ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার কট্টর বিরোধী, বিদ্বেষী ও চরম সাম্প্রদায়িক। এ আদর্শ মুসলিম নির্মূলে চরম উস্কানীমূলক আদর্শ। এ আদর্শ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চেতনা বিরোধী আদর্শ।
উল্লেখ্য রবি ঠগের চিন্তা ও আদর্শ হচ্ছে- কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী কট্টর সাম্প্রদায়িক আদর্শ।
যেমন সে তার ‘রীতিমত নভেল’ নামক ছোটগল্পে মুসলিম চরিত্র হরণ করেছে এভাবে-
“আল্লাহো আকবর শব্দে বনভূমি প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠেছে।
একদিকে তিন লক্ষ যবন (মুসলিম) সেনা অন্য দিকে তিন সহস্র (হিন্দু) সৈন্য।
… পাঠক, বলিতে পার … কাহার বজ্রমণ্ডিত ‘হর হর বোম বোম’ শব্দে
তিন লক্ষ ম্লেচ্ছ কণ্ঠের ‘আল্লাহো আকবর’ ধ্বনি নিমগ্ন হয়ে গেলো।
ইনিই সেই ললিতসিংহ। কাঞ্চীর সেনাপতি। ভারত-ইতিহাসের ধ্রুব নক্ষত্র।”
এদিকে নীরদ চৌধুরী তার আত্মজীবনীতে রবি ঠগ সর্ম্পকে লিখেছে, “রবীন্দ্র জমিদার হিসাবে পূর্ববঙ্গের মুসলমান প্রজাদেরকে লাভ স্টক বা গৃহপালিত পশু মনে করতো।”
তাছাড়া শান্তিনিকেতনের আদর্শ ও ইতিহাস কি? সেটা কি মুসলমানগণ গ্রহণ করতে পারবে?
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর পৌর শহরের খুব কাছে এক ছোট্ট শহর শান্তিনিকেতন। এ অঞ্চলের জমিদার ভুবন সিংহ এই জায়গাটি রবি ঠগের বাবা দেবেন্দ্রকে উপহার দেয়। তখন দেবেন্দ্র এ জায়গার নাম রাখে শান্তিনিকেতন।
১৮৮৮ সালের ৮ মার্চ রবি ঠগের বাবা দেবেন্দ্র একটি ট্রাস্ট ডিড তৈরি করে শান্তিনিকেতনকে হিন্দুদের জন্য উৎসর্গ করে। ডিডে সে উল্লেখ করে- “উক্ত সম্পত্তি চিরকাল কেবল নিরাকার এক ব্রে রহ্ম উপাসনার জন্য ব্যবহৃত হইবে। ….কোনো সম্প্রদায় বিশেষের অভীষ্ট দেবতা বা পশুপাখি মনুষ্যের মূর্তির বা চিত্রের বা কোনো চিহ্নের পূজা হোমযজ্ঞাদি ঐ শান্তিনিকেতনে হইবে না।”
পরবর্তীতে এখানেই রবীন্দ্র পাঠ ভবন নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে। ভিন্ন ধারার এই বিদ্যালয়ে রবীন্দ্র ঠগ প্রাচীন আর্য আশ্রমের আদর্শে প্রাকৃতিক পরিবেশে উন্মুক্ত আকাশের নিচে শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করে। পরে ১৯২১ সালে এখানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৬৩ সালে শান্তিনিকেতনে দেবেন্দ্র উপাসনা ভবন প্রতিষ্ঠা করে। আর ভিতরের ছাতিমতলা হলো দেবেন্দ্রের ধ্যানের স্থান। বর্তমানে এখানে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। স্নাতকদের সপ্তপর্ণী গাছের পাঁচটি পাতার গুচ্ছ উপহার দেয়া হয়।
সারা বছরই শান্তিনিকেতনে বিভিন্ন হিন্দুয়ানি উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রবীন্দ্র জয়ন্তী, বসন্ত উৎসব, বর্ষামঙ্গল, শরৎ উৎসব, নন্দনমেলা, পৌষমেলা ও মাঘমেলা উল্লেখযোগ্য। এখানে হিন্দু সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও আরো যে আদর্শ প্রচার করা হয়, শিক্ষা দেয়া হয়, তা হলো; নৃত্য, নাট্য, সঙ্গীত, রবীন্দ্র গবেষণা ও রবীন্দ্র বিষয়ক চর্চা।
অর্থাৎ শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্য, আদর্শ এবং ইতিহাসও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী আদর্শ। ব্রাহ্ম, ব্রাহ্ম, আর্যদের আদর্শ বা রবি ঠগের আদর্শ অর্থাৎ একান্তভাবে হিন্দুত্ববাদের আদর্শ গ্রহণ, ধারণ ও প্রচারের বিশেষ মাধ্যম হচ্ছে এই তথাকথিত শান্তিনিকেতন বা বিশ্বভারতী। তাছাড়া আন্তঃধর্মীয় সংলাপের নামে হিন্দুত্ববাদের বৈধতা ও স্বীকৃতি লাভ করাও এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
সুতরাং শান্তিনিকেতনের হিন্দুত্ববাদী আদর্শ কিভাবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এদেশের মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়া যেতে পারে? ব্রা
তাছাড়া রবি ঠগের সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস কিঞ্চিৎ নয়; বরং তার গোটা জীবনই মুসলিমবিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িকতার উপকরণে ভরপুর।
যেমন, সে মুসলমানদের জন্য পূর্ববঙ্গ প্রদেশ গঠন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের বিরোধিতা করেছে। নতুন প্রদেশ গঠনের দিন ১৬ই অক্টোবরকে সে শোক দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছে। একই ভাবে ১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কোলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হিন্দুরা যে সভা করে তাতে সভাপতিত্ব করেছে এই রবি ঠগ।
সে নিজেই স্পষ্ট করে বলেছে, ‘আমি ভারতীয় ব্রহ্মচর্যের প্রাচীন আদর্শে আমার ছাত্রদিগকে নির্জনে নিরুদ্বেগে পবিত্র নির্মলভাবে মানুষ করিয়া তুলিতে চাই। বিদেশী ম্লেচ্ছতাকে (মুসলমানিত্ব) বরণ করা অপেক্ষা মৃত্যু শ্রেয়, ইহা হৃদয়ে গাঁথিয়া রাখিও।’
তার উগ্র হিন্দুত্ব সম্পর্কে রমেশ মজুমদার লিখেছে, ‘হিন্দু জাতীয়তা জ্ঞান বহু হিন্দু লেখকের চিত্তে বাসা বেঁধেছিল, যদিও সজ্ঞানে তাদের অনেকেই কখনোই এর উপস্থিতি স্বীকার করে না। এর প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে, ভারতের কবি রবীন্দ্র, যার পৃথিবী খ্যাত আন্তর্জাতিক মানবিকতাকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে কিছুতেই সুসংহত করা যায় না। তার কবিতাসমূহ শুধুমাত্র শিখ রাজপুত ও মারাঠা কীর্তনে অনুপ্রাণিত হয়েছে। কোনো মুসলিম বীরের কীর্তনে সে কখনও এক ছত্রও লিখেনি। এ থেকেই প্রমাণিত হয় উনিশ শতকী বাংলার জাতীয়তা জ্ঞানের উৎসমূল কোথায় ছিল।’
নীরদ চৌধুরী লিখেছে, “রামমোহন থেকে রবীন্দ্র সকলেই জীবনব্যাপী সাধনা করেছে হিন্দু ও ইউরোপীয় চিন্তাধারার সমন্বয় সাধনের জন্যে। মুসলমানদের চিন্তা চেতনা, ভাবধারা, ঐতিহ্য কখনোই তাদের স্পর্শ করেনি।”
‘বাঙ্গালী জীবনে রমণী’ গ্রন্থে নীরদ চৌধুরী আরো বলেছে, ‘একটা একেবারে বাজে কথা সর্বত্র শুনিতে পাই। তাহা এই রবীন্দ্র ব্যক্তি হিসাবে বিশ্ব মানব ও লেখক হিসাবে বিশ্ব মানবতারই প্রচারক। কথাটির অর্থ ইংরেজি বাংলা কোনো ভাষাতেই বুঝিতে পারি না। তবে অস্পষ্টভাবে ধোঁয়া ধোঁয়া যেটুকু বুঝি, তাহাকে অর্থহীন প্রলাপ বলিয়া মনে হয়। রবীন্দ্র অপেক্ষা বিশিষ্ট বাঙালি হিন্দু আর কেহ জন্মায়নি?’
দৃষ্টিদান গল্পের কথা উল্লেখ করে নীরদ চৌধুরী আরো বলেছে, ‘আসলে রবীন্দ্র মনে প্রাণে বাঙালি হিন্দু ছিলো।’
এ হচ্ছে রবি ঠগের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার কিঞ্চিৎ ইতিহাস। এ রকম কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী, উগ্র হিন্দুত্ববাদের ধারক বাহক, চরম সাম্প্রদায়িক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পূর্ববঙ্গ প্রদেশ গঠনের চরম বিরোধিতাকারী তথা ঘাতক রাজাকার ও ভারতীয় কবি রবীন্দ্র ঠগের নামে এদেশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন কি করে গ্রণযোগ্য হতে পারে? কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রসঙ্গত আরো উল্লেখ্য যে, ভারতে ৪০ শতাংশেরও বেশি জনগোষ্ঠী হচ্ছে মুসলমান। যা মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক। তারপরেও সেখানকার মুসলমানগণ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি পায় না। সম্প্রতি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে হীরা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন কয়েকজন মুসলিম ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে ৭ তলা ভবনের নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ হয়, শুধু অনুমতির অপেক্ষা। এমন সময় ইসলামবিদ্বেষী উগ্র হিন্দুরা দেশজুড়ে এই ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে লেগে পড়ে। তারা দাবি তুললো, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানে এক সময় কোনো এক মন্দিরের পুকুর ছিল। এমন নানান মিথ্যা অজুহাত তৈরি করে বিজেপি, রবি ঠগের মতাদর্শের অনুসারী ‘হিন্দু জাগরণী সমিতি’ সবাই একযোগে সারা দেশে আন্দোলন ও অপপ্রচার চালিয়ে মুসলমানদের বিশ্ববিদ্যালয়টি ভাঙ্গার জন্য সরকারকে চাপ প্রয়োগ করলো। সরকারও ঠুনকো অজুহাতে অংকুরেই মুসলমানদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিলো।
অথচ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী, রবি ঠগের সেই অনুসারীরা ভারতের অংশীদারিত্বে তাদের গুরুর নামে এদেশে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। কিন্তু এদেশের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। মূলত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশে তারা উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের কারখানাসহ একনিষ্ঠ ভারতীয় দালাল তৈরির কারখানা স্থাপন করতে চাচ্ছে।
যা এদেশের ৯৭ ভাগ মুসলমান জনগোষ্ঠী কখনোই মেনে নিবে না। তাই অবিলম্বে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যায়ের নামে ভারতীয় দালাল তৈরির এ কারখানা তথা উগ্র হিন্দুত্ববাদ প্রচারের এ কারখানা বন্ধ করতে হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০