পবিত্র মসজিদ উনার সুন্নত মুবারক জিন্দাকরণ প্রসঙ্গে
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
খেজুর গাছ দ্বারা লাঠি মুবারক তৈরী করা হলো। যে মুবারক লাঠি উনার উচ্চতা ছিল ইমাম বা খতীব ছাহেব উনার কাঁধ বরাবর। আর হাতের মুষ্ঠিতে ধরা যায় বা মুঠ করে ধরা যায় এরূপ মোটা ছিল। প্রথম দিকে সুন্নতী জামে মসজিদ মুবারকে বৈদ্যুতিক কোন পাখা কিংবা বাতি ব্যবহার করা হয়নি। গরমকালে তাল পাখা ব্যবহার করা হতো।
সুন্নতি জামে মসজিদ উনার পূর্ব দিকের বারান্দায় একটি কুপ মুবারক তৈরী করা হয। প্রায় ৬ ফুট গভীর করতেই বিশুদ্ধ ও সুস্বাদু পানি মুবারক পাওয়া যায়। সেই কুপ মুবারকের তলদেশে কিছু পাথর মুবারক রাখা হয়। আর সেই কুপ মুবারকের চার পাশে পাথর বিছানো হয়। এই কুপ মুবারক উনার বিশেষ খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই কুপ মুবারক পবিত্র জম জম কুপ মুবারক উনার সাথে কুদরতীভাবে সংযোগ সৃষ্টি হয়। অনেক লোক সেই কুপ মুবারক উনার পানি মুবারক পান করে বিভিন্ন রোগের শিফা (রোগ মুক্তি) লাভ করেন।
সেই কুপ মুবারক উনার চারপাশে পাথর বিছানো ছিল। সেই পাথরের উপরেই অযুর ব্যবস্থা ছিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাথর মুবারক উনার উপর অযু মুবারক করেছেন। মূলতঃ সেই সুন্নত মুবারক আদায় বা জিন্দা করার জন্য এতো চেষ্টা, কোশেশ। এতো আয়োজন, ব্যবস্থাপনা। সেই কুপ মুবারক উনার খানিকটা দূরে উত্তর পাশে ইস্তিঞ্জাখানা ছিল। উক্ত ইস্তিঞ্জাখানাও মাটি, পাথরের দেয়াল ও খেজুর গাছের পাতা ও কাঠ দ্বারা নির্মিত হয়।
সেই সুন্নতি জামে মসজিদ মুবারক উনার বারান্দার লাগালাগি বাইরে বড় একটি পাথর রাখা হয়। সেই পাথর মুবারক উনার উপর দাঁড়িয়ে মুয়াজ্জিন ছাহিব আযান দিতেন। মসজিদে ভিতর দাঁড়িয়ে আযান দেয়া মাকরূহ তানযিহী। সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ। সেই সুন্নত মুবারক আদায়ে বাদ পড়েনি। মূলতঃ এই সুন্নতী জামে মসজিদ মুবারক উনাকে ঘিরে রয়েছে হাজার হাজার সুন্নত মুবারক। অক্লান্ত পরিশ্রম ও অনেক অর্থ ব্যয়ে একটানা দীর্ঘ এক বৎসরে নির্মিত হয় এই পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র সুন্নতি জামে মসজিদ নির্মান কল্পে বড় বড় মিস্ত্রী বা কারিগর ঘাবড়ে যায়। এমনকি অনেক মিস্ত্রী বা কারিগর অক্ষমতা প্রকাশ করতঃ অব্যাহতি নেয়। অবশেষে যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সরাসরি দিক নির্দেশনা দান করেন। ফলে সুসম্পন্ন হয় মসজিদ নির্মানের কাজ। আর তখনকার দৃশ্যটা এমন ছিলো যে, সেই অভিজ্ঞ মিস্ত্রী বা কারিগররা হলো হেলপার বা সহযোগী। আর এমনটি হবে এটাইতো স্বাভাবিক। কারণ, যেখানে স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনা মুবারক, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে দেন। কাজেই, উনার সার্বিক দিক নির্দেশনা ব্যতীত কে এই মহান কাজের আঞ্জাম দিতে সক্ষম হবে?
তাছাড়া নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ নির্মাণে সরাসরি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। নিজ হাত মুবারকে কাজ করেছেন। মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সেই সুন্নত মুবারক আদায় হবে না তা কি কখনো কল্পনা করা যায়?
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসুল, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সেজন্য অনেকবারই বলেছেন যে, এরূপ অনেক সুন্নত মুবারক আছে যা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কুদরতীভাবে করিয়ে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ নির্মান কাজে ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত, ছাহিবে কাশফ ওয়াল কারামত, ছুফিয়ে বাতিন, ছাহিবে ইসমে আ’যম, কুতুবুয যামান আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনিও স্বতস্ফুর্তভাবে স্বশরীর মুবারকে অংশ গ্রহন করেন। পবিত্র ১২ই রবীউল আওউয়াল শরীফ ১৪০৬ হিজরী ১৯৮৬ ঈসায়ীতে পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ উনার কাজ শুরু হয় এবং পবিত্র ১২ই রবীউল আওউয়াল শরীফ ১৪০৭ হিজরী, ১৯৮৭ ঈসায়ী সালে শেষ হয়।
উক্ত পবিত্র ১২ই রবীউল আওউয়াল শরীফে বা জামায়াত নামায পড়া শুরু হয়। উক্ত পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদে নামাযে জামায়াতে হযরত খিজির আলাইহিস সালামসহ অনেক রেজালুল গায়িব এবং অসংখ্য আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উপস্থিত ছিলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং ত্বরিকতের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উক্ত পবিত্র জামে মসজিদ শরীফে তাশরীফ আনেন। সুবহানাল্লাহ!