মুহইস সুন্নাহ’ লক্বব মুবারক প্রসঙ্গে:
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম হাকিমুল হাদীছ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-উনার জিন্দাকৃত বা পুনঃপ্রচলন করা কতিপয় সুন্নতের বিবরণ:
একটি না’ল বা স্যান্ডেল পরে হাঁটাচলা করার হুকুম
এক পায়ে স্যান্ডেল পরিধান করা মাকরূহে তানযীহী। তবে বিশেষ ওজর বা অসুবিধা থাকলে মাকরূহে তানযীহীও হবেনা; বরং জায়িয। “বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ”-এর কিতাবুল লিবাস অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে স্যান্ডেল পরিধান করে না চলে। হয় উভয় পা খালি রাখবে অথবা উভয় পায়ে স্যান্ডেল পরবে।”
“ফতহুল বারী” কিতাবে আরো উল্লেখ আছে, “হযরত ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এক পায়ে স্যান্ডেল পরে চলাচল নিষেধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন, এটা শয়তানের চলন। কারো মতে, এভাবে চলা স্বাভাবিকতার খিলাফ। (অনুরূপ ফতহুল মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, জামউল্ ওয়াসায়িল, শরহুল মানাবী মিছরী, আল মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া, মিরকাত ইত্যাদি)
“মুসলিম শরীফ”-এর কিতাবুল লিবাস-এ আরো বর্ণিত আছে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যখন তোমাদের কারো স্যান্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে যায় তখন সে যেন একখানা স্যান্ডেল পরে হাঁটাচলা না করে। কেউ একটি মোজা পরেও চলাফেরা করবে না, বাম হাত দ্বারা খাবার খাবে না, একখানা কাপড় দিয়ে ইহ্তিবা (কুকুর-শিয়ালের মত দুজানু খাড়া) অবস্থায় বসবে না এবং এক কাপড়ে গোটা শরীর জড়িয়ে রাখবে না।”
“মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুল লিবাস পরিচ্ছেদে, বর্ণিত আছে, “হযরত কাসিম বিন মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হুমায়রা, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো একখানা স্যান্ডেল পরিধান করে চলেছেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হুমায়রা, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম নিজেই একখানা স্যান্ডেল পরিহিতা অবস্থায় চলেছেন।” এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “আত্ তালীকুছ ছবীহ” কিতাবে বর্ণিত আছে, “নিষেধের পর কিছু সময়ের জন্য এক পায়ে স্যান্ডেল পরে চলা প্রমাণ করে যে তা বিশেষ প্রয়োজনে হয়েছিল অথবা জায়িয প্রমাণের জন্য । আর এক পায়ে স্যান্ডেল পরিধান করে চলা নিষেধের হাদীছ শরীফ হারাম প্রমাণ করে না। বরং মাকরূহে তানযীহী প্রমাণ করে।” (অনুরূপ ফতহুল বারী, জামউল ওয়াসিল, শরহুল্ মানাবী ও আল মাওয়াহিবুল লাদুিন্নয়া কিতাবে উল্লেখ আছে।)
জোড়াতালি দেয়া বা মেরামত করা না’লাইন বা স্যান্ডেল পরিধান করাও সুন্নত
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না’লাইনি মাখছূফাতাইনি তথা দুটি তালি দেয়া না’লাইন বা স্যান্ডেল মুবারকও ব্যবহার করেছেন। ‘খছফুন’ শব্দটির অর্থ সেলাই করা, মেরামত করা, তালি দেয়া ইত্যাদি। তালি দেয়া, মেরামত করা স্যান্ডেলের তাৎপর্য হলো: দীর্ঘদিন পায়ে দেয়ায় তলা ক্ষয় হওয়ার কারণে উহার নিচে চামড়ার তালি লাগানো স্যান্ডেলও হতে পারে এবং ফিতা ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে তাতে চামড়ার তালি দেয়া স্যান্ডেলও হতে পারে।
যেমন, “শামাইলুত্ তিরমিযী”তে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোড়াতালি দেয়া বা মেরামত করা দুটি স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায় নামায পড়েছেন। “শামায়িলুত্ তিরমিযী”-এর শরাহ “জামউল ওয়াসায়িল” কিতাবে বর্ণিত আছে, “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জোড়াতালি দেয়া বা মেরামত করা গরুর চামড়ার দুটি স্যান্ডেল মুবারক পরিহিত অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বরকতপূর্ণ হাত মুবারকে উনার স্যান্ডেল মুবারক সেলাই করতেন। অত্র হাদীছ শরীফ থেকে মাসয়ালা গ্রহণ করা হয়েছে যে, যদি চামড়ার স্যান্ডেল পবিত্র থাকে তাহলে স্যান্ডেল পরে নামায আদায় করা জায়িয রয়েছে। (মানাবী মিছরী শরহে শামায়িল)
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হুমায়রা, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। নিজের স্যান্ডেল মুবারক নিজেই সেলাই করতেন এবং নিজের বালতি নিজেই মেরামত করতেন।
স্যান্ডেল পুরাতন হলে তালি, সেলাই বা জোড়া দিয়ে পরা সুন্নত। স্যান্ডেল গরুর চামড়ার হওয়া খাছ সুন্নত। নিজের স্যান্ডেল নিজেই সেলাই করাও খাছ সুন্নত।
হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম