‘মুহইস সুন্নাহ’ লক্বব মুবারক প্রসঙ্গে:
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম হাকিমুল হাদীছ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-উনার জিন্দাকৃত বা পুনঃপ্রচলন করা কতিপয় সুন্নতের বিবরণ:
না’লাইন বা স্যান্ডেল ক্রস ফিতা বিশিষ্ট হওয়াও খাছ সুন্নত
“শামায়িলুত তিরমিযী”, “ইবনু মাজাহ শরীফ” এবং তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার স্যান্ডেল মুবারক-এ দুটি করে ফিতা ছিল এবং প্রত্যেকটি ফিতা ছিল দু’পাট্টা বিশিষ্ট।”
অত্র হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “শামায়িলুত্ তিরমিযী”-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুল মানাবী মিছরী” সেখানে উল্লেখ আছে, “চামড়ার সেন্ডেলের দু’ফিতার একদিক সেন্ডেলের সামনে লাগানো থাকতো। বলা হয়, পায়ের পিছন দিকে যে ফিতার অংশ স্থাপিত ছিল তা ছিল কোমল চামড়ার।
“জামউল্ ওয়াসায়িল” ও “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ আছে, “চামড়ার স্যান্ডেল মুবারক-এর ফিতার এক দিক সেন্ডেলের সামনে লাগানো থাকতো। যা পিছন থেকে স্থাপিত হয়ে সামনে আসত।”
উপরোক্ত হাদীছ শরীফখানা এবং ইবারত দু’টি থেকে জানা যায় যে, দু’ফিতার একটি করে দিক সামনে স্থাপন হলে অপর দিক দুটি পিছনে স্থাপন হবে, আর তা ক্রস করা ছাড়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ যে ফিতার একটি দিক স্যান্ডেলের পিছনে ডান দিকে স্থাপন হবে তাহলে তার অপর দিক সামনে বাম দিকে স্থাপন করতে হবে। অনুরূপভাবে যে অপর ফিতাটির একপ্রান্ত পিছনে বাম দিকে স্থাপন হবে তা প্রথম ফিতার সাথে ক্রস হয়ে সামনে ডান দিকে স্থাপন করতে হবে। সে রকমই ইবারতে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। মূলত পশমহীন চামড়ার এই ক্রস ফিতাযুক্ত না’লাইন বা স্যান্ডেলই খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
স্বাভাবিকভাবে বসার সময় না’লাইন বা স্যান্ডেল খুলে বাম পার্শ্বে হিফাযতে রাখা আদব
নামাযের সময় না’লাইন বা স্যান্ডেল কোন কিছু দিয়ে মুড়িয়ে দু’হাঁটুর মাঝখানে রাখা সুন্নত। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ কোথাও কোন মজলিস বা কোন স্থানে বসার সময় স্যান্ডেল খুলে নিজের বাম পার্শ্বে রাখা আদব এবং সতর্কতা। ক্বিবলার দিকে এবং ডান পার্শ্বে রাখা নিষেধ। ক্বিবলার দিকে এবং ডান দিকের সম্মানের জন্য। আর পিছনে রাখা নিষেধ এজন্য যে, এতে স্যান্ডেল চুরি হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। যেমন, হাদীছ শরীফ-এর কিতাব “আবূ দাউদ শরীফ”-এর কিতাবুল লিবাস পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কোন লোক যখন বসে, তখন সুন্নত হলো স্বীয় স্যান্ডেল খুলে বসবে এবং নিজের এক পার্শ্বে স্যান্ডেলদ্বয় রেখে দিবে।”
এখন প্রশ্ন হলো- কোন পার্শ্বে রাখবে? এর সমাধানে “আউনুল্ মা’বূদ” “বযলুল মাজহুদ” ও “মিরকাত শরীফে” বর্ণিত আছে, “কোন লোক যখন বসে, তখন সুন্নত হলো স্বীয় স্যান্ডেল খুলে বসবে এবং নিজের এক পার্শ্বে স্যান্ডেলদ্বয় রেখে দিবে।) অর্থাৎ ডান দিকের সম্মানের কারণে বাম দিকে রাখবে। সামনে রাখবে না ক্বিবলার সম্মানার্থে। আর পিছনে রাখবে না চুরি হওয়ার আশঙ্কায়।”
ক্বাবক্বাব তথা খড়ম পায়ে দেয়া বিদয়াত
‘ক্বাবক্বাব’ অর্থ: খড়ম। যা পায়ে পরিধান করে হাটাচলা করলে খটখট আওয়াজ করে। হাদীছ শরীফ-এ এর অনিষ্টতা থেকে হিফাযত থাকতে বলা হয়েছে আর ফতওয়ার কিতাবে বিদয়াত বলে ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি ঠকঠক আওয়াজ থেকে তথা খড়মের খটখট আওয়াজ থেকে ও দম্ভভরে চলার অনিষ্টতা থেকে নিজেকে বাঁচালো তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল।”
বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ’-এর ‘কিতাবুল কারাহিয়াহ’-এর ৯ম পরিচ্ছেদে লিবাসের আলোচনায় উল্লেখ আছে, খড়ম তথা কাঠ দ্বারা তৈরি স্যান্ডেল পায়ে পরিধান করা বিদয়াত।” অনুরূপ কুনিয়া কিতাবেও উল্লেখ আছে। (চলবে)
-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম