মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি রেযামন্দী হাছিলের জন্য সন্তান প্রতিপালনকারীদেরকে নি¤œলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখা জরুরী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে পবিত্র নামায পড়ার অভ্যাস করাবে এবং দশ বছরের মধ্যে পূর্ণরূপে নামাযে পাবন্দ বানাবে। এজন্য প্রয়োজনে শাসন করবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مروا اولادكم بالصلوة وهم ابناء سبع سنين واضربوا عليها وهم ابناء عشر سنين
অর্থ: “তোমাদের সন্তানরা যখন সাত বছর বয়সে পৌঁছে তখন পবিত্র নামায আদায়ের নির্দেশ দাও। আর যখন তারা দশ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন তাদেরকে নামায আদায়ের জন্য প্রয়োজনে প্রহার করো।”
সন্তানদের মক্তবে যাওয়ার বয়স হলে সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিবে। তারপর আরেকটু বয়স হলে পবিত্র ইলমে দ্বীন শিক্ষা দিবে। তারপর অপরাপর বিষয় শিক্ষা দিবে। তবে খুব ছোট থাকতে পড়া লেখার বোঝা চাপিয়ে দিবে না। এতে স্মরণ শক্তি ও স্বাস্থ্য উভয়ই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য তাদের ভারসাম্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।
রাগ করা, মিথ্যা বলা, হিংসা করা, চুরি করা, চোগলখুরী করা, অনর্থক নিজের কথার উপর জিদ ধরা, বেহুদা কথা-বার্তা বলা, অযথা হাসি-ঠাট্টা করা, অতিরিক্ত হাসা, কাউকে ধোকা দেয়া, ভাল মন্দ ও আদব-তমীয বিবেচনা করে কথা না বলা ইত্যাদি দোষগুলোর প্রতি যাতে ছেলে মেয়েদের আন্তরিক ঘৃণার সৃষ্টি হয় সেরকম উপদেশ দিবে। ঘটনা ও নছীহতের মাধ্যমে ভাল স্বভাব ও মন্দ স্বভাবের পার্থক্য তাদের মানসপটে এঁকে দিবে।
একইভাবে যখনই কোন একটি দোষ দেখবে, তখনই তাম্বীহ বা সতর্ক করবে এবং বুঝিয়ে উপদেশ দিবে।q সন্তানরা অসাবধানতাবশঃত যদি কোন জিনিষ নষ্ট করে ফেলে বা ভেঙ্গে ফেলে কিংবা অন্য কোন ছেলে-মেয়ের সাথে দুষ্টামী করে, মারে বা গালি দেয়, তবে তৎক্ষণাত তার শাস্তির ব্যবস্থা করবে, যেন ভবিষ্যতে সে এরূপ কাজ আর না করে। কেননা, এসব ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিলে সন্তানদের স্বভাব চিরতরে খারাপ হয়ে যেতে পারে।
সন্তানদের ছোট বেলার শিক্ষা যাতে দ্বীনদার, পরহেযগার উস্তাদের কাছে হয় এবং দ্বীনি শিক্ষা হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবে। কেননা, তার একটা বিশেষ প্রভাব সন্তানের জীবনের উপর পরে।
সন্তানের দ্বারা কোন ভাল কাজ সংঘটিত হলে তাদেরকে বাহবা দিয়ে খুব উৎসাহ দিবে, আদর করবে। কিছু পুরষ্কার দিলে আরো ভালো হয়। এতে তাদের ভাল কাজ করার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
একইভাবে তারা মন্দ কাজ করলে সকলের সামনে লজ্জা না দিয়ে নির্জনে নিয়ে বোঝাবে যে, দেখ, এমন কাজ করলে সকলে তোমার নিন্দা করবে। কেউ তোমাকে ভালবাসবে না। ভাল ছেলে-মেয়েরা এমন কাজ করে না। এসব কাজ করলে লোকে খারাপ বলবে। গোনাহের কাজ করলে, জাহান্নামে যেতে হবে। জাহান্নামে আগুন আছে, সাপ আছে, বিচ্ছু আছে এগুলো তোমাকে কামড় দিবে। এভাবে নির্জনে বোঝাবে যাতে লজ্জা ভেঙ্গে একেবারে বেশরম হয়ে না যায়। এরপর পুনরায় এরূপ করলে হালকা কিছু শাস্তি দিবে।
বাসা-বাড়ীতে যেসব প্রয়োজনীয় কাজ হয় মেয়েদেরকে সেই সব কাজ খুব মনোযোগের সাথে দেখতে এবং শিখতে বলবে।
বাবার ভয় ও ভক্তি সন্তানদের অন্তরে সৃষ্টি করা মায়ের কর্তব্য।
সন্তানদেরকে কোন কিছু অগোচরে করতে দিবে না। কেননা তারা যেকাজ অগোচরে করে সেকাজ তাদের কাছে মন্দ মনে হয় বলেই তারা অগোচরে করে।
কাজেই বাস্তবিকই যদি কাজটি মন্দ হয়, তাহলে তা করতেই দিবে না। আর মন্দ না হলে সকলের সামনে তা করতে বলবে।
সন্তানদের জন্য কিছু পরিশ্রমের কাজ নিয়মিত নির্ধারিত করে দিবে। যাতে তাদের পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে উঠে। সাথে কর্মপ্রিয়তা ও নিয়মানুবর্তিতাও শিখতে পারে।
সন্তানদেরকে খাওয়া-পরা, মজলিসে উঠা-বসা, চলা-ফেরা, কথা-বার্তা, আচার-আচরণের যাবতীয় আদব-কায়দা শিক্ষা দিবে।
এভাবে পরিকল্পিত সুন্দর ও দ্বীনদাররূপে গড়ে তুললে তারা হবে উত্তম চরিত্রবান আদর্শ সন্তান। এরূপ সন্তানদের কারণে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জল হবে। পরকালে নাজাত পাবে। জান্নাতে অতি উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন হবে।