(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
কামিল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত
সুলতানুল হিন্দ, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইলমুত তাছাওউফ বা মা’রিফাত ও মুহব্বত হাছিলের জন্য একজন কামিল শায়েখ উনার সন্ধান করতেছিলেন। হযরত খাজা উসমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাত মুবারকের পর তিনি বুঝতে পারলেন উনার চেয়ে কামিল বুযুর্গ দ্বিতীয় কেউ নেই। এমনকি এমন কামিল শায়েখ পাওয়াও অত্যন্ত দুরূহ। সুতরাং তিনি কিছুদিন উনার ছোহবত মুবারকে থেকে ত্বরীক্বত শিক্ষা করলেন। হযরত খাজা উসমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাতিনী অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন। যার জন্য তিনি উনাকে সাথে রাখা জরুরী মনে করলেন। হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক ইচ্ছানুযায়ী হযরত খাজা উসমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাইয়াত করালেন এবং নিজের মুরীদের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন।
নিজের বাইয়াতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সুলতানুল হিন্দ, সাইয়্যিদুনা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এমন ছোহবত মুবারকে যেখানে বড় বড় খ্যাতিমান সম্মানিত মাশায়িখগণ একত্রিত হতেন, আমিও আদবের সাথে উপস্থিত হলাম। হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে দুই রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ মুবারক দান করলেন। আমি সাথে সাথে তা আদায় করলাম। অতঃপর পবিত্র ক্বিবলা উনার দিকে মুখ মুবারক করে বসার আদেশ মুবারক করলেন। তারপর আদেশ মুবারক করলেন পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ পাঠ করুন। আমি মুহব্বতের সাথে সম্পূর্ণ সূরা শরীফ পাঠ করলাম। হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং আমার হাত মুবারক উনার হাত মুবারকের মধ্যে রাখলেন। আকাশের দিকে তাকালেন এবং বললেন আমি আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। এ অবস্থার পর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশেষ ধরণের একটি টুপি, যাকে “চাহার কুল্লাহ” বলা হয়ে থাকে। আমার মাথা মুবারকে তা পড়িয়ে দিলেন এবং নিজের কম্বল দ্বারা আমাকে আবৃত করলেন। অতঃপর বললেন, বসুন। সাথে সাথে আমি বসে পড়লাম। পুনরায় বললেন, এক হাজার বার পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ পাঠ করুন। আমি তা পড়ে শেষ করলাম। তারপর বললেন, আমাদের মাশায়িখ উনাদের নিয়মানুসারে এটা এক দিন-এক রাতের মুজাহাদাহ। সুতরাং আপনি সম্পূর্ণ একদিন ও একরাত মুজাহাদা করুন। এ আদেশ মুবারকের পরিপ্রেক্ষিতে আমি সম্পূর্ণ একদিন ও এক রাত মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত অর্থাৎ পবিত্র নামায, যিকির-ফিকির ইত্যাদিতে কাটালাম।
দ্বিতীয় দিন পূণরায় উপস্থিত হয়ে যথারীতি সম্মান প্রদর্শন করলাম। আদেশ মুবারক হলো, বসুন। আমি বসে পড়লাম। অতঃপর আদেশ মুবারক হলো উপরের দিকে তাকান। আমি আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। আমাকে জিজ্ঞাস করা হলো, কি দেখতে পাচ্ছেন। আমি বললাম, পবিত্র আরশে মুয়াল্লা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি। তারপর বলা হলো, নীচের দিকে তাকান। আমি যমীনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। পূনরায় সে কথাই জিজ্ঞাসা করা হলো- কি দেখতে পাচ্ছেন? আমি বললাম,তাহতাছছারা তথা যমীনের সর্বশেষ স্তর। আবার বলা হলো, উপরের দিকে তাকান। আমি উপরের দিকে তাকালাম। বলা হলো, কিত দেখতে পাচ্ছেন? আমি বললাম, ‘হিজাবে আযমত’ পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি। আদেশ মুবারক হলো চোখ মুবারক বন্ধ করুন। আমি চোখ মুবারক বন্ধ করলাম। আদেশ মুবারক হলো, চোখ মুবারক খুলুন। আমি চোখ মুবারক খুললাম। তারপর হযরত শায়েখ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দুটি আঙ্গুল মুবারক আমার দৃষ্টি মুবারকের সম্মুখে রাখলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন কি দেখতেছেন? আমি বললাম, আঠার হাজার মাখলূক্বাত দেখতে পাচ্ছি। যখন আমার মুখ মুবারক হতে একথা শুনতে পেলেন তখন বললেন, এখন আপনার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তারপর সম্মুখে একটি ইটের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, এটি উঠান। আমি তা উঠালে এটার নিচ থেকে কিছু দিনার বের হলো। তিনি বললেন, যান এগুলো অন্যান্য দরবেশ উনাদেরকে দান করুন। আমি আদেশ মুবারক অনুযায়ী কাজ করলাম।