আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

সংখ্যা: ১৯৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবতের মধ্যেই রয়েছে সর্বাধিক মর্যাদা-মর্তবা। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবতের মহান সৌভাগ্যশালী হওয়ার কারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ দুনিয়ায় থাকতেই যিনি খালিক্ব-মালিক আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দীর সুসংবাদ অর্জন করেন।

যেমন, মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন-

رضى الله عنهم ورضوا عنه

অর্থ: “আল্লাহ পাক উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের) উপর সন্তুষ্ট; উনারাও যিনি খালিক্ব-মালিক আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা মায়িদা-১১৯, সূরা মুজাদালাহ-২২, সূরা বাইয়্যিনাহ-৮)

হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ একদিকে যেমন ছাহাবীয়াগণের অন্তর্ভুক্ত, অন্যদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার ইহকাল ও পরকালীন জীবনসঙ্গিনী হওয়ারও সুমহান সৌভাগ্য অর্জন করেন। যার কারণে অন্যান্য পরহিযগার-মুত্তাক্বী মহিলাগণের থেকে উনাদেরকে অসংখ্য-অগণিত নিয়ামত, মর্যাদা, মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত প্রদান করা হয়েছে। যা স্বয়ং আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদান করেছেন।

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই অন্যান্য নারীদের

উপরে উনাদের মর্যাদা

মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন-

يا نساء النبى لستن كاحد من النساء

অর্থ: “হে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন।” (সূরা আহ্যাব-৩২)

এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরের কিতাব “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اى ليست كل واحدة منكن او المعنى لم توجد جماعة واحدة من جماعات النساء مثلكن فى الفضل قال ابن عباس اى ليس قدركن عندى مثل قدر غيركن من النساء الصالحات انتن اكرم على وثوابكن اعظم لدى. هذه الاية تدل على فضلهن على سائر النساء.

অর্থ: “হে উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ! আপনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সহধর্মীনি হওয়ার কারণেই মর্যাদা, মর্তবা, ফযীলতের দিক থেকে কোন মহিলাই আপনাদের সমকক্ষ নয়। …. হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায়) বলেছেন, আপনাদের মর্যাদা, মর্তবা, ফাযাইল, ফযীলত অন্যান্য সতী-সাধ্বী মহিলাগণের মত নয়। বরং আপনাদের সম্মান-মর্যাদা, ফাযায়িল-ফযীলত, অধিক পূণ্য ও প্রতিদান আমার নিকটে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন, অনেক উর্ধ্বে। এ আয়াত শরীফের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত মহিলাগণের উপরে আপনাদের অধিক মর্যাদা, মর্তবা, ফাযাইল, ফযীলত রয়েছে।” (অনুরূপভাবে তাফসীরে খাযিন ৫ খণ্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাগবী ৫ম খণ্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় খণ্ডের ৪৬৫ পৃষ্ঠা এবং অন্যান্য সকল নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে আলোচনা রয়েছে।)

আল্লাহ পাক স্বয়ং উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদেরকে আহলে বাইত হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং পূত-পবিত্র করেছেন

আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন বলেছেন-

انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا

অর্থ: “হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (সূরা আহ্যাব-৩৩)

এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال عكرمة ومقاتل اراد باهل البيت نساء النبى صلى الله عليه وسلم

অর্থ: “হযরত ইকরামা ও মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বলেন, আয়াত শরীফে ‘আহলে বাইত’ দ্বারা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।”

“তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এর ৩য় খণ্ডের ৭৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

نص فى دخول ازواج النبى صلى الله عليه وسلم فى اهل البيت ههنا لانهن سبب نزول هذه الاية.

অর্থ: “এ আয়াত শরীফটি এটাই প্রমাণ করে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত।”

আয়াত শরীফ-এ উম্মুল মু’মিনীন উনাদের সাথে উনাদের সন্তান-সন্তুতিগণও আহলে বাইত-এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। যেমনটি হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে। ‘তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাবিয়ীনগণের একটি বিরাট দল হযরত মুজাহিদ, কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা ও অন্যান্যগণ বলেন, আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন- হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

“ছহীহ্ মুসলিম শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, “একদা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাদরাবৃত হয়ে ঘরের ভিতর উপস্থিত হলেন। চাদরটির উপরে ছিল উটের পশমের নক্শা আঁকা। একটু পরে সেখানে উপস্থিত হলেন হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চাদর দ্বারা ঢেকে নিলেন। এরপর এলেন হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি উনাকেও চাদরে ঢেকে নিলেন। এরপর এলেন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি উনাকেও টেনে নিলেন চাদরের ভিতর। শেষে এলেন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও জড়িয়ে নিলেন চাদরের ভিতর। তারপর পাঠ করলেন এই আয়াত শরীফ, “হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।”(অনুরূপভাবে তাফসীরে ইবনে কাছীর, আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, মিশকাত শরীফ এবং অন্যান্য হাদীছ শরীফের কিতাবসমূহে হাদীছ শরীফটি বর্ণিত আছে।)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ, তাফসীর এবং হাদীছ শরীফের দলীল থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং সমস্ত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না  উনারা হচ্ছেন আহলে বাইত।

উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদেরকে বিবাহ্ করা কোন মুসলমানদের জন্য জায়িয নয়; যেহেতু উনারা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়া তথা উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্না

মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন-

ولا ان تنكحوا ازواجه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما.

অর্থ: “উনার অর্থাৎ (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য জায়িয নেই। আল্লাহ পাক-এর কাছে এটা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ।” (সূরা আহযাব-৫৩)

“তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এর ৩য় খণ্ডের ৮০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ولهذا اجمع العلماء قاطبة على ان من توفى عنها رسول الله صلى الله عليه وسلم من ازواجه انه يحرم على غيره تزوجها من بعده لانهن ازواجه فى الدنيا والاخرة وامهات المؤمنين.

অর্থ: “সমস্ত উলামাই কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইজমা করেছেন যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার কোন আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বিবাহ করা অন্য কারো জন্য জায়িয নয় বরং হারাম। কেননা, উনারা ইহকালে উনার (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার) সহধর্মিনী ছিলেন পরকালেও সহধর্মিনী হিসেবে থাকবেন। আর উনারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মু’মিনগণের সম্মানিত মাতা।”

“তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৭২, ৩৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনু আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনু যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার কাছে সংবাদ পৌঁছলো যে, এক ব্যক্তি বলেছে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার বিছাল মুবারক-এর পর আমি হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বিবাহ করব। এ প্রেক্ষিতে আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হয়। …. হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত মুয়াম্মার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়াগণকে বিবাহ করা নিষিদ্ধতার হুকুম আসার পূর্বে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আলিয়া বিনতে যুবইয়ান’ নামের এক আহলিয়াকে তালাক দিয়েছিলেন। পরে তিনি জনৈক ব্যক্তির সহধর্মীনি হন এবং কয়েকজন সন্তান-সন্ততির জননীও হন।

ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার ঐ সকল আহলিয়াগণ বিবাহ নিষিদ্ধ আইনের বিধানের বাইরে যারা উনার সাথে নির্জন অবস্থান-এর সুযোগ পাননি

এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকালে আশয়াছ ইবনে কায়েস বিয়ে করেছিলেন ‘মুস্তায়ীযা’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে। হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে প্রস্তর নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করতে মনস্থ করলেন। কারণ ‘মুস্তায়ীযা’ ছিলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়া। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারলেন মুস্তায়ীযার সঙ্গে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার নির্জন অবস্থান হওয়ার আগেই তিনি তাঁকে পরিত্যাগ করেছিলেন। তখন তিনি ‘আশয়াছ’কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত ত্যাগ করলেন।” (তাফসীরে বাইযাবী, শায়খ যাদাহ্, হাশিয়াতুশ্ শিহাব, তাফসীরে বাগবী, খাযিন, মাদারিকুত্ তানযীল ইত্যাদি তাফসীরগ্রন্থেও এ সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।)

হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার কারণেই উনার আহলিয়া উনাদেরকে বিবাহ করা হারাম

“তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اى ذنبا عظيما قلت وجاز ان يكون ذلك لاجل ان النبى صلى الله عليه وسلم حى فى قبره ولذلك لم يورث ولم يتئم ازواجه عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى على عند قبرى سمعته ومن صلى على نائبا ابلغته

অর্থ: “উনাদেরকে (উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদেরকে) বিবাহ করা বড় গুনাহ্। আমি বলি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়া উনাদেরকে বিবাহ করা হারাম এজন্যই যে, যেহেতু তিনি উনার রওজা শরীফে জীবিত আছেন, তিনি হায়াতুন নবী। সে কারণে উনার সম্পত্তির কেউ ওয়ারিস নেই এবং উনার আহলিয়াগণও বিধবা নন। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার রওজা শরীফের নিকটে এসে ছলাত ও সালাম দিবে আমি তা সরাসরি শুনি। আর যে আমার নিকট দূরদেশ থেকে ছলাত ও সালাম পাঠাবে তা আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।” (বাইহাক্বী ফী শুয়াবুল ঈমান)

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার কারণেই আল্লাহ পাক থেকে উনাদেরকে নিয়ামত প্রদান

মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-

ومن يقنت منكن لله ورسوله وتعمل صالحا نؤتها اجرها مرتين واعتدنا لها رزقا كريما.

অর্থ: “আপনাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার প্রতি অনুগত হবেন ও সৎকার্য করবেন উনাকে আমি পুরুস্কার দিব দুইবার এবং উনার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক রিযিক।” (সূরা আহ্যাব-৩১)

“তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “দ্বিগুণ পুরুস্কারের অর্থ হচ্ছে- প্রথমতঃ উনারা দ্বিগুণ পুরুস্কার লাভ করবেন আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার ইতায়াত বা আনুগত্যতার জন্য। দ্বিতীয়তঃ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সন্তুষ্টি, রেযামন্দী অর্জনের জন্য। অল্পে তুষ্ট হয়ে উত্তম জীবনযাপনের জন্য। হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উনাদের প্রতিটি পূন্যের প্রতিদান দেয়া হবে দশগুণ করে। এটা হচ্ছে আম বদলা। আর খাছ বদলা হচ্ছে অসংখ্য, অগনিত। কারণ দাতা আল্লাহ পাক হচ্ছেন অসীম আর উনার হাবীব হচ্ছেন উনার কুদরত-এর অধীন।

“তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اى جليل القدر وهو الجنة زيادة على اجرها قلت وذالك لانهن يرزقن بمتابعة النبى صلى الله عليه وسلم مايرزق النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থ: “উনাদেরকে সম্মানজনক রিযিক প্রদান করা হবে। তা হচ্ছে জান্নাত। যা সবচেয়ে বড় প্রতিদান। আমি বলি, উনারা উত্তম রিযিক পাবেন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই। তাই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার জন্য যে রিযিক উনাদের জন্যও সে রিযিক ধার্য্য হবে।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর, কুরতুবী, আহকামুল কুরআন খাযিন, বাগবী, মাদারিক ইত্যাদি তাফসীরেগুলোতে আরো বিশদভাবে আলোচনা রয়েছে।)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর ইত্যাদি কিতাবের উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, (১) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়া হওয়ার কারণেই উম্মুল মু’মিনীনগণের মর্যাদা অন্যান্য সকল নারীর উপরে। (২) উনারা যেমন ইহ্কালে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আহলিয়া তদ্রুপ পরকালে অর্থাৎ বেহেস্তেও উনারা আহলিয়া হিসেবে থাকবেন (৩) উম্মুল মু’মিনীন উনারা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। (৪) অন্যান্য মানুষের থেকে উনাদের আমলের প্রতিদান দ্বিগুন-বহুগুণে প্রদান করা হবে। (৫) পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে-পরে, যে কোন কালে যারাই অনেক মর্যাদাশালী হয়েছেন তারাই আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার কারণেই মর্যাদাময় হয়েছেন। এর উজ্জল দৃষ্টান্ত হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা।

আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি, রেযামন্দী অর্জনের মূল মাধ্যম হচ্ছে ছোহ্বত। এজন্য ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহ্বত অর্জন করাকে ফরযে আইন ফতওয়া দিয়েছেন। তাই বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, আওলার্দু রসূল, গাউসুল আ’যম, হাবীবুল্লাহ্ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী- উনার হাক্বীক্বী ছোহ্বত অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উনার এবং উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না, আহলে বাইত এবং সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি যথাযথ সম্মান-মর্যাদা, তাযীম-তাকরীম ও সু-ধারণা রাখার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

মাওলানা সাইয়্যিদ আহমদ শিহাবুদ্দীন

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম

হুসনুল খলুক্বি, হুলুওউল কালামি, হামিলু লিওয়ায়িল হামদি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযওয়াজ (আহ্লিয়াগণ), আবনা (ছেলেগণ), বানাত (মেয়েগণ), আ’মাম (চাচাগণ), আম্মাত (ফুফুগণ) ও আখওয়াল (মামাগণ) উনাদের তালিকা