ইখলাছ

সংখ্যা: ০১ম সংখ্যা | বিভাগ:

ইখলাছ

মুহম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম


মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন মজিদে ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়।” মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিশুদ্ধ নিয়তে ইবাদত করার নামই ইখলাছ।

ইবাদতের মধ্যে এখলাছের গুরুত্ব অপরিসীম। এখলাছ ব্যতীত কোন ইবাদতই মহান আল্লাহ পাক তিনি গ্রহন করেন না। এটাই তো স্বাভাবিক, যে মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে সৃষ্টি করলেন, সেই মানুষ যদি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত না করে, তবে কি করে সেই অকৃতজ্ঞ বান্দার ইবাদত মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে কবুল হতে পারে? মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধুমাত্র উনারই ইবাদত করার জন্য পবিত্র কুরআন মজিদে ইরশাদ মুবারক করেন।

وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون.

অর্থ : “আমি জ্বিন ও ইনসান জাতিদ্বয়কে কেবলমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরও ঘোষণা করেছেন।

وما أمروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين حنفاء.

অর্থ : “তাদেরকে অন্যান্য যাবতীয় পদার্থ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ইখলাছের সহিত একাগ্রচিত্তে শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে মশগুল থাকতে আদেশ করা হয়েছে।”

এখন আমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত না করে মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ অমান্য করে লোক দেখানো বা আত্মসন্তুষ্টি অর্থাৎ গায়রুল্লার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদতে মশগুল হই তবে আমরা স্পষ্টতই ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হব।

তাই মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের সাবধান করে দিয়ে কালামুল্লাহ শরীফ-এর সূরা বাকারায় ইরশাদ করেছেন-

فان زللتم من بعد ماخاءتكم البينت فاعلمو ان الله عزيز حكيم.

অর্থ : “অনন্তর তোমাদের নিকট উজ্জল প্রমানাদি আসার পরও যদি তোমরা (সিরাতুল মুস্তাকিম হতে) পদস্খলিত হতে থাক, তবে দৃঢ় বিশ্বাস রেখ মহান আল্লাহ পাক পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা (প্রজ্ঞাময়)।”

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইখলাছের গুরুত্ব প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “সমস্ত মানুষ হালাক একমাত্র আলেমগণ ছাড়া, সমস্ত আলেমগণও হালাক একমাত্র আমলকারীগণ ছাড়া, সমস্ত আমলকারীগণও হালাক একমাত্র ইখলাছকারীগণ ছাড়া এবং ইখলাছকারীগণ চিন্তা ও পেরেশানীর মধ্যে।”

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ খানি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মানুষকে আমল করার জন্য ইলম অর্জন করতে হবে এবং শুধু আমল করলেই হবে না সে আমলটি হতে হবে ইখলাছের সাথে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য। তবেই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ মুক্তি অর্থাৎ নাজাতের আশা করা যায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২১৪নং আয়াত শরীফ উল্লেখযোগ্য। এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ام حسبتم ان تدجلوا الجنة ولما ياتكم مثل الذين جلوا من قبلكم.

অর্থ : “অপর একটি কথা শ্রবন কর, তোমরা কি মনে কর যে, (বিনাশ্রমে) বেহেস্তে প্রবেশ করবে?”

হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- ‘অনন্ত সুখময় জান্নাত কেবল কয়েক দিনের বাহ্য অনুষ্ঠান ক্রিয়াকলাপ দ্বারা লাভ করা যায় না। ইহা আন্তরিকতা ও একাগ্র সাধনা দ্বারা লাভ করতে হয়।’

আমাদের বেহেস্তে প্রবেশ করতে হলে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোশেশ করতে হবে। আমাদের কোশেশের মাধ্যমে ইলম অর্জন করতে হবে এবং আমল করতে হবে। এ ইলম এবং আমলের কোশেশ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে যদি আমরা ততোধিক কোশেশের মাধ্যমে ইখলাছ পয়দা না করতে পারি।

অতএব, ইখলাছই হচ্ছে সমস্ত ইবাদতের মগজ বা সারাংশ। এখলাছবিহীন ইবাদত প্রাণবিহীন প্রাণীর ন্যয়। প্রাণবিহীন প্রাণী যেমন মানুষের নিকট মূল্যহীন এবং কষ্টের কারণ তদ্রুপ ইখলাছবিহীন ইবাদত মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মুল্যহীন এবং অপছন্দনীয়।

 

ইখলাছ ও অতীতের আওলিয়া কিরাম :

হযরত মারুফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজের শরীরে চাবুক মেরে বলতেন, “হে আমার প্রবৃত্তি! ইখলাছের সাথে কাজ কর, তা’হলে পরিত্রান পাবে।”

হযরত আবু সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি সারা জীবনে ধর্ম পথের দিকে অন্ততঃ একটি কদমও ইখলাছের সাথে চলেছে যাতে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তোষ ভিন্ন অপর কোন উদ্দেশ্য তার ছিল না, সে ব্যক্তিই সৌভাগ্যবান।

আওলিয়াকুল শিরোমনি হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা ইখলাছের উজ্জল নমুনা স্বরূপ। একদা একদল লোক হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার নিকট হাজির হন। তন্মধ্যে একজনকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা! আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত কেন করেন?” তিনি বললেন। “দোযখের সপ্ত স্তর বড়ই কঠিন এবং সকলকে একদিন সেটার উপর দিয়ে পার হতে হবে। সেই দোযখের শাস্তির ভয়ে ইবাদত করি।” অপর একজন বললেন। “বেহেস্তেতে সৌন্দর্য্যময় অট্রালিকারাজি এবং নানাবিধ আরামের এবং নিয়ামতের জন্য খোদা প্রদত্ত ওয়াদা বিদ্যমান আছে, তজ্জন্যই আমি এই ইবাদত করছি।” ইহা শুনে হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি বললেন- “যে ব্যক্তি দোযখের ভয়ে ও বেহেস্তের লোভে স্বীয় প্রভূর ইবাদত করে, সে বড়ই হেয় ও হতভাগ্য।” তারা বললেন, “আচ্ছা! বলুনতো, আপনি কেন মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করছেন? আপনার কি কোন বাসনা নেই?” তিনি বললেন, “আমার পক্ষে বেহেস্ত এবং দোযখ উভয়ই সমান। তিনি ইবাদত করার জন্য আদেশ করেছেন, আমার জন্য কি ইহাই যথেষ্ট নয়? কোন শাস্তির ভয় বা লোভণীয় কিছু না থাকলে উনার ইবাদত করা মানুষ মাত্রেরই কর্তব্য নয় কি?”

হযরত রাবেয়া বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার মুনাজাতে বলতেন, “আয় মহান আল্লাহ পাক! যদি আমি দোযখের ভয়ে আপনার ইবাদত করি, তবে আপনি আমাকে দোযখে নিক্ষেপ করুন, আর যদি বেহেস্তের আশায় আপনার ইবাদত করি, তবে বেহেস্ত হতে আপনি আমাকে বঞ্ছিত করুন। আর যদি কেবল আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি ইবাদত করি তবে আপনার স্থায়ী সৌন্দর্য্য হতে আমাকে বঞ্ছিত করবেন না।”

হযরত ওয়ায়েস আল করনী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইখলাছের আর একটি উজ্জল নমুনা। যখন হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অছিয়ত মুতাবিক উনার পবিত্র জুব্বা মুবারক হযরত ওয়ায়েস আল করনী রহমতুল্লাহি আলিইহিকে প্রদানপূর্বক ফেরার পথে খলীফাতুল মুসলেমীন, আমীরুল মু’মেনীন, হযরত ফারুকে আয’ম আলাইহিস সালাম তিনি কিছু নছিহত করতে অনুরোধ করায় তিনি বললেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! আপনি কি মহান আল্লাহ পাক উনাকে চিনেছেন?” হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “হাঁ নিশ্চয়ই চিনেছি।”

হযরত ওয়ায়েস আল করনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “যদি উনাকে ব্যতীত অন্য কাউকেও না জানেন (চিনেন) তবে উহা আপনার জন্য উত্তম।” হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “আরও কিছু নছিহত করুন।” হযরত ওয়ায়েস আল করনী রহতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি কি আপনাকে জানেন?” তিনি বললেন, “হাঁ জানেন।” হযরত ওয়ায়েস আল করনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “তিনি ব্যতীত অন্য কেউ আপনাকে না চিনলেও কোন ক্ষতি নেই।” ইহাই ইখলাস। (অসমাপ্ত)

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম