উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছুয়াইবাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আবূ লাহাব কর্তৃক আযাদ করে দেয়া ও পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা সম্পর্কিত ছহীহ বুখারী শরীফের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যাকারী ওহাবীদের মিথ্যাচারিতার দাঁতভাঙ্গা জবাব-১

সংখ্যা: ২৮৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম মহাসম্মানিত ও পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ মহাসম্মানিত ১২ই শরীফ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) ছুবহে ছাদিকের সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তৎক্ষণাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি আবূ লাহাবকে এ সুসংবাদ প্রদান করেন। আবূ লাহাব এ সুসংবাদ শুনে তৎক্ষণাত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম মুবারক দেয়ার জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করে দেয়। এ বিষয়টি ছহীহ বুখারী শরীফসহ অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। যা আমরা দৈনিক আল ইহসান শরীফ ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনাদের মধ্যে বহুবার উল্লেখ করেছি।

সম্প্রতি বাতিল ফিরক্বা ওহাবীরা “আবূ লাহাব কর্তৃক সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে আযাদ করা সম্পর্কিত বর্ণনার ব্যাপারে বেশকিছু মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, মিথ্যাচারপূর্ণ আপত্তি উত্থাপন করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা  করেছে। আমরা অত্র প্রবন্ধে তাদের উক্ত মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, মিথ্যাচারপূর্ণ আপত্তিসমূহের খণ্ডমূলক  ছহীহ জবাব তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ!

প্রথমে আমরা দেখে নিব এ সম্পর্কে কোন কিতাবে কি বক্তব্য উল্লেখ আছে –

যেমন এ প্রসঙ্গে ‘ছহীহ বুখারী শরীফ’-উনার দ্বিতীয় খণ্ডের ৭৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قَالَ حَضْرَتْ عُرْوَةُ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ مَوْلَاةٌ لِّأَبِيْ لَـهَبٍ كَانَ أَبُـوْ لَهَبٍ أَعْتَـقَهَا فَأَرْضَعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـلَمَّا مَاتَ أَبُـوْ لَـهَبٍ أُرِيَهُ بَعْضُ أَهْلِهٖ بِشَرِّ حِيْـبَةٍ قَالَ لَهٗ مَاذَا لَقِيْتَ قَالَ أَبُـوْ لَهَبٍ لَمْ أَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْـرَ أَنِّيْ سُقِيْتُ فِيْ هٰذِهٖ بِعَتَاقَتِيْ حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةَ‏ عَلَيْـهَا السَّلَامُ.‏

অর্থ: “হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আবু লাহাবের বাঁদী এবং আবু লাহাব উনাকে আযাদ করে দিয়েছিলো। এরপর আখিরী রসূল, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি পবিত্র দুধ মুবারক পান করান। আবু লাহাব যখন মারা গেলো (কিছুদিন পর) তার পরিবারের একজন স্বপ্নে দেখলেন যে, আবূ লাহাব সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কিসের সাক্ষাত লাভ করেছ? আবু লাহাব উত্তরে বললো, আপনাদের পরে আমি ভালো কিছুর সাক্ষাত লাভ করিনি। তবে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে দু’আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করার কারণে সেই দু’আঙ্গুল হতে সুমিষ্ট ঠাণ্ডা ও সুশীতল পানি পান করতে পারছি।” সুবহানাল্লাহ!

উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ছহীহ বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাকার আল্লামা হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ ‘ফতহুল বারী শরহে বুখারী’ কিতাবের ৯ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

وَذَكَرَ السُّهَيْلِىُّ رَحْمَةُ اللهُ عَلَيْهِ اَنَّ الْعَبَّاسَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لَمَّا مَاتَ أَبُـوْ لَـهَبٍ رَاَيْـتُهٗ فِيْ مَنَامِيْ بَعْدَ حَوْلٍ فِيْ شَرِّ حَالٍ فَـقَالَ مَا لَقِيْتَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً اِلَّا أَنَّ الْعَذَابَ يـُخَفَّفُ عَنِّـى كُلَّ يَوْمِ اِثْـنَـيْنِ قَالَ وَذٰلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَوْمَ الْاِثْـنَيْنِ وَكَانَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ بَشَّرَتْ اَبَا لَـهَبٍ بـِمَوْلِدِهٖ  صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْتَـقَهَا

অর্থ: “হযরত ইমাম সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত (কঠিন) দুরাবস্থায় রয়েছে। সে বললো, (হে ভাই হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম!) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোনো শান্তির মুখ দেখিনি। তবে হঁ্যা, প্রতি ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার যখন আগমন করেন তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। (হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,) আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারণ হচ্ছে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার দিন ছিলো ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার। সেই দিনেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সুসংবাদ নিয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি আবু লাহাবকে জানালেন তখন আবু লাহাব উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদত শরীফ উনার খুশির সংবাদ শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয়।” সুবহানাল্লাহ!

অনুরূপ বর্ণনা, আল্লামা হযরত বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী’-উনার ২০তম খণ্ড ৯৫ পৃষ্ঠা ও কিরমানী ছহীহ আল বুখারীতেও উল্লেখ আছে।

দেওবন্দী মৌলবী ইদরীস কাসেমী রচিত “কাশফুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী” এর ২০তম খণ্ড ১৩৮-১৪০ পৃষ্ঠার বর্ণনাটি নিম্নে হুবহু উল্লেখ করা হলো।

“পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিলের পূর্বেকার ঘটনা:

حَضْرَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ مَوْلَاةٌ لِّاَبِـىْ لَـهَبٍ

সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুধ মাতা। আবূ লাহাবের বাঁদী। উনার পুত্র ছিলেন হযরত মাসরূহ আলাইহিস সালাম। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সঙ্গে পবিত্র দুধ মুবারক পান করেছিলেন। এটা সে সময়ের কথা যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত হালিমা আলাইহাস সালাম উনার কাছে যাননি। হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত হামযা আলাইহিস সালাম এবং হযরত আবূ সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের দুজনকেও পবিত্র দুধ মুবারক পান করান। যার দ্বারা উনারা উভয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুধ ভাই হলেন। সুবহানাল্লাহ! (সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এটাই ছহীহ মত)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বড়ই সম্মান করতেন। পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার পর উনার জন্য উপঢৌকানাদি পবিত্র মক্কা শরীফে পাঠাতেন। …

وَكَانَ اَبُـوْ لَـهَبٍ اَعْتَـقَهَا فَاَرْضَعَتِ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

এ বাক্য দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, আবূ লাহাব প্রথমে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে স্বাধীন করলো। অতঃপর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র দুধ পান করান। কিন্তু সীরাতের কিতাবগুলোতে এর বিপরীত রয়েছে। অবশ্য আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উদ্ধৃত করেছেন যে, উনার মুক্তি পাওয়াটা ছিল পবিত্র দুধ মুবারক পানের পূর্বে।

اُرِىَ: اُرِيَهٗ بَعْضُ اَهْلِهٖ بِشَرِّ حِيْـبَةٍ

এটি হচ্ছে কর্মবাচ্যের শব্দরূপ। দু’টি কর্মপদ যোগে সকর্মক ক্রিয়া।

اَىْ رَاٰي اَبَا لَـهَبٍ بَعْضُ اَهْلِهٖ فِـى الْـمَنَامِ

এখানে দর্শন দ্বারা স্বপ্নযোগে দর্শন উদ্দেশ্য। حِيْـبَةٍ (হায়ে যের আর ইয়া সুকুনযোগে পঠিত) অবস্থা, অভাব ও নিঃস্বতাকে বলে। بَابُ الرَّجُلِ بِـحِيْـبَةِ سُوْءٍ অর্থাৎ মানুষ খারাপভাবে সময় অতিবাহিত করা অবস্থা حِيْـبَةٍ আছে। আর মুস্তামিলী কপিতে بِـخِيْـبَةٍ নুকতাবিশিষ্ট খা যোগে  আছে।

اَىْ فِـىْ حَالَةٍ خَائِبَةٍ مِنْ كُلِّ خَيْرٍ

মৃত্যুর পর কে আবূ লাহাবকে স্বপ্নে দেখেছিলেন? আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উদ্ধৃত করেছেন যে, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম এ স্বপ্ন মুবারক দেখেছিলেন। যেমন- আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

إِنَّ الْعَبَّاسَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ لَمَّا مَاتَ أَبُـوْ لَـهَبٍ رَاَيْـتُهٗ فِيْ مَنَامِيْ بَعْدَ حَوْلٍ فِيْ شَرِّ حَالٍ فَـقَالَ مَا لَقِيْتُ بَعْدَكُمْ رَاحَةً اِلَّا أَنَّ الْعَذَابَ يـُخَفَّفُ عَنِّـىْ كُلَّ يَوْمِ اِثْـنَيْنِ قَالَ وَذٰلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَوْمَ الْاِثْـنَـيْنِ وَكَانَتْ ثُـوَيْـبَةُ عَلَيْـهَا السَّلَامُ بَشَّرَتْ اَبَا لَـهَبٍ بـِمَوْلِدِهٖ فَأَعْتَـقَهَا. لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْرِ أَنِّـىْ

বর্ণনাটিতে لَـمْ اَلْقَ  এর উল্লেখ করেননি। ইবনে বাত্তাল বলেন, বুখারী শরীফ উনার বর্ণনায় مَفْعُوْلٌ بِهٖ কে উল্লেখ করেননি। অথচ এতদ্ব্যতীত অর্থ শুদ্ধ হয় না। ইসমাঈলীর বর্ণনায় আছে لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً হযরত আব্দুর রযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় আছে  لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً অর্থাৎ আপনাদের পরে আমি কোন শান্তি পাইনি। কাস্তালানীর কপিতে لَـمْ اَلْقَ بَعْدَكُمْ رَاحَةً আছে।

غَيْـرَ اَنِّـىْ سُقِيْتُ فِـىْ هٰذِهٖ بِعَتَاقَتِـىْ ثُـوَيْـبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ

سُقِيْتُ : এটি ضَرَبَ বাব থেকে একবচন উত্তমপুরুষ কর্তৃবাচ্যের শব্দরূপ فِـىْ هٰذِهٖ উনার অঙ্কৃত বিষয়টি এখানে উল্লেখ নেই।

হযরত আব্দুর রাযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় আছে-

وَاَشَارَ اِلَى النُّـقْرَةِ الَّتِـىْ بَيْنَ الْاِبْهَامِ الَّتِـىْ تَلِيْـهَا مِنَ الْاَصَابِعِ

 এবং ইসমাঈলী উনার রেওয়ায়েত দ্বারা জানা গেল যে, هٰذِهٖ এর ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি হচ্ছে نُـقْرَةٌ  অর্থাৎ, ইবহাম ও শাহাদাত আঙ্গুলের মধ্যবর্তী যে ছোট ধরনের গর্ত থাকে, সেদিকে ইঙ্গিত ছিল। অর্থ হচ্ছে এই যে, এই দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তীতে যে নগণ্য ধরনের স্থান শুন্য আছে, এতটুকু পরিমাণ সামান্যটুকু পানি আমাকে পান করানো হয়। এর কারণ হচ্ছে এই যে, আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে স্বাধীন করেছিলাম। আবূ লাহাব সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুর রদ্বায়াহ আল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে সুসংবাদ শোনানোর প্রেক্ষিতে আঙ্গুলের ইশারায় আযাদ করেছিলো। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে আঙ্গুলের মাঝের শূন্যস্থানের পরিমাণ পানি পান করিয়ে শান্তি পৌছালেন।

অত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফেই যার উল্লেখ আছে। এর বর্ণনা اَلرُّؤْيَا পর্বে পূনরায় বিস্তারিতভাবে আসছে। ইতিহাস গ্রন্থাবলীতে এটাকে নানাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

একটি প্রশ্ন ও তার জাওয়াব: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় যে, আখিরাতে কাফিরকেও তার সৎকর্ম উপকার দেবে। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে-

وَقَدِمْنَا إِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنثُـوْرًا

এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, কাফিরদের আমল তাদের পরকালে কোনো উপকারে আসবেনা। (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ ২৩) দৃশ্যত উভয়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।

১। তার একটা জাওয়াব এই যে, বর্ণনাটিতে غَيْـرَ اَنِّـىْ سُقِيْتُ এর অংশটি উরওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি মুরসালরূপে উদ্ধৃত করেছেন। মাওসূলরূপে উদ্ধৃত করেননি। সুতরাং এর গুরুত্ব নেই। আর সঠিক কথা হচ্ছে সেটিই, যার প্রতি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফখানি নির্দেশ করছে। তাহলো এই যে, কাফিরদের সৎকর্ম তাদের কোনো উপকারে আসবে না।

২। যদি এটাকে মাওসুল হিসেবে মেনে নেয়া হয়, তখনো এটি একটি স্বপ্ন যা প্রামান্য বস্তু নয়।

৩। এটাকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র আখ্যাও দেয়া যেতে পারে। কেননা এ ঘটনাটির সম্পর্ক ছিল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যার প্রেক্ষিতে আবূ লাহাবের সাথে এই ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিবেচনা করা হলো। যেমন আল্লামা কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-

“…. وَقَالَ الْقَاضِىْ عِيَاضٍ اِنْـعَقَدَ الْاِجْمَاعُ عَلٰى اَنَّ الْكُفَّارَ لَاتَـنْـفَعُهُمْ اَعْمَالَـهُمْ وَلَا يُـثَابُـوْنَ عَلَيْـهَا بِنَعِيْمٍ وَلَا تَـخْفِيْفِ عَذَابٍ وَلٰكِنَّ بَعْضَهُمْ اَشَدُّ عَذَابًا بِـحَسْبِ جَرَائِمِهِمْ وَقَالَ الْكِرْمَانِـىْ لَا يَـنْـفَعُ الْكَافِرُ الْعَمَلَ الصَّالِحَ اِذِ الرُّؤْيَا لَيْسَتْ بِدَلِيْلٍ وَعَلٰى تَـقْدِيْرِ التَّسْلِيْمِ يـَحْتَمِلُ أَنْ يَّكُوْنَ الْعَمَلُ الصَّالِحُ وَالْـخَيْـرُ الَّذِيْ يَـتَـعَلَّقُ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَـخْصُوْصًا كَمَا أَنَّ أَبَا طَالِبٍ أَيْضًا يَنْـتَفِعُ بِتَخْفِيْفِ الْعَذَابِ”.

অর্থ: “… হযরত ক্বাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ ব্যপারে ইজমা হয়েছে যে, কাফিররা তাদের আমলের ফায়দা ও ছাওয়াব লাভ করবে না। আর তাদের আযাবও লাঘব করা হবে না। বরং কারো কারো আযাব গুনাহ অনুযায়ী তীব্রতর করা হবে। হযরত কিরমানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কাফিররা নেক আমলের ফায়দা পাবে না। যদি স্বপ্ন দলীল না হয় তবুও গ্রহনযোগ্য মত এই যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত নেক ও উত্তম আমলের বদলা অবশ্যই পাবে। যেমন আবূ তালিবের আযাব লাঘব করা হয়।” (কাশফুল বারী) (চলবে)

-মুফতী আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম