প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয

সংখ্যা: ২১৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি। আল্লাহ পাক-উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহর সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমিও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোঁয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহর বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহরের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা) পেশ করা হয়েছে।

আর বর্তমানে ২৮তম ফতওয়াটি অর্থাৎ “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি” এখনো পত্রস্থ হচ্ছে। তাই মহান আল্লাহ পাক-উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

স্মরণীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই”। (নাউযুবিল্লাহ) সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال الـمعصية كفر.

অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুনাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نـمير فراى فى صفته تـماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله الـمصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইর-উনার ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থ: ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

 

প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য তৈরি করা-করানো, ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, রাখা-রাখানো হারাম ও নাজায়িয হওয়ার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল প্রমাণ

স্মর্তব্য যে, নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য প্রায় হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিক্বাহ-ফতওয়ার কিতাবেই “প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য তৈরি করা-করানো, ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, রাখা-রাখানো হারাম ও নাজায়িয” বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে সেসকল কিতাবসমূহ থেকে ধারাবাহিকভাবে এ সম্পর্কিত দলীল প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

কুরআন শরীফ ও তাফসীর শরীফ থেকে প্রমাণিত যে, মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রাণীর ছবি ইত্যাদি হারাম, কুফরী ও শিরকী কাজ

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ-এ এবং ব্যাখ্যায়, তাফসীর গ্রন্থসমূহে মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি প্রাণীর ছবি ইত্যাদি তৈরি করা, এদের পূজা করা এগুলোর ব্যবসা করা এবং যে কোন অবস্থায় এগুলোর অনুশীলন করাকে নিষেধ করা হয়েছে। এগুলো তৈরি করা হারাম, এগুলোর পূজা করা কুফরী শিরকী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতের বিপরীতে গাইরুল্লাহর ইবাদত করার শামিল।

লক্ষণীয় যে, কুরআন শরীফ-এ উল্লেখিত تماثيل জাতীয় শব্দগুলো দ্বারা কোন কোন অবস্থায় সরাসরি প্রাণীর ছবি বুঝানো না হলেও প্রাণীর ছবি মূর্তি-ভাস্কর্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এগুলোও একপ্রকার মূর্তি বা ভাস্কর্য। পূর্ব যামানা থেকে প্রমাণিত যে, মূর্তি তৈরি হয় পাথর, কাচ, তামা, লোহা, কাঠ, মাটি, স্বর্ণ, রৌপ্য ইত্যাদি উপকরণ দ্বারা। আর প্রাণীর ছবিগুলো তৈরি হয় কলমের কালি, তুলি ও আলো দ্বারা। এই কালি, তুলি ও আলো এগুলোও তো পাথর কাচ ও মাটির মতোই একেকটি উপকরণ। সুতরাং কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত تماثيل তামাছীল, শব্দ দ্বারা যদিও প্রাণীর ছবি সরাসরি নিষেধ হয় না। কিন্তু ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্যে প্রাণীর ছবিগুলোও একপ্রকার মূর্তি হওয়ায় এগুলোর অনুশীলন হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে হারাম, কুফরী ও শিরকী হিসেবে সাব্যস্ত। এটাই গ্রহণযোগ্য ফয়সালা। নি¤েœ মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রাণীর ছবি নিষেধ সম্পর্কিত আয়াত শরীফগুলো উল্লেখ করে বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য তাফসীরের কিতাব থেকে তার ছহীহ সমাধান তুলে ধরা হলো-

 

আয়াত শরীফসমূহের তাফসীর

আয়াত শরীফ নম্বর-১

 

(৯২২)

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالْدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلاَّ مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُواْ بِالأَزْلاَمِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن دِينِكُمْ فَلاَ تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ فَإِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থ : তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে ১. মৃত জন্তু ২. রক্ত, ৩. খিনযীরের গোশত ৪. মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্যের নামে যবাইকৃত পশু ৫. শ্বাস রোধে মৃত জন্তু ৬. প্রহারে মৃত জন্তু ৭. যা উচু স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায় ৮. যা শিংয়ের আঘাতে মারা যায় এবং ৯. যাকে হিং¯্র জন্তু ভক্ষণ করেছে; কিন্তু যাকে তোমরা যবাই করেছ তা হালাল ১০. আর যে পশু মূর্তিপূজার পাথরের উপর বলি দেয়া হয় এবং ১১. যা ভাগ্য নির্ধারক তীর দ্বারা বণ্টন করা হয়। এসবগুলোই ফাসিকী (গোমরাহী, মূর্খতা, শিরকী ও কুফরী) মূলক কাজ। আজ (পবিত্র হজ্জে আকবর হুজ্জাতুল বিদা উনার দিনে) কাফিররা তোমাদের পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর না, বরং আমাকেই ভয় কর । আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং দ্বীন ইসলাম উনাকে তোমাদের জন্য পবিত্র দ্বীন (পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা) হিসেবে মনোনীত করলাম।

অতএব, যে ব্যক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে, কিন্তু কোন গুনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পরম ক্ষমাশীল। (পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ১১ প্রকার খাদ্যকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তন্মধ্য ২ প্রকার হারাম খাদ্য মূর্তি বা প্রতিমার সাথে সংশ্লিষ্ট। যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার নামে যবেহ না করে মূর্তি বা প্রতিমার নামে যবেহ করলে হালাল পশুও ভক্ষণ করা হারামে পরিণত হয়। আর হালাল পশু মূর্তিপূজার পাথরের উপর বলি দিলে তাও হারামে পরিণত হয়ে যায়। যা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে, এগুলো ফাসিকী, গুমরাহী, শিরকী, কুফরী ও মূর্খতা সূচক কাজ। মূর্তির নামে জবাই করলে এবং মূর্তিপূজার পাথরের উপর বলি দিলে যেখানে হালাল পশুও হারাম হচ্ছে, সেক্ষেত্রে মূর্তি-প্রতিমা-ভাস্কর্য প্রাণীর ছবির চর্চা করা কতবড় হারাম ও কুফরী কাজ তা সহজেই অনুমেয়। এ জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত যে, মূর্তি-ভাস্কর্য প্রাণীর ছবি তৈরি করা, করতে সাহায্য করা ইত্যাদি কাট্টা হারাম। এগুলোকে সম্মান দেখানো কুফরী ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত।

নিম্নে পবিত্র আয়াতাংশের নির্ভরযোগ্য ও বিশুদ্ধ তাফসীর মুবারক উল্লেখ করা হলো :

(৯২৩)

(حرمت عليكم الـميتة) يقول حرمت عليكم اكل الميتة التى امر بذبحها (والدم) الدم الـمسفوح (ولحم الخنزير وما اهل لغير الله به) يقول وما ذبح بغير اسم الله متعمدا (والـمنخنقة) وهى التى اختنقت بالحبل حتى تموت (والـموقوذة) وهى التى تضرب بالخشب حتى تموت (والـمتردية) وهى التى تتردى من جبل او من بئر فتموت (والنطيحة) وهى التى نطحت صاحبتها فتموت (وما اكل السبح) وهى فريسته (الا ما ذكيتم) الا ما ادركتم وفيه الروح فذبحتم (وما ذبح على النصب) الصنم (وان تستقسموا بالازلام) وهى القداح التى كانوا يقتسمون بها السهام الناقصة ويقال حرم عليم الاشتغال بالازلام وهى القداح التى كانت مكتوبة على جانب امرنى ربى وعلى جانب اخر نهانى ربى يحملون بها فى امورهم فنهاهم الله عن ذلك (ذلكم) الذى ذكرت لكم من المعاصى والحرام (فسق) استعماله فسق واستحلاله كفر (اليوم) يوم الحج الاكبر حجة الوداع (يئس الذى كفروا) كفار مكة (من دينكم) من رجوع دينكم الى دينهم بعد ما تركتم دينهم وشرائع دينهم (فلا تخشوهم) فى اتباع محمد صلى الله عليه وسلم ودينه وموافقتهم (اليوم) يوم الحج (اكملت لكم دينكم) بينت لكم شرائع دينكم من الحلال والحرام والامر والنهى (واتممت عليكم نعمتى) منتى ان لايجتمع معكم بعد هذا اليوم مشرك بعرفات ومنى والطواف والسعى بين الصفا والـمروة (ورضيت لكم) اخترت لكم (الاسلام دينا فمن اضطر) اجهد الى اكل الميتة عند الضرورة (فى مخمصة) فى مجاعة (غير متجانف لاثم) غير متعمد للمعصية ويقال غير متعمد الاكل بغير ضرورة. (فان الله غفور) ان اكل شبعا (رحيم) حين رخص عليه اكل الميتة عند الضرورة قوتا ويره شبعا. (تنوير الـمقباس من تفسير ابن عباس رضى الله عنه تفسير سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الصفحة ۱۱۴-۱۱۵ دار الكتب العلمية بيروت لبنان)

অর্থ : (তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু) যে সকল পশু জবাই করে খেতে বলা হয়েছে, তা জবাই ছাড়া মারা গেলে, তা খাওয়া হারাম (রক্ত) প্রবাহিত রক্ত (খিনযীরের গোশত, যিনি খালিক-মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্যের নামে জবাইকৃত পশু,) ইচ্ছাকৃতভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্যের তথা দেবদেবীর নামে জবাইকৃত পশু (শ্বাসরোধে মৃত জন্তু) মৃত জন্তু, তা হচ্ছে লাঠি বা ছড়ি দ্বারা প্রহারে মৃত পশু (যা উচু স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়) তা এমন পশু যা পাহাড়ের উপর থেকে অথবা কূপের ভিতর পড়ে মারা যায় (যা শিঙের আঘাতে মারা যায়) তা হচ্ছে, যাকে অন্য পশু শিঙ দ্বারা আঘাত করে মেরে ফেলে (এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে) হিংস্র পশু দ্বারা শিকারকৃত আংশিক ভক্ষিত জন্তু (কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ তা হালাল) অর্থাৎ যা তোমরা জীবিত পেয়েছে এবং যবেহ করেছ তা হালাল। (আর যে পশু মূর্তিপূজার পাথরের উপর বলি দেয়া হয়) অর্থাৎ মূতির উপর বলি দেয়া হয় (এবং যা ভাগ্য নির্ধারক তীর দ্বারা বণ্টন করা হয়।) তোমাদের উপর জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা হারাম। এসব তীরের একদিকে ‘আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন’এবং অপর দিকে ‘আমার রব আমাকে নিষেধ করেছেন, লেখা থাকত। এভাবে আরবরা তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করত। এমনকি যিনি খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এটা নিষেধ করে দেন। (এসবগুলোই) পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত নিষিদ্ধ জিনিসগুলো পাপ ও হারাম কাজ। (ফাসিক্বী কাজ) এগুলোর চর্চা করা ফাসিক্বী এবং এগুলোকে হালাল জানা কুফরী।

(আজ) পবিত্র হজ্জে আকবর হুজ্জাতুল বিদা উনার দিনে (কাফিররা তোমাদের পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে।) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফিররা। তোমরা শিরক ত্যাগ করার পর পুনরায় শিরকে লিপ্ত হবে এ ব্যাপারে তারা হতাশ হয়েছে। (সুতরাং তাদেরকে ভয় কর না) সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবার ব্যাপারে এবং কাফিরদের বিপরীত করার ব্যাপারে তাদেরকে ভয় কর না। (বরং আমাকেই ভয় কর) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবা এবং উনার আনিত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিপরীত করার ব্যাপারে সাবধান থেকে আমাকেই ভয় কর। (আজ) পবিত্র বিদায় হজ্জ উনার দিন (আমি তোমাদের জন্য তোমাদের পবিত্র দ্বীন উনাকে পরিপূর্ণ করে দিলাম,) তোমাদের জন্য পবিত্র দ্বীন উনার আইন-কানুন, হালাল-হারাম ও আদেশ-নিষেধগুলো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করলাম (তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম) ফলে আজকের পর আর তোমাদের সাথে মুশরিকরা পবিত্র আরাফাতে, পবিত্র মিনায়, পবিত্র তাওয়াফে ও পবিত্র ছাফা-মারওয়া উনাদের মাঝখানের সাঈতে একত্রিত হতে পারবে না। (এবং পবিত্র ইসলাম উনাকে তোমাদের জন্য ‘পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা’ হিসেবে মনোনীত করলাম।) অর্থাৎ তোমাদের জন্য পছন্দ করলাম। (অতএব, যে ব্যক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গুনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ব্যাপারে ক্ষমাশীল দয়ালু)। (তানবীরুল মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সূরাতুল মায়িদাহ, পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর ৩, পৃষ্ঠা নম্বর ১১৫-১১৬, প্রকাশনা : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, বইরূত : লেবানন)

(৯২৪)

واما قوله وما اهل لغير الله به فانه يعنى وماذكر عليه غير اسم الله واصله من استهلال الصبى وذلك اذا صاح حين يسقط من بطن امه ومنه اهلال الـمحرم بالحج اذا لبى به ومنه قول ابن احمر: يهل بالفر قد ركبانها + كما يهل الراكب المعتمر وانما عنى بقوله وما اهل لغير الله به وما ذبح الالـهة والاوثان يسمى عليه غير اسم الله وبالذى قلنا فى ذلك قال اهل التأويل. (جامع البيان فى تفسير القران اى تفسير الطبرى لابى جعفر محمد بن جرير الطبرى رحمة الله عليه الـمتوفى ۳۱۰ هجرى سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الجلد ۴ الصفحة ۴۴ دار الـمعرفة بيروت. لبنان)

অর্থ : যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র বাণী মুবারক : মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্যের নামে জবাইকৃত পশু খাওয়া হারাম। এ শব্দটি استهلال الصبى বাকধারা থেকে নিসৃত হয়েছে। মাতৃগর্ভ হতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যদি আওয়াজ করে তবে এ শব্দটি ব্যবহার করতে হয়। এর থেকেই ব্যবহার হয় اهلال الـمحرم بالحج অর্থাৎ মুহরিম ব্যক্তির পবিত্র হজ্জ শরীফ উনার তালবিয়া পাঠ করা। কবি ইবনু আহমার এ অর্থেই নিচের কবিতায় يهل শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন,

يهل بالفر قد ركبان فها + كما يهل الراكب الـمعتمر وما اهل لغير الله به.

এর তাৎপর্য হলো : যেসব জন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত কল্পিত উপাস্য এবং মূর্তি প্রতিমার নামে জবেহ হয়, তা তোমাদের জন্য হারাম। আমি যে মতামত ব্যক্ত করেছি, অন্যান্য তাফসীরকারগণও অনুরূপ মতামত ব্যক্ত করেছেন। (জামিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন/তাফসীরুত ত্ববারী লেখক : হযরত আবূ জাফর মুহম্মদ বিন জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল : ৩১০ হিজরী পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ ৩ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ ৬ষ্ঠ খ- ৪৪ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারুল মা’রিফাহ, বইরূত : লেবানন)

(৯২৫)

(وما ذبح على النصب) يعنى بقوله جل ثناؤه وماذبح على النصب وحرم عليكم ايضا الذى ذبح على النصب فما فى قوله وماذبح رفع عطفا على ما التى فى قوله ومااكل السبع والنصب الاوثان من الحجارة جماعة انصاب كانت تجمع فى الـموضع من الارض فكان الـمشركون يقربون لـها وليست باصنام وكان ابن جريج يقول فى صفته ما حدثنا القاسم قال حدثنا الحسين قال ثنى حجاج قال قال ابن جريج النصب ليست باصنام الصنم يصور وينقش وهذه حجارة تنصب ثلاث مائة وستون حجرا منهم من يقول ثلاث مائة منها بخزاعة فكانوا اذا ذبحوا نضحوا الدم على ما اقبل من البيت وشرحوا اللحم وجعلوه على الحجارة فقال الـمسلمون يارسول الله صلى الله عليه وسلم كان اهل الجاهلية يعظمون البيت بالدم فنحن احق ان نعظمه فكان النبى صلى الله عليه وسلم لـم يكره ذلك فانزل الله لن ينال الله لحومها ولا دماؤها. حدثنى يونس قال اخبرتا ابن وهب قال قال ابن زيد فى قوله وماذبح على النصب قال ماذبح على النصب وما اهل لغير الله به هو واحد. (جامع البيان فى تفير القران اى تفسير الطبرى لابى جعفر محمد بن جرير الطبرى رحمة الله عليه الـمتوفى ۳۱ هجرى سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الجلد ۴ الصفحة ۴۹-۴۸ دار الـمعرفة بيروت-لبنان)

অর্থ : যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র বাণী মুবারক : (আর যে পশু মূর্তিপূজার পাথরের উপর বলি দেয়া হয়) এর ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আলোচ্য পবিত্র আয়াতাংশ উনার ভাবার্থ হলো: আর মূর্তিপূজার বেদীর উপর বলি দেয়া পশুও তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। وما ذبح শব্দে উল্লেখিত ما শব্দটিকে যেহেতু وما اكل السبع এর উপর عطف করা হয়েছে, তাই ما শব্দটি স্থানগত দিক থেকে مرفوع হয়েছে।

পবিত্র কা’বা ঘর উনার পাশে অবস্থিত পাথরকে نصب বলে। نصب শব্দটি انصاب এর বহুবচন। এগুলোর উপর মুশরিকরা পশু বলি দিত। প্রকৃতপক্ষে, এগুলো মূর্তি নয়।

হযরত ইবনু জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, نصب মূর্তি নয়। কেননা, মূর্তিতে আকৃতি থাকে এবং কারুকার্য থাকে। আর এগুলো হলো প্রোথিত পাথর। আরবের জাহিলিয়াতের সময় পবিত্র কা’বা ঘর উনার মধ্যে ৩৬০টি পূজার বেদী ছিল। কারো কারো মতে, ৩০০টি ছিল খুযায়া গোত্রের। এসব বেদীর উপর পশু বলি দেয়ার পর বলিকৃত পশুর রক্ত তারা পবিত্র কা’বা শরীফ উনার দেয়ালে ছিটিয়ে দিত এবং গোশতগুলোকে টুকরা টুকরা করে বেদীমূলে রেখে দিত। এসব দেখে মুসলমানগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহিলিয়াত যুগের লোকেরা পবিত্র কা’বা শরীফ উনার দেয়ালে রক্তের প্রলেপ লাগিয়ে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করত। আমরা তো এরূপ সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তাদের তুলনায় অধিক হক্বদার। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একথা শুনে চুপ থাকলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করেন-

لن ينال الله لحومها ولادمائها

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এগুলোর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না।” (সূরা হজ্জ : আয়াত শরীফ ৩৭)

হযরত ইমাম জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত ইবনু ওহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, হযরত ইবনু যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি وما ذبح على النصب পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, পূজার বেদীতে বলিকৃত পশু এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্যের নামে যবেহকৃত পশু একই জিনিস। (জামিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন/তাফসীরুত ত্ববারী লিআবী জা’ফর মুহম্মদ বিন জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত : ৩১০ হিজরী সূরাতুল মায়িদাহ ৩ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ ৬ষ্ঠ খ-, ৪৮-৪৯ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারুল মা’রিফাহ, বইরূত : লেবানন)

(৯২৬)

(ذلكم فسق) يعنى جل ثناؤه بقوله ذلكم هذه الامور التى ذكرها وذلك أكل الـميتة والدم ولحم الخزير وسائر ماذكر فى هذه الاية مما حرم اكله والاستقسام بالازلام فسق يعنى خروج عن امر الله وطاعته الى مانـهى عنه وزجرو الى معصيته كما حدثنى الـمثنى قال ثنا عبد الله قال ثنى معاوية عن على عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه ذلكم فسق يعنى من أكل من ذلك كله فهو فسق. (جامع البيان فى تفسير القران اى تفسير الطبرى لابى جعفر محمد بن جرير الطبرى رحمة الله عليه الـمتوفى :۳۱۰ سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الجلد ۲ الصفة ۵ دار الـمعرفة بيروت لبنان)

অর্থ : যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, (এসবগুলোই ফাসিকী কাজ)-উনার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হযরত ইমাম আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ذلكم মানে উল্লেখিত বিষয়াদি অর্থাৎ মৃতের গোশত খাওয়া, রক্তপান করা ও শূকরের গোশত খাওয়া এবং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হারাম করা হয়েছে এমন সব জিনিস খাওয়া আর জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা। فسق অর্থ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার হুকুম এবং উনার আনুগত্যের বিরোধিতা করা আর গুনাহর দিকে ধাবিত হওয়া।

যেমনটি বর্ণিত আছে। আমার কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনা করেছেন হযরত মুছান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম থেকে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ذلكم فسق -উনার ব্যাখ্যায় বলেন, এর অর্থ হলো উল্লেখিত ১১ প্রকার জিনিস খাওয়া ফাসিকী বা গুনাহর কাজ। (সূত্র : জামিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন/তাফসীরুত ত্ববারী লিআবী জা’ফর মুহম্মদ বিন জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত: ৩১০ হিজরী পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ ৩নং পবিত্র আয়াত শরীফ ৬ষ্ঠ খ- ৫০ পৃষ্ঠা দারুল মারিফাহ, বইরূত : নেবানন)

তাফসীরুত ত্ববারী উনার উল্লেখিত ইবারতগুলো থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত মূর্তি প্রতিমার নামে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া এবং মূর্তিপূজার পাথরের উপর অথবা মূর্তির উপর বলি দেয়া, পশুর গোশত খাওয়া হারাম। মূর্তি-প্রতিমার সাথে এগুলোর সম্পর্ক থাকার কারণেই এগুলো হারাম এবং এগুলোকে হালাল মনে করা কুফরী। এটাই যখন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার ফায়সালা। তখন খোদ মূর্তি-ভাস্কর্য প্রতিমা প্রাণীর ছবি ইত্যাদির চর্চা বা অনুশীলন করা কত বড় হারাম তা সহজেই বোধগম্য। মূলত এ কাজগুলো কুফরী ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত।

(৯২৭)

 (وما اهل لغير الله به) يعنى حرم عليكم اكل ما ذبح لغير الله . (تفسير السمرقندى سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الجزء ۱ الصفحة ۴۱۴ دار الكتب العلمية بيروت لبنان)

অথর্ : (মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্যের নামে যবাইকৃত পশু) অর্থাৎ তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত প্রতিমার নামে যবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। (তাফসীরুস সামরকান্দী পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ উনার ৩নং আয়াত শরীফ, ১ম খ-,  পৃষ্ঠা ৪১৪, প্রকাশনা : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, বইরূত : লেবানন)

(৯২৮)

(وما ذبح على النصب) قال القتبى: هو حجر او صنم منصوب كانوا يذبحون عنده، وجمعه انصاب، ويقال: كانوا يذبحون لاعيادهم باسم الـهتهم. (تفسير السمر قندى سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الجزء ۱ الصفحة ۴۱۵ دار الكتب العلمية بيروت لبنان)

অর্থ : (আর যে পশু মূর্তিপূজার পাথরের উপর বলি দেয়া হয়) হযরত ইমাম কুতবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, النصوب ‘আন নুছূব’ হচ্ছে মূর্তিপূজার পাথর এবং মূর্তি-প্রতিমা। আর মুশরিকরা এগুলোর কাছে পশু বলি দিত। النصب এর বহুবচন انصاب ‘আনছাব’। বলা হয়ে থাকে যে, মুশরিকরা তাদের উৎসবের দিনে তাদের প্রতিমাদের নামে পশু বলি দিত বা যবাই করত। এটাকেই মহান আল্লাহ পাক তিনি হারাম ঘোষণা করেছেন। (তাফসীরুস সামরকান্দী সূরাতুল মায়িদাহ ৩নং পবিত্র আয়াত মরীফ, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৪১৫, প্রকাশনা : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ. বইরূত : লেবানন)

(৯২৯)

(ذلكم فسق) يعنى هذه الافعال معصية وضلالة، واستحلالـها كفر. (تفسير السمر قندى سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الجزء ۱ الصفحة ۴۱۵ دار الكتب العلمية)

অর্থ : (এ সবগুলোই ফাসিকী কাজ) অর্থাৎ এই ১১টি হারাম কাজ কঠিন পাপ ও পথভ্রষ্টতা। এগুলোকে হালাল জানা কুফরী। (তাফসীরুস সামরকান্দী, পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ ৩নং পবিত্র আয়াত শরীফ, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৪১৫, প্রকাশনা : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, বইরূত : লেবানন)

পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ উনার ৩ নম্বর আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে সামরকান্দীর ইবারত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, হালাল ও হারাম স্পষ্ট। তন্মধ্যে মূর্তি-ভাস্কর্য-প্রতিমা এগুলো কঠিন হারাম। আর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১১ প্রকার হারাম খাদ্যের মধ্যে প্রতিমা সংশ্লিষ্ট খাদ্যও ২টি। যাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর প্রাণীর ছবিও এক প্রকার মূর্তি বা প্রতিমা। এটি হচ্ছে আধুনিক প্রতিমা বা মূর্তি। অতএব এগুলোর চর্চা হারাম। এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং হালাল জানা কাট্টা কুফরী।

(৯৩০)

وقوله: (وما اهل لغير الله به) اى ما ذبح فذكر عليه اسم غير الله فهو حرام، لان الله تعالى اوجب ان تذبح مخلوقاته على اسمه العظيم، فمتى عدل بها عن ذلك وذكر عليها اسم غيره من صنم او طاغوت او وثن او غير ذلك من سائر الـمخلوقات فانها حرام بالاجماع. (تفسير ابن كثير سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الجزء ۲ الصفحة ۱۲ دار الفكر بيروت لبنان)

অর্থ : মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পবিত্র বাণী মুবারক: (মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্যের নামে যবাইকৃত পশু) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার নাম মুবারক ব্যতীত দেবদেবীর নামে যবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দাগণকে উনার সুমহান পবিত্র নাম মুবারক-এ পশু যবাই করতে ওয়াজিব আবশ্যিক নির্দেশ করেছেন। অতএব, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত মূর্তি, তাগুত শয়তান, প্রতিমা ও অন্য কোন নামে যবাই করা হারাম হবে। আর ইহাই ইজমার ভিত্তিতে হারাম। (তাফসীরে ইবনে কাছীর পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ উনার ৩নং আয়াত শরীফ, ২য় খ-  পৃষ্ঠা ১২, প্রকাশনা : দারুল ফিকর, বইরূত : লেবানন)

(৯৩১)

(وما ذبح على النصب وان تستقسموا بالازلام ذلكم فسق) اى تعاطيه فسق وغى وضلالة وجهالة وشرك. (تفسير ابن كثير سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الجزء ۲ الصفحة ۱۹ دار الفكر بيروت لبنان)

অর্থ : (আর যে পশু মূর্তিপূজার পাথরের উপর বলি দেয়া হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক তীর দ্বারা বণ্টন করা হয় এ সবগুলোই ফাসিকী কাজ) অর্থাৎ এসবগুলোই নাফরমানী, ঘৃণিত, গোমরাহী, মূর্খতা ও শিরকী কাজ। (তাফসীরে ইবনে কাছীর, সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ উনার ৩ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ, ২য় খ-,  পৃষ্ঠা ১৯, প্রকাশনা : দারুল ফিকর, বইরূত : লেবানন)

তাফসীরে ইবনে কাছীর উনার উদ্ধৃতি দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, প্রতিমার পাথর ও মূর্তির নিকট পশুবলি দেয়া এবং তার গোশত খাওয়া হারাম ও কুফরী। এটাও প্রমাণিত হলো যে, মূর্তি, প্রতিমা ও দেবদেবীর নামে পশু যবাই করা হারাম। এগুলোকে হালাল মনে করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এখান থেকে মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য ও আধুনিক মূর্তি প্রাণীর ছবির ঘৃণ্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। মূলত এগুলোর চর্চা করা হারাম। হালাল জানা কুফরী।

(৯৩২)

 (وما اهل لغير الله به) بان ذبح على اسم غيره … (وما ذبح على) اسم (النصب) جمع نصاب وهى الاصنام … (ذلكم فسق) خروج عن الطاعة. (تفسير الجلالين سورة الـمائدة رقم الاية ۳ الصفحة ۹۴)

অর্থ : (মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্যের নামে যবাইকৃত পশু হারাম) কেননা তা মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত অন্য নাম তথা লা’ত-মানত-উজ্জা ইত্যাদির নামে যবাই করা হয়।

(আর যে পশু মূর্তিপূজার পাথরের উপর বলি দেয়া হয়) النصب শব্দটি نصاب শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হলো মূর্তি প্রতিমা।

(এসবগুলোই ফাসিকী কাজ) এগুলো আনুগত্যের বিপরীত নাফরমানীমূলক কাজ। (তাফসীরুল জালালাইন পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ উনার ৩ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ, পৃষ্ঠা ৯৪)

উল্লেখিত তাফসীরের ইবারতগুলো ছাড়াও জগদ্বিখ্যাত সকল নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে ইহাই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মূর্তিপূজা করা, মূর্তি তৈরি করা, দেবদেবীর নামে পশু বলি দেয়া, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ব্যতীত প্রতিমার নামে যবাই করা এবং এ সব যবাই ও বলিকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম। এগুলোকে হালাল জানা এবং এগুলোকে সম্মান করা কুফরী ও শিরকী। এটাই ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া।

 

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০