কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১১

সংখ্যা: ২০৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি। আল্লাহ পাক-উনার অশেষ রহমতে “ফতওয়া ও গবেষণা বিভাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. ক্বদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লّীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা)

১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা), ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) পেশ করার পর-

৩০তম ফতওয়া হিসেবে

১৯৫তম সংখ্যা থেকে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট

বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

 

 

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয় যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও  নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!

তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتا العيدين

অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)

এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করবে।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।

 

অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাও

শবে বরাত প্রমাণিত

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি অর্ধ শা’বানের রাত্রিতে তথা শবে বরাতে বান্দাদের প্রতি বিশেষ করুণা দৃষ্টি করেন এবং দুই শ্রেণীর লোক ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে থাকেন। প্রথমত: মুশরিক আর  দ্বিতীয়ত: হিংসুক। আর এই শবে বরাতের রাত্রিকে পরিত্রাণ ও মুক্তির রাত্রি বলা হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে-

(১৫৩)

روى حضرت ابن اسحاق عن انس بن مالك قال بعثنى رسول الله صلى الله عليه وسلم الى منزل حضرت عائشة عليها السلام فى حاجة فقلت لها اسرعى فانى تركت النبى صلى الله عليه وسلم يحدثهم عن ليلة النصف من شعبان فقالت يا انس رضى الله تعالى عنه اجلس حتى احدثك بحديث ليلة النصف من شعبان تلك الليلة كانت ليلتى من رسول الله صلى الله عليه وسلم فجاء ودخل معى فى لحافى فانتبهت من الليل فلم اجده فقلت لعله ذهب الى جاريته القبطية فخرجت فمررت فى المسجد فوقعت رجلى عليه وهو يقول سجدلك سوادى وخيالى وامن بك فؤادى وهذه يدى وما جنيت بها على نفسى يا عظيما يرجى لكل عظيم اغفر الذنب العظيم سجد وجهى للذى خلقه وصوره وشق سمعه وبصره ثم رفع رأسه فقال اللهم ارزقنى قلبا تقيا نقيا من الشرك بريا لا كافرا ولا شقيا ثم عاد ساجدا فسمعته يقول اعوذ برضاك من سخطك وبعفوك من عقوبتك وبك منك لا احصى ثناء عليك انت كما اثنيت على نفسك اقول كما قال اخى داؤد اعفر وجهى فى التراب لسيدى وحق لوجه سيدى ان يعفر) ثم رفع رأسه فقلت يا ابى أنت وأمى انت فى واد وأنا فى واد فقال يا حميراء اما تعلمين ان هذه الليلة ليلة النصف من شعبان أن الله عز وجل فى هذه الليلة عتقاء من النار بعدد شعر غنم بنى كلب الا ستة نفر لا مدمن خمر ولا عاق لوالديه ولا مصر على الزنا ولا مساوم ولا مضرب ولا قتات وفى رواية مصور بدل مضرب وتسمى ليلة القسمة والتقدير لما روى عطاء بن يسار اذا كانت ليلة النصف من شعبان نسخ لملك الموت كل من يموت من شعبان الى شعبان وان العبد ليغرس الغرس وينكح الازواج ويبنى البنيان وأن اسمه قد نسخ فى الموت الا ان يؤمر به فيقبضه.

অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন: একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোনো একটি জরুরী কাজে আমাকে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার দরবার শরীফ-এ পাঠালেন। অতঃপর আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বললাম: আপনি শীঘ্র করুন। কেননা আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ অবস্থায় দেখে এসেছি যে, তিনি অর্ধ শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাত সম্পর্কে জরুরী বিষয়াবলী বর্ণনা করছেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি বসুন, আমি আপনাকে অর্ধ শা’বানের তথা শবে বরাতের রাত্রি সম্পর্কে একটি ঘটনা শুনাই।

ওই রাত্রিগুলোর মধ্যে কোনো এক রাত্রি ছিল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আমার হিসসা। অতঃপর তিনি আগমন করলেন এবং আমার সাথেই শয্যা গ্রহণ করলেন। কিন্তু রাত্রিতে এক সময় সজাগ হয়ে আমি উনাকে বিছানা মুবারক-এ অনুপস্থিত পেলাম এবং মনে মনে ভাবলাম তাহলে কি তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার কাছে চলে গেলেন! অতঃপর উনাকে মসজিদে নববীর উদ্দেশ্যে খোঁজার জন্য মনস্থ করে উঠে চলতে শুরু করলাম। হঠাৎ আমার শরীর মুবারক-এর অংশ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম শরীর মুবারক-এ স্পর্শ করলো। তখন লক্ষ্য করে শুনি তিনি একাগ্র মনে বলছেন-

(১৫৪)

سجدلك سوادى وخيالى وامن بك فؤادى وهذه يوى وما جنبت بها على نفسى يا عظيما يرجى لكل عظيم اغفر الذنب العظيم سجد وجهى للذى خلقه وصوره وشق سمعه وبصره.

আয় আল্লাহ পাক! সর্বান্তকরণে আমার দেহ মুবারক, আমার মুখম-ল মুবারক এবং সমস্ত কিছুই আপনার জন্য সিজদাবনত। আমার অন্তঃকরণ মুবারক আপনার প্রতি ঈমান এনেছে। এই যে আমার হাত মুবারক সেও আপনার প্রতি বিশ্বাসী। এ হাত ও অন্যান্য আর যা কিছু দিয়ে আমি করি তা মাফ করুন। হে মহান, মহা অপরাধের ক্ষমার জন্য যার মহা অনুগ্রহের আশা করা হয় আমার তথা (উম্মতের) বড় বড় গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন। আমার মুখম-ল মুবারককে, আমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি মুবারক দিয়েছেন, কর্ণ মুবারক ও শ্রবণ শক্তি মুবারক, চক্ষু মুবারক ও দৃষ্টি শক্তি মুবারক যিনি দান করেছেন, আমাকে ক্ষমা করুন।

(১৫৫)

اللهم ارزقنى قلبا تقيا نقيا من الشرك بريا لا كافرا ولا شقيا.

আয় আল্লাহ পাক! আপনার ভয়ে শিরক থেকে পবিত্র, গুনাহ থেকে স্বচ্ছ অন্তঃকরণ মুবারক দান করুন যার মধ্যে কুফুরের লেশমাত্র না থাকে, যে অন্তর কোনো দিন বঞ্চিত ও দুর্ভাগা না হয়।

(১৫৬)

اعوذ برضاك من سخطك وبعفوك من عقوبتك وبك منك لا احصى ثناء عليك انت كما اثنيت على نفسك اقول كما قال اخى داود اعفر وجهى فى التراب لسيدى وحق لوجه سيدى ان يعفر.

আয় আল্লাহ পাক! আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমেই আপনার রোষ ও অসন্তুষ্টি থেকে পানাহ চাই। আপনার ক্ষমার মাধ্যমেই আপনার আযাব ও গযব হতে পানাহ চাই। আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমেই আপনার থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ পাক! আপনার প্রশংসা করে শেষ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনি তো তেমনি যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। আমি তাই বলি যা আমার ভাই হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন, আমি আমার প্রভুর জন্য আমার চেহারা মুবারক মাটিতে স্থাপন করি। এতে আমি উনার ক্ষমা অবশ্যই পেতে পারি।

অতঃপর তিনি মাথা মুবারক উত্তোলন করলেন। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক আপনি কি করছেন আর আমি কি ভাবছি! তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হুমায়রাহ অর্থাৎ হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি জানেন না? আজকের এই রাত্রি হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাতের রাত্রি। এই রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি বনী কালব গোত্রের অসংখ্য বকরীর পশমের পরিমাণ লোককে দোযখ থেকে পরিত্রাণ ও মুক্তি দান করেন। তবে ছয় শ্রেণীর লোককে ক্ষমা করেন না। ১. মদ্যপায়ী ২. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ৩. ব্যভিচারী ৪. সম্পর্ক ছিন্নকারী ৫. ফিতনাবাজ ৬. চোগলখোর। এক বর্ণনায় ফিতনাবাজ স্থলে প্রাণীর ছবি অঙ্কণকারীর কথা উল্লেখ আছে। অর্ধ শা’বানের রাত্রিকে ক্বিসমত ও তাক্বদীর তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাত বা শবে বরাত বলা হয়।

হযরত আতা ইবনে ইয়াসার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, এক শা’বান থেকে পরবর্তী শা’বান পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করবে তাদের নামের তালিকাও লিখিত হয় এই অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে। অতঃপর সেই তালিকা ফেরেশতাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। অথচ এই সময়ে তাদের কেউ কেউ ক্ষেত-খামারে কাজ করতে থাকে, কেউ কেউ বিবাহ করতে থাকেন, কেউ কেউ অট্টালিকা তৈরিতে মত্ত থাকেন, এদিকে মালাকুল মউত অপেক্ষায় থাকে যে, আল্লাহ পাক উনার হুকুম হওয়া মাত্রই তৎক্ষণাৎ তার জীবন কবয করে নিবেন।

বিঃ দ্রঃ (উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে যে ক্ষমা ও দোয়া প্রার্থনা করেছেন তা মূলত উনার উম্মতের জন্য। কেননা আক্বাইদ এবং ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের মধ্যে রয়েছে, সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ উনারা একমত হয়েছেন যে-

 

(১৫৭)

الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون

(সকল নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা মাছুম তথা নিষ্পাপ। তাদের ক্ষমা চাওয়ার অর্থই হচ্ছে উম্মতের গুনাহসমূহ ক্ষমা চাওয়া এবং উম্মতদেরকে তা’লীম দেয়ার জন্য।

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ ছাড়াও হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ আছে যে, চার অথবা পাঁচ রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করে দোয়া কবুল করে থাকেন। তন্মধ্যে অর্ধ শা’বান রাত তথা শবে বরাত একটি অন্যতম দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ রাত্রি। এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত হাদীছ শরীফ-এর কিতাব দাইলামী শরীফ-এ বর্ণিত আছে যা ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুবিখ্যাত কিতাব মুকাশাফাতুল কুলুব-এর ৩০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

(১৫৮-১৫৯)

روى الديلمى عن ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام قالت سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول (يسح الله الخير فى أربع ليال، سحا ليلة الاضحى وليلة الفطر، وليلة النصف من شعبان، واول ليلة من رجب)

وروى الديلمى ايضا بسنده عن ابى امامة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال خمس ليال لاترد فيها دعوة، أول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة الجمعة وليلتا العيدين

অর্থ: শাইখুল ইসলাম হযরত ইমাম দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সূত্রে বর্ণনা করেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি চারটি রাতে প্রচুর পরিমাণে রহমত নাযিল করেন: এক. ঈদুল আযহার রাতে। দুই. ঈদুল ফিতরের রাতে। তিন. অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে। চার. রজব মাসের পহেলা রাতে।

হযরত ইমাম দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে আরো হাদীছ বর্ণনা করেন। হযরত উমামা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘পাঁচটি রাত’ এমন রয়েছে যেগুলোতে কেউ দোয়া করলে তা ফিরিয়ে দেয়া হয় না। এক. রজব মাসের প্রথম রাত। দুই. অর্ধ শা’বান তথা বরাতের রাত। তিন. জুমুয়ার রাত। চার ও পাঁচ. দুই ঈদের রাত। অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত। (নুযহাতুল মাজালিশ ১ম খ-  ১৫৭ পৃষ্ঠা)

এ প্রসঙ্গে নুযহাতুল মাজালিশ নামক কিতাবের ১ম খ-ের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৬০)

مر حضرت عيسى بن مريم عليه السلام على جبل فراى فيه صخرة بيضاء فطاف بها حضرت عيسى عليه السلام وتعجب عنها فاوحى الله اليه اتريد ان ابين لك اعجب مما رأيت قال نعم فان فلقت الصخرة عن رجل بيده عكارة خضراء وعنده شجرة عنب فقال هذا رزق كل يوم فقال كم تعبد الله فى هذا الحجر فقال منذ اربع مائة سنة فقال حضرت عيسى عليه السلام يا ربى ما اظن انك خلقت خلقا افضل منه فقال من صلى ليلة النصف من شعبان من امة محمد صلى الله عليه وسلم ركعتين فهو افضل من عبادته اربع مائة عام قال عيسى عليه السلام ليتنى من امة محمد صلى الله عليه وسلم.

অর্থ: হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম তিনি একটি পাহাড়ের উঁচু চূড়ার উপরে দিয়ে চলছিলেন। হঠাৎ করে ওই পাহাড়ের উপরেই একটি সাদা পাথর দেখতে পেলেন। অতঃপর আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি ওই পাথরের চারপাশে ঘুরে আশ্চর্যান্বিত হলেন। অতঃপর উনার আশ্চর্যবোধ দেখে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার নিকট ওহী পাঠিয়ে বললেন, হে আমার নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম! আপনি সাদা পাথরখানা দেখেই অবাক হয়েছেন, এর চেয়ে আশ্চর্যজনক বস্তু আপনি কি দেখতে চান?

জবাবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, জি বলতে না বলতেই পাথরটি ফেটে গেলো। উহার মধ্যে সবুজ রঙের লাঠি হাতে নিয়ে একজন বুযুর্গ ব্যক্তি দাঁড়ানো আছেন এবং উনার সামনে একটি আঙ্গুরের গাছ আছে। অতঃপর সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, ইহা আমার প্রতি দিনের খাবার। এরপর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি ওই বুযুর্গ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনি কতকাল পর্যন্ত এই সাদা পাথরের ভিতরে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত আছেন? হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার এই প্রশ্নের জবাবে বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, সুদীর্ঘ চারশত বৎসর ধরে এই পাথরের ভিতরে আমি ইবাদত-বন্দেগী করছি। তখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি (আরো আশ্চর্য হয়ে) বললেন, ইয়া বারে ইলাহী! আমার ধারণা যে, হয়তোবা আপনি এই বুযুর্গ ব্যক্তির চেয়ে আর কোনো উত্তম মাখলুক সৃষ্টি করেননি। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার এই আবেগপূর্ণ বাণী শুনে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, উম্মতে হাবীবী উনাদের কোনো ব্যক্তি যদি অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে ২ রাকায়াত নামায আদায় করে উহা ওই বুযুর্গ ব্যক্তির চারশত বৎসরের ইবাদত হতেও উত্তম হবে। সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি এই কথা শুনে বললেন, হায় আফসোস! আমি যদি আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত তথা উম্মতে হাবীবী হতে পারতাম। সুবহানাল্লাহ!

উক্ত বিশ্ববিখ্যাত ‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-

(১৬১)

ان الجن والطير والسباع وحيتان البحر يصومون يوم النصف من شعبان

অর্থ: নিশ্চয়ই জিন, পশু-পাখি এবং এমনকি সমুদ্রের মাছেরাও অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের দিন রোযা রাখে। সুবহানাল্লাহ! কিতাবুল বরকত। উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে-

(১৬২)

وعن النبى صلى الله عليه وسلم من صام من شعبان يوما حرم الله جسده على النار وكان رفيق حضرت يوسف عليه السلام فى الجنان واعطاه الله ثواب حضرت ايوب عليه السلام و حضرت داود عليه السلام. فان اتم الشهور كله هون الله عليه سكرات الموت ودفع عنه ظلمة القبر وهول منكر و نكير وستر الله عورته يوم القيامة.

وعن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال جاءنى جبرائيل عليه السلام ليلة النصف من شعبان وقال يا محمد صلى الله عليه وسلم ارفع راسك الى السماء فقلت ما هذه الليلة؟ قال هذه ليلة يفتح الله فيها ثلث مائة باب من ابواب الرحمة يغفر لجميع من لا يشرك به شيئا الا ان يكون ساحرا او كاهنا او مصرا على الزنا او مدمن خمر وعنه صلى الله عليه وسلم قال يطلع الله على خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا مشرك والمشاحن يعنى المصارم لاخيه المسلم.

অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি শা’বান মাসে মাত্র একটি রোযা রাখবে তার শরীরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দোযখের আগুন থেকে হারাম করে দিবেন এবং বেহেশতের মাঝে সে ব্যক্তি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গী হিসেবে থাকবেন এবং তৎসঙ্গে হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম ও হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনাদের ন্যায় ছওয়াব দান করবেন। অতঃপর কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ণ শা’বান মাসেই রোযা রাখে তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার উপর মৃত্যুর তাকলীফ সহজ করে দিবেন এবং কবরের অন্ধকার দূর করে দিবেন। অতপর মুনকার নাকীরের প্রশ্নের ভয়াবহ অবস্থা দূর করে দিবেন এবং ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি তার লজ্জাস্থান আবৃত  (ঢেকে) রাখবেন।

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে আরো বর্ণিত আছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শা’বান মাসের অর্ধ রাতে তথা শবে বরাতে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আমাকে বললেন: ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আকাশের দিকে মাথা মুবারক উত্তোলন করুন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এই রাত্রির বৈশিষ্ট্য কি? তখন হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এই অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি ৩০০টি রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন। যারা আল্লাহ পাক উনার সাথে শিরক করেনা, যাদু করেনা, গণক নয়, বারবার যিনা করেনা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ছিন্ন করেনা। এ ধরনের সমস্ত জগদ্বাসীকে ক্ষমা করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টির প্রতি বিশেষ রহমত নাযিল করেন। অতঃপর সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে যারা মুশরিক এবং হিংসুক অর্থাৎ যে তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে হিংসা করে থাকে, তাদেরকে ওই রাত্রিতে ক্ষমা করেন না। এ প্রসঙ্গে আক্বনা নামক কিতাবে উল্লেখ আছে-

(১৬৩)

ان جبريل عليه السلام نزل على النبى صلى الله عليه وسلم الليلة البراءة. وقال يا محمد صلى الله عليه وسلم اجتهد فى هذه الليلة فان فيها تقضى الحاجة فاجتهد النبى صلى الله عليه وسلم فاتاه جبريل عليه وسلم مرة ثانية وقال يا محمد صلى الله عليه وسلم بشر امتك فان الله تعالى غفر لجميع امتك من لا يشرك به شيئا ثم قال ارفع راسك فرفع راسه فاذا ابواب الجنة وفى رواية ابواب السماء مفتحة وعلى الباب الاول ملك ينادى طوبى لمن ركع هذه الليلة وعلى الباب الثانى ملك ينادى  لمن سجد فى هذه الليلة وعلى الباب الرابع ملك ينادى طوبى لمن بكى من خشية الله تعالى فى هذه الليلة وعلى الباب الخامس ملك ينادى طوبى لمن عمل خيرا فى هذه الليلة وعلى الباب السادس ملك ينادى من سائل فيعطى سئوله وعل الباب السابع ملك يناده هل من مستغفر فيغفر له فقلت يا جبريل الى امتى تكونوا هذه الابواب مفتحة قال الى طلوع الشمس قال ان الله تعالى فيها عتقاء من النار بعدد شعر غنم بنى كلب.

অর্থ: হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি শবে বরাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অবতীর্ণ হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আজকের এই বরাতের রাত্রিতে ইবাদতে নিমগ্ন থাকুন। কেননা এই রাত্রিতে যাবতীয় মাক্বছুদ পুরা করা হবে। অতঃপর সে মুতাবিক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই শবে বরাতে সারা রাত্রি ইবাদতে নিমগ্ন থাকলেন এবং হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম পূনরায় তথা দ্বিতীয়বার এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার উম্মতদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন যে, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শিরক করেনা এদের সকল নর-নারীকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি আপনার মাথা মুবারক উত্তোলন করুন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাথা মুবারক উত্তোলন করার সাথে সাথেই দেখতে পেলেন জান্নাতের দরজাগুলো অথবা আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত। প্রথম দরজার উপরে একজন ফেরেশতা রয়েছেন। তিনি আওয়াজ দিয়ে বলছেন, ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যিনি এই অর্ধ শা’বানের রাত্রিতে তথা বরাতের রাত্রিতে রুকু করেছেন। অতঃপর দ্বিতীয় দরজায় অপর একজন ফেরেশতা রয়েছেন, তিনিও উচ্চ স্বরে বলতেছেন ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যিনি বরাতের রাত্রিতে সিজদায় রত ছিলেন। এরূপ তৃতীয় দরজায় একজন ফেরেশতা রয়েছেন তিনিও উচ্চ আওয়াজে বলতে থাকেন, ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যিনি বরাতের রাত্রিতে মানুষের জন্যে দোয়া করে থাকেন। অনুরূপভাবে চতুর্থ দরজায় একজন ফেরেশতা আওয়াজ দিয়ে বলতে থাকেন ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যিনি এই শবে বরাতের রাত্রিতে আল্লাহ পাক উনার ভয়ে কাঁদছেন। পঞ্চম দরজায়ও একজন ফেরেশতা উচ্চ আওয়াজে বলতে থাকেন, ওই ব্যক্তির জন্যে সুসংবাদ যিনি এ রাত্রিতে ভালো কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। অনুরূপভাবে ষষ্ঠ দরজায় একজন ফেরেশতা এ মর্মে আওয়াজ করে বলেন, এমন কোনো ব্যক্তি আছে, যিনি সত্যিকার ভিক্ষুক সে যা কিছু কামনা করবে তাই সে পাবে। তদ্রƒপ সপ্তম দরজায় একজন ফেরেশতা এ বলে চিৎকার করে থাকেন যে, এমন কোনো পাপী আছ কি? ক্ষমা প্রার্থনা কর মহান আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম: এ সমস্ত দরজাগুলো কতক্ষণ পর্যন্ত খোলা থাকবে? তিনি উত্তরে বললেন, সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত খোলা থাকবে। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এই বরাতের রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি বনী কালব গোত্রের বকরীর পশমের সম পরিমাণে অধিক সংখ্যক ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অস্বীকারকারী ইহুদী-নাছারা বেদ্বীন বদদ্বীনদের চর ওহাবী খারিজী জামাতী দেওবন্দী গংরা শবে বরাত সম্পর্কে যেসব বিভ্রান্তিকর ভিত্তিহীন, বানোয়াট, গোমরাহী ও কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করেছে তা উল্লেখ করে তার দাঁতভাঙ্গা দলীলভিত্তিক সঠিক জাওয়াব যেমন সম্প্রতি ‘আহলে হাদীছ লাইব্রেরী ঢাকা’-এর সৌজন্যে প্রকাশিত একটি হ্যান্ডবিলে ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কতিপয় উক্তি করা হয়েছে। এতে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তা সহজে বুঝার জন্য প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে সঠিক জাওয়াব প্রদত্ত হলো: মহান আল্লাহ পাক স্বীয় তিনি কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-

(১৬৪)

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون

অর্থ: “তোমরা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।” (সূরা আম্বিয়া : আয়াত শরীফ ৭)

যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর হাক্বীক্বী মিছদাক। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার লক্ষ্যস্থল ওলী, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার ওসীলায় এ পত্রিকাটি উম্মাহর জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত যার প্রতিটি লিখাই আক্বীদা-আমল হিফাযতকারী ও পরিশুদ্ধকারী। আর এ কারণে মুসলিম উম্মাহর ঈমান-আমল হিফাযতের লক্ষ্যে শবে বরাতের বিস্তারিত ফতওয়া অকাট্য দলীল-আদিল্লাহর ভিত্তিতে পত্রস্থ হয়ে আসছে এবং বাতিলপন্থীদের গোমরাহীমূলক উক্তিগুলো প্রশ্নাকারে তুলে ধরে তার দাঁতভাঙ্গা সঠিক দলীল ভিত্তিক জাওয়াব প্রদান করা হলো। যাতে সর্বসাধারণ মুসলমানও সহজে বুঝে শবে বরাতের হাক্বীক্বী নিয়ামত হাছিল করতে সক্ষম হন।

১. শবে বরাত কি? শবে বরাত-এর অর্থ কি? অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী সহযোগে শরীয়তে কোনো নাম হতে পারে কি-না? শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ কোনো তথ্য পাওয়া যায় কি-না? “শবে বরাত ও তার অর্থ:

এর জাওয়াব হলো, ‘শবে বরাত’ হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্র। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে।  ‘শব’ ফারসী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে “রাত্র।” আর “বরাত” আরবী শব্দ যা উর্দূ, ফারসী, বাংলা ইত্যাদি সব ভাষাতেই ব্যবহার হয়ে থাকে। যার অর্থ ‘মুক্তি ও নাযাত। একত্রে ‘শবে বরাত’-এর অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তির রাত্র’ বা “নাজাতের রাত্র।” কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর ভাষা যেহেতু আরবী তাই ফারসী “শব” শব্দটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ না থাকাটাই স্বাভাবিক।

“অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী সহযোগে শরীয়তে কোনো নাম হতে পারে কি-না?” এর জাওয়াব হলো, হ্যাঁ, অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী সহযোগে শরীয়তে নাম অবশ্যই হতে পারে। এ ব্যাপারে শরীয়তে কোনরূপ বাধা-নিষেধ নেই।

সুতরাং যা শরীয়তে নিষেধ নয় তা নিষেধ বলে প্রচার করা শরীয়তের মধ্যে ইফরাত-তাফরীত তথা বাড়ানো-কমানোর শামিল, যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

‘অর্ধেক ফারসী আর অর্ধেক আরবী সহযোগে কোনো নাম শরীয়তে হতে পারে না,’ এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের খিলাফ। এ বক্তব্যকে কেউ শরীয়তসম্মত প্রমাণ করতে চাইলে তবে তাকে অবশ্যই শরীয়তের দলীল পেশ করতে হবে। অন্যথায় তার বক্তব্য বা দাবি আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

(১৬৫)

هاتوا برهانكم ان كنتم صدقين.

অর্থ: “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তাহলে দলীল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ১১১)

অর্থাৎ দলীল-প্রমাণ ছাড়া কারো কোনো কথা গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রকাশ থাকে যে, পৃথিবীতে যত ভাষা রয়েছে তন্মধ্যে একমাত্র আরবী ভাষাই স্বয়ং সম্পূর্ণ। এছাড়া অন্যান্য প্রতিটি ভাষাই একটি আরেকটির পরিপূরক। আর কোনো ভাষাই শরীয়তের খিলাফ নয়। বরং প্রতিটি ভাষাই শরীয়তসম্মত। যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

(১৬৬)

وما ارسلنا من رسول الا بلسان قومه ليبين لهم

অর্থ: “আমি প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেই উনাদের নিজ নিজ ক্বওমের ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি; যাতে তাদেরকে স্পষ্টভাবে বোঝাতে পারেন।” (সূরা ইবরাহীম : আয়াত শরীফ ৪)

(১৬৭)

ومن ايته خلق السموت والارض واختلاف السنتكم والوانكم ان فى ذلك لايت للعلمين.

অর্থ: “উনার (আল্লাহ পাক উনার) আরো এক নিদর্শন হচ্ছে যে, আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (সূরা রূম : আয়াত শরীফ ২২) তিনি আরো ইরশাদ করেন-

(১৬৮)

خلق الانسان علمه البيان

অর্থ: “তিনি (আল্লাহ পাক) সৃষ্টি করেছেন মানবকে এবং তাঁকে বয়ান বা বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আর রহমান : আয়াত শরীফ-৩, ৪)

সূরা আর রহমানের এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ রয়েছে-

(১৬৯)

فكان حضرت ادم عليه السلام يتكلم بسبع مأة الف لغة

অর্থ: “হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি সাত লক্ষ ভাষায় কথা বলতে পারতেন।”

তবে সর্বাধিক উত্তম ও শ্রেষ্ঠ ভাষা হচ্ছে আরবী। এরপর হচ্ছে ফারসী। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আরবী ভাষার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ কারণে আরবী ভাষার সাথে ফারসী ভাষা মিশ্রিত হয়ে বহু শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন, গুম্বাদে খাদ্বরা (সবুজ গুম্বুজ), মাহে রমাদ্বান (রমযান মাস), শবে ক্বদর (ক্বদরের রাত), শবে মি’রাজ (মি’রাজের রাত), আবে যমযম (যমযমের কূপের পানি), কোহে তূর (তুর পর্বত), সিকান্দার যুল ক্বারনাইন, আলমগীর ইত্যাদি।

উপরোক্ত উদাহরণে গুম্বাদে, মাহে, শবে, আবে, কোহে, সিকান্দার ও গীর শব্দসমূহ ফারসী ভাষার শব্দ যা যথাক্রমে আরবী শব্দ খাদ্বরা, রমাদ্বান, ক্বদর, মি’রাজ, যমযম, তূর, যুল ক্বারনাইন ও আলম শব্দের সাথে বা সহযোগে ব্যবহৃত হয়েছে এবং নাম হিসেবেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

উল্লেখ্য, এক ভাষায় অপর ভাষার শব্দের মিশ্রণ মূলত একটি অনিবার্য ঐতিহ্য। প্রায় সব ভাষায়ই এর নিদর্শন রয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষায়ও এর নিদর্শন অনেক। এবং এটি প্রায় সব ভাষারই প্রকৃতি। ব্যাকরণের ভাষায় একে বলা হয় মিশ্র শব্দ। প্রতি ভাষায়ই মিশ্র শব্দের ব্যবহার রয়েছে।

কাজেই যারা বলবে যে, অর্ধেক আরবী আর অর্ধেক ফারসী ভাষার শব্দের মিশ্রণ গ্রহণযোগ্য নয় তারা মূলত শুধু ইসলাম সম্পর্কেই অজ্ঞ নয়। বরং দুনিয়াবী জ্ঞানের দিক থেকেও তারা প্রাইমারি স্তরের জ্ঞানও রাখে না। অতএব প্রমাণিত হল যে, যারা ইহুদী ও নাছারাদের দোসর আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন কেবলমাত্র তারাই দলীল আদিল্লাহ ছাড়াই লাগামহীন, মনগড়া, বানোয়াট, ভিত্তিহীনভাবে অর্ধ শা’বানের রাত, বরকতপূর্ণ রাত এই শবে বরাতকে অস্বীকার করে গোমরাহী ও কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করে থাকে।

“শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কি-না?”

এর সঠিক জবাব হলো, হ্যাঁ, শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ অবশ্যই তথ্য বা বর্ণনা রয়েছে। কুরআন শরীফ-এর ভাষায় “শবে বরাতকে” “লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী” এবং হাদীছ শরীফ-এর ভাষায় শবে বরাতকে “লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান” বা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রি” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  যেমন, আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন যে-

(১৭০)

انا انزلنه فى ليلة مبركة انا كنا منذرين فيها يفرق كل امر حكيم. امرا من عندنا انا كنا مرسلين.

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরাতে) কুরআন নাযিল করেছি। আর আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়সালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সূরা দুখান : আয়াত শরীফ ৩-৫)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম বিশেষ করে রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-

(১৭১-১৭২)

قد اخبر الله سجانه عن هذه الليلة المباركة التى هى ليلة النصف من شعبان انه تعالى يفرق فيها كل امر من اموره المحكمة.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘লাইলাতুম্ মুবারাকাহ্ অর্থাৎ বরকতময় রাত্রি বলতে শা’বান মাসের মধ্য রাত অর্থাৎ শবে বরাতকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ পাক তিনি এ রাতে সকল প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়সালা করে থাকেন।” (ছফওয়াতুত্ তাফাসীর)

 

(অসমাপ্ত)

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭