সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২০৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “সমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ দেখা যায়, তা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহর খিলাফ, যা কোন দিন ভালো কাজ হতে পারে না।” …

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, সমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ শরীফ দেখা যায়, সে সম্পর্কে তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: সমাজে বহুল প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতঃপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খণ্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার ‘মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ’ সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “বর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়।” …

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়’ বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফ-এ ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়’ বলা হয়েছে, তা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি। সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নি¤েœ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস এবং বুযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-

স্মরণীয় যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ-এর মূল উদ্দেশ্য হলো আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত ও বিলাদত শরীফ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা।

যেমন- মীলাদ শরীফ-এর প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। কেননা, কোনো নেক কাজ কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা রহমত, বরকত, সাকীনা তথা আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের কারণ। সেহেতু প্রথমেই পবিত্র কালামে পাক হতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত সম্বলিত আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। যাতে স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই মীলাদ বা ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয়েছে।

অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত পাঠ করা হয়। কারণ ছলাত পাঠ করা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই নির্দেশ।

তাছাড়া আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করে থাকি তা খোদ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যামানাতেই ছিল।

যেমন এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত ছাহাবী উনাদেরকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাছবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত-সালাম) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন এবং (মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى درداء رضى الله تعالى عنه انه مرمع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى رضى الله تعالى عنه وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.

অর্থ: “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমি হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হই। উপস্থিত হয়ে তিনি দেখতে পেলেন যে, উনি উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন)।

এটা শুনে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা উনার রহমতের দরজা আপনার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মতো এরূপ কাজ করবে, আপনার মতো সেও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে একথা প্রমাণিত হচ্ছে যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ বলতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, তা’রীফ, প্রশংসা, উনার মু’জিযা শরীফ বর্ণনা, বিলাদত শরীফ-এর আলোচনা, না’ত, শে’র, কাছীদা পাঠ ও উনার প্রতি ছলাত ও সালাম প্রেরণ করা ইত্যাদি পাঠ করা হয়। আর উপরোক্ত বিষয়গুলো কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। সুতরাং যে বিষয়গুলো কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত সে বিষয়গুলোকে দলীলবিহীন, মনগড়াভাবে শরীয়ত মনোনীত নয় বলা প্রকাশ্য কুফরী। কোনো মুসলমান নামধারী ব্যক্তি কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের শরয়ী ফায়ছালা হলো তাকে তিনদিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। অন্যথায় মুরতাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। (চলবে)

মুহম্মদ হুসাইন

নরসিংদী

সুওয়াল: মাসিক মদীনা নভেম্বর-২০০৯ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্ন: মুসলমানগণ যে টুপি মাথায় পরেন তার আকৃতি সম্পর্কে যেমন গোল হওয়া চাই, না কিসতির মত লম্বা হওয়া চাই স্পষ্ট হাদীছ শরীফ আছে কিনা? হাদীছ শরীফ-এর নাম উল্লেখ করে জানাবেন আশা করি।

উত্তর: টুপি পরা সুন্নত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টুপি পরেছেন এবং পাগড়ী পরার সময় পাগড়ীর নিচে টুপি পরতে তাগিদ দিয়েছেন। টুপি এবং পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে তাই সুন্নত বলে স্বীকৃত যা সমকালীন নির্ভরযোগ্য ওলামা-মাশায়িখগণের মধ্যে সাধারণভাবে প্রচলিত। হাদীছ শরীফ-এ (শামায়িলে-তিরমিযী) বলা হয়েছে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথার টুপি ছিল চেপ্টা, যা মাথার সাথে লেগে থাকতো। সেই টুপির অনুকরণে ছাহাবীগণ এবং পরবর্তী যুগের ওলামা-মাশায়িখগণ কাপড়ের দ্বারা নির্মিত টুপি তৈরি করেছেন। কারো টুপি গোল ছিল, কারো টুপি কিসতি আকৃতির ছিল, কারো টুপি পাঁচ কল্লি বা তিন কল্লির ছিল। এইসব ধরনের টুপি যেহেতু ওলামা-মাশায়িখগণের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং এ যুগেও রয়েছে। সুতরাং এসব ধরনের টুপিই সুন্নত অনুযায়ী মনে করে পরা যেতে পারে। অনুসরণযোগ্য ওলামাগণের পছন্দনীয় পোশাকাদি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা অভিপ্রেত নয়।

মাসিক মদীনা পত্রিকার উক্ত প্রশ্নের উত্তরে যে বিষয়গুলো আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয়, তাহলো-

১. আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে টুপি ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে কোন সুন্নতের বর্ণনা নেই।

২. টুপি ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বাদ দিয়ে সমকালীন আলিমদেরকে অনুসরণ করতে হবে।

৩. শামায়িলে তিরমিযী-এর বরাতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে মিথ্যারোপ করা হয়েছে।

৪. হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ‘কুম্মাতুন’ (كمة) ও ‘বুতহুন’ (بطح) শব্দের মনগড়া অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

৫. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারাও কিসতি, পাঁচ কল্লি, তিন কল্লি টুপি পরিধান করেছেন।

৬. সমকালীন আলিমগণের মধ্যে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ বিরোধী আমল জারি থাকলেও সেটাই অনুসরণ করতে হবে। বিরোধিতা করা যাবেনা।

উপরোক্ত প্রতিটি বিষয়ের শরীয়তসম্মত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: মাসিক মদীনায় প্রদত্ত টুপি সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তরের প্রেক্ষিতে আপনার ষষ্ঠ সুওয়াল হচ্ছে-

৬. সমকালীন আলিমগণের মধ্যে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ বিরোধী আমল জারি থাকলেও সেটাই অনুসরণ করতে হবে। বিরোধিতা করা যাবেনা। নাঊযুবিল্লাহ!

এর জবাবে প্রথমত বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য কাট্টা কুফরী হয়েছে। কারণ কোনো ব্যক্তির মধ্যে কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আমল জারি থাকলে তাকে অনুসরণ করা যাবে না। চাই সে সমকালীন আলিম হোক অথবা পূর্ববর্তী আলিম হোক। অথবা পরবর্তী আলিম হোক না কেন? এককথায় সে যাই হোক কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আমল জারি থাকলে তাকে অনুসরণ করা যাবে না। কারণ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী আমল জারি করার অর্থই হলো- আল্লাহ পাক উনার বিরোধিতা করা এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করা; যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আর যারা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিরোধিতা করে অর্থাৎ কুফরী করে তারা আবার আলিম হয় কি করে? আর তাদের অনুসরণ করাইবা কি করে জায়িয হতে পারে?

হ্যাঁ হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা হক্কানী-রব্বানী আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে তথা উলিল আমর উনাদেরকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে ।

তাই হক্কানী-রব্বানী আলিম উনার পরিচয় নিচে উল্লেখ করা হলো-

 

হক্কানী আলিম উনার পরিচয়

 

উল্লেখ্য, হক্কানী আলিম তাকেই বলে, যিনি দ্বীনি ইলম তথা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের অধিকারী। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি আলিম হতে হলে তার জন্য প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী হওয়া। এরপর প্রথমত তাকে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টাই অর্জন করতে হবে।

দ্বিতীয়ত:  হক্কানী আলিম ওই ব্যক্তি যাঁর অন্তরে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক উনার ভয়ে নাজায়িয, হারাম কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-

انما يخشى الله من عباده العلماء

অর্থ: “নিশ্চয় আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির : আয়াত শরীফ ২৮)

উল্লিখিত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাস্সিরীন, হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এ উল্লেখ করেন-

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه قال ليس العلم عن كثرة الحديث ولكن العلم عن كثرة الخشية وقال احمد بن صالح المصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرة الرواية وانما العلم نور يجعله الله تعالى فى القلب.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ শরীফ জানে সে ব্যক্তি আলিম নয়। বরং যাঁর মধ্যে আল্লাহভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলিম। আর হযরত আহমদ বিন ছালেহ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অধিক রিওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায়না। মূলত ইলম হচ্ছে নূর বা জ্যোতি স্বরূপ। আল্লাহ পাক তিনি তা মানুষের অন্তঃকরণে দান করেন।”

উল্লিখিত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এ আরো উল্লেখ আছে যে, “হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আলিমগণ তিনভাগে বিভক্ত। (১) আলিম বিল্লাহ অর্থাৎ যারা শুধু আল্লাহ পাক উনাকেই জানেন। কিন্তু উনার হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ। (২) আলিম বিআমরিল্লাহ। অর্থাৎ যারা শুধু হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানেন। কিন্তু আল্লাহ পাক সম্পর্কে অজ্ঞ বা আল্লাহভীতি নেই। (৩) আলিম বিল্লাহ ওয়া বিআমরিল্লাহ। অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহ পাক ও উনার শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও ফারায়িজ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত এবং আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন। (উনারাই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলিম।)”

তৃতীয়ত: ওই ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন অর্থাৎ সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن سفيان ان عمر رضى الله تعالى عنه قال لكعب رضى الله تعالى عنه من ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟ قال الطمع.

অর্থ: “(আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত কা’ব ইবনুল আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইলমের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পুনরায় জিজ্ঞেসা করলেন, কোন জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ)

বিশিষ্ট তাবিয়ী, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন-

انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والوارع الكف عن اعرض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.

অর্থ: “ফক্বীহ বা আলিম হলেন ওই ব্যক্তি, যিনি দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুনাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে মশগুল, পরহেযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং উনার অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়েই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী মুর্শিদ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন (৫) হারাম নাজায়িয ও শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তাঁরাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী।

অতএব, আমলে-আখলাকে, সীরত-ছূরতে অর্থাৎ প্রতিক্ষেত্রে আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে তথা সুন্নত মুতাবিক চলতে হবে। তবেই  হক্কানী আলিম হওয়া যাবে।

আরো উল্লেখ্য যে, হক্কানী-রব্বানী আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে তথা উলিল আমর উনাকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে অর্থাৎ উলিল আমর উনাকে তখনই অনুসরণ করতে হবে যখন উলিল আমরগণ উনারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মুতাবিক চলবেন।

যেমন- এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

يايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনার ইতায়াত করো এবং আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছেন উনাদের ইতায়াত করো।” (সূরা নিসা : আয়াত শরীফ ৫৯)

কাজেই যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মুতাবিক চলবেন অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার মতে মত এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হয়েছেন উনাকেই অনুসরণ করতে হবে।

অতএব সমকালীন আলিমদেরকে কোনো বিষয়ে অনুসরণ করতে হলে দেখতে হবে তার উক্ত আমল কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত কিনা? যদি সমকালীন আলিমদের উক্ত আমল কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা এবং ক্বিয়াস সম্মত হয় তবে তাকে সে বিষয়ে অনুসরণ করা যাবে। আর যদি সমকালীন আলিমদের উক্ত আমল কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত না হয়, তাহলে সমকালীনদেরকে সে বিষয়ে অনুসরণ করা যাবে না।

কাজেই মাহিউদ্দীনের বর্ণিত সমকালীন আলিমরা পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে যেহেতু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুসরণ করেনা, তাই এক্ষেত্রে তাদেরকে অনুসরণ করা জায়িয নেই। এক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করতে বলার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণ থেকে মানুষদেরকে ফিরায়ে রাখা, যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

তাছাড়া মাহিউদ্দীনের সমকালীন আলিমদের অধিকাংশ আমলগুলোই শরীয়ত ও সুন্নতের খিলাফ। অর্থাৎ সর্বদাই তারা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াত বা সুন্নত পরিপন্থী কাজে মশগুল। যেমন পর্দা করা ফরয, তারা বেপর্দা হয়, ছবি তোলা হারাম, তারা ছবি তোলে, নারী নেতৃত্ব মানা হারাম, তারা নারী নেতৃত্ব মেনে চলে। কুশপুত্তলিকা দাহ করা বা মূর্তি বানানো হারাম, তারা তা করে। অনুরূপভাবে তাদের টুপি থেকে শুরু করে স্যান্ডেল, পোশাক-পরিচ্ছদ, চলা-ফেরা, উঠা-বসা, কথা বার্তা, চাল-চলন সবই সুন্নতের খিলাফ।

অতএব, যারা ২৪ ঘণ্টা হারাম কাজে মশগুল থাকে তারা কি করে অনুসরণীয় হতে পারে? তাদেরকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণই হারাম। কারণ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেছেন-

ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هواه وكان امره فرطا.

অর্থ: “সেই ব্যক্তিকে অনুসরণ করো না, যার ক্বলবকে আমার যিকির থেকে গাফিল করেছি। অর্থাৎ যার ক্বলবে আমার যিকির নেই, সে নফসকে (শয়তানকে) অনুসরণ করে। আর তার কাজগুলো (আমলগুলো) শরীয়তের খিলাফ।” (সূরা কাহফ-আয়াত শরীফ ২৮)

 

মুহম্মদ তাজুল ইসলাম

কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

 

সুওয়াল: অনেকে বর্তমানে প্রচলিত বাংলা সনকে বাঙালিদের সন মনে করে এবং এ সনকে তথা পহেলা বৈশাখকে হাজার বছরের ঐতিহ্য বলে প্রচার করে থাকে। এটা কতটুকু সঠিক? দয়া করে এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত বর্তমানে প্রচলিত বাংলা সন প্রকৃতপক্ষে মোঘল বাদশাহ আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত ফসলী সনের আধুনিক রূপ।

বাদশাহ আকবর নিজে বাঙালি বা বাংলাদেশী বা তার মাতৃভাষা বাংলা ছিল না। তাহলে কি করে বর্তমানে প্রচলিত ফসলী সন তথা বাংলা সন বাঙালিদের সন ও হাজার বছরের ঐতিহ্য হতে পারে? ফসলী সন তথা বাংলা সন গণনা শুরু হয় ৯৬৩ হিজরীতে। আর উদ্ভব ঘটে ৯৯৩ হিজরীতে। যা ৫০০ বছরও অতিবাহিত হয়নি।

প্রকৃতপক্ষে মোঘল সম্রাট আকবর (শাসনকাল ১৫৫৬ হতে ১৬০৫ ঈসায়ী সন) ইসলাম বিদ্বেষী হওয়ার কারণে ইসলামী সন অর্থাৎ হিজরী সন থেকে মুসলমানদেরকে সরিয়ে দেয়ার জন্য বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। দিল্লির সম্রাট আকবর ৯৬৩ হিজরী ২রা রবীউছ ছানী, রোজ শুক্রবার, ইংরেজি ১৪ এপ্রিল ১৫৫৬ তারিখ থেকে পহেলা বৈশাখ গণনা শুরু করে। ওই দিন সম্রাট আকবরের সিংহাসনে অভিষেক হয়। সে দিনটিকে স্মরণ রাখার জন্য সম্রাট আকবর তার সাম্রাজ্যে সর্বত্রই হিজরী সনের পরিবর্তে সৌর বৎসর পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিভাবে দিনটির ক্ষণ শুভ হবে তা গণনার জন্য রাজসভার অন্যতম নবরতœ সদস্য ও রাজ জ্যোতিষী আমীর ফতেউল্লাহ সিরাজীর উপর দায়িত্ব পড়ে।

সিরাজী সামাজিক ক্ষেত্রে ও ফসলের মৌসুমের দিকে লক্ষ্য রেখে খাজনা আদায়ের সুবিধার নামে হিজরী সনের পরিবর্তে ঋতুভিত্তিক সৌর সনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তখনকার প্রচলিত হিজরী সনকে কেন্দ্র করে একই তারিখে ‘ফসলী সন’ এর হিসেব চালু করে। পরবর্তীতে সে ফসলী সন বাংলা সনে রূপান্তরিত হয়। এতদ্বসংক্রান্ত বাদশাহ আকবরের নির্দেশনামা জারি হয় ৯৯৩ হিজরী, ৮ই রবীউল আউয়াল শরীফ মোতাবেক ১০ মার্চ ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ এবং তা কার্যকর করা হয় সম্রাটের সিংহাসন আরোহণের স্মারক বর্ষ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক হিজরী ৯৬৩ চন্দ্র সনকে ৯৬৩ বাংলা সৌর সনে রূপান্তরিত করার মধ্য দিয়ে।

বাদশাহ আকবর এদেশীয় বাঙালি ছিল না বা বাংলাভাষীও ছিল না এমনকি বাংলাদেশীও ছিল না । সে ছিল সাম্রাজ্যবাদী ও মোঘল বংশোদ্ভূত।

পহেলা বৈশাখ পরবর্তীতে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবধারার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়। অর্থাৎ হিন্দুরা ফসলী সন তথা বাংলা সনকে হিন্দুয়ানী সন হিসেবে গ্রহণ করে তাদের পূজাগুলিকে ফসলী সনের সাথে সংযুক্ত করে নেয়। যে কারণে তারা পহেলা বৈশাখের আগের দিন ‘চৈত্র সংক্রান্তি’ পালন করে।

এরপর এর সাথে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত হয়ে পড়ে।

একজন মুসলমান ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু পহেলা বৈশাখ কেন কোন নববর্ষই পালন করতে পারে না। কারণ মুসলমানদের জন্য কাফির, মুশরিক, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী, ইহুদী ও নাছারাদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা কাট্টা হারাম ও শক্ত কুফরী। মুসলমান হয়ে যে কুফরী করে সে ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদে পরিণত হয়ে যায়।

শরীয়তে মুরতাদের ফায়ছালা হলো- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ স্বত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মতো গর্তে পুঁতে রাখতে হবে।

 

মুহম্মদ মুঈনুল ইসলাম

কাজলা, ঢাকা।

 

সুওয়াল: মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই দেখা যায়, পহেলা বৈশাখের দিনে আনন্দ উৎসব করে ভাল বা বিশেষ খাওয়া-পরার ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এতে শরীয়তে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা? জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা মুহররম হোক, পহেলা বৈশাখ হোক, পহেলা জানুয়ারি হোক তাতে ভাল বা বিশেষ খাবার গ্রহণে আলাদা কোন ফযীলত বা বরকত নেই।

প্রকৃতপক্ষে মুসলমানের জন্য ভাল ও বিশেষ খাবারের দিন হচ্ছে ১০ই মুহররম, যা আশূরার দিন হিসেবে মশহুর এবং হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن عبد مسعود رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من وسع على عياله فى النفقة يوم عاشوراء وسع الله عليه سائر سنته

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি যদি আশূরার দিনে তার পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ায়-পরায় তাহলে আল্লাহ পাক তিনি তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।” (তবারানী শরীফ)

এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াকিয়া বর্ণিত রয়েছে, এক ব্যক্তি ছিল গরিব ও আলিম। একবার অসুস্থতার কারণে তিনি তিন দিন যাবৎ কাজ করতে পারলেন না। চতুর্থ দিন ছিল আশূরার দিন। তিনি আশূরার দিনে ভালো খাওয়ার ফযীলত সম্পর্কে জানতেন। তখন ছিল কাজীদের (বিচারক) যুগ। কাজী ছাহেব ধনী ব্যক্তি ছিলো। তার কাছে আশূরার ফযীলতের কথা বলে এবং নিজের অসুস্থতা ও পরিবারের অভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে দশ সের আটা, দশ সের গোশত ও দুই দিরহাম চাইলেন যে, ‘এই পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য হাদিয়া অথবা কর্জ হিসেবে দিন।’ কাজী ছাহেব তাকে যোহরের সময় আসতে বললো। যোহরের সময় কাজী ছাহেব বললো, আছরে আসতে। এরপরে আছরের সময় মাগরিব, মাগরিবের সময় ইশা এবং ইশার সময় সরাসরি না করে দিলো। তখন গরিব আলিম ব্যক্তি বললেন, হে কাজী ছাহেব! আপনি আমাকে দিতে পারবেন না সেটা আগেই বলতে পারতেন, আমি অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু তা না করে আমাকে সারাদিন ঘুরিয়ে এই শেষ মুহূর্তে না করছেন? কাজী ছাহেব সেই গরিব আলিম ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত না করে দরজা বন্ধ করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করল।

মনের দুঃখে লোকটি তখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। পথে ছিল এক খ্রিস্টানের বাড়ি। একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কাঁদতে দেখে উক্ত খ্রিস্টান উনাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু বিধর্মী বিধায় খ্রিস্টানকে প্রথমে তিনি কিছু বলতে চাইলেন না। অতঃপর খ্রিস্টানের অধীর আগ্রহের কারণে তিনি আশূরার ফযীলত ও তার বর্তমান দুরবস্থার কথা ব্যক্ত করলেন। খ্রিস্টান ব্যক্তি তখন উৎসাহী হয়ে তাকে আশূরার সম্মানার্থে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম এবং অতিরিক্ত আরো বিশ দিরহাম দিল এবং বললো যে, আপনাকে আমি আশূরার সম্মানার্থে প্রতিমাসে এ পরিমাণ হাদিয়া দিব। ওই ব্যক্তি তখন তা নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং খাবার তৈরি করে ছেলে-মেয়েসহ আহার করলেন। অতঃপর দোয়া করলেন, ‘আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করলো, আমার ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফোটালো, আল্লাহ পাক! আপনি তার দিল খুশি করে দিন, তাকে সন্তুষ্ট করে দিন।’

ওই রাতে কাজী ছাহেব স্বপ্ন দেখলো, স্বপ্নে কাজী ছাহেবকে বলা হচ্ছে, হে কাজী! তুমি মাথা উত্তোলন করো। মাথা তুলে কাজী ছাহেব দেখতে পেলো যে, তার সামনে দুটি বেহেশতের বালাখানা। একটি স্বর্ণের আরেকটি রৌপ্যের। কাজী ছাহেব বললো, ‘আয় আল্লাহ পাক! এটা কি?’ গায়িবী আওয়াজ হলো, ‘এ বালাখানা দুটি তোমার ছিল। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি আশূরা উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করনি। এজন্য এ বালাখানা দুটি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে।’ কারণ, খ্রিস্টান লোকটা গরিব আলিমকে আশূরা উপলক্ষে সাহায্য করেছে। অতঃপর কাজী ছাহেবের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে ওযূ ও নামায আদায় করে সেই খ্রিস্টানের বাড়িতে গেলো। খ্রিস্টান কাজী ছাহেবকে দেখে বিস্ময়াভূত হলো। কারণ কাজী ছাহেব খ্রিস্টানের পড়শি হওয়া সত্ত্বেও জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো সময় তার বাড়িতে আসতে দেখেনি।

অতঃপর খ্রিস্টান কাজী ছাহেবকে বললো, ‘আপনি এত সকালে কি জন্য এলেন?’ কাজী ছাহেব বললো, ‘হে খ্রিস্টান ব্যক্তি! তুমি গত রাতে কি কোন নেক কাজ করেছ?’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, আমার খেয়ালে আসেনা যে, আমি কোনো উল্লেখযোগ্য নেক কাজ করেছি। তবে আপনি যদি জেনে থাকেন তাহলে আমাকে বলতে পারেন। তখন কাজী ছাহেব বললো, তুমি গত রাতে আশূরা উপলক্ষে এক গরিব আলিমকে দশ সের আটা, দশ সের গোশত, দুই দিরহাম এবং তার সাথে আরো বিশ দিরহাম হাদিয়া করেছো এবং প্রতি মাসে তাঁকে এ পরিমাণ হাদিয়া দেয়ার ওয়াদা করেছো। খ্রিস্টান ব্যক্তি তা স্বীকার করলো। কাজী ছাহেব বললো, ‘তুমি তোমার এই নেক কাজ এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও এবং তুমি উনার সাথে প্রত্যেক মাসে যে ওয়াদা করেছ আমি তাঁকে তা দিয়ে দিব।’ খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব! আপনি কি জন্য এই সামান্য হাদিয়া করার বিনিময়ে আমাকে এক লক্ষ দিরহাম দিবেন সেটা স্পষ্ট করে বলুন? তখন কাজী ছাহেব তার স্বপ্নের কথা খুলে বললো যে, এই গরিব আলিম আশূরা উপলক্ষে আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলো আমি তাকে সাহায্য করিনি। যার কারণে রাতের বেলা আমাকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের দ্বারা তৈরি বেহেশতের দুটি বালাখানা স্বপ্নে দেখিয়ে বলা হচ্ছে, হে কাজী ছাহেব! ‘এ বালাখানা দুটি তোমার ছিল। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরিব আলিম লোকটি আশূরা উপলক্ষে সাহায্যের জন্য এসেছিলেন তাকে তুমি সাহায্য করনি। এজন্য এ বালাখানা দুটি এখন ওমুক খ্রিস্টান লোকের হয়েছে।’ কারণ খ্রিস্টান লোকটা গরিব আলিমকে আশূরা উপলক্ষে সাহায্য করেছে। কাজী ছাহেব বললো, তুমি তো খ্রিস্টান। তুমি তো এই বালাখানা পাবে না। কারণ ইসলাম আসার পরে পূর্ববর্তী সমস্ত ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে, । কাজেই সেই ধর্মের উপর যারা থাকবে তারা জান্নাত লাভ করতে পারবে না। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বলল আমি যদি ইসলাম গ্রহণ করি তাহলে কি এই বালাখানার মালিক হতে পারব? তখন কাজী ছাহেব বললো, হ্যাঁ, তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ করো তাহলে বালাখানা লাভ করতে পারবে। তখন খ্রিস্টান ব্যক্তি বললো, হে কাজী ছাহেব! আপনি সাক্ষী থাকুন আমি এক্ষণি কালিমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম। সুবহানাল্লাহ! এখন ফিকিরের বিষয় যে, মুহররম মাস তথা আশূরাকে সম্মান করার কারণে আল্লাহ পাক তিনি উক্ত খ্রিস্টানকে ঈমান দিয়ে দিলেন এমনকি জান্নাত নছীব করলেন। সুবহানাল্লাহ! তাই আশূরার দিন ভালো খাওয়ার মধ্যে আলাদা ফযীলত রয়েছে।

বর্তমানে আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশে নববর্ষ উপলক্ষে বছরের পহেলা দিন যেমন- পহেলা মুহররম, পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারিতে ভাল বা বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। অথচ এর মধ্যে আলাদা কোন ফযীলত বা বরকত নেই। আর এ দিন মুসলমানের জন্য কোন আনন্দ বা খুশি প্রকাশেরও দিন নয়। বরং যারা মজুসী বা অগ্নিউপাসক কেবল তারাই খাছ করে নওরোজ বা নববর্ষ পালন করে থাকে অর্থাৎ বছরের পহেলা দিন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে। সাথে সাথে হিন্দু ও বৌদ্ধরাও করে থাকে।

নববর্ষ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা যেহেতু মজুসীদের খাছ রসম-রেওয়াজ তাই মুসলমানের জন্য এ দিনে আলাদাভাবে কোন খুশি প্রকাশ করা এবং আলাদাভাবে কোন ভালো বা বিশেষ খাবারের আয়োজন করা জায়িয নেই।

কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ان شر الدواب عند الله الذين كفروا فهم لا يؤمنون

অর্থ: “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে আল্লাহ পাক উনার নিকট কাফিরেরাই নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি (সূরা আনফাল : আয়াত শরীফ ৫৫) আর নববর্ষ পালনের দ্বারা সেই কাফিরদেরই অনুসরণ-অনুকরণ করা হয়।”

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (সুনানে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)

এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, হিন্দুস্থানে এক বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন ইন্তিকাল করলেন, ইন্তিকাল করার পর আরেকজন বুযুর্গ ব্যক্তি উনাকে স্বপ্নে দেখলেন। স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ পাক উনার ওলী কেমন আছেন? উনি বললেন, আপাতত ভালই আছি। কিন্তু আমার উপর দিয়ে একটা কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে। তাহলো আমি যখন ইন্তিকাল করলাম, আমাকে সরাসরি আল্লাহ পাক উনার কাছে পেশ করা হল। তখন আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হে ফেরেশতারা! তোমরা এখানে কেন তাঁকে নিয়ে এসেছ? ফেরেশতারা বললেন, বারে ইলাহী! এই ব্যক্তি আপনার এবং আপনার হাবীব উনার অনুগত ছিলেন। আপনার মতে মত এবং আপনার হাবীব উনার পথে পথ চলার কোশেশ করতেন। দ্বীন ইসলামের উপর কায়িম ছিলেন। সেজন্য আপনার সাক্ষাতের জন্য আমরা তাঁকে নিয়ে এসেছি। আল্লাহ পাক বললেন, তাঁকে এখান থেকে নিয়ে যাও। তার হাশর, তার নশর, তার সবকিছু হবে হিন্দুদের সাথে। আমার এখানে তার কোন স্থান নেই। সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বলেন, আমি যখন এটা শুনলাম, আমার সমস্ত শরীর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। আমি কিছুক্ষণ পর বললাম, হে আল্লাহ পাক! আমি এমন কি অপরাধ করেছি যে, আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে? আমি তো কোন পূজা করিনি, কোন দিন তো মন্দিরেও যাইনি। আল্লাহ পাক তিনি বললেন, সেই হোলি পূজার দিনের ঘটনা কি তুমি ভুলে গেছ? হোলি পূজাতে হিন্দুরা রঙ ছিটিয়ে থাকে। তুমি একদিন হিন্দুস্থানের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলে। সেদিন ছিল হিন্দুদের হোলি পূজা, রঙ ছিটানোর দিন। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে নিচে গাছপালা, তরুলতা, পশু-পাখি, সবকিছুর মধ্যে রঙ দেয়া হয়েছিল। তোমার সামনে দিয়ে একটা গাধা যাচ্ছিল। তার শরীরে কোন রঙ ছিল না। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে। তুমি বলেছিলে, হে গর্দভ! তোমার গায়ে তো কেউ রঙ দেয়নি। আমি একটু রঙ দিয়ে দেই। এটা বলে তুমি এক চিপটি পানের পিক দিয়েছিলে সেই গাধার গায়ে। এটা কি তোমার হোলি পূজা হয়নি?

আমার হাবীব তো জানিয়েছেন-من  تشبه  بقوم فهو منهم “যে ব্যক্তি যেই সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”

আল্লাহ পাক তিনি যখন একথা বললেন, সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, আমি লা জাওয়াব হয়ে গেলাম, আমি চুপ হয়ে গেলাম। আমার শরীর আরো থর থর করে কাঁপতে লাগলো। সত্যিই তো আমার মস্তবড় অপরাধ হয়ে গেছে। আমি কাকুতি-মিনতি করতে লাগলাম। হে আল্লাহ পাক! আমি বুঝতে পারিনি, আমাকে কেউ বুঝিয়েও দেয়নি, আমার অন্তরও কখনো সাড়া দেয়নি যে, এটা হোলি পূজা হয়ে যাবে। সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বলেন, অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি যেহেতু বুঝতে পারনি এবং তোমার অন্যান্য আমল থাকার কারণে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।

তখন বুযূর্গ ব্যক্তি স্বপ্নদ্রষ্টা ওলীআল্লাহ উনাকে বলেন, আপনারা এ ধরনের মুশাবাহ থেকে বিরত থাকবেন। অন্যথায় নাযাত পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে।

বর্ণিত রয়েছে- আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত ইমাম আবূ হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “কেউ যদি নববর্ষ উপলক্ষে একটা ডিমও ব্যয় করে তাহলে তার পঞ্চাশ বৎসরের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।” অর্থাৎ অতীত জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

তাই কাফির-মুশরিক, বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা গ্রহণ ও পালন করা হতে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।

 

মুহম্মদ উসমান আলী, মুহম্মদ আব্দুর রহমান

মুহম্মদ আব্দুন নূর

দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।

 

সুওয়াল: সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় অবস্থিত বিরাহিমপুর গ্রামের জামে মসজিদে তাবলীগ জামাত সংগঠনের কিছু লোক বাংলা ভাষায় লেখা তিনটি বই যথাক্রমে (১) ফাজায়েলে আমল (২) ফাজায়েলে ছাদাকাত (৩) মুনতাখাবে হাদীস এগুলো রাখা এবং প্রাত্যহিক দুইবার করে পড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। অপরদিকে অধিকাংশ মুসল্লিদের আপত্তি বিশেষ ওই সংগঠনের স্বার্থ রক্ষার নিরীখে মূল বই থেকে এ বইগুলোর বিকৃত অনুবাদ করা হয়েছে। যা তাবলীগ জামাতের প্রচার কার্য চালাতে সহায়ক। তাবলীগ জামাতের মতাদর্শীদের দাবি এই বইগুলো যা মূল উর্দু কিতাবের সাথে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। তা মসজিদে রাখা যাবে। আরো এক পক্ষের দাবি মসজিদে বই পড়া যদি আবশ্যক হয় তাহলে আরো লক্ষ লক্ষ ভাল ভাল বই আছে সেগুলো পড়তে হবে। এ নিয়ে একটা বিশৃঙ্খলা দৃশ্যমান। অতএব, আপত্তিকর বই মসজিদে পাঠ করা বিষয়ে শরীয়তের সঠিক ফায়সালা দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: যাকে তাকে অনুসরণ করা, যার তার নিকট বাইয়াত হওয়া, যার তার পিছনে নামায পড়া, যার তার কাছে ইলম শিক্ষা করা, যার তার ওয়াজ-নছীহত শ্রবণ করা, যার তার লিখনী বা কিতাবাদি পাঠ করা জায়িয নেই।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هواه وكان امره فرطا

অর্থ: “ওই ব্যক্তির অনুসরণ কর না যার ক্বলবকে (গোমরাহীর কারণে)  আমার যিকির থেকে গাফিল করে দিয়েছি। ফলে সে তার নফসের অনুসরণ করে থাকে এবং তার কাজগুলো ত্রুটিযুক্ত অর্থাৎ শরীয়তের খিলাফ হয়ে থাকে।” (সূরা কাহাফ : আয়াত শরীফ ২৮)

অর্থাৎ যে বা যারা ইলমে তাছাউফ বা তরীক্বতের সবক অনুযায়ী ক্বলবী যিকির করে না এবং এর মাধ্যমে হিংসা, গীবত, অহঙ্কার, মিথ্যা, রিয়া ইত্যাদি বদ খাছলত দূর করে ক্বলবকে পরিশুদ্ধ করে না, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তারা নফস বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে বাধ্য, যার কারণে তাদের কাজগুলি শরীয়তের খিলাফ হিসেবে পরিগণিত হয়। ছূরতান (বাহ্যিক দৃষ্টিতে) তাদের কোন কাজ ভাল দেখা গেলেও তা গইরুল্লাহ থেকে মুক্ত নয়।

অপর এক আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

ومن يعش عن ذكر الرحمن نقيض له شيطان فهو له قرين وانهم ليصدونهم عن السبيل ويحسبون انهم مهتدون

অর্থ: “যে বা যারা দয়াময় আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল, তাদের জন্য একটা শয়তান নিযুক্ত বা নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। উক্ত শয়তান তাদের সঙ্গী হয়ে তাদেরকে সৎপথ থেকে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ গুনাহর কাজে লিপ্ত করে দেয়। অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎ পথেই রয়েছে।” (সূরা যুখরূফ : আয়াত শরীফ ৩৬, ৩৭)

কাজেই যারা ক্বলবী যিকির করে নিজেদের ক্বলবকে পরিশুদ্ধ করেনি বা করেনা এমন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় নফস ও শয়তানের অনুসারী। ফলে তারা পাপ কাজ বা শরীয়তের খিলাফ কাজে লিপ্ত এবং তারা সৎ পথ বা হিদায়েত থেকেও বিচ্যুত। এক কথায় তারা গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট।

ছহীহ “মুসলিম শরীফ”-এ বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

ان هذا العلم دين فانظروا عمن تاخذون دينكم

অর্থ: “নিশ্চয়ই (কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর) ইলমই হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং কার নিকট থেকে তোমরা ইলম গ্রহণ বা শিক্ষা করছ তাকে দেখে নাও। অর্থাৎ তার ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ আছে কিনা তথা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্মত কিনা তা যাচাই করে নাও।”

অতএব, যাদের ঈমান-আক্বীদাতে ত্রুটি বা কুফরী রয়েছে অর্থাৎ যাদের আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী নয়। যাদের আমল-আখলাক্বে ত্রুটি রয়েছে অর্থাৎ আমল-আখলাক্ব সুন্নত মুয়াফিক নয়, যাদের মধ্যে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি নেই, যারা শরীয়ত ও সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দ নয়, যারা হারাম-নাজায়িয, শরীয়তের খিলাফ কাজে মশগুল, যাদের ক্বলব (অন্তর) পরিশুদ্ধ নয়, যারা ইখলাছ অর্জন করেনি; এমন ব্যক্তির নিকট থেকে ইলমে দ্বীন অর্জন বা শিক্ষা করা এবং ওয়াজ-নছীহত শ্রবণ করা যেরূপ জায়িয নেই তদ্রূপ তাদের লিখিত কিতাবাদি পাঠ করা ও শ্রবণ করাও জায়িয নেই।

স্মরণীয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদা ও আমলের মধ্যে বহু কুফরী আক্বীদা রয়েছে। যা তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবসহ তদীয় অনুসারী মাওলানা জাকারিয়া ছাহেব ও অন্যান্য মাওলানা-মৌলভী ও লিখকদের কিতাবাদিতে বিদ্যমান। হক্ব তালাশী মুসলমানদের প্রেরিত অসংখ্য সুওয়ালের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় উছূলী তাবলীগীদের কতিপয় শরীয়তবিরোধী ও কুফরী আক্বীদা ও আমল উল্লেখপূর্বক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” ৩৫তম সংখ্যা থেকে ৪৬তম সংখ্যা মোট ১২ সংখ্যা ব্যাপী দলীলভিত্তিক বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। সেসব শরীয়তবিরোধী তথা কুফরী আক্বীদা ও আমল থেকে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো-

১. দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন (মুহম্মদ ওবায়দুল হক রচিত) ১১৬ পৃষ্ঠা, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ ৯ পৃষ্ঠা, মূল: মাওলানা এহতেশামুল হাসান কান্দলভী, অনুবাদক- ছাখাওয়াত উল্লাহ। তাবলীগী নেছাব ১১ পৃষ্ঠা, ফাজায়েলে তাবলীগ (মূল: হযরত মাওলানা জাকারিয়া, অনুবাদক- আম্বর আলী) ৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগে ইসলাম, লেখক- আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী ৯ পৃষ্ঠা ও মাওলানা শাহ মনিরুজ্জামান লিখিত- আমি কেন তাবলীগ করি ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, অন্য কোন কারণে নয়।”

২. মলফূযাতের ৪৩ পৃষ্ঠার ৪২নং মলফূযে এবং নবুওয়ত ও মাওলানা ইলিয়াছ নামক কিতাবের ৩০-৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “মুসলমান দু’প্রকার- একদল প্রচলিত তাবলীগের জন্য হিজরত করবে, দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে, এ দু’দলই মুসলমান।”

অর্থাৎ যারা প্রচলিত তাবলীগও করবেনা আর তাবলীগকারীদেরকে সাহায্যও করবেনা, তারা মুসলমান নয়। (অনুরূপ তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মোঃ ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী ১৭৪ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন? (লেখক- ওবায়দুল হক) ২১ পৃষ্ঠা, হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান, ২য় খ- ১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।)

৩. ফাজায়েলে তাবলীগ-এর ৪নং পৃষ্ঠায়, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন, (লেখক- ওবায়দুল হক) ১১৮ পৃষ্ঠা ও তাবলীগে ইসলাম (লেখক- আব্দুল সাত্তার ত্রিশাল) নামক কিতাবের ৯ পৃষ্ঠার বক্তব্য দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, “সূরা হামীম সিজদা”র ৩৩ নম্বর আয়াত শরীফ-

ومن احسن قولا ممن دعا الى الله

প্রচলিত তাবলীগের জন্য খাছ। অর্থাৎ একমাত্র প্রচলিত তাবলীগকারীরাই এ আয়াত শরীফ-এর পূর্ণ মিছদাক্ব বা নমুনা।

৪. মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের মলফূযাতের ১৮ পৃষ্ঠার ২৯নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, নামাজ-রোজা উচ্চাঙ্গের ইবাদত কিন্তু দ্বীনের সাহায্যকারী নয়।

৫. প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের “মলফূযাত”-এর ৪৯ পৃষ্ঠার, ৭৪নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, শুধুমাত্র জিহ্বার দ্বারাই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, যা প্রচলিত তাবলীগওয়ালাদের মাঝেই বিদ্যমান।

৬. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত, “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৭৫ ও ১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ভোট দান প্রচলিত তাবলীগের ৬নং উছূলের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ ভোট দেয়াও তাবলীগীদের আমলের অন্তর্ভুক্ত।

৭. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট প্রায় সব কিতাবেই একথা লেখা আছে যে, নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনারা কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন। যেমন- হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন ও হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তিনি দাওয়াত না দিয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি। (মলফূযাতে শায়খুল হাদীছ, পৃষ্ঠা ২৩১, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী, পৃষ্ঠা ৬১)

৮. হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হল যে, দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে বিপদে ফেলেছিলেন এবং তিনি সেখানে নিজের অপরাধ স্বীকার করে চল্লিশ দিন কান্নাকাটির পর আল্লাহ পাক তিনি উনার অপরাধ ক্ষমা করেন।

এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে অবশ্য গযবে ফেলিলেন …….।”

“……. হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তিনি মাছের পেটে ৪০ দিন আবদ্ধ থাকিয়া নিজ ত্রুটি স্বীকার করিয়া তওবা …. করিবার কারণে বিপদ হইতে উদ্ধার পাইলেন।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী, পৃষ্ঠা ৬২ ও ৮৯)

৯. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা আরো বলে থাকে যে,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গারে হেরায় চিল্লা দেয়ার উসীলাই কোরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে বিবৃত হয়েছে- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৪০ দিন পর্যন্ত ‘গারে হেরা’ পর্বতে থাকিয়া আল্লাহর ধ্যান ও যেকেরে চিল্লা দিলেন, যাহার ফলে তিনিও কোরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হইলেন।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী, পৃষ্ঠা-৮৯)

১০. মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, লক্ষাধিক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে অধিকাংশই মূর্খ ছিলেন।” (অনুরূপ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব, যার মূল মাওলানা জাকারিয়া ছাহেব প্রণীত- ১৩ পৃষ্ঠা, তাবলীগী জামায়াতের প্রধানের তর্ক ও ইচ্ছা নামক কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)

১১. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, হিদায়েতের ক্ষেত্রে মূর্খরাই সমধিক উপযুক্ত। যেক্ষেত্রে নবীগণ এবং আলেমরা ফেল করে, সেখানেও মূর্খরা কৃতিত্ব দেখায়। এ প্রসঙ্গে মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ১১৬ পৃষ্ঠায় একথা লেখা আছে যে, “….. অনেক স্থলে নবীগণ পর্যন্ত হিদায়েতে বিরাট সঙ্কটে ও বিপদে পড়িয়াছিলেন, তাই অনেক স্থলে বিরাট আলেমও ফেল পড়িতেছে। কিন্তু মূর্খগণ তথায় দ্বীন জয় করিতেছে।”

উক্ত শরীয়তবিরোধী বা কুফরী আক্বীদা ও আমলের খ-নমূলক সঠিক জাওয়াব দলীলসহ জানার জন্য আল বাইয়্যিনাত-এর ৩৫ থেকে ৪৬তম সংখ্যাগুলি পাঠ করুন।

উল্লেখ্য কোন ব্যক্তি বা কোন সম্প্রদায় নাহক্ব বা বাতিল প্রমাণিত হওয়ার জন্য তাদের সমস্ত আক্বীদা বা আমল শরীয়তবিরোধী বা কুফরী ও হারাম হতে হবে তা নয়। বরং নাহক্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য একটিমাত্র কুফরী আক্বীদাই যথেষ্ট।

উদাহরণস্বরূপ কাদিয়ানী সম্প্রদায় তারা নাহক্ব হওয়ার জন্য যে কুফরী আক্বীদাটি উল্লেখযোগ্য তা হলো- খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করা। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শেষ নবী ও রসূল হিসেবে না মানার কারণে তারা কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত। তাই হাদীছ শরীফ-এ মুসলমান দাবিদার ৭৩টি দলের মধ্যে ৭২টি দলকেই বাতিল ও জাহান্নামী বলে উল্লেখ করা হয়েছে তার মূল কারণ হলো কুফরী আক্বীদা।

কাজেই, প্রত্যেক মুসলমানকে শরীয়তবিরোধী তথা কুফরী আক্বীদা ও আমলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শেষ যামানায় কতক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব মিথ্যা-মনগড়া কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরাও কখনো শোননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শোনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে তাহলে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ)

অতএব, বাতিল আক্বীদা ও ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত কোন ব্যক্তির কোন বক্তব্য শোনা যেমন জায়িয নেই। একইভাবে তাদের কোন লিখিত কিতাব পাঠ করা ও তা শ্রবণ করাও জায়িয নেই। শুধু তাই নয়, এমন কিতাবাদি মসজিদ, মাদরাসা, লাইব্রেরী, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, বাড়ি-ঘর কোন স্থানেই রাখা জায়িয নেই। এছাড়া এমন কিতাবাদি নিজের কাছে রাখা, কাউকে দেয়া, পড়ার জন্য বলা বা শোনার জন্য বলা, ছাপানো, প্রকাশ করা, প্রচার করা এবং এজন্য আর্থিকসহ কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা জায়িয নেই।

কারণ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب

অর্থ: “তোমরা নেকী ও পরহেযগারিতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করো আর পাপ-নাফরমানী ও শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য সহযোগিতা করনা। এ বিষয়ে আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা মায়িদা : আয়াত শরীফ ২)

দলীলসমূহ: তাফসীরে আহকামুল কুরআন জাসসাস, কুরতুবী, মাযহারী, রুহুল মায়ানী, রহুল বয়ান, জালালাইন, দুররে মানছূর, বায়যাবী, কাশশাফ, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, মিশকাত, মাছাবীহুস সুন্নাহ, মিরকাত, শরহে আক্বাইদে নাসাফী, আক্বাইদে হাক্কাহ,ু তাকমীলুল ঈমান, ফিক্বহুল আকবার।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ