গীবতের অনিষ্টতা ও ভয়াবহ পরিণতি

সংখ্যা: ২০৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

ولا يغتب بعضكم بعضا ايحب احدكم ان يأكل لحم اخيه ميتا فكرهتموه

অর্থ: তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো তা অপছন্দ বা ঘৃণাই করবে। (সূরা হুজুরাত: আয়াত শরীফ ১২)

গীবত বা পরনিন্দা শক্ত হারাম ও কঠিন কবীরা গুনাহ এবং গীবতকারীর শাস্তিও অত্যন্ত ভয়াবহ। খালিক্ব মালিক রব আল্লাহ পাক তিনি গীবত বা পরনিন্দার অপরাধের কথা কঠোর ভাষায় বর্ণনা করেছেন। এমনকি গীবতকারী ব্যক্তিকে আপন ভাইয়ের মৃতদেহের গোশত ভক্ষণকারীর সাথে তুলনা দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ!

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, গীবত হলো কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন সব কথা বলা যেগুলো শুনলে সে পছন্দ করবে না। এসব কথা বা সমালোচনা সে ব্যক্তির দেহ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বংশ, কথাবার্তা, কাজ-কর্ম, ইহকাল-পরকাল, দ্বীন-ধর্ম, আহার-নিদ্রা এমনকি তার পোশাক-পরিচ্ছদ এবং আরোহণের জন্তু সম্পর্কে হলেও তা গীবত বলে পরিগণিত হবে।

হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,

æমি’রাজ শরীফ-এর রাত্রিতে আমি এমন কিছু লোকের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করেছিলাম, যারা (মর্মান্তিক শাস্তিস্বরূপ) নিজেদের মুখম-ল বিরাটকায় ধারালো নখের দ্বারা আঁচড়াতে ছিল এবং গলিত পচা লাশ ভক্ষণ করছিল। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে এদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এরা দুনিয়াতে (অন্যের গীবত করে) মরা লাশের গোশত ভক্ষণ করতো।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,

æতোমরা অপরের গীবত করা থেকে নিজেকে সংযত বা বিরত রাখো। কেননা, গীবতের মধ্যে তিনটি মারাত্মক ক্ষতিকর বিষয় রয়েছে। এক. গীবতকারী ব্যক্তির দোয়া কবুল হয় না। দুই. গীবতকারী ব্যক্তির কোনো নেক আমল আল্লাহ পাক উনার কাছে গৃহীত হয়না। তিন. গীবতকারী ব্যক্তি পদে পদে গুনাহর মধ্যে লিপ্ত হয়।”

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক মুসলমানের জন্য আরেক মুসলমানের হক্ব নষ্ট করা হারাম। এছাড়া রক্তপাত করা, সম্পদ লুণ্ঠন করা, অপমান করা সবই হারাম।

তিনি আরো ইরশাদ করেন, তোমরা গীবত করা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ গীবত ব্যভিচারের চাইতেও কঠিনতর অপরাধ। এর কারণ হলো, মানুষ ব্যভিচার করে আল্লাহ পাক উনার দরবারে খালিছ তওবা করলে আল্লাহ পাক তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু গীবত হচ্ছে হক্কুল ইবাদ, বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা না করবে গীবতকারীর পাপ ততক্ষণ পর্যন্ত মোচন হবে না।

বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন গীবতকারী ব্যক্তিকে জাহান্নামের পুলের উপর দাঁড় করিয়ে রাখবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আগুনের দহনে তার অন্তর গীবতের কলুষ হতে বিমুক্ত না হয়।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন গীবতকারী ব্যক্তির চেহারা পিছন দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে।

হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় গীবতের দুর্গন্ধ অনুভব করা যেত। কারণ তখন গীবতের অস্তিত্ব ছিল খুবই কম। কিন্তু এখনকার সময় গীবতের প্রাদুর্ভাবের কারণে লোকেরা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে, এর দুর্গন্ধ অনুভূত হয় না। যেমন কোনো অনভ্যস্ত ব্যক্তি চামড়ার গুদামে গমন করলে, দুর্গন্ধের কারণে সেখানে কিছু সময়ও অবস্থান করতে পারে না; কিন্তু চামড়া শুষ্ককারী ব্যবসায়ীদের অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা চামড়ার উপরে বসে খাওয়া-দাওয়া করে এবং অভ্যস্ত হওয়ার কারণে তারা কোনরূপ দুর্গন্ধ অনুভব করে না। গীবতের অবস্থাও ঠিক তদ্রƒপ।

হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি কোনো এক আসমানী কিতাবে পড়েছি, যে, ‘গীবত এমন এক জঘন্য অপরাধ যদি কেউ এ থেকে তওবা করে মারা যায়, তবুও সে সকলের শেষে বেহেশতে প্রবেশ করবে। আর যদি গীবতের গুনাহে লিপ্ত থেকে মারা যায়, তাহলে সে দোযখের সর্বপ্রথম প্রবেশকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” নাঊযুবিল্লাহ!

অতএব, কেউ কারো গীবত করে থাকলে প্রথমত যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া উচিত। ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হলে তার জন্য দোয়া করা উচিত এবং সেই সাথে খালিছভাবে আল্লাহ পাক উনার নিকট তওবা করা উচিত। যাতে আল্লাহ পাক উনার হুকুমের অমান্যতার গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

 

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী