ছাহিবুল ওয়াহ্য়ি, ছাহিবুল মু’জিযাত, ছাহিবুশ শিফা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে বেহেশতের হুর-পরী, এমনকি কুল-কায়িনাতের সকলেই খুশি প্রকাশ করেছিলেন, এখনো করছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে থাকবেন। অতএব জিন-ইনসানের উচিত তারাও যেনো অনন্তকাল ধরে খুশি প্রকাশ করে

সংখ্যা: ২১২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সমস্ত ফেরেশতাকুল উনাদেরকে নিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান ও খুশি প্রকাশে আদি হতে অনন্তকাল ব্যাপী ছলাত-সালাম পাঠে মশগুল এবং জিন-ইনসানসহ সমস্ত সৃষ্টিকুলকে স্বীয় হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর অনন্তকাল ব্যাপী ছলাত-সালাম, তাসবীহ-তাহলীল, ছানা-ছিফত পাঠে নিয়োজিত রেখেছেন তথা ফরযে আইন করে দিয়েছেন, যা সূরা ফাতহ ৮-৯ এবং সূরা ইউনুস ৫৭-৫৮ আয়াত শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি বলেন-

كل قد علم صلاته وتسبيحه

অর্থ: æপ্রত্যেক মাখলুকাতেই তার ছলাত ও তাসবীহ তথা ছলাত, সালাম, তাসবীহ-তাহলীল, ছানা-ছিফত পাঠের পদ্ধতি সম্পর্কে যথার্থভাবে অবগত। অর্থাৎ কায়িনাতের প্রত্যেকেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে খুশি প্রকাশার্থে দায়িমীভাবে ছলাত ও সালাম, তাসবীহ-তাহলীল, ছানা-ছিফত পাঠে মশগুল।” সুবহানাল্লাহ! (সূরা আন নূর : আয়াত শরীফ ৪১)

এ প্রসঙ্গে আল্লামা হযরত হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম’-এ উল্লেখ আছে, হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, æনূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশির সংবাদ নিয়ে দলে দলে ফেরেশতাগণ আগমন করেছিলেন। তখন আমি আমার গৃহের দিকে তাকালাম, আমি দেখতে লাগলাম, দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট জনেরা আমার নিকট নানান ভাষায় বৈচিত্র্যপূর্ণ মহা আনন্দের ও সুসংবাদের বাণী শুনাচ্ছেন। আমি সে সময় লক্ষ্য করলাম, দলে দলে ফেরেশতাগণ উনারা আমার ডানে-বামে উড়ছেন। তখন আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ করলেন, হে জিবরীল আলাইহিস সালাম! রূহসমূহকে ‘শারাবান তহুরা’ পাত্রের নিকট শ্রেণীবদ্ধ করুন। হে রিদওয়ান! জান্নাতের হুর-গেলোমানকে নতুন সাজে সজ্জিত করুন। আর পবিত্র মেশকের সুগন্ধি ছড়িয়ে দিন। সারা মাখলূকাতের যিনি মহান রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমণে তথা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে।” হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! বিছিয়ে দিন নৈকট্য ও মিলনের জায়নামায সেই মহান রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য, যিনি অধিকারী নূরের, উচ্চ মর্যাদার এবং মহা মিলনের। হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! দোযখের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা হযরত মালিক আলাইহিস সালাম উনাকে আদেশ করুন, তিনি যেনো দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেন। জান্নাতের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতা হযরত রিদওয়ান আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন, তিনি যেনো জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেন। হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! হযরত রিদওয়ান আলাইহিস সালাম-উনার অনুরূপ পোশাক পরিধান করুন এবং সুসজ্জিত হয়ে কাছের ও দূরের সকল ফেরেশতা সহকারে যমীনের বুকে গমন করুন। অতঃপর আসমান-যমীনের চারপাশে ঘোষণা দিন, সময় ঘনিয়ে এসেছে, মুহিব ও মাহবূবের মিলনের, তালিব ও মাতলূবের সাক্ষাতের। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার হাবীব পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে মি’রাজ হবে তার সময় নিকটবর্তী হলো উনার বিলাদত শরীফ-এর  মাধ্যমে।” সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হুকুম বাস্তবায়ন করলেন, যেমনটি আল্লাহ জাল্লা শানুহু তিনি হুকুম করলেন। এক জামায়াত ফেরেশতা উনাদেরকে মক্কা শরীফ-এর পাহাড়ে দায়িত্ব দিলেন। উনারা হারাম শরীফ-এর দিকে নজর রাখলেন। উনাদের পাখাসমূহ যেনো সুগন্ধিযুক্ত সাদা মেঘের টুকরা। তখন পাখিসমূহ তাসবীহ পাঠ করতে লাগলো এবং উন্মুক্ত প্রান্তরে বনের পশুগুলো সহানুভূতির ডাক, আশার ডাক দিতে লাগলো। এ সবকিছুই সেই মহান মালিক জলীল জাব্বার আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার আদেশ মুতাবিক হলো।

হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তিনি চোখের পর্দা অপসারিত করলেন। আমি দেখতে পেলাম, শাম দেশের বছরা নগরীর প্রাসাদসমূহ। আমি দেখলাম, তিনটি পতাকা। একটি পতাকা পূর্ব প্রান্তে, আরেকটি পতাকা পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কা’বা শরীফ-এর ছাদে। আমি আরো দেখলাম, পাখিদের একটি দল, যে পাখিদের চক্ষুগুলো স্বর্ণাভ, ডানাগুলো বৈচিত্র্যময় রঙ-বেরঙের ফুলের মতো। সেগুলো আমার কক্ষে প্রবেশ করলো মণিমুক্তার মত। এরপর উক্ত পাখিগুলো আমার চারপাশে আল্লাহ পাক উনার ছানা-ছিফত করতে লাগলো। আমি উন্মীলিত রইলাম এ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর ফেরেশতাগণ আমার নিকট দলে দলে আসতে লাগলেন। আর উনাদের হাতে ছিল ‘আগরদান’ স্বর্ণাভ ও রৌপ্য নির্মিত। আর উনারা সুগন্ধির ধূম্র ছড়াচ্ছিলেন। সেই সাথে উনারা উচ্চ কণ্ঠে সম্মানিত ও মর্যাদাবান হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করছিলেন। উনাদের কণ্ঠে সৌজন্যতার ও মহানুভবতার ভাব স্পষ্ট ছিল।

হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, চন্দ্র আমার মাথার উপর চলে এলো, তাঁবু মাথার উপর থাকার মতো। আর তারকারাজি আমার মাথার উপর সদৃশ মোমবাতির ন্যায়। সে অবস্থায় আমার নিকট ছিল দুধের ন্যায় শুভ্র সুগন্ধিময় পানীয়, যা ছিলো মধুর চেয়ে মিষ্ট এবং বরফের চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা। তখন আমার খুব পিপাসা লাগছিলো। আমি তা গ্রহণ করলাম ও পান করলাম। এর চেয়ে অধিক কোনো সুপেয় পানীয় আগে কখনো পান করিনি। অতঃপর আমা হতে প্রকাশিত হলো এক মহিমান্বিত নূর। সুবহানাল্লাহ!

উক্ত বর্ণনা থেকে প্রতিভাত হলো আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ কালে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হুকুম বা নির্দেশে খুশি প্রকাশ করেছিলেন ফেরেশতাকুল, খুশি প্রকাশ করেছিলেন জান্নাতের অধিবাসীগণ, এমনকি খুশি প্রকাশ করেছিলো বনের পশু-পাখিরাও। খুশি প্রকাশ করে ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয়েছিলো এবং পাঠ করা হয়েছিলো ছলাত-সালাম ও তাসবীহ-তাহলীল।

কাজেই, উম্মতের প্রতিও আল্লাহ পাক উনার সে একই নির্দেশ হলো, তারা যেনো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে যথার্থভাবে খুশি প্রকাশ করে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,

قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا.

অর্থ: æহে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া, ইহসান ও রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য যথাযথ ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করো। (তোমরা যতো কিছুই করোনা কেনো) তিনিই হচ্ছেন সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম নিয়ামত।”  (সূরা ইউনুস : আয়াত শরীফ ৫৮)

উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং সর্বজনমান্য বিশ্বখ্যাত কিতাবসমূহের অসংখ্য দলিলের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে জান্নাত ও জান্নাতী হূর-গেলমান থেকে শুরু করে আসমান-যমীনসহ সমস্ত কায়িনাতকে অপরূপ বৈচিত্র্যে সাজিয়ে সমস্ত সৃষ্টিকে নিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন ও খুশি প্রকাশ করেছেন, করছেন ও অনন্তকাল ব্যাপী করতে থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে সেই মহান ঈদ বা খুশি পালন জিন-ইনসানদের জন্য কত বড় শ্রেষ্ঠতম ঈদ তথা খুশি! তা কস্মিনকালেও মাখলুকাতের পক্ষে বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব হবে না। কাজেই জিন-ইনসানসহ সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে অনন্তকালব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর তথা সকল ঈদের সেরা বা শ্রেষ্ঠতম ঈদ হচ্ছে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা, উদযাপনে যথাযথ খুশি প্রকাশ করা যা কুল-মাখলুকাতের সকলের জন্য ফরযে আইন ও নাজাতের একমাত্র সোপান।

এ কারণেই বর্তমান যামানার মহান মুজাদ্দিদ, মুজ্জাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, গাউছে আ’যম, ফারূকে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি তাজদীদ করে ফতওয়া দেন যে, æসাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর তথা সকল ঈদের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও সেরা ঈদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম; যা পালন করা ফরযে আইন সর্বোপরি নাজাত ও শাফায়াত লাভের সর্বোত্তম উপায়।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর যথার্থ শান-মান ও মর্যাদাকে অনুধাবন করে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে জীবনের সর্বশক্তি, সামর্থ্য, টাকা-পয়সা এবং জান-মাল দিয়ে খুশি প্রকাশ করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

-মাওলানা সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম