দস্তরখানায় পতিত খাদ্য উঠিয়ে খাওয়ার ফযীলত

সংখ্যা: ২৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

كُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا ۚ إِنَّهٗ لَا يُـحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ

অর্থ: তোমরা খাও এবং পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)

খাদ্য-দ্রব্য মহান আল্লাহ পাক উনার অন্যতম নিয়ামত। তিনি বান্দাকে তা খাওয়ার জন্য দেন। অপচয় বা নষ্ট করার জন্য নয়।

কাজেই, নিয়ামতের ক্বদর (সম্মান) করা উচিত। অসম্মান করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি অসন্তুষ্ট হন। ফলে নিয়ামত লাভে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যারা খাবার নষ্ট বা অপচয় করে তারা খাদ্যে কষ্ট পায়। নাউযুবিল্লাহ!

খাবার সুন্নত তরিকায়, সুন্নতী পরিমানে খাওয়া উচিত। পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাদ্য, একভাগ পানীয় এবং এক ভাগ শ্বাস প্রশ্বাস ও যিকির-ফিকিরের জন্য রাখা কর্তব্য। অতিরিক্ত খাওয়া সেটাও অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তা স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর হয় না। বরং তা স্বাস্থ্যের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয় ক্ষতিকর।

দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার খাওয়া সুন্নত। দস্তরখানার রং খয়েরী হওয়াও সুন্নত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু তিনি চামড়ার দস্তরখানা মুবারক বিছিয়ে খাবার খেয়েছেন। তাছাড়া দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার খেলে অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাতে রয়েছে অনেক ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী ও সম্মান। শারীরিক ও মানসিক অফুরন্ত কল্যাণ ও উপকার।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দস্তরখানায় খাবার খাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্নভাবে তারগীব বা উৎসাহ দিয়েছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَـحْضُرُ أَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَىْءٍ مِنْ شَأْنِهٖ حَتَّى يَـحْضُرَهٗ عِنْدَ طَعَامِهٖ فَإِذَا سَقَطَتْ مِنْ أَحَدِكُمُ اللُّقْمَةُ فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أَذًى ثُمَّ لْيَأْكُلْهَا وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ فَإِذَا فَرَغَ فَلْيَلْعَقْ أَصَابِعَهٗ فَإِنَّهٗ لَايَدْرِي فِي أَىِّ طَعَامِهٖ تَكُوْنُ الْبَرَكَةُ ‏.‏

অর্থ: বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রতিটি কাজে উপস্থিত থাকে। এমন কি যখন খাবার খাও তখনও সে শরীক হয়। কাজেই, যদি কখনো তোমাদের কোন খাদ্যকণা পরে যায়, আর তাতে ধুলাবালি লাগে, তারা যেন তা ভালভাবে ধুয়ে নেয় এবং খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য তা না রেখে দেয়। খাওয়া শেষ হলে আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা, সে জানেনা কোন খাদ্যে বরকত রয়েছে। (বুখারী শরীফ, রিয়াদুস সলেহীন, মুসলিম শরীফ)

ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, পরে যাওয়া খাদ্যকণা পরিষ্কার করে খাবে। আর পরিষ্কার করে খাওয়ার যদি উপায় না থাকে তাহলে পশু-পাখিদেরকে খাওয়াবে। খাবার কখনো নষ্ট বা অপচয় করবে না।

গোনাহ খতা ক্ষমা হয়

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ اُمِّ حَرَامٍ الْاَنْصَارِىْ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَتَبَّعً مَا يَسْقُطُ مِنَ السُّفْرَةِ غُفِرَ لَهٗ.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে হারাম আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ননা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি দস্তরখানে পরে যাওয়া খাবার উঠিয়ে খাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সকল গুণাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! (আল জামিউস সগীর-২/৫৮৭, মাজমাউয যাওয়ায়িদণ্ড৫/৩৪, কাশফুল আসতার-৩/৩৩৪, হিলইয়াতুল আউলিয়া-৫/২৪৬)

রুটি আসমান-যমীনের বিশেষ নিয়ামত

বিশেষত যে রুটির টুকরা বা অংশ বিশেষ দস্তরখানে পরে তা একান্ত মুহব্বত ও তা’যীম-তাকরীমের সাথে উঠিয়ে খাওয়া উচিত। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ بْنِ عَبْدِ الله رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَكْرِمُوا الْـخُبْزَ فَاِنَّهٗ مِنْ بَرَكَاتِ السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ

অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা রুটিকে সম্মান করো। কেননা নিশ্চয়ই উহা আসমান ও যমীনের বরকত তথা বিশেষ, অন্যতম শেয়ার বা নিদর্শন। (জামিউল আহাদিস-২/৫৮৭, মাজমাউয যাওয়াদি-৫/৩৪, কাশফুল আসতার-৩/৩৩৪, হিলয়াতুল আউলিয়া-৫/২৪৬, ইক্বদুল ফরীদণ্ড৮/৪)

সন্তান-সুন্দর আকৃতি বিশিষ্ট হয়

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَكَلَ مَايَسْقُطُ مِنَ الْـمَائِدَةِ خَرَجَ وَلَدَهٗ صَبَاحَ الْوُجُوْهِ وَنَفٰى عَنْهُ الْفَقْرَ.

অর্থ: রঈসুল মুফাসসিরীন, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, (সন্তানসম্ভবা মহিলা) যদি দস্তরখানায় পরে যাওয়া খাদ্য উঠিয়ে খায় তাহলে তিনি সুশ্রী-সুন্দর আকৃতি বিশিষ্ট সন্তান লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার অভাব-অনটন দূর করে সচ্ছলতা দান করবেন। সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ)

দারিদ্রতা দূর হয়, জ্ঞানী-গুণী সন্তান লাভ হয়

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَكَلَ مَايَسْقُطُ مِنَ الْـمَائِدَةِ عَاشَ فِـيْ سَعَةٍ مِّنْ رِّزْقِهٖ وَعُوْفِـيَ مِنَ الْـحُمْقِ فِـيْ وَلدِهٖ وَوَلَدِ وَلَدٍ وَفِـيْ رِوَايَةٍ جَارِهٖ وَجَارِ جَارِهٖ  ودُوَيْرَاتٍ جَارَهٗ

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুসরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দস্তরখানায় পরে যাওয়া খাদ্যা যে উঠিয়ে খাবে সে অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যতা লাভ করবে। আর তার বংশ পরস্পরায় সমস্ত সন্তান বুদ্ধিমান, আক্বল-সমঝদার ও জ্ঞানী হবে। সুবহানাল্লাহ! এমনকি তার অধীনস্থদের মধ্যে কেউ আহমক বা নির্বুদ্ধি হবে না। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَكَلَ مَايَسْقُطُ مِنَ الْـمَائِدَةِ لَـمْ يَزَلْ فِـىْ سَعَةٍ مِّنْ رِّزْقِهٖ

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দস্তরখানায় পরে যাওয়া খাবার যারা উঠিয়ে খাবে তাদের রিযিকের সচ্ছলতার মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না। সুবহানাল্লাহ! (তানযীয়াতুশ শরীয়াহ-২/২৬২, যাইলুল আলায়ি-১৩৮)

রোগণ্ডব্যাধি ভালো হয়

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ بِنْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَكَلَ مَا يَسْقُطُ مِنَ الْـخِوَانِ وَالْقَصْعَةِ اَمِنَ مِنَ الْفَقْرِ وَالْبَرَصِ وَالْـجُذَامِ وَصَرَفَ عَنْ وَلَدِهِ الْـحُمْقِ

অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দস্তরখানায় পতিত খাদ্য কিংবা পাত্রের অবশিষ্ট খাদ্য যারা খাবে তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দারিদ্রতা থেকে মুক্তিদান করবেন। সাথে সাথে কুষ্ট রোগ ও গোদ রোগ (গা ফোলা) থেকে নিরাপদ রাখবেন। সন্তানদেরকে আহমকী তথা আক্বল-সমঝহীনতা থেকে পানাহ দান করবেন। সুবহানাল্লাহ!

অজ্ঞতা দূর হয়

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

رَاٰى النَّبـِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَبَا اَيُّوْبَ الْاَنْصَارِىَّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَلْتَقِطُ نُثَارَ الْمَائِدَةِ فَقَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ فَعَلَ هٰذَا وَقَاهُ اللهُ تَعَالٰى مِنَ الْـجُنُوْنِ وَالْـجُذَامِ وَالْبَرَصِ وَالْمَاءِ الْاَصْفَرِ وَالْـحُمْقِ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ আইয়ূব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এমতাবস্থায় দেখলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ আইয়ূব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দস্তরখানায় বিক্ষিপ্তভাবে পরে থাকা খাদ্যকণা উঠিয়ে খাচ্ছেন। তিনি উনার প্রতি খুবই সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করলেন। আর ইরশাদ মুবারক করলেন, যে ব্যক্তি এইরূপ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে মস্তিষ্ক বিকৃত কুষ্ঠ রোগ, গোদ তথা পা ফোলা রোগ এবং পানিবসন্ত রোগ থেকে পানাহ বা মুক্তি দিবেন। একইভাবে অজ্ঞতা বা জিহালতী থেকে পানাহ দান করবেন। সুবহানাল্লাহ! (মাকারিমুল আখলাক্ব-১৪৫)

ইলিম, আক্বল, সমঝ বৃদ্ধি পায়

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ করে ইরশাদ মুবারক করেন-

كُلْ مَا وَقَعَ تَـحْتَ مَائِدَتِكَ فَاِنَّهٗ يُنْفِىْ عَنْكَ الْفَقْرَ وَهُوَ مُهُوْرُ الْـحُوْرِ الْعَيْنَ وَمَنْ اَكَلَهٗ حَشٰى قَلْبَهٗ عِلْمًا وَّحِلْمًا وَّاِيْـمَانًا وَّنُوْرًا.

অর্থ: আপনার দস্তরখানায় যা পরে, তা উঠিয়ে খাবেন। কারণ, উহা অভাব-অনটন দূর করে দেয়। উহা জান্নাতী হুরগণের মোহর। যারা দস্তরখানায় পতিত খাবার উঠিয়ে খাবেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের ক্বলব বা অন্তরকে ইলিম, হিলম বা সহনশীলতা, ঈমান ও নূর দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!

সর্বরোগের মহা ঔষধ

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

كُلْ مَا يَسْقُطُ مِنَ الْـخِوَانِ فَاِنَّهٗ شِفَاءٌ مِّنْ كُلِّ دَاءٍ

অর্থ: দস্তরখানায় পতিত খাবার উঠিয়ে খাও। কেননা, তা সমস্ত রোগের শিফাহ বা রোগ মুক্তি।

কোমর ব্যাথা, গীরার ব্যাথা ভালো হয়

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ছালিহ খাছয়ামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

شَكَوْتُ اِلٰـى اَبِـىْ عَبْدِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَجَعَ الْـخَاصِرَةِ فَقَالَ عَلَيْكَ بِـمَا يَسْقُطُ مِنَ الْـخِوَانِ فَكُلْهُ قَالَ فَفَعَلْتُ فَذَهَبَ عَنِّـىْ

অর্থ: আমি একদিন ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আমার কোমর ব্যাথার কথা বললাম। তিনি ইরশাদ মুাবরক করেন, আপনার দস্তরখানায় পতিত খাবার উঠিয়ে খাওয়া উচিত। আমি তখন উনার নির্দেশ মুবারক বাস্তবায়ন করলাম। দস্তরখানা থেকে খাবার উঠিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। আর কোমর ব্যাথা ভালো হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!

একইভাবে হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার শরীরের ডান ও বাম পার্শ্বে ব্যাথা হলো। আমি তখন ঐ কাজটি করলাম অর্থাৎ দস্তরখানায় পতিত খাবার উঠিয়ে খেলাম। আর আমার ব্যাথা দূরীভুত হলো। সুবহানাল্লাহ!

নেকী বৃদ্ধি পায়

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ وَّجَدَهٗ كَسْرَةَ فَاَكَلَهَا كَانَتْ لَهٗ حَسَنَةٌ وَّمَنْ وَجَدَهَا فِـىْ قَذْرٍ فَغَسَلَهَا ثُـمَّ رَفَعَهَا كَانَتْ لَهٗ سَبْعُوْنَ حَسْنَةً

অর্থ: যে ব্যক্তি দস্তরখানায় পতিত খাদ্যাংশ পায় অতঃপর তা উঠিয়ে খায় তার জন্য একটি নেকী রয়েছে। আর যদি সে খাদ্যে ধুলা-বালু মিশ্রিত থাকে, আর ধৌত করে খায় তবে সে সত্তরটি নেকি লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

জান্নাতী হওয়া যায়

বাযযার ও তবারানী কিতাবে বর্ণিত আছে, একদিন সাইয়্যিদু শাবাবী আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি অযুখানায় প্রবেশ করলেন। দেখতে পেলেন, (ফল জাতীয়) কোন খাবার কিংবা তার কিছু অংশ ড্রেনে বা পানি চলাচলের স্থানে পরে আছে। তিনি তা তুলে ভালোভাবে ধৌত করলেন। অতঃপর খাদিমকে দিয়ে বললেন, আপনার কাছে রাখুন। আমার অযু শেষ হলে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন।

তিনি অজু শেষ করে, খাদিমকে বললেন, খাবারটি দিন। খাদিম বললেন, হে আমার মনিব! আমি তা খেয়েছি। তিনি উনাকে বললেন, যান! আমি আপনাকে আযাদ বা মুক্ত করে দিলাম। খাদিম বললেন, হে আমার মনিব! কোন কারণে আমাকে আযাদ করে দিলেন? তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ উম্মু আবীহা নূরুর রবিয়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার কাছে শুনেছি।

তিনি উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে শুনেছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ اَخَذَ لُقْمَةً اَوْ كَسْرَةً مِنْ مَّـجْرَى الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ فَاَخَذَهَا فَاَمَاطَ عَنْهَا الْاَذٰى وَغَسَلَهَا غَسْلًا نِعِمَّا ثُـمَّ اَكَلَهَا لَـمْ تَسْتَقِرْ فِـىْ بَطْنِهٖ حَتّٰـى يُغْفَرَ لَهٗ. فَمَا كُنْتُ لَاَسْتَخْدِمُ رَجُلًا مِّنْ اَهْلِ الْـجَنَّةِ

অর্থ: ড্রেনে বা পানির নালায় পতিত কোন খাদ্য-দ্রব্য যদি কেউ উঠায়, ময়লা, ধুলা-বালি ছাড়িয়ে ভালোভাবে ধৌত করে খায়, তাহলে সেই খাদ্য পেটে প্রবেশ করার সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, আমি একজন জান্নাতী লোক থেকে খিদমত নিতে পারি না। সেজন্যই আপনাকে আযাদ বা মুক্ত করে দিলাম। সুবহানাল্লাহ (আবূ ইয়া’লা)

খাদ্য উঠিয়ে খাওয়ার কাইফিয়াত বা পদ্ধতি

দস্তরখানা থেকে খাবার উঠিয়ে খাওয়া সুন্নত। তার কাইফিয়াত বা পদ্ধতি হচ্ছে বাম হাত দ্বারা খাবার উঠিয়ে, ডান হাতে রাখবে। অতঃপর ডান হাত দ্বারা খেতে হবে। বাম হাত দ্বারা উঠিয়ে সরাসরি মুখে দিবে না। কেননা বাম হাত দ্বারা খাবার খাওয়া নিষেধ। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাবারের সময় প্রয়োজনে দু’হাত মুবারক ব্যবহার করেছেন। তবে বাম হাত মুবারক দ্বারা খাবার খাননি।

উল্লেখ্য যে, খাদ্য খাবার সময় ডান হাত দ্বারা পেয়ালা বা গ্লাস ধরলে ডান হাতের খাদ্য কণা ইত্যাদি পেয়ালা বা গ্লাসে লেগে যায়। যার ফলে পেয়ালা নোংরা বা অরুচিকর হয়। তাই পেয়ালা বা গ্লাস কিংবা অন্য কিছু বাম হাত দিয়ে ধরতে হয়। কিন্তু ডান হাত পেয়ালা কিংবা গ্লাসের সাথে লাগিয়ে দিতে হবে। একইভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য।

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ কাওছার আহমদ

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম