নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “মানবীয় দূর্বলতামুক্ত ছিলেননা, তাই তিনি মানবিক দূর্বলতার বশিভূত হয়ে গুনাহ করেছেন” নাউযুবিল্লাহ, নাঊযুবিল্লাহ, নাঊযুবিল্লাহ! বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত

সংখ্যা: ২৪০তম সংখ্যা | বিভাগ:

 وما محمد الا رسول

যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত রসূল ব্যতীত অন্যকিছু নন।”

বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বার কেউ কেউ বলে ও লিখে থাকে যে, “ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “মানবীয় দূর্বলতামুক্ত ছিলেননা, তাই তিনি মানবিক দূর্বলতার বশিভূত হয়ে গুনাহ করেছেন” নাউযুবিল্লাহ, নাঊযুবিল্লাহ, নাঊযুবিল্লাহ! বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত” ।

আর এ ব্যাপারে তারা “মুসলিম শরীফ” উনার নিম্নে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে।

عن حضرت رافع بن خديج رضى الله تعالى عنه قال قدم نبى الله صلى الله عليه وسلم المدينة وهم يأبرون النخل فقال ما تصنعون قالوا كنا نصنعه قال لعلكم لولـمتفعلوا كان خيرا فتركوه فنقصت قال فذكروا ذلك له فقال انما انا بشر اذا امرتكم بشئ من امر دينكم فخذوا به واذا امرتكم بشئ من رائى فانما انا بشر.

তারা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার এরূপ মনগড়া অর্থ করে থাকে- “হযরত রফে’ বিন খাদীজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ-এ গমন করে দেখলেন যে, পবিত্র মদীনাবাসী উনারা খেজুর গাছে তা’বির বা পরাগায়ন করে থাকেন, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনারা এটা কি করেছেন?’ উনারা বললেন, ‘আমরা খেজুর গাছে তা’বির বা পরাগায়ন করে থাকি।’ তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যদি আপনারা এটা না করতেন তবেই ভালো হতো। তখন  পবিত্র মদীনাবাসী উনারা তা’বির করা বন্ধ করে দিলেন। ফলে ফসল কম হলো। রাবী বা বর্ণনাকারী তিনি বলেন, তারা ফলন কম হওয়ার কথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানালেন তিনি তৎশ্রবণে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি বাশার, কাজেই আমি যখন আপনাদেরকে পবিত্র দ্বীন সম্পর্কে কোনো নির্দেশ মুবারক দেই তখন আপনারা তা গ্রহণ করবেন। আর যখন আমি আমার নিজের থেকে কোনো কিছু বলি তখন (আপনারা জেনে রাখুন) আমি বাশার।”

তারা উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিন্দিগী মুবারক দুভাগে বিভক্ত। ১. মানবীয় বা  ব্যক্তিগত যিন্দিগী. ২. নুবুওওয়াত ও রেসালতী যিন্দিগী। নাঊযুবিল্লাহ।

আমরা  উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা উল্লেখ পূর্বক জরুরী কিছু বিষয় আলোচনা করবো। যা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হবে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানবীয় বা ব্যক্তিগত যিন্দিগী বলতে কোন যিন্দিগী ছিল না। বরং উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই হচ্ছে নুবুওওয়াতী ও রিসালতী যিন্দিগী মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

এ বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদেরকে প্রথমেই জানতে হবে যে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখন থেকে নবী?

এর জবাবে বলতে হয় যে, পবিত্র হাদীছে কুদছী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

كنت كنزا مـخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الـخلق لاعرف.

অর্থ: “আমি গুপ্ত ছিলাম। অর্থাৎ আমার রুবুবিয়াত মুবারক পুশিদা ছিল। যখন আমার মুহব্বত হলো যে, আমি প্রকাশিত হই, তখনই আমি সৃষ্টি করলাম (আমার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে)।” (আল মাকাসিদুল হাসানা ৮৩৮, কাশফুল খিফা-২০১৩, আসনাল মুত্বালিব -১১১০, তমীযুত্তীব-১০৪৫, আসরারুল মারফুয়া-৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ, আদ্দুরারুল মুন্তাছিরা-৩৩০, আত্তাযকিরা ফী আহাদীছিল মুশতাহিরা)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت اول النبين فـى الـخلق واخرهم فى البعث.

অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম নবী ও রসূল হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি সকল হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে। (তাফসীরে বাগবী শরীফ ৫/২৩২, দুররে মানছুর শরীফ ৫/১৮৪, শেফা শরীফ ১/৪৬৬, মানাহিলুচ্ছফা শরীফ ৫/৩৬, কানযুল উম্মাল শরীফ ৩১৯১৬, দাইলামী শরীফ ৪৮৫০) মিরকাত ১১/৫৮)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ميسرة الفجر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نبيا  وادم بين الروح والجسد.

অর্থ: “হযরত মাইসারাতুল ফজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তখনো নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি রূহ ও শরীর মুবারকে ছিলেন।” (তারীখে বুখারী শরীফ, আহমদ শরীফ, আলহাবী শরীফ, ইত্তেহাফুচ্ছাদাত শরীফ, তাযকেরাতুল মাউজুয়াত শরীফ, কানযুল উম্মাল শরীফ, দাইলামী শরীফ, ত্ববরানী শরীফ, আবু নঈম শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ ১১/৫৮)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

كنت نبيا وادم بين الـماء والطين.

অর্থ: “আমি তখনো নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি পানি ও মাটিতে ছিলেন।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ ১১/৫৮)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت مطرف بن عبد الله بن الشخير قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نبيا بين الروح والطين من ادم عليه السلام.

অর্থ: “হযরত মুতররফ বিন আব্দুল্লাহ্ ইবনিশ শিখখীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তখনো নবী, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি রূহ ও মাটিতে ছিলেন।” (ইবনে সা’দ শরীফ, কানযুল উম্মাল শরীফ ৩২১১২)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

كنت نبيا ولاماء ولاطين.

অর্থ : “আমি তখনো নবী ছিলাম, যখন পানিও ছিল না, মাটিও ছিল না।” (মিরকাত শরীফ ১১/৫৮)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টির পূর্বে সম্মানিত নবী ও রসূল হিসাবে সৃষ্টি হয়েছেন। অর্থাৎ তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রথম সৃষ্টি।

মূলত তিনি নবীউল্লাহ, রসূলুল্লাহ ও হাবীবুল্লাহ হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন। এক মুহূর্তও তিনি পবিত্র নুবুওওয়াত ও মুবারক রিসালত থেকে পৃথক ছিলেন না। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানবীয় বা ব্যক্তিগত জিন্দেগী বলতে কিছু ছিলো না, উনার গোটা জীবন মুবারকই ছিলো নুবুওওয়াতী ও রিসালতী জিন্দেগী মুবারক।

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وما محمد الا رسول.

অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ব্যতীত অন্য কিছু নন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১৪৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وما ينطق عن الـهوى ان هو الا وحى يوحى.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত নিজের থেকে কোনো কথা বলেন না।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৩, ৪)

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

الا وانا حبيب الله.

অর্থ : “সাবধান হয়ে যাও, আমি হলাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (তিরমিযী শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন। আর তিনি সম্পূর্ণরূপে ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

কাজেই যিনি সম্মানিত নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবে সৃষ্টি হয়েছেন এবং যিনি সম্পূর্ণ জিন্দেগী মুবারক পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাহলে উনার সম্পর্কে একথা কি করে বলা যেতে পারে যে, উনার মানবীয় বা ব্যক্তিগত জিন্দেগী রয়েছে? নাউযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে উনার সম্পূর্ণ জিন্দেগী মুবারকই নুবুওওয়াতী, রিসালতী ও হাবীবী জিন্দেগী মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, যদি বলা হয় কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনার ব্যক্তিগত জিন্দেগী রয়েছে, তাহলে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি কখন হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম হিসেবে থাকেন আর কখন সাধারণ মানুষ বা ব্যক্তি হিসেবে থাকেন? অর্থাৎ তিনি কত সময়ব্যাপী হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আর কত সময়ব্যাপী মানুষ বা ব্যক্তি হিসেবে ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করেন? যা কস্মিনকালেও প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ দ্বারা প্রমাণ হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি চব্বিশ ঘণ্টাই পবিত্র ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে। এমনকি স্বপ্নেও উনাদের প্রতি পবিত্র ওহী মুবারক নাযিল হতো ও হয়েছে। যার কারণে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বপ্নও পবিত্র ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, এটাই প্রমাণিত হলো যে, কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ব্যক্তিগত জিন্দেগী বলতে কোনো জিন্দেগীই ছিল না। উনাদের সম্পূর্ণ জিন্দেগী মুবারকই ছিলো নুবুওওয়াতী ও রিসালতী জিন্দেগী মুবারক। সুতরাং ব্যক্তিগত জিন্দেগী ছিল বলে মত পোষণ করা ও বিশ্বাস করা উভয়টাই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

এরপর আমাদের যে বিষয়টা জানতে হবে তাহলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি সম্ভাবনাময় কোনো কথা বলেছেন? নাউযুবিল্লাহ! কস্মিনকালেও না।

‘মুসলিম শরীফ’ উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে لعل শব্দ রয়েছে। অনেকে এ শব্দের অর্থ করে থাকে সম্ভবত। কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার একটা উছূল রয়েছে তা না জানার কারণে তারা এর অর্থ ‘সম্ভবত’ করে থাকে। সে উছূলটি হচ্ছে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত لعل শব্দটি ظنـى বা সম্ভবত অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে يقينـى বা নিশ্চিত অর্থে ব্যবহৃত হবে।

কারণ, মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন,

علم الغيب والشهادة.

অর্থাৎ- “মহান আল্লাহ পাক তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সম্পর্কে সম্মক অবগত।” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২২)

কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো কথায় সম্ভাবনাময় অর্থাৎ হবে বা হতে পারে এ ধরনের আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরী। মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ইলম উনাকে যন্নী বা সম্ভাবনাময় মনে করাও কাট্টা কুফরী। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ইলম হচ্ছে হাক্বীক্বী ইয়াক্বীনী ইলম। ঠিক মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও কোনো কথায় সম্ভাবনাময় অর্থাৎ হবে বা হতে পারে এ ধরনের আক্বীদা পোষণ করাও কাট্টা কুফরী। কারণ, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পবিত্র ওহী মুবারক উনার ইলমকে যন্নী বা সম্ভাবনাময় মনে করাও কাট্টা কুফরী। উনার ইলম মুবারকও ইয়াক্বীনী ইলম মুবারক।

অতএব, উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে لعل শব্দটি ইয়াক্বীনী বা নিশ্চিত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যন্নী বা সম্ভাবনা অর্থে নয়।

এবার আসুন তা’বীর সম্পর্কিত প্রদত্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা কি আমরা তা জেনে নেই

“তা’বীর” সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

عن حضرت رافع بن خديج رضى الله تعالى عنه قال قدم نبى الله صلى الله عليه وسلم المدينة وهم يأبرون النخل فقال ما تصنعون قالوا كنا نصنعه قال لعلكم لو لمتفعلوا كان خيرا فتركوه فنقصت قال فذكروا ذلك له فقال انما انا بشر اذا امر تكم بشىء من امر دينكم فخذوابه واذا امرتكم بشىء من رائى فانما انا بشر.

অর্থ: “হযরত রাফে’ বিন খাদীজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ নিয়ে দেখলেন যে, পবিত্র মদীনাবাসীগণ খেজুর গাছে তা’বীর বা পরাগায়ন করে থাকেন, তিনি উনাদেরকে বললেন,  আপনারা এটা কি করেন? উনারা বললেন, আমরা খেজুর গাছে তা’বীর বা পরাগায়ন করে থাকি। তখন তিনি বললেন, যদি আপনারা এটা না করতেন তবে ভালো হতো। তখন উনারা পরাগায়ন করলেন না। অতঃপর ওই বছরে ফসল কম হলো। (প্রকৃতপক্ষে ফসল কম হয়নি, বরং মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে যা নির্দিষ্ট ছিল তাই হলো; তবে পূর্বের বৎসর থেকে কিছুটা কম হয়েছিল। কারণ, কোনো বাগান বা কোনো ক্ষেত খামারে প্রতি বৎসরই একই সমান ফসল ফলে না। বরং কখনো বেশি হয় আবার কখনো কম হয় এটাই স্বাভাবিক।) রাবী বলেন, উনারা ফলন কম হওয়ার কথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানালেন, সেটা শুনে তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি হলাম হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল। আমার কথাই মহান আল্লাহ পাক উনার কথা। কাজেই আমি যখন আপনাদেরকে অবশ্যই পালনীয় অর্থাৎ ফরয-ওয়াজিব সম্পর্কে আদেশ করি তখন আপনারা তা অবশ্যই পালন করবেন। আর যখন ইখতিয়ারভুক্ত বিষয় অর্থাৎ নফল সম্পর্কে আদেশ করি বা বলি তখন তা পালন করা আপনাদের ইখতিয়ার থাকবে। তবে তা পালন করাই উত্তম এবং ফযীলতের কারণ। জেনে রাখুন, নিশ্চয়ই আমি সাইয়্যিদুল বাশার, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন ও শারে’ বা শরীয়ত প্রণেতা অর্থাৎ আমার কথা-কাজ ও আদেশ-নিষেধ মুবারকই শরীয়ত। সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

প্রকৃতপক্ষে এখানে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা হলো যে, মদীনাবাসীগণ সে বছর তাদের খেজুর গাছ থেকে যে ফল পেয়েছিলেন তা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’বীর সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফ আমল করার কারণেই অর্থাৎ তা’বীর না করার কারণেই। তা’বীর করলে হয়তো উনারা সে বৎসর কোনো ফলই পেতেন না। কারণ, গাছে ফসল বেশি হওয়া বা না হওয়া নির্ভর করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রহমত ও ইহসান মুবারক উনার উপর। এ ক্ষেত্রে তা’বীরের কোনো ক্ষমতা নেই। এটা আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত।

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রথমত: পবিত্র আক্বাইদ শরীফ উনার বিষয় তথা পবিত্র তাওহীদ শিক্ষা দিলেন। অর্থাৎ রিযিকের মালিক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি। তা’বীর বা পরাগয়ন রিযিকের মালিক নয়। অর্থাৎ কেউ যদি এ আক্বীদা পোষণ করে যে, “তা’বীর ব্যতীত খেজুর গাছে ফল হবে না” তাহলে সেটা কাট্টা কুফরী হবে। কারণ, ফল বা রিযিক দেয়া বা না দেয়ার  মালিক স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি।

দ্বিতীয়ত: পবিত্র আক্বাইদ শরীফ উনার বিষয় তথা পবিত্র রিসালত শরীফ শিক্ষা দিলেন অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে শারে’ বা শরীয়ত প্রণেতা এবং তিনি যে সমস্ত কিছু বণ্টনকারী সেটা। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انما انا قاسم والله يعطى.

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হলেন দাতা আর আমি হলাম বণ্টনকারী।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

তৃতীয়ত: পবিত্র আক্বাইদ শরীফ উনার বিষয় হলো: এটা বিশ্বাস করা যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারক বা নির্দেশ মুবারক প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনারই আদেশ মুবারক বা নির্দেশ মুবারক। আর তা’বীর সংক্রান্ত এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শেষাংশে ফরয ও নফলের পার্থক্য বুঝানো হয়েছে। ফরয ইবাদত যেহেতু অবশ্যই করণীয় তাই তা আঁকড়ে ধরতে হবে এবং অবশ্যই পালন করতে হবে। আর নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক বটে তবে তা নফল হওয়ার কারণে তা পালনের ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শারে’ বা শরীয়ত প্রণেতা হওয়ার কারণে ইখতিয়ার দিলেন। এখানে নুবুওওয়াতী ও রিসালতী জিন্দেগী মুবারক উনার কথাই বলা হয়েছে, এখানে মানবীয় বা ব্যক্তিগত জিন্দেগীর কোনো কথাই বলা হয়নি। বরং এখানে মানবীয় বা ব্যক্তিগত জিন্দেগীর কথা বলা এবং সে প্রসঙ্গ আনাটাই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

কারণ, হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানবীয় বা ব্যক্তিগত কোনো জিন্দেগী নেই। উনাদের সম্পূর্ণ জিন্দেগী মুবারকই হচ্ছে নুবুওওয়াতী বা রিসালতী জিন্দেগী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

উপরে উল্লেখিত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আগমনের পর দুনিয়াবী চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ঘোষণা করার পূর্বেও তিনি নবী ও রসূল ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নুবুওওয়াতী যিন্দেগী মুবারক ব্যতীত আর কোনো যিন্দেগীই নেই। কারণ তিনি নবী হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন।

হ্যাঁ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে সম্মানিত নুবুওওয়াত উনার আনুষ্ঠানিকতা ঘোষণার পূর্ববর্তী যিন্দেগী অনুসরণীয় কি-না?

এর জবাবে বলতে হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে অবস্থানকাল অর্থাৎ তেষট্টি বছর বয়স মুবারক-এর সম্পূর্ণটাই অনুসরণীয়। তবে এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা সবটাই কি আমল করবো?

এর জবাব হচ্ছে, সম্মানিত নুবুওওয়াত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পর যে তেইশ বছর যিন্দেগী মুবারক তার সম্পূর্ণটাই অনুসরণীয় হওয়ার পরও তা আমল করা জায়িয নেই।

যেমন, “বুখারী শরীফ-এ” বর্ণিত রয়েছে, “নামায ফরয হওয়ার পর প্রথমদিকে নামাযে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কথা বলেছেন, পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ বর্তমানে কেউ যদি নামাযরত অবস্থায় কথা বলে, তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। প্রত্যেকটি আমলই অনুরূপ। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যেকটি আমল সম্পর্কে শেষ যে হুকুম দিয়েছেন সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। পূর্বেরটি হচ্ছে মানসূখ অর্থাৎ মাশরূহ বা ব্যাখ্যাকৃত আর পরবর্তীটি হচ্ছে নাসিখ অর্থাৎ শারিহ বা ব্যাখ্যাকারী।

অতএব, মাশরূহ ও শারিহ প্রত্যেকটিই অনুসরণীয় তবে শারিহ অনুযায়ী আমল করতে হবে।

যারা বলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রাপ্তির পূর্বের যিন্দেগী অনুসরণীয় নয়; তাদেরকে প্রশ্ন  করতে হয়, বর্তমানে যদি কেউ আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বের যিন্দেগী মুবারকের অনুসরণে “হিলফুল ফুযূল” করে তাহলে তা কি জায়িয হবে? অথবা নাজায়িয হবে? তারা এর জবাবে বলবে, অবশ্যই জায়িয হবে। কারণ এটা নাজায়িয হওয়ার পক্ষে কোনো আদেশ বা নির্দেশ মুবারক নাযিল করা হয়নি। অতএব, অন্যান্য বিষয়গুলোও অনুরূপ।

সুতরাং, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বের যিন্দেগী অনুসরণীয় নয়- এ কথা যারা বলে, তারা গুমরাহ ও বিভ্রান্ত সেই জন্য তারা সম্পূর্ণই মনগড়াভাবে বলে থাকে। তাদের এ বক্তব্যের পক্ষে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস থেকে একটা দলীলও তারা পেশ করতে পারবে না।

অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোটা যিন্দেগী মুবারকই অনুসরণীয়।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: “তোমাদের জন্য তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ২১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وان تطيعوه تـهتدوا.

অর্থ: “তোমরা যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করো তবেই হিদায়েত লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وما اتاكم الرسول فخذوه وما نـهاكم عنه فانتهوا

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের জন্য যা এনেছেন তা আঁকড়ে ধরো এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বকালে সবার জন্য সব বিষয়ে অনুসরণীয়। অর্থাৎ তিনি যা এনেছেন তা আঁকড়ে ধরতে হবে এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ তিনি নিজ থেকে কোনো কথা বলেননি এবং কাজও করেননি।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وما ينطق عن الـهوى ان هو الا وحى يوحى

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত নিজের থেকে কোনো কথা মুবারক বলেন না।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩, ৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ যদিও নাযিল হয়েছে সম্মানিত নুবুওওয়াত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পর কিন্তু এটা মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম যা সম্মানিত লওহে মাহফুয উনার মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে। এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মিছদাক হচ্ছেন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। অর্থাৎ সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণার পর তেইশ বছর; এবং তার পূর্বে চল্লিশ বছর এ তেষট্টি বছর বয়স মুবারকই এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মিছদাক। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তেষট্টি বছর যিন্দেগী মুবারকে কোনো কাজ, কোনো কথা, কোনো আদেশ-নিষেধ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক ব্যতীত করেননি। প্রত্যেকটিই মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশেই করেছেন। তবে চল্লিশ বছর বয়স মুবারকের পরে যা করেছেন, বলেছেন তা আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক ঘোষণার কারণে ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত বলা হয়। আর পূর্ববর্তী যিন্দেগী মুবারকে যা করেছেন, বলেছেন তা সম্মানিত নুবুওওয়াত উনার আনুষ্ঠানিকতা ঘোষণা না হওয়ার কারণে ওহী মুবারক বলে উল্লেখ করা হয়নি। তবে তাও মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকেই করেছেন।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণা করার পূর্বে কোনো কাজ মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের খিলাফ করেছেন এমন কোনো দলীল কেউ পেশ করতে পারবে কি? কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-

فى عصمة النبى صلى الله عليه وسلم عن سائر الذنوب قبل الوحى وبعد الوحى

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক নাযিল হওয়ার পূর্বে ও পরে সকল প্রকার গুনাহ থেকে মা’ছুম বা নিস্পাপ ছিলেন।”

আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা করেছেন, বলেছেন, পরিধান করেছেন, খেয়েছেন, পান করেছেন ইত্যাদি সবকিছুই উত্তম থেকে উত্তমতর ছিলো। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انا اعطينك الكوثر

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সম্মানিত কাওছার মুবারক হাদিয়া করেছি।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১)

“কাওছার”-এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়- প্রথমতঃ কাওছার বলা হয়েছে হাউজে কাওছারকে। যা খাছ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। যার পানি পান করলে সম্মানিত জান্নাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পানির পিপাসা লাগবে না।

দ্বিতীয়তঃ কাওছার বলা হয়েছে খইরে কাছীর। অর্থ যা অতি উত্তম, অনেক ভালো। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যা সর্বকালের জন্য সবদিক থেকে উত্তম তাই হাদিয়া করেছেন। তা খাদ্য-পানীয় হোক অথবা আদেশ-নিষেধ হোক।

যেমন, তিনি যা ব্যবহার করেছেন বা যা উনার ব্যবহারে এসেছে। তিনি যা খেয়েছেন, পান করেছেন, যেখানে অবস্থান করেছেন, তিনি যা আদেশ-নিষেধ মুবারক করেছেন ইত্যাদি সমস্ত কিছুই সমস্ত কায়িনাতের মধ্যে সর্বকালের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ। সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বে হোক অথবা পরে হোক। কারণ পবিত্র আয়াত শরীফ যদিও পরবর্তীতে নাযিল হয়েছে কিন্তু তা মহান আল্লাহ পাক উনার কালামের অন্তর্ভুক্ত যা অনাদি অনন্তকালের জন্য একই হুকুম রাখে।

যার কারণে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح.

অর্থ: “হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রত্যেকেই ছগীরা, কবীরা ও কুফরী গুনাহ থেকে পবিত্র। এমনকি অপছন্দীয় কাজ থেকেও পবিত্র।”

অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানবীয় বা ব্যক্তিগত কোন যিন্দিগী ছিল না উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই নুবুওওয়াতী ও রিসালতী যিন্দিগী মুবারক। শুধু তাই নয় উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বে ও পরে উভয় যিন্দিগী মুবারকেই তিনি নবী ও রসূল এবং অনুসরণীয়ও।

কাজেই, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “মানবীয় দূর্বলতামুক্ত ছিলেননা, তাই তিনি মানবিক দূর্বলতার বশিভূত হয়ে গুনাহ করেছেন” নাউযুবিল্লাহ, নাঊযুবিল্লাহ, নাঊযুবিল্লাহ! বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরী।”

অতএব যারা এরূপ আক্বীদা পোষন করবে এবং যারা এরূপ আক্বীদা সমর্থন করবে তারা হলো কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী।

{দলীলসমূহ : তাফসীরে বাইযাবী, দুররে মানছূর, তাফসীরে জালালাইন, কামালাইন, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে গরায়িব, রহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, যাদুল মাছীর, তাফসীরে মাওয়াহিব, তাফসীরে দুররে মাছূন, তাফসীরে কাশশাফ, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে খাযীন, আবী সউদ, বুখারী শরীফ, মুসলিস শরীফ, আহমদ, তরিমিযী, শামায়িলে তিরমিযী, দাইলামী, মিশকাত, কানযুল উম্মাল, মুস্তাদরাকে হাকীম, আবূ নঈম, ত্ববারানী, তারীখে বুখারী, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, আফযালুল ক্বোরা, মুতালউল মাসাররাত, তারীখুল খামীছ, মাওয়াহিব, শরহে যুরকানী, মাদারিজুন নুবুওওয়াহ, নূরে মুহম্মদী, ফাতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ, নশরুত তীব, আলহাবী, ইত্তিহাফুচ্ছাদাত, তাযকেরাতুল মাউজুয়াত, মরিকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, তা’লীকুছ ছবীহ, ত্বীবী, আল মাকাসিদুল হাসানা, কাশফুল খফি, আসনাল মুত্বালিব, তমীযুত্তীব, আসরারুল মারফুআ, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ, আদ দুরারুল মুনতাশিরা, আত তাযকিরা ফি কামিল, শেফা, মানাহিলুছ ছফা, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ইত্যাদী}

আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম