নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যুগে যুগে বিরুদ্ধাচরণ এবং তার নির্মম পরিণতি

সংখ্যা: ২৪০তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ان الذين يحادون الله ورسوله اولئك فى الاذلين. كتب الله لاغلبن انا ورسلى ان الله قوى عزيز.

অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার রিরুদ্ধাচরণ করে তারা হবে চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি সিদ্ধান্ত করেছেন যে, আমি এবং আমার রসূল আলাইহিমুস সালামগণই বিজয়ী হবো। আর মহান আল্লাহ পাক মহা শক্তিধর ও পরামক্রমশালী।” (পবিত্র সূরা মুজাদালাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০, ২১)

যুগে যুগে এই পবিত্র বাণী মুবারক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যারা আবু জাহিল, আবু লাহাব, উতবা, শায়বা, মুগীরা, উবাই ইবনে সুলূল সহ সকল কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, ইহুদী, নাসারা যারা বিরোধিতা করেছে তারা সবাই ধ্বংস হয়েছে। দুনিয়াতে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির দাপট ধুলিসাৎ হয়েছে। তারা হয়েছে লাঞ্ছিত, ধিকৃত, অপমানিত, পর্যুদস্ত। পরিণত হয়েছে নিকৃষ্ট জীবে, জাহান্নামের কীটরূপে উত্তরণকালে তাদের অনুসারীদেরও একই পরিণতি হয়েছে এবং হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই হয়েছেন সর্বক্ষেত্রে বিজয়ী। পাশাপাশি উনাদের সাথে তায়াল্লুক, নিছবত, নৈকট্যযুক্ত ব্যক্তিত্বগণ উনারাও হয়েছেন এবং হবেন বিজয়ীগণের অন্তর্ভুক্ত।

যুগে যুগে যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করেছে গভীর ষড়যন্ত্রের ঘৃণ্যজাল বিস্তার করেছে তাদের মধ্যে ইহুদী ও মুশরিক এই সম্প্রদায়ই প্রধান ও অগ্রণী। এরা ঈমানদারগণ উনাদেরও শত্রু বটে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا

অর্থ: “আপনি ঈমানদারগণের জন্য সবেচেয়ে বড় শত্রুরূপে পাবেন ইহুদীদেরকে। আর পাবেন যারা মুশরিক তাদেরকে।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)

এরা যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনে না, জানে না তা নয়। তারা জেনে, শুনে, বুঝে স্বেচ্ছায় উনার বিরোধীতায় লিপ্ত হয়েছিল। এমনকি এদের এই বিরোধীতার নির্মম পরিণতি কি? তাও তারা জানতো। তাদের উপর নাযিলকৃত তাওরাত কিতাবে উনার পরিচয় মুবারক, গুণাবলী মুবারক, খুছূছিয়ত বা বৈশিষ্ট মুবারক স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

الذين اتيناهم الكتاب يعرفونه كما يعرفون ابناءهم وان فريقا منهم ليكتمون الحق وهم يعلمون.

অর্থ: “আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, যারা আহলে কিতাব তারা উনাকে (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চিনে যেমন চিনে তারা তাদের সন্তানদেরকে। আর নিশ্চয়ই তাদের একটি দল জেনে শুনে সত্যকে গোপন করে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৬)

তাদের এই মহাসত্য বিষয়কে গোপন করা, উনার বিদ্বেষ পোষণ, তাদের মিথ্যা জল্পনা-কল্পনা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে। তারা নফসের বশীভুত হয়েই একাজে লিপ্ত হয়েছে।

ইহুদী গোত্র বনি নযীর, যারা জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উনার সন্তান সন্তুতিদের দ্বারা উদ্ভাবিত। তাদের পিতৃপুরুষ পবিত্র তাওরাত শরীফের আলিম ছিলেন। পবিত্র তাওরাত শরীফে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারকের সংবাদ, ছানা-ছিফত, আকৃতি ও প্রকৃতি মুবারকের আলামত বর্ণিত আছে। এমন কি উনার পবিত্র মক্কা শরীফ বিলাদত শরীফ গ্রহণ এবং পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত মুবারকের কথাও উল্লেখ আছে। এই সম্মানিত পরিবার শেষ নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার আশায় সিরিয়া থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। উনাদের বর্তমান লোকদের মধ্যেও কিছু সংখ্যক পবিত্র তাওরাত শরীফের আলিম ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক আনার পর, আলামত দেখে উনাকে চিনেও নিয়েছিলেন যে, ইনিই শেষ নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সাল্লাম।

কিন্তু তাদের ধারণা ছিল যে, শেষ নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উনার বংশধর থেকে তাদের পরিবারভুক্ত হবেন। তা না হয়ে বনী ই¯্রাইলের পরিবর্তে বনী ইসমাইলের বংশে প্রেরিত হয়েছেন। এই প্রতিহিংসা তাদেরকে বিশ্বাস স্থাপনে বাধা দিল।

এতদসত্ত্বেও তাদের অধিকাংশ লোক জানত এবং চিনতো যে, ইনি শেষ নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক করতঃ পবিত্র মদীনা শরীফ তাশরীফ নেয়ার পর পবিত্র মদীনা শরীফ এবং পাশ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকারী ইহুদী গোত্রগুলো উনার সাথে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হলো।

সম্মানিত বদর জিহাদে সম্মানিত মুসলমানগণ উনাদের বিস্ময়কর বিজয় এবং মুশরিকদের শোচনীয় পরাজয় দেখে তাদের বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই বাহ্যিক জয় পরাজয়কে সত্য ও মিথ্যা চিনার মাপকাঠি করাটাই ছিল তাদের অসার ও দুর্বল ভিত্তি। যার ফলে সম্মানিত ওহুদ জিহাদে ৭০ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের শাহাদাত মুবারক দেখে তাদের বিশ্বাসে ফাটল ধরলো। এর পরেই তারা মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব শুরু করে দিল।

সেই শান্তি চুক্তিতে উল্লেখ ছিল যে, ইহুদীরা সম্মানিত মুসলমানগণ উনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে না। আর উনাদের উপর কোন আক্রমণকারীদের সাহায্যও করবে না। ইহুদীরা আক্রান্ত হলে মুসলমানগণ তাদেরকে সাহায্য করবে। কেউ হতাহত হলে সম্মিলিতভাবে তার রক্তপণ বা মুক্তিপণ দিবে।

পবিত্র মদীনা শরীফ হতে দুই মাইল দুরে বনী নযীর গোত্রের বসতি। তাদের দুর্ভেদ্য দুর্গ এবং মনোরম বাগ-বাগিচা ছিল। সম্মানিত উহুদ জিহাদ পর্যন্ত তাদেরকে এই বাহ্যত শান্তি চুক্তির অনুসারী দেখা যায়। সম্মানিত উহুদ জিহাদের পর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে ও গোপন দুরভিসন্ধি শুরু করে দেয়। এই বিশ্বাসঘাতকতার সূচনা এভাবে হয় যে, বনী নযীর গোত্রের জনৈক সরদার কা’ব ইবনে আশরাফ চল্লিশ জন ইহুদীকে সাথে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছে এবং সম্মানিত উহুদ জিহাদ হতে ফেরত কুরাইশ কাফিরদের সাথে সাক্ষাত করে। দীর্ঘ আলোচনার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চুক্তি উভয়পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত হয়। চুক্তিটি পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে কা’ব ইবনে আশরাফ চল্লিশজন ইহুদীসহ প্রতিপক্ষ হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (যিনি তখনও মুসলমান হননি) চল্লিশ জন কুরাইশী নেতাসহ পবিত্র কা’বা গৃহে প্রবেশ করে। বাইতুল্লাহ শরীফ উনার গিলাফ মুবারক স্পর্শ করতঃ পারস্পরিক সহযোগিতা ও মুসলমানগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অঙ্গীকার করে।

চুক্তি সম্পাদনের পর কা’বা ইবনে আশরাফ পবিত্র মদীনা শরীফে চলে এলে হযরত জীবরিল আলাইহিস সালাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আদ্যোপান্ত ঘটনা এবং চুক্তির বিবরণ বলে দেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কা’ব ইবনে আশরাফকে হত্যা করার আদেশ মুবারক জারি করেন। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে হত্যা করেন।

তার কিছুদিন পর ইহুদীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে প্রস্তাব করে যে, আপনি আপনার ত্রিশজন সাথী নিয়ে আমাদের কাছে আসুন। আমাদের মধ্য হতেও ত্রিশজন হিব্র বা ধর্মবিশেষজ্ঞ বের হবে। আমাদের প-িতগণ আপনার বক্তব্য শুনে যদি আপনাকে তাছদীক্ব বা সত্যায়ন করে ও আপনার প্রতি ঈমান আনে, তবে আমরাও সবাই আপনার প্রতি ঈমান আনবো।

পরের দিন সকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ত্রিশজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে বের হলেন। ইহুদীদের থেকেও ত্রিশজন হিব্র বের হলো। তারা যখন একটি খোলা স্থানে পৌঁছলো। তখন একে অপরকে বললো: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তো ত্রিশজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আছেন। উনাদের প্রত্যেকেই উনার পূর্বে নিজের শহীদ হওয়াকে বেশী পছন্দ করেন। কাজেই, উনাকে একাকী পাবে কী করে?

পরে তারা তাদের কৌশল পাল্টিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলে পাঠালো যে, আমরা পরস্পর ষাটজন লোক। এতো লোকের হৈ চৈ-এর কারণে আমরা পরস্পরের বক্তব্য বুঝবো কিভাবে?

তার চাইতে আপনি তিনজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে আসুন। আর আমাদের তিনজন ধর্মগুরু বের হোক। তারা আপনার আলোচনা মুবারক শুনে যদি তাছদীক্ব বা সত্যায়ন করে এবং আপনার প্রতি ঈমান আনে তাহলে আমরা ঈমান আনবো।

তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তিনজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে বের হলেন। ইহুদীদের থেকেও তিনজন বের হলো। কিন্তু তারা আসলো অ¯্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে। তাদের দুরভিসন্ধি ছিল অতর্কিত আক্রমণ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হিতাকাঙ্খী ছিলেন  বনী নযীরের একজন নারী। তিনি তাদের এই দুরভিসন্ধির কথা উনাকে জানিয়ে দিলেন। তিনি অবহিত হয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ ফিরে আসেন।

সম্মানিত মুসলমানগণের বিরুদ্ধে কাফিরদের ষড়যন্ত্র ও উৎপীড়নের ঘটনা অতিদীর্ঘ ও নিত্য নতুন। তারমধ্যে বীরে মাউনার ঘ্টনাটি সম্মানিত ইসলাম উনার ইতিহাসে সুবিদিত।

একবার কিছু সংখ্যক মুনাফিক ও কাফির তাদের জনপদে সম্মানিত ইসলাম প্রচারের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে একদল হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম  উনাদেরকে পাঠানোর আবেদন করে। তিনি সত্তর জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি জামায়াত তাদের সাথে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু পরে দেখা গেল যে, এটা নিছক একটা চক্রান্ত ছিল। কাফিররা সম্মানিত মুসলমানগণ উনাদেরকে শহীদ করার পরিকল্পনা করে এবং উনাদেরকে শহীদ করে। নাউযুবিল্লাহ! তবে সত্তরজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে একমাত্র হযরত  আমর ইবনে উমাইয়া জমরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ফিরে আসতে সক্ষম হন। যিনি এই মাত্র কাফির-মুনাফিকদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং উনসত্তর জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নির্মমভাবে শহীদ হওয়া স্বচক্ষে দেখে এসেছিলেন। কাফিরদের প্রতি উনার মনোভাব কি হবে, তা অনুমান করা কারো পক্ষে কঠিন হওয়ার কথা নয়।

ঘটনাক্রমে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে আসার সময় পথিমধ্যে তিনি দুজন কাফিরের মুখোমুখী হন। তিনি কালবিলম্ব না করে উভয়কে হত্যা করেন। পরে জানা যায় যে, তারা ছিলো বনী আমের গোত্রের লোক, যাদের সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান্তি চুক্তি ছিলো।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এর রক্ত বিনিময় আদায় করা মুসলমান-ইহুদী সকলেরই কর্তব্য ছিল। সে অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানগণের কাছ থেকে রক্তপণ আদায় করলেন।

অতঃপর চুক্তি অনুযায়ী ইহুদীদের কাছ থেকেও রক্ত বিনিময়ের অর্থ গ্রহণ করার জন্য বনী নযীর গোত্রের কাছে গেলেন। তারা দেখলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার এটাই সুযোগ। তাই তারা উনাকে একস্থানে বসতে দিয়ে বললো, আপনি এখানে অপেক্ষা করুন। আমরা রক্ত বিনিময়ের অর্থ সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করছি।

তারপর তারা গোপনে পরামর্শ করে স্থির করলো যে, তিনি যে প্রাচীরের নীচে বসে আছেন, সেই প্রাচীরের উপরে উঠে একটি বিরাট ও ভারী পাথর উনার মাথা মুবারকের উপর ছেড়ে দিবে, যাতে তিনি শহীদ হয়ে যাবেন। নাউযুবিল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তৎক্ষনাত সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে এই ঘৃণ্য চক্রান্তের বিষয় অবগত হলেন। তিনি সে স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেন। আর ইহুদীদেরকে বলে পাঠালেন, “তোমরা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে চুক্তি লংঘণ করেছ। কাজেই, তোমাদেরকে দশ দিনের সময় দেয়া হলো। এই সময়ের মধ্যে তোমরা যেখানে ইচ্ছা চলে যাও। এই সময় অতিবাহিত হলে এই স্থানে কাউকে দৃষ্টিগোচর হলে তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া হবে।

বনী নযীর পবিত্র মদীনা শরীফ ত্যাগ করে চলে যেতে সম্মত হলো। কিন্তু মুনাফিক সরদার উবাই ইবনে সুলূল তাদেরকে বাধা দিয়ে বললো, তোমরা এখানেই থাক। আমার অধীনে দুই হাজার যোদ্ধার একটি বাহিনী আছে। তারা প্রাণ দিবে। কিন্তু তোমাদের শরীরে একটি আচড়ও লাগতে দিবে না।

বনী নযীর মুনাফিকদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সদর্পে বলে পাঠালো, আমরা কোথাও যাবো না। “আপনি যা করতে পারেন করেন।” তখন নূরে মুজাসসাম  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে বনী নযীর গোত্রকে আক্রমণ করলেন। তারা দূর্গের ফটক বন্ধ করে বসে রইলো। আর মুনাফিকরা আত্মগোপন করলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে চতুর্দিক থেকে অবরোধ করলেন। তাদের খেজুর গাছে আগুন ধরিয়ে দেয়া হলো। কিছু খেজুর গাছ কেটে ফেলা হলো। অবশেষে তারা নিরূপায় হয়ে নির্বাসনদ- মেনে নিলো।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই অবস্থায়ও তাদের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণ মুবারক প্রদর্শন করে আদেশ মুবারক দিলেন, “আসবাবপত্র যে পরিমান সাথে নিয়ে যেতে পার, নিয়ে যাও। তবে কোন অস্ত্র-শস্ত্র সাথে নিতে পারবে না।”

সে মতে বনী নযীরের কিছু লোক সিরিয়ায় এবং কিছু লোক খায়বরে চলে যায়।

পরবর্তীতে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে তাদেরকে পুনরায় অন্যান্য ইহুদীদের সাথে খাইবর থেকে সিরিয়ায় নির্বাসিত করেন।

ইহুদী সম্প্রদায় বার বার লাঞ্ছিত ও নির্বাসিত হওয়ার পরেও তাদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র থেকে সরে দাঁড়ায়নি। বরং নিত্য নতুন ষড়যন্ত্রে ও বিদ্বেষের রাস্তা বের করে চলছে।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহন করার পর উনার জিসিম মুবারক স্থানান্তরিত করা, চুরি করার মত ঘৃণ্য কোশেশও করেছিল তারা। কিন্তু কোনভাবেই সফলকম হতে পারেনি ও পারবেও না। ইনশাআল্লাহ।

সউদী ওহাবী সরকার তারা ইহুদী বংশোদ্ভূত। ইহুদীদের বিদ্বেষের নীল নকশা বাস্তবায়নকারী। ওহাবী ফিরক্বার মদদ দানকারী। যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা মুবারকের আলোচনা শুনলে বিদ্বেষের আগুন জ্বলে উঠে। শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত সম্বলিত হাদীছ শরীফসমূহ জাল  বা বানোয়াট বলে প্রচার করে। উনাদের প্রশংসা করাকে শিরক-কুফর বলে ফতওয়া দেয়। উনাদের শান-মান খাট করাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। নাঊযুবিল্লাহ!

আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম