নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার সুমহান শান মুবারক উনার খিলাফ ‘মুসলিম শরীফের’ একটি বর্ণনার স্বরূপ উম্মোচন

সংখ্যা: ২৯০তম সংখ্যা | বিভাগ:

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য উনার মহাসম্মানিত হযরত ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের বিষয়ে বাতিল ফিরকার লোকেরা বিভিন্ন এলোমেলো কথা বলে থাকে। উনাদের সম্মানিত ঈমান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

তাদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য এ কলাম লিপিবদ্ধ করা হলো।

বাতিল ফিরকার লোকেরা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে সিহাহ ছিত্তার অন্যতম কিতাব “মুসলিম শরীফে” বর্ণিত একটা বর্ণনার আশ্রয় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। বর্ণনাটি সনদসহ উল্লেখ করা হলো,

حَدَّثَـنَا أَبُـوْ بَكْرِ بْنُ أَبِيْ شَيْـبَةَ  رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، حَدَّثَـنَا عَفَّانُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، حَدَّثَـنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ ، عَنْ ثَابِتٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ، أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَيْنَ أَبِيْ؟ قَالَ: فِي النَّارِ، فَـلَمَّا قَـفَّى دَعَاهُ، فَـقَالَ: ‌إِنَّ ‌أَبِيْ ‌وَأَبَاكَ ‌فِي ‌النَّارِ

অর্থ: এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা কোথায়? তিনি বললেন, জাহান্নামে। তখন এটা তার নিকট কষ্টদায়ক হল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে ডেকে বললেন, আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!  (মুসলিম শরীফ -কিতাবুল ঈমান: পবিত্র হাদীছ শরীফ ৩৪৭)

এই বর্ণনা থেকে বাতিল ফিরকার লোকেরা মহাসম্মানিত হযরত আবু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়ে জঘণ্যতম অপবাদ উপস্থান করে। কিন্তু প্রাণপ্রিয় মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বনুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি উছূল মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন, “যদি কোন কিতাবে তা যে কিতাবই হোক না কেন সেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, মহাসম্মানিত পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র সুমহান শান মুবারকের খিলাফ কিছু থাকলে সে বর্ণনা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না বরং তা বাতিল বলে গণ্য হবে।” এ সম্মানিত উছূলের মানদণ্ডে এ ধরণের বর্ণনার স্বরূপ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে বর্ণনাগুলোর প্রকৃত চিত্র।

উক্ত আপত্তিকর বর্ণনার সনদ হচ্ছে-

حَدَّثَـنَا أَبُـوْ بَكْرِ بْنُ أَبِيْ شَيْـبَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، حَدَّثَـنَا عَفَّانُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، حَدَّثَـنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ ثَابِتٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ

অর্থ: হাদীছ শরীফ বর্ননা করেন- হযরত আবু বকর ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত হাম্মাদ বিন সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত সাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে।

মুসলিম শরীফের এই সনদ সহ বর্ণনা উল্লেখ করে ইমাম হযরত বাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وَهٰذَا الْحَدِيْثُ لَا نَـعْلَمُ رَوَاهُ، عَنْ ثَابِتٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ إلَّا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ

এই হাদীছ শরীফখানা হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে হাম্মাদ বিন সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যাতীত অন্য কারো থেকে বর্ণিত হয়নি। (মুসনাদে বাযযার ৬৮০৮; প্রকাশনা- মাকতাবাতুল মাদীনাতুল মুনাওয়ারা)

উক্ত বর্ণনা বিষয়ে হাফিজুল হাদীছ, হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

أَنَّ هٰذِهِ اللَّفْظَةَ وَهِيَ قَـوْلُهٗ: إِنَّ أَبِيْ وَأَبَاكَ فِي النَّارِ لَمْ يَـتَّفِقْ عَلٰى ذِكْرِهَا الرُّوَاةُ، وَإِنَّمَا ذَكَرَهَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ ثَابِتٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ، وَهِيَ الطَّرِيْقُ الَّتِيْ رَوَاهُ مُسْلِمٌ مِنْـهَا

উল্লেখিত ইবারতটি ‘আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামী’ এর ব্যাপারে বর্ণনাকারীগণ ঐকমত্য পোষণ করেননি। এটা বর্ণনা করেছেন হযরত হাম্মাদ বিন সালমা তিনি। তিনি ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি এই সূত্রেই হাদিস শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। (আল হাওয়ি লিল ফাতাওয়া ২/২৭৩)

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এই ব্যাপারে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন সনদে ও ভিন্ন মতনে সহীহ হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে। আপত্তিকর বর্ণনাটি হযরত হাম্মাদ বিন সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয় বর্ণনাটি হযরত  মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সনদে ব্যতিক্রমভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সেখানে ‘আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামী’ বাক্যটি উল্লেখ করেননি।

ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি সেই সনদখানা উল্লেখ করেছেন উনার কিতাবে,

‌رِوَايَةُ ‌مَعْمَرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، ‌عَنْ ‌ثَابِتٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ،  ‌عَنْ ‌أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ

হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত সাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। (আল হাওয়ি লিল ফাতাওয়া ২/২৭৩, সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/২৪৮, ফতহুর রব্বানী ৮/১৭০)

হযরত ইমাম যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,

وَقَدْ أَعَلَّ السُّهَيْلِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، هٰذَا الْحَدِيْثَ بِأَنَّ مَعْمَرَ بْنَ رَاشِدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، فِيْ رِوَايَــتِهٖ عَنْ ثَابِتٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ خَالَفَ حَمَّادًا، فَـلَمْ يَذْكُرْ أَنَّ أَبِيْ وَأَبَاكَ فِي النَّارِ، بَلْ قَالَ: إِذَا مَرَرْتَ بِقَبْرٍ كَافِرٍ فَـبَشِّرْهُ بِالنَّارِ

ইমাম হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, এই বর্ণনাটি হযরত মা’মার ইবনে রশিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত সাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে রেওয়ায়েত করেন, তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। সেখানে তিনি ‘আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামী’ এ ধরণের কোন কথা উল্লেখ করেননি বরং তিনি উল্লেখ করেছেন, “ যখন তুমি কোন কাফিরের কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিবে।” (শরহু যারকানী আলাল মাওয়াহেব ১/৩৩৭; প্রকাশনা- দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বাইরূত- লেবানন)

আপত্তিকর বর্ণনাটির বিষয়ে মুসনাদে আহমদ শরীফে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার টীকায় উল্লেখ আছে-

رِجَالُهٗ ثِقَاتٌ رِجَالُ الشَّيْخَيْنِ غَيْـرَ حَمَّادٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ،  وَهُوَ اِبْنُ سَلَمَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، فَمَنْ رِجَالُ مُسْلِمٍ، وَقَدْ تَـفَرَّدَ بِرِوَايَةِ هٰذَا الْحَدِيْثِ بِـهٰذَا اللَّفْظِ، وَخَالَفَهٗ مَعْمَرٌ عَنْ ثَابِتٍ

বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত, বুখারী শরীফ ও  মুসলিম শরীফের রাবী, তবে হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যাতীত। তিনি হচ্ছেন ইবনে সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মুসলিম শরীফ উনার রাবী। তিনি এককভাবে এই শব্দে এই বর্ণনাটি (আপত্তিকর বর্ণনাটি) উল্লেখ করেছেন। অথচ হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত সাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে এর ভিন্ন বর্ণনা উল্লেখ করেছেন (অর্থাৎ সেখানে আপত্তিকর কথাটি নেই)। (মুসনাদে আহমদ ১২১৯২ নং হাদীছ শরীফ উনার টীকায় সমসাময়িক তাহকীককারী শুয়াইব আরনাউতের তাহকীক)

সূতরাং হযরত হাম্মাদ বিন সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই ইবারতটি কখনো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনাকে অন্তর্ভূক্ত করে না। কারণ উক্ত সনদটির চাইতে হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সনদ অধিক শক্তিশালী। কারণ হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহির চেয়ে হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি অধিক নির্ভরযোগ্য।  এ প্রসঙ্গে ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

فَإِنَّ حَمَّادًا رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، تُكُلِّمَ فِيْ حِفْظِهٖ وَوَقَعَ فِيْ أَحَادِيْثِهِ مَنَاكِيْـرُ ذَكَرُوْا أَنَّ رَبِيْـبَةَ دَسَّهَا فِيْ كُتُبِهِ، وَكَانَ حَمَّادٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، لَا يَحْفَظُ فَحَدَّثَ بِهَا فَـوَهِمَ فِيْهَا، وَمَنْ ثُـمَّ لَـمْ يُخَرِّجْ لَهُ الْبُخَارِيُّ شَيْـئًا، وَلَا خَرَّجَ لَهُ مُسْلِمٌ فِي الْأُصُوْلِ إِلَّا مِنْ رِوَايَتِهِ عَنْ ثَابِتٍ

হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহির  স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে এবং উনার বর্ণনার মধ্যে অনেক মুনকার বর্ণনা রয়েছে।  বর্ণিত আছে যে, রবিবাহ তার কিতাবে ভুলক্রমে বিষয়টি ছেড়ে দিলেন। কিন্তু হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বিষয়টি সংরক্ষণ রাখতে পারেননি এবং এভাবেই বর্ণনা করলেন। সুতরাং এ ব্যাপারটি লক্ষ্যণীয়। তদুপরি হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেননি। ইমাম হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিও প্রকৃতপক্ষে হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাদীছ শরীফ ছাড়া অন্য কোন বর্ণনা উল্লেখ করেননি।  (আল হাওয়ি লিল ফাতাওয়া ২/২৭৩; প্রকাশনা- দারুল ফিকর, বাইরূত, লেবানন)

হযরত ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাদখাল কিতাবে বলেছেন,

مَا خَرَجَ مُسْلِمٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، لِحَمَّادٍ فِى الْاُصُوْلِ اِلَّا مِنْ حَدِيْثِهِ عَنْ ثَابِتٍ

অর্থ: ইমাম হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাদীছ শরীফ ব্যতীত অন্য কোন হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেননি। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতে খাইরিল ইবাদ ১/২৪৮)

লা’মাযহাবীদের গুরু নাসিরুদ্দীন আলবানীও তার ছহীহ সুনানে আবু দাউদ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ৬/২৮ পৃষ্ঠায়ও এই কথা উল্লেখ করেছে।

যে রাবীকে নিয়ে আপত্তি সেই হাম্মাদ বিন সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহির বিষয়ে হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আসমাউর রেজাল কিতাবে উল্লেখ করেছেন,

قَالَ الْبَيْهَقِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ،  ‌هُوَ ‌أَحَدُ ‌أَئِمَّةِ ‌الْمُسْلِمِيْنَ ‌اِلَّا ‌أَنَّهٗ ‌لَمَّا ‌كَبِرَ ‌سَاءَ ‌حِفْظُهٗ ‌فَلِذَا ترَكَهُ الْبُخَارِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، وَأَمَّا مُسْلِمٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، فَاَجْتَـهَدَ

অর্থ: হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি (হযরত হাম্মাদ ইবনে সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি) তিনি মুসলিম ইমামদের একজন হলেও বৃদ্ধ বয়সে উনার স্মরণ শক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পরিত্যাগ করেছেন, হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। (তাহযীবুত তাহযীব ৩/১৪)

ইমাম হযরত যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,

وقَالَ حَضْرَتِ الذَّهْبِيُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، حَضْرَتْ حَمَّادُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، ثِقَةٌ لَهٗ أَوْهَامٌ وَمَنَاكِيْـرُ كَثِيْـرَةٌ

ইমাম হযরত যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশ্বস্ত কিন্তু স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়ার পর উনার দ্বারা অনেক মুনকার বর্ণনার সৃষ্টি হয়। (শরহু যারকানী আলাল মাওয়াহেব ১/৩৩৭)

এ থেকে প্রমাণিত হলো হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শেষ বয়সে স¥রণ শক্তিতে ত্রুটি দেখা দেয় এবং উনার বর্ণনায় পরিবর্তন পরিবর্ধন সৃষ্টি হয়। আর হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আপত্তিকর বর্ণনাটি বিচ্ছিন্ন ও একক একটি বর্ণনা যা অন্য কেউ বর্ণনা করেনি। অপরদিকে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে আরেকটি বিশুদ্ধ সনদ যা হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত হয়েছে যেখানে আপত্তিকর কথাটি নেই। আর হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বলা হয়েছে,

وَأَمَّا مَعْمَرٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، فَـلَمْ يُـتَكَلَّمْ فِيْ حِفْظِهٖ وَلَا اُسْتُـنْكِرَ شَيْءٌ مِنْ حَدِيْثِهٖ، وَاتَّـفَقَ عَلَى التَّخْرِيْجِ لَهُ الشَّيْخَانِ فَكَانَ لَفْظُهُ أَثْـبَتَ

কিন্তু হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মৃতিশক্তি সম্বন্ধে কেউ কোন আপত্তি করেননি। এবং উনার কোন বর্ণনা মুনকার পর্যায়ের নেই। তাছাড়া শাইখাইন হযরত বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনার থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহনের বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। অতএব উনার বর্ণনা অধিক নির্ভরযোগ্য। (আল হাওয়ি লিল ফাতাওয়া ২/২৭৩)

সর্বোপরি আলোচ্য বর্ণনাখানা আরো কমপক্ষে ৪ জন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে ভিন্ন সনদে বর্ণিত আছে, যেখানে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আবু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়ে আপত্তিকর কথা তো দূরের কথা বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা উল্লেখ আছে।

(বর্ণনা নং ১)

সনদসহ পূর্ণ বর্ণনাখানা উল্লেখ করা হলো-

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ، عَنْ أَبِيْهِ، أَنَّ أَعْرَابِيًّا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيْنَ أَبِيْ؟ قَالَ فِي النَّارِ. قَالَ: فَأَيْنَ أَبُوكَ؟ قَالَ حَيْثُ مَا مَرَرْتَ ‌بِقَبْرِ ‌كَافِرٍ ‌فَـبَشِّرْهُ ‌بِالنَّارِ

অর্থ: হযরত আমীর ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, এক বেদুইন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলল- ‘আমার পিতা কোথায়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, জাহান্নামে। অতঃপর লোকটি বলল আপনার মহাসম্মানিত হযরত পিতাজান আলাইহিস সালাম তিনি কোথায়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন তুমি কোন কাফিরের কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিবে। (মুসনাদে বাযযার ১০৮৯, দালায়েলুন নবুয়াত লিল বায়হাকী১/১৯২)

এই সনদের ব্যাপারে ইমাম হযরত নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে বলেন,

وَرِجَالُهٗ رِجَالُ الصَّحِيْحِ

উক্ত বর্ণনার সকল রাবী বুখারী মুসলিম শরীফ উনার বিশ্বস্ত রাবী। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ আল মানবাউল ফাওয়ায়েদ ২/২০৮: বর্ণনা ৪৬৮)

ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার সনদের বিষয়ে বলেন,

وَهٰذَا إِسْنَادٌ عَلٰى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

এই সনদখানা ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। (আল হাওয়ী লিল ফাতাওয়া ২/২৭৩)

এ হাদীছ শরীফ থেকে আমরা দেখতে পেলাম এখানে মহাসম্মানিত হযরত আবু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকের খিলাফ কোন কথা বলা হয়নি বরং প্রশ্নকারীকে একটা একটা আমল বলে দেয়া হয়েছে।

(বর্ণনা নং ২)

ছিহাহ ছিত্তার অন্যতম কিতাব ইবনে মাজাহ শরীফে ভিন্ন সনদে আরো একখানা হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে,

عَنْ سَالِـمٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ: جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَبِيْ كَانَ يَصِلُ الرَّحِمَ، وَكَانَ وَكَانَ، فَأَيْنَ هُوَ؟ قَالَ فِي النَّارِ قَالَ: ‌فَكَأَنَّهٗ ‌وَجَدَ ‌مِنْ ‌ذٰلِكَ، فَـقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَيْنَ أَبُـوْكَ؟ فَـقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حَيْـثُمَا مَرَرْتَ بِقَبْرِ مُشْرِكٍ فَـبَشِّرْهُ بِالنَّارِ قَالَ: فَأَسْلَمَ الْأَعْرَابِيُّ بَعْدُ، وَقَالَ: لَقَدْ كَلَّفَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَـعَبًا، مَا مَرَرْتُ بِقَبْرِ كَافِرٍ إِلَّا بَشَّرْتُهُ بِالنَّارِ

অর্থ: হযরত সালিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট একজন বেদুইন এসে প্রশ্ন করল, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতেন। বর্তমানে তিনি কোথায়? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, জাহান্নামে। এতে লোকটি কিছুটা মর্মাহত হল। অতঃপর সে ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম তিনি কোথায়? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, তুমি যখন কোন মুশরিকের কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিবে। পরবর্তীতে লোকটি মুসলমান হয়ে গেল এবং বলল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন যখনই আমি কোন কাফিরের কবরের পাশ দিয়ে গমন করেছি তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিয়েছি। (ইবনে মাজাহ ১/৫০১: হাদীছ শরীফ নং  ১৫৭৩)

এই বর্ণনাটি উল্লেখ করে হযরত আবুল আব্বাস শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনে আবু বকর ইবনে ইসমাঈল রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৮৪০ হিজরী) বলেন,

هٰذَا إِسْنَادٌ صَحِيْحٌ رِجَالُهٗ ثِقَاتٌ

এই বর্ণনাটির সনদ সহীহ, বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত। (মিছবাহুস জুজাজাত ফি যাওয়াদ ইবনে মাজাহ ২/৪৩)

(বর্ণনা নং ৩)

আরো একটি সহীহ সনদে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে,

عَنْ عَمِّهِ لَقِيْطِ بْنِ عَامِرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، أَنَّهٗ خَرَجَ وَافِدًا إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُ نُـهَيْكُ بْنُ عَاصِمِ بْنِ مَالِكِ بْنِ الْمُنْـتَفِقِ فَـقَالَ: قَدِمْنَا الْمَدِيْـنَةَ لِاِنْسِلَاخِ رَجَبٍ فَصَلَّيْـنَا مَعَهُ صَلَاةَ الْغَدَاةِ، فَـقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ خَطِيْـبًا، فَذَكَرَ الْحَدِيْثَ إِلٰى أَنْ قَالَ: فَـقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ ‌صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ ‌أَحَدٌ ‌مِمَّنْ ‌مَضَى ‌مِنَّا ‌فِيْ ‌جَاهِلِيَّةٍ مِّنْ خَيْرٍ؟ فَـقَالَ رَجُلٌ مِنْ عَرَضِ قُـرَيْشٍ: إِنَّ أَبَاكَ الْمُنْـتَفِقَ فِي النَّارِ، فَكَأَنَّهٗ وَقَعَ حَرٌّ بَيْنَ جِلْدِ وَجْهِيْ وَلَحْمِيْ مِمَّا قَالَ لِأَبِيْ عَلَى رُؤُوسِ النَّاسِ، فَـهَمَمْتُ أَنْ أَقُـوْلَ: وَأَبُوْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ ثُمَّ نَظَرْتُ فَإِذَا الْأُخْرَى أَجْمَلُ فَـقُلْتُ: وَأَهْلُكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَـقَالَ: مَا أَتَـيْتَ عَلَيْهِ مِنْ قَـبْرِ قُـرَشِيٍّ أَوْ عَامِرِيٍّ مُشْرِكٍ فَـقُلْ: أَرْسَلَنِيْ إِلَيْكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَبْشِرْ بِمَا يَسُوْءُكَ

হযরত লাকিত ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, একবার তিনি একটি প্রতিনিধি দলের সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দরবার শরীফে আসলেন। উনার সাথে তখন নুহাইক বিন আসিম বিন মালিক বিন মুন্তাফিক ছিলেন। তিনি বলেন আমরা পবিত্র রজব মাসে পবিত্র মদিনা শরীফে পৌঁছলাম। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ফজরের নামায পড়লাম। নামায শেষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লোকদের প্রতি খুতবা মুবারক দিতে দাঁড়ালেন। (অতঃপর বর্ণনাকারী হাদীছ শরীফ উনার বাকী অংশ বর্ণনা করলেন) অবশেষে বলেন- তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের মধ্যে যারা জাহিলিয়াত যুগে মৃত্যুবরণ করেছে তাদের মধ্যে কোন ভাল লোক আছে কি? তখন কুরাইশ বংশীয় এক ব্যক্তি বলল, তোমার পিতা মুন্তাফিক জাহান্নামী। উপস্থিত জনতার সামনে আমার পিতা সম্বন্ধে এমন মন্তব্য করায় আমার চেহারায় আগুন ঝরতে লাগল। তাই আমি জিজ্ঞাসা করতে চাইলাম- ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সম্মানিত পিতাও কি জাহান্নামী? নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু যখন আমি দৃষ্টিপাত করলাম তখন অন্য একটি সৌন্দয্যর্ আমাকে মোহিত করল। তাই আমি অন্যভাবে প্রশ্ন করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার পরিবারও কি জাহান্নামী? নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, যখন তুমি কোন মুশরিকের কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে তখন বলবে, আমাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমার প্রতি প্রেরণ করেছেন। অতএব তোমাকে তোমার মন্দ অবস্থার সুসংবাদ দিচ্ছি।  (মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন ৪/৬০৫: হাদীছ শরীফ ৮৬৮৩)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করে ইমাম হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

هٰذَا حَدِيْثٌ جَامِعٌ فِي الْبَابِ صَحِيْحُ الْإِسْنَادِ، كُلُّهُمْ مَدَنِيُّـوْنَ وَلَمْ يُخْرِجَاهُ

এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা এই অধ্যায়ে জমাকৃত সকল পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের চাইতে সহীহ সনদে বর্নিত। বর্ণনাকারীগণ সকলেই মদীনা শরীফ উনার। যদিও বুখারী মুসলিম শরীফে তা বর্ণিত হয়নি। (মুস্তাদরাক আলান সহীহাইন ৪/৬০৫)

(বর্ণনা নং ৪)

ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন কিতাবে বিশুদ্ধ সনদে একটি হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন,

فَـقَالَ رَجُلٌ شَابٌّ مِّنَ الْأَنْصَارِ لَمْ أَرَ رَجُلًا كَانَ أَكْثَـرَ سُؤَالًا لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَرَى أَبَـوَاكَ فِي النَّارِ فَـقَالَ: ‌مَا ‌سَأَلْتُـهُمَا ‌رَبِّيْ ‌فَـيُـعْطِيْنِيْ ‌فِيْهِمَا وَإِنِّيْ لَقَائِمٌ يَوْمَئِذٍ الْمَقَامَ الْمَحْمُوْدَ

অর্থ: হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, একদা এক আনসারী যুবক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, (ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন তার চেয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অধিক প্রশ্ন করতে আর কাউকে দেখিনি) ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি মনে করেন, আপনার পিতা-মাতা জাহান্নামী? (নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!) তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি উনাদের বিষয়ে আমার মহান রব উনার নিকট যা চাইব আমাকে তাই দেয়া হবে। আর সেদিন আমি মাকামে মাহমূদে অবস্থান মুবারক করব। (মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন ২/৩৯৬: হাদীছ ৩৩৮৫)

এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করে ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

هٰذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخْرِجَاهُ

এই পবিত্র হাদীছ শরীফখানা সহীহ সনদে বর্ণিত যদি বুখারী মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়নি। (মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ২/৩৯৬)

এই হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমাস সালাম উনাদের সুমহান শান মুবারক প্রকাশ করে দিলেন। স্পষ্টই বুঝিয়ে দিলেন সবোর্চ্চ মাকাম মুবারকে অবস্থান যিনি করছেন তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার সম্মানিত ওয়ালিদাইন শরীফাইন আলাইহিমুস সালাম উনারাও সবোর্চ্চ মাকাম মুবারকেই অবস্থান করছেন। সুবহানাল্লাহ!

* আরো একটি সমর্থক বর্ণনা:

আমরা শুরুতেই দেখেছি হযরত হাম্মাদ বিন সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরিবর্তে আরো শক্তিশালী রাবি হযরত মা’মার বিন রশিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে সঠিক মতনে পত্রি হাদীছ শরীফ আছে। এখানে আমরা আরেকটি বর্ণনা দেখাবো যেখানে হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। পূর্ণ হাদীছ শরীফখানা হচ্ছে-

أَخْبَـرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ مَعْمَرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنِ الزُّهْرِيِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، ৃ. قَالَ: هَلَكَ أَبُـوْكَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَمَدْخَلُهُ النَّارُ، قَالَ: فَـغَضِبَ الْأَعْرَابِيُّ، وَقَالَ: فَأَيْنَ مَدْخَلُ أَبِيْكَ؟ فَـقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حَيْثُ مَا مَرَرْتَ بِقَبْرِ كَافِرٍ فَـبَشِّرْهُ بِالنَّارِ

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট একজন বেদুইন এসে বললো, ……আমার পিতা কি জাহিলিয়াতে মৃত্যুবরণ করেছে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ। এতে লোকটি কিছুটা মর্মাহত হল। অতঃপর সে ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম তিনি কোথায়? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, তুমি যখন কোন মুশরিকের কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিবে। (দলীল: মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১০/৪৫৪, হাদীছ শরীফ ১৯৬৮৭)

এই বর্ণনার সনদ কিন্তু ভিন্ন। অনেক বলতে পারে এই সনদতো ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহির মুরসাল। ইমাম যুহরীর মুরসাল নিয়ে তো অভিযোগ আছে। তাদের জ্ঞাতার্থে জানানো যায় যে, আমাদের উপরে উল্লেখিত ১নং বর্ণনায় হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে মুত্তাসিল সনদ আছে। যা নিম্নরূপ-

عَنِ الزُّهْرِيِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، عَنْ أَبِيْهِ

সূতরাং মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক উনার বর্ণনায় হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরসাল কোন সমস্যা নয়। কারণ এখানে হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমাম হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। এই পর্যন্ত সবাই সিক্বাহ। আর ১ নং বর্ণনায় আমরা দেখেছি ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আমের ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি উনার পিতা হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ এখানে হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হযরত হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তায়ালা আনহু পর্যন্ত কোন ইরসাল নেই বরং মুত্তাসিল সনদে বর্ণিত সেই সাথে সকল রাবী সিক্বাহ। সুতরাং এই বর্ননাও সহীহ।

আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখতে পেলাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার সুমহান শান মুবারক উনার খিলাফ ‘মুসলিম শরীফে’ বর্ণিত বর্ণনাটি মাত্র একটি বিচ্ছিন্ন সনদে এসেছে। অথচ তার বিপরীতে ৫ জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম থেকে বর্ণনা এসেছে যেখানে সেই আপত্তিকর কথাটির লেশমাত্রও নেই। ৫ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারক হচ্ছে,

১)হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

২) হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

৪) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

৫) হযরত লাকিত ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

সূতরাং যেখানে এতগুলো বিশুদ্ধ সনদে হাদীছ শরীফ পাওয়ার পরও শেষ বয়সে স্মৃতিশক্তি হারানো ‘মুসলিম শরীফে’ হযরত হাম্মাদ ইবনে সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বিছিন্ন একটি বর্ণনাকে পুঁজি করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র সুমহান শান মুবারকের খিলাফ কথা বলা চরম জেহালতী, গোমরাহী, স্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।

আর উছূল হচ্ছে,

وَالْحَدِيثُ الصَّحِيحُ إِذَا عَارَضَهُ أَدِلَّةٌ أُخْرَى هِيَ أَرْجَحُ مِنْهُ وَجَبَ تَأْوِيلُهُ وَتَـقْدِيمُ تِلْكَ الْأَدِلَّةِ عَلَيْهِ كَمَا هُوَ مُقَرَّرٌ فِي الْأُصُوْلِ

অর্থ: যখন কোন সহিহ হাদীছ শরীফের সাথে অন্য কোন দলিল সাংঘর্ষিক হয় তখন সে ক্ষেত্রে সহিহ হাদীছ শরীফকে প্রাধান্য দেয়া আবশ্যক। এটা উছূল সমূহের একটি নীতি। (আল হাওয়ি লিল ফাতাওয়া ২/২৭৪)

সূতরাং ৫টি ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার মোকাবিলায় একটি বিচ্ছিন্ন মতের কোন ভিত্তিই থাকে না আর সর্বোপরি এটা আক্বীদার বিষয় হওয়ার কারণে বিষয়টা আরো ভিত্তিহীন হয়।

মহাসম্মানিত ও সুমহান শান মুবারক উনার মালিক সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ কথা বললে তার বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ফতোয়া হচ্ছে তা স্পষ্ট কুফরি যে এমন কথা বলবে বা আক্বীদা রাখবে সে মালউন। এ প্রসঙ্গে আবু বকর ইবনে আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত উল্লেখ করা হলো,

سُئِلَ أَبُـوْ بَكْرِ بْنِ الْعَرَبِيِّ أَحَدُ الْأَئِمَّةِ الْـمَالِكِيَّةِ رَحِـمَهُ اللهُ تَـعَالٰی عَنْ رَجُلٍ قَالَ : إَنَّ أَبَا النَّبِيِّ لَهٗ فِي النَّارِ، فَأَجَابَ : مَنْ قَالَ ذٰلِكَ مَلْعُوْنٌ

অর্থ : “মালেকী মাযহাব উনার ইমাম উনাদের মধ্যে একজন ইমাম হযরত আবু বকর ইবনে আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৫৪৩ হিজরী) উনাকে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো যে বলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম তিনি জাহান্নামী (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)। উনি জবাবে বললেন, যারা এরূপ বলে তারা মালউন বা অভিশপ্ত” (আল হাওয়ী লিল ফাতাওয়া লিস সূয়ুতী ২/২৭৯ পৃষ্ঠা, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতে খাইরুল ইবাদ ১/২৬০)

খাইরুল কুরুনেও সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকের খিলাফ কেউ কথা বললে তার শাস্তি দেয়া হতো

অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, খাইরুল কুরুনেও সাইয়্যিদুনা হযরত আবু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ কেউ কথা বললে তার শাস্তি দেয়া হতো।

হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ঘটনা। যে ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় সম্মানিত ওয়ালিদাইন শরীফাই আলাইহিমাস সালাম উনাদের বিষয়ে খারাপ আক্বীদা পোষণকারীদের কি শাস্তি দেয়া হতো,

وَأَخْرَجُ اِبْنُ عَسَاكِرَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، فِيْ تَارِيْـخِهٖ مِنْ طَرِيْقِ يَـحْيَى بْنِ عَبْدِ الْـمَلِكِ بْنِ أَبِيْ غُنِيَّةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ، قَالَ : حَدَّثَـنَا نَـوْفَلُ بْنُ الْفُرَاتِ وَكَانَ عَامِلاً لِعُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ : كَانَ رَجُلٌ مِنْ كِتَابِ الشَّامِ مَأْمُوْنًا عِنْدَهُمْ اِسْتَعْمَلَ رَجُلًا عَلٰى كُوْرَةِ الشَّامِ وَكَانَ أَبُـوْهُ يَزِنُ بِالْـمَنَانِيَةِ فَـبَـلَغَ ذٰلِكَ عُمَرَ بْنَ عَبْدِ الْعَزِيْزِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَـقَالَ : مَا حَـمْلُكَ عَلٰى أَنْ تَسْتَـعْمِلَ رَجُلًا عَلٰى كُوْرَةٍ مِنْ كُوَرِ الْـمُسْلِـمِيْنَ كَانَ أَبُـوْهُ يَزِنُ بِالْـمَنَانِيَةِ؟ قَالَ: أَصْلَحَ اللهُ أَمِيْـرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ وَمَا عَلَيَّ كَانَ أَبُو النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّـمَ مُشْرِكًا فَـقَالَ : عُمَرُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ آهْ ثُـمَّ سَكَتَ ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهٗ فَـقَالَ : أَأَقْطَعُ لِسَانَـهٗ ؟ أَأَقْطَعُ يَدَهٗ وَرِجْلَهٗ ؟ أَأَضْرِبُ عُنُـقَهٗ ؟ ثُـمَّ قَالَ : لَا تَلِيَ لِيْ شَيْـئًا مَا بَـقِيَتْ

অর্থ : “ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘তারিখে দামেস্ক’ গ্রন্থে ইয়াহিয়া ইবনে আব্দুল ইবনে আবি গুনিয়ার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন নওফেল বিন ফুরাত। তিনি ছিলেন হযরত উমর বিন আব্দুল আযিয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কর্মচারী। তিনি ছিলেন শাম দেশের একজন মানুষ যিনি তাদের নিকট বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি সেখানে এমন একজন ব্যক্তিকে কর্মচারী নিযুক্ত করলেন যার পিতা ছিল একজন অগ্নিপূজক। এ খবরটি হযরত উমর বিন আব্দুল আযিয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট পেঁৗছাল। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি কিভাবে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এমন ব্যক্তিকে নিযুক্ত করলেন যার পিতা একজন অগ্নিপূজক? তখন সে ব্যক্তি বলল, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমিরুল মু’মিনীন উনাকে বিশুদ্ধ করুন। এতে আমার কি ত্রুটি হয়েছে? নবীয়ে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতাও মুশরিক ছিলেন (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)। তখন হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন- আহ! অতঃপর নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর মাথা উত্তোলন করে বললেন- আমি কি তার জিহবা কেটে ফেলব? আমি কি তার হাত পা কেটে ফেলব? আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দিবো? অতঃপর বললেন আমি তোমাকে এ পদে রাখার মত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।” (তারিখে মাদীনাতু দিমাষ্ক ৪৫/২২২, আল হাবী লিল ফাতাওয়া ২/২২০, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/২৬১)

সূতরাং প্রমাণিত হলো সম্মানিত হযরত আবু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ কোন কথা বলা স্পষ্ট কুফরী এবং উনার শান মুবারক উনার খিলাফ কোন বর্ণনা তা যে কিতাবে থাকুন তা গ্রহণযোগ্য নয়।

অতএব বিশুদ্ধ আক্বীদা উনার উছূল, উছূলে হাদীছ, আসমাউর রেজাল দ্বারা “মুসলিম শরীফ উনার” উপরোক্ত বর্ণনাটি জাল, বাতিল, সম্মানিত আক্বীদার সাথে সাংঘর্ষিক বলে প্রমাণিত হলো।

প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামে আ’যম, হাকীমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, জামিউল ইলিম ওয়াল হিকাম, জামিউল আলক্বাব, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সকল বদ আক্বীদা থেকে দুনিয়াবাসীকে হিফাজত করছেন। সেই সাথে বিশুদ্ধতম আক্বীদা হাদীয়া করছেন। দুনিয়ার সকলের জন্য ফরয হচ্ছে নিজের ঈমান আমল হিফাজত করতে সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নূরুদ দারাজাত মুবারকে নিজেকে বিলীন করে দেয়া।

-খাজা মুহম্মদ নুরুদ্দীন পলাশ।

 

 

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম