পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-১৬)

সংখ্যা: ২৭৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৫তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আলহামদুলিল্লাহ।

খাছ সুন্নতী বাল্য বিবাহ সম্পর্কে উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের উত্থাপিত ও প্রচারিত মনগড়া, মিথ্যা ও দলীলবিহীন বক্তব্যসমূহের দলীলভিত্তিক খণ্ডনমূলক জাওয়াব

সম্মানিত শরীয়ত উনার চারখানা দলীল পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি বাল্য বিবাহের অনুমতি দিয়েছেন। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে বাল্য বিবাহ করেছেন, করিয়েছেন ও সমর্থন করেছেন। হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনেকেই বাল্য বিবাহ করেছেন ও করিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাল্য বিবাহ জায়িয হওয়ার বিষয়ে ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

অথচ এর পরও কতিপয় উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরা খাছ সুন্নতী বাল্য বিবাহ সম্পর্কে চু চেরা, ক্বীল ও ক্বাল করে থাকে। নানান মনগড়া, বিভ্রান্তিকর আপত্তিসমূহ উত্থাপন করে থাকে। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মনগড়া ব্যাখ্যা করে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে মিথ্যা ও দলীলবিহীন বক্তব্য পেশ ও প্রচার করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

নিম্নে উলামায়ে ‘সূ’, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের উত্থাপিত ও প্রচারিত মনগড়া, মিথ্যা ও দলীলবিহীন বক্তব্যসমূহ খ-ন করে দলীলভিত্তিক সঠিক জাওয়াব প্রদান করা হলো-

৫নং আপত্তি ও তার জাওয়াব

উলামায়ে সূ, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ, ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বদরের জিহাদ (৬২৪ খ্রি.) এবং উহুদের জিহাদ (৬২৫ খ্রি.) ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য যে, সৈন্যবাহিনীতে ১৫ বছরের কম বয়স্ক কেউ গ্রহণযোগ্য ছিল না এবং তাদের ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং সেসময় যে উনার বয়স মুবারক ৬ বা ৯ বছর ছিল না, তা বলাই বাহুল্য।”

জাওয়াব: উলামায়ে সূ, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ, ও বাতিল ফিরক্বার লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, প্রতারণামূলক ও দলীলবিহীন হওয়ার সাথে সাথে অসংখ্য ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সুস্পষ্ট বিরোধী হওয়ায় তাদের উক্ত বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং সম্পূর্ণরূপেই পরিত্যাজ্য।

তাদের উক্ত বক্তব্যের জাওয়াবে প্রথমত বলতে হয় যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা জিহাদে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন, তবে উনাদের বিষয়টি অন্যান্যদের মত নয়। উনারা জিহাদকারী বা জিহাদ সংশ্লিষ্ট অন্য কাজের জন্য জিহাদে গমণ করেননি। বরং উনারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম হিসেবেই জিহাদে গমন করেছেন। অর্থাৎ শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারকে থাকা ও খিদমত মুবারকে আনজাম দেয়ার জন্যই জিহাদে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। কাজেই, অন্যান্যদের সাথে উনাদের তুলনা করা সুস্পষ্ট কুফরী। জিহাদে অংশগ্রহণকারী অন্যান্যদের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হতো, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সে বিষয়গুলোর উর্ধ্বে। উনাদের মুবারক শানে সে বিষয়গুলো নিয়ে কখনোই ফিকির করা হতো না। আর ফিকির করাটা কাট্টা কুফরী হবে। কাজেই, উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য তারা বদর জিহাদ ও উহুদ জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের বয়স নিয়ে তুলনা করেছে, তা দিবালোকের চেয়ে সুস্পষ্ট গোমরাহী এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

তাদের উক্ত বক্তব্যের জাওয়াবে দ্বিতীয়ত বলতে হয় যে, উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আক্বদ মুবারক ৬ বছর বয়স মুবারকে আর সম্মানিত নিসবাতুল আযীম শরীফ ৯ বছর বয়স মুবারকে হয়েছে এ মতটিই ছহীহ, গ্রহণযোগ্য, দলীলভিত্তিক। কেননা অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ এবং বুখারী শরীফ, মুসলিম, শরীফ সহ ছিহাহ সিত্তাহ এবং আরো অসংখ্য নির্ভরযোগ্য কিতাবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বদ মুবারককালীন বয়স মুবারক ৬ বছর আর নিসবাতুল আযীম শরীফকালীন বয়স মুবারক ৯ বছর বলে উল্লেখ আছে, সেখানে এর বিপরীত কিছু ঐতিহাসিক তথ্য বা বর্ণনা দলীল হিসেবে পেশ করা জিহালত বা গোমরাহী নয় কি? মূলত তা শুধু জিহালত বা গোমরাহীই নয় বরং সুস্পষ্ট কুফরীও বটে। কারণ এতে পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে অস্বীকার করা হয়। নাউযুবিল্লাহ!

উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বদ মুবারক ও নিসবাতুল আযীম মুবারককালীন বয়স মুবারক সম্পর্কে অসংখ্য পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّ النَّبِـىَّ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزَوَّجَهَا وَهِيَ بِنْتُ سِتِّ سِنِيْنَ وَاَدْخَلَتْ عَلَيْهِ وَهِيَ بِنْتُ تِسْعٍ وَّمَكَثَتْ عِنْدَهٗ تِسْعًا.

অর্থ : “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ্ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার আক্বদ বা নিসবাতুল আযীম মুবারক সম্পন্ন হয় যখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর তিনি ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন এবং ৯ বছর উনার সাথে অবস্থান মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহুল বুখারী, কিতাবু বাদইল ওয়াহই বাবু ইনকাহির রজুলি ওয়ালাদাহুছ ছিগার)

কাজেই, উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র আক্বদ মুবারককালীন বয়স মুবারক উনার বিষয়টি যেহেতু সরাসরি পবিত্র হাদীছ শরীফেই বর্ণিত রয়েছে, তাই এ বিষয়ে ঐতিহাসিক তথ্য টেনে এনে বা মনগড়া বক্তব্য প্রদান করে ইখতিলাফ বা মতভেদ করার কোনোই সুযোগ নেই। পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত বয়স মুবারক সম্পর্কিত উক্ত মতকে যদি কেউ প্রত্যাখ্যান করতে চায় তবে তাকে উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমুহের চেয়েও অধিক মজবুত ও অধিক সংখ্যক পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীল হিসেবে পেশ করতে হবে।  কোনো ঐতিহাসিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে বা জোড়া তালি দিয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ  অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। যদি কেউ তা করে তবে তা হবে সুস্পষ্ট কুফরী।

অতএব, পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ৪র্থ বছর অর্থাৎ ৬১৪ খৃষ্টাব্দে পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাস উনার ৪ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

আর আনুষ্ঠানিক রিসালত মুবারক প্রকাশের ১০ম বছর অর্থাৎ ৬২০ খৃষ্টাব্দে পবিত্র ২১শে শাওওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ উনার পবিত্র আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয় তখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। সুবহানাল্লাহ!

একইভাবে ১ম হিজরীর অর্থাৎ ৬২৩ খৃষ্টাব্দে পবিত্র ২১শে শাওওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন তখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৯ বছর।

সেই হিসেবে ২য় হিজরী সনে (৬২৪ খ্রি. সনে) যখন সম্মানিত বদর জিহাদ সংঘটিত হয় তখন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস  সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন প্রায় ১০ বছর। আর সম্মানিত ৩য় হিজরী সনে (৬২৫ খ্রি. সনে) যখন সম্মানিত উহুদ জিহাদ সংঘটিত হয়, তখন উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন প্রায় ১১ বছর। এটাই ছহীহ, নির্ভরযোগ্য ও হাদীছ শরীফসম্মত মত। এর খিলাফ সমস্ত মত বাতিল ও পরিত্যাজ্য।

তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে তৃতীয়ত বলতে হয় যে, তারা যে, লিখেছে, “সৈন্য বাহিনীতে ১৫ বছরের কম বয়স্ক কেউ গ্রহণযোগ্য ছিল না এবং তাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হতো। (এতে বুঝা যায় সেসময় উনার বয়স মুবারক কম হলেও পনের বছর ছিল)

তাদের উক্ত ক্বিয়াস বা যুক্তি শুধু ভুলই না বরং চরম বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন সম্মানিত ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ।

তাদের উক্ত বক্তব্যের ছহীহ জাওয়াব হলো, সৈন্যবাহিনীতে ১৫ বছরের যে বাধ্যবাধকতা ছিলো তা পুরুষদের ক্ষেত্রে নিসা বা মহিলাদের ক্ষেত্রে না। কারণ জিহাদে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি সৈনিক হিসেবে ছিল না। বরং খাদিমা বা সাহায্যকারী হিসেবে ছিলো। কেননা সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহিলাদের জন্য কোনো জিহাদ নেই।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قالَتْ اِسْتَأْذَنْتُ النَّبِـيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـي الْـجِهَادِ، فَقالَ جِهَادُكُنَّ الْـحَجُّ.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত তিনি  বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। তিনি বলেন, মহিলাদের জিহাদ হলো পবিত্র হজ্জ। সুবহানাল্লাহ!

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ لِلنَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى النِّسَاءِ جِهَادٌ قَالَ نَعَمْ لَا قِتَالٌ فِيْهِ اَلْـحَجُّ وَالْعُمْرَةُ.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম মহিলাদের জন্য কোনো জিহাদ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। তবে তাতে মারামারি কাটাকাটি নেই। আর তা হচ্ছে পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরাহ। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, যেহেতু মহিলাদের জন্য জিহাদ নেই, তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, জিহাদে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি সৈনিক হিসেবে ছিল না। তাই মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৫  বছর বয়সের বাধ্যবাধকতাও ছিলো না। ১৫ বছর বয়সের বাধ্যবাধকতা ছিলো যারা পুরুষ তাদের ক্ষেত্রে। আর এজন্যই আমরা দেখতে পাই যে, ১৫ বছরের কম বয়সের যাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে তারা সকলেই ছিলেন পুরুষ। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ عَرَضَنِـىْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ فِـى الْقِتَالِ وَاَنَا اِبْنُ أَرْبَعَ عَشَرَةَ سَنَةً فَلَمْ يُجِزْنِـيْ وَعَرَضَنِيْ يَوْمَ الْـخَنْدَقِ وَاَنَا اِبْنُ خَـمْسَةَ عَشَرَةَ سَنَةً فَأَجَازَنِـيْ

অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে উহুদ জিহাদে অংশ গ্রহণ করার বিষয়ে আমার ব্যাপারে সুপারিশ করা হলো, তখন আমার বয়স মুবারক ছিলো ১৪ বছর। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে আমাকে অনুমতি দেননি। আর আমার বয়স যখন ১৫ বছর তখন খন্দক জিহাদে অংশ গ্রহণ করার বিষয়ে সুপারিশ করা হলে তিনি আমাকে এ বিষয়ে অনুমতি দেন। (বুখারী শরীফ)

সুতরাং সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ১৫ বছরের কম বয়সী যাদেরকে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে উনারা সকলেই ছিলেন পুরুষ। ১৫ বছরের কম বয়সী কোনো মহিলাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এরূপ কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া ১৫ বছরের কম বয়সী অনেকেই যে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছেন তারও বহু প্রমাণ পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتْ حُمَيْدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ سَـمِعْتُ  اَنَسًا رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَقُوْلُ اُصِيْبُ حَارِثَةَ يَومَ بَدْرٍ وَهُوَ غُلَامٌ فَجَاءَتْ أُمُّهٗ إِلَى النَّبِـيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلَّمَ فَقالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّمَ قَدْ عَرَفْتَ مَنْزِلَةً حَارِثَةَ مِنِّـيْ فَإنْ يَّكُنْ فِـي الْـجَنَّةِ اَصْبِرُ وأَحْتَسِبُ وَاِنْ يَّكُنِ الْأُخْرٰى تَرَ مَا اَضِعُ فَقَالَ (وَيْـحَكِ اَوْ هَبِلْتِ اَوْ جَنَّةٌ وَّاحِدَةٌ هِيَ إنَّـهَا جَنَّاتٌ كَثِيْرَةٌ وَاِنَّهٗ فِيْ جَنَّةِ الْفِرْدَوْسِ)

অর্থ: হযরত হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হযরত হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক শক্তিশালী বালক ছিলেন। তিনি বদর যুদ্ধে শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর উনার আম্মা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, হযরত হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার নিকট কত মুহব্বতের ছিলেন আপনি তা অবশ্যই জানেন। তিনি যদি জান্নাতী হন তবে আমি অবশ্যই সবর করবো এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ছওয়াব প্রত্যাশা করবো। আর যদি তার ব্যতিক্রম হয় তবে আমি কি করবো তা তো আপনি দেখতেই পাবেন। তখন তিনি বললেন, আপনার কি হয়েছে? আপনি কি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন? জান্নাত কি একটি? জান্নাত অনেক। তিনি তো জান্নাতুল ফিরদাউসে রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত وَهُوَ غُلَامٌ এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-

وَهُوَ الصَبِـىٌّ دُوْنَ الْبُلُوْغِ

অর্থাৎ তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক ছিলেন। আসলে ১৫ বছর বয়সের যে কথা বলা হয়েছে সেটা আসলে বালিগ বালিগা নির্ধারণের জন্যই বলা হয়েছে। আর এ কারণেই ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ “বালেগ হওয়ার বয়স” সম্পর্কিত বাব বা অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন- সম্মানিত শরীয়ত তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, মেয়েদের বালেগা বা প্রাপ্তবয়স্কা হওয়ার জন্য ন্যূনতম বয়স হচ্ছে ৯ বছর এবং ছেলেদের বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য ন্যূনতম বয়স হচ্ছে ১২ বছর। আর ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য বালেগ ও বালেগা হওয়ার জন্য উর্ধ্বতম বয়স হচ্ছে ১৫ বছর। এটাই সম্মানিত হানাফী মাযহাবের মত।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক ও বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা অকাট্য ও সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, উলামায়ে সূ, নাস্তিক, মুরতাদ, মুনাফিক, বিদয়াতী, গোমরাহ, ও বাতিল ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহিস সালাম তিনি বদরের জিহাদ (৬২৪ খ্রি.) এবং উহুদের জিহাদ (৬২৫ খ্রি.) ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করেছেন। উল্লেখ্য যে, সৈন্যবাহিনীতে ১৫ বছরের কম বয়স্ক কেউ গ্রহণযোগ্য ছিল না এবং তাদের ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং সেসময় যে উনার বয়স মুবারক ৬ বা ৯ বছর ছিল না, তা বলাই বাহুল্য।

তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই ডাহা মিথ্যা বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর মনগড়া ও দলীলবিহীন। তাই তা মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়, বরং সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য।

অসমাপ্ত- (পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭