পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মুবারক নির্দেশনা অনুযায়ী বাইয়াত হওয়া ফরয। যারা বলে বাইয়াত হওয়া পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ এবং সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও এ বিষয়ে কোন নির্দেশনাদান করেননি, তারা অজ্ঞ ও গ-মূর্খ। পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার কারণে তারা কাট্টা কাফির।

সংখ্যা: ২৩০তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “তোমরা সকলেই আল্লাহওয়ালা-আল্লাহওয়ালী হয়ে যাও।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৯) মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন: “যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে তবে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার প্রিয়তম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করা। কারণ উনারাই হলেন সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়ার সমধিক উপযুক্ত।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)

এই সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিল করা বান্দা-বান্দি ও উম্মতের জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ। যদি না মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মত ও পথ হুবহু অবলম্বন ও অনুসরণ করা হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধু উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্যই ইখলাছের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগী করা শর্ত করে দিয়েছেন। ইবাদত দু’প্রকার। ইবাদতে জাহিরা ও ইবাদতে বাতিনা। ইবাদতে জাহিরা হচ্ছে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি। আর ইবাদতে বাতিনা হচ্ছে ইরফানে খোদাওয়ান্দী। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত, মা’রিফাত, তায়াল্লুক-নিসবত হাছিল করা। দু’প্রকার ইবাদতেই ইখলাছ প্রয়োজন। এই ইখলাছ অর্জন করা ফরয।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ইখলাছ অর্জন করো। অল্প আমলই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ইলম অর্জন করা ফরয।” এই ইলমও দু’প্রকার। ক্বলবী ইলম, অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ এবং যবানী ইলম, অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ। অন্তর ইছলাহ না হলে উবূদিয়াত ও আবদিয়াতের সম্বন্ধ আর অবশিষ্ট থাকে না। তখন মানুষ হয় ইবলিসের দোসর। আকারে মানুষ হলেও সে প্রকারে হয় ইবলিস। যে ইলম হাছিলে এবং যে শিক্ষা ও দীক্ষা গ্রহণে গইরুল্লাহ থেকে বিমুক্তি ঘটে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসাসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রিযামন্দি হাছিলের জন্য অন্তর ও অনুভবে যোগ্যতা পয়দা হয়, তার নাম তাছাউফ। আরো সহজ কথায় বলা যায়, সম্মানিত শরীয়ত উনার আহকাম যথাযথভাবে পালন করা এবং পূর্ণ শিষ্টতা, আদব ও হক্ব আদায় করার নাম তাছাউফ। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, মুরাক্বাবা, মুশাহাদা, যিকির-ফিকির ইত্যাদি সবই ওসীলা। এই ওসীলা অবলম্বনের সঙ্গে বিশুদ্ধ নিয়ত, অর্থাৎ ইখলাছ যুক্ত না থাকলে সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অন্তর পরিশুদ্ধির জন্য যে ওসীলা অবলম্বন করতে হয়, প্রকৃতপক্ষে তাই মূল ওসীলা।

শায়েখ ব্যতীত যেহেতু ইখলাছ হাছিল হয় না, সেহেতু শায়েখ বা পীর ছাহিব তিনিই হলেন সকল ওসীলার ওসীলা। মহান আল্লাহ তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্য ওসীলা তথা মাধ্যম তালাশ করো।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫) আলোচ্য ওসীলার ব্যাখ্যায় নির্ভরযোগ্য সকল তাফসীর শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে: “ওসীলা ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্যলাভ করা যায় না। আর এই ওসীলা হচ্ছেন হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ, অর্থাৎ তরীক্বত উনার মাশায়িখগণ তথা কামিলে মুকাম্মিল মুর্শিদগণ।” সুবহানাল্লাহ!

বাহ্যিকভাবে দলগত বিভাজন দেখা গেলেও আক্বীদাগতভাবে জামাতি, খারিজী, ওহাবী, লামাযহাবী, দেওবন্দী, তাবলীগী ইত্যাদি বাতিল গোষ্ঠীরা মূলে অভিন্ন। শুধু দেওবন্দীরা অতি কষ্টে বাইয়াত হওয়ার ফরয বিষয়টিকে বলে মুস্তাহাব। নাঊযুবিল্লাহ! এই বাতিল গোষ্ঠীরা সম্মানিত ইসলাম উনার নতুন ফর্মুলা তৈরী করেছে। তারা বেপর্দা, গণতন্ত্র, টিভি, ছবি, গানবাজনা, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ, খেলাধূলাকে নাজায়িয ও হারাম বলে না। কিন্তু অন্তরে ইখলাছ অর্জন করার অনিবার্য প্রয়োজনে বাইয়াত হওয়ার ফরয বিষয়টিকে নাজায়িয বলে। এদের কেউ কেউ এমনও বলে: “মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে কিছুই ইরশাদ মুবারক করেননি এবং ‘পীর’, ‘মুরীদ’, ‘মুর্শিদ’ এসব সম্পর্কেও তিনি কিছুই বলেননি। নাঊযুবিল্লাহ।

মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “তোমরা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উলিল আমর তথা হাক্বীক্বী নায়িবে নবী, ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া, হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনাদেরকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, পুঙ্খানুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করো।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯) মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন: “ওই সমস্ত লোকদের ছোহবত লাযিম করে নাও, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল রয়েছেন।” (পবিত্র সূরা কাহফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮) আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে: “যে ব্যক্তি আমার দিকে রুজু হয়েছেন, উনার অনুসরণ করো।” (পবিত্র সূরা লুকমান আলাইহিস সালাম: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫) আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে হিদায়েতদান করেন (যে হিদায়েত চায়), সেই হিদায়েতপ্রাপ্ত হয়। আর যে গুমরাহীর উপর দৃঢ় থাকে, সে কোন ওলীয়ে মুর্শিদ বা হক্ব মত-পথ প্রদর্শক ওলীআল্লাহ উনার ছোহবতলাভ করতে পারে না।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে: “শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি উনার ক্বওমের লোকদের নিকট ওইরূপ সম্মানিত ও অনুসরণীয়, যেরূপ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতের নিকট সম্মানিত ও অনুসরণীয়।” (দাইলামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ, জামিউল জাওয়ামী’ শরীফ)

শায়েখ উনার ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ সম্বলিত সুদৃঢ় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কারো পক্ষেই হক্ব মত ও পথের সন্ধান লাভ এবং ওই মুবারক মতে ও পথে ইস্তিক্বামত থাকা সম্ভব নয়। তাই হযরত ইমাম-মুজতাহিদ এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সুচিন্তিত ও অখ-নীয় মুবারক ক্বওল শরীফ হলো: “যে ব্যক্তির শায়েখ বা মুর্শিদ নেই, তার মুর্শিদ হলো শয়তান।” নাউযুবিল্লাহ! গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: “মৃত অন্তরকে যিন্দা করার জন্য একজন কামিলে মুকাম্মিল শায়েখ উনাকে তালাশ করা ফরয।” এ কারণেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে: “যে ব্যক্তি তার যামানার ইমাম (শায়েখ বা কামিল মুর্শিদ) উনাকে চিনলোনা, অর্থাৎ উনার নিকট বাইয়াত হয়ে এবং উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করে অন্তর ইছলাহ করলো না, তার ইন্তিকাল হবে জাহিল অবস্থায়।” নাউযুবিল্লাহ!

এতোক্ষণের আলোচনায় বুঝা গেলো: বাইয়াত হওয়া যে ফরয, সে মুবারক বিষয়টি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত রয়েছে। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, যিকির, ফিকির ইত্যাদি সবকিছুই ওসীলা। তবে সবকিছুর ওসীলা হলেন, অন্তর ইছলাহকারী হক্কানী-রব্বানী শায়েখ। কারণ অন্তরের পরিশুদ্ধি ছাড়া কোন ইবাদত-বন্দেগীই কবুল হয়না। মানুষের ঈমান, আক্বীদা, আমল ও অন্তর ইছলাহ’র জন্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সঙ্গে যাবতীয় কাজ মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রকাশ্যে সংঘটন করেন। কিন্তু ওলীআল্লাহ উনাদের সঙ্গে যে কাজ, তা গোপনে সম্পাদিত হয়। তাই মু’জিযা প্রকাশ পাওয়া জরুরী হলেও ওলীআল্লাহ উনাদের কারামত প্রকাশিত হওয়া অবধারিত নয়। নূরে মুজাসাসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী ক্বায়িম মাক্বাম হিসেবে ওলীআল্লাহ, মুজাদ্দিদ উনারা হিদায়েত নছীহত, তা’লীম, তারবীয়াত, ফায়িজ-তাওয়াজ্জুহদানের মাধ্যমে মুরীদের অন্তরে আলো বিকিরণ করে তাদেরকে যোগ্য করে তোলেন। সুবহানাল্লাহ!

যমীনবাসীদের জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবূব ওলীআল্লাহ উনারা। এ প্রসঙ্গে তাসাউফ উনার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে উঠাবসা করতে চায়, তার জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো আহলে তাসাউফ, অর্থাৎ ওলীআল্লাহ উনাদের মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করা।” মানুষের হিদায়েত ও নছীহতের জন্য ওলীআল্লাহ উনারাই হলেন হাক্বীক্বী মাধ্যম। যে মুর্শিদ অন্তর ইছলাহ করেন এবং ঈমান, আক্বীদা, আমল ও অনুভব বিশুদ্ধ করেন, সে মুর্শিদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ এবং উদাসীনতায় মানুষের আক্বল ও সমঝের বিলুপ্তি ঘটে। মানুষ গুমরাহীর অতল তলে নিমজ্জিত হয়। তার বিনাশসাধিত হয়। ঈমানহারা হয়ে সে জাহান্নামী হয়। কারণ পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “আমার মাহবূব ওলী উনাদের সঙ্গে শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণকারীদের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করে থাকি।” নাঊযুবিল্লাহ!

লোক দেখানো নামায আদায়কারী অনেকে জাহান্নামী হবে। সে বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা মা’উন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন। ইখলাছ ব্যতীত অন্যান্য যাবতীয় ইবাদত সম্পাদনকারী তারাও জাহান্নামের বাসিন্দা হবে মর্মে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। এমন হলো কেন? হলো এজন্য যে, তাদের ইবাদত- ইখলাছের সঙ্গে হয়নি। তাদের অন্তরে ইবলিসের বসবাস। তাদের অন্তর জুড়ে কেবলই গইরুল্লাহ। কারণ তারা কোনো শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হয়নি। মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করেনি। ফায়িজ-তাওয়াজ্জুহ লাভ করেনি। তারা যিকির-ফিকির করে অন্তর ইছলাহ করেনি।

বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ হাছিল ব্যতীত ইখলাছ হাছিলের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই তাছাউফ শায়েখ উনার নিকটই শিখতে হয়। বাইয়াত হওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝানোর জন্য ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দু’ বছরব্যাপী উনার শায়েখ উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ারের মাধ্যমে ইলমে তাছাউফ তথা হাক্বীক্বী কামিয়াবী অর্জনের বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন: “আমি যদি আমার জীবনে দু’টি বছর না পেতাম তবে হালাক্ব হয়ে যেতাম।” সমঝদার মানুষের জানা যে, ইলমে তাছাউফ ব্যতীত ইলমে ফিক্বাহ একান্তই অন্তঃসারশুন্য। বুঝা গেলো, অন্তর পরিশুদ্ধির জন্যই হক্কানী শায়েখ তালাশ করা এবং উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরযের উপর ফরয।

মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবূব সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহ উনাদের পরিচয় জানা দরকার। যিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় পরিপুর্ণ বিশ্বাসী, যিনি সুন্নতের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী, যিনি হক্ব মত ও পথে ইস্তিক্বামত, যিনি ফরয-ওয়াজিব- সুন্নতে মুয়াক্কাদাতো দূরের কথা, মুস্তাহাব আমলও তরক্ব করেন না, যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে দায়িমী তায়াল্লুক-নিসবত ও দীদারে মশগুল, উনার ক্বায়িম মাক্বাম, যাঁর উপর ইলহাম-ইলকা হয়, যিনি অবারিত ইলমে লাদুন্নী উনার সম্ভারে খাজিনাতুর রহমাহ, যিনি নববী নকশায় দ্বীন ইসলাম যিন্দাকারী, যিনি মুরীদের অন্তর পরিশুদ্ধ করে সেখানে হিদায়েতের নূর, মুহব্বত-মা’রিফাত উনাদের আলো বিকিরণে সক্ষম তিনিই হলেন হক্কানী পীর, হক্কানী শায়েখ। বর্তমান পঞ্চদশ হিজরীতে এমন হক্কানী মুর্শিদ, হক্কানী শায়েখ তিনি হলেন ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে মাদারজাদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে  আ’যম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

বাইয়াত হওয়া এবং ছোহবত ইখতিয়ার করা ফরয বলেই হযরত ওয়ায়েস আল ক্বারণী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বত্রিশটি মুবারক তাজা দাঁত ভেঙ্গে ফেলার পরও ছাহাবী হতে পারেননি। বাইয়াত হওয়া এবং ছোহবত ইখতিয়ারের সঠিক ক্ষেত্র নির্ধারণ এবং তাতে ইস্তিক্বামত থাকা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন: “ওইসব মানুষের ছোহবত লাযেম করে নাও, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্য যিকির আযকারে মশগুল।” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)

ভন্ড পীরেরাও তাছাউফ শিক্ষাদানের নামে মানুষকে গুমরাহ করে থাকে। তাদের ছোহবতে যাওয়া হারাম। কারণ বাঁকা লাঠির ছায়া বাঁকা হয়। যে সমঝ ও অনুভূতি ইলমে তাছাউফকে পরিবেষ্টন করে না এবং যে ধর্ম, অর্থাৎ তাছাউফ মনগড়া সমঝ, অনুভূতি, আক্বীদার উপর বিজয়ী হয় না, তা তাছাউফ নয়। ধর্মও নয়। তার নাম নফসের খাদ্য। তার নাম গইরুল্লাহ। এ মর্মে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “ওই ব্যক্তির ছোহবত ইখতিয়ার করতে হবে: যাকে দেখলে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ হয়, যাঁর আমল দেখলে পরকালের আমল করতে ইচ্ছা হয় এবং যাঁর কথা শুনলে দ্বীনি জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।”

বিশুদ্ধ ঈমান হোক, আক্বীদা হোক, আমল হোক, সমঝ হোক, অনুভব হোক, রূহানী কুওওয়াত হোক, ফায়িজ হোক, তাওয়াজ্জুহ হোক, ইস্তিকামাত হোক, ইসলাহ হোক, ইলমে ফিক্বাহ হোক, ইলমে তাছাউফ হোক, সুন্নত অনুসরণে প্রাত্যহিক জীবন নির্বাহ হোক ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের জন্যই একজন শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয।

যে সব বাতিল গোষ্ঠীরা বলে, বাইয়াত হওয়া পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খেলাফ এবং হক্কানী পীর-মুর্শিদ উনাদের নিকট বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোনো নির্দেশ মুবারক দান করেননি, তারা অজ্ঞ ও গ-মূর্খ। পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার কারণে তারা কাট্টা কাফির। এ কুফরী আক্বীদা থেকে মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তিনি হক্ব তালাশীগণ উনাদেরকে হিফাযত করুন। আমীন!

-মুহম্মদ সাদী।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম