পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহূর্তের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৭ম পর্ব)

সংখ্যা: ২৪৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহূর্তের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

(৭ম পর্ব)


[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-২৩৭), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” (২০৩তম সংখ্যা), ৩২. হানাফী মাযহাব মতে নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে ‘আমীন’ অনুচ্চ আওয়াজে বা চুপে চুপে পাঠ করাই শরীয়তের নির্দেশ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১২তম সংখ্যা), ৩৩. পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২২০তম সংখ্যা থেকে যা এখনো চলছে) পেশ করার পাশাপাশি-

৩৪তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো “উলামায়ে সূ”। ইহুদীদের এজেন্ট উলামায়ে ‘সূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে মুসলমান উনাদের বিশেষ বিশেষ ফযীলতযুক্ত আমলের রাত ও দিনসমূহ পালন করাকে বিদয়াত, নাজায়িয ও শিরক বলে ফতওয়া দিয়ে মুসলমান উনাদেরকে অশেষ খায়ের, বরকত, নিয়ামত, নাজাত অর্থাৎ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক থেকে মাহরূম করছে। যেমন তারা বলে থাকে যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত, শিরক। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো অনেক বিষয়কেই তারা বিনা দলীলে মনগড়াভাবে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

অপরদিকে বেদ্বীনী-বদদ্বীনী অর্থাৎ কাফির মুশরিক, ইহুদী, নাছারাদের যত পর্ব বা দিবস রয়েছে সেগুলোকে শুধু জায়িযই নয় বরং নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! যেমন বাইতুল মুকাররমের সাবেক খতীব ওবায়দুল হক্ব প্রকৃতপক্ষে উবাই বলেছিল, “পহেলা বৈশাখ আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এসব বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত শিরক এবং পহেলা বৈশাখ মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত।” নাউযুল্লিাহ! তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হালাল বা জায়িয বিষয়কে হারাম বা নাজায়িয বলা এবং হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-

استحلال الـمعصية كفر.

অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমান উনাদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে “পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা থেকে বিরত থাকবে এবং হারাম পহেলা বৈশাখ পালন করবে” তারা অশেষ খায়ের, বরকত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হওয়ার কারণে কঠিন গুনাহগার অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ তারা তাদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিনের আমলসমূহের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি”  প্রকাশ করা হলো।

সম্মানিত ইসলামী মাস, বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় সমূহ সম্পর্কে এবং চন্দ্র ও সূর্যের গতিবিধির ব্যাপারে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার ২৬ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর

বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

সূর্য ও চন্দ্র এই দু’টি ইসলামী মাস, রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় নিরুপনের ব্যাপারে মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র উনাদের আবর্তনের কারণে বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময়গুলো সুচারুরূপে আগমণ করে থাকে। এজন্য আমরা ইসলামী মাস, রাত, দিন, মুহুর্ত ও সময় ইত্যাদীর আলোচনার পাশাপাশি চন্দ্র ও সূর্যের আবর্তন ও তাদের গতিবিধি সম্পর্কে আলোচনা করবো। যাতে করে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায় এবং বুঝতে সহজ হয়। নি¤েœ এ সম্পর্কিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো:

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর-৩

تُوْلِجُ اللَّيْلَ فِى النَّهَارِ وَتُوْلِجُ النَّهَارَ فِى اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَى مِنَ الْمَيّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيّتَ مِنَ الْحَى وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ. (سورة ال عمران شريفة ۲۷ الاية الشريفة)

অর্থ: আপনি রাতকে দিনের ভিতরে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেন। আর আপনিই জীবিতকে মৃতের ভিতর থেকে বের করে আনেন এবং মৃতকে জীবিতের ভিতর থেকে বের করে আনেন। আপনিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিয্ক দান করে থাকেন। (পবিত্র সূরাতু আলে ইমরান শরীফ ২৭ নম্বর আয়াত শরীফ)

অত্র পবিত্র আয়াত উনার বিশুদ্ধ তাফসীর

বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

{تُولِجُ اليل فِى النهار} يقول تزيد النهار على الليل فيكون النهار أطول من الليل {وَتُولِجُ النهار فِى اليل} يقول تزيد الليل على النهار فيكون الليل اطول من النهار. (تنوير المقباس من تفسير ابن عباس رضى الله عنهما المتوفى ۶۸ هجرى سورة ال عمران شريفة ۲۷ الاية الشريفة جمعه: محمد بن يعقوب الفيروز ابادى رحمة الله عليه المتوفى ۸۱۷ هجرى(

অর্থ: (আপনি রাতকে দিনের ভিতরে প্রবেশ করান) দিনকে রাতের চেয়ে বড় করেন, তখন দিন রাতের চেয়ে বড় হয় (এবং দিনকে রাতের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেন) রাতকে দিনের চেয়ে বড় করেন, তখন দিনের চেয়ে রাত বড় হয়। (তানবীরুল মাক্ববাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ওয়াফাত মুবারক: ৬৮ হিজরী পবিত্র সূরাতু আলে ইমরান শরীফ ২৭ নম্বর আয়াত শরীফ সংকলনকারী: হযরত মুহাম্মাদ বিন ইয়া’কূব ফীরোযাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮১৭ হিজরী)

{تُولِجُ اللَّيْلَ فِى النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِى اللَّيْلِ} اى تأخذ من طول هذا فتزيده فى قصر هذا فيعتدلان ثم تأخذ من هذا فى هذا فيتفاوتان ثم يعتدلان. وهكذا فى فصول السنة ربيعًا وصيفًا وخريفًا وشتاء. (تفسير القران العظيم اى تفسير ابن كثير سورة ال عمران شريفة ۲۷ الاية الشريفة المؤلف: ابو الفداء اسماعيل بن عمر بن كثير القرشى الدمشقى الشافعى رحمة الله عليه الولادة ۷۰۰ هجرى و الوفاة ۷۷۸ هجرى(

অর্থ: (আপনি রাতকে দিনের ভিতরে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেন) আপনি রাতের অতিরিক্ত অংশ দিনে যোগ করে দিনকে রাতের সমান করে দেন এবং এক দিকের এক অংশ অন্য দিকে সংযোজন করে একটিকে বড় ও অপরটি ছোট করে থাকেন। তারপর আবার উভয়কে সমান সমান করে থাকেন। আপনিই একটি বছরের মধ্যে গ্রীষ্ম, বসন্ত, হেমন্ত, শীত ইত্যাকার বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তন করে থাকেন। (তাফসীরুল্ কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরু ইবনি কাছীর পবিত্র সূরাতু আলে ইমরান শরীফ ২৭ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামিশকী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)

عَنْ عَبْدِ اللهِ رضى الله عنه فِى قوله: {تُولِجُ اللَّيْلَ فِى النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِى اللَّيْلِ} قَالَ: اَخْذُ الشِّتَاءِ مِنَ الصَّيْفِ وَالصَّيْفِ مِنَ الشِّتَاءِ،

عَنْ الحسن رحمة الله عليه فِى قوله عَزَّ وَجَلَّ : {تُولِجُ اللَّيْلَ فِى النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِى اللَّيْلِ} قَالَ اللَّيْل اثنتا عشرة ساعة والنهار اثنتا عشرة ساعة، فَاذَا اَولج اللَّيْل فِى النَّهَار اخذ النَّهَار من ساعات اللَّيْل فطال النَّهَار وقصر اللَّيْل، واذا اولج النَّهَار فِى اللَّيْلِ اخذ اللَّيْل من ساعات النَّهَار فطال اللَّيْل وقصر النَّهَار. (تفسير ابن المنذر اى تفسير النيسابورى سورة ال عمران شريفة ۲۷ الاية الشريفة المؤلف: ابو بكر محمد بن ابراهيم بن المنذر النيسابوري المتوفى ۳۱۹ هجرى(

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী (আপনি রাতকে দিনের ভিতরে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেন) অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন: গ্রীষ্মকাল থেকে শীতকাল কিছু দিন গ্রহণ করে এবং শীতকাল থেকে গ্রীষ্মকাল কিছু দিন গ্রহণ করে।

হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী (আপনি রাতকে দিনের ভিতরে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেন) অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন: সাধারণত: রাত ১২ ঘন্টায় হয়ে থাকে এবং অনুরূপ দিনও ১২ ঘন্টায় হয়ে থাকে। যখন রাত দিনের মধ্যে প্রবেশ করে, এতে দিন রাতের কতক ঘন্টা সময় গ্রহণ করে, সুতরাং তখন দিন লম্বা হয় আর রাত ছোট হয়। আর যখন দিন রাতের মধ্যে প্রবেশ করে, এতে রাত দিনের কতক ঘন্টা সময় গ্রহণ করে, সুতরাং তখন রাত লম্বা হয় আর দিন ছোট হয়। (তাফসীরু ইবনিল মুনযির অর্থাৎ তাফসীরুন্ নীসাবূরী পবিত্র সূরাতু আলে ইমরান শরীফ ২৭ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন মুনযির নীসাবূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১৯ হিজরী)

{تُولِجُ الليل فِى النهار} يعنى ما نقص من الليل دخل فى النهار حتى يبلغ خمسة عشرة ساعة هو اطول ما يكون والليل تسع ساعات وهو أقصر ما يكون {وَتُولِجُ النهار فِى الليل} يعنى ان ما نقص من النهار دخل فى الليل حتى يصير الليل خمس عشرة ساعة والنهار تسع ساعات. (بحر العلوم اى تفسير السمرقندى سورة ال عمران شريفة ۲۷ الاية الشريفة المؤلف: ابو الليث نصر بن محمد بن احمد بن ابراهيم السمرقندى الحنفى رحمة الله عليه المتوفى ۳۷۳ هجرى(

অর্থ: (আপনি রাতকে দিনের ভিতরে প্রবেশ করান) অর্থাৎ রাত কমে গিয়ে দিনে প্রবেশ করে, এমনকি দিন সর্ব্বোচ্চ ১৫ ঘন্টা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে আর এমতাবস্থায় রাত সর্বনি¤œ ৯ ঘন্টায় নামে। (এবং দিনকে রাতের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেন) অর্থাৎ দিন কমে গিয়ে রাতে প্রবেশ করে, এমনকি রাত সর্ব্বোচ্চ ১৫ ঘন্টা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে আর এমতাবস্থায় দিন সর্বনি¤œ ৯ ঘন্টায় নামে। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামারকান্দী পবিত্র সূরাতু আলে ইমরান শরীফ ২৭ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবুল লাইছ নছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৭৩ হিজরী)

উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর থেকে প্রমাণীত হলো যে, এলাকাভিত্তিক সাধারণত: দিন রাত বারো ঘন্টা করে চব্বিশ ঘন্টায় হয়ে থাকে। তবে ঋতুর পরিবর্তনের কারণে দিন রাত বারে ও কমে। দিন রাত সর্ব্বোচ্চ পনের ঘন্টা আর সর্বনি¤œ নয় ঘন্টা হয়ে থাকে।

পবিত্র আয়াত শরীফ নম্বর-৪

يايهَا الَّذِينَ امَنُوْا لَا تُحِلُّوْا شَعَائِرَ اللهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ (سورة المائدة الشريفة ۲ الاية الشريفة)

অর্থ: হে মু’মিনগণ! তোমরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করো না মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিদর্শন সমূহকে এবং সম্মানিত হারাম মাস সমূহকে হালাল করো না …। (পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বিশুদ্ধ তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ

وَلَا الشَّهْرَ الْحَرامَ واحلال القتال فيه وقال ابن زيد رحمة الله عليه هو النسى وذلك انهم كانوا يحلونه عاما ويحرمونه عاما. (التفسير المظهرى سورة المائدة الشريفة ۲ الاية الشريفة المؤلف: حضرت محمد ثناء الله الهندى البانى بنى النقشبندى الحنفى رحمة الله عليه المتوفى سنة ۱۲۱۶ هجرى)

অর্থ: তোমরা হারাম মাস সমূহকে হালাল মনে করো না। অর্থাৎ পবিত্র মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ বৈধ করে নিয়ো না। হযরত ইবনু যায়েদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র মাসের অবমাননা করা থেকে নিষেধ করার অর্থ হচ্ছে নাসী থেকে নিষেধ করা। জাহিলিয়াত যুগে কাফিররা পবিত্র মাস চতুষ্ঠয়ের (রজব, যুল্ ক্বা’দাহ, যুল হিজ্জাহ ও মুহাররম) কোন কোন মাসকে এক বছর যুদ্ধ করার জন্য বৈধ করে নিতো এবং পরের বছর তাকে সঠিক মর্যাদায় নিষিদ্ধ মাস বলতো। এরূপ করাকে নাসী বলা হতো। (আত্ তাফসীরুল মাযহারী পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ ২ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ ছানাউল্লাহ হিন্দী পানীপথী নকশাবন্দী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২১৬ হিজরী)

{يايُّهَا الَّذِينَ امَنُوا لا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللهِ} قال ابن عباس رضى الله عنهما يعنى بذلك مناسك الحج. وقال مجاهد رحمة الله عليه: الصفا والمروة والهدي والبُدن من شعائر الله. وقيل: شعائر الله محارمه التى حرمها اى لا تحلوا محارم الله التى حرمها تعالى ولهذا قال تعالى {وَلا الشَّهْرَ الْحَرَامَ} يعنى بذلك تحريمه والاعتراف بتعظيمه وترك ما نهى الله عن تعاطيه فيه من الابتداء بالقتال وتأكيد اجتناب الـمحارم كما قال تعالى: {يَسْاَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيهِ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ} [البقرة: ۲۱۷ ]، وقال تعالى: {انَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِى كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالاَرْضَ مِنْهَا اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ} الآية.[التوبة: ۳۶].

وفى صحيح البخارى: عن ابى بكرة رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فى حجة الوداع: “ان الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق الله السموات والارض السنة اثنا عشر شهرا منها اربعة حُرُم ثلاث متواليات: ذو القَعْدة وذو الحجة والمحرم ورجب مُضَر الذى بين جُمادى وشعبان”.

وهذا يدل على استمرار تحريمها الى اخر وقت كما هو مذهب طائفة من السلف.

وقال على بن ابى طلحة رضى الله عنه عن ابن عباس رضى الله عنهما فى قوله تعالى: {وَلا الشَّهْرَ الْحَرَامَ} يعنى لا تستحلوا قتالا فيه. وكذا قال مُقَاتل بن حَيَّان رحمة الله عليه وعبد الكريم بن مالك الجزَريُّ واختاره ابن جرير ايضًا، وقد ذهب الجمهور الى ان ذلك منسوخ، وانه يجوز ابتداء القتال في الاشهر الحرم واحتجوا بقوله: {فَاذَا انْسَلَخَ الاشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ} [التوبة:۵] قالوا: والـمراد اشهر التسيير الاربعة، {فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ} قالوا: فلم يستثن شهرا حراما من غيره.

وقد حكى الامام ابو جعفر رحمه الله الاجماع على ان الله قد احل قتال اهل الشرك فى الاشهر الحرم وغيرها من شهور السنة، قال: وكذلك اجمعوا على ان المشرك لو قلد عنقه او ذراعيه بلحاء جميع اشجار الحرم لم يكن ذلك له امانا من القتل اذا لم يكن تقدم له عقد ذمة من المسلمين او امان. (تفسير القران العظيم اى تفسير ابن كثير سورة المائدة الشريفة ২ الاية الشريفة المؤلف: ابو الفداء اسماعيل بن عمر بن كثير القرشى الدمشقى الشافعى رحمة الله عليه الولادة ۷۰۰ هجرى و الوفاة ۷۷۸ هجرى(

অর্থ: (হে মু’মিনগণ! তোমরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করো না মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিদর্শন সমূহকে) হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: শায়ায়িরাল্লাহ দ্বারা হজ্জ উনার নিদর্শনাবলীকে বুঝানো হয়েছে। আর হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: ছফা, মারওয়া, কুরবানীর পশু ও উটকে বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, উনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সমস্ত বস্তুকে হারাম করেছেন সেগুলোকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা মহান আল্লাহ পাক কর্তৃক হারাম ঘোষিত বস্তুগুলোকে হালাল মনে করো না। এ জন্যে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি বলেছেন: ‘নিষিদ্ধ মাসগুলোকে তোমরা অবমাননা করো না’। অর্থাৎ মাসগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো এবং তোমরা এ মাসে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার মতো নিষিদ্ধ কাজগুলো পরিহার করো। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেছেন: ‘হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তারা আপনাকে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন- ঐ মাস সমূহে যুদ্ধ করা বড় গুনাহ’ পবিত্র সূরাতুল বাক্বারাহ ২১৭ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি অন্যত্র আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন: ‘আসমান যমীন সৃষ্টির শুরু থেকেই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বছরে মাসের সংখ্যা ১২টি, তন্মধ্যে চারটি হারাম বা পবিত্র, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান, তোমরা এ মাস সমূহে নিজেদের উপর যুলূম করো না’ পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ ৩৬ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ। ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে হযরত আবূ বাকরাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিদায় হজ্জের ভাষণে ইরশাদ মুবারক করেন, “আসমান ও যমীন সৃষ্টির দিন মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি যামানাকে যেরূপ সৃষ্টি করেছিলেন, এখন তা সেরূপে ফিরে এসেছে। ১২ মাসে একটি বছর হয়। উনার মধ্যে ৪টি মাস নিষিদ্ধ। ত¤œধ্যে তিনটি মাস একসাথে, যেমন যুল্ ক্বা’দাহ, যুল্ হিজ্জাহ ও মুহাররম। আর একটি হলো মুদ্বার গোত্র কর্তৃক কথিত রজব মাস। এ মাসটি জুমাদাল উখরা ও শা’বান মাস উনাদের মাঝখানে অবস্থিত।” উনার থেকে প্রমাণীত হয় যে, এ মাসগুলোর এ জাতীয় সম্মান ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। যা পূর্ববর্তী মুফাসসিরীন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মত।

হযরত আলী বিন আবী ত্বলহাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ উনার তাফসীরে বলেন: তোমরা নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করাকে বৈধ মনে করো না। হযরত মুক্বাতিল বিন হাইয়ান রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল করীম বিন মালিক জাযারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনু জারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেও এমটি মত পোষণ করেন। কিন্তু অধিকাংশ আলিম উনাদের মত এই যে, অত্র পবিত্র আয়াতাংশ উনার নির্দেশ মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। তাই উক্ত নিষিদ্ধ মাসগুলোতে কাফিরদের বিরুদ্ধে প্রথমে যুদ্ধ ঘোষণা করা এখন বৈধ। নি¤েœাক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা তার দলীল- ‘যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতীত হয়ে যায়, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানে পাও সেখানেই হত্যা কর। পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ ৫ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ।’ উনার মর্মার্থ এই যে, মাসগুলোর অতীত সম্মান যখন অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, তখন তোমরা কাফিরদের সাথে সব সময় জিহাদ করতে থাক। এটা এখন তোমাদের জন্য বৈধ হয়ে গেল। হযরত ইমাম আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ ব্যাপারে আলিম উনাদের ইজমা’ হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা যে কোন সময় এবং যে কোন মাসে জিহাদ করা বৈধ রেখেছেন। তিনি আলিমদের আর একটি ইজমা’ হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন যে, যদি কোন মুশরিক হারাম শরীফ উনার যাবতীয় গাছের ছাল দ্বারা নিজেকে আবৃত করে এবং পূর্ব থেকে কোন মুসলমান তাকে নিরাপত্তা প্রদান না করে থাকে, তবে সে নিরাপত্তা পাবে না। (তাফসীরুল্ কুরআনিল আযীম অর্থাৎ তাফসীরু ইবনি কাছীর পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ ২ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন উমর বিন কাছীর কুরাশী দামিশকী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত: ৭০০ হিজরী ওয়াফাত: ৭৭৪ হিজরী)

قال ابو جعفر رحمة الله عليه: واولى الاقوال فى ذلك بالصحة قول من قال: نسخ الله من هذه الاية قوله: “ولا الشهر الحرام ولا الهدى ولا القلائد ولا امين البيت الحرام”، لاجماع الجميع على ان الله قد احلّ قتال اهل الشرك فى الاشهر الحرم وغيرها من شهور السنة كلها. وكذلك اجمعوا على ان المشرك لو قَلَّد عنقه او ذراعيه لحاء جميع اشجار الحرم لم يكن ذلك له امانًا من القتل اذا لم يكن تقدَّم له عقد ذمة من المسلمين او امان. (جامع البيان فى تأويل القران اى تفسير الطبرى سورة المائدة الشريفة ۲ الاية الشريفة المؤلف: محمد بن جرير بن يزيد بن كثير بن غالب الاملى ابو جعفر الطبرى رحمة الله عليه المتوفى ۳۱۰ هجرى(

অর্থ: হযরত ইমাম আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে বর্ণিত মতামত সমূহের মাঝে ঐ ব্যাখ্যাকারদের মতই উত্তম, যাঁরা বলেন যে, আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার নিম্নোক্ত

ولا الشهر الـحرام ولا الـهدى ولا القلائد ول امين البيت الـحرام

অংশটুকু মহান আল্লাহ পাক তিনি মানসূখ বা রহিত করেছেন।

কেননা, হযরত মুফাসসিরীন কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এ ব্যাপারে একমত যে, হারাম মাস ও এছাড়া অন্যান্য মাস তথা পূর্ণ বছরই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করা মুসলমানদের জন্য হালাল ও বৈধ ঘোষণা করেছেন। অনুরূপভাবে সমস্ত উম্মাত এ ব্যাপারেও একমত হয়েছেন যে, মুশরিকরা হারাম শরীফ উনার গাছের ছাল দিয়ে কন্ঠাভরণ তৈরি করে তা গলায় পরুক বা বাহুতে রাখুক, এতে তারা হত্যা থেকে নিরাপত্তা পাবে না। যদি মুসমানদের পক্ষ হতে তাদের সাথে কোন অঙ্গীকারনামা বা নিরাপত্তা চুক্তি সম্পাদিত না হয়ে থাকে। (জামিউল বয়ান ফী তা’বীলিল্ কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুত্ ত্ববারী পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ ২ নম্বর আয়াত শরীফ লেখক: হযরত মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ বিন কাছীর বিন গালিব আমালী আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩১০ হিজরী)

قَوْلُه تَعَالى: {وَلاَ الشَّهْرَ الْحَرَامَ} اى ولا تَسْتَحِلُّوا القَتْلَ والغارَة فى الشَّهرِ الحرامِ، وارادَ بذلك الاشهُرَ الْحُرُمَ كلَّها وهى رَجَبٌ وذُو الْقَعْدَةِ وذُو الْحِجَةِ وَالْمُحَرَّمُ، … ثم نُسِخَ حرمةُ القتال فى الشهرِ الحرام بقوله تعالى: {فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ} [التوبة: ۵]. (تفسير القران العظيم للطبرانى سورة المائدة الشريفة ۲ الاية الشريفة المؤلف: ابو القاسم سليمان بن احمد بن ايوب بن مطير اللخمى الشامى الطبرانى الوفاة ۳۶۰ هجرى(

অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী: (তোমরা হারাম মাস সমূহকে হালাল মনে করো না) অর্থাৎ তোমরা হারাম তথা সম্মাণিত মাস সমূহে যুদ্ধ ও হামলা করা বৈধ মনে করো না। এখানে সব কয়টি হারাম মাস দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- রজব, যুল্ ক্বা’দাহ, যুল্ হিজ্জাহ ও মুহাররম। …

অতপর হারাম মাস সমূহে যুদ্ধ না করার বিধান মানসূখ বা রহিত হয়েছে। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার বাণী: (তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা করো) পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ ৫ নম্বর আয়াত শরীফ। (তাফসীরুল্ কুরআনিল আযীম নিত্ ত্ববারানী পবিত্র সূরাতুল্ মায়িদাহ শরীফ ২ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ লেখক: হযরত আবুল ক্বাসিম সুলাইমান বিন আহমাদ বিন আইয়ূব বিন মুত্বীর লাখমী শামী ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৩৬০ হিজরী)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, নাসী তথা হারাম মাস উনাকে এক বছর হারাম বা নিষিদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করা এবং অন্য বছর হালাল হিসেবে গ্রহণ করা, অপর কথায় নিজেদের সুবিধার জন্য মাসকে ও সময়কে আগ-পিছ করা সম্মানিত ইসলামী শরীয়াত উনার দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িয ও কুফরী।

বারো মাসের মধ্যে চারখানা হারাম মাসে পূর্ব যামানায় যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ থাকলেও এখন আমাদের পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে তা আর নিষিদ্ধ নয়। কারণ অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বিধান পরবর্তীতে নাযিলকৃত আরেকখানা পবিত্র আয়াত শরীফ তথা পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ উনার ৫ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়েছে।

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০