পবিত্র মাহে ছফর শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৩৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সমস্ত প্রশংসা যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। আসমান-যমীনের ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র বিষয়ও উনার ইলিম মুবারকের বাইরে নয়। যিনি ইলিম মুবারক রাখেন মানুষের অন্তরের নিভৃতে বার বার যা কল্পনা আনাগোনা করে সে সম্পর্কেও। উনার ইলিম মুবারকের আওতায় রয়েছে পানি ও স্থলভাগের ছোট-বড়, কম-বেশি সবকিছুই। যিনি আকৃষ্ট করেছেন আপন আনুগত্যের প্রতি স্বীয় কুদরতী লাগাম বা রশির দ্বারা গোটা সৃষ্টি জগতকে। অতঃপর নির্ধারণ করে দিয়েছেন সৃষ্টি করার পর প্রত্যেক সৃষ্টির জীবন আয়ূ। অতএব, যখন মৃত্যু আসবে তখন সামান্যটুকু সময়ও বিলম্ব করা হবে না। আমি উনার মহান পরিচয় ও মা’রিফাতের বেশুমার প্রশংসা করছি এবং উনার পরিপূর্ণ নিয়ামতের শোকরগোযারী করছি; যদিও উনার শোকরগোযারী করে কেউ শেষ করতে পারবে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, উনার কোন শরীক নেই, এমন সাক্ষ্যই যা আমাদের উপকারে আসবে ভয় ও অনুতাপের দিনে। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের রসূল, আমাদের মাওলা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম বান্দা ও শ্রেষ্ঠতম রসূল। যিনি আরোগ্য দান করেছেন নিজ নূরুল বারাকাত মুবারক উনার সাহায্যে অনেক রোগ ও ব্যাথা। সুবহানাল্লাহ!

হে মানুষেরা! আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন যুগের পরিবর্তনকালে আর জাগ্রত হোন মাসের বিবর্তনকালে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদেরকে মুর্হরমুল হারাম মাস থেকে সফর মাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

বস্তুতঃ এটাই হলো প্রস্থানের আলামত ও সফরের নিদর্শন। মাসগুলো সফরকালে মুসাফিরের মনযিলের মতো। অতএব, প্রস্থানের পূর্বেই আপনারা পাথেয় সংগ্রহ করে নিন। আপনারা যৌবনকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করুন। কেননা, অচিরেই এ যৌবনে পরিবর্তন এসে যাবে। আর যৌবন যখন ফুরিয়ে যাবে তখন তাকে বেঁধে রাখা যাবে না। আর বার্ধক্য আপনাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে মৃত্যুর আগমন সংবাদ। মৃত্যু আপনাদের অতি নিকটে। নিশ্চয়ই এ মৃত্যু আপনাদের পূর্ববর্তী কওমের কাছে এসে তাদের পরাভূত করেছে আর ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের কাছে যা ছিল সবকিছুই। তাদের আশা-আকাঙ্খার ভিত ও স্তম্ভকে ভেঙ্গে চুরমার ও ওলট-পালট করে দিয়েছে। ফলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য।

অতএব, মৃত্যু আসার আগেই তওবা করে নিন এবং দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পূর্বেই নেক কাজ করে নিন। এ কথা ভাল করে মনে রাখুন- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যেই মৃত্যুর কথা জান; তা যদি চতুষ্পদ প্রাণী জানতো,  তবে তোমরা মোটা-তাজা কোন প্রাণী খেতে পেতে না। তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, আমি যা জানি, তা যদি তোমরা জানতে; তবে তোমরা কম হাসতে আর বেশি কাঁদতে।

আপনি কি জানেন না যে, মালাকুল মউত হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিদিনই প্রতি মুহূর্তে আপনার প্রতি সজাগ চোখ রাখছেন? আপনি কি শোনেননি, সুদীর্ঘ জীবন লাভের পরও আপনাকে অবশ্যই মৃত্যু-সূরা পান করতে হবে? আপনি কি এ সংবাদ রাখেন না যে, আপনার সামনে কবর, হাশর-নশর ও দাড়ি-পাল্লা রয়েছে; যাতে ওজন করা হবে অতি ক্ষুদ্রতম বস্তুও। আপনি কি শোনেননি, জাহান্নামের উপর রয়েছে এমন এক পথ; যা চুলের চেয়েও চিকন, তলোয়ার অপেক্ষা ধারালো আর যার আংটা টেনে ধরবে ফাসিক ও পাপীদেরকে। আপনাকে অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে জাহান্নামের সেই বিশাল গর্ত ও পথ। আর অবশ্যই আপনাকে দেখতে হবে মহা বিভীষিকা। অবশ্যই আপনাকে অবস্থান করতে হবে এমন এক স্থানে যেখানে রয়েছে ডুবন্ত ও নিমজ্জিতরা।

আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না, দিন-রাত কিভাবে অতিক্রম করে চলেছে জীবনের বিভিন্ন ধাপ? আপনি কি দেখছেন না সে ব্যক্তিকে যে দীর্ঘ জীবন লাভের পরও তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে- আমি তো দুনিয়ায় কিছুসময় মাত্র বাস করেছি।

আপনি কি দেখছেন না তাদেরকে; যারা নির্মাণ করেছে সুউচ্চ দুর্গ আর রেখেছে বহু উট? কিভাবে ধরাশায়ী করে দিয়েছে তাদেরকে মৃত্যুর তরবারী? আজ কোথায় রয়েছে কওমে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, কওমে আদ ও কওমে সামুদ, কোথায় সেকালের রাজা-বাদশাহরা? আর কোথায় বাবেল রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী?

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সুন্দর জীবনে বেঁচে থাকুন যতদিন বেঁচে থাকার ইচ্ছা হয়। নিশ্চয়ই আপনাকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে, যাকে ইচ্ছা মুহব্বত করুন একদিন তার থেকে জুদা হতেই হবে এবং যা কিছু আমল করুন না কেন একদিন তার বদলা গ্রহণ করতেই হবে।

অতএব, অতিসত্বর আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে আপন ওসীলা হিসেবে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গ্রহণ করুন যিনি হলেন শাফায়াতে কুবরার একচ্ছত্র মালিক।

আমরা আবেদন করছি মহান আল্লাহ পাক উনার ও মহান মাওলা পাক উনার দরবার শরীফে তিনি যেনো রহমত বর্ষন করেন এবং অনুগ্রহ করে আমাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করেন। বস্তুতঃ তিনিই মহান করুণাময়।

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা