পবিত্র মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৩৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ


 

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে যিনি মাস ও বছরের সৃষ্টিকর্তা, যুগ ও কালের প্রবর্তক। যিনি হারাম বা সম্মানিত মাস দ্বারা বছরের সূচনা করেছেন। যিনি মাত্র ছয় ধাপে আসমান, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যস্থিত বস্তুসমূহ সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি একাকী চিরস্থায়ীভাবে মহান আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি পবিত্র ও শান্তিদাতা। উনার অফুরন্ত প্রশংসা করছি। এবং সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনিই একমাত্র মা’বূদ। তিনি অদ্বিতীয়। উনার কোন অংশীদার নেই। আরো সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের রসূল, আমাদের মুনীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম বান্দা ও রসূল; মহান আল্লাহ পাক উনাকে সমগ্র আলমের জন্যে রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এমন সাক্ষ্য যা ক্বিয়ামতের দিন হবে একমাত্র সম্বল।

মুহররম মাস অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও পবিত্র মাস। বছরের সর্বপ্রথম হারাম মাস। সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার যোগ্য। যার মর্যাদা সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। পূণ্যবান ও নেককারগণ এ মাসকে মর্যাদা দিয়েছেন। কতইনা সৌভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি যিনি বিগত বছরটিকে নেক কাজের সাথে অতিবাহিত করেছেন এবং নিজের অমূল্য জীবনকে কোন অনর্থক কাজে ব্যয় করেননি। আর হতভাগা ঐ ব্যক্তি যে মূর্খ ও পথভ্রষ্ট লোকদের সংসর্গ অবলম্বন করেছে।

জেনে রাখুন, দুনিয়া দুঃখ, কষ্ট ও বিপদ-আপদের স্থান। দুনিয়া এমন এক জগৎ যা ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আপনি সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে কালাতিপাত করছেন, আকস্মাৎ দেখবেন  যে, মৃত্যু আপনার নিকট হাজির হয়ে গেছে। অতএব সে আপনাকে সুপ্রশস্ত অট্টালিকা থেকে সংকীর্ণ ও ভয়াবহ কবরের দিকে টেনে নেবে এবং জনহীন অন্ধকার কোণে একাকী ফেলে রাখবে।

আফসুস! ঐসব রূহসমূহের প্রতি যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে বটে কিন্তু দুনিয়ার ভালবাসা তাদের থেকে বিদায় নেয়নি। আপনি কি বালা-মুছীবতের জগতে স্বচ্ছ থাকতে চান? এটা কখনও হয়নি এবং হবেও না। হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক গৃহের দরজার সামনে হযরত মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিদিন পাঁচবার হাজির হন। যখন কোন ব্যক্তির রিযিক শেষ হয় ও আয়ু ফুরিয়ে যায় তখন মৃত্যু তাকে টেনে নেয়। অনন্তর কারো আহলিয়া মাথার কেশ আউলে ঝাউলে করে রাখে, কেউ মুখম-লে চপেটাঘাত করে, কেউ ক্রন্দন করে আবার কেউ চিৎকার করে। এমতাবস্থায় হযরত মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, তোমাদের কি হলো? তোমরা বিচলিত হচ্ছো কেন? আমি তো কারো রিযিক উঠিয়ে নেইনি, আমি তো কারো আয়ুও কমাইনি। আমি তো তখনই এসেছি যখন আমাকে আসার আদেশ দেয়া হয়েছে। আমি তো তখনই তার রূহ কবজ করেছি যখন আমাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমি তোমাদের নিকট বার বার আসব এমনকি, তোমাদের মাঝে একজন লোকও বাকী থাকবে না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঐ সত্ত্বার কসম, যার কুদরতী হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, যদি তারা মৃত ব্যক্তির স্থান দেখতে পেত এবং তার কথা শুনতে পেত তবে তারা তার কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের ব্যাপারে কেঁদে কেঁদে ভেঙ্গে পড়তো।

পবিত্র আশূরার দিনটিকে নেক আমলের মাধ্যমে স্বাগত জানাও, কেননা এ দিনটি অতি মহান দিবস। এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এদিনেই সর্বপ্রথম আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। এ দিনেই সর্বপ্রথম আসমান থেকে রহমত নাযিল হয়েছে। যে ব্যক্তি এ দিনটিতে রোযা রাখলো, সে যেন পুরো বছরই রোযা রাখলো এবং বেহিসাব প্রতিদান পেয়ে গেল। যে ব্যক্তি এ দিনে কোন বস্ত্রহীনকে বস্ত্র পরাবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে কঠিন শাস্তি থেকে পরিত্রাণ দিবেন। যে ব্যক্তি এ দিন কোন রুগ্ন ব্যক্তির খোঁজ-খবর নিবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে এর অশেষ বিনিময় দান করবেন। যে ব্যক্তি এ দিন কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাবে অথবা কোন ক্ষুধার্তকে আহার করাবে অথবা কোন তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাতের দস্তরখানায় আহার করাবেন এবং জান্নাতের সালসাবিল নামক ঝরণা থেকে পানিয় পান করাবেন অর্থাৎ সে ব্যক্তি জান্নাতী হবে। যে ব্যক্তি এ দিন গোসল করবে, সে মৃত্যু ব্যতীত অন্য সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং অলসতা ও অসুস্থতা থেকে নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি এ দিন চোখে সুরমা (ইছমিদ) ব্যবহার করবে, তার চোখে কখনও রোগ হবে না। যে ব্যক্তি এ দিন আপন পরিবারবর্গকে তৃপ্তি সহকারে ভাল খাদ্য খাওয়াবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি পুরো বছরের জন্য তার রিযিকের দ্বার প্রশস্ত করে দিবেন।

হে বারে ইলাহী! আপনি এ পবিত্র মাসের সম্মানার্থে আমাদেরকে আপন অনুগ্রহে মকবুল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমাদেরকে বিশেষভাবে পূর্ণ প্রতিদান ও অনুগ্রহ দান করুন। আমাদের ছোট-বড় গুনাহগুলো মাফ করে দিন। আমাদের সকল নেক ফরিয়াদ কবুল ও মঞ্জুর করে নিন। সর্বোপরি আমাদের সকলকে আপনার ও আপনার প্রিয়তম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক নছীব করুন। আমীন।

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলক্বদ এবং তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা