পবিত্র মাহে যিলহজ্জ শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২১৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী বছরের বারতম মাস পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ। মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তরফ থেকে ঘোষণাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসসমূহের অন্যতম মাস এটি। এ মাসেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র হজ্জ শরীফ আদায়ের ফরযটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

এ মাসের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদত-বন্দিগীর চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোন দিনের ইবাদত-বন্দিগী নেই। এ দিনগুলোতে রোযা রাখা খাছ বরকতময় সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এর প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য এবং প্রত্যেক রাত্রির ইবাদত পবিত্র শবে ক্বদর উনার ইবাদতের সমতুল্য।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ উনার দশম তারিখ দিনটি পবিত্র ঈদুল আযহার দিন। এ মহান দিনে সূর্যোদয়ের পর দু’রাকায়াত পবিত্র ঈদুল আযহার নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। অতঃপর যারা সামর্থ্যবান তথা মালিকে নিছাব তাদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

পবিত্র কুরবানী উনার ফযীলত সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আদম সন্তান কুরবানীর দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তš§ধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় নেকীর কাজ বা আমল হলো পবিত্র কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে কুরবানীর পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য দান করবে। কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরবানীদাতার আমলনামায় অসংখ্য নেকী দান করেন।” সুবহানাল্লাহ!

তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র ঈদুল আযহার দিনে কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরবানীদাতার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র কুরবানীর এই ফযীলত যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তারাই শুধু লাভ করবে তা নয় বরং যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারাও ইচ্ছে করলে একাধিকজন মিলে কুরবানী দিয়ে উক্ত ফযীলত লাভ করতে পারে। এ মাসয়ালা বর্ণনা করেছেন যিনি যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি। তিনি বলেছেন, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কুরবানী দিয়ে কুরবানীর ফযীলত লাভ করতে পারে। কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম আর দুম্বা, মেষ  বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।

গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশি দিলে কুরবানী দুরুস্ত হবে না। তবে সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশি নামে কুরবানী করলে কারো কুরবানী দুরুস্ত হবে না।

যেমন- যদি ২০ জন ব্যক্তি ২০০০ টাকা করে ৪০,০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে। তদ্রুপ একটা খাসি তিনজন বা তার থেকে বেশিজন মিলে পয়সা দিয়ে খরিদ করে যদি এক নামে কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।

এখন প্রশ্ন হলো- যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে কুরবানী করবে, তারা কার নামে কুরবানী করবে? এর জাওয়াব হচ্ছে- এরূপ কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে কুরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য।

অতএব, কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে কুরবানী শুদ্ধ হবে না। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবে না টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য নিয়ম হচ্ছে- এক নাম দিলে উত্তম ও আদব হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে পবিত্র কুরবানী উনার বিধান চালু হয়ে আসছে যেমন- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ দেয়া উত্তম। আরো বেশি নামে কুরবানী দিলে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারক-এও কুরবানী করা যেতে পারে।

আরও উল্লেখ্য, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তারা তো নিজেদের নামে কুরবানী করবে। এরপর তাদের যদি একাধিক কুরবানী দেয়ার মতো সামর্থ্য থাকে তাহলে উম্মত হিসেবে তাদের দায়িত্ব হলো স্বীয় নবী ও রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ কুরবানী করা। এটা তাদের কুরবানী কবুল হওয়ার কারণও বটে।

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা