পবিত্র মাহে রজবুল আছম্ম ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৩৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

আরবী সপ্তম মাস রজবুল আছম্ম। এ মাস হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম সদস্য এবং ইমামতি ধারার প্রথম ইমাম, হযরত খুলাফায়ে রাশিদা আলাইহিমুস সালাম উনাদের চতুর্থ খলীফা, বাবুল ইলম, আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার মাস। বর্ণিত রয়েছে, তিনি ২৩ হিজরী পূর্বাব্দের ১৩ রজব জুমুআর দিন পবিত্র কা’বা ঘর উনার অভ্যন্তরে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একান্ত আপন ছিলেন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। হিজরতের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের বিছানায় উনাকে শুইয়ে রেখে মদীনা শরীফের পথে রওয়ানা হন। তিনি নবী পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। মদীনা শরীফে যাওয়ার সময় অনেক লোকের টাকা পয়সা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে জমা ছিল। তিনি সেই সকল ধন-সম্পদ মালিকদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার জন্য হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দায়িত্ব দিয়ে যান। তিনি সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। অতঃপর তিনিও মদীনা শরীফ গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হন।

মদীনা শরীফ উনার লোকেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেন। সকল মুসলমানের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলার জন্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক অপূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মক্কা শরীফ থেকে আগত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের সাথে মদীনা শরীফ অবস্থানকারী আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেন। শুধু বাকি রয়ে গিয়েছিলেন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। এ সময় তিনি অশ্রুসজল নয়নে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করলেন, অথচ আমাকে কারো সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করলেন না। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সহাস্য বদন মুবারকে বললেন, আমার সাথে আপনার বন্ধন। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই আপনি আমার ভাই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেছেন, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনাদের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল, আমার ও আপনার মধ্যেও সেই সম্পর্ক। সুবহানাল্লাহ। পার্থক্য এতটুকু যে, আমার পরে আর কোন নবী নেই।

মদীনা শরীফে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ করে চলেছেন। সুবহানাল্লাহ। উনার কাজে বাধা দেয়ার জন্য কাফির শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র আরম্ভ করে দিল। এক পর্যায়ে মুসলমান এবং কাফিরদের মধ্যে প্রথম যে ঐতিহাসিক জিহাদ সংঘটিত হয় তা বদরের জিহাদ নামে খ্যাত। এই জিহাদে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করে সবাইকে অবাক করে দেন। দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক জিহাদ করেছেন। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত সকল জিহাদে অংশ গ্রহন করে যে শৌর্য-বীর্যের পরিচয় দেন তা আজো কিংবদন্তী হয়ে আছে।

উহুদের জিহাদে এক পর্যায়ে মুসলমানগণ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষতি করার লক্ষ্যে উনাকে অসংখ্য কাফির এসে ঘিরে ফেলে। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি এ খবর জানতে পেরে নিজের অবস্থান থেকে তলোয়ার চালাতে চালাতে ছুটে আসেন। একাকী লড়াই করে তিনি কাফির দলের বুহ্য ভেদ করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ এসে উনার অবস্থান মুবারক উনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। সুবহানাল্লাহ! ঐতিহাসিকগণ বর্ণনা করেছেন, উহুদের জিহাদে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অসীম সাহস ও বীরত্ব দেখে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও উনার প্রশংসা করেছিলেন।

খন্দকের জিহাদেও তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। কাফিরদের মহাবীর আমর ইবনে আব্দে উদ দ্বন্দ্ব-জিহাদ আহ্বান করলে কেউ যেতে সাহস করেননি। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বিসমিল্লাহ বলে এগিয়ে যান এবং বিস্ময়কর ক্ষিপ্রতার সাথে তলোয়ারের এক আঘাতে সেই মহাবীরের দেহ দ্বিখ-িত করে ফেলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশি হয়ে বলেছিলেন, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার এক আঘাত আসমান ও যমীনের সকলের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। বিখ্যাত খায়বরের জিহাদেও হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমেই বিজয় সুসম্পন্ন হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!

মোটকথা, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব, বীরত্ব, বুযুর্গী-সম্মান, ছানা-ছিফত বর্ণনার অপেক্ষা রাখেনা। উনাকে মুহব্বত করা ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য আর  উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা মুনাফিকদের স্বভাব।

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা