পশ্চিমা সম্রাজ্যবাদীদের দীর্ঘদিনের শোষণ আর অব্যাহত লুটপাটের কারণে সোমালিয়া, চাদ, নাইজেরিয়া, নাইজার, দক্ষিণ সুদান, কেনিয়া ও ইথিওপিয়ার প্রায় ২ কোটি মানুষ এখন দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত। দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে আর দেরি নেই, এরকম দুঃসহ দিন গুনছে পূর্ব-আফ্রিকার উগান্ডা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তানজানিয়ার প্রায় ৫ কোটিরও বেশি মানুষ। কিন্তু নিশ্চুপ বিশ্ব গণমাধ্যম, নিষ্ক্রিয় বিশ্ববিবেক, নীরব মুসলিম বিশ্ব!

সংখ্যা: ২৬১তম সংখ্যা | বিভাগ:

আফ্রিকার দুর্ভিক্ষ নিয়ে বিশ্বপর্যায়ে যেন কোনো উদ্বেগ নেই। এই দুর্ভিক্ষ নিয়ে বিশ্বের অনেক শীর্ষ গণমাধ্যমই চুপচাপ।

এই মুহূর্তে আফ্রিকায় চলছে দুর্ভিক্ষ। সম্পদের লোভে যে আফ্রিকায় একসময় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গোটা সামন্ত সাম্রাজ্যবাদী লুটেরা গোষ্ঠী। পুঁজিবাদের গোড়াপত্তনের পর থেকে এখন অবধি সেখানে শক্তিশালী হানাদার দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ, শোষণ, লুটপাট অব্যাহত। গত কয়েক মাস ধরে সেই আফ্রিকার বিরাট এক অঞ্চল টানা অনাবৃষ্টি ও খরায় বিপর্যস্ত। পর্যাপ্ত ফসল হয়নি, রাষ্ট্রেরও নিরাপত্তা দেয়ার অবস্থায় নেই। ফলাফল হিসেবে নেমে এসেছে খাদ্য সঙ্কট। অনেক স্থানে দুর্ভিক্ষ মারাত্মক চেহারা ধারণ করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পানিঘটিত নানা রোগের প্রকোপ। সোমালিয়া, চাদ, নাইজেরিয়া, নাইজার, দক্ষিণ সুদান, কেনিয়া ও ইথিওপিয়ার প্রায় ২ কোটি মানুষ এখন দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত। খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে, দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে আর দেরি নেই- এরকম দুঃসহ দিন গুনছে পূর্ব-আফ্রিকার উগান্ডা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তানজানিয়ার প্রায় ৫ কোটিরও বেশি মানুষ। শুধু তানজানিয়াতেই খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে ৭৮ শতাংশ মানুষ, যার জনসংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। এছাড়া সউদী ওহাবী আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র ইয়েমেনেও চলছে দুর্ভিক্ষাবস্থা। দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলের সর্বত্রই খাদ্য সঙ্কটের তোপে পড়ে মানুষের পাশাপাশি মারা যাচ্ছে অগণিত গবাদিপশু, পাখি ও বিভিন্ন প্রাণী। যা কিনা পুরো মানবসভ্যতার জন্য এক বিরাট বিপর্যয়স্বরূপ।

আফ্রিকায় দুর্ভিক্ষের ঘটনা যেন এক নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেছনের কথা বাদ দিয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সভ্যতার এই চরম উৎকর্ষতার কালকেই যদি আমলে নেয়া হয়, তাতেই হতভম্ব হয়ে যেতে হবে। মাত্র বছর ছয়েক আগে, ২০১১ সালে ইথিওপিয়া, কেনিয়া এবং সোমালিয়া খরা ও দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়েছিল। ২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের এপ্রিলের মধ্যে শুধু সোমালিয়াতেই মারা যায় ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল ৫ বছরের কম বয়সী শিশু। এরপর আবার ২০১৬ সালে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে। প্রায় ৫ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের থাবায় বিধ্বস্ত হয়ে দিনাতিপাত করছে। সেই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার আগেই এখন আবার আরো বেশি এলাকা দুর্ভিক্ষের কবলে। বলা হচ্ছে যে, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলেই আফ্রিকায় এই দুর্যোগময় পরিস্থিতি। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আফ্রিকায় গত এক দশকে বৃষ্টিপাত কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ইথিওপিয়ায় চলতি ২০১৭ সাল ও বিগত ২০১৬ সাল মিলিয়ে যে খরা দেখা দিয়েছে, তা গত ৩০ বছরেও হয়নি। আর এই খরা ও অনাবৃষ্টির মূল কারণ হিসাবে দায়ী করা হচ্ছে ‘এল-নিনো’র প্রভাবকে। প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব অংশে পানি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তাকে ‘এল-নিনো’ এবং শীতল হয়ে এলে তাকে ‘লা-নিনো’ বলা হয়। আবহাওয়ার এই খড়গ ছাড়াও আফ্রিকার দুর্ভিক্ষের কারণ হিসাবে সেখানে হানাদার সাম্রাজ্যবাদী লুটেরাদের সামরিক অপতৎপরতা বা আগ্রাসনকেও দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে- সেখানকার তাঁবেদার সরকারগুলোর ব্যর্থ রাজনীতির কথাও। এদিকে এই আফ্রিকা যে, শতকের পর শতক ধরে পশ্চিমা আগ্রাসন ও লুটপাটের বলি হয়ে আসছে, সেই বিপর্যয় যে আজো কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি- এই সত্যটা আলোচনায় আসছে খুব কমই। আবহাওয়া বিপর্যয়ের কারণ যে শিল্পনির্ভর বিশ্ব, যারা সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন করছে, তাদেরই যে উচিত আফ্রিকার আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের ক্ষতিপূরণ দেয়া, সেটাও আলোচনায় নেই। একদিকে অকল্পনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার আফ্রিকায় এখনো উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ও শিল্পনির্ভর সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো নানা ধরনের মূল্যবান খনিজ সম্পদের জন্য খননকার্য চালাচ্ছে, এসব সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সেখানকার মানুষ মরছে অনাহারে। এ কারণে আফ্রিকার দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ক্ষোভ ও সংগ্রাম রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমারা অস্ত্রের জোরে আফ্রিকার দেশগুলোর রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছে। তাদের অনুগত শাসকরাই সেখানে ক্ষমতায় থাকে, বিদেশী লুটপাটে সহযোগিতা করে এবং এর উচ্ছিষ্টাংশ নিজেরা দখল করে। এসবের প্রতিক্রিয়ায় এবং আরো অনেক বৈশ্বিক প্রবণতার সূত্রে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। সে হিসাবে পুরো আফ্রিকার এই হতাশাজনক পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায় পশ্চিমাদের। এর পাশাপাশি আফ্রিকানদের ব্যর্থতা ও নিজস্ব সঙ্কটগুলো তো রয়েছেই। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর দায় ও হস্তক্ষেপের বিষয়টি তাদের দ্বারা চালিত বৃহৎ গণমাধ্যমগুলো উচ্চারণও করছে না। সেখানকার মানুষও এর বিপরীতে কোনো সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারছে না। ফলে সমস্যা সমাধানের কোনো পথও বেরিয়ে আসছে না। ঘুরে ঘুরে আসছে দুর্ভিক্ষ, চলছে ত্রাণের রাজনীতি আর মরছে মানুষ।

গণমাধ্যম সাধারণ মানুষের মতগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু সারা বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো আফ্রিকার দুর্ভিক্ষকে উপেক্ষা করার অবস্থান নেয়ায় এ সংক্রান্ত খবর প্রয়োজনমাফিক পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক মানুষ জানেই না যে, আদৌ এরকম কিছু ঘটছে। আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলো প্রথম খবর ছেপেছে জাতিসংঘের ঘোষণার পর। সেটাও এসেছে কেবল সোমালিয়ার বিষয়ে। ৪ মার্চ ২০১৭ জাতিসংঘ এক বিবৃতির মাধ্যমে জানায় যে, এর আগের দুই দিনে সোমালিয়ায় ১১০ জন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। জাতিসংঘ এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ববাসীর সহযোগিতার দাবি জানায়। জাতিসংঘের এই আহ্বানে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো তেমন একটা কর্ণপাত না করলেও গণমাধ্যমগুলো আফ্রিকার দিকে কিছুটা নজর দিয়েছে, তবে সেটাও কৃপণতার সীমা পেরোতে পারেনি। অবস্থা এরকম যে- গণমাধ্যমের বাড়াবাড়ি প্রচারণায় ট্রাম্পের স্ত্রীর নামও আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা জানে, কিন্তু আফ্রিকার দুর্ভিক্ষের কথা সচেতন মহলের বিরাট একটি অংশই এখনো জানে না।

প্রসঙ্গত, মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ উন্নয়নশীল ৮টি দেশের অর্থনৈতিক জোট ডি-৮-এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ ১শ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালের মধ্যে এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৩শ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৪ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে। আফ্রিকায় মুসলিম দেশগুলোতে বর্তমানে যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছে তার ক্ষেত্রে বলতে হয়, বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি মুসলমান রয়েছে। ৫০টির বেশি স্বাধীন মুসলিম দেশ রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে হাজার হাজার প্রভাবশালী ধনী মুসলিম। যাদের একজনের যাকাতই হাজার কোটি টাকার উপরে। মুসলিম দেশগুলোর রয়েছে বিশাল মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদ। যদি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো একজোট হয়ে দুর্ভিক্ষপীড়িত আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোর জন্য এগিয়ে আসে, তাহলে অতি অল্প সময়ে রাষ্ট্রগুলো স্বাভাবিক হতে সক্ষম।

উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- ‘সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একটি দেহের ন্যায়’। আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনুসরণ ও বাস্তবায়নে আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোকে সহযোগিতা করতে ভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে আসা ফরয।

-আল্লামা মুহম্মদ মাহবুবুল্লাহ, ঢাকা

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৫

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৪ -আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩৩ -আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২৩ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস ওহাবী ফিরক্বাসহ সবগুলো বাতিল ফিরক্বা ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কার! তাদের এক নম্বর দালাল

সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডা পরিত্যাগ করে ‘প্রথম আলো’ সম্পাদক মতিউর এখন পুঁজিবাদের বেনিফেসিয়ারী নিজেকে বদলে ফেলার কারণে এখন অন্যকেও বদলানোর নছীহত খয়রাত করেছেন কিন্তু সমাজতন্ত্র আর পুঁজিবাদ যেমন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ; তেমনি ‘প্রথম আলো’র বদলানোর আহ্বানও এক অনাচার থেকে আর এক অনাদর্শের দিকে। চরিত্রহীন, আদর্শহীন, ধর্মহীন- মতি মিয়ার যোগ্যতা কোথায়? ‘বদলানোর রূপকার’ তথা ‘সংস্কারক’ সাজার।বরং এ আহ্বান ফেরি করে মতি মিয়া যে নতুন পুরস্কার বাণিজ্যের ধান্ধায় রয়েছেন তা বলতে গেলেই সবাই বুঝতে পারছেন