প্রসঙ্গ : মরণোত্তর চক্ষু প্রদান ও পেশাদার রক্তদাতা এবং অবৈধ ব্লাড ব্যাংক

সংখ্যা: ২১২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা খালিক্ব, মালিক ও রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।

মরণোত্তর চক্ষু প্রদান একটি শ্লোগানই কেবল নয়, বরং বলতে গেলে ফ্যাশন। এর আগপিছ না ভেবে শুধুই ধেয়ে চলা কাম্য নয়। কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ মুতাবিক যে ব্যক্তি নিজেকে যে অবস্থায় মৃত করবে পরকালে সে সেই অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।

পাশাপাশি দুনিয়াবীভাবেও এর ক্ষতিকর দিক ব্যাপক বিধ্বংসী। কারণ অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে চালু হলে এক সময় শুধু চক্ষুই নয়; অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গও প্রতিস্থাপনের ব্যাপক অনুশীলন চলবে।

বলাবাহুল্য, ইতোমধ্যে অবশ্য তা বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছে। এমনকি এখনই অনেক ডাক্তার অপারেশনের সময় মানুষের কিডনি চুরি করে রেখে দিচ্ছে। আর পথশিশুসহ পাচারকারী মানবদের অঙ্গ-প্রতঙ্গ বেশ কেনাবেচা হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অঙ্গ আদান-প্রদান নয়; বরং যে বিষয়টিকে আরো অনেক প্রচারণা ও উৎসাহ প্রদান দরকার ছিলো তা হলো- স্বেচ্ছায় রক্তপ্রদান।

বাংলাদেশে বছরে ৫ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এ রক্তের ২৬ ভাগ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে। বাকি ৭৪ ভাগ রক্তের ৫৪ ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও ২০ ভাগ দেন পেশাদার রক্তদাতারা। পেশাদার রক্তদাতাদের শতভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। অপর দিকে স্ক্যানিং ছাড়া আত্মীয়-স্বজনের রক্ত গ্রহণেও ঝুঁকি থাকে।

নিরাপদ রক্ত বলতে ক্ষতিকর ভাইরাস, প্যারাসাইট, ব্যাকটেরিয়া, মাদকদ্রব্য ও রাসায়নিক পদার্থমুক্ত রক্তকে বোঝায়। রক্তদাতাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে এবং জটিল রোগমুক্ত থাকার ইতিহাস থাকতে হবে; রক্ত নেয়ার পর গ্রহীতার কোনো ক্ষতি হবে না এবং রক্তদাতা রক্তদানের জন্য কোনো ঝুঁকি-ঝামেলার সম্মুখীন হবেন না। নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে রক্তগ্রহীতাকে রক্ত পরিবাহিত রোগের আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখা হয়। শরীরের লাল রক্তকণিকাগুলো ৯০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে; এরপর স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে ও নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়।

দুর্ঘটনা, বড় অস্ত্রোপচার, রক্তশূন্যতা, প্রসবজনিত রক্তক্ষরণ, পুড়ে যাওয়া, ক্যানসার, হেমোফিলিয়া, থেলাসেমিয়া ও অন্যান্য রক্ত সংশ্লিষ্ট রোগের জন্য প্রয়োজন হয় রক্তের এবং এ প্রয়োজন মেটানোর জন্য দরকার নিরাপদ রক্ত। যিনি রক্ত দান করবেন, তিনি শারীরিক, মানসিক ও ইসলামী মূল্যবোধের দিক থেকে সুস্থ থাকবেন।

কিন্তু সমাজে এ ধরনের রক্ত দানকারীর খুবই অভাব। বরং রক্তের বড় একটি অংশ আসে ঝুঁকিপূর্ণ পেশাদার রক্তদাতাদের বিক্রি করা রক্ত থেকে। পেশাদার রক্তদাতার কাতারে মাদকাসক্ত, দূষিত রক্তবাহী ব্যক্তিরা তো আছেনই, ইদানীং যুক্ত হয়েছে যৌনরোগবাহী নারীরাও। ঢাকা মেডিকেল, মিটফোর্ড মেডিকেলের আশপাশসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ রক্ত বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে ভাসমান নারীরাও।

রক্তের অপ্রতুলতার কারণে প্রয়োজনের সময় এই জীবাণু মিশ্রিত দূষিত রক্ত কিনতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর এভাবেই প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ব্যাগ রক্তের মাধ্যমে দেশে হেপাটাইটিস বি, ম্যালেরিয়া বা সিফিলিসের মতো ভয়াবহ রোগ জীবাণুর আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।

রাজধানীসহ সারাদেশে অবৈধ ব্লাড ব্যাংকে ব্যাপকহারে চলছে মাদকাসক্ত ও পেশাদার রক্ত দাতাদের রক্তের বাণিজ্য। বিষয়টি দেখার কেউ নেই। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে এই বিষাক্ত রক্ত।

ব্লাড ব্যাংকগুলোতে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, একজন ডিউটি ডাক্তার ও একজন টেকনিশিয়ান থাকা বাধ্যতামূলক হলেও অবৈধ ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রয়েছে মালিক, কয়েকজন দালাল, একজন মার্কেটিং ম্যানেজার ও একজন অফিস কর্মচারী।

বেশির ভাগ ব্লাড ব্যাংক গড়ে উঠেছে অপরিচ্ছন্ন কুঠুরিতে। এছাড়াও বাসাবাড়ি, মুদির দোকান অথবা বস্তির ভেতরে থাকা ফ্রিজে রাখা হয় এ রক্ত। বেশির ভাগ রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে মাদকসেবীদের কাছ থেকে। জরুরী মুহূর্তে অনেকেই বিপদে পড়ে ভেজাল রক্ত কিনতে বাধ্য হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকসেবীরা এক ব্যাগ রক্ত বিক্রি করে মাত্র ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। যে দালাল এদের অবৈধ ব্লাড ব্যাংকে নিয়ে আসে তারা পায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ব্লাড ব্যাংকের মালিক বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে প্রতি ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ক্লিনিক মালিক রোগীদের কাছ থেকে নেয় ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। জানা গেছে, প্রতিদিন ভোর থেকে অবৈধ ব্লাড ব্যাংকের সামনে মাদক সেবীদের হাট বসে। রক্ত সংগ্রহ চলে সকাল ৭টা-৮টা পর্যন্ত। মাদকসেবীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা রক্তগুলো সরিয়ে ফেলা হয় নিরাপদ স্থানে।

অনেক অসৎ ব্লাড ব্যবসায়ী তাদের কাজ সহজ করতে টাকার পরিবর্তে মাদকও সরবরাহ করে। মাসে একাধিকবার রক্ত দেয়ার কথাও তারা স্বীকার করেছে। এদের রক্তে প্রয়োজনীয় রক্ত কণিকা থাকে না।

ব্লাড ব্যাংকের রক্ত গ্রহণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। দেশে গত ৯ বছরে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার ব্যাগ দূষিত রক্ত শনাক্ত হওয়ার পর তারা এ সতর্কীকরণ বার্তা দিয়েছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানায়, শনাক্তকৃত ওই ২৮ হাজার ব্যাগ দূষিত রক্তে এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি ও সির মতো মারাত্মক জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে শতকরা ৮১ ভাগ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র। ব্যক্তিমালিকানাধীন রক্তদান কেন্দ্রগুলোর ৪৭ ভাগ কেন্দ্রে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই রক্ত পরিসঞ্চালনের কাজ চলে বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

দেশে মোট ২৬টি বেসরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি রাজধানীতেও ৩টি ঢাকার বাইরে বলে র‌্যাব সূত্রে জানা যায়। তবে রাজধানীতে ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা কয়েকশত এবং সারাদেশে এই সংখ্যা ৫ শতাধিক হবে বলে জানা যায়। রাজধানীর গলিপথে ও ঘনবসতি এলাকায় এবং যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এইসব ব্লাড ব্যাংক।

কিন্তু এক্ষেত্রে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করার যে কী ফযীলত তার ইসলামী চেতনা প্রসারিত থাকলে পেশাদারদের রক্তের বিভীষিকা থেকে মুক্ত থাকতে পারতো মানুষ। মুক্ত থাকতে পারতো সমাজ।

উল্লেখ্য, ছহীহ হাদীছ শরীফ-এর গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে যে, æমৃত্যুপথযাত্রী একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর উসীলায় এক দেহব্যবসায়ী মহিলা জান্নাতে গিয়েছে।”

যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে আশরাফুল মাখলুকাত- মানুষকে রক্ত দিয়ে বাঁচাতে সাহায্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে কত মহান কাজ তথা নিশ্চিত জান্নাতে যাওয়ার কত বড় উসীলা তা যদি ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রসার করা যেতো; তাহলে ৯৭ ভাগ মুসলমানের এদেশে সহজেই স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্রবণতা প্রবলভাবে তৈরি হতো।

বলাবাহুল্য, এসব অনুভূতি জাগরূক ও জোরদারের জন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত, নেক সংস্পর্শ তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ

খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফির “ইসলামী শরীয়তের হুকুম মুতাবিক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয় যেমন-  কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি তাদের তওবার জন্য নির্ধারিত সময় ৩ দিন এরপর তওবা না করলে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।”

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৩

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২১

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩১