বিশেষ কলাম: ছবি, মূর্তি-ভাস্কর্য ও বাদ্যযন্ত্র নিশ্চিহ্ন করা, ভেঙ্গে ফেলা খাছ সুন্নত তো অবশ্যই, বরং ফরযে আইন। কেননা এগুলো তৈরি করা ইবলীস শয়তানের কাজ যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সদৃশ্য কোনো প্রাণীর মূর্তি-প্রতিমা, ভাস্কর্য ও ছবি তুলবে, আঁকবে বা বানাবে তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন ওইগুলোর মধ্যে প্রাণ দিতে বলা হবে, কিন্তু তারা তাতে প্রাণ দিতে কখনোই পারবে না, বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দিয়ে প্রস্তুতকারীকে কঠিন শাস্তি দিবেন। নাউযুবিল্লাহ! (১ম পর্ব)

সংখ্যা: ২৬২তম সংখ্যা | বিভাগ:

হালাল-হারাম তথা আহকাম সম্বলিত পাঁচশত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে অন্যতম বিশেষ একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ হচ্ছেন পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ উনার ৩০নং পবিত্র আয়াত শরীফ। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ

অর্থ: “তোমরা মূর্তিসমূহের তথা প্রতিমা বা ভাস্কর্যসমূহের খারাবী, অপবিত্রতা, নাপাকী, নিষিদ্ধতা বা শাস্তি থেকে বেঁচে থাকো।” (তাফসীরু আহকামিল কুরআন লিল জাসসাস)

এ প্রসঙ্গে আরো একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি, তথা প্রতিমা বা ভাস্কর্য, বেদী, ভাগ্য নির্ধারণকারী তীর এসবগুলোই শয়তানের তথা ইবলিসের কাজ। অতএব, এগুলো থেকে তোমরা বিরত থাকো বা দূরে থাকো। অবশ্যই তোমরা সফলতা লাভ করবে।” (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯০)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত উনার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে- মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকেন ও সর্বপ্রকার প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা রাখা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয।

আর এগুলো তৈরি করা, নির্মাণ করা, প্রস্তুত করা, বানানো এবং বানানোর ব্যবস্থা করা সবগুলোই ইবলিস শয়তানের কাজ। কাজেই যারা শয়তান প্রকৃতির তারাই মূর্তি-প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকেন এবং সর্বপ্রকার ছবি তোলে ও তোলায়, আঁকে ও আঁকায়, প্রস্তুত বা তৈরি করে ও করায়, স্থাপন করে ও করায় এবং পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ اُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ بَعَثَنِىْ رَحْمَةً لِّلْعَالَـمِيْنَ وَهُدًى لِّلْعَالَـِمْيَن وَاَمَرَنِىْ رَبِّىْ عَزَّ وَجَلَّ بِمَحْقِ الْـمَعَازٍفِ وَالْـمَزَامِيْرِ وَالْاَوْثَانِ وَالصَّلِيْبِ وَاَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ

অর্থ: “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন সমস্ত জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ এবং হিদায়েতস্বরূপ। আর আমাকে আদেশ মুবারক করেছেন বাদ্যযন্ত্র, বাঁশী, মূর্তি তথা ভাস্কর্য, ক্রুশ ও জাহিলী কাজসমূহ ধ্বংস করার জন্য।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)

এ প্রসংঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ مُجَاهِد رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُعِثْتُ لِكَسْرِ الْمَزَامِيْرِ وَالْاَصْنَامِ

অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি বাদ্যযন্ত্র ও মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য ধ্বংস করার জন্য তথা ভেঙ্গে ফেলার জন্য প্রেরিত হয়েছি।” (তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে আযীযী ১ম খন্ড)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمَّا رَاَى الصُّوَرَ فِى الْبَيْتِ لَـمْ يَدْخُلْهُ حَتَّى اَمَرَ بِهَا فَمُحِيَتْ

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র বায়তুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে বিভিন্ন প্রতিকৃতি তথা ছবি বা ভাস্কর্য দেখলেন, তখন তা মুছে ফেলা তথা নিশ্চিহ্ন করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। প্রতিকৃতিগুলো মুছে ফেলার আগ পর্যন্ত তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি।” (বুখারী শরীফ)

অপর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَمَرَ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ  عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهُوَ بِالْبَطْحَاءِ اَنْ يَّأْتِىَ الْكَعْبَةَ فَيَمْحُوْ كُلَّ صُوْرَةٍ فِيْهَا فَلَمْ يَدْخُلْهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى مُـحِيَتْ كُلُّ صُوْرَةٍ فِيْهَا

অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, “পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন- যেন তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরের সব মূর্তি-ছবি বা ভাস্কর্য নিচিহ্ন তথা নষ্ট করে দেন। অতঃপর মূর্তি-ছবি বা ভাস্কর্য নিচিহ্ন বা নষ্ট করার আগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতর তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেননি। (আবু দাউদ শরীফ, বায়হাকী শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো উনাদের মাধ্যমে অকাট্যভাবে প্রামাণিত হলো যে- সর্বপ্রকার প্রাণীর ছবি, মূর্তি-ভাস্কর্য, প্রতিমা, প্রতিকৃতি, পুতুল, ম্যানিকেন আঁকা, রাখা, অঙ্কন করা, তোলা, তোলানো, নির্মান করা-করানো, বানা-বানানো, প্রস্তুত করা-করানো সম্পূর্ণরূপে হারাম-নাজায়িয ও কাট্টা কুফরী। যা ভেঙ্গে ফেলা, বিলীন করা, নিশ্চিহ্ন করে দেয়া খাছ সুন্নত তো অবশ্যই, এমনকি ফরযে আইন। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাক্বীক্বীভাবে অনুসরণ, অনুকরণ করা খাছ সুন্নত তো অবশ্যই, সাথে সাথে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাধ্যমে তা ফরয়ে আইন করে দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসছেন তা তোমরা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরো এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِى الْأَمْرِ مِنْكُمْ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ইত্তিবা করো এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবা করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর তথা নায়েবে নবী-হক্কানী-রব্বানী ওলীউল্লাহ রয়েছেন উনাদের ইত্তিবা তথা অনুসরণ-অনুকরণ করো (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)

অতএব, সম্মানিত দ্বীন ইসলামে মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ছবি আঁকা, তোলা ও রাখা সম্পর্কেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং ভয়াবহ পরিণতির তথা কঠিন আযাবের কথাও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। (অসমাপ্ত)

-আল্লামা মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন

শোক সংবাদ: সাইয়্যিদাতুন নিসা, সুলতানাতুল আরিফীন, কুতুবুল ইরশাদ, কুতুবুল আক্বতাব, আওলাদে রসূল মুহতারামা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন

আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী আলাইহিস সালাম তিনি নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী উনার প্রতি অপবাদকারী যালিম গং নিঃসন্দেহে গুমরাহ, বাতিল, লা’নতপ্রাপ্ত, জাহান্নামী ও সুন্নী নামের কলঙ্ক রেজাখানীরা আয়নায় নিজেদের কুৎসিত চেহারা দেখে নিক ॥ ইসলামী শরীয়ার আলোকে একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা-১২

আহলান-সাহলান! সুমহান পহেলা শাওওয়াল!! মুবারক হো ঈদে বিলাদতে তাহিরাহ, তাইয়িবাহ, মাহবুবাহ, ফাক্বীহা, মাশুক্বাহ, তাওশিয়াহ, তাকরীমাহ, তাক্বিয়্যাহ, তাযকীয়্যাহ, নূরে হাবীবা, লখতে জিগারে মুজাদ্দিদে আ’যম, কুতুবুল আলম, উম্মু আবিহা, ক্বায়িম-মাক্বামে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতুন নিসা, আওলাদে রসূল, হযরত শাহযাদী উলা ক্বিবলা আলাইহাস সালাম

বিশেষ প্রবন্ধ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারকই মুহব্বত-মা’রিফাত, কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারকসহ সমস্ত কিছুর মূল, কাজেই যে যতটুকু উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করতে পারবে, সে ততটুকু কামিয়াবী হাছিল করবে

বিশেষ কলাম: পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান মশহূর পবিত্র শবে বরাত এবং উনার আমলসমূহ বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হওয়া প্রসঙ্গে-পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফ একদম ছহীহ- এ বিষয়ে সকল আসমাউর রিজাল বিশারদগণ একমত