বিশেষ কলাম- পবিত্র মীলাদ শরীফ বা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে রচিত শাইখুল ইসলাম, মুফতীয়ে আ’যমে মক্কা মুকাররামাহ, ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী মক্কী শাফিয়ী ক্বাদিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্ববিখ্যাত, বিশ্ব সমাদৃত, সর্বজন স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য কিতাব- النعمة الكبرى على العالـم فى مولد سيد ولد ادم صلى الله عليه وسلم আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আদম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে প্রদত্ত পবিত্র মীলাদ শরীফ বিরোধী বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের মুখপাত্র আল কাউসারের মিথ্যা, জালিয়াতি ও জিহালতপুর্ণ বক্তব্যের খণ্ডমূলক জাওয়াব ও প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ

সংখ্যা: ২৬৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

হক্বের অতন্দ্র প্রহরী বাতিলের আতঙ্ক আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীল ভিত্তিক পত্রিকা মাসিক আল বাইয়্যিনাত- জুন ২০০০ ঈসায়ী সংখ্যায়  পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার পক্ষে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, শাইখুল ইসলাম, মুফতিয়ে আ’যমে মক্কা মুকাররমাহ, ইমাম ইবনে  হাজার হাইতামী মক্কী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিখ্যাত, বিশ্ব সমাদৃত, সর্বজন স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য কিতাব- “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি ওলাদি আদম” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নামক কিতাব থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাসমূহ উল্লেখ করা হয়েছিল।

 ……”قال حضرت ابو بكرن الصديق عليه السلام: من انفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.

অর্থ: খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, ছিদ্দীক্বে আকবর, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: “যিনি পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাহফিল উপলক্ষে এক দিরহাম (চার আনা রূপা অথবা সমপরিমাণ অর্থ) ব্যয় করবেন, তিনি জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবেন।” সুবহানাল্লাহ!

وقال حضرت عمر عليه السلام: من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلام.

অর্থ: খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, ফারূক্বে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: “যিনি পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অর্থাৎ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়) উনাকে বিশেষ সম্মান-মর্যাদা দিলেন, তিনি মূলতঃ দীন ইসলাম উনাকেই পুনরায় জীবন দান করলেন।” সুবহানাল্লাহ!

وقال حضرت عثمان ذو النورين عليه السلام: من انفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانما شهد غزوة بدر وحنين.

অর্থ: খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, জামিউল কুরআন, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন: “যিনি পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাহফিল উপলক্ষে এক দিরহাম (চার আনা রূপা অথবা সমপরিমাণ অর্থ) ব্যয় করলেন, তিনি যেন বদর ও হুনাইন জিহাদে অংশগ্রহণ করার ফযীলত লাভ করলেন।” সুবহানাল্লাহ!

وقال حضرت على كرم الله وجهه عليه السلام: من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايمان ويدخل الجنة بغير حساب.

অর্থ: খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, আসাদুল্লাহিল্ গালিব, বাবুল ইল্ম, সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস্ সালাম তিনি বলেন: “যিনি পবিত্র মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অর্থাৎ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়) উনাকে বিশেষ সম্মান-মর্যাদা দিলেন, এবং এ উদ্দেশ্যে পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিল ইন্তিজাম করলেন, তিনি অবশ্যই পবিত্র ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবেন এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!……”

এছাড়াও আরো অনেক ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মুবারক ক্বওল শরীফ উল্লেখ করা হয়েছিল। বিস্তারিত জানার জন্য ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফ, জুন-২০০০ ঈসায়ী সংখ্যাটি পাঠ করা যেতে পারে।

বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, উল্লিখিত বর্ণনাগুলো পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার আশিক্ব মুসলমান উনাদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন, উৎসাহ, উদ্দিপনা ও ব্যাপক জযবা সৃষ্টি করে। সুবহানাল্লাহ!

পক্ষান্তরে পবিত্র মীলাদ শরীফ বিরোধী ওহাবী, সালাফী, খারিজী, লা-মাযহাবীদের জন্য তা গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা চিন্তা করলো যে, তারা যে এতদিন মিথ্যা প্রোপাাগাণ্ডা করে এসেছে, ‘তিনযুগে মীলাদুন নবী ছিল না’ উক্ত কিতাব উনার বর্ণনা দ্বারা তাদের প্রদত্ব বক্তব্যগুলো মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়ে গেল। যদিও তাদের উক্ত বক্তব্য অনেক আগেই মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তারা আদা পানি খেয়ে উঠে পড়ে লাগলো, কিভাবে উল্লেখিত বর্ণনাসমূহকে মিথ্যা ও জাল বানানো যায়। নাউযুবিল্লাহ!

আর তারা এ জঘন্য কাজের জন্য বেছে নেয় ‘আব্দুল মালেক’ নামের কট্টর মীলাদ শরীফ বিদ্বেষী ওহাবী, খারিজী, চরম মিথ্যাবাদী প্রতারক ও জালিয়াত এক মৌলোভীকে।

সেই ওহাবী, খারিজী, চরম মিথ্যাবাদী, প্রতারক ও জালিয়াত মৌলোভী ওহাবীদের একটি অখ্যাত মুখপত্র “আল কাউসারে মার্চ ২০০৭ সংখ্যায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনের কথাগুলোই কিছুদিন পূর্বে বক্তব্য আকারে ভিডিও করে ইন্টারনেটে প্রকাশ করে। যার পুরোটাই মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকা ও জালিয়াতিতে পরিপূর্ণ।

উক্ত মিথ্যাচারপূর্ণ প্রতিবেদনে বিশ্ব সমাদৃত, সর্বজন স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য কিতাব- “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি ওলাদি আদম” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনার মধ্যে উল্লেখিত বর্ণনাসমূহের সমালোচনা করতে গিয়ে লিখেছে, ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফে যে নি’মাতুল কুবরা কিতাবের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, সে কিতাবটি জাল। তাদের কাছে আসল নি’মাতুল কুবরা কিতাবের পাণ্ডুলিপির ফটোকপি রয়েছে, যাতে উল্লেখিত বর্ণনাসমূহ নেই।’ নাউযুবিল্লাহ! লা’নাতুল্লাহি আলাল কাযিবীন! লা-হাওলা পড়ুন!

বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। আমরা ‘আল কাউসার’ কর্তৃপক্ষের কাছে কর্নেল (অব.) যোবায়েরুল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে পাঠাই তাদের কথিত আসল পাণ্ডুলিপির ফটোকপি নিয়ে আসার জন্য। উনাকে তারা জানায়, পা-ুলিপিটি এখন কোথায় আছে তা তাদের জানা নেই। উনাকে তারা আরেকদিন যেতে বলে এবং উক্ত কিতাবের  ফটোকপি দেয়ার কথাও ব্যক্ত করে। তাদের কথা মতে কর্নেল সাহেব আরেক দিন যান। সেদিনও তারা নানান টালবাহানা করে উনাকে ফিরিয়ে দেয়। এভাবে অনেকের মাধ্যমে অনেক চেষ্টা করেও তাদের কথিত আসল পাণ্ডুলিপির কোনো কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে তাদের উক্ত মিথ্যাচারিতার জবাব দিতেও আমাদের অনেকটা বিলম্ব হয়ে যায়।

এরই মধ্যে তারা “ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উৎপত্তি, ভিত্তি ও আপত্তি” নামক একটি রেসালার শেষ দিকে তাদের কথিত আসল পাণ্ডুলিপির ২টি পৃষ্ঠা ছাপিয়ে প্রকাশ করে।

এখন দেশবাসীর নিকট আমাদের প্রশ্ন:

(১). তারা যদি সত্যবাদিই হয়ে থাকে আর তাদের নিকট যদি সত্যিই আসল পাণ্ডুলিপি থেকে থাকে, তবে তারা কর্নেল (অব.) যোবায়েরুল্লাহ সাহেবের সাথে এরূপ ছল-চাতুরী করলো কেন?

(২). যদি তারা মিথ্যাবাদী না হয়, তবে বর্তমান মিডিয়া ও ইন্টারনেটের যুগে তাদের কথিত আসল পাণ্ডুলিপিটি এখনো পর্যন্ত মিডিয়ায় প্রকাশ করতে পারলো না কেন?

(৩). তারা তাদের কথিত আসল পাণ্ডুলিপির যে ২টি পৃষ্ঠা কিতাবে প্রকাশ করেছে, তা যে আসল পাণ্ডুলিপির ফটোকপি তারই বা প্রমাণ কি?

(৪). তারা “দারুল কুতুবিল মিছরিয়্যায়” সংরক্ষিত যে পাণ্ডুলিপির কথা বলছে, সেটাই যে আসল এবং ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ হাতে লেখা তারই বা কি প্রমাণ তাদের কাছে আছে?

(৫) ‘দারুল কুতুবিল মিছরিয়্যাহ’ যে জালিয়াতি করে ইবনে হাজার হাইতামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম ব্যবহার করে উক্ত পাণ্ডুলিপিটি জাল করে নাই, তারই বা নিশ্চয়তা কি?

(৬) ‘মাকতাবাতুল হাক্বীক্বাহ’ প্রকাশনীটি কট্টর বিদয়াতপন্থী কুফর শিরক প্রচারকারী। আর ‘দারুল কুতুবিল মিছরিয়্যাহ’ সুন্নাত প্রচারকারী তাই না? পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার পক্ষে হলেই বিদয়াত শিরক কুফর প্রচারকারী, আর পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বিরুদ্ধে হলেই পাক্কা সুন্নী। এটাই কি তাহলে তাদের মূলনীতি? নাউযুবিল্লাহ!

এটাই যদি হয় তাদের মূলনীতি, তবে যে প্রকাশনীটি পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার পক্ষে কিতাব প্রকাশ করবে সে প্রকাশনীকেই তো তারা বিদয়াত, শিরক, কুফর প্রচারকারী বলবে। যদিও হাজার দলীল থাকুক না কেন। যেমন উদাহরণস্বরূপ ক্বদমবূছী করার বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। ক্বদমবূছী করা সুন্নত। এ বিষয়টি ছহীহ আবূ দাউদ শরীফসহ অনেক ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাবসমুহের দলীল দ্বারা প্রমাণিত। তাদের গুরু থানবী, গাঙ্গুহী (ভারত), শফী (পাকিস্তান) তারা ইমদাদুল আহকাম, ফতওয়ায় রশীদিয়া, জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ নামক কিতাবেও ক্বদমবূছীকে সুন্নত বলেছে। যেমন-

عن وازع بن زارع عن جدها وكان فى وفد عبد القيس قال لما قدمنا المدينة فجعلنا نتبادر من رواحلنا فنقبل يد رسول الله صلى الله عليه وسلم ورجله.

অর্থ:- “হযরত ওয়াযে’ ইবনে যারে তিনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়স গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন পবিত্র মদীনা শরীফ আসতাম, তখন আমরা সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ি অবতরণ করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত ও পা মুবারক বুছা (চুম্বন) দিতাম।” সুবহানাল্লাহ! (অনুরূপ বযলুল মাজহুদ জিঃ ৬ পৃঃ ৩২৮, ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ জিঃ ৭ পৃঃ ৮০, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, ই’লাউস সুনান জিঃ ১৭, ৪২৬ পৃষ্ঠা ইত্যাদি কিতাবসমূহেও উল্লেখ আছে।)

গাঙ্গুহীর “ফতওয়ায়ে রশীদিয়া” ৪৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تعظیم دیندار کو کھڑا ھونا درست ھے اور پاؤں چومنا اسےھی شخص کا بھی درست ھے حدیث سے ثابت ھے-

অর্থ: “দ্বীনদার আলিম উনাদের সন্মানার্থে দাঁড়ানো জায়িয এবং উনাদের ক্বদমবুছী করাও জায়িয, পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।”

অনুরূপ ‘জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্’, ১ম জিঃ ২০২ পৃষ্ঠায় এবং ‘ইমদাদুল আহকাম’ কিতাবেও উল্লেখ আছে।

এরপরও ওহাবীরা এটা মানে না, বরং ক্বদমবূছী করাকে বিদয়াত, শিরক বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! এর প্রমাণ ওহাবীদের মুখপত্র হাটহাজারীর খারিজী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলাম, আগস্ট-৯৭ ঈসায়ী সংখ্যাসহ ওহাবীদর প্রায় পত্রিকা ও রেসালাতে রয়েছে।

কাজেই প্রমাণিত হলো যে, তাদের ওহাবী মতবাদের খিলাফ কোনো বিষয়ের স্বপক্ষে যতই দলীল থাকুক, তা তারা কখনোই মানবে না। এমনকি তাদের গুরু ও মুরুব্বীদের কিতাবে থাকলেও মানবে না। বরং উল্টো মিথ্যা দলীল ও মনগড়া ব্যাখ্যা দ্বারা তা ভুল ও জাল বানানোর অপচেষ্টা করবে। তদ্রূ ‘আন নি’মাতুল কুবরা’ উনার বিষয়টির ক্ষেত্রেও তাই।

উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র “মাকতাবাতুল হাক্বীক্বাহ” প্রকাশনিই উক্ত ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাবখানা প্রকাশ করেনি। বরং এর আরো অনেক আগে- ১৩৭১ হিজরী, ১৯৫২ ঈসায়ী সনে, কায়রো মিশর থেকে ‘মাতবায়াতুল ইস্তিক্বামাহ’ উক্ত কিতাবখানা প্রকাশ করে। পরবর্তীতে আরো অনেক প্রকাশনী উক্ত কিতাবখানা প্রকাশ করে। আমাদের নিকট এরূপ ৬ প্রকারের ‘আন নি’মাতুল কুবরা’ কিতাবের কপি রয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-

(১) ১৩৭১ হিজরী (১৯৫২ ঈসায়ী) সনে ‘মাতবায়াতুল ইস্তিক্বামাহ, কায়রো-মিশর’ থেকে প্রকাশিত মূল আরবী ছাপা।

(২) ১৩৯৭ হিজরী (১৯৭৭ ঈসায়ী) সনে ‘আল-মাকতাবাহ ঈশীক, ইস্তাম্বুল-তুরকী বা তুরস্ক’ থেকে প্রকাশিত মূল আরবী ছাপা।

(৩) ১৩৯৮ হিজরী সনে ‘ক্বাদিরী কুতুবখানা, সিয়ালকোট-পাকিস্তান’ থেকে প্রকাশিত উর্দূ অনুবাদ (প্রথম ছাপা) এবং ১৪০১ হিজরী সনে উক্ত প্রকাশনা থেকে দ্বিতীয় ধাপে উক্ত উর্দূ অনুবাদ ছাপা হয়।

(৪) ১৩৯৯ হিজরী (১৯৭৯ ঈসায়ী) সনে ‘আল-মাকতাবাহ ঈশীক, ইস্তাম্বুল-তুরকী বা তুরস্ক’ থেকে প্রকাশিত মূল আরবী ছাপা।

(৫) ১৪২৪ হিজরী (২০০৩ ঈসায়ী) সনে ‘মাকতাবাতুল হাক্বীক্বাহ, ইস্তাম্বুল-তুরকী বা তুরস্ক’ থেকে প্রকাশিত মূল আরবী ছাপা।

(৬) ১৪২৯ হিজরী সনে ‘যাবিয়াহ পাবলির্শাস, লাহোর-পাকিস্তান’ থেকে প্রকাশিত উর্দূ অনুবাদ (প্রথম ছাপা) এবং ১৪৩৬ হিজরী সনে উক্ত প্রকাশনা থেকে দ্বিতীয় ধাপে উক্ত উর্দূ অনুবাদ ছাপা হয়। যার প্রত্যেকটিতেই উল্লিখিত বর্ণনাসমূহ উল্লেখ রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, ‘আন নি’মাতুল কুবরা’ উনার মধ্যে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উক্ত কিতাব ছাড়াও আরো অনেক নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের লিখিত মশহুর ও মু’তাবার কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে। যেমন বিখ্যাত আলিমে দ্বীন, হাদীয়ে বাঙ্গাল হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার জন্ম ১২১৫ হিজরী এবং ওফাত ১২৯০ হিজরী। অর্থাৎ ওফাত থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ১৪৯ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। উনার এক সুযোগ্য আওলাদ হাফিজ আল্লামা আব্দুল আউয়াল জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন বিখ্যাত আলিম। উনার লিখিত একটা কিতাব হচ্ছে “নাফহাতুল আম্বরিয়া”। সে অনুপাতে হিসাব করলে প্রায় ১২০/১২৫ বছর আগের কিতাব। সেখানে পবিত্র মীলাদ শরীফ সর্ম্পকে খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনা গুলোতো আছেই বরং স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে সরাসরি একটি বর্ণনাও উল্লেখ আছে। “নাফহাতুল আম্বরিয়া” কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ খানা হলো-

قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من عظم مولدى كنت شفيعا له يوم القيامة من أنفق درهما في مولدى فكأنما أنفق جبلا من ذهب فى سبيل الله تعالى

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে সম্মান করবে সে কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত মুবারক লাভ করবে এবং যে ব্যক্তি আমার পবিত্র মীলাদ শরীফ পালন করতে এক দিরহাম খরচ করবে সে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমান স্বর্ণ দান করার ফযিলত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! তিনি এরপর ধারাবাহিক ভাবে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনাসমূহ উল্লেখ করেছেন।

সম্মানিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার  অনুসারী সবাই কমবেশি “মাওলুদে বারজাঞ্জি” শরীফ উনার নাম শুনেছেন। যার লিখক হচ্ছেন বিশিষ্ট হাদীছ শরীফ বিশারদ, মুহাদ্দিছ, আল্লামা সাইয়্যিদ জাফর ইবনু হাসান ইবনু আব্দুল করীম আল বারজাঞ্জি শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (ওফাত মুবারক ১১৭৭ হিজরী)। যিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার শাফিয়ী মুফতী ছিলেন। আমাদের দেশসহ এই উপমহাদেশে পবিত্র মীলাদ শরীফে যে পবিত্র তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করা হয় সেটা “মাওলুদে বারজাঞ্জি শরীফ” উনার মধ্যে রয়েছে। হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “বারাহিনুল কাতিয়া ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়া” নামক কিতাবেও উক্ত পবিত্র তাওয়াল্লুদ শরীফ এনেছেন।

পৃথিবী বিখ্যাত এই কিতাবের অনেক গুলো শরাহ বা ব্যাখ্যা গ্রন্থ রয়েছে। একটা ব্যাখ্যা গ্রন্থের নাম হচ্ছে “মাদারিজুস সউদ”। লেখক, আল্লামাতুশ শায়খ হযরত নূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। এই কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায়ও রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

من عظم مولدي كنت شفيعا له يوم القيامة من أنفق درهما في مولدي فكأنما أنفق جبلا من ذهب في سبيل الله تعالى

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে সম্মান করবে সে কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত মুবারক লাভ করবে এবং যে ব্যক্তি আমার পবিত্র মীলাদ শরীফ পালন করতে এক দিরহাম খরচ করবে সে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমান স্বর্ণ দান করার ফযীলত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

এরপর তিনি ধারাবাহিক ভাবে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের বর্ণনা গুলো উল্লেখ করেন। সুবহানাল্লাহ!

মিশর থেকে প্রকাশিত, বিশ্ব বিখ্যাত “মাওলুদে বারজাঞ্জি শরীফ” উনার শরাহ। কিতাবটির উনার নাম হচ্ছে, “তালহীনুছ ছাননাজ” লেখক হচ্ছেন, আল্লামা আব্দুর রহীম সূয়ুতী আল মালিকী রহমতুল্লাহি আলাইহি। প্রকাশকাল ১৩২১ হিজরী। আজ থেকে প্রায় ১১৮ বছর আগের। উক্ত কিতাবের ৫ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে-

قوله صلى الله عليه و سلم من عظم مولدى كنت شافعا له يوم القيامة ومن انفق درهما فى مولدى فكانما انفق جبلا من ذهب فى سبيل الله تعالى

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে সম্মান করবে সে ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত মুবারক লাভ করবে এবং যে ব্যক্তি আমার পবিত্র মীলাদ শরীফ পালন করতে এক দিরহাম খরচ করবে সে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় এক পাহাড় পরিমান স্বর্ণ দান করার ফযিলত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

প্রশ্ন হচ্ছে যদি ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’ কিতাব উনার ভিত্তিই না থাকতো তাহলে এসব বর্ণনা কিভাবে কিতাবে আসলো? তাও আবার ‘মাকতাবায়ে হাকীকার’ প্রতিষ্ঠার শতাধিক বছর আগের প্রকাশিত কিতাবসমূহে?

অতএব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আশিক্ব পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনকারী সুন্নী জামায়াতের অনুসারীসহ সর্বস্তরের মুসলমান উনাদের প্রতি আহবান-

আসুন: এখনই কিতাব জালকারী, পবিত্র হাদীছ শরীফ জালকারী, পবিত্র কালিমা শরীফ অস্বীকারকারী, পবিত্র মীলাদ শরীফ বিরোধী ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু উনাকে তাদের মত সাধারন মানুষ বলে প্রচারকারী এসব মিথ্যাবাদী, প্রতারক, জালিয়াত, ওহাবী, সালাফী, খারিজী, লা-মাযহাবীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। এদেরকে প্রকাশ্য বাহাছে জনগণের মুখোমুখি হতে বাধ্য করি। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করি। নচেৎ অদূর ভবিষ্যতে এরা সুন্নীয়তের অস্তিত্বই যমীন থেকে মুছে দিবে। নাউযুবিল্লাহ!

আপনারা ওহাবীদের মিথ্যাচারিতায় একটুও বিচলিত ও বিভ্রান্ত হবেন না। আমরা দ্ব্যার্থ কন্ঠে বলছি- মাকতাবাতু হাক্বীক্বা থেকে প্রকাশিত ‘আন নি’মাতুল কুবরা’ কিতাব খানাই আসল নি’মাতুল কুবরা। আর তাদের কথিত পা-ুলিপিটি হচ্ছে জাল। যার বহু প্রমাণ আমাদের নিকট বিদ্যমান, সময়মত আপনারা তা পেয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ!

এ ব্যাপারে তাদের প্রতি আবারো রাজারবাগ শরীফ উনার পক্ষ থেকে ‘একশত কোটি টাকার প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ’ ঘোষণা করা হচ্ছে। যদি বুকে সাহস থাকে আর মিথ্যাবাদী না হও তবে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জনসম্মুখে এসে তোমরা তোমাদের নকল ও জাল পা-ুলিপিকে আসল প্রমাণ করো এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন বা উদযাপন করাকে বিদয়াত নাজায়িয প্রমাণ করো।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমরা ‘আল কাউসার পত্রিকা ও তাদের লিখিত ঈদে মীলাদুন নবীর উৎপত্তি ভিত্তি ও আপত্তি’ নামক রেসালার বক্তব্যগুলো অতিশীঘ্রই ধারাবাহিকভাবে খ-ন করবো এবং তাদের কথিত পা-ুলিপিটি যে আসলেই জাল তার বিস্তারিত প্রমাণ পেশ করবো ইনশাআল্লাহ।

-মুফতিয়ে আ’যম আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ

শোক সংবাদ: সাইয়্যিদাতুন নিসা, সুলতানাতুল আরিফীন, কুতুবুল ইরশাদ, কুতুবুল আক্বতাব, আওলাদে রসূল মুহতারামা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন

আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী আলাইহিস সালাম তিনি নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী উনার প্রতি অপবাদকারী যালিম গং নিঃসন্দেহে গুমরাহ, বাতিল, লা’নতপ্রাপ্ত, জাহান্নামী ও সুন্নী নামের কলঙ্ক রেজাখানীরা আয়নায় নিজেদের কুৎসিত চেহারা দেখে নিক ॥ ইসলামী শরীয়ার আলোকে একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা-১২

আহলান-সাহলান! সুমহান পহেলা শাওওয়াল!! মুবারক হো ঈদে বিলাদতে তাহিরাহ, তাইয়িবাহ, মাহবুবাহ, ফাক্বীহা, মাশুক্বাহ, তাওশিয়াহ, তাকরীমাহ, তাক্বিয়্যাহ, তাযকীয়্যাহ, নূরে হাবীবা, লখতে জিগারে মুজাদ্দিদে আ’যম, কুতুবুল আলম, উম্মু আবিহা, ক্বায়িম-মাক্বামে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতুন নিসা, আওলাদে রসূল, হযরত শাহযাদী উলা ক্বিবলা আলাইহাস সালাম

বিশেষ প্রবন্ধ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারকই মুহব্বত-মা’রিফাত, কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারকসহ সমস্ত কিছুর মূল, কাজেই যে যতটুকু উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করতে পারবে, সে ততটুকু কামিয়াবী হাছিল করবে

বিশেষ কলাম: পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান মশহূর পবিত্র শবে বরাত এবং উনার আমলসমূহ বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হওয়া প্রসঙ্গে-পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফ একদম ছহীহ- এ বিষয়ে সকল আসমাউর রিজাল বিশারদগণ একমত