বিশেষ কলাম- লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার কথিত ঈমান-আক্বীদা সংরক্ষণ কমিটির ছদ্মাবরণে দেওবন্দী, ওহাবী বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক প্রচারিত লিফলেটের দাঁতভাঙ্গা জবাব

সংখ্যা: ২৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা মুবারক মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্য এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি। সুবহানাল্লাহ!

সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা থানায় কথিত “হাতীবান্ধা উপজেলা ঈমান-আক্বীদা সংরক্ষণ কমিটি”র ছদ্মাবরণে দেওবন্দী, ওহাবী  বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক একখানা লিফলেট প্রচারিত হয়। যে লিফলেটে তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনার উপর প্রতিষ্ঠিত, সারাবিশ্বে সমাদৃত হক্ব সিলসিলা রাজারবাগ শরীফ উনার নামে সম্পূর্ণ মিথ্যারোপ করে। আপামর মুসলিম জনতা যেন উক্ত লিফলেট পড়ে বিভ্রান্ত না হয় সেদিক লক্ষ্য করে আমরা দেওবন্দী, ওহাবী বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক প্রচারিত লিফলেটের জবাব সংক্ষেপে এখানে প্রদান করছি। পাশাপাশি তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও কুফরী-শিরকী আক্বীদা-আমলগুলো তুলে ধরা হলো।

রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা সম্পর্কে মিথ্যাচারিতা

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে বলা হয়েছে, হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা নাকি “তাঁতী ও সূতা ব্যবসায়ী ছিলেন।” নাঊযুবিল্লাহ!

জবাব: এর জবাবে বলতে হয় যে, মূলত: দেওবন্দী কাযযাবদের পক্ষেই এরূপ ডাহা মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা সম্ভব। রাজারবাগ শরীফ  উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত পিতা অতি উঁচু স্তরের একজন খালিছ ওলীআল্লাহ ছিলেন। তিনি ছিলেন ফুরফুরা শরীফের হযরত আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট খলীফা। পারিবারিক ঐতিহ্যগতভাবে তিনি ছিলেন ঐশর্য্যশালী। পেশায় তিনি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। তবে তিনি ওভার ক্লাশ ওয়ান গভর্ণমেন্ট কন্ট্রাক্টর হওয়ার কারণে অল্প কিছুদিন চাকুরী করেছিলেন। তাছাড়া তাঁতী বা সুতা ব্যবসায়ী হওয়া দোষের কি? ব্যবসা করা তো খাছ সুন্নত। আর তাঁতী বা সুতা ব্যবসায়ীর সন্তান কি আলিম বা ওলীআল্লাহ হতে পারেন না? মূলত: মিথ্যাবাদীরা হীন ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে অসৎ উদ্দেশ্যে বলেছে, “তিনি তাঁতী ও সূতা ব্যবসায়ী ছিলেন।” নাঊযুবিল্লাহ! প্রকৃতপক্ষে তিনি তাঁতী বা সূতা ব্যবসায়ী ছিলেন না। সুতরাং এক্ষেত্রে কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

ইল্ম হাছিল সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে বলা হয়েছে, “তিনি নিয়মতান্ত্রিক লেখা-পড়া করা কোন আলিম নন, তিনি কলেজ শিক্ষিত ব্যক্তি”। নাঊযুবিল্লাহ! জবাব: দেওবন্দী কাযযাবদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার যদি মাদরাসা শিক্ষা নাই থাকতো তবে তিনি সারাদেশে ওয়ায মাহফিলে, মসজিদে জুমুয়ার বয়ানে, খানকা শরীফ-এ, তা’লীমী মজলিসে ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মাধ্যমে ওয়ায-নছীহত করেন কিভাবে? উক্ত ওয়ায নছীহতে আরবী, ঊর্দূ, ফার্সী ভাষা ব্যবহার তার তরজমা ও ব্যাখ্যা করেন কিভাবে? কাজেই উনার মাদরাসা শিক্ষা নেই একথা ডাহা মিথ্যা বৈ কিছুই নয়। তবে দেওবন্দী কাযযাবরা যদি একাডেমিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কথা বুঝিয়ে থাকে। তবে আমরা বলবো- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের অনেকেই একাডেমিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন নাই। তাই বলে কি তাদের মতে উনারা আলিম ছিলেন না? নাঊযুবিল্লাহ!

তাছাড়া “আলিম হতে হলে মাদরাসায় পড়তে হবে অথবা মাদরাসায় না পড়লে আলিম হওয়া যাবে না।” এমন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের কোথাও উল্লেখ আছে কি? মূলত: পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের কোথাও আলিম হওয়ার জন্য মাদরাসায় পড়াকে শর্ত করা হয় নাই। আলিম হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে ইলম অর্জন করা বা ইলমের অধিকারী হওয়া এবং সে অনুযায়ী আমল করা। এখন ইলম অর্জন তা যেভাবেই হোক না কেন। মাদরাসায় পড়েও হতে পারে, উস্তাদের নিকট আলাদাভাবে পড়েও হতে পারে অথবা ইলমে লাদুন্নী বা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ইলম উনার মাধ্যমেও আলিম হতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

ইলমে লাদুন্নি এবং ইলমের সমুদ্র সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে বলা হয়েছে “তিনি দাবী করেন যে, তাকে ইলমে লাদুন্নি (আল্লাহ প্রদত্ত সরাসরি ইলম) দান করা হয়েছে এবং তিনি ইলমের সমুদ্র”।

জবাব: এর জবাবে বলতে হয় যে, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে, ইলমে লাদুন্নীপ্রাপ্ত হন তা তো সম্মানিত কুরআন শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। আর ইলমের সমুদ্র বা ‘বাহরুল উলূম’ লক্বব ব্যবহার করেছেন এরূপ বহু প্রমাণ হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনীতে পাওয়া যাবে। এমনকি দেওবন্দীদের অনেকেই ইলমে লাদুন্নীর দাবী করেছে এবং ‘বাহরুল উলূম’ লক্বব ব্যবহার করেছে, যার বহু প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।

তাছাড়া দেওবন্দী কাযযাব গং কি প্রমাণ করতে পারবে যে, ইলমে লাদুন্নীপ্রাপ্ত হওয়া, বাহরুল উলূম লক্বব ব্যবহার করা শরীয়তের খিলাফ? কস্মিনকালেও পারবে না। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণিত হলো।

বড়পীর হযরত আব্দুল ক্বাদির জীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে উল্লেখ করা হয়েছে, “এমনকি বড়পীর আব্দুল ক্বাদির জীলানী (রহঃ) এর চেয়েও তার মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে।”

জবাব: এর জবাবে বলতে হয় যে, দেওবন্দী কাযযাবদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা। মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ৭৩তম সংখ্যায় তো দূরের কথা কোনো সংখ্যাতেই এ ধরণের কোনো কথা উল্লেখ নেই। কাযযাব গং সাধারণ লোকদেরকে বিভ্রান্ত ও রাজারবাগ শরীফ উনার বিরুদ্ধে তাদেরকে উত্তেজিত করার অসৎ উদ্দেশ্যেই মনগড়া এ বক্তব্য প্রদান করেছে। তাছাড়া কোনো মুরীদ যদি তার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলাকে হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়ে বড় মনে করে তাতে দোষের কি? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের কোথাও কি এ কথা বলা হয়েছে যে, হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়ে বড় ওলীআল্লাহ পৃথিবীতে আর আসবেন না? তাছাওউফের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মুরীদের জন্য তার শায়েখ বা মুর্শিদকে সবার চেয়ে বড় মনে করাই হচ্ছে আদব। এ প্রসঙ্গে মিথ্যাবাদী দেওবন্দীদেরই মুরুব্বী থানবী তার নিজের লেখনীতে “(থানবীর নির্বাচিত ঘটনাবলী” -ক্বারী আবুল হাসান, দেওবন্দ) নিম্নোক্ত ঘটনা সংকলন করেছেন-

“….হযরত সাইয়্যিদ আহমদ রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মর্যাদা”

হযরত সাইয়্যেদ আহমদ রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি (তিনি বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমসাময়িক বুযূর্গ ছিলেন) উনার কাছে তার এক মুরীদ জিজ্ঞাসা করল যে, আপনার মর্যাদাও কি বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমান? তিনি বলেন, “তোমার শায়েখকে বড়পীর ছাহেব উনার উর্ধ্বে মনে কর।” মুরীদ বলল, তাহলে কি আপনি কুতুব? তিনি আবার বললেন, “তোমার পীরকে কুতুবেরও উর্ধ্বে মনে কর ………..।” কাজেই দেওবন্দী কাযযাবরা মনে করলে দোষ নাই; রাজারবাগ বললে দোষ? সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

খিলাফত সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা:

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে বলা হয়েছে, “তিনি কোন পীর থেকে খেলাফত লাভ করেননি। তবে তিনি বলেন, স্বয়ং আল্লাহ ও রসূল তাকে খিলাফত দান করেছেন।”

জবাব: এর জবাবে বলতে হয় যে, কাযযাব গং যে মিথ্যার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে তা কি এরপরও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে? সাধারণ লোকদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া তাদের চিরাচরিত বদ অভ্যাস। রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বাইয়াত হওয়ার ফরয আদায়ের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন ঢাকা আলিয়া মাদরাসার মুফাসসিরে কুরআন, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, কুতুবুল আলম, মুফতিউল আ’যম হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী (যাত্রাবাড়ীর হযরত পীর ছাহিব ক্বিবলা) আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হন। মাত্র প্রায় এক বছরে তিনি চার তরীক্বায় পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়ে স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা উনার চূড়ান্ত সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করে খিলাফত লাভ করেন। যা উনার শাজরা শরীফে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে। সুবহানাল্লাহ!

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে বলা হয়েছে, “তিনি বলেন, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খিলাফত দান করেছেন।”

এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, দেওবন্দী কাযযাব গং এক্ষেত্রেও মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য উল্লেখ করেছে। কারণ কাযযাব গং কখনো প্রমাণ করতে পারবেনা যে, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কোন ওয়াজ শরীফে অথবা আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার কোন সংখ্যায় হুবহু একথা উল্লেখ আছে। কাজেই তারা এক্ষেত্রেও ডাহা মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, যদিও ধরে নেয়া হয় যে, তিনি এ কথা বলেছেন, তাতেই বা অসুবিধা কোথায়? দেওবন্দী কাযযাব গং কি প্রমাণ করতে পারবে যে, এ ধরণের কথা বলা সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ? কস্মিনকালেও  তা পারবেনা। বরং উক্ত কথার পক্ষেই সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত সুন্নাহ শরীফ উনাদের থেকে বহু দলীল পেশ করা সম্ভব। মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই খাছ খিলাফত দিয়ে থাকেন। আর পীর ছাহেব উনার মুরীদকে যে খিলাফত দিয়ে থাকেন, সেটাও মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ মুবারকেই দিয়ে থাকেন। যারা ইলমে তাছাওউফ স্বীকার করে না, তারা এটা কি করে জানবে বা বুঝবে? সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

মিথ্যাচারিতায় পরিপূর্ণ লিফলেটে, রাজারবাগ শরীফের নামে কতিপয় আক্বীদা উল্লেখ করা হয় যার অধিকাংশই বানোয়াট, মনগড়া ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত; আর কতিপয় ব্যাখ্যা সাপেক্ষ:

ওলীআল্লাহগণের নিকট চাওয়া সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

যেমন মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে তারা উল্লেখ করেছে: “মুসলমানরা আল্লাহর নিকট যেভাবে প্রার্থনা করেন……..সেভাবে ডাকেন ইয়া মুর্শিদ কিবলা………..আপদ বিপদ – বালা মুসিবত……..পরিবারের সকলকে খাছভাবে মুক্তি দিন……বরকত দান করুন”।

জবাব: এর জবাবে বলতে হয়, প্রথমত: এ কথাটি আল বাইয়্যিনাতের কোন কথা নয়, এটি একটি বিজ্ঞাপন। তবুও এর ছহীহ ব্যাখ্যা ও জবাব রয়েছে। সেটা হলো, ওলীআল্লাহ উনাদের কাছে ওলীআল্লাহ মনে করে চাওয়া সম্পূর্ণ জায়িয। তবে কেউ যদি কারো কাছে আল্লাহ পাক মনে করে কোনো কিছু চায় তাহলে সেটা শিরক বা কুফরী হবে।

কারণ আমরা দেখতে পাই যে, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের কাছে অনেক ব্যাপারেই সাহায্য প্রার্থনা করে থাকে। যেমন অনেকে এভাবে বলে যে, ভাই! আমি অমুক বিপদে পড়েছি, আপনি আমাকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। আমাকে সাহায্য করুন। আমি অমুক সমস্যায় আছি আপনি আমার সমস্যা সমাধান করুন। এতে কি সে ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক মনে করা হলো? মূলত: বান্দার নিকট যদি বান্দা মনে করে চায় তবে সেটা কখনোই শিরক নয়। কাজেই ওলীআল্লাহর নিকটে যদি ওলীআল্লাহ মনে করে চায় তবে সেটাও শিরক নয়। এ ব্যাপারে রাজারবাগ শরীফ উনার সকল মুরীদের আক্বীদা হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক তিনি এক ও একক, উনার কোনো শরীক নেই। অন্য কাউকে আল্লাহ পাক মনে করা  বা মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ মনে করা সুস্পষ্ট শিরক। রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আমাদেরকে এ আক্বীদা-ই শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

ওলীগণ উনাদের কাছে চাওয়া জায়িয এ জন্য যে, উনাদের মাধ্যমে বৃষ্টি লাভ হয়, ফসল হয়, সাহায্য প্রাপ্ত হয় ও বালা-মুছীবত দূর হয়।  এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে-

بِـهِمْ يـُحْيِـىْ وَيـُمِيْتُ وَيـَمْطُرُ وَيَنْبِتُ وَيَدْفَعُ الْبَلَاءَ

অর্থাৎ “(আউলিয়ায়ে কিরাম) উনাদের মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকবে, মারা যাবে, বৃষ্টি পাবে, ফসল পাবে এবং বালা-মুছীবত দূর হবে।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

হযরত ক্বাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

لَنْ تَـخْلُوَ الْاَرْضُ مِنْ اَرْبَعِيْنَ بِـهِمْ يُغَاثُ النَّاسُ وبِـهِمْ يُنْصَرُوْنَ وَبِـهِمْ يُرْزَقُوْنَ

অর্থাৎ এরূপ চল্লিশজন লোক থেকে জমিন কখনো খালি থাকবে না, উনাদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি পাবে, সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং রিযিকপ্রাপ্ত হবে। (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

কাজেই কারো কাছে কোনো কিছু চাইলেই সেটা শিরক হয় না।

সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

‘ইমামুছ ছিদ্দিক্বীন’ লক্বব ব্যবহার সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে বলা হয়েছে, “…তার মর্যাদা আবু বক্কর সিদ্দিক (রা:) এর চেয়ে উর্ধে এর প্রমান তার খেতাব ইমামুস সিদ্দিকীন বা সিদ্দিকগণের নেতা”।

জাবাব: দেওবন্দী কাযযাব গং এর উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য প্রমাণ করে যে, তারা আসলেই আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল। কারণ একথা সবারই জানা যে, ওলীগণের লক্ববসমূহ সাধারণতঃ উনাদের প্রত্যেকের যামানার জন্যেই খাছ। উনাদের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কেউ এর অন্তর্ভুক্ত হবেন না। এ প্রসঙ্গে ক্বাইয়্যূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বসমাদৃত ‘মাকতুবাত শরীফে’ লিখেছেন, গাউছূল আ’যম বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে বলেছেন, “সমস্ত ওলীগণের গর্দানের উপর আমার কদম”, এটা বড়পীর ছাহেবের যামানার জন্যেই খাছ। কারণ একথা যদি আম বা ব্যাপক অর্থে ধরা হয়, তবে উনার পূর্বে রয়েছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, আর পরে রয়েছেন হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম। এখন উনাদের গর্দানের উপরও কি বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কদম মুবারক? একথা যদি কেউ বিশ্বাস করে তবে তার ঈমান থাকবে কি?

অতএব, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, “ওলীগণ উনাদের লক্বব মুবারক উনাদের প্রত্যেকের যামানার জন্যই খাছ।”

অনুরূপ “ইমামুছ্ ছিদ্দিক্বীন” লক্ববও স্বীয় যামানার জন্যে খাছ। তাছাড়া হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসংখ্য লক্বব মুবারকের মধ্য হতে একখানা লক্বব রয়েছে, “ইমামুছ ছিদ্দিক্বীন”।

মিথ্যাবাদী দেওবন্দীরা কি বলবে যে, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে নিজেকে বড় বা শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবি করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!

শুধু তাই নয়, মিথ্যাবাদি দেওবন্দীদের অনেকেরই এরূপ অনেক লক্বব আছে যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের চেয়ে নিজেকে বড় দাবী করেছে। যেমন কাযযাব গংদের মুরুব্বী থানবীর একটি লক্বব হচ্ছে “হাকীমুল উম্মত” যার অর্থ: সমস্ত উম্মতে মুহম্মদীর হাকীম। অর্থাৎ দেওবন্দী মুরুব্বী থানবী সে নিজেকে সকল উম্মতের হাকীম দাবী করেছে। আর সকল উম্মতের মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরামও রয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ!

এ ক্ষেত্রে দেওবন্দী দাজ্জালে কাযযাবরা কী জবাব দিবে? সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

হাবীবুল্লাহ লক্বব ব্যবহার করা সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে বলা হয়েছে, “…নিজেকে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমমর্যাদার অধিকারী মনে করে, ফলে নিজের খেতাব হাবীবুল্লাহ রেখেছে যা হযরত রাসূল কারীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই খাছ ছিল।”

জবাব: দেওবন্দী কাযযাব গং এর মতে পূর্ববর্তী দু’জন মশহুর ‘ওলীআল্লাহ’ উনারাও নিজেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমমর্যাদার অধিকারী দাবী করেছেন। তাদের একজন হলেন, হযরত যুননুন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি আর অপরজন হচ্ছেন, সুলত্বানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি। কারণ উনাদের উভয়েরই লক্বব বা খেতাব ছিল ‘হাবীবুল্লাহ’।

আর কাযযাব গং এর মতে ‘হাবীবুল্লাহ’ খিতাব ব্যবহার করলে যদি  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  সমান মাক্বাম দাবি করা হয় তবে বলতে হবে যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই উম্মতকে এ মাক্বামে অধিষ্ঠিত করেছেন। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَلسَّخِىُّ حَبِيْبُ اللهِ وَلَوْ كَانَ فَاسِقًا

অর্থাৎ “দানশীল ব্যক্তি ‘হাবীবুল্লাহ’ যদিও সে ফাসিক হয়।” (লুগাতুল হাদীছ)

দেওবন্দী কাযযাব গং-এর মতে দানশীল ব্যক্তিকে ‘হাবীবুল্লাহ’ খেতাব দিয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি দানশীলের মাক্বাম ও মর্যাদা নিজের সমান করে দিয়েছেন? নাঊযুবিল্লাহ!

তাছাড়া ‘হাবীবুল্লাহ’ বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝালে যদি তা বেয়াদবী ও কুফরী হয় তবে তো যত লোকের নাম ‘হাবীবুল্লাহ’ রাখা হয়েছে তারা সবাই বেয়াদব ও কাফির! শুধু তাই নয়; মাওলানা, গণী, হাকীম লক্বব ব্যবহারকারীও বেয়াদব ও কাফির। কারণ মাওলানা, গণী ও হাকীম বলতে মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনাকেই বুঝে থাকে। সুতরাং দেওবন্দী কাযযাব গং এর উক্ত বক্তব্য মনগড়া, বানোয়াট, কল্পনা প্রসূত, বিদ্বেষমুলক, স্ববিরোধী, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক প্রমাণিত হলো। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

‘ক্বাইয়্যূমুয্ যামান’ লক্বব ব্যবহার করা সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে বলা হয়েছে, “ক্বাইয়্যুমুয যামান বা জগতের ধারক ও রক্ষক এই উপাধি আল্লাহর জন্যই। অন্য কেহ হতে পারে না। সুতরাং …ক্বাইয়্যুমুয যামান নিজের খেতাব রাখার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে”। নাঊযুবিল্লাহ!

জবাব: এর জবাবে বলতে হয় যে, ‘ক্বাইয়্যূম’ শব্দটি একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারেই প্রযোজ্য অন্য কারো ব্যাপারে নয়, এ কথাটি কাযযাব গংয়ের একান্তই নিজস্ব মনগড়া ও বানানো। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফের কোথাও একথা উল্লেখ নাই। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের  কোথাও ‘ক্বাইয়্যূম’ শব্দটিকে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য খাছ করা হয়নি। ‘ক্বাইয়্যূম’ শব্দটি যদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই খাছ থাকতো, তবে জগতখ্যাত আলিমে দ্বীন ও মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেকে ‘ক্বাইয়্যূমে আউওয়াল’ বলে দাবি করতেন না। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেকে ‘ক্বাইয়্যূম’ হিসেবে প্রকাশ করা এটাই প্রমাণ করে যে, ‘ক্বাইয়্যূম’ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই  খাছ নয়। যদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য খাছ হতো তবে নিজের ব্যাপারে সেটা প্রকাশ করতেন না। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কম জানতেন না। সে যামানার বড় বড় আলিমগণ উনার মুরীদ ছিলেন। যেমন ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে। তিনিও হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ‘ক্বাইয়্যূম’ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তিনি বা অন্য কোন অনুসরণীয় হক্কানী আলিম উনারা কেউই হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধির বিরোধিতা করেননি। এতে কি এটাই প্রমাণিত হয়না যে, ‘ক্বাইয়্যূম’ শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই খাছ নয়, বরং অন্যের ক্ষেত্রেও তা ব্যবহৃত হতে পারে? অবশ্যই প্রমাণিত হয়।

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, “কোন মাখলূক ক্বাইয়্যূম হতে পারে না।” দেওবন্দী কাযযাব গং এর এ বক্তব্যও ভুল, মনগড়া,  দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী। মূলতঃ মাখলূক অবশ্যই ‘ক্বাইয়্যূম’ হতে পারে। তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যে অর্থে ‘ক্বাইয়্যূম’ সে অর্থে নয়। যেমন, মাখলুক ‘মাওলানা’ হতে পারে, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যে অর্থে ‘মাওলানা’ সে অর্থে নয়।  মূলতঃ মানুষ ‘ক্বাইয়্যূম’ হতে পারে বলেই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এবং হযরত ইমাম মা’ছূম রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেককেই ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি দান করেছেন।

তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, দেওবন্দী কাযযাব গং এর মতানুযায়ী ‘ক্বাইয়্যূমুয্ যামান’ উপাধি ব্যবহারকারী সকলেই যদি কাফির হয় তবে তাদের মতে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত ইমাম মা’ছূম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত হুজ্জাতুল্লাহ নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত জোবায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা সকলেই কাফির সাব্যস্ত হন। নাঊযুবিল্লাহ! কারণ উনারা সকলেই ‘ক্বাইয়্যূমুয্ যামান’ লক্বব ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ দেওবন্দী কাযযাব গং সর্বজনমান্য অনুসরণীয় হক্কানী রব্বানী আউলিয়ায়ে কিরাম ও উলামায়ে কিরাম উনাদেরকে কাফির ফতওয়া দিয়ে নিজেরাই কাফির  হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

দেওবন্দী কাযযাব গং লিখেছে: “….আল বাইয়্যিনাত বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফ”।

জবাব: এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, দেওবন্দী কাযযাব গং এক্ষেত্রেও প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। কারণ তারা আল বাইয়্যিনাত-এর উক্ত বক্তব্যকে স্বীয় হীনস্বার্থ চরিতার্থে কুটকৌশলে রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নামে চালিয়ে দিয়েছে। অথচ উক্ত বক্তব্যটি হচ্ছে একজন পাঠকের, যা “আপনাদের মতামত বিভাগে” (মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়) ‘পাঠকের মতামত’ হিসেবে পত্রস্থ হয়েছে। কাজেই পাঠকের বক্তব্যকে রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করা চরম জালিয়াতী ও প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, পাঠক তার মতামতে “আল বাইয়্যিনাত কে বাংলা ভাষায় কুরাআন শরীফ বলেছেন” এটা মূলতঃ রূপক অর্থেই বলেছেন। কারণ পাঠক তার উক্ত বক্তব্যের সাথে ‘মছনবী শরীফের’ উদাহরণ টেনে এনেছেন। পাঠক এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, মছনবী শরীফকে যে অর্থে “ফার্সী ভাষায় কুরআন শরীফ” বলা হয়, ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ সে অর্থেই বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফ। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাধ্যমে মানুষ যেরূপ হক্ব মত হক্ব পথ পেয়ে থাকে, হালাল হারাম পার্থক্য করতে পারে, ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে পাওয়ার দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকে। অনুরূপভাবে আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মাধ্যমেও বর্তমানে মানুষ হক্ব মত হক্ব পথ পাচ্ছে, হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছে, নিজ ঈমান আমল হিফাযত করতে পারছে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিলের পথ খুঁজে পাচ্ছে। আর তা সম্ভব হওয়ার কারণ হচ্ছে, আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর প্রতিটি বিষয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াসের ভিত্তিতে লিখা হয়। তাই এ অর্থে বা রূপক অর্থে আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনাকে “বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফ” বলা অবশ্যই শরীয়তসম্মত। তাছাড়া একজন সাধারণ লোকও জানে যে, আল্লামা জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মছনবী শরীফকে “ফার্সী ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফ” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যার প্রমাণ খোদ দেওবন্দী কাযযাবদের মুরব্বী তথাকথিত শায়খুল হাদীছ নামধারী আজীজুল হক্ব অনুদিত বাংলা মছনবী শরীফ ও তাদের আরেক মুরুব্বী থানবী ছাহেবের ‘কলীদে মছনবী’তেও রয়েছে। শুধু তাই নয় “কাশফুয যুনূন কিতাবে উল্লেখ আছে, নিশ্চয়ই “হিদায়া শরীফ” পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনুরূপ।” (ফতহুল ক্বদীর ২য় জি: ১ম পৃষ্ঠা) অর্থাৎ ‘হেদায়া’ কিতাবকেও অনেকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনুরূপ বলেছেন। আর এটা মূলত: রূপক অর্থেই বলা হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

আল বাইয়্যিনাত পাঠ করা সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

দেওবন্দী কাযযাবরা লিখেছে, “যে আল বাইয়্যিনাত পড়বে তার নাম নবীর দফতরে থাকবে।”

জবাব: দেওবন্দী কাযযাবদের এ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয়, দেওবন্দীরা যে জাত মিথ্যাবাদী, তারা যে মিথ্যা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে, হক্কানী ওলীদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে উক্ত বক্তব্যই তার বাস্তব প্রমান। যাদের কাছে আল বাইয়্যিনাত প্রথম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা, জুন-১৯৯২ সংখ্যাটি রয়েছে তারা  ৪৬ পৃষ্ঠা খুলে দেখুক। যদি এরূপ কোনো বক্তব্য তারা দেখাতে পারে তবে ১ কোটি টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। মূলত: সেখানে এ ধরণের কোনো কথাই উল্লেখ নেই। সেখানে মূলত: মাকতুবাত শরীফ ও মছনবী শরীফের কথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ মিথ্যাবাদীর দল সেটা আল বাইয়্যিনাতের নামে চালিয়ে দিয়েছে। এরপরও কি আপনারা এদেরকে বিশ্বাস করবেন? সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

গালি-গালাজ সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

দেওবন্দী কাযযাব গং লিখেছে: “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় উলামায়ে কিরাম সম্পর্কে এমন গালি-গালাজ লিখা হয়, যা কোন ভদ্রতা ও শালীনতার আওতায় পড়েনা। অথচ গালিগালাজ করা ফাসেকী ও হারাম।”

জবাব: দেওবন্দী কাযযাব গং তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা আল বাইয়্যিনাত-এর প্রতি দু’টি মিথ্যা তোহমত দিয়েছে। (১) আল বাইয়্যিনাতে গালি-গালাজ লিখা হয়। (২) উলামায়ে কিরাম বা নায়িবে নবীগণকে গালি-গালাজ করা হয়। নাউযুবিল্লাহ!

তাদের প্রথম মিথ্যা তোহমতের জবাবে বলতে হয় যে, আল বাইয়্যিনাতে গালি-গালাজ লিখা হয়- তাদের এ বক্তব্যটিও ডাহা মিথ্যা, তাই তারা উদাহরণ স্বরূপ দু একটি গালিও উল্লেখ করতে পারেনি। মূলতঃ আল বাইয়্যিনাত শরীফে কখনোই গালি-গালাজ লিখা হয়না। তবে আল বাইয়্যিনাত শরীফে কারো হক্ব সমালোচনা করতে গিয়ে যে বিশেষণগুলো প্রকাশ করা হয় তাও সঠিক এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্মত। মিথ্যা এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ বিরোধী কোন বিশেষণ আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ প্রকাশ করা হয়না। তাহলে কি তাদের মতে কাফিরকে কাফির বলা, মুনাফিককে মুনাফিক বলা, মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাবাদী বলা, মুশরিককে মুশরিক বলা, বিদয়াতীকে বিদয়াতী বলা, গোমরাহকে গোমরাহ বলা গালিগালাজ? সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

দ্বিতীয়তঃ “আল বাইয়্যিনাত শরীফে উলামায়ে কিরামগণকে গালি-গালাজ করা হয়।” দেওবন্দী কাযযাবদের একথাও ডাহা মিথ্যা।

কারণ দেওবন্দী কাযযাব গং যাদেরকে উলামায়ে কিরাম বা নায়েবে নবী বলে দাবি করছে, তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী নয়। কারণ যারা হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বানায়, ছবি তোলে ভিডিও করে, বেপর্দা হয়, নারী নেতৃত্ব মানে, হরতাল-লংমার্চ করে, তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম নয়; বরং তারা হচ্ছে- উলামায়ে সূ’ বা ধর্ম ব্যবসায়ী। তাদের সমালোচনা করা ছওয়াবের কাজ। আল বাইয়্যিনাতে সেই ভন্ড, বিদয়াতী, গোমরাহ উলামায়ে সূ’দেরই সমালোচনা করা হয়। কোনো হক্কানী উলামায়ে কিরামের নয়। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

পবিত্র হজ্জ সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

দেওবন্দী কাযযাব গং লিখেছে, “…অনুসারী বলেন যে, বর্তমান যারা হজ্জ করছেন তাদের কারো হজ্জ কবুল হয়না , এখন হজ্জ করা হারাম, কেননা হজ্জ করতে হলে ছবি উঠাতে হয়, যা হারাম। এজন্য আমরা হজ্জ করিনা, আমাদের পীর সাহেবও হজ্জ করেননা। ……..হাজী রুমাল ব্যবহার করা হারাম এবং একবার হজ্জ করলে এক কোটি ষাট লক্ষ কবীরা গোনাহ হয়……..খেতাবগুলোর মধ্যে আলহাজ্জ খেতাবটি স্থান পায়নি এতেও প্রমাণিত হয় যে, তিনি পবিত্র হজ্জকে অস্বীকার করেন”। নাঊযুবিল্লাহ!

জবাব: এর জবাবে প্রথমত বলতে হয় যে, কোন্ অনুসারী, কখন, কোন্দিন কোথায় বলেছে, কাকে বলেছে এর কোনো প্রমাণ আছে কি? বিনা প্রমাণে কারো কথা বিশ্বাস করা যাবে না। আমরা যদি বলি দেওবন্দিরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মানে না, মহাসম্মানিত রসূল উনাকে মানে না। আপনারা তা বিশ্বাস করবেন কি? যদি এটা বিশ্বাস না করেন তবে কোথাকার কার বরাত দিয়ে বলে দিল রাজারবাগ শরীফ হজ্জকে অস্বীকার করে আর আপনারা তা বিশ্বাস করবেন? যাচাই বাছাই বা তাহক্বীক করবেন না?  কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَفٰى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُّـحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَـمِعَهٗ.

অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (তার সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে) তাই বলে বেড়ায়। (মুসলিম শরীফ)

মূলত: হজ্জের ব্যাপারে রাজারবাগ শরীফের বক্তব্য ও আক্বীদা হচ্ছে

পবিত্র হজ্জ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার একটি ভিত্তি। পবিত্র হজ্জ আদায়ে সামর্থবান ব্যক্তির জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। পবিত্র হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য সম্মানিত শরীয়ত কিছু শর্তারোপ করেছে, অর্থাৎ শুধু সম্পদ থাকলেই হজ্জ ফরয হয় না। বরং পুরুষ-মহিলাদের সম্পদ থাকার পরও আলাদা কিছু শর্ত-শরায়েত রয়েছে। যেমন- মহিলাদের সম্পদ থাকার পরও যদি তার স্বামী অথবা সচ্চরিত্রবান মাহরাম সঙ্গে না থাকে তবে তার উপর পবিত্র হজ্জ ফরয হবে না। অনুরূপভাবে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই সম্পদ থাকার সাথে সাথে পথের নিরাপত্তা বা জান-মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। যদি জান-মালের ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে  তবে পাথেয় থাকার পরও পবিত্র হজ্জ ফরয হবে না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- সম্পদ থাকার পরও পথের নিরাপত্তা না থাকার কারণে যদি পবিত্র হজ্জ ফরয না হয় তবে ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা যদি না থাকে তবে পবিত্র হজ্জ ফরয হবে কি করে? বর্তমানে পবিত্র হজ্জ করতে গেলে বহু সংখ্যক ছবি লাগে এবং পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ-এ স্থাপিত সিসি টিভির মাধ্যমে হাজার হাজার ছবি উঠে থাকে। আর বেপর্দা তো রয়েছেই। ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া হারাম; কবীরা গুনাহ। পবিত্র হজ্জ হলো একটি ফরয ইবাদত। আর ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়াতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি কবীরা গুনাহ হয়ে থাকে। কাযযাব গং কি পারবে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে যে, একটি ফরযের জন্য কোটি কোটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ করা জায়িয?

কাজেই ‘ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা যাবে না’ একথা বলার অর্থ হজ্জের বিরোধীতা করা বা হজ্জকে অস্বীকার করা নয়। বরং অর্থ হলো ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করলে হজ্জে মাবরুর হবে না। যদি তাই হয় তবে ‘হালাল পয়সা ছাড়া হ্জ্জ হবে না, মাহরাম ছাড়া হজ্জে গেলে কবীরা গুনাহ হবে’ একথা বলাও হজ্জের বিরোধীতা ও হজ্জকে অস্বীকার করা বুঝাবে। দেওবন্দী কাযযাবরা এটা মানবে কি?

পক্ষান্তরে দেওবন্দী কাযযাব গংদের গুরু তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আযীযুল হক্ব তার লিখিত ‘আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ নামক বইয়ের ৫৬ পৃষ্ঠায় কি লিখেছে দেখুন- “বর্তমানে হজ্জ করতে মহিলাদের যেহেতু পর্দার ক্ষতি হয়, তাই মহিলাদের উপর হজ্জ ফরয হলে, বদলী হজ্জ করানো চাই। কারণ এই হজ্জের ন্যায় বরকতময় ছফরে অনেক মহিলা দেখা যায় মাহরাম পুরুষ ব্যতীত রওয়ানা হয়ে যায়, যা কবীরা গুনাহ ও নাজায়িয। অনেক সময় দেখা যায় মাহরাম সাথে থাকা সত্ত্বেও মহিলারা হজ্জের ছফরে পর্দাহীন চলে ও অনেক অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাই বদলী হজ্জ করানোই মহিলাদের জন্য উত্তম। এ সম্পর্কে আল্লামা কারমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

لَا يَلِيْقُ بِالْـحِكْمَةِ اِيـْجَابُ فَرْضٍ عَلٰى وَجْهٍ يَفُوْتُهٗ فَرْضٌ اٰخَرُ.

অর্থাৎ এমন হিকমত বা কৌশল অবলম্বন করা উচিৎ হবে না, যা দ্বারা একটি ফরয আদায় করতে গিয়ে অন্য একটি ফরয ছুটে যায়” (রাহনুমায়ে হুজ্জাজ)

তাদের গুরুর মতে একজন মহিলার যদি সম্পদ থাকার পরও বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কায় হজ্জে যাওয়া না যায় তবে পুরুষের সম্পদ থাকার পরও হারাম কাজ তথা ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কা থাকার পরও তার উপর হজ্জ ফরয হবে কি করে বা সে হজ্জে যাবে কিভাবে? মহিলারা হারাম থেকে বাঁচার জন্য হজ্জ থেকে বিরত থাকবে আর পুরুষরা হারাম কাজ করে হজ্জ করবে। শরীয়তের কোথাও এটা আছে কি?

সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ‘হজ্জ হারাম’- এ ফতওয়া দেননি এবং হজ্জকে অস্বীকারও করেননি। তিনি হজ্জ সম্পর্কে যা বলেছেন পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকেই বলেছেন, নিজের ব্যক্তিগত কোনো মত তিনি পেশ করেননি। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

দৈনিক ইনকিলাবের বরাতে তারা উল্লেখ করেছে যে, রাজারবাগের পীর ছাহিব ক্বিবলা তিনি হাজী রুমাল হারাম বলেছেন। এটিও স্পষ্ট ও চরম মিথ্যাচারিতা। মূলত: রাজারবাগের পীর ছাহিব ক্বিবলা এরূপ কোনো বক্তব্য প্রদান করেননি। সত্যবাদী হলে দলীল পেশ করুক।

“আবার একবার হজ্জ করলে …..গোণাহ হয়” কাযযাব গংদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা ও বানোয়াট। কারণ একজন সাধারণ মুসলমানও কখনো এ কথা বলবে না যে, হজ্জ করলে এক কোটি ষাট লক্ষ কবিরা গুনাহ হয়। নাঊযুবিল্লাহ! সেখানে যিনি বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ, যিনি বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ আলিম, যিনি ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করা তো দূরের কথা একটি সুন্নতে যায়িদাহ বা মুস্তাহাবও তরক করেন না তিনি পবিত্র হজ্জের ব্যাপারে এরূপ  বক্তব্য পেশ করবেন এটা কি করে বিশ্বাস করা যায়? মূলত: পৃথিবীর কারো পক্ষেই প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে, তিনি এরূপ বক্তব্য প্রদান করেছেন। যদি তারা সত্যবাদি হয়ে থাকে তবে তারা উনার রেকর্ডকৃত কোনো বক্তব্য প্রমাণ হিসেবে পেশ করুক অথবা আল বাইয়্যিনাত শরীফ, আল ইহসান শরীফ বা উনার কোনো প্রকাশনী থেকে লিখিত কোনো বক্তব্য প্রমাণ হিসেবে পেশ করুক। তারা দৈনিক ইনকিলাবের বরাত দিয়েছে । কোনো পত্রিকার বক্তব্য তখনই বিশ্বাসযোগ্য হবে যদি তাদের কাছে লিখিত বা রেকর্ডকৃত  কোনো প্রমাণ থাকে। দৈনিক ইনকিলাবে রাজারবাগ শরীফকে জড়িয়ে হজ্জ সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রকাশ করেছে তা মূলত: নাটোরের দেওবন্দী কাযযাবদেরই কারসাজি। তারাই স্থানীয় অসৎ সাংবাদিককে হাত করে এ মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে। পরের দিন আমাদের পক্ষ থেকে  তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। যা পরের দিনের দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশ পায়। কিন্তু আমাদের উক্ত প্রতিবাদ ও বক্তব্যকে তারা দলীল দিয়ে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি। এতে প্রতিভাত হয় যে, তাদের বক্তব্যটি ছিলো আসলে মিথ্যা। আর তাদের বক্তব্যটি যে মিথ্যা তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো- তারা যে স্থানের মাহফিলের কথা উল্লেখ করেছে সে স্থানে সেদিন বা সে তারিখে  কোনো মাহফিলই হয় নাই। সেখানে তিনি হজ্জের ব্যাপারে, রুমালের ব্যাপারে এরূপ বক্তব্য দিলেন কীভাবে? এরপরও কি তারা নিজেদেরকে মিথ্যাবাদী বলে অস্বীকার করবে?

কাযযাব গং আরো উল্লেখ করেছে,…..“ঐ খেতাবগুলোর মধ্যে আলহাজ্জ খেতাব স্থান পায়নি।…..তিনি পবিত্র হজ্জকে অস্বীকার করেন”। নাঊযুবিল্লাহ!

কোন ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয না হলে এবং হজ্জ আদায় না করে থাকলে কি কখনো আলহাজ্জ লেখা যায়? আর আলহাজ্জ না লিখলেই কি হজ্জকে অস্বীকার করা হয়। তাদের মধ্যেও তো অনেক মালানা মৌলবী রয়েছে যারা আলহাজ্জ লিখে না, তাহলে তো তারাও হজ্জকে অস্বীকার করে। আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হলে এমন বক্তব্য প্রদান করা সম্ভব। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

ছহিবে কুন ফাইয়াকুন লক্বব সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

মিথ্যাচারপূর্ণ লিফলেটে বলা হয়েছে, “…মুরীদেরা…পীর সাহেবকে ‘ছাহেবে কুন ফাইয়াকূন’ তথা আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে”। নাঊযুবিল্লাহ!

জবাব: দেওবন্দী কাযযাব গং এখানেও মিথ্যাচারিতার আশ্রয় নিয়েছে। তারা কি একটি প্রমাণও দেখাতে পারবে যে, রাজারবাগ শরীফের মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে উনার কোনো একজন মুরীদ মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ মনে করে ‘ছহিবে কুন ফাইয়াকুন’ বলেছে? কস্মিনকালেও পারবে না। কারণ রাজারবাগ শরীফ উনার মুরীদেরা ভালো করেই জানেন ও বিশ্বাস করেন যে, কাউকে মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ মনে করা সুস্পষ্ট শিরক। মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো ছিফত মুবারকের অধিকারী হওয়া  কখনোই উনার সমকক্ষ দাবী করা নয়। ‘কুন ফাইয়াকূন’ মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফত মুবারক উনাদের মধ্যে একখানা বিশেষ ছিফত মুবারক যা বিশেষ শ্রেণীর ওলীআল্লাহগণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে। কাযযাব গং এর ফতোয়া মতে, যদি মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফত মুবারক ব্যবহার করাতে মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ দাবী করা বুঝায় তাহলে তো তাদের মতে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ দাবী করেছেন। কেননা উনার একখানা লক্বব বা উপাধী হলো ‘গণী’, যা মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফত মুবারক। অনুরূপভাবে দেওবন্দী কাযযাবরাও তাদের মুরব্বি থানবীকে মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ মনে করে থাকে। কেননা তারা তাকে হাকীমুল উম্মত বলে থাকে। আর হাকীম হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার একখানা ছিফত মুবারক। শুধু কি তাই, দেওবন্দী কাযযাবদের মধ্যে যারা ‘মাওলানা’ দাবী করে থাকে তারাও নিজেদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ মনে করে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে নিজেকে ‘মাওলানা’ বলে উল্লেখ করেছেন। দেওবন্দী কাযযাব বা মিথ্যাবাদীর দল এক্ষেত্রে কী জবাব দিবে?

মূলত: ওলীআল্লাহগণ মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুনান্বিত হয়ে থাকেন। সেজন্য মহান আল্লাহ পাক উনার অনেক ছিফত মুবারক ওলীআল্লাহগণ উনাদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে তা মহান আল্লাহ পাক হিসেবে নয়, বান্দা হিসেবে। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

চাঁদ ও সূর্য অস্ত যাওয়া সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

দেওবন্দী কাযযাব বা মিথ্যাবাদীর দল লিখেছে, “…..চাঁদণ্ডসূর্য অস্ত যাওয়া ও উদিত হওয়ার মত প্রাকৃতিক পরিচালনার ক্ষমতা তার আছে….।”

জবাব: এর জবাবে বলতে হয় যে, দেওবন্দী কাযযাবদের উক্ত বক্তব্য শুধু মিথ্যাই নয়; বরং ডাহা ও নিখাদ মিথ্যা। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, যদি তারা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৭১তম সংখ্যায় অর্থাৎ জুলাই -১৯৯৯ সংখ্যার  ১৩৯ পৃষ্ঠায় অনুরূপ কোনো বক্তব্য দেখাতে পারে তবে তাদেরকে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। আপনারা তাদেরকে প্রমাণ করতে বলুন। ‘চিলে কান নিয়ে গেছে’ এ কথা শুনে কানে হাত না দিয়ে চিলের পিছনে দৌড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-  “মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বিশ্বাস করে ও প্রচার করে বেড়ায়, তাহক্বীক বা যাচাই-বাছাই করে না”। মূলত: মাসিক আল বাইয়্যিনাতের উক্ত সংখ্যায় ‘চাঁদণ্ডসূর্য্য অস্ত যাওয়া ও উদিত’ হওয়া সম্পর্কে যা লিখা হয়েছে তা গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে লিখা হয়েছে। আর সেটাই তারা রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্য হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের প্রকাশিত কাযযাব গং তথা উলামায়ে সূ’দের মিথ্যাচারিতার দাঁতভাঙ্গা জবাব ১ম খন্ড কিতাবখানা পাঠ করুন।)

সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

আওলাদে রসূল সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

দেওবন্দী কাযযাব বা মিথ্যাবাদির দল লিখেছে, “নবীজি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাকি তাকে আওলাদে রাসূল বলেছেন, এ কথা বলে তিনি মিথ্যাভাবে নিজেকে আওলাদে রাসূল পরিচয় দেন”।

জবাব: এর জবাবে বলতে হয় যে, দেওবন্দী কাযযাবদের একথাও ডাহা মিথ্যা। তিনি কখন কোথায় একথা বলেছেন অথবা আল বাইয়্যিনাত শরীফ ও দৈনিক আল ইহসানের কোথায় এ কথা লিখা আছে তারা তা প্রমাণ করুক। মিথ্যাবাদিরাই বিনা দলীলে কথা বলে। তবে হ্যাঁ, কারো যদি বংশ পরিচয় জানা না থাকে সেক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে রুহানী নিসবত থাকার কারণে তিনি অনেক সময় তাকে তার বংশ পরিচয় বলে দিয়ে থাকেন। এটা অসম্ভব কিছু নয় এবং শরীয়তের খিলাফও নয়। বরং শরীয়ত সম্মতই।

রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি যে, ‘সাইয়্যিদ’ বংশের অর্থাৎ আওলাদে রসূল; এটা তিনি আগে থেকেই জানতেন। তাছাড়া নূরাণীগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার প্রভাকরদী মিয়া বাড়ীতে উনার বংশীয় পরিচয় ও ঐতিহ্য অদ্যাবধি বিদ্যমান। যেখানে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর বংশ পরিচয় নিয়ে একজন সাধারণ লোকও মিথ্যা বলে না। সেখানে একজন ওলীআল্লাহ কী করে বংশ পরিচয় নিয়ে মিথ্যা কথা বলবেন? যেখানে পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে-“যে ব্যক্তি মিথ্যা বংশ পরিচয় দিবে সে জাহান্নামী।

কাজেই কেউ যদি বংশ পরিচয় নিয়ে মিথ্যা বলে তবে সে জাহান্নামে যাবে, তাতে দেওবন্দী কাযযাবদের সমস্যাটা কোথায়? তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, কেউ যদি সত্যিই আওলাদে রসূল হন আর কেউ যদি উনাকে অস্বীকার ও অসম্মান করে তবে সেও জাহান্নামে যাবে। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

বাহাছ সম্পর্কিত মিথ্যাচারিতা

দেওবন্দী কাযযাবরা লিখেছে, “রাজারবাগ শরীফের অনুসারীরা বিভিন্ন মাহফিলে বাহাছে একশত কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে তারা টাল বাহানা ও নানা অজুহাতে বাহাছ বাতিল করার অপচেষ্টা চালায়।”

জবাব: এর জবাবে বলতে হয় যে, বাহাছ নিয়ে টাল বাহানা করা ও নানা অজুহাতে বাহাছ না করে পালিয়ে যাওয়া দেওবন্দী কাযযাবদেরই মজ্জাগত বদ অভ্যাস।  তারা রাজারবাগ শরীফের কাছে বহু স্থানে বাহাছে পরাস্ত হয়েছে, বহু স্থান থেকে ছুতা নাতা দিয়ে বাহাছ না করে পালিয়ে গেছে।

লালমনিরহাট কেতকী বাড়িতে যে বাহাছ হওয়ার কথা ছিলো তা প্রশাসন তাদেরই অপপ্রচারের কারণে নিরাপত্তার অভাব বোধ করে বন্ধ করে দেয়। রাজারবাগ শরীফ উক্ত বাহাছ থেকে কখনো পিছপা হননি এবং বাহাছ না করার জন্য কখনো কোন টাল বাহানাও করেননি। রাজারবাগ শরীফ যে কোনো সময়; যে কোনো স্থানে ও যে কারো সাথে বাহাছে বসতে প্রস্তুত আছেন। ইনশাআল্লাহ! তবে অবশ্যই শর্ত সাপেক্ষে হতে হবে। তন্মধ্যে একটি বিশেষ শর্ত হচ্ছে- রাজারবাগ শরীফের সাথে যারাই বাহাছে আসবে সার্বিক বিষয় নিয়েই বাহাছ করতে হবে। দুই একটি বিষয়ে কোনো বাহাছ হবে না। তাদের যত কুফরী আক্বীদা ও শরীয়ত বিরোধী আমল আছে সেসব বিষয়ে; আর তাদের দৃষ্টিতে আমাদের যত আপত্তিকর বিষয় রয়েছে তার সব বিষয়েই বাহাছ হবে। অর্থাৎ এক বাহাছেই উভয় পক্ষের সব বিষয়ের ফায়ছালা হয়ে যাবে। পরবর্তিতে অন্য ইস্যূ দেখিয়ে যেনো কেউ কাউকে না হক্ব বলতে না পারে। কাজেই প্রশাসনের অনুমতি ও নিরাপত্তা এবং আমাদের দেয়া শর্ত সাপেক্ষে আমরা যে কোনো সময় বাহাছে বসতে রাজী। এরপরও বাহাছ নিয়ে মিথ্যাচার করার অধিকার তাদের নেই। সুতরাং এক্ষেত্রেও কাযযাব গং জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলো।

কেন এই মিথ্যাচারিতা ?

পরিশিষ্টে বলতে হয় যে, আপনারা হয়তো বাতিলপন্থি, দেওবন্দী ওহাবীদের মনগড়া, দলীলবিহীন, জিহালতপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীল ভিত্তিক জবাব পেয়ে প্রশ্ন করতে পারেন যে, তাহলে কেন তারা একজন হক্কানী রব্বানী ওলী উনার বিরুদ্ধে মিথ্যা লিফলেট ছড়ায়?

জবাব: এর জবাবে বলতে হয় যে, মিথ্যা লিফলেট ছড়ানোর পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। যা এই অল্প পরিসরে বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। তবে দু’একটি কারণ বর্ণনা করলেই বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। যারা মিথ্যা লিফলেট ছড়িয়েছে তারা হলো তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক, মুফতি আমিনী, মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন ও জামাতের আমীর রাজাকার নিজামী গংদের অনুসারী তারা বেপর্দা হয়, অর্থাৎ বেগানা মহিলার সাথে প্রকাশ্যে দেখা সাক্ষাত ও মিটিং করে এমনকি পবিত্র রমাদ্বান মাসে বেপর্দা মহিলার সাথে পাশপাশি বসে ইফতারি করে। নাউযুবিল্লাহ! পেপার-পত্রিকায় হারাম ছবি তোলে, অনুষ্ঠান ভিডিও করে ও টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে, হারাম গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন, হরতাল, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ করা সহ এ ধরণের আরো বহু হারাম কাজে তারা লিপ্ত। তারা মনে করে আমাদের কারণে হয়তো তাদের এ সকল হারাম কর্মকা-গুলো জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে যাবে।  তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করছে, রাজারবাগ শরীফ হতে তাদের এ সমস্ত অপকর্ম জনসম্মুখে প্রকাশ করা হচ্ছে, ফলে ইসলাম নিয়ে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তারা জনগণকে উত্তেজিত ও বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে মিথ্যা লিফলেট ছড়ায় বা মিথ্যা প্রচারণা চালায়। আর তারা মিথ্যাবাদী বলেই লিফলেটে সুনির্দিষ্ট কারো নাম ঠিকানা উল্লেখ করে নাই বা করার সাহস পায় নাই। হাক্বীক্বত এলাকার সাধারণ মুসলমান কেউ এর সাথে জড়িত নয় বরং স্থানীয় কয়েকটি মসজিদ ও মাদরাসার দেওবন্দী ওহাবী বাতিলপন্থী ইমাম ও ওস্তাদ, ছাত্রই এর মূল হোতা। এবার আপনারা উপলব্ধি করুন তারা কোন স্তরের জাহিল, মিথ্যাবাদী, গোমরাহ, ধোঁকাবাজ, প্রতারক ও ভণ্ড!

কাজেই, রাজারবাগ শরীফ সিলসিলা হক্বের উপরই রয়েছেন। সংগত কারণেই এ সিলসিলার লোকদের আক্বীদা ও আমল বিদয়াত ও শরীয়ত বিরোধী নয়। উনাদের আক্বীদা যেরূপ সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত অনুরূপ উনাদের প্রতিটা আমলও শরীয়তসম্মত বা সুন্নত তরীকা মুতাবেক করার চেষ্টা করেন। দেওবন্দী কাযযাবরা হিংসার বশবর্তী হয়ে উনাদেরকে মসজিদ, মাদরাসা ও ঈদগাহ থেকে সরানোর হীন উদ্দেশ্যেই উনাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। তাই দেশবাসী সাধারণ মুসলমানদের বিষয়টি ভালোভাবে ফিকির করা দরকার।

দেওবন্দী কাযযাবদের কতিপয় কুফরী আক্বীদা এবং হারাম-নাজায়িয, বিদয়াত ও শরীয়ত বিরোধী আমল

** নবীর (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) যদি কিছু ইলমে গায়েব থেকেও থাকে তাহলে এতে তাঁর বিশেষত্ব কী? এমন ইলমে গায়েব তো সকল চতুষ্পদ জন্তু, পাগল ও শিশুরও আছে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! (হিফজুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৭)

** বাতিল ফিরক্বা ওহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে আব্দুল ওয়াহাব নজদী ভালো মানুষ ছিলো। তার আক্বীদা ভালো ছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া: ২৬১ পৃষ্ঠা। জাকারিয়া বুক ডিপো; সাহারানপুর, দেওবন্দ)

** নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মতই সাধারণ মানুষ। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

** নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মান বড় ভাইয়ের মতো। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

এছাড়াও আরো বহু কুফরী আক্বীদা তাদের মধ্যে রয়েছে। অথচ উল্লেখিত কুফরী আক্বীদাসমূহের একটিও যদি কেউ পোষণ করে তবে সে কস্মিনকালেও মুসলমান থাকতে পারে না।

আর আমলের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসংখ্য হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াত আমল। যেমন ১. বেপর্দা মহিলা নিয়ে শোকরানা মাহফিল করা। বেগানা মহিলার সাথে করমর্দন বা হ্যান্ড স্যাক করা, ২. ছবি তোলা, ভিডিও করা। ৩. বেপর্দা হওয়া, ৪. হরতাল করা, ৫. লংমার্চ করা, ৬. কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ৭. হাঙ্গার স্ট্রাইক করা, ৮. গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করা, ৯. পদপ্রার্থী হওয়া, ১০. নারী নেতৃত্ব মানা, ১১. নববর্ষ উদযাপন করা, ১২. খতমে বুখারী মাহফিল করা, ১৩. ছয় উছূলী তাবলীগ করা, ১৪. লাল রুমাল পরিধান করা, ১৫. কোণা ফাড়া কোর্তা পরিধান করা, ১৬. পাঁচ কল্লি, কিস্তি ও জালী টুপি পরিধান করা, ১৭. কোর্ট পরিধান করা। এছাড়া আরো বহু হারাম নাজায়িয ও বিদয়াত আমল তাদের মধ্যে রয়েছে। এরপরও কি তারা বলবে যে, তারা গোমরাহ ও বাতিল না? নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, রাজারবাগ শরীফ উনার অনুসারীদের প্রকাশিত আক্বীদা ও আমলসমূহ যে বিদআত ও শরীয়ত বিরোধী তার প্রমাণ পেশ করতে হবে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র  ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল দিয়ে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন-

هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ

অর্থ: তোমরা সত্যবাদী হলে দলীল পেশ করো। (পবিত্র সূরা নমল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)

অর্থাৎ, কারো বক্তব্য, লিখনী, ঈমান, আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব সঠিক কিনা তা প্রমাণের জন্য দলীল পেশ করতে হবে। দলীল প্রমাণ ব্যতীত কারো মনগড়া কোন কথা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

অতএব, রাজারবাগ শরীফ উনার অনুসারী উনাদের প্রকাশিত কোন আক্বীদা ও আমলের ব্যাপারে তারা যখন কোনরূপ দলীল পেশ করতে পারেনি তখন এটাই প্রমাণিত ও ছাবিত হলো যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তারা নিজেরাই চরম মিথ্যাবাদী, বিদআতী ও গোমরাহ ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

কাজেই এই বাতিল ও গুমরাহ ফিরকার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের কোনো কথাই কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না।

শোক সংবাদ: সাইয়্যিদাতুন নিসা, সুলতানাতুল আরিফীন, কুতুবুল ইরশাদ, কুতুবুল আক্বতাব, আওলাদে রসূল মুহতারামা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন

আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী আলাইহিস সালাম তিনি নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী উনার প্রতি অপবাদকারী যালিম গং নিঃসন্দেহে গুমরাহ, বাতিল, লা’নতপ্রাপ্ত, জাহান্নামী ও সুন্নী নামের কলঙ্ক রেজাখানীরা আয়নায় নিজেদের কুৎসিত চেহারা দেখে নিক ॥ ইসলামী শরীয়ার আলোকে একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা-১২

আহলান-সাহলান! সুমহান পহেলা শাওওয়াল!! মুবারক হো ঈদে বিলাদতে তাহিরাহ, তাইয়িবাহ, মাহবুবাহ, ফাক্বীহা, মাশুক্বাহ, তাওশিয়াহ, তাকরীমাহ, তাক্বিয়্যাহ, তাযকীয়্যাহ, নূরে হাবীবা, লখতে জিগারে মুজাদ্দিদে আ’যম, কুতুবুল আলম, উম্মু আবিহা, ক্বায়িম-মাক্বামে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতুন নিসা, আওলাদে রসূল, হযরত শাহযাদী উলা ক্বিবলা আলাইহাস সালাম

বিশেষ প্রবন্ধ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারকই মুহব্বত-মা’রিফাত, কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারকসহ সমস্ত কিছুর মূল, কাজেই যে যতটুকু উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করতে পারবে, সে ততটুকু কামিয়াবী হাছিল করবে

বিশেষ কলাম: পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান মশহূর পবিত্র শবে বরাত এবং উনার আমলসমূহ বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হওয়া প্রসঙ্গে-পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফ একদম ছহীহ- এ বিষয়ে সকল আসমাউর রিজাল বিশারদগণ একমত