বিশেষ কলাম- ১৪৪০ হিজরী সনের পবিত্র শবে বরাতের ফযীলত থেকে কোটি কোটি মুসলমানকে বঞ্চিতকারী কুখ্যাত উলামায়ে ‘সূ’ আব্দুল মালেক ও তার অনুচর কর্তৃক মনগড়া ও সাজানো সাক্ষাতকারের তীব্র প্রতিবাদ ও সঠিক জাওয়াব

সংখ্যা: ২৭৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

১৪৪০ হিজরী শা’বান মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে চরম মিথ্যাবাদী, মুনাফিক, উলামায়ে ‘সূ’, মালানা আব্দুল মালেক ও তার সহচর মালানা সায়ীদুল হক প্রশ্ন ও উত্তর আকারে অনলাইনে যে সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে তা মিথ্যা, মনগড়া, জালিয়াতী, বিভ্রান্তিকর সর্বোপরি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী।

বিদয়াতী সায়ীদুল হক ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “… ঢাকার শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরামের সাথে …”।

এর জবাবে বলতে হয় যে, কথিত সাব কমিটির মৌলভীরা শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে ‘সূ’ হতে পারে, উলামায়ে কিরাম নয়। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে হক্কানী-রব্বানী আলিম উলামা উনাদের যে মাপকাঠি দেয়া হয়েছে সে মাপকাঠিতে তারা পড়েনা। হক্কানী-রব্বানী আলিম-উলামা উনাদের সঠিক পরিচয় তুলে ধরা হলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।

عَاَلِمٌ  (আলিমুন) শব্দটি বাবে  سَمِعَ يَسْمَعُ  থেকে উদ্ভূত। উক্ত শব্দটি اِسْمٌ فَاعِلٌ বা কর্তৃবাচক। এর লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো- একজন জ্ঞানী পুরুষ।

আর ইস্তিলাহী বা পারিভাষিক অর্থে- আলিম তাকেই বলে, যিনি দ্বীনি ইল্ম তথা ইলমে মা’রিফাত ও ইলমে তাছাওউফের অধিকারী। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি আলিম হতে হলে প্রথমতঃ তাকে ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাওউফ উভয়টাই অর্জন করতে হবে।

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلْعُلَمَاءُ وَرَثَةُ الْاَنْبِيَاءِ وَاِنَّ الْاَنْبِيَاءَ لَـمْ يُوَرِّثُوْا دِيْنَارًا وَّلَادِرْهَـمًا وَاِنَّـمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ.

অর্থঃ “নিশ্চয়ই আলিমগণ উনারা হযরত নবী আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ওয়ারিছ। আর নিশ্চয়ই নবী আলাইহিমুস্ সালাম উনারা কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি। বরং ইল্ম রেখে গেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফ, আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মা’য়ারিফুস্ সুনান, উরফুশ শাযী, বযলুল মাজহুদ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)

উল্লেখ্য যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে দু’প্রকার ইল্ম রেখে গেছেন। অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাওউফ।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَلْعِلْمُ عِلْمَانِ فَعِلْمٌ فِىْ الْقَلْبِ فَذٰلِكَ الْعِلْمُ النَّافِعُ وَعِلْمٌ عَلَى اللِّسَانِ فَذَالِكَ حُجَّةُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَلٰى اِبْنِ اٰدَمَ.

অর্থঃ “ইল্ম দু’প্রকার। (১) ক্বলবী ইল্ম (ইল্মে তাছাওউফ) যা উপকারী ইল্ম, (২) যবানী ইল্্ম (ইল্ম ফিক্বহ) যা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল স্বরূপ।” সুবহানাল্লাহ! (দারিমী শরীফ, বাইহাক্বী শরীফ, দাইলামী শরীফ, তারগীব ওয়াত তারহীব শরীফ, তারীখ, আব্দুল বার শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্বীবী ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি সাল্লাম তিনি ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে ইল্মে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাওউফ উভয়টিই রেখে গেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি উভয়টিই শিক্ষা করলো, সে ব্যক্তিই নায়িবে রসূল বা হাক্বীক্বী আলিম। সুবহানাল্লাহ!

উপরোল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ইমামে রব্বানী, মাহ্বুবে সুবহানী, ক্বাইয়ূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব “মাকতুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন-

اَلْعُلَمَاءُ وَرَثَةُ الْاَنْبِيَاءِ : علم یکہ از انبیاء علیہم الصلوات والتسلیمات باقی ماندہ است دونوع است علم احکام وعلم اسرار وورث کسی ہست کہ اورا ہردونوع علم سہم بود نہ آ  نکہ اورا ازیک نوع نصیب بود نہ از نوع دیگر کہ آن منافی وراثت است چہ وراثت را  از جمیع انواع ہر مورث نصیب است نہ از بعض وآنکہ اورا از معین نصیب است داخل غرما است کہ نصیب او بجنس حق او تعلق گرفتہ است.

অর্থঃ “আলিম উনারা নবী আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ওয়ারিছ।” এ পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আলিম তাঁরাই, যাঁরা হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের রেখে যাওয়া ইল্মে আহ্কাম (ইল্ম ফিক্বাহ) ও ইল্ম আসরার (ইল্ম তাছাওউফ) উভয় প্রকার ইল্মের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইল্মের অধিকারী, সে ব্যক্তি হযরত নবী আলাইহিমুস্ সলাম উনাদের প্রকৃত ওয়ারিছ নন। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে অংশীদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয় গরীমের অন্তর্ভুক্ত।”

হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি  উনার মিশকাত শরীফের বিখ্যাত শরাহ্ “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন, মালিকী মায্হাবের ইমাম হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

مَنْ تَفَقَّهَ وَلَـمْ يَتَصَوَّفْ فَقَدْ تَفَسَّقَ وَمَنْ تَصَوَّفَ وَلَـمْ يَتَفَقَّهْ فَقَدْ تَزَنْدَقَ وَمَنْ جَمَعَ بَيْنَهُمَا فَقَدْ تَـحَقَّقَ.

অর্থাৎ “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাছাওউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইল্মে তাছাওউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো না বা শরীয়ত স্বীকার করে না, সে যিন্দিক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, সে মুহাক্কিক তথা হক্কানী আলিম।” সুবহানাল্লাহ!

দ্বিতীয়ত: আলিম ঐ ব্যক্তিই যাঁর অন্তরে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّـمَا يَـخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ

অর্থাৎ-“নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন।” (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হাম্বলী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন, শায়খুল মুহাদ্দিছীন হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে। তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশি খোদাভীতি রয়েছে তিনি তত বড় আলিম।”

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে খোলাছায়” উল্লেখ আছে যে-

“العلماء” سےاصطلاحی عالم یعنی کتابیں پرہ لینے والے مراد نہیں. بلکہ کبریائے ذات وعظمت صفات کو نور ایمان شمع عرفان سے دیکھنے والے اسلئے کہ اصحاب رسول صلی اللہ علیہ وسلم وارباب ولایت وقبول سبکے سب علماء کتابی نہ تھی گو انکا علم نافع اعلی درجہ کاتھا

অর্থ: “উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ-এ اَلْعُلَمَاءُ শব্দ দ্বারা কিতাবসমূহ পাঠকারী তথা (দাওরা বা টাইটেল পাশকারীদেরকে) বুঝানো হয়নি। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত “আলিম” তাঁরাই, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার মহিমাময় যাত ও অসীম গৌরবময় ছিফাতসমূহকে ঈমান ও মা’রিফতের নূরের আলোকে অবলোকন করেন। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয়তম ছাহাবী আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও (পরবর্তী) বিলায়েতপ্রাপ্ত ও মকবুল ওলীআল্লাহ উনারা কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাশ আলিম ছিলেন না। তথাপিও উনারা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইল্মের অধিকারী ছিলেন।” অর্থাৎ তারাই পবিত্র কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত প্রকৃত আলিম ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাস্সিরীন হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখ করেন-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّه  قَالَ لَيْسَ الْعِلْمُ عَنْ كَثْرَةِ الْـحَدِيْثِ وَلَكِنَّ الْعِلْمَ عَنْ كَثْرَةِ الْـخَشْيَةِ وَقَالَ اَحْـمَدُ بْنُ صَالِحِ الْـمِصْرِىُّ عَنْ اِبْنِ وَهَّابٍ عَنْ مَالِكٍ اِنَّ الْعِلْمَ لَيْسَ لِكَثْرَةِ الرِّوَايَةِ وَاِنَّـمَا الْعِلْمُ نُوْرٌ يَّـجْعَلُهُ اللهُ تَعَالٰى فِى الْقَلْبِ.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ শরীফ জানে, সে ব্যক্তি আলিম নয় বরং যার মধ্যে আল্লাহভীতি অধিক, সে ব্যক্তিই আলিম। আর আহ্মদ বিন ছালেহ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায়না। মূলতঃ ইল্ম হচ্ছে নূর বা জ্যোতি স্বরূপ। মহান আল্লাহ পাক তা মানুষের অন্তকরণে দান করেন।” সুবহানাল্লাহ!

উক্ত “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ আছে যে-

قَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِىُّ….. اَلْعُلَمَاءُ ثَلَاثَةٌ: عَالِـمٌ بِاللهِ عَالِـمٌ بِأَمْرِ اللهِ، وَعَالِـمٌ بِاللهِ لَيْسَ بِعَالِـمٍ بِأَمْرِ اللهِ، وَعَالِـمٍ بِأَمْرِ اللهِ لَيْسَ بِعَالِـمٍ بِاللهِ. فَالْعَالِـمُ بِاللهِ وَبِأَمْرِ اللهِ: الَّذِيْ يَـخْشَى اللهِ وَيَعْلَمُ الْحُدُوْدَ وَالْفَرَائِضَ.

অর্থ: “হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমত্ল্লুাহি আলাইহি তিনি বলেন, আলিম উনারা তিনভাগে বিভক্ত। (১) যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে জানেন এবং মহান আল্লাহ উনার হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে জানেন। (২) যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে জানেন কিন্তু উনার হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ (৩) যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে জানেন কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে অজ্ঞ। সুতরাং যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে জানেন এবং উনার হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানেন তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হদ বা সীমা ও ফারায়িজ সম্পর্কে ইলম রাখেন । (তিনিই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলিম)।

তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইল্ম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

مَنْ اَرْبَابُ الْعِلْمِ؟ اَلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ بِـمَا يَعْلَمُوْنَ قَالَ فَمَا اَخْرَجَ الْعِلْمَ مِنْ قُلُوْبِ الْعُلَمَاءِ؟ قَالَ الطَّمَعُ.

অর্থ: “(আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কা’ব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইল্মের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইল্মকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ্)

বিশিষ্ট তাবিয়ী, আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন-

اِنَّـمَا الْفَقِيْهُ اَلزَّاهِدُ فِـى الدُّنْيَا وَالرَّاغِبُ فِـى الْاٰخِرَةِ وَالْبَصِيْرُ بِذَنْبِهٖ وَالْـمَدَاوِمُ عَلٰى عِبَادَةِ رَبِّهٖ وَالْوَارِعُ وَالْكَافُّ عَنْ اَعْرَاضِ الْـمُسْلِمِيْنَ وَالْعَفِيْفُ عَنْ اَمْوَالِـهِمْ وَالنَّاصِحُ لِـجَمَاعَتِهِمْ.

অর্থ: “ফক্বীহ্ বা আলিম হলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন গুনাহের প্রতি সতর্ক, মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতে মশগুল, পরহিযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং উনার অধীনস্থদের নছীহত করেন।” সুবহানাল্লাহ!

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়েই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইল্মে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হয়ে ইল্মে তাছাওউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। অর্থাৎ নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে তারাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী।

তারা যাদেরকে শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরাম বলে মুখে ফেনা তুলছে তাদের মধ্যে উল্লেখিত গুণাবলী আছে কি? মূলতঃ তাদের কারো মধ্যেই উল্লেখিত গুণাবলীর কোনটাই নেই। যেমন-

প্রথমতঃ তারা অনেক বিষয়েই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খিলাফ আক্বীদা পোষণ করে থাকে। তারা বিশ্বাস ও প্রচার করে থাকে যে- (১) মহান আল্লাহ পাক নূর বা আলো। নাউযুবিল্লাহ! (২) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরি নন বরং মাটির তৈরি। নাউযুবিল্লাহ! (৩) হযরত আদম আলাইহিস সালাম গন্দম খেয়ে ভুল বা লগজেশ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! (৪) হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দাওয়াতের কাজ বন্ধ করে মহান আল্লাহ পাক উনার গযবে পড়েছেন। নাউযুবিল্লাহ! (৫) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজতিহাদ ভুল ছিল। নাউযুবিল্লাহ! (৬) মহান আল্লাহ পাক উনার হবীব তাদের মতই সাধারণ মানুষ। নাউযুবিল্লাহ! (৭) নিয়ত করে মাযার শরীফ যিয়ারত করা শিরক। নাউযুবিল্লাহ! (৮) মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ করা বিদয়াত ও শিরক। নাউযুবিল্লাহ! (৯ ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত। নাউযুবিল্লাহ! (১০) ইসলামে গণতন্ত্র করা, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া জায়িয এবং এ ধরনের আরো বহু পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত বিরোধী আক্বীদায় তারা বিশ্বাসী। নাউযুবিল্লাহ! যাদের আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়, তারা আলিম হওয়া তো দূরের কথা তাদের জন্য মু’মিন-মুসলমান থাকাই তো দুষ্কর।

দ্বিতীয়তঃ তারা কেউ ইছলাহপ্রাপ্ত নয়। যার কারণে তাদের মধ্যে খোদাভীতি বা তাক্বওয়াও নেই। তারা যৎসামান্য ইলমে জাহির বা ইলমে ফিক্বাহের অধিকারী হলেও তারা মূলতঃ ইল্মে তাছাওউফ থেকে সম্পূর্ণরূপেই শূন্য। তাই তারা মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে হারাম নাজায়িয বা শরীয়তবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে পারেনা, বরং অহরহ হারাম, নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে মশগুল থাকে। যেমন- বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা ইত্যাদি। যাদের মধ্যে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি নেই, তারা কি করে শীর্ষস্থানীয় আলিম হতে পারে?

তৃতীয়তঃ তাদের অধিকাংশ আমলগুলোই শরীয়ত ও সুন্নতের খিলাফ। অর্থাৎ সর্বদাই তারা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াত বা সুন্নত পরিপন্থী কাজে মশগুল। যেমন- ছবি ও ভিডিও হারাম, অথচ তারা অহরহ ছবি ও ভিডিও করে, পর্দা করা ফরয, তারা বেপর্দা হয়, নারী নেতৃত্ব মানা হারাম, তারা নারী নেতৃত্ব মেনে চলে। কুশপুত্তলিকা দাহ করা বা মূর্তি বানানো হারাম, তারা তা করে। অনুরূপভাবে তাদের টুপি থেকে শুরু করে সেন্ডেল, পোশাক-পরিচ্ছদ, চলা-ফেরা, উঠা-বসা, কথা-বার্তা চাল-চলন সবই সুন্নতের খিলাফ।

অতএব, যারা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেনা অর্থাৎ শরীয়তবিরোধী বা হারাম ও বিদয়াত কাজে মশগুল এবং পবিত্র সুন্নত উনার পায়রবী করেনা তারা কি করে হক্কানী আলিম হতে পারে? মূলত তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম নয় বরং তারা হচ্ছে উলামায়ে ‘সূ’ বা নিকৃষ্ট মৌলভী। এর ধরণের লোকরাই যে মিথ্যা, দলীলবিহীন ও বানোয়াটি বক্তব্য প্রদান করবে এটাই স্বাভাবিক।

১নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“শরীয়তের মুকাল্লাফ দাবীর

যথার্থতা সম্পর্কে”

সে প্রথমে বলেছে যে, “আসলে আমরা শরীয়তের মুকাল্লাফ। শরীয়ত অনুযায়ী যা বিধান সেটাই আমাদের করতে হবে।”

তার এ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, “চোরের মার বড় গলা।” তারা প্রায়ই বড় গলায় বলে ও লিখে থাকে যে, তারা শরীয়তের অনুসরণ করে। অথচ তাদের অধিকাংশ কাজগুলোই শরীয়তের খিলাফ।

তারা যদি এতই শরীয়তের মুকাল্লাফ হয়ে থাকে-

তবে তারা ছবি তোলে কেনো? ভিডিও করে কেনো? শরীয়তে তো ছবি তোলা সম্পূর্ণরূপে হারাম। ছহীহ ‘মুসলিম শরীফ’ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে-

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِـى النَّارِ

অর্থ: ‘প্রত্যেক ছবি তুলনেওয়ালা ও তোলানেওয়ালা জাহান্নামী।’

তারা যদি এতই শরীয়তের মুকাল্লাফ হয়ে থাকে-

তবে তারা বেপর্দা হয় কেনো? সম্মানিত শরীয়তে তো বেপর্দা হওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لَعَنَ اللهُ النَّاظِرَ وَالْمَنْظُوْرَ إِلَيْهِ

অর্থ: যে বেগানা মহিলাকে দেখে আর যে বেগানা মহিলা বেগানা পুরুষকে দেখায় উভয়ের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। (মিশকাত শরীফ)

অথচ আব্দুল মালেক গং অহরহই বেপর্দা হয়। যা আজ ওপেন সিক্রেট।

তারা যদি এতই শরীয়তের মুকাল্লাফ হয়ে থাকে-

তবে গণতন্ত্র ভোট নির্বাচন করে কেনো? সম্মানিত শরীয়তে তো গণতন্ত্র ভোট নির্বাচন সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারণ এগুলোর প্রবর্তক হচ্ছে বিধর্মীরা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ

অর্থ: “তোমরা কাফির ও মুনাফিক অর্থাৎ বিধর্মীদেরকে অনুসরণ করো না।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮)

তারা যদি এতই শরীয়তের মুকাল্লাফ হয়ে থাকে-

তবে প্রতিক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করে না কেনো? মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا ۚ وَاتَّقُوا اللهَ ۖ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু

সাল্লাম তিনি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষযে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দায়িমীভাবে পাগড়ী মুবারক পরিধান করতেন, তারা তা পরিধান করে না। তারা যে ধরনের টুপি কোর্তা পরিধান করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি তা কখনোই পরিধান করেননি। অর্থাৎ তাদের লেবাস বা পোষাকটাও পবিত্র সুন্নত উনার খিলাফ।

সর্বোপরি বলতে হয়, তারা যদি সম্মানিত শরীয়ত উনার এতই মুকাল্লাফ হয়ে থাকে-

তবে সাক্ষীগণ স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে চাঁদ দেখার সাক্ষী দেয়ার পরও তারা তাদের মিথ্যা দাবীর উপর অটল থাকলো কেনো?

পক্ষান্তরে ২৯শে রমাদ্বান শেষে পবিত্র শাওওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি বলে চৌদ্দ গোষ্ঠী সবাই মিলে ঘোষণা দেয়ার পরও ২ ঘণ্টা পর আবার চাঁদ দেখা গেছে বলে ঘোষণা দিলো কেনো? এতে কি তাদের মুকাল্লাফগিরি নষ্ট হয়ে যায়নি?

আসলে তারা সম্মানিত শরীয়তকে মোটেও অনুসরণ করে না। তারা অনুসরণ করে তাদের নফস বা প্রবৃত্তিকে। এটাই সত্য কথা।

সে দ্বিতীয়ত বলেছে যে, ১৪৪০ হিজরীর ২৯ শে রজব সন্ধ্যায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় আমাদের চাঁদ দেখা কমিটি ….. রজব মাস ৩০ দিনে পূর্ণ করেছে।

তার এ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, সে এক্ষেত্রে চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। কারণ তার বক্তব্যের দ্বারা বুঝা যায় যে,  সেদিন সারা বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। অথচ সেদিন সারা বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল না, যা তাদের ভাড়া করা আবহাওয়াবিদও স্বীকার করেছে। সেদিন খাগড়াছড়ির হাতিমুড়ায়, রাঙ্গামাটিতে, মুন্সীগঞ্জে, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে, পবিত্র শা’বান মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছিল। এতেও প্রমাণিত হয় যে, সেদিন সারা দেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল না। সে তার জালিয়াতিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য এরূপ মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।

তাছাড়া মালেক গং নতুন মিথ্যাবাদী না বরং তারা পুরাতন মিথ্যাবাদী। এ মালেকই কিছুদিন পূর্বে বলেছিল “রাজারবাগ শরীফ থেকে যে ‘নি’মাতুল কুবরা’ নামক কিতাবের বরাত দেয়া হয়েছে, তা নাকি আসল না। মালেক গংয়ের কাছে আসল পাণ্ডুলিপি রয়েছে। অথচ তাদের কাছে যখন পাণ্ডুলিপির ফটোকপি চাওয়া হলো- তখন তারা নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে গেলো। পরবর্তীতে আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ও দৈনিক আল ইহসানে একশো কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করি এই বলে যে, “আমাদের কাছে যে নি’মাতুল কুবরা’ রয়েছে সেটাই আসল। আর মালেক গংয়ের কথিত পা-ুলিপিই নকল। যদি তারা মিথ্যাবাদী না হয়ে থাকে তবে তারা আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে প্রকাশ্য ময়দানে জনগণের সামনে তাদের আসল পাণ্ডুলিপিটা দেখাক। কিন্তু আজ প্রায় এক বছর হয়ে যাচ্ছে তারা এ বিষয়ে টু শব্দও করেনি। তাদের এই নিরব বা চুপ থাকাই প্রমাণ করে যে, আসলে তারা চরম মিথ্যাবাদী।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ

অর্থাৎ “মিথ্যাবাদীদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।”

সে তৃতীয়ত বলেছে যে, “… কিন্তু শরয়ী তরীক্বায় শাহাদাত এর মাধ্যমে চাঁদ দেখা প্রমাণিত না হওয়ায় চাঁদ কমিটি আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।”

তার এ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, এটাও তার আরেকটি ডাহা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। কারণ যারা চাঁদ দেখেছেন তারা শরয়ী তরীক্বায় অর্থাৎ খালী চোখে চাঁদ দেখেছেন এবং শরয়ী তরীক্বায় চাঁদ কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে চাঁদ দেখার শাহাদাত বা সাক্ষ্য দিয়েছেন। যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা সকলেই মুসলমান ও মুত্তাক্বী পরহেযগার। এরপরও সে কি করে বলতে পারলো যে শরয়ী তরীক্বায় শাহাদাতের মাধ্যমে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হয়নি। তাহলে তাদের চাঁদ দেখার শরয়ী তরীক্বা কি আলাদা? সে বার বার ‘শরয়ী তরীক্বা’ ‘শরয়ী তরীক্বা’ বলে মুখে ফেনা তুলছে। অথচ একবারও সে তার সেই শরয়ী তরীক্বা কি, তা উল্লেখ করেনি। কারণ সে ভালো করেই জানে যে, শরয়ী তরীক্বার কথা উল্লেখ করলে সে জনগণের কাছে ধরা পড়বে এবং তার গুমরাহী স্পষ্ট হয়ে যাবে।

আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, ইসলামী ফাউন্ডেশন এত বছর যে তরীক্বায় চাঁদ দেখেছে এবং শাহাদাত বা সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে তা কি তার মতে শরয়ী তরীক্বা?

যদি তা শরয়ী তরীক্বা হয় তবে ১৪৪০ হিজরী সনের শা’বান মাসের চাঁদ দেখা ও শাহাদাত বা সাক্ষ্য দেয়ার তরীক্বাটি শরয়ী হবে না কেন? এর কোনো জবাব তার কাছে আছে কি? মোটেও নাই।

কাজেই, শরয়ী তরীক্বায় শাহাদতের মাধ্যমে চাদ দেখা প্রমাণিত হওয়ার পরও পূর্বের ভুল সিদ্ধান্ত বহাল রেখে কথিত চাঁদ কমিটি সম্মানিত শরীয়তের বিধান স্পষ্টভাবে লঙ্ঘণ করেছে এবং কোটি কোটি মুসলমানকে পবিত্র শবে বরাতের ফযীলত থকে মাহরূম করেছে। নাউযুবিল্লাহ!

মূলকথা হলো, ২৯শে রজব তথা ৬ই এপ্রিল ইয়াওমুস সাবত (শনিবার) সন্ধ্যায় যারা চাঁদ দেখেছেন উনারা ফাউন্ডেশনে আয়োজিত মজলিসে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য পেশ করেছেন। কিন্তু উনাদের সেই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে।

অতএব, চাঁদ দেখার সংবাদ ও সাক্ষী পাওয়া গেলে নতুন মাস শুরু করতে হবে; এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম বা নির্দেশ। চাঁদের সংবাদ ও সাক্ষী পাওয়া সত্বেও মাস শুরু না করা নাসী করার অন্তর্ভুক্ত, যা স্পষ্ট কুফরী। আর আব্দুল মালেক গং সেই কাজটিই করেছে। নাউযুবিল্লাহ!

২নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“একাধিক দিন শবে বরাত পালন সম্পর্কে”

চাঁদের সঠিক হিসাব অনুযায়ী ১৪ই শা’বান তারিখ দিবাগত রাতটিই হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত। এ রাত একটিই। কিন্তু চাঁদের সঠিক তারিখ পরিবর্তন করতঃ ১৩ শা’বান দিবাগত রাত অথবা ১৫ শা’বান দিবাগত রাত যারা শবে বরাত পালন করবে তারা কখনোই শবে বরাতের ফযীলত লাভ করতে পারবে না। তারা শবে বরাতের ফযীলত থেকে অবশ্যই বঞ্চিত থাকবে।

মালেক গংয়ের ঘোষণা অনুযায়ী যারা শবে বরাত পালন করেছে তারা চাঁদের সঠিক হিসাব অনুযায়ী ১৫ তারিখ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ১৬ই শা’বান রাতে পবিত্র শবে বরাত পালন করেছে। আর ১৬ তারিখ রাতে শবে বরাত পালন করলে শবে বরাত থেকে মাহরুম হবে এটাই স্বাভাবিক।

আর মধ্যপ্রাচ্য ও তার পশ্চিমের দেশগুলোর সাথে আমাদের দেশের একদিনের পার্থক্য হতেই হবে। এটা শরীয়তের কোন দলীলে আছে কি? চাঁদের অবস্থান সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ, মূর্খ ও জাহিল ব্যক্তি ছাড়া উক্তরূপ বক্তব্য কেউ উল্লেখ করতে পারে না।

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য বা সউদীর সাথে আমাদের যে পার্থক্য হচ্ছে তা সঠিকভাবে অর্থাৎ শরীয়তসম্মতভাবে চাঁদ না দেখার কারণে হচ্ছে। তারা যদি শরীয়তসম্মতভাবে চাঁদ দেখে মাস শুরু করতো তবে দেখা যেতো যে, কখনো বাংলাদেশ ও সউদী আরব একই সাথে মাস শুরু করেছে, কখনো বাংলাদেশ আগে মাস শুরু করেছে, সউদী আরব পরে শুরু করেছে। অর্থাৎ প্রতি মাসেই সউদী আরব বাংলাদেশের আগে চাঁদ দেখতে পারবে না।

৩নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“পবিত্র শবে বরাতে ভাগ্য লেখা সম্পর্কে”

শবে বরাতে ভাগ্য লেখা হয় না, শবে ক্বদরে লেখা হয়, মালেক গংয়ের এ কথার দলীল কোথায়? তারা কি এ বিষয়ে একটা দলীলও পেশ করতে পারবে? কস্মিনকালেও পারবে না। মূলতঃ শবে বরাতে যে ভাগ্য লেখা হয় তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত।

যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করে জানিয়ে দিয়েছেন-

فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ

অর্থ: উক্ত বরকতময় রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয় ফায়ছালা করা হয়। (পবিত্র সূরা দুখান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতকে জানানোর উদ্দেশ্যে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা মুবারক করেন-

هَلْ تَدْرِيْنَ مَا فِىْ هٰذِهِ اللَّيْلَةِ يَعْنِـىْ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ قَالَتْ مَا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ فِيْهَا اَنْ يُّكْتَبَ كُلُّ مَوْلُوْدٍ مِّنْ بَنِـىْ اٰدَمَ فِـىْ هٰذِهِ السَّنَةِ وَفِيْهَا اَنْ يُّكْتَبَ كُلُّ هَالِكٍ مِّنْ بَنِـىْ اٰدَمَ فِـىْ هٰذِهِ السَّنَةِ وَفِيْهَا تُرْفَعُ اَعْمَالُـهُمْ وَفِيْهَا تُنْزَلُ اَرْزَاقُهُمْ

অর্থ: আপনার জানা রয়েছে কি উক্ত রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতে কি কি বিষয় নির্ধারিত হয়? তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উক্ত রাতে কি কি বিষয় নির্ধারিত হয়? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উক্ত রাতে (আগামী একবছর) কতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তা নির্ধারিত হয় এবং কতজন মানুষ ইন্তিকাল করবে তাও নির্ধারিত হয়, বান্দার রিযিক নাযিলের ফায়ছালা করা হয় এবং আমলনামা মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে পেশ করা হয়। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)

মূলতঃ লাইলাতুল বরাতকে বলা হয়, লাইলাতুত তাজবীয তথা ফায়ছালা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের রাত। আর লাইলাতুল ক্বদরকে বলা হয় লাইলাতুত তানফীয তথা জারি হওয়ার রাত্রি। অর্থাৎ লাইলাতুল বরাতে যেসব বিষয়ে ফায়ছালা হয় ঐ বছরের লাইলাতুল ক্বদরে সেসব বিষয় জারী করা হয়। তাছাড়া বছরের দুআ কবুলের পাঁচটি বিশেষ রাত্রির মধ্যে অন্যতম একটি রাত হচ্ছে লাইলাতুল বরাত। বান্দার যাবতীয় দুআ ও আরজি এ রাত্রিতে নিঃসন্দেহে কবুল হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র শবে বরাত হচ্ছে ভাগ্য রজনী। অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাতেই ভাগ্য লেখা হয়। পবিত্র ‘শবে ক্বদরে’ নয়।

অথচ গুমরাহ ও বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত মূর্খ ও জাহিল লোকেরা তাদের গুমরাহী ও মূর্খতার কারণে শবে বরাতের ফযীলত স্বীকার করে না। নাউযুবিল্লাহ!

৪নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে সাক্ষী সম্পর্কে”

আরবী মাসসমূহ নির্ধারিত হয়ে থাকে সঠিকভাবে  মাসের নতুন চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এবং সেটা খালি চোখে সরাসরি দেখতে হবে। আকাশ মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন থাকলে রমাদ্বান শরীফ মাস ব্যতীত অন্যান্য মাসে দুজন মুসলমান আক্বিল বা জ্ঞানসম্পন্ন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলাকে সরাসরি চাঁদ দেখতে হবে। আর রমাদ্বান শরীফ মাসের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ অথবা একজন মহিলা চাঁদ দেখার সংবাদ দিলেই তা গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি আকাশ পরিস্কার থাকে তাহলে বহু সংখ্যক লোককে চাঁদ দেখার সংবাদ পেশ করতে হবে।

যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

وَإِذَا كَانَ بِالسَّمَاءِ عِلَّةٌ قَبِلَ الْإِمَامُ شَهَادَةَ الْوَاحِدِ الْعَدْلِ فِي رُؤْيَةِ الْـهِلَالِ رَجُلًا كَانَ أَوْ اِمْرَأَةً حُرًّا كَانَ أَوْ عَبْدًا.

অর্থ: “আর যখন আকাশে কোন ত্রুটি থাকবে অর্থাৎ আকাশ যখন মেঘলা থাকবে, তখন ইমাম সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাসের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে একজন ন্যায় পরায়ণ ব্যক্তির সাক্ষি গ্রহণ করবেন, হোক সেই ব্যক্তি পুরুষ অথবা মহিলা, স্বাধীন অথবা গোলাম।” সুবহানাল্লাহ! (আল মুখতাছারুল কুদূরী, বিদায়াতুল মুবতাদী, হিদায়াহ্, ইনায়াহ্, বিনায়াহ্ ইত্যাদি)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-

وَإِذَا لَـمْ تَكُنْ بِالسَّمَاءِ عِلَّةٌ لَـمْ تُقْبَلِ الشَّهَادَةُ حَتّٰـى يَرَاهُ جَـمْعٌ كَثِيرٌ يَقَعُ الْعِلْمُ بِـخَبَرِهِمْ.

 অর্থ: “আর যখন আকাশে কোন প্রকার ত্রুটি থাকবে না অর্থাৎ আকাশ পরিষ্কার থাকবে, তখন অসংখ্য লোক চাঁদ দেখতে হবে, যাদের সংবাদের ভিত্তিতে চাঁদ দেখার বিষয়টি কার্যকর হবে।” সুবহানাল্লাহ! (বিদায়াতুল মুবতাদী, হিদায়াহ্, ইনায়াহ্, বিনায়াহ্ ইত্যাদি)

যদি আকাশ মেঘলা থাকে, তাহলে সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ ও সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাসে দুইজন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা চাঁদ দেখলেই যথেষ্ট হবে। আর যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাহলে বহুসংখ্যক লোক চাঁদ দেখা আবশ্যক। যেমন- এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিশ্বখ্যাত ফক্বীহ হযরত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিছাল শরীফ: ১২৫২ হিজরী শরীফ) উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘রদ্দুল মুহ্তার আলাদ্ র্দুরিল মুখ্তারের ৩য় খণ্ডের ৩৬১ নং পৃষ্ঠায়’ বলেন-

 ذُو الْـحَجَّةِ كَشَوَّالٍ فَلَا يَثْبُتُ بِالْغَيْمِ إلَّا بِرَجُلَيْنِ أَوْ رَجُلٍ وَامْرَأَتَيْنِ وَفِي الصَّحْوِ لَا بُدَّ مِنْ زِيَادَةِ الْعَدَدِ.

অর্থ: “ সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাস হচ্ছে সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ মাসের অনুরূপ। আকাশ মেঘলা থাকলে দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সাক্ষিই যথেষ্ট হবে। আর যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাহলে বহুসংখ্যক লোক চাঁদ দেখা আবশ্যক।”

সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ, সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ ও সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ এই তিন মাস ছাড়া বাকি ৯ মাস তথা সম্মানিত শা’বান শরীফ, সম্মানিত যিলক্বদ শরীফ, সম্মানিত মুহররমুল হারাম শরীফ, সম্মানিত ছফর শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূর শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউওয়াল শরীফ), সম্মানিত রবী‘উছ ছানী শরীফ, সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ, সম্মানিত জুমাদাল উখরা শরীফ এবং সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ মাসের ক্ষেত্রে আকাশ মেঘলা থাকুক অথবা পরিষ্কার থাকুক উভয় অবস্থায় দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা চাঁদ দেখলেই যথেষ্ট হবে। যেমন- এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিশ্বখ্যাত ফক্বীহ হযরত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘রদ্দুল মুহ্তার আলাদ্ র্দুরিল মুখ্তারের ৩য় খণ্ডের ৩৬১ নং পৃষ্ঠায়’ বলেন-

)وَبَقِيَّةُ الْاَشْهُرِ التِّسْعَةِ) فَلَا يُقْبَلُ فِيْهَا اِلَّا شَهَادَةُ رَجُلَيْنِ اَوْ رَجُلٍ وَامْرَاَتَيْنِ.

অর্থ: “আর বাকী ৯ মাসের ক্ষেত্রে অর্থাৎ সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ, সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ এবং সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ এই ৩ মাস ছাড়া বাকী ৯ মাসের ক্ষেত্রে (সম্মানিত শা’বান শরীফ মাসসহ অন্যান্য মাসের ক্ষেত্রে চাঁদ দেখার জন্য) দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সাক্ষীই গ্রহণযোগ্য হবে।” (রদ্দুল মুহ্তার আলাদ্ র্দুরিল মুখ্তার ৩/৩৬১)

উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-

أَنَّه فِي الْأَهِلَّةِ التِّسْعَةِ لَا فَرْقَ بَيْنَ الْغَيْمِ وَالصَّحْوِ.

অর্থ: “৯ মাসের চাঁদের ক্ষেত্রে আকাশ মেঘলা এবং পরিষ্কার উভয় অবস্থাতে কোন পার্থক্য নেই।” (রদ্দুল মুহ্তার আলাদ্ র্দুরিল মুখ্তার ৩/৩৬১)

স্মরনীয় যে, মাসের ২৯ তারিখ নতুন চাঁদ তালাশ করতে হবে। চাঁদ দেখা গেলে পরের মাস শুরু করতে হবে। আর নতুন চাঁদ দেখা না গেলে পূর্বের মাস ৩০ দিনে পূর্ণ করতে হবে। তারপর মাস শুরু করতে হবে। এটাই হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান। মহাসম্মানিত শরীয়ত মুতাবিক আরবী মাস গণনার বিষয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়টি উল্লেখ করা সম্পূর্ণ অবান্তর ও হাস্যকর। অর্থাৎ গুমরাহী ও মূর্খতার অন্তর্ভুক্ত।

৫নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“ নতুন চাঁদ সর্বপ্রথম সউদী আরব না

দেখা সম্পর্কে”

জাপানকে বলা হয় সূর্যোদয়ের দেশ অর্থাৎ সূর্যোদয়ের দেশ নির্দিষ্ট রয়েছে। কিন্তু চন্দ্রোদয়ের জন্য অর্থাৎ নতুন চাঁদ সর্বপ্রথম কোন দেশে দেখা যাবে সেটা নির্দিষ্ট নেই। আর সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের মতো সউদী আরব চন্দ্রোদয়ের দেশ নয় যে, সেখান থেকে সবসময় সবার আগে নতুন চাঁদ দেখা যাবে। কেননা সউদী আরব হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যবর্তী দেশের অন্তর্ভুক্ত। সউদী আরবের পূর্বেও দেশ রয়েছে এবং পরেও দেশ রয়েছে। সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য মাত্র ৩ ঘণ্টা। তাই সাউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের কখনোই দুই দিনের পার্থক্য হতে পারে না এবং সউদী আরব প্রতিমাসেই বাংলাদেশের আগে চাঁদ দেখবে তাও সঠিক নয়। অনেক সময় বাংলাদেশের পরে সউদী আরব চাঁদ দেখতে পাবে। চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের দুই দিনের পার্থক্য হলে জানতে হবে, সউদী আরব সঠিকভাবে চাঁদের তারিখ গণনা করেনি। আর বাস্তবেও তাই। সউদী ওহাবী সরকার কখনোই চাঁদ দেখে মাস শুরু করে না। মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগী এবং বিশেষ করে পবিত্র হজ্জের আমল বরবাদ করার জন্য তারা ইহুদী-নাছারাদের প্রবর্তিত ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে আগাম চাঁদের তারিখ ঘোষণা করে। নাউযুবিল্লাহ!

৬নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“১৪৪০ হিজরীর শা’বান মাসের চাঁদ নিয়ে

ক্বওমী মৌলভীদের অপকর্ম”

১৪৪০ হিজরীর শা’বান মাসের চাঁদ নিয়ে সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী যে ১১ জন কওমী মৌলভীর সাব কমিটি গঠন করেছিল তারা সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান মুতাবিক ফায়ছালা করেনি। বরং প্রতিমন্ত্রীকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তার পূর্বঘোষিত চাঁদ না দেখা যাওয়ার সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে। ফলে দেশের কোটি কোটি মুসলমানকে তারা পবিত্র শবে বরাতের ফযীলত থেকে বঞ্চিত করেছে। নাউযুবিল্লাহ!

৭নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“সাক্ষীদের সাথে প্রতারণা সম্পর্কে”

১৩ এপ্রিল ইয়াওমুস সাবত (শনিবার) আয়োজিত মজলিসেই ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ও তার ঘোষিত সাব কমিটিসহ উপস্থিত সাংবাদিক ও অন্যান্য সকলের সামনেই ২৯ রজব তারিখে চাঁদ দেখেছেন সেই সাক্ষ্য প্রদান করেছেন মুন্সিগঞ্জ জেলার মুক্তারপুর পঞ্চসার ইউনিয়নের মালিরপাথর গ্রামের বাইতুল মামুর জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতীব মাওলানা মুহম্মদ মুহিবুল্লাহ এবং উনার সাথে উপস্থিত ছিলেন মুছল্লি মুহম্মদ মিজানুর রহমান। তিনিও চাঁদ দেখেছেন। যার অডিও রেকর্ডও রয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলা থেকে যারা চাঁদ দেখেছেন উনারাও উপস্থিত ছিলেন।

অতএব, উক্ত মজলিসের পর উনাদেরকে পুনরায় অন্যদিন সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো জালিয়াতী ও প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। তারপরও পবিত্র শবে বরাতের ফযীলত থেকে দেশবাসী যাতে মাহরূম না হন সেই উদ্দেশ্যে উনারা সাক্ষ্য দেয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু সাব কমিটির তরফ থেকে সাক্ষীগণকে একজন একজন করে ভিতরে যাওয়ার জন্য বলা হলে সাক্ষীগণ তাদের জালিয়াতী বুঝতে পেরে সম্মিলিতভাবে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য প্রস্তাব করেন। কিন্তু এ প্রস্তাবে তারা রাজী না হয়ে সাক্ষীগণের সাক্ষ্য গ্রহণ ছাড়াই পূর্বের ঘোষণাই তারা বহাল রাখে। নাউযুবিল্লাহ!

আসলে তাদের পূর্বপরিকল্পনা এটাই ছিল যে, যেকোনো অজুহাতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বানচাল করতে হবে । আর সেটাই তারা বাস্তবায়ন করেছে। ফলে ১৫ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৬ই শা’বান তারিখে শবে বরাত পালনে দেশের মুসলমাণগণ উনাদেরকে বাধ্য হতে হয়। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ তাদের মনগড়া ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দেশবাসী সম্মানিত মুসলমান উনারা শবে বরাতের অশেষ ফযীলত হতে বঞ্চিত হন। নাউযুবিল্লাহ!

মালেক গং সাক্ষীদের দেয়া শর্তকে অপ্রাসঙ্গিক ও ই’তেবার নেই বলে উল্লেখ করেছে।

এর জবাবে বলতে হয় যে, শর্তগুলো মালেক গংয়ের কাছে অপ্রাসঙ্গিক হলেও আমাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক নয়।  বরং প্রাসঙ্গিক ও জরুরী। কারণ চাঁদের ব্যাপারে শুরু থেকে তাদের যে মনোভাব দেখা গেছে তাতে করে একথা নিশ্চিত বলা যায় যে, তাদের দেয়া শর্ত মোতাবেক যদি সাংবাদিক ও আইনজীবি ছাড়া একজন একজন করে ভিতরে প্রবেশ করতো তবে তারা যেকোনোভাবে সাক্ষীদের বিভ্রান্ত করে তাদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করতো। তাই সাক্ষীরা সাংবাদিক ও আইনজীবি ছাড়া ভিতরে প্রবেশ করতে অসম্মতি জানায়।

তাছাড়া তাদের অন্তরে যদি কোনো কুট উদ্দেশ্য নাই থাকতো তবে সাংবাদিক ও আইনজীবিদের সামনে সাক্ষী নিতে এত ভয় কেন? সাংবাদিক ও আইনজীবিদের সামনে সাক্ষী নেয়া কি শরীয়তের খিলাফ? শরীয়তের খিলাফ নয় বরং প্রকাশ্যে খোলামেলা সবার সামনে সাক্ষ্য গ্রহণ করাই শরীয়ত উনার বিধান। এর মধ্যেই স্বচ্ছতা রয়েছে। আর গোপনে চুপে চুপে সাক্ষ্য গ্রহণ করার মধ্যে রয়েছে অসচ্ছতা ও কুট উদ্দেশ্য।

৮নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে”

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে মসজিদের ইমাম ও খতীব এবং উনার মুছল্লী চাঁদ দেখেছেন। উনারা রাজারবাগ শরীফ উনার মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুরীদ বা অনুসারী ছিলেন না। উনারা ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত মজলিসেই তা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া অন্য জেলা থেকে যারা চাঁদ দেখেছেন উনাদের মধ্যেও অনেকেই রাজারবাগ শরীফ উনার অনুসারী ছিলেন না।

কাজেই, শুধু রাজারবাগ শরীফ উনার অনুসারী উনারাই চাঁদ দেখেছেন অন্য কেউ দেখেননি মালেক গংদের একথাও ডাহা মিথ্যা।

তাছাড়া রাজারবাগ অনুসারীদের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য কি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়? উনারা কি মুসলমান নন? তাহলে এ প্রশ্নও উঠে আসে যে, এত বছর ফাউন্ডেশন যাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে চাঁদের তারিখ ঘোষণা করেছে তারা কি রাজারবাগ শরীফের অনুসারী উনাদের চেয়ে আক্বীদা আমলে উত্তম? কস্মিনকালেও নয়। সেক্ষেত্রে তাদের সাক্ষ্য যদি গ্রহণযোগ্য হয় তবে রাজারবাগ শরীফ উনার অনুসারীদের সাক্ষ্য গ্রহনের ব্যাপারে এত প্রশ্ন কেন? আসলে নিজেদের গুমরাহীমূলক ভুল সিদ্ধান্তে অটল থাকার জন্যই তাদের এ প্রহসন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্নিত রয়েছে, “যারা যিকির করেন উনারা জীবিত আর যারা যিকির করে না তারা মৃত।”

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে, এক যিকিরকারী বুযুর্গ ব্যক্তি ইন্তিকাল করলে উনাকে দাফন করার পর তালকীন দিচ্ছিল এমন সব লোক যারা যিকির করতো না। সেখানে উপস্থিত এক বুযুর্গ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে দাফনকৃত যিকিরকারী বুযুর্গ ব্যক্তি বলতেছেন যে দেখুন, মৃতরা জীবিত ব্যক্তিকে তালকীন দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

তদ্রƒপ যাদের নিজেদের আক্বীদাই অশুদ্ধ, আমল অশুদ্ধ, যারা হারাম নাজায়িয কাজে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, যারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে হরদম ছবি তোলে, বেপর্দা হয়, হরতাল করে, অবরোধ করে, লংমার্চ করে, কুশপুত্তলিকা দাহ করে, ব্লাসফেমী আইন তলব করে, মৌলবাদী দাবী করে, সন্ত্রাসীপনা করে, ভোট নির্বাচন করে, গণতন্ত্র করে মোটকথা বিধর্মীদের যাবতীয় তর্জ-তরীকা পালন করে এরা নাকি গোমরাহ নয়। বরং যাদের আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী এবং যারা সম্মানিত শরীয়ত ও সুন্নত মুবারক উনার পরিপূর্ণ পাবন্দ উনারাই নাকি গোমরাহ। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!  এটা ক্বিয়ামতেরই পূর্বাভাস। আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ১২তম ইমাম হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি যখন প্রকাশিত হবেন তখন পবিত্র মদীনা শরীফ এরই এক বিদয়াতী আলিম নামধারী ব্যক্তি উনাকে বিদআতী বা গোমরাহ বলে ফতওয়া দিবে। নাউযুবিল্লাহ! তখন হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি ঐ উলামায়ে সূ’কে ক্বতল করা ওয়াজিব বলে ফতওয়া প্রদান করবেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ক্ষেত্রেও সেই একই অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

প্রশ্নকারী সায়ীদুল হক লিখেছে: “রাজারবাগীরা তো চরম পর্যায়ের গোমরাহ ফেরক্বাহ। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, প্রশ্নকারী যদি নিজেই উত্তর দিয়ে দেয় তবে উত্তরদাতা কি করবে?

প্রশ্নকারী যদিও কুট উদ্দেশ্যে রাজারবাগ শরীফকে গোমরাহ বলার দুঃসাহস দেখিয়েছে উত্তরদাতা কিন্তু রাজারবাগ শরীফকে গোমরাহ বা বিদয়াতী বলার দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। শুধু  তাই নয় প্রশ্নকারী যেসব বিষয়গুলো উল্লেখ করে বিনা দলীলে রাজারবাগ শরীফকে গোমরাহ বলতে চেয়েছে উত্তরদাতা কিন্তু সে বিষয়গুলোকে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনার দলীল দ্বারা শরীয়ত বিরোধী ও বিদয়াত প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি যদি তারা-

وَصَدَقَ مُرْشِدُنَا الْعَظِيْمُ وَاَهْلُ بَيْتِهِ الْكَرِيـْمُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَجْـمَعِيْنَ

اَلْـحَمْدُ وَالشُّكْرُ لِشَيْخِنَا وَمُرْشِدِنَا وَاَهْلِ بَيْتِهِ الْكَرِيـْمِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ اَجْمَعِيْنَ

وَعَلٰى شَيْخِنَا وَمُرْشِدِنَا مَـمْدُوْحٍ حَضْرَتْ مُرْشِدٍ قِبْلَةٍ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ وَعَلٰى اَهْلِ بَيْتِهٖ

سُبْحَانَ اُمِّ الْاُمَمِ عَلَيْهَا السَّلَامُ

“যিনি নূরে মুজাসসাম, যিনি সবকিছু দেখেন ও সব কিছু জানেন”

এ বাক্যগুলো পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল দ্বারা হারাম প্রমাণ করতে পারে তবে তাদেরকে ‘একশ কোটি টাকা’ পুরস্কার দেয়া হবে। ইনশাআল্লাহ!

তাদেরকে আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে রাজারবাগ শরীফ সর্বদাই সম্মানিত ইসলাম উনার প্রতিটি বিষয়েই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষন করেন এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী আমল করেন।

অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বয়াস শরীফ উনার খিলাফ কোনো কথা বলেন না, লিখেন না, বিশ্বাস করেন না ও আমল করেন না। আর এজন্যই একমাত্র রাজারবাগ শরীফই পেরেছেন বার বার প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে একথা বলতে যে, কেউ যদি আমাদের কোনো আক্বীদা, আমল, কথা, লিখনী পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনাদের দলীল দ্বারা ভুল প্রমাণ করতে পারে, তবে আমরা তা থেকে অবশ্যই তওবা করবো। এবং যে প্রমান করতে পারবে তাকে পুরুস্কৃত করবো। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবে না।

প্রশ্নকারী ‘কাইয়্যূমে যামান’ লক্ববের কথা উল্লেখ করেছে অর্থাৎ তার মতে ‘ক্বাইয়্যূমুয যামান’ লক্বব যারা ব্যবহার করে তারা গোমরাহ। নাউযুবিল্লাহ!

এর জবাবে বলতে হয় যে, বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, “পুরান পাগল ভাত পায় না, নুতন পাগলের আমদানী।”

নতুন পাগল সায়ীদুল হক্বের যারা গুরু শায়খুল হদছ, মুফতে কমিনী, আহমক শফী, মাহিউদ্দীন, হেমায়েতুদ্দীন ওরফে কাযযাবুদ্দীন গং অর্থাৎ পুরান পাগলরা রাজারবাগ শরীফ ও লক্বব মুবারক নিয়ে কথা বলে চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়ে মুখে কুলুখ এঁটেছিলো। আর কখনো রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। নতুন পাগল সায়ীদুল হক্বের এ বিষয়গুলো ভাল করে জেনে নিয়ে এর থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত ছিল।

এবার আমরা ‘কাইয়্যূমুয যামান’ লক্বব মুবারক নিয়ে সংক্ষেপে একটু আলোচনা করবো যাতে নতুন পাগল সায়ীদুল হক্ব আর মালেক গং ‘কাইয়্যূমুয যামান’ লক্বব নিয়ে জীবনে আর কোনো কথা বলতে না পারে এবং না  বলে।

কিছুদিন পূর্বে তাদেরই এক অনুসারী তাতীবাজার কওমী খারিজী মাদরাসার শিক্ষক হেমায়েত উদ্দীন ‘ভ্রান্ত মতবাদ’ নামে একটি বই বের করে সেখানে সে ‘ক্বাইয়্যূমুয যামান’ লক্ববের ব্যাপারে দলীলবিহীন মনগড়া বক্তব্য পেশ করে। আমরা উক্ত বক্তব্য খণ্ডন করে ‘কায্যাবুদ্দীনের মিথ্যাচারিতার জবাব নামে একটি কিতাব প্রকাশ করি। যে কিতাবের একটি লাইনও আজ পর্যন্ত কাযযাবুদ্দীন গং খণ্ডন করতে পারেনি। সেই কিতাব থেকেই তার উক্ত বক্তব্যের খণ্ডণমূলক আলোচনাটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো।

আশাদ্দুদ দরজার জাহিল কাযযাবুদ্দীন তার গোমরাহীমূলক রেসালা “ভ্রান্ত মতবাদে” লিখেছে, “…… খেতাব সমূহের মধ্যে কুফরী জ্ঞাপক খেতাবও রয়েছে। যেমন “কাইউমুয্ যামান’ খেতাবটি। কাইউম শব্দটি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার একটি ছিফতী নাম যার অর্থ জগতের ধারক ও রক্ষক। অতএব, কাইউমুয্ যামান অর্থ হবে যামানার ধারক ও রক্ষক। একথাটি একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ব্যাপারেই প্রযোজ্য, অন্য কারো ব্যাপারে নয়। কোন মাখলুক কাইউম হতে পারেনা বরং আব্দুল কাইউম বা কাইউমের গোলাম হতে পারে। কোন মাখলুকের হাতে জগত পরিচালনার ক্ষমতা ন্যস্ত থাকতে পারেনা। সুতরাং কোন মানুষের ব্যাপারে এ উপাধি ব্যবহার নিঃসন্দেহ কুফরী জ্ঞাপক।” নাউযুবিল্লাহ!

“মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব”

কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু হলো (১) ‘ক্বাইয়্যূম’ শব্দটি একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারেই প্রযোজ্য, অন্য কারো ব্যাপারে নয়। (২) কোন মাখলুক ক্বাইয়্যূম হতে পারেনা। (৩) কোন মানুষের ব্যাপারে ক্বাইয়্যূম উপাধি ব্যবহার কুফরী। (৪) কোন মাখলুকাতের হাতে জগত পরিচালনার ক্ষমতা  নেই।

প্রথমতঃ বলতে হয় যে, ‘ক্বাইয়্যূম’ শব্দটি একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারেই প্রযোজ্য অন্য কারো ব্যাপারে নয়। এ কথাটি কাযযাবুদ্দীনের একান্তই নিজস্ব মনগড়া ও বানানো। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফের কোথাও একথা উল্লেখ নাই। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের  কোথাও ‘ক্বাইয়্যূম’ শব্দটিকে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য খাছ করা হয়নি।

‘ক্বাইয়্যূম’ শব্দটি যদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই খাছ থাকতো, তবে জগতখ্যাত আলিমে দ্বীন ও মুজাদ্দিদ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেকে ‘ক্বাইয়্যূমে আউয়াল’ বলে প্রকাশ করতেন না। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেকে ‘ক্বাইয়্যূম’ হিসেবে প্রচার ও প্রকাশ করা এটাই প্রমাণ করে যে, ‘ক্বাইয়্যূম’ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই  খাছ নয়। যদি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য খাছ হতো তবে নিজের ব্যাপারে এটা প্রকাশ করতেন না। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কম জানতেন না। সে যামানার বড় বড় আলিম উনারা উনার মুরীদ ছিলেন। যেমন ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনিও হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ‘ক্বাইয়্যূম’ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তিনি বা অন্য কোন অনুসরণীয় হক্কানী আলিমই হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধির বিরোধিতা করেননি। এতে কি এটাই প্রমাণিত হয়না যে, ‘ক্বাইয়্যূম’ শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই খাছ নয়, বরং অন্যের ব্যাপারেও তা প্রযোজ্য। অবশ্যই প্রমাণিত হয়। কাজেই কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্য যে ডাহা মিথ্যা, তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।

কারণ কাযযাবুদ্দীনের বক্তব্য যদি সত্য হিসেবে ধরে নেয়া হয়, তবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাসহ অন্যান্য আলিম উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ জানতেন না। হাক্বীক্বত কাযযাবুদ্দীনই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞই শুধু নয়, বরং আশাদ্দুদ দরজার জাহিলও বটে। ইলমে জাহির তার বকদরে নিছাব কিছুটা থাকলেও ইলমে তাছাওউফে সে সম্পূর্ণ শুন্য। তাই সে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধির ব্যাপারে এরূপ জিহালতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, “কোন মাখলূক কাইউম  হতে পারেনা।” তাদের এ বক্তব্যও ভুল, মনগড়া,  দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী। মূলতঃ মাখলূক অবশ্যই ‘ক্বাইয়্যূম’ হতে পারে। তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যে অর্থে ‘ক্বাইয়্যূম’ সে অর্থে নয়। যেমন, মাখলুক ‘মাওলানা’ হতে পারে, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি যে অর্থে ‘মাওলানা’ সে অর্থে নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নিজেকে ‘মাওলানা’ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন-

اَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

অর্থ: (হে আল্লাহ পাক!) আপনি মাওলানা আপনি আমাদেরকে কাফিরদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন।

অনুরূপ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও মাওলানা। যেমন আমরা পবিত্র দুরূদ শরীফে পাঠ করে থাকি।

اَللّٰهُمَّ صَلِ عَلٰى سَيِّدِنَا مَوْلٰنَا…

অর্থ: “হে আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত  বর্ষণ করুন যিনি আমাদের সাইয়্যিদ ও মাওলানা উনার উপর”

আবার যারা টাইটেল বা দাওরা পাশ করে তারাও নিজেদেরকে মাওলানা দাবী করে থাকে। যেমন- নতুন পাগল গুমরাহ সায়ীদুল হক ও তার গুমরাহ গুরুরা লিখে থাকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে নতুন পাগল গুমরাহ সায়ীদুল হক্ব ও তার গুমরাহ গুরুদের মাওলানা দাবী করাতে আল্লাহ ও রসূল দাবী করা হয়নি কি? এতে কি শিরক ও কুফর হয়নি? আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল উনারা যে অর্থে মাওলানা নতুন পাগল গুমরাহ সায়ীদুল হক্ব ও তার গুমরাহ গুরুরা কি একই অর্থে মাওলানা? যদি বলে না, তবে কাইয়্যূম এর ক্ষেত্রে কেনো এক হবে?

মূলতঃ মানুষ ‘ক্বাইয়্যূম’ হতে পারে বলেই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মা’ছূম রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেককেই ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, কাযযাবুদ্দীন নিজেও স্বীকার করেছে যে, মাখলূক ‘ক্বাইয়্যূম’ হতে পারে। যেমন সে ‘ভ্রান্ত মতবাদের’ টিকায় লিখেছে যে, “……. হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার ছেলে ইমাম মা’ছূম, তার ছেলে হুজ্জাতুল্লাহ নকশবন্দ, তার ছেলে আবুল উলা প্রমূখ …. এই খেতাব ব্যবহার করে থাকলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রূপক অর্থেই ব্যবহার করে থাকবেন।”

কাযযাবুদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা দু’টি  বিষয় সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় (১) হযরত  মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকেই ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করেছেন। সুতরাং কাযযাবুদ্দীন নিজেই স্বীকার করলো যে, মাখলূক ক্বাইয়্যূম হতে পারে। (২) রূপক অর্থে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করা জায়িয। অর্থাৎ কাযযাবুদ্দীন স্বীকার করলো যে, মাখলূকাত ‘‘ক্বাইয়্যূম’ হতে পারে, তবে রূপক অর্থে। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে কাযযাবুদ্দীনের এ বক্তব্যের কি মূল্য থাকতে পারে যে, ‘ক্বাইয়্যূম’ শব্দটি শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই প্রযোজ্য, অন্য কারো ব্যাপারে নয়। মাখলূক ‘ক্বাইয়্যূম’ হতে পারেনা।” সে তো নিজেই হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেককে ‘ক্বাইয়্যূম’ স্বীকার করে নিয়েছে। সুতরাং কাযযাবুদ্দীনের উক্ত বক্তব্য অর্থহীন, দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী বলে সাব্যস্ত হলো। এবং সে যে একটা গ-মূর্খ ও আশাদ্দুদ দরজার জাহিল তাও প্রমাণিত হলো।

তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, “কোন মানুষের ব্যাপারে কাইউম উপাধি ব্যবহার নিঃসন্দেহে কুফরী।” কাযযাবুদ্দীনের এই মতানুযায়ী ‘ক্বাইয়্যূমুয্ যামান’ উপাধি ব্যবহারকারী সকলেই কাফির। সে মতে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, এবং হযরত ইমাম মা’ছূম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হজ্জাতুল্লাহ নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল উলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছেলে হযরত যোবায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আব্দুল হাই ছিদ্দীকী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সকলেই কাফির। নাঊযুবিল্লাহ! কারণ উনারা সকলেই ‘ক্বাইয়্যূমুয্ যামান’ লক্বব ব্যবহার করেছেন।

হাক্বীক্বত কাযযাবুদ্দীন নিজেই কাফির হয়ে গেল। কারণ উনাদেরকে যে  কাফির বলেবে সে যে কত বড় কাফির তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মূলতঃ কাযযাবুদ্দীন রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতি কুফরীর ফতওয়া দিতে গিয়ে সে নিজেই কাফির বলে সাব্যস্ত হলো। এজন্যে বলা হয়, “অপরের জন্যে কুয়ো খুদলে, সে কুয়োয় নিজেকেই পরতে হয়।”

কাযযাবুদ্দীন হয়তো এ কুফরী থেকে বাঁচার জন্যে বলবে যে, উনারা ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করেছেন রূপক অর্থে। তাই তাদেরটা কুফরী হবে না।

এখন আমাদের প্রশ্ন হলো, রূপক অর্থে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করা জায়িয। একথা তো তার উক্ত বক্তব্যে উল্লেখ নেই। সে তো আম বা সাধারণভাবেই একথা বলেছে। আর উনারা যে রূপক অর্থে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করেছেন, একথারই বা প্রমাণ কোথায়? পাশাপাশি রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলাও যে রূপক অর্থে ব্যবহার করছেন না বা তিনি সরাসরি অর্থে ব্যবহার করেছেন এ প্রমাণই বা তার হাতে কোথায়?

কাযযাবুদ্দীন কি প্রমাণ করতে পারবে যে, উনারা রূপক অর্থে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করেছেন? বরং তারা যে অর্থে “ক্বাইয়্যূম” উপাধি ব্যবহার করেছেন তা বিশ্বখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব “রওযাতুল কাইয়্যূমিয়াত” এর ১ম খণ্ড ১৭২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قیوم اس شخص کو کھتے ھیی کہ جس کے ما تحت تمام اسماء وصفات شیونات اعتبارات اور اصول ہوں اور تمام کزاشتہ اور ئندہ مخلوقات کے عالم موجودات، انسان، وحوش، پرندہ، نباتات، ھرذی روح، پتھر، درخت، بروبحر  کی برشی، عرش، کرسی، لوح، قلم، ستاررہ، ثوابت، سورج، چاند، اسمان، بروج سب اس کے سائے میں ہوں. افلاک و بروج کی حرکت وسکون، سمندرون کی لہروں کی حرکت، در ختوں کے بتوں کا بلنا، بارش کس قطروں کا گرنا، پھلوں  کا پکنا، پرندوں کا چونچ پھیالانا، دن، رات کا پیدا ہونا، اور گردش کنندہ اسمان کی موافق یا  موافق رفتار سب کچہ اس کے حکم سے ہوتا ھے، بارش کا ایک قطرہ ایسا نہیں جو اسکی اطلاع بغیر کرتا ہو، زمیں پر حرکت وسکون اسکی مرضی کے بغیر نھیں جو آر ام وخوشی اور ہے چینی اور رنج اھل زمین کو ہوتا ھے اس کے حکم بغیر  نھیں ہوتا. کوئی گھڑی، کوئی بفتہ، کوئی مھینہ، کوئی سال، ایسا نھیں جواس کے حکم بغیر اپنے اپ میں نیکی بدی کا تصرف کر سکے، غلہ کی پیدائش، نباتات کا اکنا غرضیکہ جو کچہ بھی خیال میں اسکتا ہے وہ اسکی مرضی اور حکم بغیر ظھور میں نھیں اتا. روئے زمیں پر جس قدر زاھد، عابد، ابرار اور مقرب تسبیح، ذکر فکر تقدیس اور تنزیہ ہیں عبادت گاہوں، جھو نپڑوں کئیوں پھاڑ اور دریا کنارے زبان قلب روح سر خفی اخفی اور نفس سے شاغل اور معتکف ھیں اور حق طلبی کی راہ میں مشغول ھیں سب اسی کی مرض سے مشغول ھیں گو انہیں ھیں  اس بان کا علم ہویا نہ ھو.

অর্থ: ‘ক্বাইয়্যূম’ এমন মহান ব্যক্তিত্বকে বলা হয়, সমস্ত নাম, ছিফত এবং সমস্ত মহত্ব তথা মর্যাদা এবং সমস্ত বিধি-বিধান যাঁর নিয়ন্ত্রণে। অতীত এবং ভবিষ্যত সৃষ্টি জগতের সমস্ত সৃষ্টি, যেমন মানুষ (জীব জানোয়ার) পশু-পাখি, তরু লতা, প্রত্যেক জীব, পাথর, গাছ-পালা, জল-স্থলের সব বস্তু যেমন আরশ কুরসী লৌহ-কলম চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজী আসমানের নক্ষত্রের প্রবাহ এবং স্থিরতা, এমনকি সমুদ্রের প্রবাহ এবং স্থিরতা এমন কি সমুদ্রের ঢেউ তরঙ্গের এবং গাছের পাতা ঝড়ে পড়া, এমনকি বৃষ্টিপাত হওয়া, পাখির ঠোঁট ফেলা, দিন রাতের  সৃষ্টি হওয়া, আসমানের নিজ কক্ষপথে যথাযর্থ পরিভ্রমন সমস্ত কিছুই ক্বাইয়্যূমুয্ যামানের নির্দেশক্রমেই হয়ে থাকে। বৃষ্টির এক ফোঁটা পানিও উনার অজ্ঞাতসারে বর্ষিত হয় না যমীনে ভূমিকম্প হওয়া ও যমীন স্থীর থাকা উনার ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে। (এমনকি) আরাম-আয়িশ, অস্থিরতা যমিনবাসীর মৃত্যু উনার নির্দেশেক্রমে হয়ে থাকে। কোন ঘন্টা, কোন দিন, কোন সপ্তাহ, কোন মাস, এমনকি কোন বৎসর এমন নয় যে, উনার নির্দেশের বাইরে নিজে নিজেই তার ভাল মন্দের বিচার করে চলতে পারে এবং শস্যের সৃষ্টি, তরুলতার উৎপাদন মোটকথা যা কিছুই ধারণায় আসতে পারে তা সব কিছু উনার নির্দেশ ও ইচ্ছার বাইরে প্রকাশ পায় না। যমীনে যে পরিমাণ যাহিদ, আবিদ, নেকবখত, নৈকট্যপ্রাপ্তগণ, তাসবীহ, যিকির, ফিকির, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা এবং ইবাদতখানা, পাহাড়, সমুদ্র, যবান, ক্বালব, রুহ, সির, খফি, আখফা, নফস ইত্যাদি লতিফাসমূহের মুরাকাবায় ব্যস্ত এবং মু’তাকিফ অর্থাৎ নিভৃতে অবস্থানকারী এবং সত্য সন্ধানে মশগুল আছেন এমন সব কিছুই ক্বাইয়্যূমুয্ যামান উনার ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে। যদিওবা তাদের এই বিষয়ে জ্ঞান থাকুক বা না থাকুক।”

কাজেই জাড়িজুড়ি দিয়ে কুফরীর গ্যাড়াকল থেকে বের হয়ে আসার কোনই সুযোগ কাযযাবুদ্দীনের নেই। কারণ কাযযাবুদ্দীন হক্কানী ওলীগণকে কাফির ফতওয়া দিয়ে নিজেই নিজেকে কাট্টা কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

চতুর্থতঃ বলতে হয় যে, “কোন মাখলুকাতের হাতে জগত পরিচালনার ক্ষমতা নেই।”

কাযযাবুদ্দীনের এ বক্তব্যটিও জিহালতপূর্ণ।

আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। উনার হুকুম বা  নির্দেশেই জগতের সব কিছু পরিচালিত হয়। তবে তিনি জগত পরিচালনার ক্ষেত্রে যেরূপ ফেরেশতাদেরকে নিয়োগ করেছেন, তদ্রুপ মানুষের মধ্যে যারা খাছ ওলীউল্লাহ তথা গাউছ, কুতুব, আবদাল বা ‘ক্বাইয়্যূম’ রয়েছেন, উনাদের কাছেও জগত পরিচালনার অনেক দায়িত্ব ন্যস্ত করে থাকেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, ওলী ও ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমেই জগত পরিচালনা করে থাকেন। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার অক্ষমতা নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার বহি:প্রকাশ। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার সবকিছুই জানেন তারপরও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বান্দার আমল সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে অবহিত করে থাকেন। এর অর্থ এই নয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন না তাই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা অবহিত করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যে ওলীআল্লাহ ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা জগত পরিচালনা করেন, তার প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ-এই রয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَالْـمُدَبِّرَاتِ اَمْرًا

অর্থাৎ, “(জগতের) কার্য নির্বাহকারী।” (পবিত্র সূরা নাযিয়াত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন” ও “বাগবী শরীফে” উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

(فَالْـمُدَبِّرَاتِ اَمْرَا) قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ هُمُ الْمَلٰئِكَةُ … قَالَ عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ سَابِطٍ يُدَبِّرُ الْاَمْرَ فِى الدُّنْيَا اَرْبَعَةٌ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَمِيْكَائِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَمَلَكُ الْمَوْتِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاِسْرَافِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَمَّا جِبْرِيْلُ فَمُوَكِّلُ بِالْوَحْىِ وَالْبَطَشِ وَهَزَمَ الْـجُيُوْشَ وَاَمَّا مِيْكَائِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَمُوَكِّلُ بِالْمَطَرِ وَالنَّبَاتِ وَالْاَرْزَاقِ وَاَمَّا مَلَكُ الْمَوْتِ فَمُوَكِّلُ بِقَبَضِ الْاَنْفُسِ وَاَمَّا اِسْرَافِيْلُ فَهُوَ صَاحِبُ الصُّوْرِ.

অর্থ: “(কার্য নির্বাহকারী) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, উনারা হলেন ফেরেশতাগণ! ….  হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সাবিত্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, চারজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা জগতের কার্য নির্বাহ করে থাকেন। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম  ও হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম। হযরত জিররাঈল আলাইহিস সালাম ওহী, আযাব-গযব ও সৈন্য পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম বৃষ্টি, ফসল ও রিযিকের দায়িত্বে নিয়োজিত। হযরত মালাকুল মউত আযরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি রূহ কবয করার দায়িত্বে নিয়োজিত। আর হযরত ইসরাফীল আলাইহিস সালাম তিনি শিঙ্গায় ‘ফু’ দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত।”

কোন কোন তাফসীরে উক্ত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশেষ বিশেষ ওলীগণের হাতে জগতের বিশেষ বিশেষ কাজের দায়িত্ব ন্যস্ত করার কথাও উল্লেখ আছে।” এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে-

قَالَ حَضْرَتِ الْاِمَامُ اَحْـمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِىْ مُسْنَدٍ ذُكِرَ اَهْلُ الشَّامِ عِنْدَ عَلِىٍّ بْنِ اَبِىْ طَالِبٍ وَهُوَ بِالْعِرَاقِ فَقَالُوْا اِلْعَنْهُمْ يَا اَمِيْرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ قَالَ لَا سَـمِعْتُ رَسَوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اَلْاَبْدَالُ بِالشَّامِ وَهُمْ اَرْبَعُوْنَ رَجُلاً كُلَّمَا مَاتَ رَجُلٌ اَبْدَلَ اللهُ مَكَانَه رَجُلاً يُسْقٰى بِـهِمُ الْغَيْثَ وَيُنْتَصَرُبِـهِمْ عَلَى الْاَعْدَاءِ وَيُصْرَفُ عَنْ اَهْلِ الشَّامِ بِـهِمُ الْعَذَابَ.

অর্থ: “হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মসনদে আহমদে’ উল্লেখ করেন। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি যখন ইরাকে অবস্থান করছিলেন তখন উনার সম্মুখে শামবাসীদের সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। লোকজন বললো, হে আমীরুল মু’মিনীন! শামবাসীদের উপর বদদোয়া করুন। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, না।  কারণ আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘আবদালগণ শামদেশেই থাকেন, উনারা সংখ্যায় ৪০জন। যখন উনাদের মধ্যে একজন ইন্তেকাল করেন তখন আরেকজন দিয়ে সে স্থান পূর্ণ করা হয়। উনাদের মাধ্যমে শামবাসী বৃষ্টি পেয়ে থাকে, শত্রুর উপর বিজয়ী হওয়ার জন্যে সাহায্য পেয়ে থাকে এবং উনাদের মাধ্যমে তারা আযাব-গযব থেকে বেঁচে থাকে।”

পবিত্র হাদীছ শরীফে উনার মধ্যে এ সম্পর্কে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قَالَ الطَّبَرَانِـىُّ فِى الْكَبِيْرِ عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَزَالُ الْاَبْدَالُ فِىْ اُمَّتِىْ ثَلَاثُوْنَ بِـهِمْ تَقُوْمُ الْاَرْضُ وَبِهِمْ تَـمْطُرُوْنَ وَبِـهِمْ تَنْصُرُوْنَ.

অর্থ: “ইমাম তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘কবীর কিতাবে’ উল্লেখ করেন। হযরত উবাদা ইবনে ছামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন আবদাল সর্বদাই থাকবেন। উনাদের মাধ্যমেই যমিন কায়িম থাকবে, উনাদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি পাবে এবং উনাদের মাধ্যমে মানুষ সাহায্য প্রাপ্ত হবে।” সুবহানাল্লাহ!

আরো বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

لَا يَزَالُ اَرْبَعُوْنَ رَجُلًا يَحْفَظُ اللهُ بِـهِمُ الْاَرْضَ

অর্থঃ “পৃথিবীতে এরূপ চল্লিশজন ব্যক্তি (ওলী) সর্বদাই থাকবেন। যাঁদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক যমীনকে হিফাযত করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব এরূপ ওলীগণ উনাদের কথা উল্লেখ করার পর তিনি বলেন-

بِـهِمْ يُـحْيِـىْ وَيُـمِيْتُ وَيَـمْطُرُ وَيَنْبِتُ وَيَدْفَعُ الْبَلَاءَ

অর্থাৎ “উনাদের মাধ্যমেই মানুষ বেঁচে থাকবে, মারা যাবে, বৃষ্টি পাবে, ফসল পাবে এবং বালা-মুছীবত দূর হবে।” সুবহানাল্লাহ! (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে যে, হযরত মুয়ায বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

ثَلَاثٌ مِّنَ الْاَبْدَالِ الَّذِيْنَ بِـهِمْ قَوَّامُ الدُّنْيَا

অর্থাৎ “আবদালগণের মধ্যে এমন তিনজন রয়েছেন যাঁদের মাধ্যমে দুনিয়া কায়িম থাকবে।” সুবহানাল্লাহ! (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

হযরত ক্বাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

لَنْ تَـخْلُوَ الْاَرْضُ مِنْ اَرْبَعِيْنَ بِـهِمْ يُغَاثُ النَّاسُ وَبِـهِمْ يُنْصَرُوْنَ وَبِـهِمْ يُرْزَقُوْنَ

অর্থাৎ এরূপ চল্লিশজন লোক থেকে জমিন কখনো খালী থাকবেনা, উনাদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি পাবে, সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং রিযিকপ্রাপ্ত হবে। সুবহানাল্লাহ! (হিলইয়াতুল আউলিয়া) এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ আছে যে-

وَسَبْعَةٌ فِىْ سَائِرِ الْاَمْصَارِ بـِهِـمْ تُسْقَوْنَ الْغَيْثَ وَبِـهِمْ تُنْصَرُوْنَ عَلَى الْعَدُوِّ وَبِـهِمْ يُقَيِّمُ اللهُ اَمَرَ الدُّنْيَا.

অর্থাৎ “সমস্ত শহরেই সাতজন এরূপ ওলী থাকেন যাঁদের মাধ্যমে মানুষ বৃষ্টি লাভ করে; শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্যপ্রাপ্ত হয় এবং উনাদের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পাক জগতের কার্যসমূহ সম্পাদন করেন। অর্থাৎ জগত পরিচালনা করেন।” সুবহানাল্লাহ! (হিলইয়াতুল আউলিয়া)

স্মর্তব্য যে, জগতখ্যাত  আলিমে দ্বীন, সুলতানুল আরিফীন, মুজাদ্দিদুয্ যামান, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য কিতাব  “আল হাবী লিল ফতওয়া”তে উল্লিখিত হাদীছ শরীফসমূহ উল্লেখ করতঃ এটাই প্রমাণ করেছেন যে, জগতে অসংখ্য গাউছ, কুতুব, আবদাল, আওতাদ, নক্বীব, নুজাবা, আখইয়ার তথা আউলিয়ায়ে কিরাম আছেন, এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন, উনাদের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পাক তিনি জগত পরিচালনা করে থাকেন। কেননা উল্লিখিত হাদীছ শরীফ সমূহে এ বিষয়গুলো স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে-

(১) بـِهِمْ يُغَاثُ النَّاسُ – তাদের মাধ্যমে মানুষ সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (২) تُنْصَرُوْنَ عَلَى الْعَدُوِّ- শত্রুর উপর বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য প্রাপ্ত হবে। (৩) يُدْفَعُ الْبَلَاءُ وَالْعَذَابُ-তাদের ওসীলায় বালা-মুছিবত, আযাব-গযব দূর হবে। (৪) يُـحْىِ وَيُـمِيْتُ বেঁচে থাকবে এবং মৃত্যু হবে। (৫) يَنْبِتُ وَيَرْزُقُوْنَ- ফসল পাবে এবং রিযিক পাবে। (৬) يُـحْفَظُ الْاَرْضُ-যমীন হিফাযত থাকবে। (৭) تَقْوْمُ الْاَرْضُ- জমিন ক্বায়িম থাকবে। (৮) قَوَّامُ الدُّنْيَا – দুনিয়া ক্বায়িম থাকবে। (৯) يُقِيْمُ اَمْرَ الدُّنْيَا  -জগতের কার্যাবলী সম্পাদিত হবে। সুবহানাল্লাহ!

যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহান  আল্লাহ পাক তিনি হযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের হাতে জগত পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ মহান  আল্লাহ পাক  ওলীগণের মাধ্যমে  জগত পরিচালনা করে থাকেন। ওলীগণ মহান আল্লাহ পাক উনার খলীফা বা প্রতিনিধি হিসেবেই জগতের কার্যসমূহ সম্পাদন করে থাকেন।

অতএব, যাঁদের মাধ্যমে জগত ক্বায়িম থাকে উনারাই হচ্ছেন ‘ক্বাইয়্যূমুদ্ দুনিয়া’ বা “ক্বাইয়্যূমুয্ যামান”। সুতরাং এ অর্থে  এবং উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ সমূহের দৃষ্টিতে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি মাখলুকের  ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

অতএব, উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, “কোন মাখলুকাতের হাতে জগত পরিচালনার ক্ষমতা নেই” কাযযাবুদ্দীনের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফের খিলাফ। সাথে সাথে পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত ও অসংখ্য পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা   কুফরীর পর্যায়ভুক্ত।

উল্লেখ্য কাযযাবুদ্দীনের আরেকটি প্রতারণামূলক ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য হলো সে লিখেছে, “তারা এই খেতাব ব্যবহার করে থাকলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রূপক অর্থেই ব্যবহার করে থাকবেন। কিন্তু রাজারবাগী ছাহেব ও তার অনুসারীগণ তো প্রকৃত অর্থেই ব্যবহার করেছেন। তার প্রমাণ হলো তার পত্রিকায় গাউছুল আ’যম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে বলা হয়েছে, গাউছূল আ’যম সাইয়্যিদুল আউলিয়া মুহিউদ্দীন বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন “কোন চাঁদ উদিত হয়না কোন সূর্য অস্ত যায়না আমার অনুমতি ব্যতীত” …. অতঃপর একটু সামনে গিয়ে রাজারবাগী ছাহেবও এরূপ ক্ষমতা রাখেন সেদিকে ইঙ্গিত করে পত্রিকাটিতে লিখা হয়েছে, “উল্লেখ্য এ ধরনের আখাস্সুল খাছ মর্যাদা-মর্তবার ওলী আল্লাহর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সমাসীন ……… রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। (আল বাইয়্যিনাত ৭১তম সংখ্যা ১৩৯ পৃষ্ঠা) এভাবে বুঝানো হয়েছে যে, রাজারবাগী ছাহেব সত্যিকার অর্থেই ‘কাইয়্যূমুয্ যামান’।”

আশাদ্দুদ দরজার জাহিল কাযযাবুদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ যাঁরা “ক্বাইয়্যূম” উপাধি ব্যবহার করেছেন উনারা রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন, এর সরাসরি কোন দলীল প্রমাণ কাযযাবুদ্দীনের কাছে না থাকার পরও কাযযাবুদ্দীন মানতে বাধ্য হয়েছে যে, উনারা রূপক অর্থেই ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করেছেন। অথচ রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম যে রূপক অর্থে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করেন তার প্রমাণ উনার ওয়াজ শরীফ ও মাসিক আল বাইয়্যিনাতেই  রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে উল্লেখ আছে,  “…………..” ক্বাইউমুয্ যামানঃ  অনেকে এ লক্ববের সরাসরি শাব্দিক অর্থ  গ্রহণ করে বলে যে, এর অর্থ হলো- যামানার রক্ষক, যা মহান আল্লাহ পাক উনার শান। কাজেই উহা ব্যবহার করা নাজায়িয। মূলতঃ ইসলামে তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াসে এরূপ শত-সহস্র শব্দ রয়েছে, যার সরাসরী শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা হয়না। বরং অবস্থা বিশেষে ঘুরিয়ে অর্থ করতে হয়। যেমন- “ছলাত” শব্দের অর্থ- নামায, দরূদ, রহ্মত, ক্ষমা ও তাসবীহ্ ইত্যাদি। অনুরূপ “ক্বাইউমুয্ যামান”-এর অর্থও ঘুরিয়ে করতে হবে। এর হাক্বীক্বী অর্থ হবে- যাঁদের উসীলায় মহান আল্লাহ পাক যামানাকে রক্ষা করেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম “ক্বাইউমুয্ যামান” লক্বব প্রদান করেন আফযালুল আউলিয়া, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে। অতঃপর উনার ছেলে হযরত ইমাম মাছুম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে, উনার ছেলে হযরতুল আল্লামা হুজ্জাতুল্লাহ্ নক্শবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে “ক্বাইউমে ছালিছ”, উনার ছেলে হযরত আবুল উলা রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনার ছেলে হযরত জোবায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহি অর্থাৎ হযরত জুবাইর ইবনে হযরত আবুল উলা ইবনে হযরত হুজ্জাতুল্লাহ নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাকে “ক্বাইউমে রাবি বা চতুর্থ ক্বাইউম” লক্বব দান করেন। আর হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ বকর সিদ্দিকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল হাই সিদ্দিকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারও ছিলেন ক্বাইউমুয্ যামান। (মাকতুবাত শরীফ, হালাতে মাশায়িখে নক্শবন্দ, শাহ ওলীউল্লাহর সমকালীন রাজনীতি)।”

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ যেরূপ রূপক অর্থেই ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করেছেন, তদ্রুপ রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার মুরীদগণও রূপক অর্থেই ‘ক্বাইয়্যূম’ লক্বব ব্যবহার ও গ্রহণ করে থাকেন।

স্মর্তব্য যে, কাযযাবুদ্দীন “রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি সত্যিকার অর্থেই ক্বাইয়্যূম উপাধি ব্যবহার করেন” একথা প্রমাণ করতে গিয়ে আল বাইয়্যিনাত-এর ৭১তম সংখ্যা থেকে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে সেখানেও সে জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। এর খণ্ডনমূলক আলোচনা করলেই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে।

প্রথমতঃ রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা “সত্যিকার অর্থেই কাইয়্যূম উপাধি ব্যবহার করেন” একথার প্রমাণ স্বরূপ কাযযাবুদ্দীন আল বাইয়্যিনাত-এর উক্ত বক্তব্যকে উল্লেখ করেছে। অথচ তার উল্লিখিত উক্ত বক্তব্যে তো দূরের কথা, ৭১তম সংখ্যার ১৭৩ পৃষ্ঠার কোথাও ‘ক্বাইয়্যূমুয্ যামান’ উপাধি সম্পর্কিত কোন আলোচনাই নেই। তাহলে উক্ত বক্তব্য কি করে একথার  প্রমাণ হতে পারে যে, তিনি সত্যিকার অর্থেই ‘কাইউম’ উপাধি ব্যবহার করেন। কাজেই প্রমাণিত হলো যে, এ ক্ষেত্রে উক্ত বক্তব্য উল্লেখ্য করা জিহালত ও প্রতারণা বৈ কিছুই নয়।

দ্বিতীয়তঃ কাযযাবুদ্দীন ৭১তম সংখ্যার বক্তব্যটি পরিপূর্ণ ও হুবহু উল্লেখ করেনি। বরং নিজের মিথ্যা দাবিকে ছাবেত করার লক্ষ্যে আল বাইয়্যিনাতের বক্তব্যকে কাটছাঁট করে অর্থাৎ আগে পিছের বক্তব্য বাদ দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে একাধিক বক্তব্য নিয়ে একত্রিত করে সেটাকেই আল বাইয়্যিনাতের বক্তব্য বলে চালিয়ে দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!অবশ্য তার এ কাটছাঁটকৃত জালিয়াতিপূর্ণ বক্তব্য দ্বারাও তার দাবি সত্য বলে প্রমাণিত হয় না। সুতরাং তার দাবি যে সম্পূর্ণই মিথ্যা, সে যে আল বাইয়্যিনাতের বক্তব্য কাটছাঁট করেছে এবং উক্ত বক্তব্যে যে, “ক্বাইয়্যূম” উপাধি সম্পর্কিত কোন আলোচনা নেই, তা ৭১তম সংখ্যার বক্তব্যটি হুবহু নিম্নে তুলে ধরলেই সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। আল বাইয়্যিনাত-এর ৭১তম সংখ্যার ১৩৯ পৃষ্ঠার বক্তব্যটি হুবহু নিম্নে তুলে ধরা হলো-

“আউলিয়ায়ে কিরামের ইতিহাসে হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রয়ী একটি অনবদ্য নাম। তিনি যখন আল্লাহ পাক উনার কাছে মকবুল হলেন তখন গায়েবী নেদা হল, প্রত্যেক যামানায় আল্লাহ পাক উনার একজন নিশান বরদার ওলীআল্লাহ থাকেন, এ যামানায় আল্লাহ পাক উনার যিনি নিশান-বরদার ওলীআল্লাহ তথা যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ তিনি হযরত যুন্নুন মিসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তুমি উনার সোহ্বতে যাও।

নিশান-বরদার ওলীআল্লাহ তথা জামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহর মর্যাদা-মর্তবা বেমেছাল। সমুদ্রের মাছ, গর্তের পিপীলিকা, আকাশ-বাতাস, তরুলতা, কায়েনাত সবকিছুই উনার জন্য দোয়া করতে থাকে। গাউসুল আযম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মুহিউদ্দীন, বড় পীর হযরত আব্দুল ক্বাদীর জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, কোন চাঁদ উদিত হয়না, কোন সূর্য অস্ত যায়না আমার অনুমতি ব্যতীত। এতো গেল কায়েনাত চলার ক্ষেত্রে উদাহরণ। আর আল্লাহ পাক উনার কাছে মকবুল বান্দা হওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের ওলী আল্লাহর অনুমোদন লাভ তথা নেক দৃষ্টি লাভের প্রয়োজনীয়তা ততোধিকভাবে প্রযোজ্য।

উল্লেখ্য, যার উপর উনাদের এ নেকদৃষ্টি যতক্ষণ থাকে, তিনি ততক্ষণ বহাল তবিয়তে থাকেন। যখন তার ব্যত্যয় ঘটে তখন অনিবার্যভাবে বিচ্যুতি আসে। মূলতঃ এ ধরনের আখাছছুল খাছ ওলীআল্লাহগণ  হলেন অপরাপর ব্যক্তির ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির পথে যাচাইয়ের এক কষ্টিপাথর।

মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আমি হক্ব-নাহক্ব পার্থক্য করা ব্যতীত ছাড়বোনা। যাঁরা হক্ব তারা এই শ্রেণীর ওলীআল্লাহর মুহব্বত লাভে ধন্য হন। আর যারা নাহক্ব তারা তা থেকে বঞ্চিত হন। এজন্য এ ধরনের এক ওলীআল্লাহ বলেছিলেন, “আয় আল্লাহ পাক, তুমি যাকে অপছন্দ করো, আমার বিরোধিতায় তাকে লাগিয়ে দাও। অতঃপর তাকে হালাক করে দাও।”

হাদীছে কুদসীতে এর সমর্থনে বলা হয়েছে, “যে আমার ওলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে আমি তার প্রতি জিহাদ ঘোষণা করি।” যে কারণে আমরা দেখি সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহ্বুবে সুবহানী, গাউছুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানায় এবং আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানায় অনেক বড় বড় নামধারী, আলিম, তথাকথিত আল্লাহ পাক উনার রসূলের আশিক দাবিদার উনাদের প্রতি শেষ পর্যন্ত সুধারণা রাখতে ব্যর্থ হয়ে অতঃপর হালাকীতে পর্যবসিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ ধরনের আখাছছুল খাছ মর্যাদা-মর্তবার ওলী আল্লাহ উনাদের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সমাসীন ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রাসূল, ঢাকা রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। হযরত পীর ছাহিব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যে বেমেছাল তাজদীদ করছেন, প্রায় অবলুপ্ত সুন্নতের যে পুনরুজ্জীবন দান করছেন, মানুষের মাঝে ফয়েজ-তায়াজ্জুহর যে ব্যাপক বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন তাতে তার প্রতি সমর্থন অক্ষুন্ন রাখা তার পক্ষেই সম্ভব যে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে মকবুল। …..।” (আল বাইয়্যিনাত ৭১তম সংখ্যা, ১৩৯ পৃষ্ঠা)

এবার আপনারাই বলুন! আল বাইয়্যিনাতের উক্ত বক্তব্যের কোথাও ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি সম্পর্কিত কোন আলোচনা আছে কিনা? নাই। আর বড় পীর ছাহেব বলেছেন “চন্দ্র সূর্য উদিত হয়না ….. ।” এ বক্তব্যের সাথে “এ ধরনের আখাছছুল খাছ মর্যাদা-মর্তবা …..।” এ বক্তব্যের কোন মিল রয়েছে কি? নাই। কারণ দুটি বক্তব্য দু’স্থানের এর আগে পরে আরো বহু বক্তব্য রয়ে গেছে। যে বক্তব্যগুলো প্রমাণ করে যে, উপরের বক্তব্যের সাথে নিচের বক্তব্যের কোনই সম্পর্ক নেই। উপরের বক্তব্য দ্বারা হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মর্যাদাকে বুঝানো হয়েছে যে, যারা আখাছছুল খাছ ওলী উনাদের বিরোধিতা যদি ফাসিক ফুজ্জাররা করে তারা হালাক বা ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি হক্ব পন্থি কেউ ভুলবশতঃ বিরোধিতা করে তবে একদিন সে ভুল বুঝতে পেরে অবশ্যই বিরোধিতা থেকে ফিরে আসবে। যেমন, উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়েছে, হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথম দিকে বিরোধিতা করলেও পরবর্তীতে তওবা করে বিরোধিতা থেকে ফিরে আসেন। এ বিষয়টাই মূলতঃ লিখক উনার উক্ত বক্তব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। এর সাথে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধির কোনই সম্পর্ক নেই। অতএব, কাযযাবুদ্দীন যে, জাহিল প্রতারক ও বক্তব্য কাটছাঁটকারী তথা ইবারত চোর ও জালিয়াত তা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো।

তৃতীয়তঃ “চন্দ্র-সূর্য কারো অনুমতিতে উদিত বা অস্ত যাওয়ার সাথে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধির কোন সম্পর্ক নেই” একথা যেরূপ সত্য “অনুরূপ দাবি করাতে যে, আল্লাহ দাবি করা হয়না এটাও সত্য।” কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টিসমূহ যে ওলীগণ উনাদের হুকুম বা উনাদের আদেশ-নিষেধ মেনে থাকে তার বহু প্রমাণ রয়েছে। আর জগত পরিচালনার ক্ষমতা যে মাখলূকের হাতে রয়েছে তাও কুরআন শরীফের আয়াত ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে। কাজেই এক্ষেত্রে আল্লাহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতা ও মর্যাদার কারণে যদি চন্দ্র-সূর্য বা অন্য কিছু গাউছ, কুতুব, আবদাল বা ওলীগণ উনাদের অনুমতি তলব করে তাতে দোষের কি? এতে কি করে আল্লাহ দাবি করা হয়?  যদি এতে আল্লাহ দাবি করা হতো তবে গাউছুল আ’যম বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন দিনও একথা বলতেন না। তিনি যে একথা বলেছেন তার প্রমাণ উনার কিতাবেই রয়েছে। যদিও কাযযাবুদ্দীন জিহালতীর কারণে উক্ত বক্তব্যকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। মূলতঃ যারা বকদরে নিছাব ইলম নিয়ে লাফালাফি করে তারা সত্যকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করবে এটাই তো স্বাভাবিক।

ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত হযরত বড় পীর ছাহেবের বিখ্যাত জীবনী গ্রন্থ “বাহযাতুল আসরার”-এর সংক্ষিপ্তসার “জুবদাতুল আছার”-এর ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

شیخ ابو القاسم عمر بن مسعود بزاز اور شیخ ابو حفص عمر یکمانی رحمہ اللہ تعالی روایت کرتے ہیں کہ ایک دفعہ شیح سیدنا عبد القادر جیلانی رحمۃ اللہ علیہ بادلوں میں سیر کرتے تھے اور اپ تمام اھل مجلس کے سروں پرتھے تو اپ نے فرمایا جب تک افتاب مجھے سلام نہ کرے طلوع نھیں ھوتا ہر سال اپنے اغاز سے پھلے میرے پاس اتاھے اور مجھے اہم واقعات سے اگاہ کرتا ہے اسی طرح ماہ وہفتہ میرے پاس آ کر سلام گہتے ہیں اور اپنے دوران جو چیزیں رونما ہونے والی ہوتی ہیں مجھے اگاہ کرتے.

অর্থ: “শায়খ আবুল কাসেম উমর বিন মাসঊদ বায্যায এবং শায়খ আবূল হাফছ উমর রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বর্ণনা করেন, একবার শায়খ সাইয়্যিদ আবদুল ক্বাদির জীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি মজলিসে সমবেত লোকদের মাথার উপর মেঘমালায় পরিভ্রমণরত ছিলেন। তিনি বলেন, সূর্য যতক্ষণ আমাকে সালাম না দেয় (অর্থাৎ আমার থেকে অনুমতি না নেয়) ততক্ষণ উদিত হয়না। প্রতিটি নতুন বছর শুরুর আগে আমার কাছে আসে এবং ঘটমান গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করে। অনুরূপ মাস ও সপ্তাহ আমার কাছে এসে আমাকে সালাম দেয় এবং স্বীয় কালে ঘটমান ঘটনাবলী সম্পর্কে আমাকে অবহিত করে।”

কাযযাবুদ্দীন কি এখন বলবে যে, হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত বড়পীর ছাহেব সম্পর্কে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করে প্রশংসা করেছেন এবং নিজের বুযূর্গী জাহির করেছেন? যা হোক এ বিষয়ে পরে আলোচনা হবে এবার মূল বিষয়ে আসি। উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, শুধু সূর্য নয় মাস ও সপ্তাহও হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুমতি নিয়ে উদিত হত বা শুরু হতো।

এখন কাযযাবুদ্দীন হয়তো বলতে পারে যে, উক্ত বর্ণনায় সূর্যের কথা উল্লেখ আছে চন্দ্রের কথা উল্লেখ নেই এবং সালাম দেয়ার কথা উল্লেখ আছে, অনুমতির কথা উল্লেখ নেই। এর জবাব হলো চন্দ্র সূর্যেরই তাবে’ সূর্যের কথা বললে চন্দ্রও এর মধ্যে এসে যায়। তাছাড়া মাস উপস্থিত হওয়ার অর্থও চাঁদ উপস্থিত হওয়া। কারণ আরবী মাসগুলোর সম্পর্ক চাঁদের সাথেই। আর যদিও উক্ত বক্তব্যে সালামের কথা উল্লেখ আছে অনুমতির কথা উল্লেখ নেই। তবে সালাম অনুমতিরই একটি পদ্ধতি। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে সালাম দিয়ে অনুমতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কাজেই সালাম অনুমতিরই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ সালাম দেয়া আর অনুমতি নেয়া একই কথা।

এখন কাযযাবুদ্দীন নিশ্চয়ই বলবে যে, হযরত বড় পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ দাবি করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই তিনি কাফির। নাঊযুবিল্লাহ! মূলতঃ কাযযাবুদ্দীনের ন্যায় জাহিলদের পক্ষে এরূপ বলাটা অস্বাভাবিক নয়। সে যদি গাউছুল আ’যম বড় পীর  ছাহেব  রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারক দু’এক পৃষ্ঠাও পড়তো তবে এরূপ মন্তব্য করতোনা।

শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “যুবদাতুল আছার”-এ গাউছুল আ’যম বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে আরো উল্লেখ করেন যে-

شیخ عقیل منجی کے سامنے جناب شیخ عبد القادر کے متعلق یہ بیان کیا گیا کہ ایک نوجوان ولی اللہ بغداد میں ظاھر ہواھے تو اپنے فرمایا اسکا حکم تو اسمانوں پربھی چلتاھے وہ برا رفیع الشان نوجوان ہے.

অর্থ: “হযরত শায়খ আকীল মুনজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে যখন হযরত শায়খ আবদুল ক্বাদির জীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা উঠে এবং বলা হয় যে, বাগদাদ শরীফে একজন নওযোয়ান ওলী আত্মপ্রকাশ করেছেন, তখন তিনি বলেন যে, উনার অর্থাৎ গাউছূল আ’যম উনার হুকুমতো আসমান সমূহের উপরও চলে। তিনি উচ্চ মর্যাদাশীল মস্তবড় ওলী।” (যুবদাতুল আছার ৩৮ পৃষ্ঠা)

ابو سعید قیلوی سے قطب وقت کے اوصاف دریفت کئے گئے تو اپ نے فرمایا کہ قطب تمام امور وقت کو اپنے قبضہ میں رکھتا ہے اور لوگوں نے پوچھا پھر ایسا قطب وقت اپ کی نظروں میں کون ہے؟ اپ نے فرمایا شیخ سید عبد القادر جیلانی رحمۃ اللہ ھی ایسی شخصیت ہیں.

অর্থ: হযরত শায়খ আবূ সাঈদ কাইলুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট “কুতুবে ওয়াক্ত” –এর গুণাবলী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন, একজন “কুতুব” উনার যুগের সমস্ত কার্যাবলী স্বীয় কবজায় রাখেন এবং সৃষ্টি জগতের সমস্ত কাজের অধিকার বা ক্ষমতা উনার হাতে অপর্ণ বা ন্যস্ত করা হয়। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, “আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান যুগে এ রকম ‘কুতুব’ কে?” তিনি বললেন, “শায়খ সাইয়্যিদ আব্দুল ক্বাদির জীলানী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) হচ্ছেন এরূপ ব্যক্তি।” অর্থাৎ জগতের সমস্ত কাজ সম্পাদনের দায়িত্বই উনার হাতে ন্যস্ত ছিল বা জগতের সবকিছুই উনার অধীন ছিল। (যুবদাতুল আছার/৩৮)

এতো গেল গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্ষমতার কথা। বস্তুত অন্যান্য আউলিয়ায়ে কিরামগণের জীবনীতেও এরূপ বহু ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। যদ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মাখলূক তথা চন্দ্র, সূর্য রূহ ইত্যাদি ওলীগণের নির্দেশ পালন করে থাকে।

যেমন এ প্রসঙ্গে ‘তাযকিরাতুল আউলিয়া’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, হযরতুল আল্লামা মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি উনার পীর ছাহেব, হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকালের পূর্বে আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ইল্হাম প্রাপ্ত হয়ে রোম দেশের দিকে রওয়ানা করেন, আল্লাহ পাক প্রদত্ত নিয়ামত আল্লামা রুমী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হাদিয়া করার জন্য। পথিমধ্যে এক জঙ্গলের পার্শ্বে দেখতে পেলেন যে, এক বৃদ্ধা মহিলা সম্মুখে একটি মৃত যুবক ছেলেকে নিয়ে খুব কান্নাকাটি করছে। তখন হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি বৃদ্ধা মহিলাকে তার ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করায় মহিলা বলল, “হুযূর! এ যুবক আমার একমাত্র নাতি। আমার জীবিকা একমাত্র সেই নির্বাহ করত। সে ব্যতীত আমার কেউই নেই। যার কারণে তার মৃত্যুশোকে আমি আল্লাহর দরবারে ক্রন্দন করছি, যাতে আল্লাহ পাক আমাকে কোন ব্যবস্থা করে দেন।” বৃদ্ধা মহিলার হৃদয় বিদারক কথাগুলো শুনে হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি ব্যথিত হয়ে বললেন, “হে বালক! তুমি যিন্দা হয়ে যাও।” একথা বলার সাথে সাথে মৃত বালকটি যিন্দা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। পরে উক্ত বৃদ্ধা মহিলা ও যুবক ছেলেটি হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি উনার জন্য দোয়া করে চলে গেল। পরের দিন এ ঘটনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল যে, অমুক জঙ্গলের মধ্যে এক দরবেশের হুকুমে এক মৃত ছেলে জীবিত হয়েছে।

সেই এলাকার বাদশাহ্ এরূপ ঘটনা শুনে উক্ত দরবেশ রহ্মতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তার রাজ দরবারে উপস্থিত করার জন্য লোকজনকে নির্দেশ দিল। হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি বাদশাহ্র এরূপ ফরমান শ্রবণ করে নিজেই যথাসময় রাজ দরবারে হাজির হলেন। বাদশাহ্ হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি উনাকে চিনতে না পেরে ও উনার মর্যাদা না বুঝেই বললো যে, “হে দরবেশ ছাহেব! আপনি কি সেই ছেলেটিকে আপনার হুকুমে জীবিত করেছেন?” উত্তরে হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আমি এরূপ বলেছি।” তৎশ্রবণে বাদশাহ্র দরবারি আলিমরা বললো, “তাহলে আপনি শিরক্ করেছেন। কাজেই শরীয়তী ফায়সালা অনুযায়ী আপনার সমস্ত শরীরের চামড়া খুলে ফেলা হবে।” তখন হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ হাতেই পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল থেকে শুরু করে সমস্ত শরীরের চামড়া খুলে বাদশাহ্র সামনে রেখে চলে গেলেন। পরের দিন সকালে যখন সূর্য উঠলো, তখন উনার শরীর মুবারকে চামড়া না থাকায় সূর্যের আলোতে কষ্ট হওয়ার কারণে তিনি সূর্যকে লক্ষ্য করে বললেন, “হে সূর্য! তুমি আমাকে কষ্ট দিওনা।” একথা বলার সাথে সাথেই উদিত হওয়া সূর্য তৎক্ষনাৎ ডুবে গেল এবং চতুর্দিক অন্ধকার হয়ে গেল। এলাকার সমস্ত লোক ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গেল। চতুর্দিকে হাহাকার শব্দ হতে লাগলো। বাদশাহ্ ও তার লোকজন বুঝতে পারলো যে, নিশ্চিত সেই দরবেশ রহ্মতুল্লাহি আলাইহি বড় বুযুর্গ ও ওলীআল্লাহ হবেন এবং উনার সাথে আমাদের বেয়াদবী হওয়ার কারণেই আমরা এরূপ মুছীবতে পড়েছি। তখন বাদশাহ্ তার লোকজনসহ হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে গিয়ে উনার হাত মুবারক ধরে ক্ষমা চাইল এবং সূর্যকে আবার যথাস্থানে উঠিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলো। হযরত শামছে তাবরীজী রহ্মতুল্লাহি আলাইহি সূর্যকে বললেন, “হে সূর্য! আমি বলেছি যে, তুমি আমাকে কষ্ট দিওনা। কিন্তু তুমি কেন সমস্ত লোককে কষ্ট দিচ্ছ?” একথা বলার সাথে সাথে পুনরায় সূর্য যথাস্থানে উঠে গেল; কিন্তু উনার শরীর মুবারকে রোদের তাপ লাগলো না।” সুবহানাল্লাহ!

আরেকটি ঘটনা কাযযাবুদ্দীন নিজেই তার “ভ্রান্ত মতবাদে” উল্লেখ করেছে যেমন সে লিখেছে, “১.হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে একজন লোক দশ বছর পর্যন্ত ছিলেন। এই দশ বছরের মধ্যে উক্ত লোকটি হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে অলৌকিক কিছু ঘটতে দেখেননি। একদিন তিনি মনে মনে ভাবলেন, এই দশ বছর থাকলাম,  অলৌকিক কিছু দেখলাম না। অতএব এখানে থেকে আর কি হবে? আগামী কাল চলে যাব। সকাল বেলায় মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বল তোমার মনে কি ইচ্ছা জেগেছে?” তিনি বললেনঃ “হযরত, এতদিন আপনার কাছে থেকে কোনই কারামত দেখলাম না।” তাই আজ আমি চলে যাব বলে ইচ্ছা করেছি। হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেনঃ “তোমার কি কারামত আছে?” তিনি বললেন “হুজুর! আমি ধ্যান করে কবরের মধ্যে ঢুকে যেতে পারি এবং মুর্দার সাথে কথা বলে তার খবরাখবর জেনে আসতে পারি।” মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তুমি ধ্যান করে কবরের ভিতর ঢুকে যেয়ে তাদের অবস্থা জানবে। আর আমি এখানে বসে ডাক দিলে সেরহিন্দের সব রূহ্ হাজির হয়ে যাবে। …।” (মাজালিসে হাকীমুল উম্মাত)

এখন কাযযাবুদ্দীনের নিকট প্রশ্ন? হযরত শামস তাবরেযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্দেশে মুর্দা জিন্দা হয়ে গেল, সূর্য অসময়েই অস্ত গেল আবার উদিত হলো। আর কাযযাবুদ্দীন নিজেই স্বীকার করলো যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্দেশে সেরহিন্দের সমস্ত  রূহ উনার নিকট এসে উপস্থিত হত। এতে কি উনাদের আল্লাহ দাবি করা হয়নি? কারণ কাযযাবুদ্দীনের মতে তো এসব ক্ষমতার মালিক কেবল মহান আল্লাহ পাক! তাহলে ওলীগণ কি করে এ ক্ষমতার অধিকারী হলেন? তাছাড়া জগতের কোন বস্তু ওলীগণ উনাদের নির্দেশ পালন করলে বা ওলীগণের নিকট  অনুমতি তলব করলে যদি আল্লাহ পাক দাবি করা হয়, তবে বলতে  হবে যে, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনিও আল্লাহ দাবি করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! কারণ মহান আল্লাহ পাক উনাকে সমস্ত পৃথিবীর কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন। সবকিছুই উনার অনুগত ছিল। সবকিছুই উনার নির্দেশ পালন করতো এবং উনার অনুমতি ও ইচ্ছাক্রমেই পরিচালিত হত। একথা তো সবারই জানা। কাযযাবুদ্দীন এ ক্ষেত্রে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনাকে আল্লাহ পাক দাবি করার অপরাধে কাফির ফতওয়া দিবে কি? যদি এদের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক দাবি করা না হয়, তবে গাউছূল আ’যম উনার ক্ষেত্রে কেন হবে?

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, “সূর্য আমার অনুমতি ছাড়া উদিত হয়না” একথার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক দাবি করা হয়না। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা ও তার মুরীদানগণ সত্যিকার অর্থে ক্বাইয়্যূম উপাধি ব্যবহার করেন কাযযাবুদ্দীনের এদাবি সম্পূর্ণই মিথ্যা।

উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা যে বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়েছে তাহলো- (১) ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি মহান আল্লাহ পাক ছাড়া অন্যের  ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ এটা মহান আল্লাহ পাক উনার ছিফত। আর  মহান আল্লাহ পাক উনার যে কোন ছিফতই বান্দার জন্যে  অর্জন  করা সম্ভব।

(২) যাদের মাধ্যমে দুনিয়া বা যামানা কায়িম থাকে তারাই হচ্ছেন ক্বাইয়্যূম। এ অর্থে মানুষের ক্ষেত্রেও ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি প্রযোজ্য।

(৩) আমভাবে ক্বাইয়্যূম উপাধি ব্যবহারকে কুফরী বলার অর্থ হলো হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানীসহ যারাই ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করেছেন, উনাদের সকলকে কাফির ফতওয়া দেয়া। যা মূলতঃ নিজেরই কাফির হওয়ার  কারণ।

(৪) রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি সত্যিকার অর্থে ‘ক্বাইয়্যূম’ উপাধি ব্যবহার করেন কাযযাবুদ্দীনের এদাবি সম্পূর্ণই মিথ্যা বানোয়াট ও মনগড়া।

(৫) ওলীগণের হাতেও জগত পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত আছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি ওলীগণ ও ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে জগত পরিচালনা করে থাকেন। সুতরাং কাযযাবুদ্দীন যে বলেছে, “কোন মাখলূকের হাতে জগত পরিচালনার ক্ষমতা নেই,” তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী।….” (কাযযাবগংদের মিথ্যাচারিতা জবাব ১ম খণ্ড, ৮৪-১০৪) পৃষ্ঠা)

তাছাড়া তারা যে, যাকে তাকে যখন তখন গোমরাহ ও বাতিল বলে ফতওয়াবাজি করে তারা কি নিজেদের তলায় কখনো হাত দিয়ে দেখেছে? তারা নিজেরাই তো চরম পর্যায়ের গোমরাহ ও বাতিল ফিরক্বাহ। কারণ তাদের অধিকাংশ আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ। যেমন

তাদের কিছু কুফরী আক্বীদা ও হারাম-নাজায়িয, বিদয়াত ও শরীয়ত বিরোধী আমল

(১) আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন। নাঊযুবিল্লাহ! (ফতওয়ায়ে রশিদিয়া ১ম খণ্ড: পৃষ্ঠা-১৯, রশিদ আহমদ গাংগুহী, তালিফাত রশিদিয়া, কিতাবুল আক্বাঈদ অধ্যায়, পৃষ্ঠা-৯৮, খলীল আহমদ আম্বেঢী, তাজকিরাতুল খলীল, পৃষ্ঠা ১৩৫, মেহমুদ হাসান, আল-জিহাদুল মুগিল, পৃষ্ঠা ৪১)

(২) আল্লাহ তাঁর বান্দা ভবিষ্যতে কি করবে তা আগে থেকে বলতে পারেন না। বান্দা কর্মসম্পাদনের পর আল্লাহ তা জানতে পারেন। নাঊযুবিল্লাহ! (হুসাইন আলী, তাফসীরে বুঘাতুল হাইরান, পৃষ্ঠা ১৫৭-১৫৮)

৩. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জ্ঞানের চেয়ে শয়তান ও হযরত আযরাঈল আলাইহিস্ সালাম উনার জ্ঞান বেশি। নাঊযুবিল্লাহ! (খলীল আহমদ আম্বেঢী, বারাহীন-ই-কাতেয়া, পৃষ্ঠা-৫১)

(৪) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভাগ্য সম্পর্কে জানতেন না। এমনকি দেয়ালের ওপাশ সম্পর্কেও না। নাঊযুবিল্লাহ! (খলীল আহমদ আম্বেঢী, বারাহীন-ই-কাতেয়া, পৃষ্ঠা-৫১)

(৫) নবীর (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনা) যদি কিছু ইলমে গায়েব থেকেও থাকে তাহলে এতে তাঁর বিশেষত্ব কী? এমন ইলমে গায়েব তো সকল চতুষ্পদ জন্তু, পাগল ও শিশুরও আছে। নাঊযুবিল্লাহ! (আশরাফ আলী থানবী, হিফজুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৭)

(৬) ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন বিশেষ লক্বব নয়। তাঁর উম্মতও ‘রহমতুল্লিল আলামীন’ হতে পারে। নাঊযুবিল্লাহ! (রশিদ আহমদ গাংগুহী, ফতওয়া রশিদিয়া ২ম খণ্ড: পৃষ্ঠা-১২)

(৭) সাধারণ মানুষের কাছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাতামুন নাবিয়্যীন হলেও বুযূর্গ ব্যক্তির কাছে নয়। নাঊযুবিল্লাহ! (কাশেম নানুতুবী, তাহযীরুন্নাছ, পৃষ্ঠা-৩)

(৮) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগে বা সর্বশেষে আসার মধ্যে কোন ফযীলত নেই। ফযীলত হলো মূল নবী হওয়ার মধ্যে। তাঁর পরে যদি এক হাজার নবীরও আগমন মেনে নেয়া হয় তাতেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খতমে নুবুয়তের কোন রূপ বেশ-কম হবে না। নাঊযুবিল্লাহ! (কাশেম নানুতুবী, তাহযীরুন্নাছ, পৃষ্ঠা-২৫)

(৯) হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেওবন্দের উলামাদের কাছ থেকে ঊর্দু ভাষা শিখেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! (খলীল আহমদ আম্বেঢী,

বারাহীন-ই-কাতেয়া, পৃষ্ঠা ২৬)

(১০) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মতই সাধারণ মানুষ। নাউযুবিল্লাহ!

(১১) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মান বড় ভাইয়ের মতো। নাউযুবিল্লাহ!

এছাড়াও আরো বহু কুফরী আক্বীদা তাদের মধ্যে রয়েছে।

আর আমলের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসংখ্য হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াত আমল। যেমন ১. বেপর্দা মহিলা নিয়ে শোকরানা মাহফিল করা এবং গাইরে মাহরাম বেগানা মহিলার সাথে করমর্দন করা। ২. ছবি তোলা, ভিডিও করা। ৩. বেপর্দা হওয়া, ৪. হরতাল করা, ৫. লংমার্চ করা, ৬. কুশপুত্তলিকা দাহ করা, ৭. হাঙ্গার স্ট্রাইক করা, ৮. গণতন্ত্র, ভোট-নির্বাচন করা, ৯. পদপ্রার্থী হওয়া, ১০. নারী নেতৃত্ব মানা, ১১. নববর্ষ উদযাপন করা, ১২. খতমে বুখারী মাহফিল করা, ১৩. ছয় উছ’লী তাবলীগ করা, ১৪. লাল রুমাল পরিধান করা, ১৫. কোণা ফাড়া কোর্তা পরিধান করা, ১৬. পাঁচ কল্লি, কিস্তি ও জালী টুপি পরিধান করা, ১৭. কোর্ট পরিধান করা। এছাড়া আরো বহু হারাম নাজায়িয ও বিদয়াত আমল তাদের মধ্যে রয়েছে। এরপরও কি তারা বলবে যে, তারা গোমরাহ ও বাতিল না?

কাজেই, রাজারবাগ শরীফ উনার অনুসারীদের প্রকাশিত আক্বীদা ও আমলসমূহ যে বিদআত ও শরীয়ত বিরোধী তার প্রমাণ পেশ করতে হবে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র  ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল দিয়ে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন-

هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ

অর্থ: সত্যবাদী হলে দলীল পেশ করো। (পবিত্র সূরা নমল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)

অর্থাৎ, কারো বক্তব্য, লিখনী, ঈমান, আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব সঠিক কিনা তা প্রমাণের জন্য দলীল পেশ করতে হবে। দলীল প্রমাণ ব্যতীত কারো মনগড়া কোন কথা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

অতএব, রাজারবাগ শরীফ উনার অনুসারীদের প্রকাশিত কোন আক্বীদা ও আমলের ব্যাপারে তারা যখন কোনরূপ দলীল পেশ করতে পারেনি তখন সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তারা নিজেরাই চরম মিথ্যাবাদী, বিদআতী ও গোমরাহ ফিরক্বাহ হিসেবে প্রমাণিত ও সাব্যস্ত হয়েছে। আর এরূপ গোমরাহ ও বাতিল ফিরকার লোকদের দ্বারা গঠিত সাব কমিটির বক্তব্যের উপর কি করে আস্থা রাখা যায়। চাঁদের ব্যাপারে তাদের স্বাক্ষ্য ও  বক্তব্য কি করে গ্রহনযোগ্য হতে পারে? তা জনগণকে ফিকির করতে হবে।

৯নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“পবিত্র শা’বান মাসের চাঁদ বিষয়ে

ইফার ভ্রান্তি”

ফাউন্ডেশন কর্তৃক শা’বান শরীফ মাসের চাঁদের মিথ্যা সংবাদ খাগড়াছড়ি পাহাড়ী এলাকায় ডিউটিতে নিয়োজিত বিজিবির কয়েকজন সদস্যের কাছে পৌছলে উনারা তখন বলেন, আমরাও তো ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছি। আর উনারা চাঁদ দেখেছেন বলে উনাদেরকে ফাউন্ডেশনের সামনে এসে সাক্ষী পেশ করতে হবে কেন? উনারা চাঁদ দেখতে পারেন। কিন্তু চাঁদের সংবাদ পৌঁছানোর দায়িত্ব তো উনাদের না। বরং ফাউন্ডেশন যখন শুনেছে উনারা চাঁদ দেখেছেন তখন ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব ছিল উনাদের সাথে যোগাযোগ করে সংবাদ নেয়া। এবং চাঁদের সঠিক তারিখ ঘোষণা করা। এটা ফাউন্ডেশনেরই ভুল। বিজিবি সদস্যদের নয়।

কাজেই, ১৪৪০ হিজরী সনের শা’বান মাসের চাঁদ দেখা গেছে দেশের একাধিক জেলা ও এলাকা থেকে। তা সত্বেও ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাঁদ দেখা কমিটি চাঁদ দেখতে পাওয়ার সংবাদ ও সাক্ষী পাওয়ার পরও মনগড়াভাবে চাঁদের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে চরম অন্যায় করেছে। এ অন্যায় থেকে তাদেরকে খালিছভাবে তওবা ইস্তিগফার করতে হবে। অন্যথায় তাদেরকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

১০নং প্রশ্নোত্তরের খণ্ডনমূলক জাওয়াব:

“পবিত্র শবে বরাত উনার আমল সম্পর্কে”

পবিত্র শবে বরাতের ইবাদত ব্যক্তিগতভাবেই করার নিয়ম। কিন্তু যখন তা পরিবারের সকল ব্যক্তি, মহল্লা বা গ্রামের সকল ব্যক্তি এবং জেলা, বিভাগ ও রাজধানীসহ পুরা দেশের সকল ব্যক্তি পালন করেন তখন উক্ত রাত সম্মিলিত ইবাদত পালনের রাতে পরিণত হয়ে যায়। ব্যক্তিগত ইবাদত যে কোন রাতেই করা যায়। কিন্তু শবে বরাতের ইবাদত যে কোন রাতে করলে হবে না। তা করতে হবে শধুমাত্র ১৪ই শা’বান দিবাগত রাতে। উক্ত রাত ব্যতীত বছরের অন্য কোন রাতে শবে বরাত পালন করলে তা গ্রহনযোগ্য হবে না এবং ফযীলতও পাওয়া যাবে না। যারা চাঁদ দেখেছেন উনাদেরকে অবশ্যই চাঁদ দেখা অনুযায়ী ১৪ই তারিখ দিবাগত রাত শবে বরাত পালন করতে হবে। কর্তৃপক্ষের ঘোষিত তারিখে দ্বিতীয়বার শবে বরাত পালন করা মোটেও প্রয়োজন নেই। আর যারা চাঁদ দেখতে পান, উনারা চাঁদ দেখার সংবাদ সকলকে জানাতে পারেন এমনকি সম্ভব হলে সরকারের যে চাঁদ দেখা কমিটি রয়েছে তাদেরকেও জানাতে পারেন। কারণ তাদেরকে জানালে দেশের সমস্ত মানুষই চাঁদের সঠিক তারিখ অনুযায়ী শবে বরাত পালন করতে সক্ষম হবে। নিজে আমল করা এবং ক্ষেত্রভেদে নিজ পরিবার, এলাকা ও দেশের সকলকে আমল করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা সম্মানিত শরীয়ত উনারই নির্দেশ মুবারক।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا

অর্থ: তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারের সকলকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। (পবিত্র সূরা তাহরীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

বলার অপেক্ষা রাখে না, শবে বরাতের রাত হচ্ছে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের বিশেষ রাত।

তাই জাহান্নামী বাতিল ফিরক্বার গুমরাহ লোকেরাই শবে বরাতকে স্বীকার করে না। এবং তারাই মানুষকে আমল ও ফযীলত থেকে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করে ও বিভ্রান্ত করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মশহূর কিতাব ‘মিশকাতুল মাছাবীহ’ নামক কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তাবিয়ী হযরত যিয়াদ বিন হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, আপনি কি জানেন কারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ক্ষতি করবে? তিনি বললেন, আমার তা জানা নেই। তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই বললেন, তিন শ্রেণীর লোকের দ্বারা দ্বীন ইসলাম উনার ক্ষতি হয়ে থাকে। (এক) উলামায়ে ‘সূ’ (দুই) মুনাফিক (তিন) গোমরা বা পথভ্রষ্ট শাসক।

এর বাস্তব প্রমাণ দেখা গেল পরবর্তীও ১৪০০ হিজরী সনের রমাদ্বান শরীফ মাসের শেষে। ২৯শে রমাদ্বান শরীফ শেষে দেশের উত্তরাঞ্চলের একাধিক জেলা থেকে শত শত লোক চাঁদ দেখেছেন। সে সংবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাঁদ দেখা কমিটিকে জানানো সত্বেও তারা চাঁদ দেখা যায়নি বলে সংবাদ পরিবেশন করে। চাঁদের রাতে মানুষদেরকে তারাবীহ নামায পড়ায়। নাউযুবিল্লাহ!

কিন্তু যামানার মহান মুজাদ্দিদ রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত আন্তর্জাতিক রু’ইয়াতে হিলাল মজলিসের কারণেই পুনরায় ২ ঘণ্টা পর তারা ঘোষণা দিতে বাধ্য হয় যে, ২৯শে রমাদ্বান শরীফ দিবাগত সন্ধ্যায় ঈদুল ফিতরের চাঁদ অর্থাৎ শাওওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই তাদের পূর্বের মনগড়া ও মিথ্যা ঘোষণার কারণে পবিত্র ঈদের রাতে মুসলমানগণ ঈদের দিন রোযা রাখার নিমিত্তে তারাবীহ নামায পড়ে ফেলেছেন। নাউযুবিল্লাহ! সুতরাং সমঝদারদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট কে হক্ব আর কে না হক্ব তা জানা ও বুঝার জন্য। সমাপ্ত।

-মুফতী মুহম্মদ আবুল হাসান

শোক সংবাদ: সাইয়্যিদাতুন নিসা, সুলতানাতুল আরিফীন, কুতুবুল ইরশাদ, কুতুবুল আক্বতাব, আওলাদে রসূল মুহতারামা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন

আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী আলাইহিস সালাম তিনি নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী উনার প্রতি অপবাদকারী যালিম গং নিঃসন্দেহে গুমরাহ, বাতিল, লা’নতপ্রাপ্ত, জাহান্নামী ও সুন্নী নামের কলঙ্ক রেজাখানীরা আয়নায় নিজেদের কুৎসিত চেহারা দেখে নিক ॥ ইসলামী শরীয়ার আলোকে একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা-১২

আহলান-সাহলান! সুমহান পহেলা শাওওয়াল!! মুবারক হো ঈদে বিলাদতে তাহিরাহ, তাইয়িবাহ, মাহবুবাহ, ফাক্বীহা, মাশুক্বাহ, তাওশিয়াহ, তাকরীমাহ, তাক্বিয়্যাহ, তাযকীয়্যাহ, নূরে হাবীবা, লখতে জিগারে মুজাদ্দিদে আ’যম, কুতুবুল আলম, উম্মু আবিহা, ক্বায়িম-মাক্বামে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতুন নিসা, আওলাদে রসূল, হযরত শাহযাদী উলা ক্বিবলা আলাইহাস সালাম

বিশেষ প্রবন্ধ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারকই মুহব্বত-মা’রিফাত, কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারকসহ সমস্ত কিছুর মূল, কাজেই যে যতটুকু উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করতে পারবে, সে ততটুকু কামিয়াবী হাছিল করবে

বিশেষ কলাম: পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান মশহূর পবিত্র শবে বরাত এবং উনার আমলসমূহ বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হওয়া প্রসঙ্গে-পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফ একদম ছহীহ- এ বিষয়ে সকল আসমাউর রিজাল বিশারদগণ একমত