বিশেষ প্রবন্ধ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারকই মুহব্বত-মা’রিফাত, কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারকসহ সমস্ত কিছুর মূল, কাজেই যে যতটুকু উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করতে পারবে, সে ততটুকু কামিয়াবী হাছিল করবে

সংখ্যা: ২৫৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّا اَعْطَيْنٰكَ الْكَوْثَرَ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সম্মানিত কাউছার মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা কাওছার শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ১)

এই সম্মানিত কাওছার মুবারক উনার লক্ষ-কোটি ব্যাখ্যা মুবারক। উনাদের মধ্যে একখানা ব্যাখ্যা মুবারক হচ্ছেন, ‘খইরে কাছীর’ তথা সমস্ত প্রকার ভালাই। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত প্রকার ভালাই তথা সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় মুবারকগুলো হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অপরদিকে উনার সাথে যে বিষয় মুবারকগুলো সম্পৃক্ত হয়েছেন, সে বিষয় মুবারকগুলো সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ!

যার কারণে এই ব্যাপারে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে-

اِنَّ التُّرْبَةَ الَّتِىْ اِتَّصَلَتْ اِلـى اَعْظُمِ النَّبِـىِّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَفْضَلُ مِنَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاءِ حَتَّى الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.

অর্থ: ‘নিশ্চয়ই এক মুহূর্তের তরেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিসম মুবারক উনার স্পর্শ মুবারক-এ এসেছেন, যেই মাটি, ধূলি-বালি (পদার্থ-বস্তু যা কিছুই হোক না কেন) উনাদের ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা আসমান-যমীন; এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি।” সুবহানাল্লাহ!

অন্য ইজমা মুবারক-এ বলা হয়েছে-

فَاِنَّهٗ اَفْضَلُ مُطْلَقًا مِّنَ الْكَعْبَةِ وَالْـكُـرْسِىِّحَتَّى الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.

অর্থ: ‘নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক-এ যা কিছু এসেছেন তা অবশ্যই সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুরসী শরীফ; এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ।’ সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ এক মুহূর্তের তরেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক-এ যা কিছু এসেছেন তা আসমান-যমীন, সম্মানিত কা’বা শরীফ, সম্মানিত কুরসী শরীফ, মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে; এমনকি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটিগুণ বেশি পবিত্র, ফযীলতপ্রাপ্ত, সম্মানিত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ।’ সুবহানাল্লাহ!

সেই বিষয়টি সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রজনীতে স্পষ্ট হয়ে গেছে। যেটা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا اُسْرِىَ بِهٖ لَيْلَةَ الْمِعْرَاجِ اِلَى السَّمٰوَاتِ الْعُلـى وَوَصَلَ اِلَى الْعَرْشِ الْمُعَلّى اَرَادَ خَلْعَ نَعْلَيْهِ اَخْذًا مِّـنْ قَوْلِهٖ تَعَالـى  لِسَيِّدِنَا حَضْرَتْ مُوسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ حِيْنَ كَلَّمَهٗ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى. فَنُوْدِىَ مِنَ الْعَـلِـىِّ الْاَعْلـى يَا حَضْرَتْ مُـحَمَّدُ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَـخْلَعْ نَعْلَيْكَ فَاِنَّ الْعَرْشَ يَتَشَرَّفُ بِقُدُوْمِكَ مُتَنَعِّـلًا وَّيَفْتَخِرُ عَلـى غَيْرِهٖ  مُتَـبَـرِّكًـا فَصَعِدَ النَّبِىُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلَى الْعَرْشِ وَفِىْ قَدَمَيْهِ النَّعْلَانِ وَحَصَلَ لَهٗ بِذٰلِكَ عِزٌّ وَّشَأْنٌ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রাতে সুউচ্চ সপ্ত আসমান অতিক্রম করে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার নিকটবর্তী হলেন, তখন তিনি উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেয়ার চিন্তা মুবারক করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ওই বাণী মুবারক ফিকির করে, যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি (যখন সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তূর পাহাড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলার জন্য তাশরীফ মুবারক রাখবেন, তখন) হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন,

فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى.

‘আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ মুবারক খুলুন। কেননা আপনি সম্মানিত (তূর পাহাড়ের) পবিত্র তুয়া উপত্যকায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। (সেখানে আমার সম্মানিত আরশে আযীম উনার ৭০ হাজার ভাগের এক ভাগ সম্মানিত নূর মুবারক পতিত হয়েছে। যার কারণে সেই স্থানটি সম্মানিত ও পবিত্র হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ! তাই আপনি সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে আসুন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই বিষয়টি ফিকির করে উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলার চিন্তা করেছিলেন।) তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ওহী মুবারক করলেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলবেন না। অর্থাৎ আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফসহ আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করুন। কেননা আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের পরশে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক উনাদের স্পর্শ মুবারক-এ ধন্য হবেন, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহ! (শুধু তাই নয়,) আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শ মুবারক পাওয়ার কারণে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক লাভ করে বরকতময় হয়ে আরো পবিত্রতা হাছিল করবেন এবং অন্য সবার উপর ফখর করবেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত না’লাইন শরীফ পরিধান মুবারক করা অবস্থাতেই সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন। আর সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ মুবারক উনাদের স্পর্শ মুবারক লাভ করে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে ইয্যত-সম্মান, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করলেন।” সুবাহানাল্লাহ! (ফাতহুল মুত‘য়াল ফী মাদহি খইরিন নি‘য়াল শরীফ)

দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ই’জাযুল কুরআন শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ্য করেন-

وَمَوْلَانَا مُـحَمَّدٌ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمَّا زُجَّ بِهٖ فِىْ عَالَـمِ الْعِزَّةِ اَرَادَ اَنْ يـَّخْلَعَ نَعْلَيْهِ فَاِذَا النِّـدَاءُ يَا مـُحَمَّدُ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَـخْلَعْ نَعْلَيْكَ. فَقَالَ يَا رَبِّ سَــمِعْتُكَ تَقُوْلُ لِـمُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ .فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَئِنْ اَمَرْتُ حَضْرَتْ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ بِنَزْعِ نَعْلَيْهِ عَلـى جَبَلِ الطُّوْرِ فَقَدْ اَبَـحْنَا لَكَ اَنْ تَطَأَ بِنَعْلَيْكَ عَلـى بَسَاطِ النُّوْرِ لِاَنَّكَ الْمُكَرَّمُ عِنْدَنَا وَالْعَزِيْزُ لَدَيْنَا.

অর্থ: “আর আমাদের যিনি মাওলা, নবী-রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন (সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রজনীতে) সম্মানিত ইয্যত উনার জগতে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন তথা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার নিকটবর্তী হলেন, তখন তিনি উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলার চিন্তা মুবারক করলেন। এমতাস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, দয়া করে আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলবেন না। অর্থাৎ আপনি সম্মানিত না’লাইন শরীফসহ আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করুন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আয় বারে ইলাহী, আমি তো শুনেছি, আমি জানি, আপনি জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন-

فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ

অর্থ: “(আপনি সম্মানিত তূর পাহাড়ে তাশরীফ মুবারক রাখতে যাচ্ছেন। তাই) আপনি আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে আসুন।”

অত:পর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যদিও আমি হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে সম্মানিত তূর পাহাড়ে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ মুবারক প্রদান করেছি। কিন্তু আমি আপনার ক্ষেত্রে এটাই পছন্দ করি যে, আপনি যেন আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফসহ সম্মানিত নূর মুবারক উনার প্রশস্ত ময়দান মুবারক-এ তথা নূরে নূরময় আমার সম্মানিত নূরানী আরশে আযীম মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা আপনি আমার নিকট সবচেয়ে সম্মানিত এবং সর্বাধিক প্রিয়, মাহবূব। সুবহানাল্লাহ! (আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের পরশে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে ধন্য হবেন, শান-মান, ফাযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করবেন। শুধু তাই নয়, আমার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আপনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শ মুবারক লাভ করে, উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে বরকতময় হয়ে আরো পবিত্রতা হাছিল করবেন এবং অন্য সবার উপর ফখর করবেন।)” সুবহানাল্লাহ! (ই’জাযুল কুরআন শরীফ ৩/৬৩)

এখন বলার বিষয় হচ্ছে, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন একজন জলীলুল ক্বদর নবী এবং রসূল। সুবহানাল্লাহ! যদি কিতাব হিসেবে ধরা হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টি আলাদা। এছাড়া অন্যান্য সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন প্রথম। সুবহানাল্লাহ! আর উনাকেই তূর পাহাড়ে যেতে হয়েছিলো উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ খুলে। কেননা সেখানে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার সত্তর হাজার ভাগের এক ভাগ নূর মুবারক যাহির হয়েছিলো। অন্য দিকে, সাধারণ মাটি, ধূলি-বালি যার কোনো ক্বদর নেই; কিন্তু নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত স্পর্শ মুবারক-এ আসার কারণে উক্ত মাটি, ধূলি-বালির মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা আসমান-যমীন, কা’বা শরীফ, কুরসী শরীফ, এমনকি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক থেকেও লক্ষ-কোটি গুণ বেশি হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক আরো পবিত্রতা হাছিল করেছেন, সম্মানিত ও বরকতময় হয়েছেন এবং সকলের উপর ফখর করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

এখানে আরো একটি বিষয় ফিকিরের যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি স্পর্শ মুবারক পেয়েছেন উনার সম্মানিত না’লাইন শরীফ। আর সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের স্পর্শ মুবারক পেয়েছে ধূলি-বালি। ফলে ধূলি-বালি এতো পবিত্রতা, ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাছিল করলেন যে, সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রজনীতে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার আরশে আযীম মুবারক সেই ধূলি-বালি মুবারক লাভ করার জন্য বেক্বারর-পেরেশান হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, সম্মানিত না’লাইন শরীফ উনাদের ধূলি-বালি মুবারক পেয়ে স্বয়ং আরশে আযীম মুবারক ধন্য হলেন, মর্যাদা-মর্তবা হাছিল করলেন, সম্মানিত হলেন, বরকতময় হলেন এবং আরো পবিত্রতা হাছিল করলেন; এমনকি এই কারণে অন্য সকলের উপর ফখর করলেন। সুবহানাল্লাহ!

যদি তাই হয়, তাহলে এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারকই হচ্ছেন সমস্ত কিছুর মূল। সুতরাং যে যতটুকু উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক হাছিল করতে পারবে, সে ততটুকু কামিয়াবী হাছিল করবে। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক লাভ করার কারণেই বণী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি দুই শত বছর মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করার পরেও একবার মাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক-এ বুছা দেয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জিন্দেগীর সমস্ত গুণাহখাতা মাফ করে দিয়ে তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দিয়ে জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন, জান্নাতে সত্তর জন হুরের সাথে বিবাহ দিয়েছেন; শুধু তাই নয়, জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপর তার দাফন-কাফন করা এবং জানাযার নামায পড়া ফরয করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

যাঁরা আক্বলমান্দ উনাদের জন্য আর কোনো দলীলের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা সৃষ্টির সর্বনিকৃষ্ট জীব ইহুদী, খ্রিস্টান, কাফির, মুশরিক, মুনাফিক্ব, উলামায়ে সূ’, ওহাবী, খারিজী, দেওবন্দী, লা-মাযহাবী ও বদ আক্বীদাধারী, বদ মাযহাবী তাদেরকে আরো শত-সহস্র, লক্ষ-কোটি দলীল দিলেও তারা কস্মিনকালেও বুঝবে না। তারা হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু তথা শূকর, কুকুরের চেয়েও অত্যধিক নিকৃষ্ট। না‘ঊযুবিল্লাহ!

এদের ব্যাপারেই যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-

وَلَقَدْ ذَرَاْنَا لِـجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْـجِـنِّ وَالْاِنْسِ لَـهُمْ قُلُوْبٌ لَّا يَفْقَهُوْنَ بِـهَا وَلَـهُمْ اَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُوْنَ بِـهَا وَلَـهُمْ اٰذَانٌ لَّا يَسْمَعُوْنَ بِـهَا اُولـئِكَ كَالْاَنْعَامِ بَلْ هُمْ اَضَلُّ اُولٰـئِكَ هُمُ الْغٰفِلُوْنَ.

অর্থ: “আর জিন ও মানুষের মাঝে এমন অনেক জিন ও মানুষ রয়েছে, যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ তারা তাদের বদ আমলের দ্বারা তাদের উপর জাহান্নাম অবধারিত করে নিয়েছে। তাদের অন্তর রয়েছে; কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের চক্ষু রয়েছে; কিন্তু তারা দেখতে পায় না। তাদের কান রয়েছে; কিন্তু তারা শুনতে পায় না। তারা হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়; বরং তার চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট। মূলত তারা হচ্ছে গাফিল।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আ’রাফ শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১৭৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার হাক্বীক্বী তায়াল্লুক্ব-নিসবত, কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি, মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক হাছিল করার মাধ্যম দিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী তায়াল্লুক্ব-নিসবত, কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি, মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক হাছিল করার মাধ্যম দিয়ে তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

-আল্লামা মুহম্মদ আল আমীন।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকলের অন্তরের অন্তস্থলের খবরও রাখেন এবং মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী মাখলুক্বাতের বিভিন্ন হাজত পূরণ করেন

الْحَمْدُ لِلّـهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

অর্থ: সমস্ত প্রশংসা রব্বুল আলামীন তথা সারা আলমের রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। (পবিত্র সুরা ফাতিহা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-১)

অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই নিজেকে রব্বুল আলামীন হিসেবে ঘোষণা মুবারক করেছেন। আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ

অর্থ: আমি আপনাকে রহমতুল্লিল আলামীন তথা সারা আলমের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে প্রেরণ করেছি। (পবিত্র সুরা আম্বিয়া শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-১০৭)

অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই নিজেকে রব্বুল আলামীন হিসেবে ঘোষণা মুবারক করেছেন। আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রহমতুল্লিল আলামীন হিসেবে ঘোষণা মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াত যেমন বিস্তৃত, তেমনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রহমত মুবারক হিসেবেও বিস্তৃত। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

رَحْمَتِى وَسِعَتْ كُلَّ شَىْءٍ

অর্থ: আমার রহমত মুবারক সমস্ত কিছুকে বেষ্টন করে আছেন। (পবিত্র সুরা আ’রাফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-১৫৬)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রহমতুল্লিল আলামীন। তিনি রহমতুল্লিল আলামীন হিসেবে সারা কায়িনাতকে বেষ্টন করে আছেন। যিনি কায়িনাতকে বেষ্টন করে আছেন, উনার নিকট সৃষ্টি জগত অতি মামুলী বিষয়। আর এ জন্যই বলা হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবল ছাহিবে ইলমে গইব ও হাযির-নাযিরই নন। বরং তিনি সকলের অন্তরের অন্তস্থলের খবরও রাখেন এবং মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী মাখলুক্বাতের বিভিন্ন হাজতও পূরণ করেন। সুবহানাল্লাহ! এ বিষয়ে অসংখ্য নক্বলী দলীল ও আক্বলী দলীল রয়েছে। অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য কিতাবসমূহে এ বিষয়ে অনেক ঘটনা মুবারক উল্লেখ রয়েছে।

দ্বাদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, ইমামুল হিন্দ, হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আদদুররুছ ছামীন ফী মুবাশ্শারাতিন নাবিয়্যিল আমীন’ কিতাবে উল্লেখ করেন-

اخبرنى والدى انه كان مريضا فراى النبى صلى الله عليه و سلم فى الـمنام فقال كيف حالك يابنى ثم بشره بالشفاء و اعطاه شعرتين من شعور لحيته فتعافى من المرض فى الحال و بقيت الشعرتان عنده فى اليقظيه فاعطانى احدهما فهى عندى

অর্থ:  আমার মুহতারাম ওয়ালিদ (হযরত আব্দুর রহীম মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি) তিনি আমার নিকট বর্ণনা করেন, একদা তিনি মারিদ্বী শানে সময় অতিবাহিত করেন। তখন তিনি স্বপ্নে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার মুবারক লাভ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হে বৎস! আপনার কি অবস্থা? অতপর, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সুস্থতার ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নূরুন নিয়ামত তথা দাড়ি মুবারক হতে দু’খানা হাদিয়া মুবারক করেন। (উনার ঘুম ভেঙ্গে যায়) তিনি তৎক্ষণাৎ সুস্থতা অনুভব করেন। ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে হাদিয়াকৃত নূরুন নিয়ামত তথা দাড়ি মুবারক দু’খানা নিজের হিফাযতে দেখতে পান। (হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) আমার মুহতারাম ওয়ালিদ আমাকে নূরুন নিয়ামত মুবারক হতে একখানা হাদিয়া করেন। যা আমার নিকট স্বযতেœ সংরক্ষিত আছে। সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত। তিনি উম্মতের যাবতীয় সমস্যা সমাধান তো করেন, এমনকি উম্মতকে বিভিন্ন নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেন। সুবহানাল্লাহ!

নক্শবন্দিয়া ত্বরীক্বা উনার বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত খাজা উবাইদুল্লাহ আহরার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট খলীফা, অসংখ্য কিতাব রচয়িতা, ফার্সী কবি হযরত নূরুদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ জামি খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি অনেকবার পবিত্র হজ্ব সম্পাদন করেন। ৮৭৭ হিজরীতেও পবিত্র হজ্বে গমন করেন। যথা নিয়মে হজ্বের যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করেন। পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থানকালে তিনি ফার্সী ভাষায় একখানা না’ত শরীফ রচনা করেন। যা পবিত্র রওজা শরীফে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে সরাসরি পাঠ করার ইচ্ছা অন্তরে দৃঢ়ভাবে পোষণ করেন।

হাবীবুল্লাহ ইশক্বে দিওয়ানা হয়ে হযরত নূরুদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ জামি খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র মদীনা শরীফ পানে ছুটেন। প্রথম মনযিলে তিনি যখন রাত্রি যাপন করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই এলাকার প্রশাসককে স্বপ্নে বলেন, “আব্দুর রহমান ইবনে জামিকে পবিত্র মদীনা শরীফে আসতে বারণ করো।” মুবারক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসক হযরত নূরুদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ জামি খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফে যেতে নিষেধ করেন। মুবারক নির্দেশনা হাবীবুল্লাহ ইশকে বিভোর অন্তর বিচলিত হয়ে পড়েন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে কেন পবিত্র মদীনা শরীফে যেতে নিষেধ করলেন? জুদায়ির আশঙ্কা আর ইশক্বি জোশ নিয়ে তিনি এবার গোপনে রওয়ানা হন। কিন্তু পরবর্তী মনযিলে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আবারো স্থানীয় প্রশাসকের মাধ্যমে উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফে যেতে নিষেধ করা হয়। এবার হযরত নূরুদ্দীন আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ জামি খোরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তিনি বেশ চিন্তিত-পেরেশান হয়ে পড়লেন। এবার তিনি স্বাভাবিক রাস্তা ছেড়ে দুর্গম পথকে বেছে নিলেন। যে কোনভাবে পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে সালাম পেশ করতেই হবে এবং কবিতা পাঠও করতে হবে এবং গোস্তাখি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কিন্তু আবারো প্রশাসককে বলা হলো, ‘আব্দুর রহমান ইবনে জামি পবিত্র মদীনা শরীফে আসছেন। যে কোনভাবে হোক উনাকে এখানে আসতে দেওয়া যাবেনা।’ মুবারক নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক খোঁজাখোঁজি করে উনাকে বের করা হলো। প্রশাসক এবার কিছুটা কঠোরতা প্রকাশ করলো। উনাকে বন্দি করা হলো।

এবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই প্রশাসককে আবারো সাক্ষাত মুবারক দিলেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘আব্দুর রহমান ইবনে জামি কোন অপরাধী নন। তিনি আমার আশিক্ব। তিনি আমার পবিত্র রওজা শরীফে সরাসরি উপস্থিত হয়ে আমার মুবারক শানে না’ত শরীফ পাঠ করতে আগ্রহী। তিনি আমার এমনি আশিক্ব, তিনি যদি না’ত শরীফ পাঠের সুযোগ পান, তাহলে উনার ইশক্বের প্রতিদান স্বরুপ আমাকে উনার সাথে সরাসরি মুয়ানাকাহ মুবারক করার প্রয়োজন দেখা দিবে। যা ক্বিয়ামতের আগে সম্ভব নয়। তাই, উনাকে সসম্মানে উনার ঠিকানায় পৌঁছে দিন।’ সত্যিই উনাকে সসম্মানে উনার ঠিকানায় পৌছে দেওয়া হলো। সুবহানাল্লাহ! (জাফরুল মুহাসসিলীন)

এখানে কয়েকটি বিষয় সুস্পষ্ট। প্রথমত: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকলের অন্তরের অন্তস্থলের খবর রাখেন। দ্বিতীয়ত: তিনি কারো মত নন। পবিত্র রওজা শরীফে তিনি উনার হাক্বীক্বী শান মুবারকে অবস্থান মুবারক করছেন। তৃতীয়ত: তিনি যে কোন বিষয়ে ক্ষমতাবান। সুবহানাল্লাহ!

কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সপ্তম হিজরী শতকের বিশিষ্ট বুযুর্গ, প্রখ্যাত আরবী কবি ও সাহিত্যিক, ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ ইবনে সাঈদ আল বুছীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার কারণে তিনি শয্যাসায়ী হয়ে পড়েন। উনার শরীরের কয়েকটি অঙ্গ অবশ হয়ে যায়। এহেন পরিস্থিতিতে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু হন। অসুস্থ অবস্থাতেই দীর্ঘ একখানা না’ত শরীফ রচনা করেন। যার নামকরণ করেন,‘আল ক্বাওয়াক্বিবুদ দুররিয়্যাহ ফী মাদহি খইরিল বারিয়্যাহ’। না’ত শরীফ রচনার পর এক রাত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু হয়ে অত্যন্ত বিনীতভাবে না’ত শরীফখানা পাঠ করেন, শিফায়ে কামিলাহ লাভ করার জন্য আরজী করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। স্বপ্নে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ দীদার নসীব হয়। স্বপ্নেই তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না’ত শরীফখানা তিলাওয়াত করে শুনান। এক পর্যায়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যধিক সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার বরকতময় হাত মুবারক ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ ইবনে সাঈদ আল বুছীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শরীরে বুলিয়ে দেন। এমনকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একখানা ইয়ামেনী নকশীওয়ালা চাদর মুবারক ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ ইবনে সাঈদ আল বুছীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শরীরে জড়িয়ে দেন। ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ ও সবল দেখতে পান। আপন শরীরে মুবারক চাদরও দেখতে পান। সুবহানাল্লাহ!

সকালে ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ ইবনে সাঈদ আল বুছীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ঘনিষ্ট জন বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত শেখ আবু রজা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার নিকট একখানা ক্বছীদাহ শরীফ তালাশ করেন। ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ ইবনে সাঈদ আল বুছীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞাসা করেন, আপনি ক্বছীদাহ শরীফ তালাশ করছেন? তখন হযরত শেখ আবু রজা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, গত রাতে আপনি যে ক্বছীদাহ শরীফখানা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠ করে শুনিয়েছেন, সেটাই আমি তালাশ করছি। এতে ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ ইবনে সাঈদ আল বুছীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, এ ঘটনা আপনি কিভাবে জানলেন? এ ক্বছীদাহ শরীফ সম্পর্কে আমি কাউকে তো বলিনি। হযরত শেখ আবু রজা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ক্বছীদাহ শরীফখানা যখন আপনি শুনাচ্ছিলেন, তখন আমরা অনেকেই সেটা শুনেছি। দেখা গেল, এ ক্বছীদাহ শরীফখানা অল্প সময়ের ব্যবধানে সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধি লাভ করলো। যেহেতু এ ক্বছীদাহ শরীফখানা পাঠ করার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বুরদাহ বা নকশীওয়ালা চাদর মুবারক হাদিয়া করেছেন, সেহেতু এ ক্বছীদাহ শরীফখানা ‘ক্বছীদায়ে বুরদাহ’ নামেই সারা বিশ্বে অত্যধিক মশহূর হয়ে পড়ে। সুবহনাল্লাহ!

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল, মাওলানা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্তৃক নির্মিত মসজিদে নববী শরীফ উনার পূর্ণ নকশারূপে ১৪০৭ হিজরীতে সুন্নতী জামে’ মসজিদ নির্মাণ করেন। এই সুন্নতী জামে’ মসজিদ নির্মাণের প্রেক্ষাপটে একদা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে সুন্নতী জামে’ মসজিদ নির্মাণের স্থানে জাহির মুবারক হন। এবং সুন্নতী জামে’ মসজিদ নির্মাণে প্রয়োজনীয় যাবতীয় বিষয়ে ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল, মাওলানা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনাকে মুবারক নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই মুবারক নির্দেশনা অনুযায়ী সুন্নতী জামে’ মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ!

এখানে কয়েকটি বিষয় অত্যধিক সুস্পষ্ট। প্রথমত: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছাহিবে ইলমে গইব। উনার কোন উম্মত কোন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে, তিনি তা সম্যক অবগত। দ্বিতীয়ত: তিনি হাযির ও নাযির। তিনি উনার মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন সময় যে কোন স্থানে জাহির মুবারক হন। তৃতীয়ত: তিনিই সমস্ত নিয়ামতের মূল। উনার স্পর্শ মুবারক প্রাপ্ত যে কোন বিষয় মূহুর্তের মধ্যে সর্বোচ্চ কামালিয়াত লাভ করতে পারে। চতুর্থত: তিনি উনার মাহবূব উম্মত উনাদেরকে দায়িমীভাবে তদারকি করেন, পর্যবেক্ষণ করেন এবং মুবারক নির্দেশনা প্রদান করেন। সুবহানাল্লাহ!

মূলকথা হলো: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেবল ছাহিবে ইলমে গইব ও হাযির-নাযিরই নন। বরং তিনি সকলের অন্তরের অন্তস্থলের খবরও রাখেন এবং মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী মাখলুক্বাতের বিভিন্ন হাজতও পূরণ করেন। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, সকলকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ হুসনে যন পোষণ করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে সর্বোচ্চ হুসনে যন পোষণ করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

-আল্লামা মুহম্মদ ইমাদুদ্দীন।

শোক সংবাদ: সাইয়্যিদাতুন নিসা, সুলতানাতুল আরিফীন, কুতুবুল ইরশাদ, কুতুবুল আক্বতাব, আওলাদে রসূল মুহতারামা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন

আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী আলাইহিস সালাম তিনি নিঃসন্দেহে আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী উনার প্রতি অপবাদকারী যালিম গং নিঃসন্দেহে গুমরাহ, বাতিল, লা’নতপ্রাপ্ত, জাহান্নামী ও সুন্নী নামের কলঙ্ক রেজাখানীরা আয়নায় নিজেদের কুৎসিত চেহারা দেখে নিক ॥ ইসলামী শরীয়ার আলোকে একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা-১২

আহলান-সাহলান! সুমহান পহেলা শাওওয়াল!! মুবারক হো ঈদে বিলাদতে তাহিরাহ, তাইয়িবাহ, মাহবুবাহ, ফাক্বীহা, মাশুক্বাহ, তাওশিয়াহ, তাকরীমাহ, তাক্বিয়্যাহ, তাযকীয়্যাহ, নূরে হাবীবা, লখতে জিগারে মুজাদ্দিদে আ’যম, কুতুবুল আলম, উম্মু আবিহা, ক্বায়িম-মাক্বামে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতুন নিসা, আওলাদে রসূল, হযরত শাহযাদী উলা ক্বিবলা আলাইহাস সালাম

বিশেষ কলাম: পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান মশহূর পবিত্র শবে বরাত এবং উনার আমলসমূহ বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হওয়া প্রসঙ্গে-পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফ একদম ছহীহ- এ বিষয়ে সকল আসমাউর রিজাল বিশারদগণ একমত

বিশেষ কলাম: ছবি, মূর্তি-ভাস্কর্য ও বাদ্যযন্ত্র নিশ্চিহ্ন করা, ভেঙ্গে ফেলা খাছ সুন্নত তো অবশ্যই, বরং ফরযে আইন। কেননা এগুলো তৈরি করা ইবলীস শয়তানের কাজ যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সদৃশ্য কোনো প্রাণীর মূর্তি-প্রতিমা, ভাস্কর্য ও ছবি তুলবে, আঁকবে বা বানাবে তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন ওইগুলোর মধ্যে প্রাণ দিতে বলা হবে, কিন্তু তারা তাতে প্রাণ দিতে কখনোই পারবে না, বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দিয়ে প্রস্তুতকারীকে কঠিন শাস্তি দিবেন। নাউযুবিল্লাহ! (১ম পর্ব)