বিশেষ বিশেষ দিন পালন করতে সরকার ও মুসলমান উনাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলেই দেশ ও সমাজ রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ হবে

সংখ্যা: ২৪৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

বিশেষ বিশেষ দিন পালন করতে সরকার ও মুসলমান উনাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলেই দেশ ও সমাজ রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ হবে


 

মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি বান্দা ও উম্মত উনাদেরকে অবারিত রহমত, বরকত, নিয়ামত, সাকীনাহ ও করুনা দান করার জন্য বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহুর্ত হাদিয়া করেছেন। আর সেই বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহুত গুলোকে স্মরন বা পালন করতে বলেছেন। সে কারণেই সকল বান্দা ও উম্মত উনাদের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে অতীব গুরুত্বের সাথে উক্ত বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহুত গুলোকে যথাযোগ্য সম্মান-ইজ্জতের সাথে স্মরন বা পালন করা। কেননা, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি স্বয়ং উনার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে এ সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন –

وذكرهم بايام الله ان فى ذلك لايت لكل صبار شكور.

অর্থ: আর মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়গুলোর কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। এতে উপদেশ রয়েছে পরম ধৈর্য্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য। (পবিত্র সূরাতু ইবরাহীম শরীফ: ৫)

মূলত এ আয়াত শরীফ দ্বারা অতীতের কল্যাণময় ও অকল্যানময় ঘটনাসমূহকে স্মরণ করতে বলা হয়েছে এজন্য যে, যাতে এগুলো থেকে ইবরত-নছীহত গ্রহণ করা হয়। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ নির্ভরযোগ্য সর্বজনমান্য সকল তাফসীর গ্রন্থেই কমবেশি আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে তাফসীর উনার কিতাব থেকে এ সম্পর্কিত কয়েকটি ইবারত উল্লেখ করা হলো-

উক্ত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তানবীরুল মাকবাস মিন তাফসীরি ইবনি আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে-

(وذكرهم بايام الله) بايام عذاب الله ويقال بايام رحمة الله (ان فى ذلك) فيما ذكرت (لايات) لعلامات (لكل صبار) على الطاعة (شكور) على النعمة.

অর্থ: “(আর মহান আল্লাহ পাক উনার রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন) নাফরমান জাতীর প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আযাব নাযিলের রাত, দিন ও সময়সমূহ এবং নেক বান্দাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত নাযিলের রাত, দিন ও সময়সমূহকে স্মরণ করুন (নিশ্চয়ই এতে রয়েছে) যা উল্লেখ রয়েছে (উপদেশ) নিদর্শন, (প্রত্যেক পরম ধৈর্য্যশীল) আনুগত্যের ব্যাপারে ধৈর্যধারণকারী (ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য) নিয়ামতের শুকরিয়াকারীদের জন্য।”

আল ইমামুল কাবীর আল মুহাদ্দিছুশ শাহীর আতবাক্বাতিল উম্মাহ আলা তাকাদ্দুমিহী ফিত তাফসীর হযরত আবূ জা’ফর মুহম্মদ বিন জারীর আত ত্বাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত মুবারক ৩১০ হিজরী) উনার লেখা “জামিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন (তাফসীরুত ত্ববারী)” ১৩ খ- ১২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

حدثنى الـمثنى رحمة الله عليه قال اخبرنا ابو حذيفة رحمة الله عليه قال ثنا شبل رحمة الله عليه عن ابن ابى نجيح رحمة الله عليه عن مـجاهد رحمة الله عليه وذكرهم بايام الله قال بالنعم التى انعم بها عليهم انجاهم من ال فرعون وفلق لـهم البحر وظلل عليهم الغمام وانزل عليهم الـمن والسلوى.

অর্থ: (হযরত ইমাম আবূ জা’ফর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) “আমার নিকট হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুছান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত আবূ হুযাইফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত শিবিল রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনু আবী নুজাইহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত মুজাহিদ তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। ‘মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন’ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, উক্ত বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহে তাদের উপর যে নিয়ামত প্রদান করা হয়েছিলো সেগুলি হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি (বণী ইসরাঈলকে) ফিরাউন গোষ্ঠীর অত্যাচার থেকে হিফাযত করেছিলেন, উনাদের জন্য সাগরে রাস্তা করে দিয়েছিলেন, মেঘমালা দ্বারা উনাদেরকে ছায়া দান করেছিলেন এবং উনাদের জন্য আকাশ থেকে ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ খাদ্য নাযিল করেছিলেন।”

عن حضرت سعيد بن جبير رحمة الله عليه وذكرهم بايام الله قال بنعم الله.

অর্থ: “হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন’ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেন, তা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার প্রদত্ত নিয়ামত নাযিলের দিন।

عن حضرت قتادة رحمة الله عليه وذكرهم بايام الله يقول ذكرهم بنعم الله عليهم

অর্থ: “হযরত ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন’ আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলেন, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার পক্ষ থেকে উনাদের উপর নাযিলকৃত নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।”

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه عن ابى رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم وذكرهم بايام الله قال نعم الله.

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত উবাই রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি وذكرهم بايام الله উনার তাফসীরে ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতের কথা স্মরণ করে দিন।”

হযরতুল আল্লামা ক্বাযী মুহম্মদ ছানাউল্লাহ উছমানী হানাফী মাতুরীদী মাযহারী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত: ১১৪৩ হিজরী, ওফাত: ১২২৫ হিজরী) উনার লেখা ‘তাফসীরুল মাযহারী’ ৫ম খ- ১১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

)وذكرهم بايام الله) قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه و حضرت ابى بن كعب رضى الله عنه ومجاهد رحمة الله عليه وقتادة رحمة الله عليه بنعم الله، وقال مقاتل رحمة الله عليه بوقائع الله فى الامم السابقة قوم نوح وعاد وثـمود عليهم السلام، يقال فلان عالـم بايام العرب اى بوقائعهم، والتقدير فذكرهم بـما كان فى ايام الله الـماضية من النعمة او البلاء (ان فى ذلك) الوقائع (لايات) على وجود الصانع وعلمه وقدرته حكمته ووحدته (لكل صبار) يصبر كثيرا على البلاء والطاعة عن الـمعصية. (شكور) يشكر كثيرا على نعمائه والـمراد به لكل مؤمن.

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উবাই ইবনে কা’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত    ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ‘ايام الله’ এর অর্থ করেছেন ‘মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতসমূহ’ হিসেবে। হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, এটা দ্বারা উদ্দেশ্য ঐসকল ইতিবৃত্ত যা ঘটেছিলো পূর্ববর্তী জাতি ক্বওমে নূহ আলাইহিস সালাম, ক্বওমে আদ ও ক্বওমে ছামূদ-উনাদের যুগে। প্রচলিত একটি প্রবাদ- জনৈক ব্যক্তি আইয়্যামুল আরবের আলিম, অর্থাৎ লোকটি আরববাসীদের ইতিহাস জানেন। এভাবে মর্মার্থ দাঁড়ায়- হে আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্বজাতিকে ওই সকল ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিন, যেগুলো সংঘটিত হয়েছিলো তাদের পূর্বসূরীদের যামানায়, কখনো নিয়ামতরূপে আবার কখনো বালা-মুছীবতরূপে। (নিশ্চয়ই এতে রয়েছে) অতীতের ঘটনাসমূহে রয়েছে (উপদেশসমূহ) ওই সকল ঘটনাবলীর মধ্যে রয়েছে আল্লাহ পাক উনার এককত্ব ও শক্তিমত্তার আশ্চর্য নিদর্শন ও হিকমত। (প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল) যারা বালা-মুছীবতের সময় ছবর করেন (ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য) যাঁরা নিয়ামতসমূহ পাওয়ার কারণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উনার দ্বারা উদ্দেশ্য প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানগণ।

বিশ্ব বিখ্যাত সর্বজনমান্য ‘তাফসীরুল জালালাঈন’ কিতাবের ২০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وذكرهم بايام الله بنعمه ان فى ذلك التذكير لايت لكل صبار على الطاعة شكور للنعم.

অর্থ : (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) অর্থ নিয়ামতে পূর্ণ দিবস সমূহের কথা (নিশ্চয়ই এতে রয়েছে) উপদেশ (নছীহত, প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীলের জন্য) যাঁরা আনুগত্যতায় ধৈর্য্যধারণ করেন (এবং প্রত্যেক পরম কৃতজ্ঞতাকারীর জন্য) যাঁরা নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন।

(وَذَكِّرْهُمْ بِاَيَّامِ الله) يعني خوّفهم بمثل عذاب الأمم الخالية ليؤمنوا. وقال مجاهد رحمة الله عليه: أيام نعمه. وكذلك قال قتادة رحمة الله عليه والسدي رحمة الله عليه يعني ذكرهم نعمائي ليؤمنوا بي.

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) পূর্ববর্তী জাতীদের প্রতি যে আযাব নাযিল হয়েছিল তা স্মরণ করে দিয়ে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করুন, যাতে তারা পবিত্র ঈমান গ্রহণ করে। হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: তা হচ্ছে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন সমূহ। অনুরুপ হযরত ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সুদ্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা ব্যাখ্যা করে বলেন যে, তাদেরকে আমার নিয়ামত সমূহের কথা স্মরণ করে দিন যাতে তারা পবিত্র ঈমান গ্রহণ করে। (বাহরুল উলূম অর্থাৎ তাফসীরুস্ সামারকান্দী লেখক: ইমাম মুফাসসির  ফক্বীহ আবুল্ লাইছ নাছর বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন ইবরাহীম সামারকান্দী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত মুবারক: ৩৭৩ হিজরী পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

(وَذَكِّرْهُمْ بِاَيَّامِ الله) وانذرهم بوقائعه التي وقعت على الامم قبلهم قوم نوح عليه السلام وعاد وثمود، ومنه ايام العرب لحروبها وملاحمها او بايام الانعام حيث ظلل عليهم الغمام وانزل عليهم المن والسلوى وفلق لهم البحر.

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) আপনি তাদেরকে ঐ সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে ভীতি প্রদর্শন করুন, যা আপনার পূর্ববর্তী উম্মাত ক্বওমে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, ক্বওমে আ’দ ও ক্বওমে ছামূদ ইত্যাদীর ধ্বংস হওয়ার ঘটনা। তন্মধ্যে আরবের যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি-কাটাকাটি দিন গুলো। অথবা তাদের উপর মেঘমালা দ্বারা ছায়া প্রদান, আকাশ থেকে মান্না-সালওয়া নাযিল এবং সাগর ফেড়ে রাস্তা হওয়া ইত্যাদী নিয়ামত সমূহ স্মরণ করিয়ে উপদেশ দিতে বলা হয়েছে।

(মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল অর্থাৎ তাফসীরুন নাসাফী লেখক: ইমাম ফক্বীহ মুফাসসির আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

(وذكرهم) وَعِظهم (بايام الله) بنعمه اي بالتَّرغيب والتَّرهيب والوعد والوعيد.

অর্থ: (তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) তাদেরকে উপদেশ দিন (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা) উনার নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। অর্থাৎ উৎসাহ প্রদানের সাথে, ভীতি প্রদর্শনের সাথে ও প্রতিশ্রুতি প্রদানের সাথে। (আল্ ওয়াজীয ফী তাফসীরিল্ কিতাবিল আযীয লেখক: হযরত আবুল হাসান আলী বিন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন আলী ওয়াহিদী নীসাবূরী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৪৬৮ হিজরী পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

(وذكرهم بايام الله) بوقائعه التى وقعت على الامم الدارجة وايام العرب حروبها وقيل بنعمائه وبلائه.

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ রাত, দিন ও সময়সমূহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন) পূর্ববর্তী বহুলপরিচিত উম্মাতদের ঘটনাসমূহ এবং আরবদের যুদ্ধের দিনসমূহকে স্মরণ করিয়ে দিন। কারো কারো মতে: আইয়ামিল্লাহ অর্থ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিয়ামত সমূহ ও আযাব সমূহ। (তাফসীরুল বাইদ্বাবী লেখক: হযরত নাছিরুদ্দীন আবূ সাঈদ আব্দুল্লাহ বিন উমর বিন মুহাম্মাদ শীরাযী বাইদ্বাবী শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

قال حضرت ابنُ عبَّاسٍ و حضرت ابيُّ بن كعب و حضرت مجاهدٌ و حضرت قتادة رضى الله عنهم وذكرهم بنعم الله. وقال مقاتلٌ رحمة الله عليه: بوقائع الله في الامم السَّالفة.

অর্থ: হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত উবাই বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ক্বতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন: তাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিয়ামত সমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। হযরত মুক্বাতিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: ইহা হচ্ছে পূর্ববর্তী উম্মাতদের ঘটনাবহুল দিনসমূহ।

(তাফসীরুল লুবাব লিইবনি আদিল লেখক: হযরত আবূ হাফ্স উমর বিন আলী বিন আদিল দামিশ্কী হাম্বালী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৮৮০ হিজরী পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

فِي اَيَّامِ اللهِ قَوْلَانِ احَدُهُمَا نِعَمُه الثَّانِي نِقَمُه قَالَهُ الْحَسَنُ رحمة الله عليه.

অর্থ: আইয়ামিল্লাহ উনার ব্যাপারে দু’খানা ব্যাখ্যা রয়েছে। এক: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিয়ামত এবং দুই: মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পক্ষ থেকে শাস্তি নাযিল। যা হযরত হাসান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন। (আহকামুল কুরআন লিইবনিল্ আরাবী লেখক: হযরত ক্বাদ্বী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আবূ বকর বিন আরাবী মায়ারিফী আশবীলী মালিকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৫৪৩ হিজরী পবিত্র সূরাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-৫)

‘পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ’ উনার ৫ নম্বর আয়াত শরীফ এবং উনার বিশুদ্ধ তাফসীর থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পূর্ববর্তী নিয়ামতপূর্ণ ঘটনা, দিন, তা’রীখ, মাসগুলোকে স্মরণ করতে বলেছেন এজন্য যে, যাতে এ থেকে নছীহত বা উপদেশ গ্রহণ করা হয়। একইভাবে অতীতের অবাধ্য জাতিদের উপর আরোপিত আযাব-গযব থেকেও উপদেশ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। নিয়ামতপূর্ণ বিষয় যেমন- সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, লাইলাতুর রগায়িব শরীফ, লাইলাতুল বরায়াত শরীফ, লাইলাতুল ক্বদর শরীফ, লাইলাতুল মি’রাজ শরীফ, আশুরা মিনাল মুর্হারম শরীফ ইত্যাদি। এছাড়াও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলুল্ বাইত আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র বিলাদত শরীফ ও পবিত্র বিছাল শরীফ উনাদের দিন, বার ও উনাদের সংশ্লিষ্ট বরকতী ঘটনাসমূহও এর মধ্যে শামিল। সুবহানাল্লাহ!

স্মর্তব্য, বিশেষ বিশেষ দিন রাত মুহুর্ত যে পালন করতে হয়, এ সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার মধ্যে আরো অনেক আলোচনা রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র “সূরাহ মারইয়াম শরীফ” উনার ১৫ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন –

وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا. (سورة مريم شريفة ۱۵ الاية الشريفة(

অর্থ: ‘(সম্মানিত নবী হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম) উনার প্রতি সালাম বা শান্তি- যেদিন তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, যেদিন তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন এবং যেদিন তিনি জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন।’ সুবহানাল্লাহ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি “পবিত্র সূরাহ মারইয়াম শরীফ” উনার ৩৩ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন –

وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدْتُ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا. (سورة مريم شريفة ۳۳ الاية الشريفة(

অর্থ: ‘(সম্মানিত নবী ও রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন) আমার প্রতি সালাম বা শান্তি- যেদিন আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি, যেদিন আমি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করবো এবং যেদিন আমি জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবো।’ সুবহানাল্লাহ।

উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বয় উনাদের মধ্যে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ ও উনাদের হাশরের মাঠে পুনরুত্থিত হওয়ার দিন উনাদের প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হওয়ার কথা ইরশাদ মুবারক হয়েছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত নাবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম ও বিশেষ ব্যক্তিত্ব উনাদের পবিত্র বিলাদত শরীফ ও পবিত্র বিছাল শরীফ উনাদের দিনসমূহে উনাদের প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা বা উনাদের উক্ত দিনগুলি পালন করা অর্থাৎ উদ্যাপন করা দলীলসম্মত ও জায়িয।

একইভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –

عَنْ أَبِى قَتَادَةَ الأَنْصَارِىِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الاِثْنَيْنِ فَقَالَ فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَىَّ.

অর্থ: ‘হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি একদা পবিত্র ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) দিন রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলেন।

উত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: এই দিন আমি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এই দিন আমার প্রতি পবিত্র কুরআন মাজীদ নাযিল করা হয়েছে।’ সুবহানাল্লাহ! (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুছ ছাওম বাবু ছিয়ামিত তাত্বাওউয়ু আল্ ফাছলুল আউওয়াল ১৭৯ পৃষ্ঠা, ছহীহ মুসলিম বাবু ইস্তিহবাবি ছিয়ামি ছালাছাতি আইয়াম মিন কুল্লি শাহরিন ওয়া ছাওমি ইয়াওমি আরাফাতা ওয়া আশূরায়া ওয়াল ইছনাইনি ওয়াল খমীস)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে –

قَالَ (ابو قَتَادَةَ الأَنْصَارِىِّ رضى الله عنه) وَسُئِلَ (رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم) عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ قَالَ: ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ.

অর্থ: ‘হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরুম মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা পবিত্র ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) দিন রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলেন। উত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: এই দিন আমি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এই দিন আমার প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াতী শান মুবারক প্রকাশ হয়েছে অর্থাৎ এই দিন আমার প্রতি পবিত্র কুরআন মাজীদ নাযিল করা হয়েছে।’ সুবহানাল্লাহ। (ছহীহ মুসলিম বাবু ইস্তিহবাবি ছিয়ামি ছালাছাতি আইয়াম মিন কুল্লি শাহরিন ওয়া ছাওমি ইয়াওমি আরাফাতা ওয়া আশূরায়া ওয়াল ইছনাইনি ওয়াল খমীস)

উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ দু’খানা থেকে জানা যায় যে, পবিত্র ইয়াওমুল ইছানাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরুম মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক ও আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের দিন। এই দিনে রোযা রাখার ইঙ্গিত অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয়ে রয়েছে। এর থেকেও প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং বরকতী বিশেষ দিন খুশি প্রকাশ করা বা তা পালন করা সম্মানিত শরীয়ত উনারই নির্দেশ মুবারক।

সম্মানিত নবী ও রসূল হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সংশ্লিষ্ট একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে –

عن حضرت اوس بن اوس رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان من افضل ايامكم يوم الجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض وفيه النفخة فاكثروا على من الصلاة فيه فان صلاتكم معروضة على فقالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وكيف تعرض صلاتنا عليك وقد ارمت؟ قال يقولون بليت قال ان الله حرم على الارض اجساد الانبياء عليهم الصلوة والسلام.

অর্থ: ‘হযরত আউস বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: তোমাদের সকল দিন অপেক্ষা জুমুয়াহ উনার দিনই হল শ্রেষ্ঠ। এ দিনেই হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই উনার পবিত্র বিছাল শরীফ হয়েছে এবং দিনেই শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। সুতরাং তোমরা এই দিন আমার প্রতি বেশী করে ছলাত বা দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। কেননা, তোমাদের পঠিত দুরূদ শরীফ আমার নিকট উপস্থিত করা হয়। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের দুরূদ শরীফ আপনার নিকট কেমন করে উপস্থিত করা হবে। অথচ (কাফিরদের ধারনা যে,) আপনি তখন মাটি হয়ে যাবেন? তদুত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের জিস্ম মুবারক খাওয়া মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ সুবহানাল্লাহ। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুছ ছলাত বাবুল জুমুয়াহ আল্ ফাছলুছ ছানী ১২০ পৃষ্ঠা, সুনানু আবী দাঊদ শরীফ বাবু ফাদ্বলি ইয়াওমিল জুমুয়াহ ওয়া লাইলাতিল জুমুয়াহ, সুনানুন নাসায়ী শরীফ বাবু ইকছারিছ ছলাত আলান নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইওয়ামিল জুমুয়াহ, সুনানু ইবনি মাজাহ শরীফ কিতাবু ইক্বামাতিছ ছলাত বাবুন ফী ফাদ্বলিল জুমুয়াহ, সুনানুদ দারিমী বাবুন ফী ফাদ্বলিল জুমুয়াহ, সুনানুল বাইহাক্বিইল কুবরা বাবু মা ইউয়াম্মারু বিহী ফী লাইলাতিল জুমুয়াহ ওয়া ইয়াওমিহা মিন কাছরাতিছ ছলাত আলা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া ক্বিরায়াতি সূরাতিল কাহ্ফ ওয়া গাইরিহা)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ ও পবিত্র বিছাল শরীফ দিন অর্থাৎ জুমুয়াহবার উদ্যাপন করা এবং এ দিনে বেশী করে পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র বিলাদতী ও পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিনকে উদ্যাপন করা এবং এ দিনে বেশী বেশী ছলাত শরীফ-সালাম শরীফ পাঠ করা এবং মাহফিল করা সুন্নাত উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ।

 অনুরূপভাবে পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররম শরীফ সংশ্লিষ্ট একখানা হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে –

عن حضرت ابن عباس رضى الله عنهما ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قدم المدينة فوجد اليهود صياما يوم عاشوراء فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما هذا اليوم الذى تصومونه؟ فقالوا هذا يوم عظيم انجى الله فيه موسى عليه السلام وقومه وغرق فرعون وقومه فصامه موسى عليه السلام شكرا فنحن نصومه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فنحن احق واولى بموسى عليه السلام منكم فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم وامر بصيامه.

অর্থ: ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে অব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরুম মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত মুবারক করে পবিত্র মাদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিলেন, তিনি দেখলেন যে, ইয়াহূদীরা পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন রোযা রাখে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: এ দিন তোমরা কেন রোযা রাখ? তারা বললো: ইহা একটি মহান দিন। এই দিন মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ও উনার ক্বওম উনাদের জন্য পানির উপর দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছিলেন এবং ফিরআঊন ও তার ক্বওমকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। অতএব, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি শুকরিয়া স্বরূপ উনাকে অনুসরণ করে এই দিন রোযা রেখেছিলেন,তাই আমরাও এই দিন রোযা রাখি। তাদের প্রতুত্তরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরুম মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: আমরাই তোমাদের অপেক্ষা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার অধিকতর হক্বদার ও আপন। অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরুম মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই দিন রোযা রাখলেন এবং আমাদেরকেও এই দিন রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন।’ সুবহানাল্লাহ। (মিশকাতুল মাছাবীহ কিতাবুছ ছাওম বাবু ছিয়ামিত তাত্বাওউয়ু আল্ ফাছলুল আউওয়াল ১৮০ পৃষ্ঠা, ছহীহুল বুখারী কিতাবু বুদউল ওয়াহই, ছহীহ মুসলিম বাবু ছাওমি ইয়াওমি আশূরা)

মূলত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরুম মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ও উনার ক্বওম উনাদের পবিত্র আশূরা শরীফ উনার বরকতময় দিনটি রোযা রেখে উদযাপন করার বিষয়টিকে তাছদীক্ব বা সত্যায়ন করলেন যে, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যা করেছেন তা সঠিকই রয়েছে এবং সকলেরই এ দিবসটি পালন করা উচিত। কাজেই, বিশেষ বিশেষ দিন পালন করা শুধু জায়িযই নয়, বরং তা সুন্নাত উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ।

অতএব, সকল দেশের সরকার ও মুসলমান উনাদেরকে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর থেকে নছীহত গ্রহণ করে অতীব গুরুত্বের সাথে উক্ত বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহুর্ত গুলোকে যথাযোগ্য সম্মান-ইজ্জতের সাথে স্মরন বা পালন করার ব্যাবস্থা গ্রহণ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেননা, নিয়ামতপূর্ণ বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহুর্ত উনাদেরকে পালন করলে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিয়ামত উনার শুকরিয়া আদায় করা হয়। আর মহান আল্লাহ তায়ালা উনার এবং উনার হাবীব নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিয়ামত উনাদের শুকরিয়া আদায় করলে, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি নিয়ামত আরো বৃদ্ধি করে দেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন –

لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِىْ لَشَدِيْدٌ

অর্থ: তোমরা যদি আমার নিয়ামত উনার শুকরিয়া আদায় কর, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের নিয়ামতকে বৃদ্ধি করে দিব। আর যদি তোমরা তা অস্বীকার কর, তাহলে জেনে রাখ! আমার আযাব অতীব কঠিন। (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি আমাদেরকে ও বিশ্ববাসীকে বিশেষ বিশেষ রাত, দিন, সময় ও মুহুর্ত খুশি ও সম্মানের সাথে পালন করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।


– আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ আহমাদ শিহাবুদ্দীন। কুড়িগ্রাম

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম