ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নিমূর্লে  দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান

সংখ্যা: ২৮৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আধুনিককালে মানুষের জীবনের একটি অনুসঙ্গ হয়ে উঠছে। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে অনেকের কাছে এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ধ্বংস করে দিচ্ছে মানুষের জীবন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু অ্যাপস রয়েছে যেমন- টিকটক, লাইকি, বিগো ইত্যাদি যাদের কোনো ইতিবাচক দিক নেই। পরিতাপ ও উদ্বেগের বিষয় হল মানুষ এসবের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। বিশেষ করে অল্প বয়সী তরুণ তরুণীরা মারাত্মক ভাবে এসব অ্যাপ ব্যবহারে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এসব অ্যাপ ব্যবহারের ফলে তরুণ প্রজন্ম বিপথগামী হয়ে পড়ছে। নষ্ট হচ্ছে নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। তরুণ বা কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, হয়ে উঠছে সহিংস।

টিকটক ও লাইকি অ্যাপের মাধ্যমে উৎসাহিত হয়ে অনেক কিশোর-তরুণ উদ্ভট স্টাইলে চুল কেটে ও রঙে রঙ্গিন করে এবং ভিনদেশি অপসংস্কৃতি অনুসরণ করে তা এসকল এ্যাপের মাধ্যমে প্রচার করছে। প্রচার করা এসব কন্টেন্টে অনেক সময় সহিংস ও কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট থাকে। অশালীন পোশাক পরিহিত তরুণীরা নিজেদের ধূমপান ও সিসা গ্রহণ করার দৃশ্য আপলোড করেছে। ফলে এসব অ্যাপের মাধ্যমে ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে তরুণ প্রজন্ম।

এখানেই শেষ নয়,  জনপ্রিয় বিধায় এসব মাধ্যমে জাল পেতে রেখেছে নারী ও শিশু পাচারকারী চক্র। তাদের জালে আটকে বিদেশে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশের অনেক নারী-শিশু। গত কয়েক মাসে একটি চক্রের শুধু টিকটকে পাতা ফাঁদেই পড়েছে সহস্রাধিক নারী ও শিশু। সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গুলুরুতে বাংলাদেশী এক তরুণীর নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর মানবপাচারের নতুন চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। উঠে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিকটকের মাধ্যমে বিখ্যাত হওয়া এবং বিদেশে কাজ পাইয়ে দেয়ার ফাঁদে ফেলে মানবপাচারকারি চক্র তরুণীদের পাচার করছে। টিকটকের ফাঁদে ফেলে এবং বিদেশে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে এ পর্যন্ত হাজারের উপর তরুণীকে পাচার করা হয়েছে। এসব তরুণীকে প্রথমে ভারতে পরবর্তীতে সেখান থেকে অন্যান্য দেশে পাচার করা হয়। পাচার হওয়ার পর তাদের দিয়ে দেহব্যবসা করানো হয়।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিকটক মানবপাচারকারিদের একটি নতুন কৌশল। নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করা তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। এর আগে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে বিদেশে লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচার করেছে, এখনো করছে। ভালো চাকরির আশায় অনেকে তাদের ফাঁদে পা দিয়ে বিদেশ গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিদেশের হোটেলে ড্যান্সার হিসেবে তরুণীদের ফাঁদে ফেলার এ খবর নতুন নয়। গত বছর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন হোটেলে ড্যান্সার হিসেবে নারী পাচার করার এক বড় চক্রের সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মূল হোতাকেও দেশে গ্রেফতার করা হয়।

দেখা যাচ্ছে, মানবপাচারকারিরা একেক সময় একেক কৌশল অবলম্বন করছে। একশ্রেণীর তরুণীর মধ্যে এ নিয়ে উচ্ছ্বাস ও বেপরোয়া মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। তারাই বিপদগামী হয়ে উঠে। টিকটকের মাধ্যমে যারাই পাচারের শিকার হয়েছে তাদের অতি উৎসাহ, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং উচ্চাভিলাষই এ পরিণতি ডেকে এনেছে। পারিবারিক শাসন-বারণ, নীতি-নৈতিকতা, দ্বীনি মূল্যবোধসম্পন্ন কেউ এ ধরণের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে পারে না। শুধু টিকটকই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেক তরুণীর প্রতারিত হওয়ার ঘটনা অহরহই ঘটছে।

আর এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের অসচেতনার চেয়ে অজ্ঞানতা বেশি দায়ী। যথেষ্ট জ্ঞান না থাকার কারণে বাবা-মায়েরা দামি মোবাইল, ট্যাবসহ ইন্টারনেট কিশোর কিশোরীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশ প্রদান করতে পারছে না। এতে করে এসব অ্যাপের অশ্লীলতায় জড়িয়ে ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে নীতি-নৈতিকতার বাঁধন। উঠে যাচ্ছে চক্ষু লজ্জা বা লজ্জাবোধ। ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে অবাধ মেলামেশার পরিবেশ। বিয়ে বহির্ভূত যৌনতা বিষয়ে দ্বীনি, পারিবারিক এবং সামাজিক সংস্কার ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের কথিক ভালোবাসার সম্পর্ক মূলত দৈহিক সম্পর্কে গড়াচ্ছে।

পাশাপাশি, অশ্লীল ও যৌন উসকানিমুলক এসব কনটেন্ট দেখে সমাজের ছোট ছোট কিশোর কিশোরীদের মনজগত, আচার আচরণ ও পোশাক পরিচ্ছদে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। ফলে বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও বিচ্যুতি। বিব্রতকর, অনৈতিক ও অশ্লীল ভিডিওগুলো পর্নোগ্রাফিকে উৎসাহিত করায় এরই মধ্যে পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এসব ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

প্রসঙ্গত, আধুনিক প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মাধ্যমকে যেমন অস্বীকার করার উপায় নেই, তেমনি এর কুফলও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানবপাচারকারিদের সক্রিয় হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আগেও তাদের যেমন বিভিন্ন কৌশল ছিল, সময়ের সাথে সাথে তা পরিবর্তন করবে, এটাই স্বাভাবিক। এক সিন্ডিকেট ধরা পড়লে নতুন সিন্ডিকেট ফাঁদ পাতবে, এ ধারাবাহিকতা চলতেই থাকবে। এ থেকে মুক্ত থাকতে হলে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণদের বিশেষ করে তরুণীদের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সতর্ক ও সচেতন হওয়া বাঞ্চনীয়। এক্ষেত্রে পরিবারের অভিভাবকদের দায়িত্বশীল হতে হবে। সমাজে যেসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে তা পারিবারিক, সামাজিক ও দ্বীনি মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে যে ঘটছে, তা মানতে হবে। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সন্তানদের দ্বীনী মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তানদের পারিবারিক শাসন-বারণ, দ্বীনি মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার মধ্য দিয়ে বড় করে তুলতে হবে। এটা যেমন তাদের রক্ষাকবচ তেমনি পরিবার ও সমাজেরও রক্ষাকবচ।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনতিবিলম্বে এসব অন্তঃসারশূন্য অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। নতুবা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও এসব অ্যাপস ব্যবহারে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক ভাবেও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, টিকটক, লাইকিসহ ভীনদেশী এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সকল পদক্ষেপ তখনই বাস্তবায়িত হবে যখন জোরালোভাবে বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে সরকার দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ অনভূতি, শালীনতার প্রচার প্রসার ঘটাতে পারবে। কারণ কেবলমাত্র সম্মানিত দ্বীন ইসলামেই রয়েছে সকল প্রকার অপসংস্কৃতি, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, নারীপাচার কিংবা অশ্লীল-অশালীন পথ থেকে বিরত থাকার উত্তম নির্দেশনা। সাম্প্রতিক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার এসকল ভীনদেশী এ্যাপ দেশে নিষিদ্ধ করে বিদেশি অপসংস্কৃতির আগ্রাসন রুখে দেবে এটাই দেশের জনগণ সরকারের কাছ থেকে আশা করে থাকে।

মুহম্মদ আশরাফুল মাহবূবে রাব্বানী, ঢাকা।

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ সম্পর্কিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার মন্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময় প্রকাশ গোয়েন্দা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অবহিত নয় খোদ যুগান্তর সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’কে নিয়ে – মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে দৈনিক জনকণ্ঠের মিথ্যাচার ‘উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত’ নিষিদ্ধ হচ্ছে- এ কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু অস্বীকারই করলেন না, বললেন: ‘সম্পূর্ণ বাজে কথা।’ প্রসঙ্গতঃ সোহেল তাজ বিবৃত কালো তালিকা অসম্পূর্ণ ও আংশিক ভুল। এর সংশোধন আশু দরকার

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সমীপে- সোহেল তাজ বিবৃত ১২টি জঙ্গি সংগঠন তালিকা যথার্থ নয় এর মধ্যে যেমন অনেক জঙ্গি সংগঠনের নাম আসেনি তেমনি জঙ্গিবাদ বিরোধী সংগঠনের (উলামা আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত) নামও জামাত-জোট ভূতের কারণে এসেছে। সঙ্গতঃ কারণেই বে-হেড সোহেল তাজের বেফাঁস মন্তব্য থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানের যোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রকৃত জঙ্গি সংখ্যা যেমন নির্ধারণ করতে হবে, প্রকৃত জঙ্গিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে পাশাপাশি জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একান্ত নিবেদিত ‘আল বাইয়্যিনাত’কে মূল্যায়ন করতে হবে।