মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ ও মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৬৭

সংখ্যা: ২৮৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৩তম ফতওয়া হিসেবে

“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত চার মাযহাব হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উনাদের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম উনাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক

সম্মানিত শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ফায়ছালা মতে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি সম্মানিত মাযহাব উনাদের অনুসরণ করা যেরূপ ফরয-ওয়াজিব তদ্রƒপ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাযহাব পরিবর্তন করা বা এক মাযহাবের অনুসারী হয়ে অন্য মাযহাবের উপর আমল করা জায়িয নেই।

এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফ উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুসলিম শরীফ উনার’ টিকায় এবং ইমাম তাহাবী ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবের হাশিয়াতে লিখেন-

عَلَيْكُمْ يَا مَعْشَرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ اِتِّبَاعُ الْفِرْقَةِ النَّاجِيَةِ الْـمُسَمَّاةِ بِأَهْلِ السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ فَأِنَّ نَصْرَةَ اللهِ وَحِفْظَهٗ وَتَـوْفِيْـقَهٗ فِيْ مُوَافِقَتِهِمْ وَخَذَلًالَّهٗ وَسَخْطَهٗ وَمَقْتَهٗ فِيْ مُـخَالِفَتِهِمْ وَهٰذِهِ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ قَدْ اِجْتَمَعَتِ الْيَوْمَ فِيْ مَذْهَبِ أَرْبَعٍ وَهُمُ الْـحَنَفِيُّـوْنَ وَالْـمَالِكِيُّـوْنَ وَالشَّـفِعِيُّـوْنَ وَالْـحَنَبِلِيُّـوْنَ رَحِـمَهُمُ اللهُ وَمَنْ كَانَ خَارِجًا مِّنْ هٰذِهِ الْأَرْبَعَةِ فَـهُوَ أَهْلُ الْبِدْعَةِ وَالنَّارِ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আপনারা নাজিয়া (নাজাতপ্রাপ্ত) দলকে অনুসরণ করে চলুন যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ নামে মশহূর। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য, হিফাযত ও তাওফীক্ব অর্জন সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি, গযব ও অপদস্ততা উনাদের সাথে বিরোধিতার কারণেই। আর ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত’ বর্তমান যুগে চার মাযহাবে বিভক্ত। উনারাই হলেন সম্মানিত হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব। আর যারাই বর্তমানে এ ৪ মাযহাব বহির্ভূত তারাই বিদয়াতী ও জাহান্নামী। (তাম্বিহ ৪৬৬ পৃষ্ঠা)

অনুসরণীয় সকল ইমাম মুজতাহিদ উনারা এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য মাযহাব হচ্ছে চারটি।

১। হানাফী ২। মালিকী

৩। শাফিয়ী ৪। হাম্বলী।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন ইমাম আ’যম ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত মালিকী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত শাফিয়ী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে উনাদের পরিচিতি ও সাওয়ানেহ উমরী মুবারক তুলে ধরা হলো-

সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফিরাসাত বা

অন্তর্দৃষ্টি মুবারক

ইমামুল মুহাদ্দিছীন, ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক ব্যতীত সকল ইলিম মুবারকের অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন ফিরাসাত বা অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন, খাছ ইলমে লাদুন্নীপ্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ!

হযরত আবূ উমামাহ বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِتَّـقُوْا فِرَاسَةَ الْـمُؤْمنِ فَاِنَّهٗ يَنْظُرُ بِنُـوْرِ اللهِ تَـعَالٰى

অর্থ: “তোমরা মু’মিনগণের ফিরাসাত বা অন্তর্দৃষ্টিকে ভয় করো। কেননা, উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক দ্বারা দেখে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, তবারানী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, তোহফাতুল আহওয়াজী)

অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক তিনি যা দেখেন তিনি উনার মাহবূব বান্দাগণ উনাদেরকে তাই দেখান। কাজেই, ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদেরকে সেভাবে তা’যীম-তাকরীম করা, খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেয়া উচিত।

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার পুরোপুরি মিছদাক্ব ছিলেন।

আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ, সুলত্বানুল আরিফীন, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফিরাসাত বা অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন। উনার সমকক্ষ সমসাময়িক কেউ ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ!

আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশীদের সামনে একবার সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার আলোচনা মুবারক হলো। তিনি উনার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফে দোয়া করতঃ বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উপর রহমত বর্ষণ করুন। কেননা তিনি ফিরাসাত বা অর্ন্তদৃষ্টি ও বিচক্ষণতার দ্বারা এমন অনেক বিষয়-বস্তু দেখেন যা অন্য কারো পক্ষে দেখা কখনোই সম্ভব নয়।” (তাযকিরাতুন নু’মান-৩২৩)

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি অতি অল্প বয়সে উনার সম্মানিত পিতাকে হারিয়েছেন। উনার মা ছিলেন উনার অভিভাবক। তিনি উনার মাকে না বলে ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার জন্য আসতেন। উনার সম্মানিত মাতা প্রথমতঃ বিষয়টি পছন্দ করতেন না। তাই একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, আমার ছেলেকে আপনার ছোহবত মুবারকে আসতে বারণ করুন। ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে উনার সম্মানিত মায়ের সাথে পাঠিয়ে দিলেন।

কিন্তু সাইয়্যিদুনা ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরের দিন আবারো চলে আসলেন। কয়েকবারই এমন হলো। তিনি ফেরত পাঠান আর তিনি আবার চলে আসেন।

একদিন তিনি সাইয়্যিদুনা ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, আপনার তখন কেমন মনে হবে, যখন আপনি ফিরোযা (মূল্যবান সবুজ পাথর) নির্মিত প্রাসাদে বসে সুস্বাদু ফালুদা খাবেন?

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। আর সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশীদের প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেছেন। আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশীদ সাইয়্যিদুনা ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে রাজ প্রাসাদে দাওয়াত করলেন। উনার সামনে দিলেন সুস্বাদু ফালুদা। ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সুস্বাদু ফালুদা দেখে বিমুগ্ধ হাসি দিলেন। আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশীদ হাসির কারণ জানতে চাইলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার উপর রহমত বর্ষন করুন। অতঃপর বিগত জীবনের ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা বিস্তারিত বললেন। তা শুনে আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশীদ হতবাক হলো।

আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশীদ আরো বললো, ইলিম মানুষকে উভয় জাহানে অতি সম্মানের অধিকারী করে তোলে। ইমামুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফিরাসাত বা অন্তর্দৃষ্টি এমন ছিল যে, তিনি এমন অনেক বিষয়বস্তু দেখতেন যা স্বাভাবিক চোখে কখনো দেখা যায় না।

ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন একটি বড় নালার পাড়ে ওযূ করছিলেন। যখন কুলি করার জন্য পানি মুখ মুবারকের নিকট আনলেন তখন দুর্গন্ধ পেলেন। তারপর যেদিক থেকে পানি আসছিল সেদিকে রওয়ানা হলেন। কিছু দূর গিয়ে দেখতে পেলেন, একজন যুবক গোসল করছে। ইমামুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই যুবককে বললেন, হে যুবক! তুমি কি মুসলমান? যুবক জবাবে বললো, হ্যাঁ, আমি মুসলমান। তখন তিনি তাকে কাছে ডাকলেন, বললেন, হে যুবক! মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করো। তিনি তোমাকে সুঠাম দেহের অধিকারী করেছেন, সবল-সুস্থ রেখেছেন। তুমি ব্যভিচার করা থেকে বিরত থাক। ইহা অতীব ঘৃণিত কাজ। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَا تَـقْرَبُوا الزِّنٰى ۖ إِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةً وَّسَآءَ سَبِيْلًا

অর্থ: “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হইওনা। নিশ্চয়ই ইহা অত্যন্ত গর্হিত কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বণী ইসরাঈল শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৩২)

কাজেই, তুমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে লজ্জা করো, ভয় করো। তওবা করো। আর ব্যভিচার থেকে বিরত থাকো। যুবক মনোযোগসহকারে উনার নছীহত মুবারক শুনলো। তওবা করলো এবং সেই গর্হিত কাজ ছেড়ে দেয়ার ওয়াদাবদ্ধ হলো। সুবহানাল্লাহ!

আল্লামা শা’রানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি “মীযানুল কুবরা” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি কাউকে অযূ করতে দেখলে তার অযূর পানিতে কোন্ কোন্ গুনাহ ধোয়া হচ্ছে তা দেখতে পেতেন। এমনকি তা কোন্ প্রকারের গুনাহ তাও বুঝতে পারতেন। দৃশ্যমান বিষয়বস্তু যেমন সহজে দৃষ্টিগোচর হয়, ঠিক তদ্রƒপই তিনি ইহা দেখতে পেতেন। সুবহানাল্লাহ!

ঘটনাক্রমে একদিন তিনি কুফার পবিত্র মসজিদে অযূখানায় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে একজন যুবক অযূ করছিলেন। তার ব্যবহৃত অযূর পানি দেখে তাকে নির্জনে ডেকে উপদেশ দিলেন। বললেন, হে যুবক! তুমি তোমার পিতা-মাতার নাফরমানী করা থেকে তওবা করো।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-

وَقَضٰى رَبُّكَ أَلَّا تَـعْبُدُوْاۤ إِلَّاۤ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

অর্থ: “তোমার মহান রব তায়ালা আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন যে, তোমরা মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না। আর পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করো।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বণী ইসরাইল শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)

পিতা-মাতার নাফরমানী করা কবীরা গুনাহ। যে গোনাহের শাস্তি দুনিয়াতেও ভোগ করতে হয়। উনার নছীহত মুবারক শুনে যুবকটি তওবা করলো।

অপর একজন ব্যক্তিকে শরাব পান ও আমোদ প্রমোদে লিপ্ত থাকার গুনাহ ঝরতে দেখে নছীহত মুবারক করলেন। সে ব্যক্তিও তওবা করলো। অবশেষে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফে ফরিয়াদ জানালেন, বারে ইলাহী! আমি মানুষের দোষ-ত্রুটি অবগত হতে চাইনা। আপনি আমার এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে দিন।

বর্ণিত আছে যে, ঐ অবস্থায় তিনি ওযূর ব্যবহৃত পানিকে নাপাক বলে ফতওয়া দিয়েছিলেন। তিনি যখন স্বচক্ষে উক্ত পানিকে দূষিত এবং দুর্গন্ধময় দেখছেন তখন কিভাবে উহাকে পাক বলতে পারেন? কিন্তু এই অবস্থা দুরীভূত হলে তিনি উক্ত পানিকে নাপাক বলা থেকে বিরত থাকেন।

সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বুদ্ধিমত্তা

ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন প্রত্যুৎপন্নমতি। অসাধারণ উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন। যে কেউ যখনই কোন প্রশ্ন করতেন তা দুনিয়াবী হউক বা উখরোবী হউক তিনি তৎক্ষণাৎ তার জাওয়াব দিতে পারতেন। সুবহানাল্লাহ!

একদিন শহরে একটি ময়ুর চুরি হয়। ময়ূরের মালিক সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন। তিনি নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথে মসজিদে দাঁড়িয়ে বললেন, ময়ূর চোরের লজ্জা করে না যে, সে নামায পড়ে আর তার মাথায় ময়ূরের পালক লেগে থাকে? একথা শুনে এক ব্যক্তি মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। তখন তিনি উক্ত ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। সে চুরির কথা স্বীকার করে এবং ময়ূরের মালিককে তা ফিরিয়ে দিল। সুবহানাল্লাহ!

একদিন এক ব্যক্তি এসে উনাকে বললো, শুনেছি, আপনি নাকি সব প্রশ্নেরই তাৎক্ষনিক জাওয়াব দিয়ে থাকেন। ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ইহা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার দয়া, দান, ইহসান। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই তা দান করেন। তুমিও প্রশ্ন করতে পারো। তখন উক্ত ব্যক্তি বললো, বলুন তো, ইস্তিঞ্জা মিষ্ট নাকি তিক্ত? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, মিষ্ট।

ঐ ব্যক্তি পূনরায় বললো, আপনি তা কিভাবে জানতে পারলেন? তিনি বললেন, এইভাবে জানতে পারলাম যে, মাছিরা সবসময় মিষ্ট জিনিষের উপর বসে। তিক্ত জিনিষের উপর বসে না।

ঐ ব্যক্তি উনার তাৎক্ষণিক জাওয়াব শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে বিরত রইল। সুবহানাল্লাহ!

অসমাপ্ত-পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁ, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩২