মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে-মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১ম পর্ব)

সংখ্যা: ২৮৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং অশেষ-অসীম সম্মানিত ছলাত ও সালাম মুবারক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ। মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাছ রহমত, বরকত, সাকীনাহ, দয়া-দান, ইহসান মুবারক উনাদের কারণে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগ উনার তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অকাট্ট দলীলের আলোকে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায়-

৩৮তম সম্মানিত ফতওয়া মুবারক হিসেবে

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া মুবারক পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি।

লিবাস সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ!

যিনি খ্বালিকমালিক রব মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার খাছ রহমতে মহাসম্মানিত সুন্নত উনার বার্তা বাহক, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভিক মশালধারী, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক, উলামায়ে ‘সূ’ এবং বিদ্য়াত, শিরকের সমস্ত জাল ছিন্নকারী, বাতিলের কলিজা কাঁপানো হুংকার, সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র মুখপত্র, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার অগনিত পাঠকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী ও পবিত্র সুন্নত উনার আশিক্ব, মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে  মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে বর্তমান সংখ্যায় বিশেষ ফতওয়া হিসেবে “খাছ সুন্নতী লিবাস” সম্পর্কে দলীলভিত্তিক বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হলো। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার  মধ্যে ইরশাদ করেন-

فَاسْأَلُوْاۤ اَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْـتُمْ لَا تَـعْلَمُوْنَ

অর্থ: “যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নহল শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩ ও সম্মানিত সূরা আম্বিয়া শরীফ ৭)

অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, উনাদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও। অতএব, যাঁরা জানেন, উনাদের পবিত্র দায়িত্ব হলো, প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْـرَةَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهٗ ثُمَّ كَتَمَهٗ أُلْـجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِّنْ نَّارٍ

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়,  জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফ, আহ্মদ, মিশকাত শরীফ, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাযী, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারিফুস্ সুনান, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি) অন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ্বা আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।” কাজেই উপরোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার” অগণিত পাঠক-পাঠিকা, গ্রাহক-গ্রাহিকা ও হক্ব তালাশী বা সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের বিশেষ অনুরোধের প্রেক্ষিতে “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও

মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তসম্মত তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজ্মা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ফতওয়া দেয়া হলো। এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই হতে হবে। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَحَبَّ لِلّٰهِ وَاَبْغَضَ لِلّٰهِ وَاَعْطٰى لِلّٰهِ وَمَنَعَ لِلّٰهِ فَـقْدَ اِسْتَكْمَلَ الْاِيْمَانَ

অর্থ: “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত, মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার (সন্তুষ্টি মুবারক লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাযী, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারিফুস্ সুনান, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, লুময়াত, মিরয়াতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি) বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে। কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কে” সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী লিবাস সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পরলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে। মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব ও  কর্তব্য। কারণ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

اَلْمُؤْمِنُ مِرْأَةُ الْمُؤْمِنِ

অর্থ: “এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)

বর্তমানে কিছু তথাকথিত ইসলামী  কিতাবাদী ও পত্র-পত্রিকায় এবং কিছু সংখ্যক নামধারী ওয়ায়েয তাদের বক্তৃতায় সুন্নতী লিবাস সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের বক্তব্য হলো- সুন্নতী লিবাসের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা শরীয়তে নেই। যেকোন ধরণের লিবাস বা পোশাক পরিধান করলেই সুন্নত আদায় হয়, কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সব ধরণের লিবাস বা পোশাকই পরিধান করেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ) অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে।

ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ক্ষতি

তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমান এটাই মনে করবে যে, দ্বীন ইসলাম অপূর্ণ, কেননা ইসলাম যদি পরিপুর্ণ দ্বীন হতো, তবে অবশ্যই ক্বমীছ বা পোশাক সম্পর্কিত নির্দিষ্ট বর্ণনা ইসলামে থাকতো। অতএব তারা যে বলেছে, ইসলামে লিবাস  বা পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই। তাদের এই বক্তব্য এটাই প্রমাণ  করে যে, ইসলাম অপূর্ণ। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “ইসলাম অপূর্ণ” তারা ঈমান হারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ! তাছাড়া তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে কেউ যদি মনে করে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরনের পোশাক পরিধান করেছেন। তবে সেটাও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরী হবে। নাউযুবিল্লাহ! কেননা একখানা দলীলও কেউ পেশ করতে পারবেনা যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসলীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরণের লিবাস বা পোশাক পরিধান করেছেন।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার  যে কোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন খারিজী, রাফিজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।

আ’মালী বা আমলগত ক্ষতি

“সব ধরণের লিবাস  বা পোশাক পরিধান করাই সন্নত” বিদ্য়াতীদের এ বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা সব ধরণের পোশাক পরিধান করলে কখনোই সুন্নত আদায় হবেনা। বরং এমন কিছু পোশাক রয়েছে, যা বে-দ্বীন  বা বিধর্মীদের জন্য খাছ, অর্থাৎ যা তারা ধর্মীয় শেয়ার বা নিদর্শন হিসেবেই ব্যবহার করে থাকে। যেমন শার্ট, প্যান্ট, টাই ইত্যাদি। অতএব, কেউ যদি তা পরিধান করে, তাতে সুন্নতের অনুসরণ তো হবেইনা বরং তা বেদ্বীনদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে কাট্টা হারাম হবে। কেননা বেদ্বীন বা বিধর্মীদের সাথে কোন ব্যাপারে সাদৃশ্য রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পুর্ণ হারাম। যেমন এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “তাহ্তাবী” ৩য় জিলদ ৪৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে

وَالتَّشَبُّهُ بِـهِمْ حَرَامٌ

অর্থাৎ- “ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ ও বেদ্বীন, বদ্দ্বীনদের সাথে সাদৃশ্য রাখা হারাম।” কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَـهُوْ مِنْـهُمْ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখবে, সে ব্যক্তি তাদেরই দলভুক্ত হবে। অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। (আবু দাউদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ)

অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বিদ্য়াতীদের উক্ত বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ খাছ সুন্নতী বা পোশাকের আমল পরিত্যাগ করে, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের পোশাক পরিধান করে তাদেরই দলভুক্ত হবে, যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর। সুতরাং যারা বলে, সব ধরণের পোশাকই পরিধান করা সুন্নত, ইসলামে পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই, তাদের এ বক্তব্য যেরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ করার শামিল। তদ্রুপ “দ্বীন ইসলাম উনাকে নাক্বিছ বা অপূর্ণ সাব্যস্তকারী। অথচ উভয়টাই সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে কাট্টা কুফরী। কাজেই যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তাদের থেকে হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ নিজেদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার  সম্মানিত আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং সম্মানিত সুন্নত মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই খাছ সুন্নতী লিবাস বা পোশাক ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।

(অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১