“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি” এ বিষয় অস্বীকারকারী বাতিল ফিরকার সকল মিথ্যাচারের জবাব

সংখ্যা: ২৭৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

বিখ্যাত আলেম মিশরের হাম্বলী মাযহাব উনার উলামায়ে কিরাম উনাদের অন্যতম আকাবীর, বিখ্যাত ইমাম, মুহাদ্দীছ, ফক্বীহ, যামানার শায়খুল ইসলাম, ফক্বীহ, হযরত মারঈ ইবনে ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি  উল্লেখ করেন-

وَالْمَشْهُوْرُ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْـجُمْهُوْرُ مِنَ الْعُلَمَاءِ اِنَّ اَوَّلَ الْمَخْلُوْقَاتِ نُوْرُ نَبِيِّنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ: উলামায়ে জমহুর উনাদের নিকট একথা প্রসিদ্ধ যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি।” (নুযহাতু নুফুসিল আখবার ওয়া মাত্বলায়ু শাওয়ারিকিল আনওয়ার ৬ পৃষ্ঠা)

মশহুরভাবে প্রমাণিত ও সম্মাানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি এই পবিত্র আক্বীদাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। বাতিল ফিরকারা আজ উনাদের খিলাফ ফতোয়া উদগিরন করছে। নাউযুবিল্লাহ! তারা যেসব অভিযোগ উত্থাপন করে তার খন্ডনমূলক জবাব দেয়া হলো:

১ম আপত্তির খন্ডন:: আজকে আপনাদের সামনে এমন একটা জিনিস উপস্থাপন করবো যার মাধ্যম দিয়ে অনেক বিষয়ই আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সেকারণে আপনাদের অত্যন্ত ইনসাফের সাথে মনযোগ সহকারে লেখাটা পড়তে হবে ও ভাবতে হবে। খারিজি ফির্কার দাবি হচ্ছে পূর্ববর্তী যে কিতাবসমূহে পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বা পবিত্র নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিষয়ক রেওয়ায়েত রয়েছে তা ভুল করে চলে এসেছে এবং মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে এ ধরণের কোন বর্ণনা ছিলো না। নাউযুবিল্লাহ। আজকে এ কথারই জবাব দিবো “নূর মুবারক সম্পর্কে আলোচনা” ভুল করে আসেনি বরং অত্যন্ত তাহক্বীক্ব ও নির্ভরতার সাথে উনারা দলীল এনেছেন।

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত: ৯৭৪ হিজরী) উনাকে আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। উনার ভুবন বিখ্যাত একখানা কিতাবের নাম হচ্ছে “ফতোয়ায়ে হাদিস্যিয়াহ”। এই কিতাবের ৩৮০ পৃষ্ঠায় ৩১৬ নং প্রশ্নে একটা হাদীছ শরীফ এনে হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে এর বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়-

وَسُئِلَ نَفَعَ اللهُ بِهٖ عَنْ حَدِيْثٍ: أَنَا مِنَ اللهِ وَالْمُؤْمِنُوْنَ مِنِّـيْ مَنْ رَوَاهُ؟

আমি আল্লাহ পাক থেকে আর মু’মিনগন আমার থেকে এ রেওয়ায়েত কেমন?

জবাবে তিনি বলেন-

فَأَجَابَ بِقَوْلِهٖ هُوَ كَذِبٌ مُـخْتَلَطٌ وَإِنْ ذَكَرَهُ الدَّيْلَمِيُّ بِلَا إِسْنَادٍ

“এটার আবিষ্কারক মিথ্যাবাদী। যা হযরত দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি সনদ ছাড়া বর্ণনা করেছেন।”

এখান থেকে আমরা জানতে পারলাম হযরত দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি সনদ ছাড়া হাদীছ বর্ণনা করেছেন এবং এ প্রসঙ্গে অন্য কোন সনদে বর্ণনা না থাকায় তিনি কিন্তু বর্ণনাটাকে মিথ্যা বলে রায় দিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে ফতোয়া দিতে বিন্দুমাত্র ছাড় দেন নাই।

এরপর দেখে নেয়া যাক ঠিক তার পরবর্তী প্রশ্নে। উক্ত কিতাবের ৩৮০ পৃষ্ঠার ৩১৭ নং প্রশ্নে-

وَسُئِلَ نَفْعُ اللهِ بِهٖ: أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ رُوْحِىْ وَالْعَالَـمُ بِأَسَرِّهٖ مِنْ نُوْرِىْ كُلُّ شَيْءٍ يَرْجِعُ اِلٰي صِلَةٍ مَنْ رَوَاهُ؟

সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক আমার রূহ সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি জগত আমার নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক বস্তু তার মূলের দিকে ফিরে যায়, কে বর্ননা করেছেন?

فَأَجَابَ بِقَوْلِهٖ: لَا أَعْلَمُ اَحَدًا رَوَاهُ كَذٰلِكَ وَإِنَّـمَا الَّذِيْ رَوَاهُ عَبْدُ الرَّزَّاقِ اِنَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ  اِنَّ اللهَ خَلَقَ نُوْرَ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ مِنْ نُوْرِهٖ

জবাব: উপরোক্ত রেওয়ায়েত সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। তবে নিশ্চয়ই হযরত ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে একটা রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম সম্মানিত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি করেছেন সকল সৃষ্টির পূর্বে উনার কুদরতী নূর মুবারক থেকে।” অর্থাৎ সর্বপ্রথম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি করেছেন।

ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ বক্তব্য দ্বারা বোঝা গেলো অন্য বর্ণনাগুলো সনদ বা সত্যতা না থাকলেও ইমাম হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফে পূর্ণ সনদসহই এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার জানা ছিলো। যদি তা না হতো তবে তিনি স্পষ্টই বলে দিতেন ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসান্নাফে উক্ত হাদীছ শরীফ বা এ ধরণের রেওয়ায়েত নেই। এটি একটি জাল রেওয়ায়েত। যেমন তিনি ৩১৬ নং প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন। অথচ পবিত্র হাদিছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ক্ষেত্রে তিনি কিন্তু তা বলেননি। বরং নিজ থেকেই এ হাদিছ শরীফখানা প্রশ্নকারীর প্রশ্নে জবাবে দলীল হিসাবে এনেছেন।

বোঝা গেলো মূল মুছান্নাফের প্রাচীন পান্ডুলিপীতে হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অস্তিত্ব স্পষ্টই ছিলো, পরবর্তীতে কোন কূট কৌশলে তা বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। তা নাহলে হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি কোনভাবেই মুছান্নাফের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে সম্মানিত নূর মুবারক উনার হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতেন না ৩১৭ নং প্রশ্নের জবাবে। ৩১৬ নং জবাবের মত বিনা সনদে বর্ণনার অভিযোগে জাল বলে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নাই। এখানেই শেষ নয় তিনি উক্ত “ফতোয়ায়ে হাদিস্যিয়াহ” কিতাবের ৮৫ পৃষ্ঠাতেও হাদীছ শরীফখানা বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করেছেন। সূতরাং প্রমাণ হলো মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছিলো।

২য় আপত্তির খন্ডন:: ইহুদীদের চক্রান্তের একটা নমুনা হচ্ছে কোন একটা বিষয়কে বিতর্কিত করে দেয়া। এজেন্ট হওয়ার কারণে ওহাবীরাও সেই পন্থা অবলম্বন করে। দুনিয়ার সকলেই জানে পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বা সর্বপ্রথম নূর মুবারক সৃষ্টি এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুছান্নাফে বর্ণনা করেছেন। এ বিষয়ে যুগশ্রেষ্ঠ অনেক হাফিজুল হাদীছ ও মুহাদ্দিছগণ উনাদের কিতাবে উল্লেখও করেছেন। উলামায়ে কিরাম উনাদের গ্রহন করা দ্বারা যখন এটা দলীল হিসাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে তখন ওহাবীদেরতো মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন তাদের চিন্তা হলো বিতর্কিত করতে হবে তা যেকোন ভাবেই হোক। নাউযুবিল্লাহ! তখন নতুন এক ফর্মুলা মানুষের মাথায় ঢুকানোর জন্য পূর্ববর্তীদের মতকে অবজ্ঞা করে লিখা হলো।

“হযরত ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে আব্দুর রাজ্জাকের কথা বলেছেন তা ইমাম হযরত বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের দাদা উস্তাদ হযরত আব্দুর রাজ্জাক আস’সানআনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি না। তিনি হচ্ছেন আব্দুর রাজ্জাক কাশানী।” (মজ’মু ফি কাশফিল হাকীকী আয যুযউল মাফকুদ মিন মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১০২ পৃষ্ঠা; প্রকাশনা: দারুল মুহাদ্দিছ , রিয়াদ; প্রকাশ সন ১৪২৮ হিজরী)

পৃথিবীর কোন আলেম এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা ইতিপূর্বে বলে নাই কিন্তু পবিত্র হাদীছে জাবির রদি¦য়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জাল প্রমাণ করতে যারা উঠে পরে লেগেছে তাদের মধ্যে একজন সিরিয়ার যিয়াদ ইবনে উমর আত তুকলা একথা সর্বপ্রথম উত্থাপন করলো। আখেরী যামানার দাজ্জালের ফিতনা যে কেমন সেটাই প্রমাণ হচ্ছে এ ধরণের লোকদের বিষোদগার দেখে।

অথচ ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোন আব্দুর রাজ্জাক উনার কথা বলেছেন সেটা কিন্তু নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নেই। বিখ্যাত মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়াহ কিতাবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহে যারকানীর” ১ম খন্ড ৮৯ পৃষ্ঠার মধ্যে এ বিষয়ে স্পষ্ট ফয়সালা দেয়া আছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, হাফিজে হাদীছ ইমাম যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়াহ কিতাবের

وَرَوٰي عَبْدُ الرَّزَّاقِ بِسَنَدِهٖ عَنْ جَابِرِ بْن عَبْدِ اللهِ الْاَنْصَارِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ

(হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি সনদ সহকারে হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন)  এই অংশের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,

(وَرَوٰي عَبْدُ الرَّزَّاقِ) بْنُ هُـمَامِ بْنُ نَافِعٍ اَلْـحُمَيْرِيُّ الْـحَافِظُ اَبُوْ بَكْرِ الصَّنْعَانِيُّ

অর্থ: “ইমাম হযরত আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম ইবনে না’ফে আল হুমাইরী আল হাফিজ আবু বকর সান’আনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রেওয়ায়েত করেন।”

অর্থাৎ স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়াহ কিতাবে বর্ণিত ইমাম হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহিই হচ্ছেন হযরত আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম আসসান’আনী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

আর বর্তমান যুগের কোথাকার কোন আত তুকলা সে কিনা মানুষের মনে সংশয় সৃষ্টি করতে প্রচার করে বেড়াচ্ছে সেই ইমাম হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ওস্তাদের ওস্তাদ হযরত আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি নন। আসতাগফিরুল্লাহ।

রেজাল বিশারদ, মুহাদ্দিছ, হাফিযে হাদীছ ইমাম যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেটা উল্লেখ করলেন সেটা না মেনে বর্তমান সময়কার এখনো জীবিত উমর আত তুকলার অভিমত মানবেন? ইহুদীদের নীতিই হচ্ছে দ্বিধাবিভক্ত করে মানুষের মনে সংশয় ঢুকিয়ে দেয়া। উমর আত তুকলা কিন্তু তার জঘন্য বক্তব্যের পেছনে কোন দলীলই দিতে পারে নাই বরং যেটা বলেছে সেটা সম্পূর্ণ ধারনাপ্রসূত জল্পনা কল্পনা করে বিতর্ক সৃষ্টির জন্য মনগড়া একটা বক্তব্য। মিথ্যাবাদীদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।

৩য় আপত্তির খন্ডন:: বিদয়াতি খারিজিরা বলে থাকে, দেওবন্দী মুহাদ্দিছ আব্দুল হাই লখনবী তিনি উনার “আছারুল মারফুয়া” কিতাবে পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বা সর্বপ্রথম সৃষ্টি নূর মুবারক সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলেছেন। আসুন আমরা প্রকৃত সত্যটা যাচাই করি। উনার “আছারুল মারফুয়া” কিতাব থেকেই প্রকৃত সত্যটা উদঘাটন করি।

আব্দুল হাই লখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার আছারুল মারফুয়া কিতাবে ৪২ নং পৃষ্ঠায় জাতি নূর এ আকীদায় বিশ্বাস না রাখার কথা বলেছেন। যেমন এক শ্রেনীর বিদয়াতিরা বলে থাকে মহান আল্লাহ পাক খামসি দিয়ে উনার মুখমন্ডল থেকে এক মুঠো নূর নিয়েছেন। নাউযূবিল্লাহ। সে নূর দিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। নাউযূবিল্লাহ! এ মতের খন্ডন করে তিনি আলোচনা শুরু করেন এবং এ বিষয়ে ইবনে তাইমিয়া ও হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দলীলও পেশ করেন।

এরপরের অংশে আব্দুল হাই লখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকের উদ্ধৃতি দিয়ে পবিত্র হাদিছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বা সম্মানিত নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টির পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে এসেছেন।

رِوَايَةُ عَبْدِ الرَّزَّاقِ فِيْ مُصَنَّفِهٖ عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاَبِـىْ أَنْتَ وَأُمِّيْ أَخْبِرْنِـيْ عَنْ أَوَّلِ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللهُ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ فَقَالَ يَا جَابِرُ رَضِيَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ إِنَّ اللهَ خَلَقَ قَبْلَ الْأَشْيَاءِ نُوْرَ نَبِيِّكَ مِنْ نُوْرِهٖ

এই ইবারতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আব্দুল হাই লখনবী তার কিতাবে ইমাম হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সনদে বর্ণিত সর্বপ্রথম নূর মুবারক সৃষ্টি এ হাদীছ শরীফ খানা উল্লেখ করেছেন।

এরপর আব্দুল হাই লখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি

قَالَ الزُّرْقَانِـيُّ فِـيْ شَرْحِ الْـمَوَاهِبِ عِنْدَ شَرْحِ قَوْلِهٖ مِنْ نُوْرِهٖ

ইমাম যারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শরহে যারকানীর দলীল দিয়ে মিন নূরীহি শব্দের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। অর্থাৎ বাইতুল্লাহ, রুহুল্লাহ শব্দ গুলো যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার নেছবত বুঝাতে ব্যাবহার হয় তদ্রƒপ মিন নুরীহী শব্দেরও তেমন নেছবতী বা সর্ম্পক যূক্ত ব্যাখ্যার দলীল দিয়েছেন।

এরপর আব্দুল হাই লখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উল্লেখ করে বলেন-

قَدْ ثَبَتَ مِنْ رِوَايَةِ عَبْدِ الرَّزَّاقِ أَوَّلِيَّةُ النُّوْرِ الْمُحَمَّدِيِّ خَلَفًا وَّسَبَقَتْهُ عَلَى الْمَخْلُوْقَاتِ سَبَقًا

অর্থ: হযরত ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রেওয়ায়েত দ্বারা এটা প্রমাণ হয় পবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য সকল সৃষ্টির মধ্যে প্রথম সৃষ্টি। এবং উক্ত পবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত মাখলুকাতের উপর অগ্রগামি (আছারুল মারফুয়া ৪৩ পৃষ্ঠা)

এর পরের লাইনেই ওহাবীদের আপত্তি। তারা বলে থাকে আব্দুল হাই লখনবী নাকি হাদীছে জাবির রদ্বিায়াল্লাহু আনহু উনাকে জাল বলেছেন। আসুন আমরা ইবারতটা দেখি,

وَقَدْ اِشْتَهَرَ بَيْنَ الْقِصَاصِ حَدِيْثٌ أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِيْ وَهُوَ حَدِيْثٌ لَـمْ يَثْبُتْ

প্রসিদ্ধ রয়েছে اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِيْ (সর্বপ্রথম নূর মুবারক সৃষ্টি করা হয়েছে) এই হাদীছটি প্রমাণিত নয়। ভালো করে লক্ষ্য করুন, এই ইবারত ও পবিত্র হাদিছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইবারতে অনেক পার্থক্য। এটি অন্য একটি হাদীছ শরীফ আর এ সম্পর্কে আব্দুল হাই লখনবী বলেছেন এটা প্রমাণিত নয়। আর পূর্বের ইবারতে আমরা দেখেছি আব্দুল হাই লখনবী বলেছেন হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমাণিত। সূতরাং প্রমাণ হলো আব্দুল হাই লখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র হাদিছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে প্রমাণিত নয় বলেন নাই বরং তিনি অন্য একটা বর্ণনাকে প্রমাণিত নয় বলেছেন শাব্দিক ভাবে। এবং সেই রেওয়ায়েত বিষয়েও তিনি পরিশেষে বলেছেন যে-

قُلْتُ نَظِيْرٌ أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُورِىْ مِنْ عَدَمِ ثُبُوْتِهٖ لَفْظًا وَوُرُوْدِهٖ مَعْنًى

অর্থাৎ اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِيْ (সর্বপ্রথম নূর মুবারক সৃষ্টি করা হয়েছে) এটি শব্দগত ভাবে প্রমাণ না হলেও অর্থগতভাবে প্রমাণিত।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা যে বিষয়গুলো জানলাম,

১) আব্দুল হাই লখনবী তিনি জাতি নূরের বিরুদ্ধে আলোচনা করেছেন, পবিত্র সৃষ্ট নূর মুবারক উনার বিপক্ষে কিছু বলেন নাই।

২) তিনি স্পষ্টভাবে পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে থাকার দাবি করে সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্মানিত ও পবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে রায় দিয়েছেন।

৩) যে হাদীছ শরীফে সর্বপ্রথম সৃষ্টি নূর মুবারক প্রমাণিত নয় বলেছেন সেটা অন্য একটি রেওয়ায়েত, সেটা পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নয়।

৪) পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু না হওয়ার পরও সেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে সনদান প্রমাণিত না হলেও অর্থগতভাবে প্রমাণিত বলেছেন।

সূতরাং বাতিল ফির্কার মিথ্যাচারের হাকীকত আবারো ফাঁস হলো। তারা যে ইবারত কারচুপীকারী, মিথ্যাচারকারী, প্রতারক সেটা প্রমাণ হয়ে গেলো।

৪র্থ আপত্তির খন্ডন:: এক শ্রেনীর অজ্ঞ লোক প্রচার করে থাকে হাফিজে হাদীছ হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নাকি পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বা সর্বপ্রথম নূর মুবারক সৃষ্টি বিষয়ক হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলেছেন। আসুন আমরা বিষয়টার সত্যতা যাচাই করি। বিষয়টা তুলে ধরলে দেখবেন যারা আপত্তি করে তাদের প্রচারটা যে মিথ্যা ও প্রতারণামূলক তা প্রমাণিত হয়ে যাবে।

সর্বপ্রথম সম্মানিত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি এ আকীদার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম যে কলম ধরে সেই ব্যক্তির নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবনে সিদ্দীক আলা গুমারী (জন্ম: ১৯১০)। বর্তমান সময়ে সর্বপ্রথম সম্মানিত নূর মুবারক সৃষ্টি এ আক্বীদার বিরোধীতাকারীদের একমাত্র অবলম্বনই হচ্ছে এই ইবনে সিদ্দীক আল গুমারী। তার ৪/৫ টা বইতে সে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলেছে, বর্তমান বিরোধিতাকারীরাও খুব মজা পেয়ে গুমারীর ঐ ৪/৫ বইয়ের দলীল দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। ভাবটা এমন বিরুদ্ধে অনেকগুলো দলীল দিয়ে দিয়েছে। মূলত সেগুলো দলীল হিসাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। বরং সেগুলো জমহুর উলামায়ে কিরাম উনাদের বিরোধিতা করে নিজের একক ব্যক্তিমত বৈ কিছু নয়।

সেই গুমারী তার ‘ইরশাদুত তালিবিন নাজীব ইলা মা ফিল মাওলিদিন নাবাবী মিনাল আকাযীব’ গ্রন্থে লিখেছে-

مِنْهَا وَهُوَ اَشْهَرُهَا حَدِيْثٌ: أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرَ نَبِيِّكَ مِنْ نُوْرِهٖ يَا جَابِرُ عَزَّاهُ السُّيُوْطِيُّ فِيْ الْـخَصَائِصِ الْكُبْرٰى لِمُصَنَّفِ عَبْدِ الرَّزَّاقِ،

‘হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আপনার সম্মানিত নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক উনার কুদরতী নূর থেকে সৃষ্টি করেন। ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি খাসাইসুল কুবরা গ্রন্থে উক্ত হাদীছ শরীফখানার ব্যাপারে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফের উদ্ধৃতি দিয়েছেন।” (মজ’মু ফি কাশফিল হাকীকী আয যুযউল মাফকুদ মিন মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১০৪ পৃষ্ঠা; প্রকাশনা: দার আল মুহাদ্দিছ, রিয়াদ; প্রকাশ সন ১৪২৮ হিজরী)

সর্বপ্রথম নূর সৃষ্টি এ মতবাদের বিপক্ষে সর্বপ্রথম অবস্থানকারী আল গুমারী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছে হাফিজে হাদীছ, মুহাদ্দিছ হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “খাসায়েসুল কুবরা” কিতাবে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবের রেফারেন্সে হাদীসে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু উল্লেখ করেছিলেন। সূতরাং প্রমাণ হলো ইমাম সুয়ূতি রহমতুল্লাহি আলাইহি সর্বপ্রথম নূর মুবারক সৃষ্টি এ বিষয়ে হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিরোধিতা করেন নাই।

এই পর্যায়ে অনেকে বলতে পারে তাহলে ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল হাবী লিল ফতোয়া” কিতাবে যে বলেছেন-

لَيْسَ لَهٗ اِسْنَادٌ يُعْتَمَدُ عَلَيْهِ

এর এমন কোন সনদ নাই যার উপর নির্ভর করা যায়। এর ব্যাখ্যা তাহলে কি হবে?

আসুন আমরা ‘আল হাবী লিল ফতোয়া’ কিতাব থেকেই বিষয়টা বিস্তারিতভাবে দেখি। উক্ত কিতাবের ১/৩২৩ পৃষ্ঠায় ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে একটা মাসায়ালা জানতে চাওয়া হয়। সেখানে প্রশ্নকারী তার প্রশ্নে এই হাদীছটা উল্লেখ করেন-

اِنَّ اللهَ تَعَالٰى خَلَقَ نُوْرَ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَزَاَهٗ اَرْبَعَةَ اَجْزَاءٍ فَخَلَقَ مِنَ الْـجُزْءِ الْأَوَّلِ الْعَرْشَ. وَخَلَقَ مِنَ الْـجُزْءِ الثَّانِـيِّ الْقَلَمَ. وَخَلَقَ مِنَ الثَّالِثِ اللَّوْحَ ثُـمَّ قَسَّمَ الْـجُزْءَ الرَّابِعَ وَجَزَأَهٗ أَرْبَعَةَ اَجْزَاءٍ. وَخَلَقَ مِنَ الْـجُزْءِ الْأَوَّلِ الْعَقْلَ. وَخَلَقَ مِنَ الْـجُزْءِ الثَّانِـيِّ الْمَعْرِفَةَ. وَخَلَقَ مِنَ الْـجُزْءِ الثَّالِثِ نُوْرَ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ وَنُوْرَ الْأَبْصَارِ وَنُوْرَ النَّهَارِ وَجَعَلَ الْـجُزْءَ الرَّابِعَ تَـحْتَ سَاقِ الْعَرْشِ

উপরোক্ত এই হাদীছ শরীফখানা ভালো করে দেখেন এই হাদীছ শরীফ কিন্তু হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু না। এটা অন্য একটা হাদীছ শরীফ। এখানে সম্মানিত নূর মুবরাক সর্বপ্রথম সৃষ্টি একথা পর্যন্ত উল্লেখ নাই। এটা সম্পূর্ণ অন্য একটা বর্ণনা সেটা পবিত্র হাদীছে জাবির যারা পড়েছেন তারা মাত্রই বুঝবেন। এই হাদীছ সর্ম্পকে ইমাম হাফিজ হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-

لَيْسَ لَهٗ اِسْنَادٌ يُعْتَمَدُ عَلَيْهِ

এর এমন কোন সনদ নাই যার উপর নির্ভর করা যায়। অর্থাৎ প্রমাণ হলো পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিয়ে ইমাম সুয়ূতি রহমতুল্লাহি আলাইহি এ কথা বলেন নাই, অন্য একটা পবিত্র নূর মুবারক উনার হাদীছ শরীফ নিয়ে বলেছেন।

আর ইমাম সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ কথা থেকে যেটা প্রমাণ হয় উল্লেখ্য হাদীছ শরীফেরও সনদ উনার জানা ছিলো কিন্তু সেগুলো নির্ভর করার মত নয়। তাই তিনি বলেছেন “এর এমন কোন সনদ নাই যার উপর নির্ভর করা যায়”। আর বিষয়টাই গুমারীর নিকট খারাপ লেগেছে, তাই সে লিখেছে-

وَقَالَ فِـي الْـحَاوِيِّ … لَيْسَ لَهٗ اِسْنَادٌ يُعْتَمَدُ عَلَيْهِ. وَهٰذَا تَسَاهِلُ كَبِيْرٍ مِنَ السُّيُوْطِىِّ، كُنْتُ اُنْزِهُهٗ عَنْهُ

‘হাবী গ্রন্থে হযরত সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: হাদীসটির নির্ভরযোগ্য কোনো সনদ নেই। এ বক্তব্যটি হযরত সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহির পক্ষ থেকে বড় রকমের অবহেলা ও ঢিলেমি। হযরত সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এত বড় অবহেলা করবেন আমি তা মনে করতাম না। (ইরশাদুত তালিবিন নাজীব)

অর্থাৎ গুমারী আশা করেছিলো ইমাম সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীছ জাল বলবেন বা তার মত শক্ত কিছু বলবেন। কিন্তু সেটা না হওয়ায় গুমারী একটু বেজার। ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত ইমাম উনার প্রতি বিদ্বেষমূলক কথা বলতেও দ্বিধা করেনি। যাহোক এখানে আল গুমারীর কথা দ্বারাই কিন্তু বোঝা গেলো,

১) ইমাম হযরত সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার খাসায়েছুল কুবরা কিতাবে মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক সূত্রে পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উল্লেখ করেছেন।

২) ইমাম হযরত সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার হাবী লিল ফতোয়াতে অন্য একটা হাদীছ বিষয়ে বলেছেন “এর এমন কোন সনদ নাই যার উপর নির্ভর করা যায়”। পবিত্র হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিষয়ে কিছু বলেন নাই।

প্রমাণ হলো, হাফিজে হাদীছ হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সর্বপ্রথম নূর মুবারক সৃষ্টি এ বিষয়ে হাদীছে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কোন বিরোধিতা করেননি। বরং তিনি এ আকীদার পক্ষেই ছিলেন। সূতরাং বাতিলদের মুখোশ আবারো উন্মোচন হলো। সত্য প্রকাশ হলো।

৫ম আপত্তির খন্ডন:: সহীহ মুসলিম শরীফ উনার শুরুতে একটা হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে, আখেরী যামানায় একদল মিথ্যাবাদী দাজ্জালের অনুসারী বের হবে, তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শোননি এবং তোমাদের বাপদাদারাও শুনেনি। এর বাস্তবতা আমরা এই আখেরী যামানায় এসে দেখতে পাচ্ছি। মুসলমান সমাজে বিভেদ বা ফাটল সৃষ্টি করতে এই দাজ্জালদের আর্বিভাব। বাংলাদেশের মারকাযুদ দাওয়ার ও আল কাওছার পত্রিকার প্রধান আব্দুল মালেক সে দাজ্জালে কাজ্জাবের ভূমিকায় বেশ কুখ্যাতি অর্জন করেছে। আব্দুল মালেকের অন্যতম মান্যবর আব্দুল্লাহ ইবনে সিদ্দীক আল গুমারী ও তার অন্যান্য ছাত্ররা সর্বপ্রথম নূর মুবারক সৃষ্টি এ বিষয়ে এমন সব আপত্তি উত্থাপন করছে যা এর পূর্বে কেউ শোনে নাই। গুমারীর এক ছাত্র যার নাম আব্দুল্লাহ তালিদী আল মাগরীবি, সে বলেছে-

هُوَ مَوْضُوْعٌ بِاِتِّفَاقِ اَهْلِ الْـحَدِيْثِ، وَاِنْ اَجْـمَعَ عَلٰي اِيْرَادِهٖ اَصْحَابُ الْـمَوَالِيْدِ

“মুহাদ্দিছগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে এ হাদীসটি (পবিত্র নূর মুবারক উনার হাদীছ শরীফ) মাওযূ বা জাল। যদিও মীলাদ শরীফের অনুসারীগণ এ হাদীছটি (তাদের কিতাবে) এনেছেন।” (মজ’মু ফি কাশফিল হাকীকী আয যুযউল মাফকুদ মিন মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১০৬ পৃষ্ঠা; প্রকাশনা: দার আল মুহাদ্দিছ, রিয়াদ; প্রকাশ সন ১৪২৮ হিজরী)

কি আর্শ্চায কথা !!! পৃথিবীর কোন কোন মুহাদ্দিছ, কোথায় এ ইজমা করেছেন? আমরা অনুসন্ধান করেছি এমন দাবীর কথা দ্বিতীয় কোথাও পাইনি। এমন ভয়ানক মিথ্যা দাবী আখেরী যামানার সে দাজ্জালে কাজ্জাবের কথারই অনুরূপ। তবে এটা বোঝা গেলো মূলত তারা মুহাদ্দিছগণের ইজমা বলতে ২০/৩০ বছর আগে আব্দুল্লাহ ইবনে সিদ্দীক আল গুমারী ও তার ছাত্রদের ঐক্যমত্যকে বুঝাচ্ছে। আসতাগফিরুল্লাহ। পৃথিবীর একপ্রান্তে কিছু কাদিয়ানী একত্রিত হয়ে যদি ইজমা করে “বর্তমানে আরো নবী আসবে” সে ইজমা কি গ্রহনযোগ্য হবে? এদের ইজমারও হয়েছে সেই দশা।

অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার ইজমা কিসের উপর সেটা তার চোখেও দেখেনি বা দেখলেও চেপে গেছে। বিখ্যাত তাফসির কারক, ইমামুল মুফাসসিরীন, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وَقَدْ اِتَّفَقَ أَهْلُ الظَّاهِرِ وَالشُّهُوْدِ عَلٰى أَنَّ اللهَ تَعَالٰى خَلَقَ جَـمِيْعَ الأَشْيَاءِ مِنْ نُوْرِ مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَـمْ يَنْقُصْ مِنْ نُوْرِهٖ شَيْءٌ

অর্থ: এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল মাখলূক্বাত সম্মানিত পবিত্র “নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সৃষ্টি করেছেন। অথচ পবিত্র “নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কিঞ্চিত পরিমানও কমে নাই।” (তাফসীরে রুহুল বয়ান ৭ম খন্ড ১৯৭ পৃষ্ঠা ; লেখক: ইমামুল আল্লাম, খতেমুল মুফাসসিরিন, কুতুবে যামান, জামেউল উলুম হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি। ওফাত: ১১৩৭ হিজরী। প্রকাশনা: দারুল ফিকর, বাইরুত, লেবানন)

বিখ্যাত আলিম হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সর্বপ্রথম পবিত্র নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি এ বিষয়ে ইজমার দাবী করেছেন। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার ইজমা। এর বিপরীত পথে চলা গোমারাহী।

কারণ পক্ষে বিপক্ষে সকলেই জানেন পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরাম, মুহাদ্দিছ, ফকীহগণ সবাই এই আকীদাই পোষণ করতেন যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ,  হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার পবিত্র নূর মুবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি এবং এ সম্মানিত নূর মুবারক থেকে গোটা কায়িনাত সৃষ্টি। তাই আজ এই আখেরী যামানায় এসে যারা পূর্ববর্তী যামানার ইজমাকে অস্বীকার করে মনগড়া নিজেরা নিজেরা মিথ্যা ইজমার দাবি করে তারা দাজ্জালে কাজ্জাব। তাদের প্রতি আল্লাহ পাক উনার লা’নত।

৬ষ্ঠ আপত্তির খন্ডন:: আশ্চর্য লাগে তখন যখন আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার অনুসারীগণ কোন একটি বর্ণনা উল্লেখ করি সে বর্ণনায় কোন রাবী যদি দুর্বল হয় তখন খারেজী ও বাতিল ফির্কার লোকেরা সেটা জাল, দ্বয়িফ বলে ঝাঁপিয়ে পরে। অপর দিকে ঐ বাতিল ফির্কারা যখন নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কোন দলীল পায় না তখন তাদের কাছে মুনকার রাবী, মাওজু বর্ণনাকারী রাবীর বর্ণনাই হয় পুঁজি। এক্ষেত্রে সে বর্ণনা প্রচার করতে কোন দ্বিধাবোধ করে না। নাউজুবিল্লাহ!

সর্বপ্রথম পবিত্র ও মহাসম্মানিত নূরে হাবীবী  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি এটা অস্বীকার করার জন্য তারা একটা বর্ণনা পেশ করে-

مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلَّا وَفِـيْ سُرَّتِهٖ مِنْ تُرْبَتِهِ الَّتِـيْ يُوْلَدُ مِنْهَا فَإِذَا رُدَّ إِلٰى اَرْذَلِ الْعُمُرِ رُدَّ اِلٰـى تُرْبَتِهِ الَّتِـيْ خُلِقَ مِنْهَا حَتّٰـى يُدْفَنُ فِيْهَا، واِنِّـيْ وَأَبُوْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَّامُ وَعُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ خُلِقْنَا مِنْ تُرْبَةٍ وَاحِدَةٍ وَفِيْهَا نُدْفَنُ

অর্থ: প্রত্যেক শিশুর নাভীতে সেই মাটি রাখা হয় যেখান থেকে জন্ম হয়েছে। যখন তার জীবনের শেষ সময় চলে আসবে তখন সেই মাটিতে তাকে দাফন করা হবে যেখান থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাইয়্যিদুনা  হযরত সিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম একই মাটি মুবারক থেকে সৃষ্টি, একই জায়গায় দাফন হব।” (তারীখে বাগদাদ ৩/৫৪৩, তারিখে মাদীনাতু দিমাষ্ক ৪৪/১২১, আল হুজ্জাতু ফি বায়ানিল মুহাজ্জাতি ওয়া শরহু আকীদাতি আহলিস সুন্নাহ ২/৩৫৫ পৃষ্ঠা)

এই বর্ণনা দেখিয়ে তারা বলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী মানুষ। নাউযুবিল্লাহ। মজার বিষয় হচ্ছে এখানে এসে তারা আর রাবী খোঁজে না। আসমাউর রিজালের কিতাব খুলে দেখে না। চোখে টিনের চশমা পরে বসে থাকে।

কিন্তু আমরাতো সেটা করতে পারি না। উক্ত বর্ণনার তারিখে বাগদাদের টীকা দেখুন। সেখানে বর্ণনাটি স্পষ্ট মাওজু বা জাল বলা হয়েছে।

এই বর্ণনার একজন রাবী

مُوْسَى بْنُ سَهْلِ ابْنُ هَارُوْنَ الرَّازِيُّ

সম্পর্কে উলামায়ে কিরামগণ অনেক আপত্তি করেছেন। এই রাবী মুসা ইবনে সাহল ইবনে হারুন রাজী সম্পর্কে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

مُوْسَى بْنُ سَهْلِ ابْنُ هَارُوْنَ الرَّازِيُّ، عَنْ اِسْحَاقَ الْاَزْرَقِ بـِخَبْرٍ بَاطِلٌ

মুসা ইবনে সাহল ইবনে হারুন রাজী ইসহাক ইবনে আযরাকী থেকে বাতিল রেওয়ায়েত বর্ণনা করতো। (লিসানুল মিযান ৮/২০২)

ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও “মিযানুল এতেদাল ৪/২০৬ পৃষ্ঠায়” বাতিল বর্ণনাকারী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এ রাবী দ্বারা অনেক জাল বর্ণনার অভিযোগ রয়েছে। আর বাতিল ফির্কার কাছে এই বর্ণনাকারীর হাদীছই বেশ গ্রহনযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। এই হচ্ছে বাতিলদের চারিত্রিক অবস্থা। নিজেদের মতবাদের বিপক্ষে গেলে সেটা সহীহ হাদীছ শরীফ হলেও জাল। আর নিজেদের বদ আকীদা সাবেত করতে মওদ্বু হলেও সেটা গ্রহনযোগ্য। নাউজুবিল্লাহ!

তাদের দাবিকৃত আরেকখানা বর্ণনা যেটা ইমাম ইবনে আসাকীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তারিখে মাদীনাতু দিমাষ্ক ৪৪খন্ড ১২১ পৃষ্ঠায় দুইটা সনদে বর্ণনা করেছেন। উক্ত বর্ণনার একজন রাবী হচ্ছে-

اَبُوْ بَكْرٍ أَحْمَدُ بْنُ سَعِيْدِ بْنُ فَرْضَخِ الْأَخْـمِيْمِيُّ

এই রাবী সম্পর্কে রেজাল বিশারদ ও হাফিজে হাদীছ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

اَبُوْ بَكْرٍ أَحْمَدُ بْنُ سَعِيْدِ بْنُ فَرْضَخِ الْأَخْـمِيْمِيُّ: الْـمِصْرِيُّ، قَالَ الدَّارَ قُطْنِـيُّ: رَوٰى اَحَادِيْثَ فِـيْ ثَوَابِ الْـمُجَاهِدِيْنَ وَالْـمُرَابِطِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ مَوْضُوْعَةً كُلَّهَا وَكَذِبَ، لَا تَـحِلُّ رِوَايَتَهَا وَالْـحَمَلَ فِيْهَا عَلٰى اِبْنِ فَرْضَخٍ، فَهُوَ الْـمَتْهَمُ بِـهَا، فَاِنَّهٗ كَانَ يُرَكِّبُ الْأَسَانِيْدَ وَيَضَعُ عَلَيْهَا اَحَادِيْثَ..

হযরত দারা কুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: সে মুজাহিদ, গাজী, শহীদদের ফযিলতের বিষয়ে সমস্ত হাদীছ জাল বর্ণনা করতো এবং মিথ্যা বলতো। তাই ইবনে ফারদীখের বর্ণনার উপরে আমল করা জায়িয নেই। কারণ সে মনগড়া বর্ণনা করতো। সে সনদ বানাতো এবং তার উপরে হাদীছ বর্ণনা করতো। (লিসানুল মিযান ১/৪৭২: রাবী ৫৩০, মিযানুল এতেদাল ১/১৭৮)

সূতরাং দেখতেই পেলাম এই রাবীর বর্ননা দ্বারা দলীল দেয়া মোটেও গ্রহনযোগ্য না। এরপর আসুন দ্বিতীয় সনদে। উক্ত কিতাবে পরবর্তী আরেকটি বর্ণনা যা হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত একটি সনদ। উক্ত সনদে একজন রাবীকে দেখুন। নাম হচ্ছে

اَحْـمَدُ بْنُ الْـحَسَنِ بْنُ اَبَانَ الْـمِصْرِىُّ

এই রাবীর অবস্থা আরো শোচনীয়। ভয়ানক সব অভিযোগ রয়েছে উনার নামে। দেখুন হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হাফিয যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিষয়ে কি বলেছেন-

قَالَ اِبْنُ عَدِىٍّ: كَانَ يَسْرِقُ الْـحَدِيْثَ.

وَقَالَ اِبْنُ حِبَّانَ: كَذَّابٌ دَجَّالٌ، يَضَعُ الْـحَدِيْثَ عَلَى الثِّقَاتِ.

وَقَالَ الدَّارَ قُطْنِـيُّ: حَدَّثُوْنَا عَنْهُ وَهُوَ كَذَّابٌ.

অর্থ: হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সে হাদীছ চুরি করতো।

ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সে মিথ্যাবাদী, দাজ্জাল, সেকাহ রাবীদের নামে হাদীছ জাল কারী।

হযরত দারা কুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে সে মিথ্যাবাদী হিসাবে পরিচিত। (লিসানুল মিযান ১/৪২৬, রাবী ৪৪১; মিযানুল এতেদাল ৩৩০)

এরকম বিপজ্জনক রাবীর বর্ণনার দ্বারা কি করে দলীল দেয়া যেতে পারে। তাও আকীদার ক্ষেত্রে। ওহাবী বাতিল ফির্কার কাছে এসব দলীলই শেষ পর্যন্ত গ্রহনযোগ্য। নিজেদের ভ্রান্ত মতবাদ সাবেত করতে জাল বর্ণনাই তাদের কাছে সম্বল। নাউযুবিল্লাহ

তাদের একটি বর্ণনা পর্যালোচনা করবো। “আল হুজ্জাতু ফি বায়ানিল মুহাজ্জাতি ওয়া শরহু আকীদাতি আহলিস সুন্নাহ” কিতাবের ২/৩৫৫ পৃষ্ঠায় দুইটা সনদে হাদীছ শরীফ এসেছে।

উক্ত বর্ণনাদ্বয়ের প্রথম বর্ণনার একজন রাবী হচ্ছে

مُـحَمَّدُ بْنُ مُهَاجِرٍ

মুহম্মদ ইবনে মুহাজির। তার সর্ম্পকে ইমামগন কি বলেছেন নিজের চোখেও দেখে নিন-

وَضَاعَ يَرْوِيْ عَنْ اِبْنِ مُعَاوِيَةَ وَغَيْرِهٖ كَذِبَهٗ صَالِحٌ جُزْرَةُ وَضَعَّفَهُ الدَّارَ قُطْنِـىُّ وَقَالَ مَرَّةً مَتْرُوْكٍ، وَقَالَ الْـجُرْجَانِيُّ يَضَعُ الْـحَدِيْثَ

অর্থ: সে আবু মুয়াবিয়া ও অন্যান্যদের থেকে জাল হাদীছ বর্ণনা করতো। হযরত সালেহ যুজরা বলেন , সে মিথ্যাবাদী ছিলো। হযরত দারা কুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সে দ্বয়িফ ছিলো তিনি তাকে মাতরুকও বলেছেন। হযরত যুরজানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে হাদীছ জালকারী বলেছেন। (লিসানুল মিযান: ৭/৫৩১; রাবী ৭৪৫৪, আল কামিল ফি দ্বুয়াফাউর রিজাল ৩/২৭২)

হযরত সলেহ যুজরা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সে একদল ব্যক্তি থেকেও হাদীছ বর্ণনা করেছে যারা তার জন্মের ৩০ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। (লিসানুল মিযান: ৭/৫৩২)

আবু আহমদ হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,

لَيْسَ حَدِيْثِهٖ بِالْقَاءِمِ، رَاَيْتُ اَصْحَابَنَا يُلَيِّنُوْنَ اَمْرَهٗ، وَيَذْكُرُوْنَ مِنْ حَدِيْثِهٖ مَا لَا يُتَابِعُ عَلَيْهِ

তার থেকে মজবুত বর্ণনা নেই। আমাদের আসহাবগন তার কাজে আপত্তি করতেন। তারা বলতেন তার বর্ণনা গ্রহনযোগ্য নয়। (লিসানুল মিযান: ৭/৫৩২)

আবু হাতিম ইবনে হিব্বান বুসতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

يَضَعُ الْـحَدِيْثَ عَلَى الثِّقَاتِ

সিকাহদের নামে হাদীছ জাল করতো।

হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- وَضَاعٌ হাদীছ জাল কারী।

সূতরাং প্রমাণ হলো এই বর্ণনার রাবী মুহম্মদ ইবনে মুহাজির হাদীছ জাল করার অভিযোগ আছে। তার বর্ণিত রেওয়ায়েত দলীল হিসাবে মোটেও গ্রহনযোগ্য না। এরপর আসুন দ্বিতীয় সনদে। “আল হুজ্জাতু ফি বায়ানিল মুহাজ্জাতি ওয়া শরহু আকীদাতি আহলিস সুন্নাহ” কিতাবের ২/৩৫৫ আরেকটি বর্ণনা হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। উক্ত সনদে একজন  রাবীকে যার নাম হচ্ছে

اَحـْمَدُ بْنُ الْـحَسَنِ بْنُ اَبَانَ الْـمِصْرِىُّ

এই রাবীর সর্ম্পকে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

উক্ত বর্ণনার অরেকজন রাবী সম্পর্কে মুহাদ্দিছ ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মাওদ্বুয়াত” কিতাবে উল্লেখ করেন এবং সনদ সম্পর্কে ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

هٰذَا حَدِيْثٌ لَا يَصِحُّ، مُـحَمَّدٌ وَاَحْـمَدُ مَطْعُوْنٌ فِيْهِمَا وَفِيْهِ مُـجَاهِيْلُ مِنْهُمْ اَبُو الْيَسَعِ

এই হাদীছটি সহীহ নয়। মুহম্মদ বিন হুসাইনিল মারুজী এবং আহমদ বিন সাঈদীল আখমিমি তিরষ্কৃত অভিযুক্ত। আবুল ইয়াসা অজ্ঞাত বা অপরিচিত। (কিতাবুল মাওদ্বুয়াত ১ম খন্ড ২৪৫ পৃষ্ঠা ; প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া)

সুতরাং বোঝা গেলো এ রেওয়ায়েত সহীহ নয়। এক বর্ণনার তিন তিনজন রাবীর উপর অভিযোগ হয়েছে। কোনভাবেই দলীল হিসাবে গ্রহনযোগ্য নয়।

আজ যেসকল ওহাবীরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাটির সৃষ্টি প্রমাণ করতে চায় তারা যে কতবড় জালিয়াত তা আবারো প্রমাণ হলো। নিজেদের ভ্রান্ত মতবাদ সাবেত করতে তারা জাল বর্র্ণনা দিয়ে দলীল দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। নাউযুবিল্লাহ।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাাম তিনি মাটির সৃষ্টি এ মর্মে কোন গ্রহনযোগ্য বর্ণনাই নেই। এ বিষয়ে যে ৫ টা সনদ পাওয়া যায় তার সবকয়টাই মওদ্বু । তবে কিছু হাদীছ শরীফ আছে যেখানে দেখা যায় অন্যান্য মানুষের ব্যাপারে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক আদম সন্তানের নাভীতে মাটির একটি অংশ রাখা হয়, যেখানকার মাটি তার নাভীতে রাখা হয়েছিল মৃত্যুর পর সে ঐ স্থানেই সমাধিস্থ হবে।” বা “মানুষ যে মাটি দ্বারা তৈরি সে মাটিতেই তার দাফন হবে।”

কোন মাটিতে সৃষ্ট এই আলোচনায় যাওয়ার আগে আমাদের জানা দরকার পবিত্র কুরআন শরীফ উনাতে বর্ণিত মানুষ মাটির সৃষ্টি বলতে কি বুঝানো হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনাতে ১৪ খানা আয়াত শরীফ আছে যেখানে উল্লেখ আছে মানুষ মাটির সৃষ্টি। মানুষ মাটির সৃষ্টি বলতে যত পবিত্র আয়াত শরীফ আছে সেখানে শুধুমাত্র হযরত সফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকেই খাছ ভাবে বোঝানো হয়েছে। অন্য কোন মানুষকে না। অন্য কোন মানুষ মাটির সৃষ্টি না। বিস্তারিত জানতে পবিত্র আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৮২তম সংখ্যা পড়তে হবে।

এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, “মানুষ যে মাটি দ্বারা তৈরি সে মাটিতেই তার দাফন হবে।” তাহলে এ হাদীছ শরীফ উনার ব্যখ্যা কি? এ ধরণের হাদীছ শরীফ উনার কি ব্যাখ্যা বাতিল ফির্কা কিন্তু সেটা জানে না। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, মাতৃগর্ভে সন্তানের বয়স যখন চার মাস হয়, তখন নিয়োজিত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উক্ত সন্তানের হায়াত-মউত ও মৃত্যুস্থান সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জিজ্ঞাসা করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক লওহে মাহফুজ দেখে নিতে বলেন। নিয়োজিত হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা লওহে মাহফুজ দেখে যেখানে তার কবর হবে সেখান থেকে সামান্য মাটি এনে সন্তানের নাভীতে দিয়ে দেন। এটা মূলতঃ প্রতিটি মানুষের “কবরের স্থান” নির্ধারণের জন্যে দেয়া হয়। দেহ সৃষ্টির জন্য নয়। নিম্নে এর কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো।

আল্লামা শা’রানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তাযকিরায়ে কুরতুবী” কিতাবে উল্লেখ করেন-

رَوَى الدَّيْلَمِىُّ مَرْفُوْعًا كُلُّ مَوْلُوْدِ يُنَشَّرُ عَلٰى سُرَّتِهٖ مِنْ تُرَابٍ حُفِرَتْهُ فَاِذَا مَاتَ رُدَّ اِلٰى تُرْبَتِهٖ.

অর্থঃ- “হযরত ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে মরফু’ হিসেবে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, প্রতিটি সন্তানের নাভীর উপর (মাতৃগর্ভে) তার কবরের মাটি ছিটিয়ে দেয়া হয় এবং মৃত্যুর পর তাকে উক্ত মাটিতেই ফিরিয়ে নেয়া হয়।”

হযরত আবূ আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবনে আহমদ আল আনছারী আল কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “তাফসীরে কুরতুবী-এর ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৮৭ পৃষ্ঠায় লিখেন-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اِنَّ الْمَلَكَ الْمُوَكَّلَ بِالرِّحْمِ يَأْخُذُ النُّطْفَةَ فَيَضَعُهَا عَلٰى كَفِّهٖ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ مُـخَلَّقَةً اَوْ غَيْرَ مُـخَلَّقَةٍ ؟ فَاِنْ قَالَ مُـخَلَّقَةٌ قَالَ يَا رَبِّ مَا الرِّزْقُ مَا الْاَثَرُ مَا الْاَجَلُ؟ فَيَقُوْلُ اُنْظُرْ فِىْ اُمِّ الْكِتَابِ فَيَنْظُرُ ِفِـى اللَّوْحِ الْمَحْفُوْظِ فَيَجِدُ فِيْهِ رِزْقَهٗ وَاَثَرَهٗ وَاَجَلَهٗ وَعَمَلَهٗ وَيَأْخُذُ التُّرَابَ الَّذِىْ يُدْفَنُ فِى بُقْعَتِهٖ وَيَعْجِنُ بِهٖ نُطْفَتَهٗ.

অর্থ: “হযরত আবূ নঈম হাফিজ মুররা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই রেহেম অর্থাৎ গর্ভের জন্য নির্ধারিত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম (মাতৃগর্ভে) নুত্ফাকে নিজ হাতের তালুতে রাখেন। অতঃপর বলেন, হে প্রতিপালক! এই নুতফা দ্বারা সন্তান সৃষ্টি হবে কি হবেনা?’ যখন মহান আল্লাহ  পাক তিনি বলেন, ‘এটা দ্বারা সন্তান সৃষ্টি হবে। তখন হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন- তার রিযিকের ব্যবস্থা, মৃত্যুর আলামত কি ও মৃত্যুর কোথায় হবে? প্রশ্নের উত্তরে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, লওহে মাহফূজে দেখে নাও। হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম লাওহে মাহ্ফূজ দেখে সেখানে তার রিযিক, মৃত্যুর আলামত, মৃত্যুর স্থান ও আমল সম্পর্কে জেনে নেন। অতঃপর যেখানে তাকে দাফন করা হবে সেখান থেকে একটু মাটি নিয়ে তা নুত্ফার সঙ্গে মিশিয়ে দেন।” (তাযকিরায়ে কুরতুবী ১/৮৬)

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় তা হলো, এক হাদীছ শরীফে যদিও বলা হয়েছে যে, কবরের মাটি নাভীমূলে রেখে দেয়া হয়, কিন্তু অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, নুতফার সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ সন্তানের বয়স যখন মাতৃগর্ভে চার মাস হয় তথা সন্তানের দেহ বা আকার-আকৃতি যখন সৃষ্টি হয়ে যায় (বুখারী শরীফ ৩২০৮), তখন রূহ ফুঁকে দেয়ার সময় হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা তার কবরস্থান থেকে মাটি এনে নাভীমূলে রেখে দেন। এতে বুঝা গেল যে, উক্ত মাটি মূলতঃ দেহ সৃষ্টির জন্যে নয় বরং কবরস্থান নির্ধারণের জন্যে। যদি দেহ সৃষ্টির জন্যই হতো তবে দেহ সৃষ্টির পরে উক্ত মাটি নাভীতে রাখা হলো কেন? উক্ত মাটি রাখার পূর্বেই তো দেহ সৃষ্টি হয়ে গেছে তাই এখন রূহ ফুঁকে দেয়া হবে। সুতরাং বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, কবরের মাটি নাভীমূলে রেখে দেয়া হোক বা নুতফার সাথে মিশিয়ে দেয়া হোক তা দেহ সৃষ্টির জন্য নয় বরং কবরের স্থান নির্ধারণের জন্য।

প্রমাণ হলো সাধারন মানুষই মাটির সৃষ্টি না, আর সেখানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাাম উনাকে মাটির সৃষ্টি বলা কোন পর্যায়ের যিহালতী মূর্খতা সেটা বলার অবকাশই রাখে না।

বর্তমান পৃথিবীতে একমাত্র খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুহ্ইউস সুন্নাহ্, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলাহ্ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত উসীলায় আজ এ দলীলসমূহ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। সেই সাথে সকল বাতিল ফিরকার মুখোশও উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে উনার মুবারক সোহবতে আসা, নিজের আক্বীদা ও আমল বিশুদ্ধ করে নেয়া। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

-খাজা মুহম্মদ নূরুদ্দীন পলাশ।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম