মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার ও উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে এবং বিশেষ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ- ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৭)

সংখ্যা: ২৭১তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৬তম ফতওয়া হিসেবে

“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার ও উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে এবং বিশেষ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ- ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণের ফাযায়িল-ফযীলত ও বুযূর্গী-সম্মান মুবারক

(১) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক:

যিনি খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فِـىْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত আদেশ মুবারক করেন- নির্মাণ ও সম্মান করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য, ঐ সকল মুবারক ঘরসমূহ উনাদেরকে যে সকল মুবারক ঘরসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করা হয় ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা হয় সকাল-সন্ধ্যায়।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নূর শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)

আলোচ্য সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে কুরতুবী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-

(১০৯)

اَذِنَ مَعْنَاهُ اَمَرَ وَقَضٰى.

অর্থ: اَذِنَ শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন اَمَرَ তিনি সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন, قَضٰى সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (কুরতুবী শরীফ ১২/২৬৬)

আর اَنْ تُرْفَعَ উনার অর্থ মুবারক সম্পর্কে ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-

(১১০)

وَمَعْنٰـى اَنْ تُرْفَعَ قَالَ حَضْرَتْ مُـجَاهِدٌ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنْ تُبْنٰـى نَظِيْرُهٗ قَوْلُهٗ تَعَالـٰى وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرٰﻫٖﻢُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْـمٰعِيْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَـى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِـى الْـجَنَّةِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ مِنْ حَدِيْثِ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عُثْمَانَ ذِى النُّوْرَيْــنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ.

অর্থ: “আর اَنْ تُرْفَعَ শব্দ মুবারক উনার অর্থ- হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন,  اَنْ تُبْنٰى ‘নির্মাণ করা, তৈরি করা। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালাম মুবারক-

وَاِذْيَرْفَعُ اِبْرٰﻫٖﻢُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْـمٰعِيْلُ

“স্মরণ করুন, যখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা ঘর উনার ভিত্তি মুবারক নির্মাণ করেছিলেন।”

এখানে يَرْفَعُ ‘নির্মাণ করা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে একটি ঘর বা বালাখানা নির্মাণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনার থেকে “বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ”-এ বর্ণিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

‘তাফসীরে আব্দুর রাজ্জাক’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-

(১১১)

اَذِنَ اللهُ اَنْ تُبْنٰى.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে আব্দুর রাজ্জাক ২/৪৪২)

‘তাফসীরে দুররে মানছূর শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-

(১১২)

فِـىْ مَسَاجِدَ اَنْ تُبْنٰـى.

অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার ব্যাপারে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর ৬/২০২)

সুতরাং সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থসমূহ থেকে এই বিষয়টিই দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম বা সম্মান করার জন্য, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে পবিত্র রাখার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য অর্থাৎ না ভাঙ্গার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এই সম্মানিত আদেশ মুবারক লঙ্ঘন করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙবে অর্থাৎ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করবে না, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে এবং সমর্থন করবে, নিঃসন্দেহে তারা সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির এবং চির জাহান্নামী, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার শত্রু, যার কারণে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে কঠিন আযব-গযব ও লাঞ্ছনা এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। না‘ঊযুবিল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(১১৩-১১৪)

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِبْنُوا الْمَسَاجِدَ.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ নির্মাণ করো। অর্থাৎ ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসে না বরং আরো বেশী বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করতে হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মুছান্নাফে আবী শায়বাহ শরীফ ১/২৭৪, আস সুনানুল কুবরাহ লিলবাইহাক্বী ২/৬১৫)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(১১৫-১২৩)

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ قِرْصَافَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّهٗ سَـمِعَ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِبْنُوا الْمَسَاجِدَ وَاَخْرِجُوا الْقُمَامَةَ مِنْهَا فَمَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَـى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِى الْـجَنَّةِ قَالَ رَجُلٌ يَّا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهٰذِهِ الْمَسَاجِدُ الَّتِـىْ تُبْنٰـى فِى الطَّرِيْقِ قَالَ نَعَمْ وَاِخْرَاجُ الْقُمَامَةِ مِنْهَا مُهُوْرُ حُوْرِ الْعِيْـنِ.

অর্থ: “হযরত আবূ ক্বিরছাফাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি শুনেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করো এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো। অর্থাৎ ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসে না বরং আরো বেশী বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করতে হবে এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করো। সুবহানাল্লাহ! কেননা যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন। সুবহানাল্লাহ! একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রাস্তায় নির্মাণ করা হয়? (সেই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনাদের হুকুম কী? ওই সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা নির্মাণ করবেন, উনাদের জন্যও কি সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে বালাখানা নির্মাণ করা হবে?) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ। সুবহানাল্লাহ!

আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক থেকে ময়লা দূর করা তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অর্থাৎ ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসে না বরং আরো বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করতে হবে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ শুধু নির্মাণ করলেই চলবে না। সাথে সাথে উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণও করতে হবে এবং তা’যীম-তাকরীমের সাথে উত্তমভাবে সংরক্ষণ করাটা সম্মানিত জান্নাতী হুর উনাদের মোহরানাস্বরূপ। (অর্থাৎ যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবে এবং তা’যীম-তাকরীমের সাথে উত্তমভাবে সংরক্ষণ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে হুরদের সাথে বিবাহ দিবেন। নিশ্চিত সেই ব্যক্তি তিনি জান্নাতী।)” সুবহানাল্লাহ! (ত্ববারনী শরীফ ৩/১৯, দুরররে মানছূর ৪/১৪৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১১৩, জামি‘উছ ছগীর ১/৫, ফাতহুল কাবীর ১/২১, জামি‘উল আহাদীছ ১/১৩৭, কাশফুল খফা ২/৩৪, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ৩/৪৮৮, কানযুল ‘উম্মাল ৭/৬৫৫ ইত্যাদি)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(১২৪-১২৬)

عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) قَالَتْ اَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ فِى الدُّوْرِ وَاَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَــيَّبَ.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেছেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় করে রাখার জন্য অর্থাৎ ভাঙ্গার তো প্রশ্নই আসে না বরং আরো বেশী বেশী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করতে হবে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য এবং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ছহীহ ইবনে হিব্বান ৪/৫১৩ ইত্যাদি)

উপরোক্ত দলীলভিত্তি আলোচনার মাধ্যমে দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তাই সকলের জন্য ফরয হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী প্রতি বাড়িতে বাড়িতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করা। যে বা যারা এই বরকতময় ও নিয়ামতপূর্ণ কাজের আনজাম দিবে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ফতওয়া মুবারক অনুযায়ী তারা প্রত্যেকেই জান্নাতী হবে। সুবহানাল্লাহ! তাই এই বিষয়ে সরকারকে অতি সত্তর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণের ফযীলত মুবারক:

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(১২৭)

عَنْ عَمْرِو بْنِ عَبَسَةَ  رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ مَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا اَدْخَلَ الْـجَنَّةَ.

অর্থ: “হযরত ‘আমর ইবনে আবাসাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান  আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, সে সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (কানজুল উম্মাল ৭/৬৫৪)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(১২৮-১৩০)

عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عُثْمَانَ ذِى النُّوْرَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَـى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِـى الْـجَنَّةِ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(১৩১-১৩৪)

عَنْ حَضْرَتْ عُثْمَانَ ذِى النُّوْرَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَـى اللهُ لَهُ مِثْلَهٗ فِـى الْـجَنَّةِ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে অনুরূপ একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, সুনানে ইবনে মাজাহ্ শরীফ, আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ২/৪৩৭, শু‘য়াবুল ঈমান ৪/৩৭৩ ইত্যাদি)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(১৩৫-১৪০)

عَنْ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَنٰـى مَسْجِدًا يُذْكَرُ فِيْهِ اسْمُ اللهِ بَنَـى اللهُ لَهٗ بَيْتًا فِـى الْـجَنَّةِ.

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করার উদ্দেশ্যে একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ শরীফ, ছহীহ ইবনে হিব্বান শরীফ ৪/৪৮৬, মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ শরীফ ১/৩১০, জামি‘উল আহাদীছ ২০/১৩০, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২২৩২৫, কানযুল উম্মাল ৭/৬৫৩ ইত্যাদি)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(১৪১-১৪৩)

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَنٰـى لِلّٰهِ مَسْجِدًا بَنَـى اللهُ لَهٗ قَصْرًا فِـى الْـجَنَّةِ مِنْ دُرٍّ وَّيَاقُوْتٍ وَّزَبَرْجُدٍ.

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার মধ্যে মুক্তা, ইয়াকূত ও জমরূদের একটি বালাখানা নির্মাণ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (জামি‘উল আহাদীছ ২০/১২৬, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২২৩১৪, কানযুল উম্মাল ৭/৬৫৪ ইত্যাদি)

অসমাপ্ত-পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০