মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাওলিদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার মহাসম্মানিত স্থান যিয়ারত করা সুন্নত

সংখ্যা: ২৭০তম সংখ্যা | বিভাগ:

مَوْلِدٌ শব্দটির অর্থ জন্মের স্থান বা পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান। আর اَلنَّبِـى ‘নবী’ শব্দ দ্বারা বুঝায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে।

সুতরাং مَوْلِدٌ النَّبِـىُّ শব্দ দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান মুবারক উনাকে বুঝিয়ে থাকে। আর এই পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান মুবারক পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থিত পবিত্র ক’াবা শরীফ উনার একদম নিকটবর্তী।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اُتِيْتُ بِدَابَّةٍ فَوْقَ الْـحِمَارِ وَدُوْنَ الْبَغْلِ خَطْوُهَا عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهَا فَرَكِبْتُ وَمَعِي جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَسِرْتُ فَقَالَ انْزِلْ فَصَلِّ فَفَعَلْتُ. فَقَالَ اَتَدْرِي اَيْنَ صَلَّيْتَ؟ صَلَّيْتَ بِطَيْبَةَ وَاِلَيْهَا الْمُهَاجَرُ ثُـمَّ قَالَ انْزِلْ فَصَلِّ فَصَلَّيْتُ فَقَالَ اَتَدْرِي اَيْنَ صَلَّيْتَ؟ صَلَّيْتَ بِطُوْرِ سَيْنَاءَ حَيْثُ كَلَّمَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ ثُـمَّ قَالَ انْزِلْ فَصَلِّ فَنَزَلْتُ فَصَلَّيْتُ. فَقَالَ اَتَدْرِي اَيْنَ صَلَّيْتَ؟ صَلَّيْتَ بِبَيْتِ لَـحْمٍ حَيْثُ وُلِدَ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ. ثُـمَّ دَخَلْتُ بَيْتَ الْمُقَدَّسِ فَجُمِعَ لِـيَ الْاَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَقَدَّمَنِي جِبْرِيلُ حَتَّى اَمَـمْتُهُمْ ……….

অর্থ : “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, (পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার বরকতময় রাত্রে) আমার সামনে এমন একটি জন্তু আনা হলো যা আকারে গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট এবং যার কদম পড়ত দৃষ্টির শেষ সীমায়। আমি তার উপর আরোহণ করলাম। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন। আমরা সফর করলাম (পবিত্র মদীনা শরীফ পর্যন্ত)। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি যদি এখানে নামায আদায় করতেন! (তাহলে এ স্থানটি বরকতময় হতো)। আমি নামায আদায় করলাম। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি কোথায় নামায আদায় করেছেন তা তো আপনি জানেন। আপনি নামায আদায় করেছেন ‘ত্বইবা’য়। এ শহরেই আপনি হিজরত করবেন। আবার হযরত জিবরীল আলাইহিস তিনি সালাম বললেন, আপনি যদি এখানে নামায আদায় করতেন! (তাহলে এ স্থানটি বরকতময় হতো)। আমি নামায আদায় করলাম। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি কোথায় নামায আদায় করেছেন তা তো আপনি জানেন। আপনি ‘তূরে সায়না’ নামক স্থানে নামায আদায় করেছেন। যেখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে কথা বলেছিলেন। তারপর আবার এক স্থানে গিয়ে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি যদি এখানে নামায আদায় করতেন! (তাহলে এ স্থানটি বরকতময় হতো)। আমি নামায আদায় করলাম। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি কোথায় নামায আদায় করেছেন তা তো আপনি জানেন। আপনি ‘বায়তু লাহম’ নামক স্থানে নামায আদায় করেছেন। যেখানে হয়রত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। তারপর আমি ‘বায়তুল মাকদিস’-এ প্রবেশ করলাম এবং সমস্ত হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে আমার নিকট একত্র করা হলো এবং হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে সম্মুখে এগিয়ে দিলেন আমি সকলের ইমামতি করলাম। ……..।” (নাসায়ী শরীফ: কিতাবুছ ছলাত  হাদীছ শরীফ নং ৪৫০)

বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দেখা যাচ্ছে, সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার বরকতময় রজনীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার বরকতময় স্থানে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন এবং সেখানে পবিত্র নামায আদায় করেছেন। অর্থাৎ তিনি তা যিয়ারত মুবারক করেছেন।

সুতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে প্রমাণিত হলো যে, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান যিয়ারত করা সুন্নত। তাই নূূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান মুবারক যিয়ারত করা সুন্নত।

এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَاَمْنًا وَاتَّـخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى ۖ

অর্থ : “স্মরণ করুন, যখন বায়তুল্লাহ শরীফকে মানুষের জন্য সম্মিলন স্থল, শান্তি ও নিরাপত্তার স্থান হিসেবে তৈরি করেছি; এবং নির্দেশ দিয়েছি, তোমরা মাক্বামে ইবরাহীমে নামায পড়ো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৫)

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মাক্বামে ইবরাহীম বলতে সেই ঐতিহাসিক পাথরকে বোঝানো হয়েছে, যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ নির্মাণ করেন। আর এই সম্মানিত পাথরখানা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ নির্মাণকালীন সময়ে সম্মানিত জান্নাত থেকে নিয়ে এসে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারক উনাদের নিচে রেখে দেন। এ পাথরখানা চঙ বা মইয়ের ন্যায় কাজ করতো। যখন তিনি উঁচুতে কাজ করার ইচ্ছা মুবারক করতেন, তখন তিনি পাথর খানায় দাঁড়াতেন এবং তা উনাকে নিয়ে কুদরতীভাবে উপর উঠতো। আবার উনার মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী তা কুদরতীভাবে নিচে নামতো।

পবিত্র কা’বা শরীফ নির্মাণ ও পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আবাদ, উনাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পৃথিবীর যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক আনার সম্মানিত শহর পবিত্র মক্কা শরীফ উনাকে সুসজ্জিত করা। যার প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে।

যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَاِذْ يَرْفَعُ اِبْرَاهِيْمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَاِسْـمَاعِيْلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ. رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا اُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَاَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا ۖ اِنَّكَ اَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ. رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْـحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْ ۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْـحَكِيْمُ.

অর্থ : “স্মরণ করুন, যখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ও হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি- উনারা পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিত্তি স্থাপন করছিলেন। উনারা আরজী মুবারক করেছিলেন, হে মহান রব তায়ালা! আমাদের থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। হে মহান রব তায়ালা! আমাদের উভয়কে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি মুসলমান উম্মত সৃষ্টি করে দিন, আমাদের হজ্জের রীতিনীতি জানিয়ে দিন এবং আমাদের কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি মর্যাদা বুলন্দকারী, দয়ালু। হে মহান রব তায়ালা! তাদের নিকট একজন মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করুন যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াত শরীফসমূহ তিলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয়ই আপনিই পরাক্রমশালী হিকমতওয়ালা।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৭-১২৯)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْـمٰنِ بْنِ مُعِمَّرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَا دُعوة حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وبشرى حَضْرَتْ عِيْسٰى ابن مَرْيَـم عَلَيْهِمَ السَّلَامُ.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান বিন মুায়ম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক দু‘আ ও হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক সুংসংবাদের প্রতিফল।” (জামিউল আহাদীছ ৭ম খ-, ১২ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৫৬৮৬; কানযুল উম্মাল ১১তম খ-, ৩৮৪ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৩১৮৩৪-৩১৮৩৪; জামিউল জাওয়ামে ১ম খ-, ৬০০১ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ২১৯)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে দেখা যাচ্ছে যে, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ পুণঃনির্মাণের পর যে দু‘আ মুবারক করেছিলেন উক্ত দু‘আ মুবারক মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কবুল করছেন। তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দয়া ও ইহসান মুবারক করে পবিত্র মক্কা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। আর পবিত্র কা’বা শরীফ পুণঃনির্মাণের সময় উপরে উঠতে ও নিচে নামতে যে পাথর মুবারক ব্যবহার করেছেন তাই হচ্ছে মাক্বামে ইবরাহীম।

সুতরাং হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার স্পর্শ ধন্য সম্মানিত মাক্বামে ইবরাহীম উনার পিছনে নামায পড়া কতটুকু গুরুত্ব বহন করে। আর সেই মাক্বামে ইবরাহীম স্থাপনের মূল উপলক্ষ্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ ধন্য উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থান কতটুকু গুরুত্ব বহন করবেন? আর উক্ত বরকতময় স্থান মুবারকে নামায আদায় করা কতটুকু ফযীলতের কারণ হবে?

এই বিষয় অনুধাবনে সচেষ্ট হয়েছিলেন কথিত আব্বাসীয় শাসক হারুনুর রশিদের মা খায়যুরান বিবি রহমতুল্লাহি আলাইহা। আর তাই তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থান মুবারকে নামায আদায় করার সুব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে হিজরী ৩য় শতকের পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মুসলিম ইতিহাসবিদ আল আজরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২১৯ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন-

فَمِنْهَا الْبَيْتُ الَّذِي وُلِدَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي دَارِ اَبِـىْ يُوْسُفَ، وَلَـمْ يَزَلْ هَذَا الْبَيْتُ فِي الدَّارِ حَتّٰى قَدِمَتِ الْـخَيْزُرَانُ اُمُّ الْـخَلِيْفَتَيْنِ مُوْسٰى وَهَارُوْنَ، فَجَعَلَتْهُ مَسْجِدًا يُصَلَّى فِيْهِ،

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সেখানে কথিত খলীফা হারুনুর রশীদ ও কথিত খলীফা মুসার মাতা খায়জুরান রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি তাশরীফ আনেন। সেই জায়গাকে নামায আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন।” (আল মক্কাহ, ৪র্থ খ-, ৫ পৃষ্ঠা)

এই বর্ণনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থান মুবারক-এ নামায আদায় করা ও অন্যান্য ইবাদত করা কত ফযীলতের কারণ।

বস্তুত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থান মুবারক-এ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ঘটনা সময়ের আবর্তে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে, যা বিভিন্ন কিতাবাদীতে এমনকি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মশহূর আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনীতেও পাওয়া যায়।

যেমন মুফাসসির আন নাক্কাস রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৬৬-৩৫১ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থানে প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুপুরে দোয়া করা হতো।” (আশ্ শিফাউল গারাম বিআখবারি বিলাদিল হারাম)

হযরত ইবনে জুবায়ের রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৪০-৬৪০ হিজরী) তিনি উল্লেখ করেছেন- “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বাড়ি মুবারক-এ সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা হতো।” (কিতাবুর রিহাল, পৃষ্ঠা ১১৪-১১৫)

সপ্তম হিজরী শতাব্দীর ইতিহাসবিদ শায়েখ আবুল আব্বাস আল আযাফি এবং উনার ছেলে আবুল কাসিম আল আযাফি (সার্জারির জনক) উনাদের কিতাব-এ লিখেন- “পবিত্র মক্কা শরীফ-এ পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিন ধার্মিক ওমরাহ-হজ্জ যাত্রী এবং পর্যটকেরা দেখতেন যে, সকল ধরণের কার্যক্রম (দুনিয়াবী) বন্ধ, এমনকি ক্রয়-বিক্রয় হতো না, উনাদের ব্যতীত যারা সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান জড়ো হয়ে দেখতেন। এ দিন পবিত্র কা’বা শরীফ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হতো।” (দুররুল মুনাজ্জাম)

ইতিহাসবিদ শায়েখ ইবনে যাহিরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘জামীউল লতিফ ফি ফাদলি মক্কাতা ওয়া আহলিহা’, শায়েখ হাফিয ইবনে হাযার আল হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল মাওলিদুশ শরীফুল মুনাজ্জাম’ এবং ইতিহাসবিদ শায়েখ আল নাহরাওয়ালি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত ‘আল ইমাম বি’আলামি বাইতিল্লাহিল হারাম’ কিতাবের ২০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- “প্রতি বছর মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ বাদ মাগরীব ৪ জন সুন্নী মাযহাব উনার মুকাল্লিদ, বিচারক, ফিক্বহবিদ, শায়েখান, শিক্ষক, ছাত্র, হাকিম, বিজ্ঞজন এবং সাধারণ মুসলমান মসজিদের বাহিরে আসতেন এবং তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে করতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান- হুজরা শরীফ পরিদর্শন করতেন। মুবারক স্থান- হুজরা শরীফ যাওয়ার পথ আলোকসজ্জা করা হতো। সকলে উত্তম পোষাক পরিধান করতেন এবং সাথে উনাদের আল-আওলাদদের নিতেন। পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থানের ভিতরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময়কার বিভিন্ন বিষয়াদি বিশেষভাবে বর্ণনা করা হতো। তারপর উসমানীয়দের জন্য সবাই দোয়া করতেন এবং বিনয়ের সাথে দোয়া করা হতো। ইশা নামায শুরুর কিছুক্ষণ পূর্বে সকলে মসজিদে চলে আসতেন (যা থাকতো লোকে লোকারণ্য) এবং সারিবদ্ধভাবে মাক্বামে ইবরাহীম উনার সামনে বসতেন।”

হযরত ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ। উনার সময়কালে তিনি নিজে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন। এমনকি তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ যিয়ারতকালে সেখানে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ঘটনা উনার কিতাবে বর্ণনা করেছেন-

وَكُنْتُ قَبْلَ ذٰلِكَ بِـمَكَّةَ الْمُعَظَّمَةِ فِى مَوْلِدِ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ يَوْمِ وِلَادَتِهٖ وَالنَّاسُ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَذْكُرُوْنَ اِرْهَاصَاتِهِ الَّتِىْ ظَهَرَتْ فِىْ وِلَادَتِهٖ وَمَشَاهَدِهٖ قَبْلَ بِعْثَتِهٖ فَرَأَيْتُ اَنْوَارًا سَطَعَتْ دَفْعَتً وَاحِدَةً لَااَقُوْلُ اِنّـِىْ اَدْرَكْتُهَا بِبَصَرِ الْـجَسَدِ وَلَااَقُوْلُ اَدْرَكْتُهَا بِبَصَرِ الرُّوْحِ فَقَطْ وَاللهُ اَعْلَمُ كَيْفَ كَانَ الْاَمْرُ بَيْنَ هٰذَا وَ ذٰلِكَ فَتَاَمَّلْتُ تِلْكَ الْاَنْوَارَ فَوَجَدْتُـهَا مِنْ قِبَلِ الْمَلَائِكَةِ الْمُؤَ كَّلِيْنَ بِاَمْثَالِ هٰذِهِ الْـمَشَاهِدِ وَبِاَمْثَالِ هٰذِهِ الْمجَالِسِ وَرَاَيْتُ يـُخَالِطُه اَنْوَارُ الْمَلَائَكَتِهِ اَنْوَارَ الرَّحْـمَةِ.

অর্থ : “আমি এর পূর্বে পবিত্র মক্কা মু’আযযামায় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় হুজরা শরীফ উনার মধ্যে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর একত্রে দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র মুবারক নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ মুবারক নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবং এটাও বলতে পারি না যে, এগুলো কেবল মাত্র অন্তর চক্ষুতে দেখেছিলাম। এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কি ছিল, তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। অতঃপর আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং উপলব্ধি করতে পারলাম যে, এই নূর বা জ্যোতি ওই সব ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, যাঁরা এ ধরণের মজলিস ও উল্লেখযোগ্য (দ্বীনী) স্থানসমূহে (নূর বিকিরণের জন্য) নিয়োজিত থাকেন। আমার অভিমত হল সেখানে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নূর ও রহমতের নূরের সংমিশ্রণ ঘটেছে।” (ফুয়ূযুল হারামাইন [আরবী-উর্দু], পৃষ্ঠা ৮০-৮১)

উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মাওলিদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান মুবারক যিয়ারত করা সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। তাই যুগ যুগ ধরে ধারাবাহিকভাবে এই মহান সুন্নতের প্রচলন আজো বিদ্যমান রয়েছে।

-মুহম্মদ জুলহাজুদ্দীন।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম