মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথোপকথন মুবারক (২য় পর্ব)

সংখ্যা: ২৯০তম সংখ্যা | বিভাগ:

ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২০শে রবী‘উছ ছানী শরীফ পবিত্র জুমু‘আহ শরীফ উনার খুৎবা মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “এখন যে ফালইয়াফরাহূ শরীফ মাহফিল হচ্ছে উনার মধ্যে উনাদের বুলন্দি শান-মান প্রকাশ করতে হবে। এখানে আরেকটা বিষয় রয়ে গেছে। যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِـيْـنَ مِنْ اَنْـفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهٰتُـهُمْ

এখানে বলা হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনদের কাছে তাদের জানের চেয়েও বেশি প্রিয়। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

وَاَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهٰتُـهُمْ

হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সমস্ত সৃষ্টির মহাসম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

এখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বুলন্দী শান মুবারকটা প্রকাশ করা হয়েছে। আবার বলা হয়েছে-

وَتَـقَلُّـبَكَ فِـى السّٰجِدِيْنَ

আপনাকে সিজদাকারী উনাদের মাধ্যম দিয়েই স্থানান্তর করা হয়েছে অথার্ৎ যমীনে তাশরীফ মুবারক আনার ব্যাপারে যাঁরা সিজদাকারী উনাদেরকে অবলম্বন করা হয়েছে। সিজদাকারী উনাদের মাধ্যম দিয়েই আপনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। এটা একটা বুলন্দী শান মুবারক। এই যে শান মুবারক, এটাই হচ্ছে-

وَرَفَـعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ

বান্দা-বান্দী, জিন-ইনসানের দায়িত্ব হচ্ছে, কতর্ব্য হচ্ছে, ফরয হচ্ছে এই শান মুবারকগুলি প্রচার এবং প্রসার করা। এই প্রচার-প্রসার করাটাই হচ্ছে হাক্বীক্বী ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ। আর এটাই বান্দা-বান্দী, জিন-ইনসানের হাক্বীক্বী মযার্দা-মর্তবা, ফযীলত, কুরবত-নিসবত হাছিলের সর্বোত্তম একটা মাধ্যম। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

উনাদের শান-মান মুবারক যদি না বুঝে মানুষ, তাহলে সে বর্ণনা করবে কি করে? আর বর্ণনা না করতে পারলে, উনাদের ফযীলতটা প্রচার-প্রসার করতে না পারলে, সে এর থেকে কি করে নিয়ামত হাছিল করবে? আমরা তো এজন্য অনেক রেসালা শরীফ প্রকাশ করেছি। এই রেসালাগুলো ব্যাপক প্রচার-প্রসার করা দরকার। এই বুলন্দী শান মুবারক। তাহলে নিসবত-কুরবত হাছিলে সহযোগিতা হবে। এখন ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ এটা অনন্তকাল পালন করতে হবে। যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি করে যাচ্ছেন, সমস্ত হযরত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা করে যাচ্ছেন, সমস্ত সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সমস্ত জিন-ইনসানকে করতে হবে অনন্তকাল যাবৎ। আমরা যেটা বলে থাকি- হায়াতে, মউতে, কবরে, হাশরে-নশরে, মীযানে-পুলছিরাতে, জান্নাতে যেয়েও অনন্তকাল যাবৎ করতে হবে। বিষয়টা খুব ফিকির করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এটা সাধারণভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন,

اَنِ اشْكُـرْ لِــىْ وَلِـوَالِدَيْكَ

অর্থ: “তোমরা আমার শুকুরগুজারী করো এবং তোমাদের পিতা-মাতার শুকুরগুজারী করো।”

এটা আমভাবে। কিন্তু হাক্বীক্বত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শুকুরগুজারী করতে হবে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

বিষয়টা কিন্তু খুব ফিকিরের বিষয়। সাধারণভাবে মানুষ অর্থ করে থাকে একটা। কিন্তু হাক্বীক্বী অর্থ আরেকটা।  এরকম হাজার- লক্ষ-কোটি অর্থ থাকে। এটাই কিন্তু হযরত ইমামুল আউওয়াল হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন, তিনি সূরা ফাতিহা শরীফ হোক, বিসমিল্লাহ শরীফ হোক বা ‘বা’ অক্ষর মুবারক হোক উনাদের তাফসীর করলে ৭০ উটের বোঝা হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

নিশ্চয়ই প্রত্যেকটা সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ, মহাসম্মানিত  ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বা অন্যান্য যা আছে এখানে অনেক হাক্বীক্বত রয়ে গেছে। সেখান থেকে যতটুকু জানা যায়, সেটা জেনে সে অনুযায়ী আমল করা। আমভাবে

اَنِ اشْكُـرْ لِــىْ وَلِـوَالِدَيْكَ

অর্থ: “তোমরা আমার শুকুরগুজারী করো এবং তোমাদের পিতা-মাতার শুকুরগুজারী করো।”

এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়- হযরত সুলত্বানুল আরিফীন বাইযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছাত্র বয়সে যখন এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফখানা পড়লেন, তখন তিনি উনার উস্তাদকে জিজ্ঞাসা করলেন, সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অর্থ মুবারক কী? উস্তাদ বললেন- যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনি এখানে বলেছেন যে, ‘তোমরা আমার শুকুরগুজারী করো এবং তোমাদের পিতা-মাতার শুকুরগুজারী করো।’ তখন তিনি বললেন, হুযূর! বেয়াদবী মাফ করবেন- আমাকে আজকে একটু ছুটি দিন। উনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসলেন। এসে উনি উনার মাকে বললেন- ‘এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুটা হক্বের কথা বলেছেন। এক. মহান আল্লাহ পাক উনার শুকুরগুজারী করা। দুই. পিতা-মাতার শুকুরগুজারী করা। তিনি বললেন যে, আমার পক্ষে দুটো হক্ব এক সাথে আদায় করা সম্ভব না। হয় আপনি আমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য ছেড়ে দেন, না হয় আপনার জন্য কবূল করে নেন। উনার মা ছিলেন নেককার, আল্লাহওয়ালী। তিনি বললেন, ঠিক আছে; তাহলে আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনারা জন্য আমি ছেড়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

এই প্রসঙ্গে হযরত বাইযীদ বোস্তামী রহমতু্ল্লাহি আলাইহি উনার অনেক ওয়াকেয়া রয়েছে। উনার বিছাল শরীফের পর এক বুযূর্গ ব্যক্তি দেখতে পেলেন, হযরত বাইযীদ বোস্তামী রহমতু্ল্লাহি আলাইহি উনি জান্নাতে উড়তেছেন। উড়ে উড়ে ভ্রমন করতেছেন। সেই বুযূর্গ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, হে হযরত সুলত্বানুল আরিফীন রহমতু্ল্লাহি আলাইহি! আপনি এতো মযার্দা কি করে লাভ করলেন? আপনি উড়ে উড়ে সারা জান্নাত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেছেন যে, আসলে আমি এটা আমার মার দু‘আর বদৌলতে লাভ করেছি। মার জন্য আমি অনেক কষ্ট স্বীকার করেছি। আমার মা আমার জন্য দু‘আ করেছেন। সে দু‘আর বদৌলতে আমাকে এতো মযার্দা দেওয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

আমার বলার বিষয় হচ্ছে- এখন কেউ যদি হাক্বীক্বী ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে চায়, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনাদের সংশ্লিষ্ট যাঁরা উনাদের ছানা-ছিফত, তা’যীম-তাকরীম, খিদমতের বিষয়টা ব্যাপকভাবে করতে হবে। তাহলে তার পক্ষে হাক্বীক্বী ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ পালন করা সহজ এবং সম্ভব হবে। কারণ সাধারণ পিতা-মাতার জন্য যদি শুকুরগুজারী করতে হয়, তাহলে উনাদের জন্য কি করতে হবে? মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِــىْ اُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلـٰى وَلَدِهِـمَا قَالَ هُـمَا جَـنَّـتُكَ وَنَارُكَ

হযরত আবূ উমামাতা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلـٰى وَلَدِهِـمَا

একজন সন্তানের উপর পিতা-মাতার প্রতি কী হক্ব রয়েছে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন,

هُـمَا جَـنَّـتُكَ وَنَارُكَ

আপনার পিতা-মাতা আপনার বেহেস্ত এবং আপনার দোজখ।

অর্থাৎ পিতা-মাতা উনাদেরকে সন্তুষ্টি করতে পারলে, জান্নাত পাবেন। সুবহানাল্লাহ! আর সন্তুষ্ট করতে না পারলে জাহান্নামী হতে হবে।  নাউযুবিল্লাহ!

এটা কিন্তু সাধারণ পিতা-মাতার কথা বলা হচ্ছে। এটা ফিকির করতে হবে। সাধারণ ব্যক্তির সাধারণ পিতা-মাতাকে খুশি করতে পারলে, সে জান্নাত পাবে। অসন্তুষ্ট করলে, জাহান্নাম।

এই প্রসঙ্গে মশহুর একটা ওয়াকেয়া রয়েছে। যেটা আমাদের পত্রিকায় আমরা দিয়েছি। এক ব্যক্তি ছিলো। যার নাম মুহম্মদ বিন হারূন বখলী। এই ঘটনাটা বর্ণনা করেছেন স্বয়ং সুলতা¡নুল আরিফীন হযরত বাইযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই। তিনি বলেন, আমি একবার হজ্জে গেলাম। হজ্জে যাওয়ার পরে হজ্জ করলাম। হজ্জ যখন সম্পাদন হয়ে গেলো, আমি যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক রব আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হলাম। রুজু হয়ে বললাম- বারে এলাহী! এ বছর কতো লোক হজ্জ করলো? কার হজ্জ কবূল হলো? কারটা কবূল হলো না? তখন যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক রব আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে জানালেন, এই বছর ছয় লক্ষ লোক হজ্জ করেছে। সকলের হজ্জ কবূল হয়েছে। একটা লোকের হজ্জ কবূল হয়নি। হযরত সুলত্বনুল আরিফীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- আমি বললাম, বারে এলাহী! এটা কিরূপ কথা সকলের হজ্জ কবূল হলো, একটা লোকের হজ্জ কবূল হলো না। সেটা কে? এমন বদ নছীব, বদ বখত লোকটা কে? আপনি যদি দয়া করে তার পরিচয়টা দিতেন? আমি তার সাথে একটু সাক্ষাৎ করবো। মহান আল্লাহ পাক বললেন, ‘ঠিক আছে। সে ওমুক পাহাড়ের ওমুক প্রান্তে রয়েছে। তার নাম মুহম্মদ বিন হারুন বখলী। তার হাত-পা চারোটা কাটা। দুই হাত, দুই পা চারোটাই কাটা। পাহাড়ের এক কিনারায় সে সব সময় থাকে। সে প্রতি বৎসর হজ্জ করে। কিন্তু তার হজ্জ কবূল হচ্ছে না।’

হযরত সুলত্বানুল আরিফীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি আস্তে আস্তে গেলাম তাকে দেখার জন্য। যেয়ে পাহাড়টা ঘুরে তার মুখোমুখি হলাম। সে আমাকে দেখেই বললো- হে বাইযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি কি এসেছেন আমাকে সংবাদ দিতে- আমার হজ্জ কবূল হয় নি। আজকে ২০ বৎসর যাবৎ আমার কোন ইবাদত বন্দেগীই কবূল হচ্ছে না। কোন হজ্জও কবূল হচ্ছে না। আর প্রতি বৎসর আপনার মতো একজন বুযূর্গ ব্যক্তি এসে আমাকে সংবাদ দেন- আমার হজ্জ কবূল হয়নি। আমি জানি। হযরত বাইযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এটা শুনে আমার মাথাটা চক্কর খেয়ে গেলো। এই লোকটাকে আমি জীবনে কখনো দেখিনি, শুনিনি, জানিনা। এই লোকটা কি করে আমাকে চিনতে পারলো? আমি আস্তে করে তার পাশে বসে পরলাম। বসে বললাম- আচ্ছা ভাই! আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই, যদি কিছু মনে না করেন। সে বললো, ‘ঠিক আছে বলেন।’ আমি বললাম, আপনি জানেন ২০ বৎসর যাবৎ আপনার ইবাদত কবূল হচ্ছে না। তাহেল আপনি ইবাদত-বন্দেগী করেন কেন? হজ্জ কবূল হচ্ছে না, তারপরও আপনি হজ্জ করেন- কি কারণ? আর এই অবস্থা হলো কেনো? এর কি হাক্বীক্বত? তখন সে ব্যক্তি বললো যে, আসলে আমি এটা কাউকে বলি না। আপনাকেও আমি বলতাম না। আপনি যেহেতু একজন বড় বুযূর্গ, ওলীআল্লাহ, সুলত্বানুল আরিফীন, সেজন্য শুধু বলবো। যে, কি হয়েছে? সে বললো, ২০ বছর আগের কথা। আমার সংসার ছিলো, আহলিয়া ছিলো, সবই ছিলো। কিন্তু একদিন কোন এক কারণে আমার মার সাথে আমার কথা কাটা-কাটি হয় কিছু বিষয় নিয়ে। তাতে আমি উত্তেজিত হয়ে যাই। উত্তেজিত হয়ে আমি মাকে আস্তে করে একটা ধাক্কা দিয়েছিলাম। মা দূর্বলা থাকার কারণে পিছলে পরে যায়। পরে যাওয়ার পরে মা বদ দু‘আ দিয়েছিলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে জাহান্নামে নেক। একাধিকবার মা এটা বলেছেন। মুহম্মদ বিন হারুন বখলীর বক্তব্য হলো- আমি তখন বুঝতে পারিনি। পরে মাফ চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি এই কথা বলিনি যে, আপনি আমাকে বলুন, আমি জান্নাতী। আমার মা আমাকে জাহান্নামী বলেছেন। তবে একটা দু‘আ করেছেন, সেটা হলো- ‘আমি যেখানে থাকি না কেন, যিনি খ্বালিক যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে যেন আমি কথা বলতে পারি।’ ফলে আমার জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। কিন্তু আমি যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলে থাকি। আপনি আমার কাছে আসার আগে আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে জিজ্ঞাসা করেছি- আয় বারে এলাহী! এই বৎসর আমার সাথে কে দেখা করতে আসবেন? মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, বাইযীদ বোস্তামী যিনি সুলত্বানুল আরিফীন- উনি দেখা করার জন্য আসবেন। যার জন্য আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। কাজেই, ২০ বৎসর হচ্ছে আমার ইবাদত-বন্দেগী কবূল হচ্ছে না। আমি জাহান্নামী। তখন হযরত সুলত্বনুল আরেফীন বাইযীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তাহলে আমি কি আপনার জন্য দু‘আ করবো? মুহম্মদ বিন হারুন বখলী উনি বললেন যে, আসলে প্রতি বৎসরই এসে আমার জন্য বুযূর্গ লোকেরা দু‘আ করেন, কিন্তু কারো দু‘আ কবূল হচ্ছে না। এটা আপনার ইখতিয়ার। তখন হযরত সুলত্বানুল আরিফীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দু‘আ করলেন যে, আল্লাহ পাক! এই লোকটাকে ক্ষমা করে দেন। অনেক দু‘আ করার পর মহান আল্লাহ পাক উনি বললেন, ঠিক আছে; আপনার দু‘আ আমি কবূল করতে পারি। তবে এক শর্তে। সেই শর্ত হচ্ছে- যেহেতু তার মা তাকে জাহান্নামী বলেছে, তাকে আমি প্রথমে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। নিক্ষেপ করে আপনার দু‘আর কারণে তার মার দ্বারা সুপারিশ করিয়ে আবার আমি তাকে বেহেস্তে নিবো। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) এই শর্তে দু‘আ কবূল হলো।

এখন বিষয়টা কিন্তু ফিকির করতে হবে। এটা শুধু ওয়াকেয়া না; হাক্বীক্বী একটা ঘটনা। একজন ব্যক্তি তার মার সাথে খারাপ ব্যবহার করার কারণে মা যদি অসন্তুষ্ট হন, বদ দু‘আ করেন, সে বদ দু‘আটা লেগে যায়। আবার দু‘আ করলে দু‘আর বদলা পাওয়া যায়, সরাসরি যিনি খ্বালিক যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলা যায়। এটা যদি হয়, তাহলে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক কিরূপ? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক কিরূপ? তাহলে সেখানে কি হবে? কতোটুকু জাহান্নাম ওয়াজিব হবে? কতোটুকু বেহেস্ত ওয়াজিব হবে? উনারা খুশি হলে কতোটুকু নিয়ামত সে লাভ করবে? আর অসন্তুষ্টি হলে, কতোটুকু গযবের মধ্যে সে পরবে? এটা ফিকির করতে হবে।

সাধারণভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

مَنْ عَادٰى لِـىْ وَلِــيًّا فَـقَدْ اٰذَنْـتُهٗ بِالْـحَرْبِ

অর্থ: “কেউ যদি আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আমি তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করি।” (বুখারী শরীফ)

এটা যদি এরকম হয়, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয়টা কি রকম হবে? এটা তো ফিকির করতে হবে। উনাদের শান-মান মুবারক কতটুকু প্রচার-প্রসার করতে হবে? উনাদের পক্ষে কতটুকু বলতে হবে? আর যারা বিরোধী, তাদের বিরুদ্ধে কতটুকু বলতে হবে? কতটুকু প্রতিবাদ করতে হবে? এটা ফিকির করতে হবে। ফিকির না করলে বুঝা যাবে না। বিষয়টা অত্যন্ত সূক্ষ্ম। আমরা ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী জারী করেছি। এখন প্রতিদিন আলোচনা করা হচ্ছে- কতো সুন্দরভাবে করা যায়, কতো ভালোভাবে করা যায়। অনেকে শুনতে পাচ্ছে। এটা শুনার পরেও যারা এন্তেযামে, আনজামে সংশিষ্ট থাকবে না, তাহলে তাদের কি ফয়ছালা হবে? আর যারা সংশিষ্ট থাকবে, তাদের কি ফয়ছালা হবে? মুহব্বত চাই, মা’রিফত চাই, নিসবত চাই, কুরবত চাই ইত্যাদি। সেটা কিভাবে পাবে? আর সেখান থেকে সে কেন বঞ্চিত হবে? দুইটা বিষয়ই ফিকির করতে হবে।

মুহম্মদ বিন হারুন বখলী। সে সাধারণ লোকই ছিলো, খুব বড় ওলীআল্লাহ যে তা না। কিন্তু মায়ের সাথে বেয়াদবী করার কারণে জাহান্নামী হয়ে গেলো। আর মা দু‘আ করার কারণে যেখানেই থাকুক না কেন, যিনি খ্বালিক যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কথা বলার সুযোগ লাভ করলো। তাহলে বিষয়টা কি হলো? তাহলে উনাদের শান-মান কতটুকু প্রচার-প্রসার করতে হবে? কতো বুলন্দ উনাদের শান-মান মুবারক? আর উনাদের যারা বিরোধী, তাদের কতটুকু প্রতিবাদ করতে হবে, সেটাও ফিকির করতে হবে। অন্যথায় তো কোনটাই বুঝা যাবে না। বিষয়গুলো কিন্তু অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়। সেটাই বলা হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَحَقُّ بِـحُسْنِ صَحَابَـتِـىْ قَالَ اُمُّكَ قَالَ ثُـمَّ مَنْ قَالَ اُمُّكَ قَالَ ثُـمَّ مَنْ قَالَ اُمُّكَ قَالَ ثُـمَّ مَنْ قَالَ اَبُـوْكَ

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার থেকে সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হক্বদার কে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার মাতা। তিনি বললেন, তারপর কে? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার মাতা। তিনি বললেন, তারপর কে? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার মাতা। তিনি বললেন, তারপর কে? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনার পিতা।” {(সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ।}

সেটাই বলা হচ্ছে- আমাদের শরীয়তে মাতার ৩ হক্ব আর পিতার ১ হক্ব। এই যে বিষয়টা- এটা হচ্ছে সাধারণ পিতা-মাতার ব্যাপারে। তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের হক্ব কতটুকু? এটা ফিকির করতে হবে। এটা ফিকির না করলে বুঝা যাবে না। ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ আমরা পালন করবো। কিন্তু পালন করার মতো পালন করতে হবে। রসম-রেওয়াজ না। একজন করলো, তার দেখাদেখি আমি করলাম। না; হাক্বীক্বীভাবে করতে হবে। তখন সে তার বদলা লাভ করবে। তখন সে মুহব্বত-মা’রিফত,  নিসবত-কুরবত, রেযামন্দী-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করবে। এছাড়া লাভ করতে পারবে না। বিষয়টা কিন্তু ফিকির করতে হবে। আমরা সহজ-সরল ভাষায় বলে থাকি। এটা সহজ-সরল ভাষায় বুঝতে হবে। বিষয়গুলি কি? এখন সারা যমীনের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান মুবারক কারা বর্ণনা করে? কেউ তো করে না। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! উনার সেই শান-মান মুবারক কোথায়? মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান মুবারক কোথায়? কই বর্ণনা? কে করে? বরং তারা বিপরীত বলে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! কাজেই পিতা-মাতার হক্বটা বুঝলে, উনাদের বিষয়টা বুঝা যাবে। উনাদের বুলন্দী শান মুবারকটা কতটুকু?

আরেকটা ওয়াক্বেয়াহ্ আমরা বলেছিলাম। হযরত আলক্বমা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ছাহাবী, বুযূর্গ ছাহাবী। এগুলি থেকে নছীহত হাছিল করতে হবে, ইবরত হাছিল করতে হবে। হযরত আলক্বমা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার যখন বিছাল শরীফ উনার সময় হয়ে গেলো, তখন দেখা গেলো উনি একজন বিশিষ্ট ছাহাবী হওয়ার পরেও উনি কালিমা শরীফ পড়তে পারছিলেন না। উনাকে তালক্বীন দেওয়া হচ্ছে, তিনি বলতে পারতেছেন না।

এ রকম যখন হচ্ছিল, তখন উনার যিনি আহলিয়া তিনি সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলেন। এসে বললেন- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত আলক্বমা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ উনার সময় হয়ে গেছে; কিন্তু তিনি কালেমা শরীফ পাঠ করতে পারতেছেন না।

এটা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চারজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে পাঠালেন। (১) হযরত ইমামুল আউওয়াল আলাইহিস সালাম উনাকে, (২) হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে, (৩) হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে এবং (৪) হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে পাঠালেন দেখার জন্য। উনারা গেলেন সেখানে। উনারা দেখেন সত্যি উনি কোন মতেই কালিমা শরীফ পাঠ করতে পারতেছেন না। যখন উনারা কোশেশ করে দেখলেন উনি কালিমা শরীফ পাঠ করতে পারতেছেন না, তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন। এসে বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সত্যিই তিনি কালিমা শরীফ পাঠ করতে পারতেছেন না।

কি করতে হবে? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন যে, হযরত আলক্বমা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার পিতা-মাতা কেউ জীবিত আছেন কি? তিনি বললেন, হঁ্যা; উনার মাতা জীবিত আছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন, তাহলে উনার মাতা উনাকে আসতে বলুন। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা বললেন যে, উনার মাতা তো অনেক যয়ীফা, বৃদ্ধা। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন, যদি আসতে নাই পারেন, তাহলে আমিই যাবো। কিন্তু উনার মাতা আসলেন।

আসার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন যে, আপনার সন্তানের প্রতি কি আপনি অসন্তুষ্ট? আপনার সন্তান কেমন? তিনি বললেন, আমার সন্তান তো খুব ভালো। শরীয়ত উনার খিলাফ কোন কাজ করেন না। আপনার আদেশ-নির্দেশ সব পালন করেন। খুব ভালো আমার সন্তান। আপনি কি অসন্তুষ্ট? তিনি বললেন, ‘আমি সন্তুষ্ট। তবে একটা কাজে অসন্তুষ্ট।’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘কি কাজে অসন্তুষ্ট?’ উনি বললেন, ‘সেটা হচ্ছে- কোন বিষয়ে যদি আমার সাথে আমার সন্তানের আহলিয়ার ইখতিলাফ হয়, মতবিরোধ দেখা দেয়, তখন আমার সন্তান তার আহলিয়ার পক্ষ অবলম্বন করে। এই কারণে আমি অসন্তুষ্ট।’

তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন, ‘আপনি সন্তুষ্ট না হলে, আপনার সন্তান ইন্তেকাল করলে জাহান্নামে যাবে। আপনি উনাকে মাফ করে দিন।’ কিন্তু উনার মা মাফ করার পক্ষে ছিলেন না। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘তাহলে ঠিক আছে, মারা যাবার পরে তো উনি জাহান্নামে যাবেন; আমরা আগেই উনাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেই। আপনারা লাকড়ী জমা করুন, আগুন জালান। হযরত আলক্বমা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে আমরা জিন্দা অবস্থায় আগুনে ফেলে দেই।’ যখন এই কথা বলা হলো, তখন উনার মাতা বললেন- ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি বিষয়টা বুঝতে পারিনি।’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘বিষয়টা বুঝতে পারেন নি? বিষয়টা হচ্ছে- আপনি ক্ষমা না করলে। আপনার সন্তান এই অবস্থায় ইন্তিকাল করলে, উনি জাহান্নামে যাবেন। সেজন্য আমরা আগেই উনাকে আগুনে ফেলে দিচ্ছি।’ তখন তিনি বুঝলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে; তাহলে উনাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।’ উনি ক্ষমা করে দিলেন। তখন সংবাদ নেওয়া হলো, হযরত আলক্বমা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি কালিমা শরীফ জোরে জোরে পাঠ করতে করতে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

এখন এই যে ওয়াক্বিয়াটা- এটা একটা বাস্তব ঘটনা। একজন ছাহাবী হওয়ার পরও মাকে সামান্য অসন্তুষ্টি করার কারণে ঈমান নছীব হচ্ছে না। এটা কিন্তু অনেক ফিকির করতে হবে। তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে অসন্তুষ্ট করলে, সে ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম কতটুকু ওয়াজিব হবে, এটা ফিকির করতে হবে।

সে জন্য আমরা বলেছিলাম যে, আমাদের অনেক গবেষক দরকার। যেই বই-পুস্তকগুলিতে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক উনার খিলাফ কুফরী বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, সেই বই-পুস্তকগুলো থেকে উক্ত কুফরী বক্তব্যগুলো কেটে ফেলে দিতে হবে। এটা ফরয। নতুন করে সেই বই-পুস্তকগুলো সম্পাদন করা ফরয। মুসলমানরা জানার পরও যদি, সেগুলো কিতাবাদিতে থেকে যায়, তাহলে তারা কি জবাবদিহী করবে?

সে প্রসঙ্গে আমরা একটা ঘটনা বলে থাকি। উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার শান মুবারক-এ। এক ব্যক্তি নিজেকে বুযূর্গ বলে দাবী করতো। এক মজলিসে সে ছিলো। সেখানে হযরত উম্মুল মু’মিনীন ছালিছাহ্ ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার শান মুবারক-এ কেউ ( কোন এক বদ বখত ও বদ নছীব) চূ-চেরা ক্বীল-কাল করেছিলো। সে ব্যক্তি প্রতিবাদ করে নি। সে ব্যক্তি সেই মজলিস থেকে এসে রাতে ঘুমিয়ে পড়লো। তখন সে ঘুমে স্বপ্নে দেখতে লাগলো- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন। তিনি তাশরীফ মুবারক এনে তাকে বললেন, উঠো। তাকে ঘুম থেকে উঠালেন। উঠিয়ে বললেন- তুমি যেই মজলিসে গিয়েছিলে, সেই মজলিসে যে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার শান মুবারকে যে চূ-চেরা, ক্বীলও-ক্বাল করা হলো, তুমি কোন প্রতিবাদ করলে না কেন? লোকটা বললো- তার শক্তি-সামর্থ্য ও সাহস ছিলো না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন- তোমার এ কথাটা সত্য না। তুমি প্রতিবাদ করতে পারতে। কেন করলে না, এজন্য আজ থেকে তুমি অন্ধ হয়ে যাবে। সত্যি লোকটা অন্ধ হয়ে গিয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!

বিষয়টা খুব ফিকির করতে হবে। এজন্য আমরা বলেছি, বলে যাচ্ছি, অনেক গবেষক দরকার। গবেষণা করে এই সমস্ত কুফরী বক্তব্যগুলো কিতাব থেকে ফেলে দিতে হবে। আর উনাদের বুলন্দী শান মুবারক ব্যাপক প্রচার-প্রসার করতে হবে। এখন ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ বছরে শুধু একদিন না, শুধু ৬৩ দিন না, ৯০ দিনও না, অনন্তকাল ধরে করতে হবে। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) উনাদের বুলন্দী শান মুবারক প্রকাশ করতে হবে, ব্যাপক প্রচার-প্রসার করতে হবে। যেটা হাক্বীক্বীভাবে যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনারই বুলন্দী শান মুবারক উনার অন্তভূর্ক্ত। আবার উনাদের শান মুবারকে যারা চূ-চেরা, ক্বীলও-ক্বাল করেছে, করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ করতে হবে। এবং যে সমস্ত বই-পুস্তকগুলোতে কুফরী বক্তব্যগুলো লিপিবদ্ধ রয়ে গেছে, সেগুলি কিতাব থেকে কেটে ফেলে দিতে হবে। সঠিকটা লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং সেটা ব্যাপক প্রচার-প্রসারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিষয়টা ফিকির করতে হবে।

এই লোকটা মজলিসে যাওয়ার পরে প্রতিবাদ না করার কারণে সে দুনিয়াবী গজবে পরে গেলো। কিন্তু পরকালের গজব তো রয়েই গেলো। তাহলে এখন কেউ মজলিসে না যাক, সে দেখতে পেলো কিতাবের মধ্যে উনাদের বিরুদ্ধে রয়ে গেছে। সেটা সে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য কোশেশ করলো না, তাহলে সে কোন ধরণের উম্মত? তার উপর কতোটুকু আযাব-গজব নাযিল হবে? কতটুকু অসন্তুষ্টিতে পরবে? এটা ফিকির করতে হবে। বিষয়গুলি কিন্তু সোজা না।

এখন আমরা ওয়াকেয়া বললাম ২টা। মুহম্মদ বিন হারুন বখলী উনার ঘটনা এবং হযরত আলক্বমা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার ঘটনা। এগুলো কিন্তু শুধু ওয়াকেয়া না। এটা কিন্তু খুব ফিকির করতে হবে। তাহলে ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ এটা কি? আসলে উনাদের শান-মান মুবারক বর্ণনা করা, উনাদের ফযীলত বর্ণনা করা এবং উনাদের যারা বিদ্বেষী-বিরোধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেভাবে সম্ভব। এখন ব্যবস্থা নেওয়ার তো কিছু নেই। ব্যবস্থা নেওয়া অর্থাৎ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে এবং যেই সমস্ত কিতাবাদীতে উনাদের শান-মান মুবারকের খিলাফ কিছু লিপিবদ্ধ করেছে, সেটা কেটে ফেলে দিতে হবে। নতুন করে আবার সেটা লিপিবদ্ধ করতে হবে। প্রচার-প্রসারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেভাবে কোশেশ করতে হবে। তখন সে নাযাত লাভ করতে পারবে, মুহব্বত-মা’রিফত, নিসবত-কুরবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করবে। অন্যথায় কিন্তু সে লাভ করতে পারবে না। বিষয়টা কিন্তু ফিকির করতে হবে। আমরা প্রত্যেকটা বিষয় স্পষ্ট করে বলে দেই। এখানে কোন অস্পষ্টটা নেই। সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ পালন করা আর এই পালন করাটাই হচ্ছে মূল। যিনি খ্বালিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন-

لَوْلَاكَ لَمَا اَظْهَرْتُ الرُّبُـوْبِـيَّةَ

আমি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম, আমার রুবূবিয়াতই আমি প্রকাশ করতাম না। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

তাহলে বিষয়টা কি হলো? বিষয়টা ফিকির করতে হবে। এখন শুধু ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ আমরা পালন করলাম, মুখে মুখে ছানা-ছিফত মুবারক করালাম, খুব ভালো; করতেই হবে। এখন

وَتُـعَزِّرُوْهُ وَتُـوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْـرَةً وَّاَصِيْلًا

এখানে তিনটা বিষয় রয়ে গেছে। تُسَبِّحُوهُ হচ্ছে ছানা-ছিফত করা, মুখে মুখে করলে হয়। تُسَبِّحُوْهُ সম্মান করা। ঠিক আছে; সম্মান করলো ভালো। تُـعَزِّرُوْهُ খিদমত করতে হবে, গোলামী করতে হবে। সেটা কিভাবে? ওই গোলামীটা হচ্ছে এটাই- উনাদের শান-মান মুবারক উনার খিলাফ যারা বলেছে, তাদের প্রতিবাদ করা। কিতাবে থাকলে, সেটাকে ফেলে দেওয়া, তার ব্যবস্থা করা এবং তার সার্বিক এন্তেজাম দেওয়া সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী।

সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন-

يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

تُـعَزِّرُوْهُ وَتُـوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْـرَةً وَّاَصِيْلًا

মহান আল্লাহ পাক তিনি তো খিদমত করেন না। খিদমত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি সম্মান করেন, তিনি ছানা-ছিফত করেন, করে যাচ্ছেন। তাহলে উম্মতের জন্য কি ফরযে আইন?

صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِـيْمًا

তোমরাও উনার প্রতি সম্মানিত ছলাত মুবারক পাঠ করো। অর্থাৎ উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক করো, উনাকে সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করো, সম্মান মুবারক করো এবং উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করো  এবং সালাম দাও অথার্ৎ সার্বিকভাবে, সব দিক থেকে উনাকে মুহব্বত করতে হবে। কোন বিষয়ে চূ-চেরা, ক্বীলও-ক্বাল করা যাবে না, বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না, কোন আদেশ-নিষেধ অমান্য করা যাবে না। এবং কোন বিষয়ে উনার থেকে পিছিয়ে থাকা যাবে না। কোন বিষয় কাউকে উনার উপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। প্রত্যেকটা বিষয় ফিকির করতে হবে। বিষয়গুলি তো খুব সূক্ষ্ম বিষয়। ফিকির না করলে, কখনো বুঝা সম্ভব না। যারা ফিকির করবে, তাদের পক্ষে বুঝা সম্ভব। তাহলে ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ কি? আর ঐ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-এ যেটা বলা হয়েছে। একই কথা বলা হয়েছে।

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُـؤْمِنُـوْنَ حَتّٰـى يُـحَكِّمُوْكَ فِـيْمَا شَجَرَ بَــيْـنَـهُمْ ثُـمَّ لَا يَـجِدُوْا فِـىْۤ اَنْـفُسِهِمْ حَرَجًا مِّـمَّا قَضَـيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِـيْمًا

মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছেন- এখন নুযূল খাছ, হুকুম আম। এটা যদিও মুনাফিকের শানে নাযিল করা হয়েছে। তার মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। ঠিকই আছে। কিন্তু বিষয়টা তো অনন্তকালের জন্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিচ্ছেন- এ কথা সোজা না فَلَا وَرَبِّك আপনার যিনি রব তা‘য়ালা উনার ক্বসম! অন্য কারো ক্বসম না। لَا يُـؤْمِنُـوْنَ কেউ ঈমানদার হতে পারবে না। حَتّٰـى يُـحَكِّمُوْكَ فِـيْمَا شَجَرَ بَــيْـنَـهُمْ একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনি ছাড়া ঈমানদারদের, সৃষ্টির সকলের যতো মতোবিরোধ রয়েছে তার ফয়ছালাকারী হিসাবে আপনাকে মেনে না নিবে। মানতে তো হবেই।  ثُـمَّ لَا يَـجِدُوْا فِـىْۤ اَنْـفُسِهِمْ অন্তরে কোন সংকীর্ণতা অনুভব করতে পারবে না, চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করতে পারবে না। مِّـمَّا قَضَـيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِـيْمًا আপনি যা ফয়ছালা করবেন, সেটা মানার মতো মানতে হবে। তখন সে ঈমানদার হবে।

তাহলে সেটা কোথায়? এটা কিন্তু খুব ফিকির করতে হবে। আমি বললাম যে, বিষয়গুলি অনেক ফিকির করতে হবে। ফিকির করলে বুঝতে সহজ হবে। ফিকির না করলে, বুঝা যাবে না। কারণ বান্দা-বান্দী, জিন ইনসান তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহব্বত করে সৃষ্টি করেছেন। উনার  মুহব্বত-মা’রিফত দেওয়ার জন্যই। মুহব্বত-মা’রিফত সে লাভ করতে পারবে না নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যস্থতা ব্যতীত। উনাকে মুহব্বত করেই সব হাছিল করতে হবে। উনাকে মুহব্বত করা ছাড়া হাছিল করতে পারবে না। আর উনাকে মুহব্বত করতে হলেই ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে হবে। আর এজন্য সার্বিক আনজামও দিতে হবে। অনন্তকাল তো করতেই হবে। এই জন্য অনেক গবেষকও দরকার। গবেষণা করা- এই সমস্ত বিষয়গুলি, কিতাবাদিগুলি শুদ্ধ করতে হবে। কারণ এটা কিন্তু সোজা বিষয় না। না জানলে এক কথা ছিলো। যখন সে জানলো, জানার পরে তাকে মৃত্যুর পর তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তুমি তো জানলে, তুমি জেনেছিলে, আমার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, তুমি ব্যবস্থা নিয়েছিলে? ব্যবস্থা তো নেও নি। এখন সুপারিশ চাও কি করে? সুপারিশ তো পাবে না। কোথায় যাবে? জাহান্নামে। না‘ঊযুবিল্লাহ! কাজেই, বিষয়টা ফিকির করতে হবে। ‘ফালইয়াফরাহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন করতে হবে। সামনে আমরা আরো অনেক বড় করে করবো, আরো বড় করবো, আরো বড় করবো, আরো করতে হবে। যতো সাধ্য সামর্থ্য আছে সমস্ত কিছু দিয়ে উনাদের বুলন্দী শান মুবারক প্রকাশ করতে হবে, আরো করতে হবে, আরো করতে হবে। এবং যতো বিদ্বেষী আছে, তাদের জবাব দিতে হবে। খণ্ডন করতে হবে, সেগুলি ফেলে দিতে হবে। সব করতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে।

কাজেই যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে তিনি যেভাবে পছন্দ করেন, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেভাবে পছন্দ করেন, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা যেভাবে পছন্দ করনে, সেইভাবে এন্তেযাম, আনজাম দেওয়ার যেন তাওফীক্ব দান করেন। আমীন!

মুহাদ্দিছ মুহম্মদ ইবনে ছিদ্দীক।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম