মহিলাদের কতিপয় সুন্নতী পোশাক ও ব্যবহৃত সামগ্রীর বর্ণনা

সংখ্যা: ২১২তম সংখ্যা | বিভাগ:

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: æআল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ২১)

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন-

من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مائة شهيد

অর্থ: æযে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিতনা-ফাসাদের যুগে একটিমাত্র সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে সে একশত শহীদের ছওয়াব পাবে।” (মিশকাত)

উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- সর্বাবস্থায় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত বা অনুসরণ ও অনুকরণ করা তথা সুন্নত মুতাবিক চলা।

আলোচ্য প্রবন্ধে মহিলাদের ব্যবহৃত কতিপয় সুন্নতী পোশাক ও ব্যবহৃত সামগ্রীর বর্ণনা দেয়া হলো- স্যালোয়ার, কামীছ, ওড়না: মেয়েদের জন্য স্যালোয়ার, কামীছ, ওড়না পরিধান করা খাছ সুন্নত।

স্যালোয়ার হচ্ছে- কল্লিদার, যা নিচের দিকে পাজামার মতো ঢোলা নয় বরং বর্ডারযুক্ত চিপা, যা চোস্তও নয়। কামীছ হচ্ছে- পুরুষের কোর্তারই অনুরূপ। অর্থাৎ গুটলীযুক্ত কল্লিদার, নিছফুস সাক, গোল বা কোণাবন্দ সুতি কাপড়ের তৈরি। তবে পার্থক্য হচ্ছে- পুরুষের গুটলী থাকবে সামনের দিকে আর মেয়েদের গুটলী থাকবে কাঁধের উপরে তবে প্রয়োজনে সামনে বা পিছনেও থাকতে পারে এবং কামীছ পূর্ণ হাতা বিশিষ্ট নিছফুস সাক হবে।

ওড়না হচ্ছে- চাদর জাতীয়, যার মাপ হচ্ছে- দু’হাত ও সাড়ে চার হাত, আড়াই হাত ও সাড়ে চার হাত, আড়াই হাত ও চার হাত। (মিরকাত শরীফ, সীরাতে আয়িশা আলাইহিস সালাম)

উল্লেখ্য, মহিলাদের স্যালোয়ার, কামীছ ও ওড়না ইত্যাদি ঘরে পরতে হবে। কিন্তু ঘর থেকে বের হতে হলে এর উপর অবশ্যই বোরকা পরতে হবে নচেৎ পর্দা রক্ষা হবেনা।

বোরকার বর্ণনা: মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

وقرن فى بوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى

অর্থ: æতোমরা তোমাদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করবে। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘরের বাইরে বের হয়োনা।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩৩)

মহিলাদের প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া জায়িয নেই। যদি বের হতেই হয় তাহলে বোরকা পরে খাছ পর্দার সাথে বের হতে হবে।

বোরকা কালো রঙয়ের হওয়া এবং ঢোলা হওয়া উত্তম। একমাত্র কালো ও ঢোলা বোরকাতেই খাছভাবে ছতর, সৌন্দর্য ও শরীরের বর্ণনা ঢেকে রাখা সম্ভব। চাদর:  মেয়েদের জন্য চাদর ব্যবহার করা খাছ সুন্নত। চাদরের মাপ হচ্ছে- ছোট চাদর: যার দৈর্ঘ্য চার হাত, প্রস্থ আড়াই হাত। বড় চাদর: দৈর্ঘ্য ছয় হাত এবং প্রস্থ সাড়ে তিন হাত। (ছিফরুস সায়াদাত, জামউল ওয়াসায়িল) চিরনীর বর্ণনা: হাতির দাঁতের ও হাতির হাড়ের চিরনী ব্যবহার করা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের খাছ সুন্নত।

মাথার চুলে তেল দেয়া, আঁচড়ানো এবং সিঁথি করা প্রত্যেকটিই সুন্নত। তেলের মধ্যে জয়তুনের তেল ব্যবহার করা খাছ সুন্নত। আর পুরুষ হোক, মহিলা হোক প্রত্যেকের জন্যই মাথার মধ্য দিয়ে সিথি করা এবং ডান দিক দিয়ে মাথা আঁচড়ানো শুরু করা সুন্নত।

যেমন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন-

كان النبى صلى الله عليه وسلم يحب التيمن طهوره وترحله وتنعله

অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্রতা অর্জন করতে, মাথা আঁচড়াতে ও না’লাইন বা স্যান্ডেল পায়ে দিতে ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। (বুখারী শরীফ)

আর মেয়েদের চুল পুরুষদের বিপরীত তথা লম্বা রাখা সুন্নত। কাঁধের চেয়ে ছোট রাখা  জায়িয নেই। যেমন হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, æওই মহিলাদের উপর লা’নত যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে।” (বুখারী শরীফ)

উল্লেখ্য, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় যেহেতু আয়না ছিলোনা তাই পানির পাত্রে তিনি চেহারা মুবারক দেখে পাগড়ি, টুপি, রুমাল ইত্যাদি গোছগাছ করতেন এবং মাথার চুল মুবারক ও দাড়ি মুবারক আঁচড়াতেন। সে মতে আয়না ব্যবহার করাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (সিরাত গ্রন্থ)

স্যান্ডেল ও মোজা:  মেয়েদের জন্য চামড়ার স্যান্ডেল ও মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত।

স্যান্ডেল- ক্রস দুই ফিতা বিশিষ্ট এবং প্রতিটি ফিতা হবে ডবল। অর্থাৎ একটার উপর আরেকটা লাগানো।” (শামায়েলে তিরমিযী)

আর বর্তমান বাজারে পেন্সিল হিল বা হাই হিল ইত্যাদি ধরনের যে স্যান্ডেল পাওয়া যায়, তা পরিধান করা জায়িয নেই। ইহা বিজাতীয় তাহযীব-তামুদ্দুনের অন্তর্ভুক্ত।  তবে সামনে-পিছনে সমান (ফ্লাট বা স্বাভাবিক হিল) উচু স্যান্ডেল ব্যবহার করা যাবে।  মোজা- চামড়ার ও খয়েরী রঙ হওয়া খাছ সুন্নত। (মিশকাত শরীফ, হিদায়া, ফতহুল ক্বাদীর)

মেহেদী ব্যবহার: মহিলাদের জন্য হাতে ও পায়ে মেহেদী ব্যবহার করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।  এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت ام الـمؤمنين عائشة عليها السلام قالت اومت امراة من وراء ستر بيدها كتاب الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقبض النبى صلى الله عليه وسلم يده فقال ما ادرى ايد رجل ام يد امراة قالت بل يد امراة قال لو كنت امراة لغيرت اظفارك يعنى بالحناء.

অর্থ: æউম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, একদা এক মহিলা হাতে চিঠি নিয়ে পর্দার আড়াল হতে হাত বের করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে ইশারা করলো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের হাতখানা গুটিয়ে ফেললেন এবং বললেন, ইহা কি কোনো পুরুষের হাত না কোনো মহিলার? মহিলাটি বললো, মহিলার হাত। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, তুমি যখন নারী তখন মেহেদীর দ্বারা তোমার হাতের নখগুলো পরিবর্তন করে নিতে পারো।” (আবু দাঊদ)

আর মেহেদী ব্যবহারে শিফাও রয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, æহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কেউ মাথা ব্যথার অভিযোগ করলে তিনি তাকে শিঙ্গা লাগানোর নির্দেশ দিতেন। আর পায়ে ব্যাথার অভিযোগ করলে তিনি অভিযোগকারীর পায়ে মেহেদী ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন।” (আবু দাউদ) মাসয়ালা: পুরুষদের জন্য হাতে ও পায়ে মেহেদী ও রঙ ব্যবহার করা জায়িয নেই।

অলঙ্কার ব্যবহার: মহিলাদের জন্য অলঙ্কার ব্যবহার করা সুন্নত। স্বয়ং উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার যেমন, গলার হার, কানের দুল, আংটি ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে-

خرج النبى صلى الله عليه وسلم يوم عيد فصلى ركعتين لـم يصل قبل ولابعد ثم اتى النساء فامرهن بالصدقة فجعلت الـمراة تصدق بخرصها وسخابها.

অর্থ: æহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈদের দিন বের হলেন এবং দুই রাকায়াত (ঈদের) নামায আদায় করলেন এর আগে এবং পরে আর কোনো নফল নামায পড়েননি। অতঃপর মহিলাদের কাছে আসলেন এবং তাদেরকে ছদকা করতে আদেশ করলেন মহিলারা তাদের গলার হার ও মালার ছদকা আদায় করলেন।” (বুখারী শরীফ) হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-

قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما امرهن النبى بالصدقة فرايتهن الى اذانهن وحلوقهن

অর্থ: হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদেরকে ছদকা করার নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলারা তাদের নিজ নিজ কানের ও গলার অলঙ্কারে হাত বাড়ালেন তথা ছদকা আদায় করলেন। (বুখারী শরীফ)

মাসয়ালা: পুরুষদের জন্য স্বর্ণ এক  রতিও ব্যবহার করা জায়িয নেই। পুরুষের জন্য সাড়ে চার মাসা অর্থাৎ ৬ আনা পরিমাণ রৌপ্য ব্যবহার করা জায়িয আছে। এর চাইতে বেশি ব্যবহার করা জায়িয নেই। তা হারাম ও কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হবে। (হিদায়া, আলমগীরী)

উল্লেখ্য, সুন্নত সম্পর্কে সঠিক ইলম অর্জন এবং তা আমলে বাস্তবায়ন সাধারণ লোক তো দূরের কথা যারা মাদরাসায় পড়েন ও পড়ান তাদের পক্ষেও সম্ভব হয়ে উঠেনা। এ কারণে আল্লাহ পাক তিনি যুগে যুগে মুজাদ্দিদগণ উনাদের পাঠিয়ে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ পাক বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা  আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠিয়েছেন।

অতএব, কেউ যদি পরিপূর্ণরূপে সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ করতে চায় তাহলে অবশ্যই যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষ করে মহিলাদের জন্য আরো শুকরিয়ার বিষয় হচ্ছে, তাদের সব বিষয়ে জানার জন্য হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার যিনি আহলিয়া, সাইয়্যিদাতুন নিসা, হাবীবাতুল্লাহ, ক্বায়িম মাক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন, উম্মুল উমাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত ও তা’লীম গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে।

আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সুন্নত সম্পর্কে জেনে সে মুতাবিক আমল করে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন।

– মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম