মাহে যিলহজ্জ শরীফ এবং উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২২৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তরফ থেকে ঘোষণাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসসমূহের অন্যতম মাস যিলহজ্জ শরীফবিভিন্ন দিক থেকে এ মাসের বুযুর্গী ও সম্মান বিদ্যমানএ মাসেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র হজ্জ আদায়ের ফরযটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার প্রথম দশদিনের ইবাদত-বন্দিগীর চেয়ে বেশি প্রিয় আর কোন দিনের ইবাদত-বন্দিগী নেইএ দিনগুলোতে রোযা রাখা খাছ সুন্নতএর প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য এবং প্রত্যেক রাতের ইবাদত শবে ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য

উম্মুল মুমিনীন হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চারটি আমল কখনও ছাড়তেন না১. পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার প্রথম দশদিনের রোযা, ২. আশূরার রোযা, ৩. প্রত্যেক মাসে তিনটি রোযা, ৪. ফজরের ফরয নামাযের পূর্বে দুরাকায়াত সুন্নত নামায

স্মরনীয় যে, পবিত্র যিলহজ্জ মাসের দশম দিনের রোযা হচ্ছে কুরবানী পর্যন্তঅর্থাৎ কুরবানীর গোশ্ত দিয়ে ইফতার করাঅর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখে ছুবহে ছাদিক থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত কিছু পানাহার না করে কুরবানীর পর কুরবানীর গোশ্ত দিয়ে খাওয়া শুরু করা খাছ সুন্নতযদি দ্বিপ্রহরের পূর্বে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে কুরবানীর গোশত প্রস্তুত না হয়, তবে যে কোন খাদ্য-পানীয় খেয়ে রোযা ভঙ্গ করতে হবে

যিলহজ্জের দশম তারিখ হচ্ছে ঈদুল আযহার দিনএ দিনের মরতবা অপরিসীমএ দিন সূর্যোদয়ের পরে দুরাকায়াত ঈদুল আযহার নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করতে হয়এটা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্তএ নামায ঈদুল ফিতরের নামায অপেক্ষা তাড়াতাড়ি পড়তে হয়কেননা, নামাযের পরেই কুরবানী রয়েছে

ঈদের নামাযের ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি ঈদের নামায আদায় করতঃ ঈদগাহ হতে বের হয়ে আসে, তার প্রতি ক্বদমে মহান আল্লাহ পাক তিনি হাজার নেকী দান করেন

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি ইখলাছের সাথে ঈদের নামায আদায় করবে তার আমলনামায় দশ হাজার নেকী লিখা হবে এবং যে ব্যক্তি ইখলাছের সাথে ঈদের খুতবা শ্রবণ করবে, তাকে বহু গোলাম আজাদ করার ছওয়াব দান করা হয়

পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামাযে গমনকালে কিঞ্চিত উচ্চস্বরে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে হয় এবং খুৎবার মধ্যেও এর বিধান রয়েছেপ্রথম খুৎবায় নয়বার আর দ্বিতীয় খুৎবায় সাতবার

এ তাকবীর পাঠ সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ঈদের দিনে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করায় একটি হজ্জ ও একটি উমরাহর ছওয়াব লাভ হয়এই তাকবীর ৯ই যিলহজ্জ ফজরের নামায হতে শুরু করে ১৩ই যিলহজ্জ আছরের নামায পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে একবার পাঠ করা ওয়াজিব এবং তিনবার পাঠ করা মুস্তাহাব-সুন্নত

পবিত্র কুরবানী উনার গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছেযেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা পবিত্র কুরবানী করবেনা তারা যেন ঈদগাহের নিকটে না আসে

কাজেই, যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব তাদের উচিত কুরবানী করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নৈকট্য হাছিল করা

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র ঈদুল আযহার দিনে বান্দার কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেন

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবাকর হয়েছে, “যে সমস্ত পশু দ্বারা কুরবানী করা হবে কিয়ামতের দিন সেই পশুগুলি কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে বেহেশ্তে পৌঁছিয়ে দিবে

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, “পবিত্র কুরবানী উনার পশু কিয়ামতের দিন সওয়ারী বা বাহন হিসেবে গন্য হবে

সুতরাং কানা, খোড়া, রোগাক্রান্ত, কানকাটা, দন্তহীন ইত্যাদি যাবতীয় দোষযুক্ত পশু কুরবানী না করে সম্পূর্ণ দোষমুক্ত পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী করতে হবে

উল্লেখ্য, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব তারা তো পবিত্র কুরবানী করে অফুরন্ত ফযীলত অর্জন করবেনকিন্তু যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তারাও ইচ্ছা করলে কয়েকজন মিলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে গরু, খাসি, দুম্বা বা ভেড়া কুরবানী দিয়ে কুরবানী উনার ফযীলত লাভ করতে পারে

এছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানীর পূর্ব পর্যন্ত চুল, নখ ইত্যাদি কাটা হতে বিরত থাকলেও কুরবানীর ফযীলত লাভ হয়

হে মহান আল্লাহ পাক! আমাদেরকে পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার উক্ত দিনসমূহের আমলগুলো যথাযথ সম্পাদন করার মাধ্যমে আপনার ও আপনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার তৌফিক দান করুনআমীন

হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শাওওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা