যিকরুল্লাহ, যুলখলক্বিল আযীম, যুছছিরাত্বিল মুসতাক্বীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারণ বা স্মরণ করার হাক্বীক্বী আদব

সংখ্যা: ২২১তম সংখ্যা | বিভাগ:

لا تجعلوا دعاء الرسول بينكم كدعاء بعضكم بعضا

অর্থ: তোমরা একে অপরকে যেভাবে আহ্বান করে থাকো, সেভাবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহ্বান করো না। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৩)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে জালালাইন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয় যে-

ان تقولوا يا محمد صلى الله عليه وسلم بل قولوا يا نبى الله يا رسول الله فى لين وتواضع وخفض صوت.

অর্থ: নিশ্চয়ই আপনারা ‘ইয়া মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে থাকেন। বরং আপনারা নরম সূরে বিনয়ের সাথে নি¤œ স্বরে ইয়া নাবিয়াল্লাহ, ইয়া রসূলাল্লাহ বলুন।

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক ধরে সাধারণ মানুষের ন্যায় উনাকে সম্বোধন করা যাবেনা। বরং অত্যন্ত আদবের সাথে উনার লক্বব মুবারক নিয়ে সম্বোধন করতে হবে এবং তা আদব ও শরাফত এবং রহমত মুবারক, বরকত মুবারক, সাকীনা মুবারক লাভের কারণ। যা মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং কায়িনাতকে শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক নিয়ে সরাসরি উনাকে সম্বোধন করেননি। বরং বিশেষ বিশেষ লক্বব মুবারক ব্যবহার করেছেন। যেমন-

يا ايها المزمل ، يا ايها الرسول، طه ، يس ، يا ايها المدثر

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অসংখ্য লক্বব মুবারক রয়েছে। তবে যেসব শব্দ উনার শানের খিলাফ বা সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহৃত হয়, এরূপ শব্দাবলি উনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না। যেমন বিশ্বনেতা, শ্রেষ্ঠ নেতা, মহামানব, প্রভৃতি। কেননা, এ সব শব্দ অনেক ফাসিক-ফুজ্জারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এর, তার, তাহার, তাকে, সে ইত্যাদি শব্দও উনার মুবারক শানে ব্যবহার করা যাবে না। বরং সর্বক্ষেত্রেই তিনি, উনার, উনাকে প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া যে শব্দ ভালো-মন্দ দু অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে সে সব শব্দও উনার শান মুবারক-এ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يا ايها الذين امنوا لا تقولوا راعنا وقولوا انظرنا واسمعوا

অর্থ : হে ঈমানদারগণ! আপনারা “راعنا” শব্দ বলবেন না। বরং (راعنا শব্দের স্থলে) “انظرنا” শব্দ ব্যবহার করুন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নছীহত মুবারক মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করুন। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, ‘রয়িনা’ শব্দ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাহ্যত শব্দটির অর্থ হচ্ছে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন বা আমাদের কথা শুনুন। কিন্তু এ শব্দ নির্বোধ ও মুর্খ মেষ সাবক অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আবার তা হে আমাদের রাখাল, অর্থও প্রদান করে। তাছাড়া হিব্রু ভাষায় তার প্রতিশব্দ হলো, ‘শুনো তুমি বধির হয়ে যাও’। কাফিররা নিজেদের দূরভিসন্ধি বাস্তবায়নের জন্য এরূপ শব্দ ব্যবহার করতো। এ সমস্ত কারনে মহান আল্লাহ পাক তিনি এ শব্দ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।

মূলত হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অত্যধিক আদবের সাথে সম্বোধন ও স্মরণ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই আদব হতে বিন্দু পরিমাণ বিচ্যুত হওয়া যাবেনা। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يا ايها الذين امنوا لا تحلوا شعائر الله

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দশনসমূহ উনাদের অসম্মান করো না। (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বশ্রেষ্ঠ শিয়ার। তাই উনার এবং উনার সাথে সম্পৃক্ত কোন কিছুরই অসম্মান বা অবহেলা করা হারাম ও নাজায়িয।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করলে অথবা লিখলে অথবা শ্রবণ করলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করা অত্যাবশ্যকীয়। কেননা, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم رغم انف رجل ذكرت عنده فلم يصلى على

অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যার নিকট আমার নাম মুবারক উচ্চারণ করা হলো, অথচ সে আমার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করলো না, তার নাক ধূলায় ধূসরিত হোক অর্থাৎ সে ধ্বংস হোক। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক বলা, লিখা, শুনা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুরূদ শরীফ পুরোপুরিভাবে উল্লেখ করা আবশ্যক। (সঃ) (দঃ) (صلعم) প্রভৃতি দ্বারা সংক্ষেপে লিখা যাবে না। সিহাহ সিত্তাহসহ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাশহূর সমস্ত কিতাব উনাদের মধ্যে এ সম্পর্কে অনেক প্রমাণাদি উল্লেখ রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, অলসতা-গাফলতি আর অকর্মন্যতার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক স্মরণ করা বা উচ্চারণ করা মাকরূহ বলা হেেছ। এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পবিত্র হানাফী মাযহাব উনার ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফতওয়া দিলেন যে, চার রাকায়াত বিশিষ্ট ফরয নামায উনার দ্বিতীয় রাকাআতে তাশাহুদ পাঠ করার পর আর কিছু পাঠ করা যাবে না। তাশাহুদ পাঠ করার পর কেউ যদি দুরূদ শরীফ পাঠ করতে শুরু করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক পাঠ করে, তাকে সাহু সিজদা করতে হবে, আর যদি নাম মুবারক পাঠ না করে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে না। এই ফতওয়া যেদিন তিনি দিলেন, সেই রাতে তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ সাক্ষাত মুবারক লাভ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বললেন, আমার নাম মুবারক উচ্চারণ করলে সাহু সিজদা দিতে হবে, এটা কেমন কথা? তখন ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি চাইনা কেউ আপনার নাম মুবারক গাফলতির সাথে স্মরণ করুক। উনার জাওয়াব শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যধিক খুশি হলেন।

মূলকথা হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আদব-শরাফত, ত্বহারাত এবং একনিষ্ঠতার সাথে স্মরণ করতে হবে। অপর দিকে উনার আযীমুশ্বান শান মুবারক উনার খিলাফ কোন আচরণ করা যাবে না এবং ঐরূপ কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। আর উনার ক্ষেত্রে হাক্বীক্বী আদব সম্পর্কে জানতে হলে আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত অপরিহার্য। মহান আল্লাহ পাক সকলকে আদব রক্ষার তাওফীক্ব দান করুন।

-মুহম্মদ আখি সিরাজুদ্দীন

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম