রসূলু রব্বিল আলামীনা, রহমাতুল্লিল আলামীনা, রঊফুম বিলমু’মিনীনা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের শ্রেষ্ঠ হক্ব সংরক্ষণকারী

সংখ্যা: ১৯৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

 يايها الناس انا خلقنكم من ذكر وانثى وجعلنكم شعوبا وقبائل لتعارفوا ان اكرمكم عند الله اتقكم

অর্থ: “হে মানুষজাতি। নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং আমি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরের পরিচয় লাভ করতে পার, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে সম্মানিত ঐ ব্যক্তি যে বেশি মুত্তাকী।” (সূরা হুজরাত : আয়াত ১৩)

ইসলামে মহিলাদের মর্যাদা ও সম্মান

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

لقد كرمنا بنى ادم

“নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি।” (সূরা বাণী ইসরাঈল: আয়াত ৭০)

মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উছীলায় গোটা মানবজতিকে আশরাফিয়াত বা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। যে মর্যাদা সম্মান অন্যান্য মাখলুকাতকে দেয়া হয়নি। পুরুষ ও মহিলা সকলেই সেই মর্যাদা-সম্মানের অধিকারী। আর পুরুষ ও মহিলা উভয় মিলে একে অপরের পরিপূরক।

মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

هن لباس لكم وانتم لباس لهن

“তারা (মহিলারা) তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা (পুরুষেরা) তাদের পরিচ্ছদ।” (সূরা বাক্বারা-১৮৭)

অর্থাৎ পুরুষ ও মহিলা উভয়ে মিলে একটি পরিবার, একে অপরের পোশাকস্বরূপ এবং সম্পূরক।

আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন-

الرجال قوامون على النساء بما فضل الله بضهم على بعض وبما انفقوا من اموالهم

অর্থ: পুরুষদেরকে নারীদের উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর আল্লাহ পাক একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এজন্য যে, তারা (পুরুষেরা) তাদের অর্থ ব্যয় করে।” (সূরা আন নিসা-৩৪)

আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যার কারণে পারিবারিক জীবনে পুরুষের তত্ত্বাবধানে থাকা তাদের জন্য নিরাপদ। অন্যদিকে পুরুষেরা মহিলাদের জন্য নিরাপদ।

আর পুরুষেরা মহিলাদের মহর দিয়ে বিবাহ করে এবং তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে থাকে, এজন্য পুরুষদের তত্ত্বাবধানে থাকা মহিলাদের কল্যাণকর যা শরীয়তে আবশ্যক। তবে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ঐ ব্যক্তি যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী মুত্তাকী।” (সূরা হুজুরাত-৪৯)

আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “পুরুষ তত্ত্বাবধায়ক তার পরিবারের। আর মহিলা তত্ত্বাবধায়ক তার স্বামীর ঘরের ও তার সন্তানের।” (বুখারী শরীফ)

আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূরুষ জাতির কর্মের পরিধি মহিলা জাতির কর্মের পরিধি থেকে পৃথক করে দিয়েছেন। সে মোতাবেক মহিলারা বাড়ির ভেতরের জন্য দায়িত্বশীল এবং পুরুষেরা বাড়ির বাইরের জন্য দায়িত্বশীল। কাজেই পুরুষ ও মহিলা উভয়জাতিই তাদের স্বীয় অবস্থানে অত্যন্ত সম্মানীত ও ফযীলতপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ!

কাফির মুশরিকদের ধর্মে মহিলাদের অবস্থান:

নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় তাশরীফ আনার পূর্বে সমাজে মহিলারা ছিলো নির্যাতিত ও উপেক্ষিত। বলতে গেলে সমাজে তাদের কোন মান সম্মানই ছিলো না।

প্রাচীনকালে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে মহিলাদের সমস্ত পাপ কর্মের উৎস বলা হতো। তাদের বাঁদি মনে করা হতো। মৃত স্বামীর চিতায় হিন্দু বিধবা মহিলাদের জীবন বিসর্জন দিতে হতো। বিধবা-বিবাহ নিষিদ্ধ ছিলো। তাদের পোশাক-আশাক ও খাদ্য সমগ্রী আলাদা ধরনের হতো। কন্যারা পিতার সম্পত্তির ওয়ারিশ হতনা যা এখনও হিন্দু ধর্মে চালু রয়েছে। নাঊযবিল্লাহ! আরব দেশে প্রাক ইসলামী যুগে মহিলাদের অবস্থা ছিলো বড়ই শোচনীয়। সেখানে বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদের কোনই নিয়ম-কানুন ছিলোনা। মহিলারা ওয়ারিশসূত্রে কোন ধন-সম্পদ পেত না। এমনকি পুরুষেরা তাদের কন্যাদের জীবন্ত কবর দিতো।

পৃথিবীর কোন কোন স্থানে মহিলাদেরকে শয়তানের সমতুল্য মনে করা হতো এবং তাদেরকে পশুর মত খাটাতো। আর বলা হতো যে, মহিলাদের আত্মা নেই। যারা ইহুদী-নাছারা কাফির-মুশরিক তাদের বিশ্বাস ছিলো যে মহিলাদের আত্মা নেই তাই মহিলাদের সঙ্গে তারা পশু সুলভ আচরণ করত। নাউযুবিল্লাহ!

দীন ইসলামে মহিলাদের অধিকার

ইসলাম বিদ্বেষী, মুসলমানদের চিরশত্রু ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিক তথা বিধর্মীরা মহিলাদেরকে দুনিয়াবী কোন সুযোগ সুবিধা দেয়না। এমনকি ধন সম্পদের ওয়ারিশ থেকেও তাদের বঞ্চিত করে থাকে। কিন্তু ইসলাম মহিলাদের কন্যা, স্ত্রী, মা ও ভগ্নি হিসেবে ধন-সম্পদের ওয়ারিশ করেছে এবং স্বামীর উপর স্ত্রীর ভরণ-পোষন ফরয করে দিয়েছে। সম্মানের সাথে মহর দিয়ে বিয়ে করা স্বামীর উপর আবশ্যক।

মহিলাদের অধিকার সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن بـهز ابن حكيم عن ابيه عن جده قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم من ابر قال امك قلت ثم من يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال امك قلت ثم من يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال امك قلت ثم من يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اباك ثم الاقرب فالاقرب.

অর্থ: “হযরত বাহায ইবনে হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি উনার পিতা থেকে, উনি উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, উনার দাদা বর্ণনা করেন যে, আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার সব চাইতে বেশি সদ্ব্যবহার পাওয়ার হক্বদার কে? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমার মাতা। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম অতঃপর কে? উনি বলেন, তোমার মাতা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম অতঃপর কে? উনি বলেন, তোমার মাতা আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম অতঃপর কে? উনি বলেন, তোমার পিতা। অতঃপর নিকটাত্মীয়গণ।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের জান্নাত।”

হাদীছ শরীফ এসেছে-

اذ اقبلت امرأة حتى دنت الى النبى صلى الله عليه وسلم فبسط لها ردأه فجلست عليه فقلت من هى فقالوا هى امه التى ارضعته.

 অর্থ: একজন মহিলা আগমন করলেন এবং নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একেবারে নিকবর্তী হলেন। তখন তিনি স্বীয় চাদর মুবারক উনার জন্য বিছিয়ে দিলেন। অতঃপর ঐ মহিলা তার উপর বসে পড়লেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি লোকদের কাছে জানতে চাইলাম, এ মহিলাটি কে? তখন তারা বললেন, উনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ মাতা হযরত হালিমা আলাইহাস্ সালাম যিনি উনাকে দুধ পান করিয়েছেন।” (আবূ দাউদ শরীফ)

অন্য হাদীছ শরীফে এসেছে-

طلب العلم فريضة على كل مسلم ومسلمة

অর্থ: প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ইলম অর্জন করা ফরয।” (মুসনাদু আবী হানীফা)

মহিলারা পুরুষের মত আপন মেধা, প্রতিভা, উদ্ভাবন, শক্তি, কর্মদক্ষতা ও সুযোগ মুতাবেক ইলম শিখবে এবং অপরকে শিক্ষা দিবে। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বহু অর্থাৎ অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন “তোমরা দীনের ইলম হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে শিক্ষা বা অর্জন কর।”

এছাড়াও অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ এবং অসংখ্য মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা হাদীছ শরীফ-এর গভীর ইলমে বিদুষী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, বর্তমান যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলী, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী এবং উনার পবিত্রতমা সহধর্মিনী, ক্বায়িম-মাক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন, আফদ্বালুন নিসা, সাইয়্যিদাতুন নিসা, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহাল আলী তাবৎ কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা তথা বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত মা-বোনদের চোখ খুলে দিচ্ছেন, হিদায়েতের নূর দিচ্ছেন এবং মহিলাদের অধিকার সম্পর্কে কথা বলছেন।

নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলা তথা সমস্ত কায়িনাতের প্রত্যেকের হক্ব যথাযথভাবে পরিপূর্ণরূপে বণ্টন করে দিয়েছেন, এখনো দিচ্ছেন, ভবিষ্যতেও দিবেন।

আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

انما انا قاسم والله يعطى

অর্থ: “আল্লাহ পাক হাদিয়া করেন আর আমি বণ্টনকারী।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

হে আল্লাহ পাক! গোটা উম্মাহকে নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।

-হাক্বীর মাওলানা সাইয়্যিদ আহমদ শাবীব।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম